এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( তৃতীয় খন্ড ) - ৩৫

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ জুন ২০২৫ | ৬৮ বার পঠিত
  • ( ৩৫ )

    রাত্রে সাবিত্রীর ব্যাপারটা তুলল রাত্রি। সব শুনে সাগর বলল, ' ভদ্রমহিলা মেন্টাল অ্যাংজাইটিসের মধ্যে আছেন। অপারেশানটা কালকেই সেরে ফেলতে পারলে ভাল হত। কিন্তু বেপাড়ার ব্যাপার। তিনটে ছেলে লাগবে চেম্বার নিয়ে। মোনাবাবুকে বলা যেত একটু দেখে নেবার জন্য। ওদিকেই তো ওদের আসল ঠেক। কিন্তু এখন সময়টা একটু গোলমেলে। ওদের মধ্যে গ্রুপবাজি চলছে। কাউকেই ঠিক ভরসা করা যায় না। আমাকেই ব্যাপারটা দেখে নিতে হবে ... তেমন কিছু কেস নয় মনে হচ্ছে। ঠিক আছে পরশুদিন যাব ... মানিককে খবর পাঠাচ্ছি। তোমাদের স্কুল ক'টায় ছুটি হয় ? '
    --- ' সাড়ে চারটেয় '
    --- ' উনি নিজের মতো যান, ছেলেরা ধরে নেবে। চিন্তা করতে বারণ কর ... আমার মনে হয় যাবার দরকার নেই... '
    --- ' দেখ যা ভাল বোঝ। আমার কিন্তু মনে হয় তোমার যাওয়া ভাল ... ' রাত্রি বলল।
    --- ' হ্যাঁ, আমি ঠিক জায়গাতেই থাকব ... '

    স্কুল থেকে পাঁচটা নাগাদ বেরল রাত্রি আর সাবিত্রী মন্ডল। রাত্রি বলল, 'তুমি যাও ... কোন চিন্তা নেই, ওরা ঠিক সময়ে দেখে নেবে ... '
    সাবিত্রী এদিক ওদিক দেখে নিয়ে বলল, ' কই কাউকে তো দেখছি না ... '
    রাত্রি হেসে বলল, ' ওদের দেখার কোন দরকার নেই। ওরা তোমায় দেখছে ঠিক ... তুমি তোমার মতো যাও ... ওরা ওদের কাজ জানে ... '
    --- ' আমার ভীষণ ভয় করছে রাত্রিদি ... এসব না করলেই ভাল হত ... যা হ'ত হ'ত ... '
    রাত্রি সাবিত্রীর কাঁধে হাত রেখে বলল, ' আরে ... আমি বলছি তো, তুমি নিশ্চিন্তে থাক। আমার ওপর ভরসা রাখ। তুমি দেখতে পাও বা না পাও তোমার সাগরবাবু তোমার সঙ্গেই আছে। ঠিক সময়েই তাকে দেখতে পাবে। এটা একটা সামান্য ব্যাপার। তুমি এগোতে থাক। তোমার স্টুডেন্টরা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে ... যাও এগোও ... আচ্ছা চল আমি তোমার সঙ্গে যাচ্ছি ... চল ... '
    সাবিত্রী এবার যেন বুকে বল ভরসা পেল। দুজনে হাঁটতে লাগল ভূপেন বোস এভিনিউয়ের দিকে।

    রাত্রি আর সাবিত্রী বৃন্দাবন পাল লেনের মুখে পৌঁছল। মহাপ্রভু মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে ছ'টা মুগের লাড্ডু কিনল রাত্রি।
    তারপর বলল, ' সাবিত্রী, তুমি এগোও তা'লে ... ওখানে ওরা ঠিকঠাক বুঝে নেবে। চিন্তা কোর না... তুমি তোমার মতো যাও... '

    সাবিত্রী আস্তে আস্তে এগোতে লাগল মহেন্দ্র বোস লেনের দিকে। দূর থেকে দেখতে পেল চার জন বসে আছে রোজ যেমন বসে থাকে এই সময়ে।

    সাবিত্রী এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। সাগর মন্ডলের কোন চিহ্নমাত্র চোখে পড়ল না। গলির মোড়টা পেরিয়ে একজন লাল জামা পরা লোক একটা পানের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। ওই পানের দোকানের পর একটা বাড়ির পরের বাড়িতে সাবিত্রী ঢুকবে। রাস্তা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করছে ভর সন্ধেবেলায়। ওদিকে বাগবাজার স্ট্রিট ব্যস্ত। সাবিত্রী দু একদিন উল্টো দিক দিয়ে, মানে বাগবাজার স্ট্রিটের দিক দিয়ে ঢুকে দেখেছে একই ব্যাপার ঘটছে। ওদের মধ্যে দু একজন এদিকে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে। তাকে এরা কেন সহজ টার্গেট মনে করল কে জানে, নাকি অনেক মেয়ের সঙ্গেই এরা এমন করে।
    মনে একটা বিশ্রী অস্বস্তি তো থাকেই জায়গাটা পেরোবার সময়। তবে ব্যাপারটা কেমন যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে ভীষণ বুক ঢিবঢিব করতে লাগল। সাবিত্রী মহেন্দ্র বোস লেনের মুখে পৌঁছতে একটা বেশ ফিটফাট পোশাক পরা স্বাস্থ্যবান ছেলে রক থেকে উঠে একটু এগিয়ে এসে বলল, ' আজ এত দেরি হল ? কখন থেকে ওয়েট করছি ... '
    অন্য ছেলেগুলো দাঁত বার করে এদিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে বেপরোয়া দৃষ্টিতে।
    এতটা বাড়াবাড়ি ব্যাপার হতে পারে সাবিত্রী চিন্তা করেনি। সে ভীষণ থতমত খেয়ে গেল। তার চলার গতি আটকে গেল স্নায়ুর চাপে।
    ঠিক এইসময়ে ওই পানের দোকানের সামনে দাঁড়ানো লালজামা পরা লোকটা হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে
    প্রায় ছুটতে ছুটতে এদিকে এসে পড়ল।
    ' এঃহে ... দেরি হয়ে গেল, দেরি হয়ে গেল ... কি মুশ্কিল... ' বলতে বলতে ওই ফিটফাট যুবকের গায়ের ওপর এসে পড়ল। লালজামার কনুইয়ের ধাক্কাটা লোকটার বুকে এমনভাবে লাগল যে তার পেটানো শরীরটা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল।
    লাল জামা জিভ কেটে বলল, ' এঃহে ... সরি ভাই ... সরি সরি ... তুমি যে এখানে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকবে বুঝতে পারিনি ... লাগেনি তো লাগেনি তো ... '
    তিনজন লোক হঠাৎ কোথা থেকে হাজির হয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়া ছেলেটাকে ধরে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে লাগল। তার জামা প্যান্ট ঝেড়েঝুড়ে দিতে লাগল। একজন বলল, ' ইশশ্ ... কি হল বলুন তো ... এভাবে কেউ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কথা বলে ? '
    সেই রোমিও মার্কা ছেলেটা এতক্ষণে নিজস্ব মেজাজে ফিরে এসেছে। সে লালজামার বুকের কাছে জামাটা খামচে ধরে বলল, ' অ্যাই... অ্যাই... খা**র ছেলে ... মাজাকি মারার জায়গা পাওনি ... চেন না শালা ... জিনা হারাম করে দেব শালা ... '
    যে দু তিন জন লোক ছেলেটাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করার এসেছিল তাদের মধ্যে একজন ছেলেটার বগলের তলা দিয়ে দুটো হাত গলিয়ে দিয়ে মাথার পিছনে দুটো তালু দিয়ে চাপ দিতে লাগল। ওর ঘাড়টা ঝুঁকে গেল সামনের দিকে। হাতের মুঠি আলগা হয়ে গেল। শম্ভু আর বাদল চুপচাপ দুদিকে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে রইল যাতে ছেলেটা পালাতে না পারে।
    লালজামা পরা মানিক তার জামা থেকে কাপ্তেনের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল, ' ছিঃ ... ওরকম
    বলতে আছে। তুই কেন তোর বাবাও আমাদের কিছু করতে পারবে না। চল, কোথায় যেতে হবে বল ... '
    রকে বসা বাকি ছেলেগুলো এতক্ষণে বিপদের গন্ধ পেয়ে গেছে। তারা কুপথের বিচরণকারি। এসব বিপদের লক্ষণ বিলক্ষণ চেনে। তারা চোরের মতো গুটিগুটি পায়ে ওখান থেকে সরে যেতে লাগল ঝামেলা বুঝে।
    ছেলেটা বুঝতে পারল সে কোন ধারাল গ্যাংয়ের হাতে ঘেরাও হয়ে গেছে। ফোঁস ফোঁস করে কোন লাভ হবে না।
    সে আপাতত এখান থেকে বেরোবার একটা রাস্তা খুঁজতে লাগল।
    মিস্টার রোমিও তার কথাটা মোলায়েম করে নিয়ে বলল, ' আরে ... কি হচ্ছে কি ! কি ব্যাপার কিছু বুঝতে পারছি না। আপনারা এরকম করছেন কেন আমার সঙ্গে ? আমি কি করলাম ? '
    সাবিত্রীর পা ওখানে আটকে গেছে। পুরো ব্যাপারটাই যে সাগরবাবুর সাজানো সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিহীন সে নয়। একটু তফাতে বেশ কিছু লোকও জমে গেছে রস নেবার জন্য। ঝামেলায় কেউ যেতে চায় না। এইসব লোকজনের অনেকেরই এদের ওপর রাগ আছে। শুধু ভয়ে কিছু বলতে পারে না।
    মানিক বলল, ' এনাকে কি বলছিলি ? '
    --- ' কাকে ... এনাকে ? এনাকে আমি চিনিই না ... কি বলব ! আজব তো ... ' বলে ছেলেটা কষ্ট করে হাসল।
    --- ' চিনিস না, তা'লে ওনাকে দেখে এগিয়ে এলি কেন ? '
    --- ' কি আশ্চর্য, আমি এগিয়ে আসব কেন ... আমি তো এমনি আসছিলাম ... আপনিই তো তাড়াহুড়ো করে আসছিলেন বলেই ... ইয়ে হল ... পড়ে গেলাম আমি ... আর আপনি কিনা ... '
    এই সময়ে ছেলেটার মাথা ঠিকঠাক কাজ না করায় একটা আলগা কথা বলে ফেলল।
    --- ' তাছাড়া ও আপনার কে, যে আপনি ওর হয়ে দালালি করছেন ... জানেন ওর ক্যারেক্টার কিরকম ? '
    এসব শুনে সাবিত্রীর সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল এবং ছেলেটার কথা শেষ হওয়া মাত্র সেখানে ছেলেটার একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন এক ভদ্রলোক। ভদ্রলোক ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং একটিও কথা না বলে ছেলেটার গালে সপাটে একটা চড় মারলেন। ছেলেটা পড়ে যেতে যেতে কোনরকমে সামলে নিল। দুপাশে দুজন তাকে ধরে ফেলে বলল, ' আহা সামলে সামলে ... তোরা কি যে করিস না ... তোর ল্যাম্বোটেরা তো সব পালিয়েছে। ওরকম বলতে আছে ? এনার নাম কি জানিস ? '
    ছেলেটা উদ্ভ্রান্ত চোখে বাদলের দিকে তাকিয়ে দুদিকে মাথা নাড়ল।
    বাদল বলল, ' সাগর মন্ডল। আর এই ভদ্রমহিলা সাগর মন্ডলের স্ত্রীর স্কুলের সহকর্মী। মানে সাগরদার বোন বলতে পারিস... '
    ছেলেটার চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এধরণের লোকেরা সাধারণত বহুরূপী হয়। সে মুহুর্তে রূপ পাল্টে ফেলল আবার। সাগরের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে বলল, ' অন্যায় হয়ে গেছে ... আর কোনদিন হবে না। আমায় ক্ষমা করে দিন। আর কোনদিন এদিকে আসব না ... আমি আস্তে চাইনি ... ওরাই আমাকে বলল ... ভুল হয়ে গেছে ... '

    ছেলেটাকে ছেড়ে দিল সাগর কারণ সে বুঝতে পারল যে সে যেটা আন্দাজ করেছিল সেটাই ঠিক। এরা কোন স্বরূপ খাঁড়া বা প্রতাপ ধর না, স্রেফ উচ্চিংড়ে। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে কোন লাভ নেই। ধরলে আসল মাথাটাকে ধরতে হয়। যা মনে হচ্ছে, এদের কোন মাথা টাথা নেই।

    রাস্তার লোকজন দেখল, সাবিত্রী সাগরের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলছে, ' অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল আপনার সঙ্গে আলাপ করার, কিন্তু সে ইচ্ছা যে এইভাবে পুরণ হবে তা কোনদিন ভাবতে পারিনি। জীবনটা বড় অদ্ভুত ... '
    তা সাবিত্রী বোসের কাছে জীবন যতই অদ্ভুত লাগুক না কেন শম্ভু,মানিক,বাদলদের মনে একটা উজ্জ্বল দীপ জ্বলে উঠল। ওই রোমিও ছেলেটার হাব ভাবে পরিষ্কার বোঝা গেল যে সে সাগর মন্ডলকে কোনদিন চাক্ষুষ না দেখলেও পুরোপুরি ওয়াকিবহাল সাগরিক ইতিহাসে ... এই উনিশশো ছিয়াত্তর সালেও, একটা বছর তেইশ চব্বিশের ছেলে।

    আজ স্নানযাত্রার দিন। ক'দিন বাদে রথ। বিভূতিবাবুর গঙ্গায় গিয়ে চান করার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। অনেকদিন গঙ্গাস্নানে যাননি। এখন আর একা যেতে ভরসা হয় না। বয়েস হল অঢেল। গঙ্গাপ্রসাদকে বলতে এক কথায় রাজি হয়ে গেল। গঙ্গা বলল, ' ঠিক আছে চলুন, আমিও অনেকদিন গঙ্গায় চান করিনি। আজ ভাল দিন। চান করে এসে নয় দোকান খুলব। কোন ঘাটে যাবেন ? '
    --- ' আমার তো সবচেয়ে পছন্দ বাগবাজারের বটতলা ঘাটের পাশের ঘাটটা ... কি যেন নাম ... কিন্তু অনেক দূর হয়ে যাবে। ঠিক আছে আহিরিটোলার ঘাটেই চল ... '
    --- ' হ্যাঁ তাই চলুন ... সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে রিক্শা ধরে নেব'খন ... '

    আকাশ বেশ মেঘলা ছিল। স্নান করার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি করে বৃষ্টি শুরু হল। তারপর গুঁড়ি গুঁড়ি থেমে গিয়ে টুপটাপ টুপটাপ করে বড় বড় ফোঁটা পড়তে লাগল আকাশ থেকে। আকাশ ঘন মেঘে ছাওয়া। কোমর জলে দাঁড়িয়ে বিভূতিবাবু গঙ্গাপ্রসাদকে বললেন, ' দেখ দেখ পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে। কি সৌভাগ্য কি সৌভাগ্য ... '
    গঙ্গা এ ব্যাপারে একমত হল।
    --- ' হ্যাঁ জেঠু ... তা ঠিক তা ঠিক ...ওই জন্যই তো এলাম আজ। দোকান খুলতে একটু দেরি হবে। তা হোক ... একদিনের তো ব্যাপার ... '
    শয়ে শয়ে লোক এসেছে এখান থেকে ওখান থেকে। একটা পার্বন কিছু থাকলেই হল, ব্যাস আর রক্ষে নেই। সে যাই হোক, ঘনকৃষ্ণ মেঘমালা সম্বৃত অম্বরের নীচে রহস্যের কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে থাকা ঘুমন্ত আলোয় আহিরিটোলার গঙ্গাঘাটে শতাধিক স্নানযাত্রীর মতো বিভূতিবাবুও আপ্লুত দেহে মনে গঙ্গানদীর রমনীয় স্রোত প্রবাহে পরম প্রশান্তি আহরণ করতে লাগলেন।
    প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে জল থেকে উঠে গা মাথা মুছে কাপড় চোপড় পরতে পরতে বিভূতিবাবু বললেন, ' বড় শান্তি পেলুম, বুঝলি গঙ্গা ... আবার একদিন আসলে হয় ... '
    --- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... অসুবিধে কি জ্যাঠামশাই... আসলেই হল ... আসুন, সাবধানে আসুন ... সিঁড়িগুলো খুব পেছলা হয়ে আছে ... '

    বিভূতিবাবুর হঠাৎ চোখে পড়ল একটা বাইশ তেইশ বছরের মেয়ে সিঁড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে লাজুক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বোধহয় চান করতে এসেছে। এখনও জলে নামেনি।
    বিভূতিবাবু মনে করতে পারলেন না মেয়েটাকে কোথাও দেখেছেন কিনা। বিভূতিবাবুকে ওভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা এগিয়ে এল।
    বলল, ' আমার নাম চৈতালি। দোকানে একবার দেখা হয়েছিল আপনার সঙ্গে। আমাকে চিনতে পারছেন না, না মেসোমশাই ? '
    বিভূতিবাবু খুব আতান্তরে এবং লজ্জায় পড়লেন। তার আজকাল এমনিতেই কিছু মনে থাকে না, তার ওপর মাত্র একবার কাউকে কোন দোকানে দেখে তাকে মনে রাখতে পারা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
    তিনি সঙ্কোচজড়িত গলায় বললেন, ' ইয়ে, মানে... খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে বটে ... কিন্তু ঠিক ... বুড়োমানুষ তো ... তা কোন দোকানে দেখা হয়েছিল ? '
    --- ' ওই তো পটলের দোকানে ... '
    --- ' তাই নাকি ... পটলের দোকানে ? আচ্ছা ! '
    --- ' হ্যাঁ সুমনা ম্যাডামও ছিলেন তখন ওখানে ... '
    --- ' বটে বটে ? সুমনা, মানে ওই অ্যাডভোকেট সাহেবের মেয়ে ? তুমি কি ওখানে সাইকেল রিপেয়ার করতে গিয়েছিলে ? '
    --- ' না, এমনি গিয়েছিলাম। দরকার ছিল ...'
    --- ' পটল তোমার আত্মীয় বুঝি ? '
    --- ' হ্যাঁ ... ওই ইয়ে ... '
    --- ' ইয়ে মানে ? '
    --- ' আমি পটলের বউ '
    গঙ্গাপ্রসাদ বলে উঠল, ' আরি ব্বাস ... পটলের বউ ! '

    ( চলবে )

    **************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন