লাগলো লটারিএকটু বাদে শৈলেশ একটা চার কেজির ছোট সিলিন্ডার দিয়ে যায়। ওপরে বার্ণার লাগানো। এবার ঘরেই দিব্যি গরমাগরম ম্যাগী মটর বানিয়ে খাওয়া যাবে। ঠান্ডায় আর রাতে বাইরে যেতে হবে না। গেলেও অবশ্য কিছু পাওয়া যাবে না। শৈলেশ, সুরেশ দুজনেই বলছে, অটোস্ট্যান্ডের কাছে একটা দোকানে চা, বিস্কুট, পকোড়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। একানে ছোট জায়গা। শ্রাবণ মাসে চৌমুখনাথ মহাদেব মন্দিরে অনেক ভক্তসমাগম হয়। তখন কদিনের মেলা কিছু সাময়িক খাবারের দোকান বসে। ভান্ডারাও লাগে। জৈন তীর্থযাত্রীরা সচরাচর বড় দলে বাস বুক করে আসেন। সাথে থাকে রান্নার ঠাকুর, যোগাড়। কেউ গাড়িতে এসে দিনে দিনে ঘুরে চলে যায়। একা কেউ এখানে এসে রাতে থাকে না। তাই সারা বছর প্রায় ফাঁকাই থাকে এ জায়গা। কে খাবে হোটেলে? তাই খাওয়ার হোটেলও নেই।
সুরেশ হাফ লিটার মতো দুধ নিয়ে আসে। কত লাগবে বলতে, পঁচিশ টাকা চায়। যে তিন দিন ছিলাম, রোজ সুরেশ দুধ দিয়ে গেছে। রান্নার ব্যবস্থা হতে একটা আইডিয়া এলো মাথায়। সেই অটোওয়ালা জয়রাম তো সালেহা - নাচনা ট্রিপ মারে। সালেহাতে অটোস্ট্যান্ডের কাছেই বাজার দোকান আছে দেখেছি। ওকে ফোন করে বলি, ভাই জয়রাম, আমি সেই কলকাতার আঙ্কল বলছি, পরেরবার নাচনা আসার সময় আমার জন্য সালেহা থেকে খান ছয়েক ম্যাগীর প্যাকেট, এক কিলো হরা মটর আর একটু গাজর নিয়ে আসবে? তাহলে খুব উপকার হয়। জয়রাম বলে, আচ্ছা আনবো। সাতটা নাগাদ ফোন করে জয়রাম বলে, আমি স্ট্যান্ডের সামনে চায়ের দোকানে রেখে গেলাম। আপনি ওকেই পয়সা দিয়ে দেবেন, আমি পরে এসে নিয়ে নেবো। একাকী ভ্রমণে বহুবার এভাবে নানা অচেনা মানুষের এমন সহৃদয়তায় মুগ্ধ, উপকৃত হয়েছি।
শৈলেশের দেওয়া গ্যাসস্টোভে রাতে ম্যাগী মটর বানিয়ে খেলাম। পরদিন জলখাবারেও তাই খেলাম - গরমাগরম। ২০২১এ করোনার কারণে শীতে দীর্ঘ একাকী ভ্রমণে যাওয়া হয়নি। তার পরের বার ১৩.১২.২২এ দু মাসের একাকী ভ্রমণে বেরিয়ে নিয়ে গেছিলাম একটা দেড় লিটারের ওপেন টপ সিলিন্ড্রিক্যাল ইলেকট্রিক কেটল। ফলে সেবার আর গ্যাস বার্ণারের ভরসায় থাকতে হয়নি। ওতেই সেবার মটরশুঁটি, গাজর, ক্যাপসিকাম, টমেটো, বীনস দিয়ে বহুবার খেয়েছি বানিয়ে খেয়েছি ভেজ ম্যাগী। অনেকেই এতে বোর হয়ে যাবে - তবে আমি এ ব্যাপারে গিনেসে নাম তুলতে পারি। মুখ বদলাতে মাঝে মধ্যে ওতে ডিম সেদ্ধ, দুধ ওটস, দুধ পাঁউরুটি, দুধ কর্নফ্লেক্স এসবও করে খেয়েছি। একবার কাজু, কিসমিস দিয়ে পায়েসও করেছিলাম। হেব্বি হয়েছিল। হোটেলে খেয়েছি খুব কম।
সুন্দর সকাল
২২.১.২০ - গতকাল রাতে কখন যে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে টের পাই নি। সকালে ছাদে উঠে দেখি আকাশের মুখ ভার। ভিজে জমি থেকে আসছে সোঁদা সৌরভ। চারপাশে হিমেল কুয়াশার মধ্যে আড়মোড়া ভাঙছে আর একটি নতুন সকাল। একটি স্থানীয় মানুষ গুটিকয় গরু নিয়ে চলেছে দুর পাহাড়ের দিকে। হয়তো ওখানে এখনও রয়েছে বড় বড় ঘাস। কাছাকাছি জমিতে বেঁচে আছে ন্যাড়া মাথায় সদ্য গজানো চুলের মতো কিছু ঘাস। তা হয়তো ছাগলের পক্ষেই মুড়িয়ে খাওয়া সম্ভব।
মানুষটি ফুট বিশেক পিছনে চলতে চলতে থেকে থেকে আওয়াজ ছাড়ছে - হ্যেইট-টে-টে। হয়তো নিছক অভ্যাসে। কারণ গরুগুলো উপর নীচে মাথা দুলিয়ে শান্ত ছন্দে, ধীর লয়ে হেঁটে চলেছে মেঠো পথ ধরে। দেখেই বোঝা যায় এ পথ ওদের চেনা। কোথায় যাবে তাও জানা। ওদের গলায় বাঁধা ঘন্টায় মৃদু ডিং-ডং, ডিং-ডং মিষ্টি আওয়াজে শৈশবের কিছু সুখস্বপ্নের মতো দৃশ্য মনে পড়ে। ২০১৯এ দেবগড়ে চায়ের দোকানের পাশে মোষটা চোখবুঁজে জাবর কাটতে কাটতে কান মাথা নাড়িয়ে মাছি তাড়াতে গিয়ে ওর গলার ঘন্টা থেকেও অমন মিষ্টি আওয়াজ আসছিল। মগ্ন হয়ে দেখছিলাম ছাদের আলসে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। ক্রমশ ওরা মিলিয়ে গেল দুরে। মেঘ পর্দা সরিয়ে উঁকি মারা শীতালী সকালের নরম রোদের বালাপোষ জড়িয়ে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে এমন সব দৃশ্য দেখতে থাকলে হয়তো সেই আবেশে সারারাত ঘুমিয়ে উঠেও আবার চোখ জুড়িয়ে আসতে পারে আরামে।
গরুগুলো চলে যেতে চরাচর আবার ডুবে যায় নিস্তব্ধতায়। জমিতে খাবারের খোঁজে চড়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটি ল্যাপউইগ ও শালিখ। এ ছাড়া জীবনের আর কোনো অস্তিত্ব সাদা চোখে ধরা পড়ে না। এমন জায়গায় ঘড়ি নিতান্তই বাহুল্য। মনে হয় অনেক তো হোলো ছোটাছুটি, ইচ্ছে করে এমন শান্ত জায়গায় শুয়ে বসে ঘুমিয়ে, ইতস্ততঃ অনির্দিষ্ট ঘুরে বেড়িয়ে, বই পড়ে, স্থানীয় মানুষের সাথে আলাপ করে বা নিজের মধ্যে ডুব দিয়েই কদিন কাটিয়ে দিই।
চৌমুখনাথ মহাদেব মন্দির
প্রাতরাশ করে চললুম লেকের পশ্চিম ধার দিয়ে উত্তর দিশায় এখানকার মুখ্য দর্শনীয় পূরাতাত্বিক স্থান চৌমুখনাথ মন্দির। এই মন্দির পরিসরে আছে দুটি মন্দির। একটি চৌমুখনাথ মহাদেব। শিখর সমেত উচ্চ মন্দিরটি আকারে বড়। আমার মতো ভ্রামণিকদের কাছে সেটিই এখানকার মুখ্য আকর্ষণ। স্থানীয় এবং দূরাগত ভক্তদের কাছে মান্যতাপ্রাপ্ত। অন্যটি আকারে ছোট - পার্বতী মন্দির। চৌমুখনাথ মহাদেব মন্দির সম্পর্কে ভারতীয় পূরাতত্ব বিভাগের ফলকে বলা হয়েছে পরিচিতি নির্দেশক শিলালেখের অনুপস্থিতিতে শিল্প ও স্থাপত্যের শৈলীগত বিবেচনায় এটি গুপ্ত সাম্রাজ্যের পরবর্তী যুগে আনুমানিক সপ্তম খ্রিস্টাব্দের বলে মনে হয়।
গর্ভগৃহে চারটি মুখ বিশিষ্ট একটি শিবলিঙ্গ আছে। তাই এর নাম চৌমুখনাথ মন্দির। এটি একটি বর্গাকার মন্দির। এর সামনে একটি বারান্দা রয়েছে। পুরাতাত্ত্বিকদের মতে পরিসরে পাওয়া মূর্তি, দ্বার ও গাত্রের স্থাপত্যের ভাস্কর্যে জটিল, নিপুণ খোদাই অনুসারে এগুলি আবার চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকের গুপ্ত যুগের বৈশিষ্ট্য নির্দেশক বলেও মনে হয়। অর্থাৎ তারা এই মন্দিরের বয়স সম্পর্কে নিঃসন্দেহ নন। এই মন্দিরে আচ্ছাদিত পরিক্রমা পথের উপস্থিতি মন্দিরের নির্মাণ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে বিবর্তনসূচক। এখানে পাওয়া কৃষ্ণ-লীলার দৃশ্য ছাড়াও শেষাশায়ী বিষ্ণু, বরাহ, নরসিংহ, বামন এবং ত্রিবিক্রম মূর্তিগুলি বৈষ্ণব ঘরাণার বিকশিত ভাস্কর্যশিল্পের নির্দেশক।
চৌমুখনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের দ্বার পূব দিকে। দরজা দিয়ে ঢুকেই চতূর্মুখী শিবলিঙ্গর পূব দিশায় রয়েছে পার্বতীর সাথে বিয়ের আগে প্রস্তুতির সাজে শিবের মুখ। জটায় চাঁদ, গঙ্গা, তৃতীয় নেত্র খোলা, মৃদু হাস্যময় মুখভাবে আগামী রোমান্সের খোয়াব। দক্ষিণে হলাহল পান করে গলা জ্বলে যাওয়া বিকট করাল রূপ। পশ্চিমে যোগ বা ধ্যানমূদ্রায় সমাহিত ভাব। উত্তরে অর্ধনারীশ্বর রূপ। দর্শকের দৃষ্টি অনুসারে নয় - মূর্তির মুখের ডানদিকে বা পুবদিকে শিবের ভাব ও বাঁদিকে বা পশ্চিমদিকে পার্বতীর। চৌমুখনাথ শিবলিঙ্গর চারটি মুখের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ওখানে উপস্থিত পুরোহিত। তবে পরে মোবাইলে তোলা অর্ধনারীশ্বর ছবিটি অনেকক্ষণ দেখেও দুটি ভাবের তফাৎ পরিস্কার বুঝতে পারি নি। ছবিটি নীচে রইলো।
মন্দিরের মধ্যে আলো কম ছিল বলে আমার মোবাইলে তোলা ছবি ভালো আসেনি। তাই নেটে পাওয়া জনৈক The Banjara Man (মন!) এর তোলা দুটি সুন্দর ছবি রাখলাম। একটিই পাথর কেটে বানানো প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু লিঙ্গটির বর্গাকার বেসটির বাহু এক মিটার। ASI এর তত্ত্বাবধানে থাকলেও এটি বর্তমানেও রোজ পূজিত হয়। সন্ধ্যায় পূজার পর পূজারী চলে গেলে মন্দিরে তালা দেয় ASI গার্ড। ASI এর অধীনে এমন অনেক লাইভ টেম্পল আছে যেখানে নিত্য পূজা হয় - হ্যালেবিড, বেলুর, খাজুরাহো, পাট্টাডাকাল, আইহোলে, গোপেশ্বরে গোপীনাথ মন্দির ইত্যাদি। কিছু মন্দির কেবল পূরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত - সেখানে নিত্য পূজা হয় না। যেমন দেবগড়ে ৫০০ খ্রীষ্টাব্দের গুপ্তকালীন দশাবতার মন্দির। ঐ মন্দিরটি পূরাতাত্বিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পার্বতী মন্দিরের ক্ষেত্রেও পরিচিতি নির্দেশক শিলালেখের অনুপস্থিতিতে শিল্প ও স্থাপত্যের শৈলীগত বিবেচনায় এটি গুপ্তকালীন পঞ্চম শতাব্দীর বলে অনুমান করা হয়। মন্দিরটিতে একটি বর্গাকার গর্ভগৃহ রয়েছে। এই মন্দিরে গর্ভগৃহের উপরে একটি ছোট বর্গাকার কক্ষ রয়েছে, যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটি উত্তর ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যে পূর্ববর্তী সমতল ছাদযুক্ত মন্দির থেকে বিবর্তন সূচক। মন্দিরটির দরজা, জানালার ফ্রেম এবং ফুলদানি এবং পাতার মোটিফের সূক্ষ্ম খোদাই এবং পিলাস্টারগুলিতে অর্ধেক পদ্মের পদক দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। লিন্টেলের অলঙ্কৃত ফুলের নকশা গুপ্তকালীন শিল্পশৈলীর অনন্য বৈশিষ্ট্য। লিন্টেলের মাঝে রয়েছে পার্বতীর সাথে উপবিষ্ট বীণাধর শিব।
পার্বতী মন্দির - গর্ভগৃহের ওপরে কক্ষের অবশেষ পার্বতী মন্দিরের দ্বারে ভাস্কর্য - ললাটবিম্বের (Lintel) মাঝে পার্বতীর পাশে বীণাধর শিব
মন্দির চত্বরে ভাঙা বিয়ের হিসেব নিকেশ
মন্দির চত্বরে প্রত্যক্ষ্য করা একটি অভিজ্ঞতা বেশ চমকপ্রদ লাগলো। মধ্যপ্রদেশে কিছু ছোটোখাটো জায়গায় একটা ব্যাপার দেখে বেশ অবাক লেগেছে। বাড়িতে কারুর বিয়ে হলে বাইরের দেওয়ালে 'X marriage with Y’ মানে এ বাড়িতে অমুকের সাথে তমুকের বিয়ে হয়েছে এতো তারিখে - এ জাতীয় একটি ঘোষণা লেখা হয়। কখনো অশ্বপৃষ্ঠে পাত্র, পালকিতে পাত্রী, সানাই, ফুল ইত্যাদি সহযোগে দেয়ালে রঙিন চিত্র অঙ্কিত হয়। বাড়িতে পরবর্তীতে অন্য কারুর বিয়ে না হলে বা রঙ করার দরকার না পড়লে সেই চিত্রিত ঘোষণা ওভাবেই থেকে যায় অনেকদিন।
একবার সাতনা থেকে রেওয়া যাওয়ার পথে - মাঝে এক জায়গায় নেমে - অপ্রত্যাশিতভাবে জায়গাটা ভালো লেগে যাওয়ায় একদিনের জন্য পরিকল্পনা বহির্ভূতভাবে থেকে গেছিলাম। নির্দিষ্ট শিডিউল না ধরে বেড়ানোর এও এক বিশেষ আনন্দ। সেখানে স্থানীয় একজনকে অমন একটা বছর দুয়েক আগে আঁকা, একটু ফিকে হয়ে যাওয়া দেওয়াল-চিত্র দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম - কোন কারণে বিয়ে ভেঙে গিয়ে মেয়েটি পিতৃগৃহে ফিরে এলে তখন কী ওগুলো মুছে দেওয়া হয়? নাহলে তো নিত্যদিন ওটা দেখে তার খারাপ লাগতে পারে। লোকটি জানালো না তেমন কোনো প্রথা নেই। তার হাবভাব দেখে মনে হোলো, ব্যাপারটা নিয়ে কখনো সে ভেবে দেখেছে কিনা কে জানে।
চৌমুখনাথ মন্দির চত্বরে দেখলাম ভাঙা বিয়ের বৈষয়িক হিসেব নিকেশ হচ্ছে। মানে বিয়েতে কন্যাপক্ষ পণ, যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছিল - বিয়ে যখন টেকেনি - পাত্রপক্ষ সেসব ফেরৎ দেবে। দুই পক্ষের কর্তাব্যক্তি, কিছু নিকটাত্মীয় এসে মন্দির চত্বরে বসেছেন। চৌমুখনাথকে সাক্ষী মেনে কন্যাপক্ষ কাগজে তালিকা করছে বিয়েতে কী দেওয়া হয়েছিল। পাত্রপক্ষ দেখছে। বাকিরা হয়তো সাক্ষী হিসেবে রয়েছে। হৈচৈ, রাগারাগি নেই। শান্তভাবে সবকিছু হচ্ছে। দুপক্ষে আলোচনা করে যা ঠিক হবে পাত্রপক্ষ একদিন কন্যাপক্ষের বাড়ি গিয়ে সেসব দিয়ে আসবে। পণ, অলঙ্কার এসব ফেরৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিয়ে কেন বা কার জন্য ভেঙেছে সেসব নিয়ে কূটকচালি হয় কিনা বোঝা গেল না। ঈশ্বর সাক্ষী করে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে বা কেবল নিজেদের মধ্যে আস্থা নির্ভর গন্ধর্ববিবাহর কথা জানা ছিল। ঈশ্বর সাক্ষী করে ভাঙা বিয়ের বৈষয়িক হিসেবনিকেশ সেই প্রথম দেখলাম।
বাঁধ ধরে ফিরলুম পণ্ডিতজীর সাথে
রয়ে সয়ে চৌমুখনাথ মন্দির দেখে লেকের পূব দিকের বাঁধের মেঠো পথ ধরে ফিরছিলুম ধর্মশালার দিকে। সে পথে দেখা হোলো টাঙি কাঁধে পণ্ডিত রামসহায় শর্মার সাথে। রোদে পোড়া তামাটে মুখ। কিন্তু বোঝা যায় যৌবনে খুব সুপুরুষ ছিলেন। বলিও সেকথা। শুনে সে কী লাজুক হাসি পণ্ডিতজীর। আশকথা পাশকথা গল্প করতে করতে যাই ওনার সাথে। একাকী ভ্রমণে এমন সব স্থানীয় মানুষের সাথে সাধারণ গল্প করেও সমাজ মাধ্যমে নানা চালক চালাক চাপানউতোর দেখে দেখে ক্লান্ত মনে শান্তির মলম লাগে। ওনাকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন, হলুদ ফুল ফোটা ক্ষেতিগুলো অড়হড় ডালের। এদিকে ভালো হয় ঐ চাষ।
বাঁধের পাশে বুনো ঝোপে দুটি বাবুই পাখির বাসা ঝুলছে দেখলাম। একটি অসম্পূর্ণ। অন্যটি মনে হোলো তৈরী হয়ে গেছে। ছবি তুলতে একটু কাছে যেতে একটি বাবুই পাখি বাসা থেকে বেরিয়ে ফুরুৎ করে উড়ে গেল। পাখির বাসা দেখে শহুরে মানুষের আহ্লাদ দেখে পণ্ডিতজী আমোদ পান। দাঁড়িয়ে পড়েন। বলি, আচ্ছা, পণ্ডিতজী, অমন একটা বাসা বানাতে আন্দাজ কতোদিন লাগে? উনি বলেন হপ্তা তিনেকের মধ্যে বানিয়ে ফেলে ওরা। অবাক লাগে। কেবল ঠোঁট দিয়ে, ঝুলে ঝুলে, এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে বানায় ওরা এমন সুন্দর আকারের ঘর?
আহা ঐ আঁকা বাঁকা যে পথ যায় সুদূরে
যেদিকে সকালে গরুগুলো যাচ্ছিল, বিকেলে জৈনতীর্থ পরিসর থেকে সেই পূবদিকে উঁচুনিচু মেঠো পথে একটু পায়চারি করতে গেলাম। দুরে হালকা টিলার ওপরে ছোট্ট সাদা মতো কিছু (লাল তীর) একটা দেখা যাচ্ছে। টানছে ওটাই। তবু পথটাও বেশ সুন্দর। ওটা দেখে সলিদার সুরে, শ্যামলদার কণ্ঠে একটা প্রিয় গান মনে পড়ে গেল।
টিলার ওপরে সেই সাদাটে বস্তুটি ছোট ইটের গাঁথুনির পিরামিডের মতো কিছু একটা। হয়তো কোনো থান হবে। সামনে জমি ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে। তার পর বিস্তৃত এলাকায় অড়হড় ডালের চাষ হয়েছে। হলুদ ফুল ফুটে আছে। বৈশাখের শুরুতে দানা পাকলে কাটা হবে। জমিতে প্লাস্টিকের ছোট ছোট ছাউনি। পাশের জঙ্গল থেকে নীলগাই এসে ফসল খেয়ে নেয়। ওগুলো তাই রাত পাহারার সাময়িক আস্তানা। আসন্ন সন্ধ্যার প্রাক্কালে কেউ কাঠের আগুন জ্বেলেছে। আকাশে পাকিয়ে উঠছে সাদা ধোঁয়া। কুয়াশায় দুরের পাহাড়ের রেখা অস্পষ্ট। মেঠো পথ ধরে জঙ্গল থেকে কেটে আনা কাঠকুটোর বোঁচকা মাথায় আসছে তিনজন। দুটো বালক সাইকেল নিয়ে হেঁটে হেঁটে চড়াই ধরে উঠে গড়গড়িয়ে উৎরাই বেয়ে হাফ প্যাডেলে নামছে। কলকল করে হাসতে হাসতে ক্রমশ দুরে মিলিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা সুন্দর, শান্ত ছবি। একটা পাথরে বসে অনেকক্ষণ তাই তাকিয়ে ছিলাম পূব দিশায় এইসব মনোরম দৃশ্যাবলীর দিকে।
মনে পড়লো কেভিনের ছবি
মনে হোলো সূর্যাস্তের সময় হয়ে এলো। তাই তাকালাম পশ্চিম দিকে। আর তখনই চোখে পড়লো কিছুটা দুরে মাটিতে শুয়ে আছে একটি গরু। একটি কুকুর পিছনে এসে জমি শুঁকছে।
বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। আহা রে - মরে গেছে নাকি! তার শুয়ে থাকার ভঙ্গি - পিছনে ঘুরঘুর করা কুকুর দেখে আচমকা মনে পড়ে যায় সুদানের দুর্ভিক্ষের ওপর তোলা, দক্ষিণ আফ্রিকার ফটো-জার্নালিস্ট কেভিনের ছবিটির কথা -
The Struggling Girl. ছবিটি ১৯৯৪ সালের মার্চে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল। কেভিনের জন্ম আমার দশদিন আগে কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সে স্বেচ্ছায় চলে গেছে এই ধরাধাম ছেড়ে। পুরস্কৃত হওয়ার চারমাস পরেই সে আত্মহত্যা করে। ব্যক্তিগত দারিদ্র্যর সাথে সুদানের মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ্য করার মর্মপীড়া হয়তো তাকে ঠেলে দিয়েছিল জীবনের কিনারায়। ছবিটি দেখলে আমার একটাই ক্যাপশন মাথায় আসে -
The waiting vulture. তবে কেভিনের ছবিটির মতো ধৈর্য্যসহকারে অপেক্ষারত মরা মাসখেকো হুডেড ভালচার নয় - সমাজে চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে নানা পোষাক পরা শকুন, তাদের তীক্ষ্ম নির্মম ঠোঁটে বহুকিছু ছিঁড়ে খেতে - জীবিকা - জীবন - সম্মান। তাদের কেউ কেউ দৃশ্য - অনেকেই অদৃশ্য …
দুরে থাকায় এতক্ষণ চোখে পড়েনি। টিলা থেকে নেমে কাছে গেলাম। গরু নয়, শীর্ণকায় এক বলদ। ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি চষায় অভ্যস্থ হয়ে এখন অনেকেই আর বলদ দিয়ে জমিতে হাল দেয় না। তাছাড়া এটি এক তরুণ, কৃশকায় বলদ। হাল টানার মতো শক্তপোক্ত নয়। অর্থাৎ এ কোনো কাজেরই নয়। তাই হয়তো এর মালিক জন্মের পরেই ওকে খেদিয়ে দিয়েছে। গৃহস্থের গোয়ালে এখন ওর জায়গা নেই। সেখানে এখন আছে দুধেল গরু। ইঞ্জেকশন দেওয়া সত্ত্বেও যেদিন সে পাকাপাকি দুধ দেওয়া বন্ধ করবে, সেদিন সেও গোয়ালচ্যূত হবে। ভাগ্য ভালো হলে বৃন্দাবনের বিধবার মতো হয়তো তার জায়গা হতে পারে কোনো গোশালায়। নচেৎ সেও এর মতো অপ্রয়োজনীয় বেওয়ারিশ হয়ে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াবে।
কাছে গিয়ে দেখি তার আকাশমুখো চোখটা মরা মাছের মতো মৃত্যুশীতল - কালচে নীল - অপলক। মুখের অন্যপাশটা মাটিতে লেপটে আছে। মুখটা একটু ফাঁক হয়ে আছে। নীচের পাটির দাঁতের সারির হালকা আভাস চোখে পড়ে। মুখে লেগে আছে রক্ত - মাটিতেও কয়েক জায়গায় রক্তের ছোপ। হয়তো সে একটু আগে মারা গেছে। কারণ তখনো তার মুখে চোখে এসে বসেনি অবহেলিত মৃত্যুর অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ - ভনভনে মাছি।
মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল তার করুণ ভাবে মাটিতে পড়ে থাকার ভঙ্গিমা দেখে। হঠাৎ তার খোলা চোখে একবার পলক পড়লো। চোখের মণিটা উল্টে গেল। চোখের কালো অংশটা নীচের দিকে নেমে গিয়ে উপরের সাদা অংশটা রক্তাভ শিরাগুলো সমেত প্রকট হয়ে গেল।
আকাশে মেঘলা মরা বিকেলের ঘোলাটে আলো - সামনে পাহাড় - আর তার পাদদেশে অসহায় ভাবে মরে পড়ে আছে একটি শীর্ণকায় বেওয়ারিশ বলদ - এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। হঠাৎ তার চোখের পলক পড়তে মনে হোলো তাহলে কী সে এখনও বেঁচে আছে? শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে চোখের পাতা ফেলে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে? ঝুঁকে পড়ি তার মুখের কাছে। প্রাণের রেশ অবশিষ্ট আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করি।
হঠাৎ সে ধরফর করে চার পা নাড়িয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় মাটি থেকে মাথাটা তুলে উঠে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু পারে না। মাথাটা আবার ঘুরে গিয়ে ধপাস করে ঠুকে যায় শক্ত মাটিতে। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। একটি অবলা প্রাণী - যাকে দেখে মনে হয়েছিল শান্ত নীরবতায় মেনে নিয়েছে অপ্রতিরোধ্য মৃত্যু - হঠাৎ তার প্রবল জিজীবিষার প্রকাশে বেশ চমকে উঠি। রাস্তা ঘাটে মরে পড়ে থাকা কুকুর, বেড়াল অনেক দেখেছি। যে জীবনের প্রকাশ যত ক্ষুদ্র, তার মৃত্যুর অভিঘাত তত অকিঞ্চিৎকর। তাই জুতোর তলায় কেন্নো চাপা পড়লে এতোটা খারাপ লাগে না। কিন্তু চোখের সামনে বড় একটা প্রাণী এভাবে ছটফট করে মারা যাচ্ছে দেখে খুব বিহ্বল, অসহায় লাগে নিজেকে।
আমায় বলদটার কাছে ঝুঁকে পড়ে দেখতে স্থানীয় কয়েকটি কিশোর এগিয়ে আসে। শহুরে চোখে গ্ৰাম্য জীবনের সাধারণ দৃশ্য বা ঘটনাও রোমান্টিক সুন্দর বা মর্মস্পর্শী করুণ মনে হয়। ওরা নিত্য এসব দেখে অভ্যস্থ। দলে সকালে চায়ের দোকানে আলাপ হওয়া অশোকও ছিল। ওর কাছেই গত সন্ধ্যায় অটোচালক জয়রাম আমার জন্য কেনা ম্যাগী, মটর, গাজর রেখে গেছিল। মনে হোলো সেই ঐ দলের পান্ডা। অশোক নির্মোহ ভঙ্গিতে বলে, হয়তো গেছিল কোনো ক্ষেতে ফসল খেতে, চাষী ঠেঙিয়েছে খুবসে। বা টাঙি দিয়ে মেরেছে। দেখছেন না পিঠের ওদিকে ক্ষতচিহ্ন। মুখ দিয়ে রক্ত উঠেছে মানে এ আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না।
তাহলে আর কী আর করা যাবে। ওর মুখের আশপাশে জমি থেকে পাথরের টুকরোগুলো তুলে সরিয়ে দিই। মরার আগে আরো কতবার যে মুখ তুলে উঠতে গিয়ে ওর মাথা ওভাবে ঠকাস ঠকাস করে মাটিতে পড়বে তার ঠিক নেই। তাই ওর চলে যাওয়ার সময় যন্ত্রণা কিছুটা অন্তত কম করে দিই। ন্যাপস্যাক থেকে জলের বোতল নিয়ে ওর মুখের কাছে এগিয়ে যাই। অশোক বলে, ও কী ওভাবে জল খেতে পারবে? তবু দিই। হলেই বা প্রাণী, মৃত্যুপথযাত্রীর মুখে একটু জল দেওয়া আমাদের বহুদিনের সংস্কারের শিকড়ে রয়ে গেছে।
কতক্ষণ ওভাবে ওখানে পড়ে আছে কে জানে। হয়তো গলা শুকিয়ে গেছিল। বোতল থেকে মুখে সাবধানে জল দিতে সে জিভ বার করে চাটলো। ঢোঁক গেলার আভাস পাওয়া গেল গলায়। চোখ পিটপিট করলো কয়েকবার। বার দুয়েক হাঁচোড় পাঁচোড় করে উঠে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলো। তবে প্রতিবারই মাথা ঘুরে পড়ে গেল। আসন্ন রাতের কঠিন ঠান্ডায় খোলা মাঠে বেহাল শরীরে এভাবে পড়ে থাকলে হয়তো আজ রাতেই ওর ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। আর দেখতে পারলাম না। আকাশের দিকে তাকিয়ে জোড়হাত করে কাকে প্রণাম করলাম জানি না। তারপর ওকে ওর ভবিতব্যের হাতে সঁপে দিয়ে ভারী মনে হাঁটা দিলাম লেকের দিকে। মেঘলা পশ্চিমাকাশে সূর্য তখন অস্তাচলে।
হয়তো সে বেঁচে গেল এযাত্রা
এক বয়স্ক মানুষের এহেন কাতর ভাবালুতা দেখে অশোক আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। আধঘন্টা বাদে ধর্মশালার ঘরে এসে বসেছি। মনশ্চক্ষে তখনও ভাসছে বলদটার সেই মৃত্যুশীতল নীলচে চোখ, বারংবার উঠে দাঁড়ানোর করুণ প্রচেষ্টা। এমন সময় বাইরে কিছু সম্মিলিত গলার আওয়াজ পেলাম। কারা যেন মেন গেটের বাইরে থেকে বাবুজী, বাবুজী করে ডাকছে। এই গুরুকৃপা ধর্মশালায় বা দূরে পশ্চিমের ঘরগুলোতেও কেউ নেই। শৈলেশের ঘর প্রায় দুশো মিটার দুরে। রাতে চৌকিদার সুরেশও থাকে না। তার ডিউটি কেবল দিনে। গুরুকৃপা ধর্মশালার পরেই দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, চাষজমি। এতো ফাঁকা, নির্জন জায়গায় রাতের বেলায় একা থাকতে একটু গা ছমছম করে। তাই লোহার ভারী সদর দরজায় ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে রেখেছিলাম।
কথাবার্তার আওয়াজ পেয়ে বাইরের আলো জ্বালিয়ে উঠে গিয়ে সদর দরজা খুলি। একটু আগে মাঠে দেখা ছেলেগুলি। সবার আগে অশোক। ওর মুখচোখ জ্বলজ্বল করছে। কী হয়েছে অশোক? জিজ্ঞাসা করি আমি। ওরা একসঙ্গে হড়বড় করে বলে, বাবুজী আপনি চলে যাওয়ার পর আমরা সবাই মিলে ওকে ধরাধরি করে তুলে খাড়া করে দিয়েছি। তারপর? প্রায় রুদ্ধশ্বাসে বলে ফেলি। অশোক বলে, খানিক লড়খড়িয়ে ও আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেছে গ্ৰামের দিকে।
ওদের কথা শুনে আমার আনন্দে চোখে জল এসে যায়। হয়তো এযাত্রা বেচারা বেঁচে যাবে। ভ্রমণপথে রাস্তাঘাটে আলাপ হলে শিশুদের দেওয়ার জন্য আমার কাছে সর্বদা কিছু চকলেট থাকে। গতকাল পান্না থেকে কেনা এক প্যাকেট টফি ছিল। ওদের আটজনের হাতে দুটো করে দিই। সবার মাথায় হাত ছুঁইয়ে আশীর্বাদ করার ভঙ্গিতে বলি, তোমরা আজ খুব পূণ্যের কাজ করলে। ভগবান তোমাদের মঙ্গল করুন। এবারেও ওরা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। বিশেষ করে অশোক। হয়তো পূর্বপরিচিত বলে। সকালেও ওর সাথে চায়ের দোকানে আলাপকালে মনে হয়েছিল শান্ত, মিতবাক অশোকের দৃষ্টি বেশ মর্মভেদী। যেন ভেতর অবধি পড়ে নিচ্ছে। আমায় সংবাদ দিয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে চলে যায় গ্ৰামের দিকে। চরাচরে তখন সূর্যাস্তের পর ঘন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তবে দিনান্তের সেই ভার নেমে গিয়ে মনটা তখন ভোরের মতো হালকা লাগছে।
চায়ের দোকানী তরুণ অশোক - হয়তো সে এযাত্রা বেঁচে যাবে ওদের কৃপায়
(চলবে)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।