এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( তৃতীয় খন্ড ) - ৫ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ মার্চ ২০২৫ | ৬৫ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০
    ( ৫ )

    বিশ্বরূপা ছাড়িয়ে সার্কুলার রোডের দিকে কিছুদূর গেলে রঙ্গনা নামে একটা থিয়েটার হল হয়েছে বছর দু তিন হল। তার মুখোমুখি তলা থেকে ভেসে ওঠা মঞ্চের আর একটা থিয়েটার হল হয়েছে, সারকারিনা।

    রঙ্গনা থিয়েটার হলে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নান্দীকার গ্রুপের নাটকগুলো নিয়মিত শো-এ হয়। তিন পয়সার পালা, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, শের আফগান এই সব নাটকগুলো নিয়মিত মঞ্চস্থ হয়।

    বিভূতিবাবু অনেকদিন পর গুটি গুটি একদিন ইভনিং শোয়ে তিন পয়সার পালা দেখতে হাজির হলেন রঙ্গনায়। প্রায় ফাঁকা হল। মেরে কেটে শ' খানেক লোকের সামনে তিন পয়সার পালা শুরু হল এবং ঘন্টা দুই বাদে শেষ হল। নাটকের শেষে হলের বাইরে বেরিয়ে দর্শকে ঠাসা হলে সাবেক আমলের ঐতিহাসিক নাটকে বুঁদ হয়ে হয়ে থাকা বিভূতিবাবুর মনে হল আমরা মানুষ হইনি। এই জিনিস দেখতে হলে মাত্র শ'খানেক লোক ! তিনি ভাবলেন কয়েকদিন বাদে নাটকটা আবার একবার দেখবেন। সামনের বৃহস্পতিবারের জন্য শের আফগানের টিকিট কেটে নিলেন।

    আনমনে নানা চিন্তা করতে করতে বিভূতিবাবু বটতলা থানার সামনে দিয়ে রূপবাণীর মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। রূপবাণীতে সন্ন্যাসী রাজা বলে একটা ফিল্ম হইহই করে চলছে। ভাল লোক টানছে। বিভূতিবাবু হলের ওপরের হোর্ডিং-এর দিকে তাকিয়ে যীশুখ্রিষ্টের মতো মেক আপ নেওয়া উত্তমকুমারের ছবি দেখতে পেলেন।

    হোর্ডিংয়ের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ নামিয়ে বিভূতিবাবু বাঁ দিকে ঘুরলেন বাড়ির দিকে হাঁটা দেবার জন্য। ঘুরতেই মুখোমুখি হয়ে গেলেন একজনের। সে বলল, ' ভাল আছেন দাদা? অনেকদিন পর ... '
    বিভূতিবাবু মোটা কাঁচের চশমার পিছন থেকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তার দিকে।
    তারপর বললেন, ' আরে সাগরবাবু যে ... আজকাল দেখতে পাই না মোটে ... '
    --- ' হ্যাঁ, আপনাদের পাড়ায় যাওয়া হয়নি অনেকদিন। হাতিবাগানে দোকানে বসতে হয় তো ... '
    --- ' অ ... তা ভাল। সব কিছু তো বদলে গেল কেমন ... আপনাদের মতো মানুষ এখন কোথায় ? তিন পয়সার পালা দেখেছ নাকি ? '
    বিভূতিবাবু আজকাল প্রায়ই আপনি আর তুমি মিশিয়ে ফেলেন।
    --- ' কি বললেন ? '
    --- ' ওই যে নাটক ... রঙ্গনায় হচ্ছে ... '
    --- ' ও আচ্ছা ... না না দেখা হয়নি ... আপনি দেখেছেন নাকি ? '
    --- ' হ্যাঁ ... এই তো দেখে ফিরছি। খুব ভাল ... খুব ভাল ... '
    --- ' ঠিক আছে ... দেখি, সময় করে একদিন ... '
    --- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... দেখে আসুন। ওই ইয়ে ... একটা কথা ছিল ... '
    --- ' হ্যাঁ বলুন না ... '
    --- ' আমাদের বাড়িতে একদিন আসুন না আপনারা ...দুপুরবেলায় খাওয়াদাওয়া করবেন ...আমি আর ক'দিনই বা বাঁচব ... সবার সঙ্গে একটু একসঙ্গে হতে ইচ্ছে করে ... '
    এমন অপ্রত্যাশিত নিমন্ত্রণ পেয়ে সাগর একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
    একটু ভেবে নিয়ে বলল, ' আচ্ছা ... ঠিক আছে।
    কবে ? ছুটির দিন হলে সুবিধে হয়, ওর তো স্কুল থাকে ... '
    --- ' না না ... সে ব্যাপারে কোন অসুবিধে হবে না। সামনের রবিবার আসুন। ছুটির দিন .... তোমার দোকানও তো ... '
    --- ' অর্ধেক দিবস আর কি ... '
    --- ' ব্যাস ... তা'লে তো কোন অসুবিধে নেই ... তা'লে ওই কথাই রইল ... '
    --- ' হ্যাঁ ঠিক আছে ... তবে কখন কি হয় কিছু বলা তো যায় না ... আপনি শনিবার বিকেলের দিকে একবার পটলের দোকানে খবর নেবেন। পটলকে চেনেন তো ? '
    --- হ্যাঁ হ্যাঁ ... বিলক্ষণ চিনি। কতবার গেছি। ঠিক আছে ... শনিবার খবর নিয়ে নেব ... আর ক'দিনই বা আছি ... '
    --- ' না না ... ও কথা বলবেন না দাদা। আপনাদের মতো লোক আর আসবে না ... '

    বাড়ি ফিরে সাগরকে নেমন্তন্ন করার ব্যাপারটা রমাদেবীকে বলে ফেললেন বিভূতিবাবু।
    রমাদেবী কিন্তু শুনে খুব খুশি হলেন না। গম্ভীরমুখে বললেন, ' আবার কেন ওসব লোককে ঢোকাচ্ছ বাড়িতে ... '
    --- ' ওসব লোক মানে ! কিসব লোক ? '
    --- ' আসলে তো গুন্ডা....যে যাই বলুক। এখন নয় একটু ভদ্র সভ্য হয়েছে ... '
    বিভূতিবাবুর মাথা গরম হয়ে গেল। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল।
    --- ' চুপ কর চুপ কর ... যা বোঝ না তা নিয়ে কথা বোল না ... ওর বৌ কত শিক্ষিত জান ... '
    --- ' বাঁদরের গলায় মুক্তোর হার ... ওই তো অঞ্জলিদের আত্মীয় মেয়েটা। বিয়ে করার আর লোক পেল না ... বলিহারি যাই ... '
    তার স্ত্রীর মুখে সাগরের সম্বন্ধে এসব কথা শুনে রাগে ক্ষোভে বিভূতিবাবু এমন দিশেহারা হয়ে গেলেন যে তিনি কি বলবেন ভেবে পেলেন না।
    কোনরকমে বললেন, ' তোমার ... তোমার লজ্জা হওয়া উচিত। তোমার বোঝার ক্ষমতা নেই ও কত বড় ... '
    রমাদেবী বিশেষ উত্তেজিত হলেন না। ঠান্ডা মাথায় বললেন, ' তুমি বোঝার চেষ্টা কর ... এসব লোককে বাড়িতে ডাকলে কে কি ভাববে ... এখন সাগরদের কোন ক্ষমতা নেই। আমি যেটুকু বুঝি ... এখনকার পার্টি পলিটিক্স আলাদা ... '
    বিভূতিবাবু তার স্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি তো এসব কিছুই বোঝেন না। বোঝার দরকারও অনুভব করেন না।
    --- ' ও বাবা... তুমি যে এত জান, তা তো বুঝিনি কখনও। তবে এটাও জেনে রাখ সাগররা রবিবার এ বাড়িতে আসবে। তার ফলে কিছু হলে সেটা আমি বুঝে নেব ... '
    বলে মেঝের দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে দুই হাঁটুতে হাত বোলাতে লাগলেন খাটে বসে বসে।
    স্বামীর এহেন ভাব দেখে রমাদেবী তাকে আপাতত আর ঘাঁটাতে সাহস পেলেন না।
    বললেন, ' ঠিক আছে, সে দেখা যাবে'খন। অত ভালমানুষ হবার কোন দাম নেই আজকালকার দিনে, বুঝলে ... এখন খেতে বস ... '
    বিভূতিবাবু যে ভালমানুষ তা তার নিন্দুকরাও অস্বীকার করে না।
    বিভূতিবাবু হাঁটুতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,
    ' যাচ্ছি যাচ্ছি ... ভাত বাড় না ... '
    রমাদেবী ভাত বাড়তে বাড়তে বললেন, ' তোমার এখন বয়স বাড়ছে, খেয়াল রেখ ... এখন এসব সাগর টাগরের সঙ্গে দহরম মহরম না করাই ভাল। ওর অনেক শত্রু আছে ... তারা সবসময়ই ওৎ পেতে বসে আছে ...'
    --- ' তাতে কি হল ... সাগর কি ওসবে ভয় পাবার লোক নাকি ? মানুষের উপকার যারা করে তাদের ওরকম অনেক শত্রু থাকে ... '
    --- ' নাও বস বস ... এঁচড়ের তরকারি খাবে কি ? '
    --- ' না না ... ওসব হজম হয় না আজকাল ... '
    --- ' তাছাড়া এখন ওর কোন ক্ষমতা নেই। দাঁত নখ কোনটাই নেই ... '
    রমার কথা শুনে বিভূতিবাবুর খাওয়া থেমে গেল। কিন্তু তিনি একটুও উত্তেজিত হলেন না এবার।
    শান্ত আত্মবিশ্বাসের স্বরে বললেন, ' সিংহ কোনদিন মেষ হয় না এটা মনে রেখ। সময় এলেই জানতে পারবে সাগর মন্ডল ফসিল হয়ে যায়নি ... ঠিক আছে তোমার যখন আপত্তি আমি সাগরের নেমন্তন্ন ক্যানসেল করে দেব। কিন্তু তার সঙ্গে এটা জেনে রাখ, সাগর যেদিন স্বমূর্তিতে ফিরবে সেদিন কিন্তু তুমি আর আমাকে আটকাতে পারবে না .... '
    রমাদেবী বললেন, ' আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে, তাই হবে। এখন ধীরে সুস্থে খাও তো ... তুমি এখন নেমন্তন্ন ক্যানসেল করবেই বা কি করে ? '
    বিভূতিবাবু শ্লেষাত্মক ভঙ্গীতে বললেন, ' তোমার অত চিন্তা না করলেও চলবে। পটলের দোকান চেন কি ? '
    রমাদেবী হাল্কাভাবে নেতিবাচক মাথা নাড়লেন।
    বিভূতিবাবু মুখের ভাতটা গিলে নিয়ে বললেন, ' না জানাই ভাল। পটলকে আজই বিকেলে জানিয়ে দেব ... চিন্তা কোর না ... '

    বিভূতিবাবু ধীর পায়ে হেঁটে পরদিন বিকেলবেলায় পটলের দোকানের সামনে গিয়ে পৌঁছলেন। দেখলেন পটল একজন ফর্সামতো বেশ সুন্দর দেখতে মহিলার সঙ্গে কথা বলছে। ওদের কথা বলতে দেখে তিনি দোকানের মুখ পর্যন্ত না গিয়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে রইলেন।
    পটলের চোখে পড়তে সে বিভূতিবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, ' জেঠু আসুন না .... আসুন না ... '
    বিভূতিবাবু কাছে যেতে পটল একটা টুল এগিয়ে দিয়ে বলল, ' বসুন জেঠু ... '
    সুমনা বলল, ' ঠিক আছে ... আমি তা'লে এগোই পটল ... তুই মেসোমশাইয়ের সঙ্গে কথা বল ... ডেটটা ঠিক হলে আমায় জানাস ... '
    সুমনা বিভূতিবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, ' আসি মেসোমশাই ... পরে দেখা হবে ... '
    বিভূতিবাবু মুখ তুলে সুমনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
    --- ' হ্যাঁ মা ... আচ্ছা ... '
    সুমনা একটুখানি দাঁড়িয়ে গেল, ' মেসোমশাই আপনি রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে থাকেন, না ? নকুড়ের দোকানের কাছে ... '
    --- ' হ্যাঁ মা। তুমি কি আমাকে চেন ? '
    --- ' সাগর স্যারের মুখে আপনার নাম শুনেছি। উনিই বলেছিলেন আপনার বাড়িটা ওই ওখানে। সাগর স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসেন ... '
    বিভূতিবাবুর মুখে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি আপ্লুত স্বরে বলতে লাগলেন, ' সেটা আমার সৌভাগ্য। আমি আর কে ? সাগরের মতো মানুষ আর ক'জন আছে ... '
    --- ' তাই তো ... ' সুমনা বলল।
    বিভূতিবাবু বললেন, ' তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না মা ... '
    সুমনা বিবেকানন্দ রোডের দিকে দেখিয়ে বলল, ' আমি ওদিকে থাকি। বেথুন কলেজে পড়তাম ... '
    --- ' ও আচ্ছা ... '
    পটল বলল, ' ম্যাডামের বাবা খুব বড় উকিল ... '
    --- ' তাই নাকি ? এই এলাকাতেই থাকেন ? '
    --- ' তা বলতে পারেন ... শ্রীমানি বাজারের ওখানে ... '
    --- ' নামটা ? '
    সুমনা কিছু বলার আগেই পটল ফস করে বলল, ' ওলুকুন্দু মিত্র ... '
    --- ' কি ? '
    সুমনা পটলের শব্দ সংশোধন করল।
    --- ' অলোকেন্দু মিত্র '
    --- ' তাই নাকি ... তুমি অ্যাডভোকেট অলোকেন্দু মিত্রের মেয়ে ! ওরে বাবা ... '
    সুমনা স্মিত হেসে নত নয়নে দাঁড়িয়ে রইল। সে কি একটা বলতে যাচ্ছিল এমন সময়ে ফুলহাতা জামা আর ঢোলা মতো একটা প্যান্ট পরে খুব ছোট করে কাটা চুলওয়ালা একজন এসে দাঁড়াল সেখানে। চোখে মুখে একটা জমাট উদ্বেগের ছাপ।
    এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ' সাগরদাকে পাওয়া যাবে ? রাত্রি ম্যাডামকে পেলেও হবে। উনি সব জানে ... খুব আর্জেন্ট... মানে হাতে সময় কম ... '
    পটলের মনে এক লহমায় পুরনো দিনের স্মৃতি ফিরে এল। এরকম কত লোক এখানে সাগর মন্ডলের সাহারা চেয়ে এসে হাজির হত যখন তখন।
    পটলের মনে হল সেই সব আবছা দিন যেন ধূলোবালি ঝেড়ে আবার উঠে বসতে চলেছে।
    বিভূতিবাবু বোধহয় ভদ্রলোককে দেখে পীড়িত বোধ করলেন।
    তিনি না বলে থাকতে পারলেন না। পটলের দিকে দেখিয়ে ব্যস্তভাবে বললেন, ' একে বলুন না ... একে বলুন না ... অসুবিধে হবে না ... '
    পটল বলল, ' আপনি নিশ্চিন্তা থাকুন ... আমি কিছুক্ষণের মধ্যে খবর করছি .... না না দাঁড়ান ... এক কাজ করুন ... হাতিবাগানে দাদার দোকানে চলে যান ... এখন আছে। বলবেন, পটলের দোকান থেকে আসছি ... '
    --- ' ওনার দোকানটা কোন জায়গায় ? '
    --- ' ওই তো ... রামলালের দোকানের তিনটে দোকান পরে। মন্ডল হার্ডওয়্যারস .... '
    --- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... যাই দেখি ... '
    --- ' হ্যাঁ নিশ্চয়ই ... এখন পেয়ে যাবেন। বলছি যে, কেসটা কি আমাকে বলা যাবে ? অসুবিধে থাকলে বলতে হবে না ... '
    --- না না সেরকম কোন ব্যাপার নেই। কেসটা নতুন না। বেশ কয়েক বছরের পুরনো। সাগরদা এবং রাত্রি ম্যাডাম এটা নিয়ে লড়েছিলেন। আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বদমায়েসির ব্যাপার নিয়ে ....'
    --- ' মেরে মুখ ভেঙে দিতে হয় এদের ... শুয়োরের ইয়ে ... '
    পটল, বিভূতিবাবু এবং সুমনা উপস্থিত রয়েছে বলে কোনরকমে নিজের রাগ এবং উত্তেজনায় লাগাম পরাল।
    বলল, ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... তারপর ? '
    --- ' মেয়ে আমার কাছে চলে এসেছিল। আর তাকে পাঠাইনি। কিন্তু এখন আবার মেয়েকে ফেরত পাঠাবার জন্য চাপ দিচ্ছে নানাভাবে। উকিলের চিঠি পাঠিয়েছে। নানারকম থ্রেটও দিচ্ছে। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। পার্টির বড় বড় লোকের সঙ্গে ওদের দহরম মহরম। না পাঠালে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলেছে। ওখানে গেলে আমার মেয়ে বাঁচবে না ... ' ভদ্রলোকের স্বর কাঁদ কাঁদ শোনায়।
    সুমনা বলল, ' আপনি কোন লইয়ারের কাছে যাননি ? "
    --- ' হ্যাঁ ... সাগরদা একজন বড় উকিলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। অলোকেন্দু মিত্র ... নাম শুনেছেন ?'
    সুমনা চমকে উঠল এবং ভদ্রলোককে মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কিছুই মনে পড়ল না। অনেক বছর হয়ে গেল তো ... '
    সে বলল, ' হ্যাঁ নাম শুনেছি ... নাম শুনেছি ... তা উনি কিছু করতে পারেননি ? '
    --- ' হ্যাঁ ... করেছিলেন তো ... যা যা করার সব করেছিলেন। তখনকার মতো ব্যাপারটা মিটে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার মাটির তলা থেকে কেউটে বেরোচ্ছে। সাগরদার সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক তো উকিলবাবুর। ওনার মেয়ে সুমনাকেও সাগরদা ভালরকম চেনে। শুনেছি তিনিও খুব ভাল ... '
    --- ' ও আচ্ছা আচ্ছা ... কি জানি ... হবে হয়ত ...' সুমনা বলল।
    পটল সবার দৃষ্টি এড়িয়ে মুখ টিপে হাসল।

    বিভূতিবাবু হাঁ করে ভদ্রলোকের কথা শুনছিলেন।
    তার বুকের ভিতর গুরু গুরু মেঘগর্জন উঠছে বহুবছর বাদে। তিনি যেন একটা নতুন যুদ্ধের বিউগল ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন।
    তিনি তড়িঘড়ি বলে উঠলেন, তা ... আপনি এত দেরি করছেন কেন ? সাগরবাবুর কাছে যান না ....সে একাই একশ ... '
    ভদ্রলোক সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন, ' হ্যাঁ ... এই যাই ... '
    --- ' হ্যাঁ যান যান ... গিয়ে সব বলুন ওকে ... খুলে বলুন ... '
    ভদ্রলোক চলে যাচ্ছিলেন। পটল বলল, ' দাদা, আপনার নামটা কি ? '
    উনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, ' আমার নাম অভয় ... অভয়কৃষ্ণ পাল। মেয়ের নাম চৈতালি পাল। চাচার হোটেলে কাজ করি। ছাপোষা গরীব লোক ... গুলু ওস্তাগর লেনে থাকি ... '
    --- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... আপনি দাদার কাছে যান। আমরা সবাই আপনার পেছনে আছি ... কোন ব্যাপার না ... '
    ' কোন ব্যাপার না ... ' হল পটলের কথার মাত্রা বা মুদ্রাদোষ।
    অভয় পাল, চৈতালি পাল নামগুলো সুমনার কেমন যেন চেনা চেনা মনে হল। হয়ত তার বাবার মুখে কখনও শুনেছে। ক'টা কথাই বা আমরা ঠিকমতো মনে রাখি ... '

    বিভূতিবাবু অভয় পালের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রমার সঙ্গে একটা বাজি যে তার ধরা আছে। সেটা যে তিনি জিতবেনই সে ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ নেই।

    ( চলবে )

    ******
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন