এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( তৃতীয় খন্ড ) - ৪২ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২৫ | ২৬ বার পঠিত
  •                      ( ৪২ )

    বিভূতিবাবু অনেকদিন পর গঙ্গার দোকানে এসে বসেছেন ।  আজ আকাশ মেঘলা । বৃষ্টি হতে পারে মনে হচ্ছে ।
    বিভূতিবাবু বললেন, ' কি রে গঙ্গা কেমন বুঝছিস ?
    অন্য কিছু দেখা যাচ্ছে ? '
    ---- ' আমাদের আর অন্যরকম কি হবে ? যেমন ছিলাম তেমনই আছি ... শুনছি এরা নাকি গরীব মানুষের পার্টি ... দেখা যাক ... '
    ---- ' যা বলেছিস ... আমরা হলাম ছাপোষা গেরস্থ। না হোমের না যজ্ঞের ।  কে এল কে গেল কি আসে যায় আমাদের ... নে একটা চা বল ... '
    ----- ' হ্যাঁ , এই প্রশান্ত ... দুটো চা বলে আয় তো ... '
    ---- ' জন্মেজয়বাবুর কথা খুব মনে পড়ে । বড় ভাল লোক ছিল । দেশ গাঁ ছেড়ে এখানে এসে একদম ভাল লাগত না । মোটে শান্তি পেত না । শিকারের টান কি আর কাটানো যায় ? '
    ----- ' সেটাই  তো সেটাই  তো ... সেটা বোধহয় উনি নিতে পারলেন না ... ' দাঁড়িপাল্লায় আটা মাপতে মাপতে বলল গঙ্গাপ্রসাদ ।
    ---- ' আর ... যে যেমন কাটানোর জন্য এসেছে এ দুনিয়ায় , তার বাইরে যাবার তো উপায় নেই ... বুঝলি কিনা ... '
    ----- ' হ্যাঁ ... তা তো ঠিকই ... এই  নিন , জায়গা এনেছেন ? '
    খদ্দের থলে খুলে ধরল , ' এই  যে ... '
    ---- ' এই  আমাকেই  দেখ না ... কত কি করব ভেবেছিলাম , কিছুই  করতে পারলাম না জীবনে ... যাক... আর তো ক'টা দিন ... হয়েই তো এল ... '
    গঙ্গা কি বলা উচিত ভেবে না পেয়ে পরবর্তী খরিদ্দারের দিকে মন দিল ,  ' হ্যাঁ বলুন ... সার্ফের গুঁড়ো, লুজ ?  কাল পাবেন , ফুরিয়ে গেছে ... প্যাকেট আছে ... ঠিক আছে কাল আসুন ... '
    বিভূতিবাবু বললেন, ' হ্যাঁরে গঙ্গা ... মানিক চ্যাটার্জির কোন খবর জানিস নাকি ? বুড়ো বয়সে বিয়ে করে দেদার খরচা করে খাওয়ান দাওয়ান করাল । মানিককে সেই ছোটবেলা থেকে চিনি । পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেত । বরাবরই খুব শান্ত ধরণের ... '
    ----- ' বউদির তো বাচ্চা হবে শুনলাম ... খুব ভাল লোক উনি । দুদিন আমার দোকানে এসেছিলেন... খুব কথা বলেন বৌদি । বেশ সাদাসিধা মনে হল ... '
    ---- ' তাই নাকি ? বাহ্ ... খুব ভাল খুব ভাল ... এখনও সময় আছে ... '
    ----- ' কিসের ? '
    ---- ' এই  ... ছেলেপুলে মানুষ করার ... ' 
    --- ' ও আচ্ছা । তাছাড়া আর একটা জম্পেশ নেমন্তন্ন আসতে চলেছে । অন্নপ্রাশন হলে ... হ্যাঃ হ্যাঃ ... জোর পোলাও মাংস... পয়সা থাকলেই হয় না , দিল থাকা চাই  ... ভুল বললাম ? '
    ---- ' আরে দূর ... গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল .... তুইও যেমন ... কি হয় দেখ আগে , ছেলে না মেয়ে ... যাকগে , ওসব বাজে কথা বাদ দে । মানিকের বউটা ভাল হয়েছে এটাই বড় কথা ... '
    আরও খানিকক্ষণ এর ওর খবর নিয়ে বিভূতিবাবু বললেন, ' আচ্ছা উঠি এখন । নিত্যানন্দের সেলুনে যাব একটু ... দাড়িটা কামাতে হবে । নিজে কাটতে আর ইচ্ছে করে না । বড় আলিস্যির কাজ .... '
    ----- ' যা বলেছেন জ্যাঠামশাই... '  

       
        প্রতিবিম্ব বলল, ' এবার বিদেশে গেলে তোমাদের নিয়ে যাব ভাবছি । ট্যুরিস্ট ভিসাতেই হয়ে যাবে ... '
    ----- ' দূর ওসব বিদেশ ভ্রমণ ট্রমনে আমার কোন ইন্ট্রেস্ট নেই  । আমি এখানেই  ভাল থাকি ... ' সুমনা উল বুনতে বুনতে বলল ।
    ----- ' দেখ যা ভাল বোঝ । এত ঘন ঘন বিদেশ যাওয়ার ধকল আমারও সহ্য হচ্ছে না । খুব ট্যাক্সিং হয়ে যাচ্ছে ... '
    ----- ' কিন্তু উপায় কি ? বিদেশী কোম্পানিতে ঢুকেছ ... '
    ----- ' সেটাই তো বাঁশ হয়ে গেছে । চাকরিটা চেঞ্জ করব ভাবছি । এত প্রেসার নিতে পারছি না ... '
    ----- ' দেখ বাবা, ভেবে চিন্তে কাজ ক'র । এত টাকা ক'টা কোম্পানি দেবে ? সেটা অবশ্য বড় কথা না, যেখানে অ্যাডজাস্ট করতে পারছ না , সেখানে থাকার দরকার নেই  ... '
    ----- ' হমম্ ... সমস্যা সমস্যা ... ' 
    ----- ' বাপির সঙ্গে ডিসকাস করতে পার এ ব্যাপারে ...
    ----- ' হুঁ , করব ভাবছি ... '
    ----- ' বাপি কিন্তু বেশ খোশমেজাজে আছে এখন ... '
    ----- ' কেন ? '
    ----- ' পলিটিক্যাল সিনারিও চেঞ্জ হল বলে মনে মনে হয় । বাপের তো বরাবরই একটা লেফটিস্ট ইনক্লিনেশান আছে .... আমাদের বাড়িতে লেফটিস্ট ফিলসফির প্রচুর বই আছে ,জান কি ?'
    ---- ' না অতটা জানি না । এবার গিয়ে দেখতে হবে।
    তবে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসিতে ইজম টিজম  ইউজলেস ব্যাপার । আসল কাজ হল সুকৌশলে ইলেক্টোরাল মেকানিজমকে ম্যানিপুলেট করা এবং
    ক্ষমতা দখল করা । তারপর সেই পাওয়ার রিটেন করার জন্য ফারদার ম্যানিপুলেটিং প্লয় ইনভেন্ট  করা ... '
    ----- 'তা'লে তুমি কি বলছ,পরিবর্তন কিছু হবে না ? '
    ----- ' না তা বলছি না ।  অ্যাপারেন্টলি কিছু পরিবর্তন হয়ত আসতে পারে । কিন্তু বেসিক্যালি স্ট্যাটিক মাইন্ডসেটের একটা সোসাইটিতে, যারা জাস্ট স্ট্যাটাস ক্যু মেন্টেন করেই দিব্যি থাকে, সেখানে রেডিক্যাল চেঞ্জ আনতে গেলে নিজের কবর নিজে খোঁড়া হবে । এই পাওয়ার পলিটিক্সের এনভার্নমেন্টে কোন রুলিং পার্টিই সেই গাড্ডায় পা দিতে চাইবে না যেখানে শর্ট টার্ম গ্র্যাটিফিকেশান  ইজ দা মোস্ট সট আফটার ফেনোমেনন ফর দা জেনারেল মাস । এখন ... দেখা যাক ।   শুরুতেই এতটা পেসিমিস্টিক হওয়া তো ঠিক না ... '
    সুমনা বলল, ' দেখি , একটু ঘুরে দাঁড়াও তো ... '
    ----- ' কেন ? ' 
    ---- ' তোমার কাঁধের মাপটা একটু নেব । আর একটু বাড়াতে হবে মনে হচ্ছে । ফুল স্লিভ সোয়েটার একটু লুজ পরলেই ভাল লাগে ....  কালারটা কিন্তু দারুন ... '

      
        মোনা মজুমদার বলল, ' কি , মিলল তো আমার কথা ? '
    সাগর হাসতে হাসতে বলল, ' একদম একদম ... কি হবে এবার ? '
    ---- ' কি হবে তা জানি না । তবে একটা কথা বলে দিয়ে যাচ্ছি , কতদিন বাঁচব জানি না ... '
    ---- ' কি ? '
    ----- ' এরা কিন্তু অনেকদিন টিকবে ... '
    ---- ' কি করে বুঝলে ?'
    ---- ' এরা ঘরের ঝগড়া বাইরে আনে না আমাদের মতো .... তাতে পার্টি বাঁচে বাঁচুক মরে মরুক ... '
    ----- ' তা ঠিক .... '
    ----- ' তুই শোন ... তুই  যেমন কাজ করছিলি করে যা ... দেখ না কি হয়  । মনে হয় হেল্প পাবি ... '
    সাগর আবার হেসে ফেলল । বলল, ' না ...আঃ ...  অত সহজ সরল ব্যাপার ভেবে নিও না এখন থেকে । কিছুদিন যাক, তারপর কমেন্ট ক'র ... ' 
    ----- ' যাক যাক .... '
    এই  সময়ে অশোক পাল এসে হাজির হলেন সাগরের দোকানে ।
    ----- ' এই যে পালবাবু ... আসুন । কি খবর ? '
    ---- ' খবর আর কি ... কিসুই তো হইল না এখনও ... ' , পালবাবু হতাশ ভঙ্গীতে ও পাশের ছোট বেঞ্চটায় বসে পড়লেন ।
    ----- ' কেন , কি হল ? '
    ---- ' অ্যাডভোকেট সাহেবের সঙ্গে এখনও তো পাকা কথাই কিসু হইল না । কবে যাবেন আবার ? আমার তো এদিকে ... কি আর বলব ... '
    উনার মেয়ে তো আমার হয়ে যথেষ্ট কইলেন ... '
    ---‐- ' আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ... সব মনে আছে । আমি একটু সময় নিচ্ছিলাম । এর মধ্যে স্যার দু একজনের সঙ্গে কথা বলে রাখতে পারবেন । রোজ রোজ তো ওনাকে বিরক্ত করা যায় না ... '
    পালবাবু মুখ গোঁজ করে বললেন, ' দ্যাখেন কি করবেন ... আমি আর কি বলব ... '
    মোনাবাবু বললেন, ' পালবাবু কিরকম বুঝছেন ? '
    ---- ' কি ব্যাপারে ? '
    ---- ' এই  যে সরকার পরিবর্তন হয়ে নতুন পার্টি এল ... '
    ----- ' তাতে কি হইল ? আমার তাতে কি বা লাভ কি বা ক্ষতি ? '
    ----- ' লাভ বা ক্ষতি কিছুই নেই বলছেন ? '
    ----- ' আরে দূর দূর .... পোলাপান নাকি ? নাই কাজ তো খই ভাজ ... ওসব আপনাদের ব্যাপার , আপনারা সিন্তা করেন গিয়া .... '
    মোনাবাবু বললেন, ' হ ... হেব্বি দিসেন কিন্তু দাদা ...'
    সাগর হেসে উঠল, ' হাঃ হাঃ হাঃ ... '

         আজ রবিবার ।  অমল আনমনে উত্তরা সিনেমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল । তৃণা ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে । ভ্রান্তিবিলাস বলে একটা পুরনো সিনেমা হচ্ছে উত্তরায় । হলের সামনে তেমন লোকজন নেই । টিকিট কাউন্টারের সামনে দুটো লোক দাঁড়িয়ে আছে । ইভনিং শো শুরু হবার মুখে । অমল একবার ভাবল টিকিট কেটে ঢুকে পড়লে হয় , ঘন্টা দুই  কাটিয়ে দেওয়া যাবে । তারপর ভাবল , অন্ধকার সিনেমা হলে বসে থাকার চেয়ে কর্নওয়ালিস স্ট্রিট দিয়ে লোকজন , দোকানপাট দেখতে দেখতে হেঁটে যাওয়া ভাল । বেশ লাগে অমলের । কি প্রাণস্পন্দনময় যে লাগে এই  রাস্তাটা ...  দিনের যে কোন সময়ে , বিশেষ করে সন্ধেবেলায় ।
    কাল , মানে চব্বিশে সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেনে পেলে খেলতে নামবে । মোহনবাগান একটা এগ্জিবিশান ম্যাচ খেলবে নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবের সঙ্গে । সেই  নিয়ে  উত্তেজনার শেষ নেই । পেলেকে নিয়ে রহস্য ও রোমাঞ্চের শেষ নেই  কলকাতাবাসীর মনে । প্রায় নির্বিকল্প ঈশ্বরের এই  নশ্বর ধরাধামে চর্মচক্ষে  দর্শন পাওয়ার অতিন্দ্রিয় অনুভূতিতে আপ্লুত কলকাতার আবালবৃদ্ধবনিতা জনগন । ক্লাবঘর হোক, পাড়ার রক হোক আর বাড়ির বৈঠকখানা হোক কিংবা মাছের বাজার হোক  পেলের ফুটবল দক্ষতা সংক্রান্ত নানা  অতিপ্রাকৃত বিস্ময়সৃষ্টিকারি লোকগাথা অবিরত গুঞ্জরিত হয়ে চলেছে । কাল  বিকেলে ইডেন উদ্যানে নেমে আসবে সেই পবিত্র মাহেন্দ্রক্ষণ । নতুন টিভি এবং পুরনো টিভি সারাইয়ের দোকানে ক'দিন ধরে ব্যাপক ব্যস্ততা। নিশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই  ।
    এদিকে সন্তোষ ঘোষ মশাই আনন্দবাজারের আর্টিকেলে লিখলেন , ' উদ্দেশ্য ছাড়া সিদ্ধি লাভ হয় না ... '
         অমল খেলাধুলো নিয়ে কোনদিনই বিশেষ আগ্রহী ছিল না । পেলে নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই  । তবে একটা কৌতূহল নিশ্চয়ই  আছে । ভাবল, কাল টিভি তে দেখতে হবে ব্যাপারটা কি ।
    অমল হাঁটতে হাঁটতে হেদুয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেল । ঢুকে পড়ল কোনের গেটটা দিয়ে । শারদ হাওয়া বইছে ভরাট সন্ধের হেদুয়ায় ।

         হেদুয়ার বেঞ্চে বসে পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে অমলের মনে হল গীটারটা কাছে থাকলে ভাল হত । একটুখানি বসতে দিও কাছে গানটা বাজানো যেত । কল্পনা করে নিত পাশে রাত্রি বসে আছে । কত দিন কত রাত কেটে গেল বছরের পর বছর ধরে । হেদুয়ার পুকুর কতবার শূন্যগর্ভ , কতবার পূর্ণ গর্ভ হল জলে তার ঠিক নেই । অমল ভাবতে লাগল, অগোচরে কিভাবে বয়স বেড়ে গেল একটু একটু করে । পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ে মনটা কেমন খারাপ খারাপ লাগে ।
    সামনে দিয়ে একজন ঝালমুড়িওয়ালা যাচ্ছিল । অমলের সামনে থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ' বলুন বাবু ... '
    অমল বলে, ' দাও একটা ... '
    দিব্যি বানিয়েছে । ঝালমুড়ি মুখে পড়তে মন ভাল হয়ে গেল অমলের। বেশ তরতরে লাগছে ।
    ভাবল, সাগর মন্ডলের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি । সাগরবাবু এখন কি আর তেমন আছে । কি জানি । নিখিল ব্যানার্জী স্যার এখন থাকলে তার কাছে অনেক কিছু শোনা যেত , নতুন জমানায় কি হতে পারে না পারে ।
    যাক , যা গেছে তা যাক । কিছু তো করার নেই  । কোন কিছুই  ইচ্ছেমতো ধরে রাখা যায় না । যা হারাবার তা হারিয়ে যায় । 
    ঝালমুড়ি শেষ হয়ে গেলে ঠোঙাটা পাকিয়ে ফেলে দিল অমল ।
         
        সকালবেলায় উঠে বিভূতিবাবুর হঠাৎ মনে হল অনেকদিন রামকৃষ্ণ বোস স্ট্রিটে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি । শ্বশুরমশাই বেঁচে থাকতে বৃষ্টি বাদল ছাড়া প্রায় প্রত্যেকদিন যেতেন । ঠিক করলেন, আজ একটু পরে যাবেন রামকৃষ্ণ বোস স্ট্রিটে । ওরা তেমন ভাল নেই বলে শুনেছেন । কারোরই শরীর তেমন ভাল নেই  । যে শালির মৃগী ছিল সে বছরখানেক আগে মারা গেছে । বিভূতিবাবুর মনে হয় , বেচারি মরে বেঁধেছে । কে দেখত ওকে ? এ পৃথিবীতে আরো কত লোক এরকম 'মরে বাঁচে' এখানে ওখানে । কে আর কার খবর রাখে । মনটা মাঝে মাঝে বড় ব্যস্ত হয়  আজকাল । কত লোকের কথা মনে পড়ে । মনটা অকারণে ব্যস্ত হয় । এলোমেলো হাওয়ায় মনের নির্জন উঠোনে স্মৃতির শুকনো পাতারা বিভোল আবেশে ওড়াউড়ি করতে থাকে এ কোণ থেকে ও কোণে ।

        চা জলখাবার খাওয়া শেষ হলে বিভূতিবাবুকে গায়ে পাঞ্জাবী গলাতে দেখে রমা জিজ্ঞাসা করলেন , ' কি হল ... সাত সকালে চললে কোথায় ? '
    বিভূতিবাবু চুলে চিরুনি বোলাতে বোলাতে বললেন, ' একটু রামকান্ত বোস স্ট্রিট থেকে ঘুরে আসি । অনেকদিন ওদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি । লজ্জার ব্যাপার ... '
    ----- ' দেখ বাপু , সাবধানে যেও । তোমারও তো শরীর ভাল না ... ছাতা নিয়ে বেরিও । রোদের খুব তাত ... তাড়াতাড়ি ফির ... '
    যে যার আপনজনের কথাই সবার আগে চিন্তা করে ।
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... চিন্তা ক'র না । বেশিক্ষণ বসব না ... যাব আর আসব ... '

       রামদুলালের মোড়ে ছাতা হাতে নিয়ে বিভূতিবাবু ডানদিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন শ্যামবাজারের ট্রামের জন্য ।  রোদ্দুর জমজম করছে তকতকে নীল আকাশের নীচে ।

       একটা সুখবর হল , কাবেরী একদম সুস্থ হয়ে গেছে । গৌতম আর কাবেরীর সঙ্গে একদিন হাতিবাগানের মোড়ে দেখা হয়ে হয়েছিল সুমনার ।
    সুমনার ভীষণ আনন্দ হল ।
    কাবেরী নিজেই বলল , ' ডাক্তারবাবু বলেছেন  মেডিসিন  কন্টিনিউ করে যেতে হবে ... আমাকে খুব খারাপ ভাবতিস , না ? '
    সুমনা বলল, ' তোকে যে খারাপ বলে সে নিজেই  খারাপ ... '

        ( সমাপ্ত )
    ********************************************

       


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন