এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( তৃতীয় খন্ড ) - ৮

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মার্চ ২০২৫ | ৫৭ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০
    ( ৮ )

    প্রতাপ ধর মাথা ঠান্ডা রাখল। তার বাস্তববুদ্ধি থেকে সে বুঝতে পারল সে ফাটা বাঁশে পড়েছে। আপাতত ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার দরকার। তারপর মামলাটা তলিয়ে ভাবতে হবে। এই পাবলিকও তো কোন অর্ডিনারি পিস মনে হচ্ছে না।
    বোধহয় লাল পার্টির কেউ হবে, হয়ত অনেকদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল। এর সঙ্গে তার তো এই প্রথম মোলাকাত। মোনাবাবু কি তার সঙ্গে বেইমানি করল ? সে যাই হোক, সে দ্রুত ভেবে নিল, পরিস্থিতিতে এক্ষুণি জল ঢালার দরকার। হিট খুব বেড়ে গেছে।
    প্রতাপ অভয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ' তোমার মেয়ের ভালোর জন্যই তো যা করার করছিলাম। একটা সংসার ভেঙে যাক আমি চাইনি ... তুমিও তো নিশ্চয়ই চাও যে তোমার মেয়ে সুখী হোক। মেয়ে চিরকাল বাপের বাড়ি পড়ে থাকলে কি তোমারই ভাল লাগবে ? দেখ যা ভাল বোঝ ... আমার কি ? নিজেদের ব্যাপার যদি নিজেরা মিটিয়ে নিতে পার আমার কি বলার আছে ? তোমরা যদি না চাও তোমাদের ব্যাপারে থাকব না। আমাকে বললেই পারতে ... আমার কি স্বার্থ আছে ... এসব বাওয়ালের কোন দরকার ছিল কি? '
    মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অভয় পাল মুখ গোঁজ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।
    মোনাবাবু বললেন, ' বসে পড় ... বসে পড় ... টেনশান নেওয়ার দরকার নেই। তোমাকে কিছু বলতে হবে না। বলার জন্য তো সাগর আছে ... '

    প্রতাপ ধর সাগরের দিকে তাকাল, বোধহয় শান্তি স্থাপনের আবেদনের দৃষ্টি নিয়ে।
    সাগর বলল, ' আমি এখন চলে যাচ্ছি ... কিন্তু তোকে বলে যাচ্ছি আমাকে যেন আর না আসতে হয়। আমি জানি পরের ঘরে নাক গলিয়ে পার্টি তোকে এসব ওস্তাদি করতে বলেনি। কারও কাছ থেকে হিস্যা খেতে বলেনি। এখনও বলছি সাবধান হয়ে যা ... আর যে ক'দিন আছিস ... '
    সাগরের এসব হুমকির তাপে স্যাঁকা গায়ে ছ্যাঁকা মারা কথাবার্তা প্রতাপের মাথায় ঢুকছিল না। সে আপাতত এই ইঁদুরকল থেকে বেরোবার রাস্তা খুঁজছিল। ভাবছে, পরের নক্শা পরে ছকা যাবে ... এখন তো বেরিয়ে যাই ...
    সে অভয়কে বলল, ' ঠিক আছে ... যাও এখন, আমাকে কিন্তু আর এসব ফালতু ঝামেলায় জড়িও না ... আমি বলে কারো সাতে পাঁচে থাকতে
    চাই না ... বেকার সময় নষ্ট ... এমনিতে বলে নিশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই ... তার ওপর এইসব ... পরের উপকার করতে গেলে এরকমই ফাঁসতে হয় শালা ... '
    মোনাবাবু ভাবলেন, ' প্রতাপ আর কিছু শিখুক না শিখুক খেলা ঘোরাবার প্যাঁচ পয়জার বেশ রপ্ত করে নিয়েছে। এমনভাবে ডায়লগ দিচ্ছে যেন পুরো দোষটা অভয় পালের। সেই ওকে ফাঁসিয়েছে। বেঁচে থাকলে হবে এ ছেলের ... ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বারবার তো আর সাগর মন্ডলের হাতে পড়তে হবে না ... করে খাওয়ার অসুবিধে হবে না ... '
    সাগর বলল, ' এটাই কিন্তু ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ওয়ার্নিং। মনে গেঁথে নে ... '
    প্রতাপ অন্যদিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল, ' হুঁ ... ফালতু খিচাইন ... '
    সাগর বলল, ' অভয় চল ... বাজারে যাবে তো ... আমিও বাজারে যাব ... মোনাদা কোনদিকে যাবে ?'
    মোনাবাবু বললেন, ' আপাতত তোমার সঙ্গে ... তারপর বাগবাজারে যাব ...শত ঘোষের অফিস...'
    --- ' ঠিক আছে, চল ... '
    পা বাড়ানোর আগে সাগর তিন গলির মোড়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে পাঁচটা ছেলেকে ডাক দিল।
    ওরা প্যান্টের পকেট থেকে হাত বার করে নিল। পাঁচজনের তিনজন হল মাণিক, শম্ভু আর বাদল।
    হঠাৎ এই সব অপারেশনের একসময়ের ক্যাপ্টেন কানুর কথা মনে পড়ে গেল সাগরের। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।

    রাত্রিবেলা রাত্রি বলল, ' আমি কিন্তু খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। অনেক দিন পরে তো ... '
    --- ' আর ... মরতে তো একদিন হবেই ... রিস্ক কিন্তু এখনও আছে কিছুটা। প্রতাপ ধর এত সহজে হজম করে নেবে বলে মনে হয় না ... '
    --- ' তা না ... ওও তো আর চোখ কান বুজে রিস্ক নেবে না ... ' রাত্রি বলল।
    --- ' হ্যাঁ ... তা ঠিক। খুব কাঁচা লোক বলে তো মনে হল না। অভয়কে বেশ কিছুদিন প্রোটেকশান দিতে হবে। মোনাদা অভিজ্ঞ লোক। সঙ্গে থাকবে বলেছে। এখন দেখা যাক ... সন্তোষ দাসকে কাজে লাগাব ভাবছি। ও খুব ভাল ইনফর্মার... '
    ---'পুরো টিমটাকেই আবার মাঠে নামাবে ভাবছ?'
    --- ' কি করা যাবে ? মাঠে নামতে গেলে পুরো টিমই তো চাই... '
    --- ' হমম্ ... নাও এবার শুয়ে পড়। সারাদিন অনেক ধকল গেছে ... বয়স তো হচ্ছে ... '
    --- ' সেই... আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে চড়চড় করে ... '
    সাগর খাটের দিকে তাকাল। হিমাদ্রি অঘোরে ঘুমোচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে।

    অমলের আজকাল নিখিল ব্যানার্জীর কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয়, ওরকম একটা মানুষের দেখা আর কি কখনও পাওয়া যাবে। কেই বা বলবে ওরকম সব কথা। আর কেউ কি আছে যে স্যারের মতো ওরকম স্বপ্ন দেখাবে আমাদের ...

    এখন রাত এগারোটা বাজে। অমল ঘরে একলাই আছে। তৃণা ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে এক সপ্তাহের জন্য। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়েছে অমল। ল্যাম্পপোস্টের মাথা থেকে নরম আলো ঝরছে অন্ধকারে মাখা কালো রাস্তায়। একটা রিক্শা গেল ঠুং ঠুং করতে করতে মাতাল সওয়ারি নিয়ে ছাতুবাবুর বাজারের দিকে। রিক্শায় বসা লোকটা অদৃশ্য এবং কাল্পনিক কোন শত্রুর উদ্দেশ্যে জড়িত গলায় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে যাচ্ছে নেশার ঘোরে। মোড়ের ওপাশে মিষ্টির দোকানের লাগোয়া রকে বসা মধ্যবয়স্ক আড্ডাবাজ গেরস্থরা আড্ডা শেষ করে
    যে যার সংসারে ঢুকে পড়েছে। রাত্রির মধ্যযাম ধীরে ধীরে গড়িয়ে আসছে। হঠাৎই এক ঝলক এলোমেলো হাওয়া বয়ে এল কোথা থেকে। মিষ্টির দোকানের এপাশে ওপাশে পড়ে থাকা শালপাতাগুলো এদিক সেদিক উড়ে যেতে লাগল উদ্ভ্রান্তের মতো। এই নীরব নির্জন নিশীথে অমলের মনে একটা সুর গুঞ্জরিত হতে লাগল অকস্মাৎ --- ' কিছু বলব বলে এসেছিলেম ... রইনু চেয়ে না বলে ... '। অমলের অবচেতন থেকে একটা ছবি বেরিয়ে এসে দাঁড়াল সঘন নিরালা এই ঘরে। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোর নীচে শুকনো পাতাগুলোর দমকা হাওয়ায় এলোমেলো ছোটাছুটি দেখতে দেখতে কি জানি কি কারনে অমলের চোখে জল এসে গেল। তার হঠাৎ মনে এল ‐-- রাত্রি হাততালি দিয়ে বলছে, 'দারুণ দারুণ ... আর একটা গান বাজান অমলদা ... '

    অমলের সারা বুকে একটা সুর গুনগুনিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল একাকী জানলার ধারে বসে স্তব্ধ রাত্রির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে। বুকের ভিতরের উদাসী বকুলতলা থেকে একটা বাঁধনহারা আবেশ উথলে উঠে তার চোখ জলে ভরে দিতে লাগল। সে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে গীটারটা নামিয়ে আনল অনেকদিন পর। ভাবল, রাত্রি কি আর একবার এসে বসতে পারে না এখানে তার গীটার শোনার জন্য। কি এমন ক্ষতি তাতে ... সে তো এখন বহুযুগের বাতাস খাওয়া এক প্রায় বুড়ো মানুষ।

    ( চলবে )

    *****
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন