এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • মায়াবী নির্জন নাচনা-১ 

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ২৩ মার্চ ২০২৪ | ৯১৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • কাটলো ফাঁড়া

    ২১.০১.২০ - সকাল সাড়ে নটা। পান্না বাস টার্মিনাসে দাঁড়িয়ে আছি। যাবো সালেহা। বাস‌টা আস্তে আস্তে ব‍্যাক করে ঢুকছে স্লটে। কন্ডাক্টর বাসের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে “চলো চলো” বলে ড্রাইভার‌কে গাইড করছে। পিঠের বারো কেজি দুম্বো স‍্যাকটা বেঞ্চিতে রেখেছি। বুকে চার কিলোর ন‍্যাপস‍্যাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটা রিফ্লেক্সে দু হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠি - “রোকো”! ড্রাইভার‌ হয়তো রিয়ার ভিউ মিররে দেখছি‌ল। ঘচাং করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যায়। কন্ডাক্টর ছুটে আসে। বাসের পিছনে মাঝামাঝি জায়গায় একটি বয়স্ক লোকের ফুট দুয়েক দুরে বাসটা দাঁড়িয়ে গেছে। ড্রাইভার ওকে দেখতেই পায়নি। কন্ডাক্টর পিছনে থাকলে ওকে দেখতে পেতো।
     
        বাসটা যখন ঢুকছিল স্লটে তখনই মনে হয়েছিল লোকটি ওখানে কেন দাঁড়িয়ে? ভেবেছিলাম সময়ে সরে যাবে। বাসের পিছনটা  যখন ওর থেকে ফুট চারেক দুরে - লোকটি এদিকে মুখ ফেরালো - দুটো চোখ‌ই অন্ধ! তাই বেচারা দেখতেই পায়নি বাসটা ওর দিকেই আসছে। তাই নির্বিকার দাঁড়িয়ে‌ছিল। সঙ্গে কেউ নেই‌ও যে ওকে গাইড করবে। বাসটা আস্তে আস্তে ব‍্যাক করছিল বলে বড়সড় দুর্ঘটনা হয়তো হতো না তবে  বয়স্ক মানুষ, ধাক্কা খেয়ে বেকায়দায় পড়ে বেশ চোট পেতো। কন্ডাক্টর নিজের ভুল বুঝতে পেরে লোকটি‌র ঝোলাটা তুলে, ওর হাত ধরে বাসে বসিয়ে দেয়। দৃশ‍্যটা দেখে অজ্ঞেয় ঈশ্বর‌কে কৃতজ্ঞতা জানাই - দৃষ্টি‌হীনতা আমার কাছে চরম অভিশাপস্বরূপ।

    চললুম শ্রেয়াংসগিরি
    পান্না থেকে সালেহা ৫০কিমি। লোকাল বাসে ভাড়া ৬০ টাকা। মাঝে দেবেন্দ্রনগর স্ট‍্যান্ডে মিনিট দশেক দাঁড়িয়েছিল। মধ‍্যপ্রদেশের প্রাইভেট লোকাল বাসের সার্ভিস বেশ ভালো। ম‍্যাপে যা মনে হয়েছিল তার থেকে সালেহা ভালো‌ই জমজমাট। বাসস্ট্যান্ড থেকে গুনৌর, সাতনার রেগুলার সার্ভিস রয়েছে। ৩০ কিমি দুরে নাগোদের পথে সালেহা থেকে এক কিমি দুরে গঞ্জ তিরাহা (তেমাথা)। ওখান থেকে ডানদিকে ছোট রাস্তায় চার কিমি দুরে জৈনতীর্থ শ্রেয়াংসগিরি‌ ও হিন্দু‌তীর্থ চৌমুখনাথ। জায়গা‌টির স্থানীয় নাম নাচনা, কেউ বলে নাচনে। আমার গন্তব্য সেখানেই। 
     
      শেয়ার অটোয় চললুম। দূরত্ব ছয় কিমি। ভাড়া দশ টাকা। অটোওয়ালা জয়রাম সাহুর সাথে আলাপ করে মোবাইল নম্বর নিয়েছিলাম। পরে কাজে এসেছি‌ল। নাচনা ছোট্ট জায়গা। উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত একটি বড় জলাশয়ের পাশে একটি প্রাচীন বটবৃক্ষের তলায় অটোস্ট‍্যান্ড। স্ট‍্যান্ডে‌র কাছেই উত্তরে প্রাচীন চৌমুখনাথ মন্দির। জলাশয়ের দক্ষিণ পূর্ব কোনে প্রায় এক কিমি দূরে জৈন ধর্মে একাদশ তীর্থঙ্কর শ্রী শ্রেয়াংসনাথস্বামীর স্মৃতি‌ধন‍্য জৈনতীর্থ শ্রেয়াংসগিরি।


     
    জৈনতীর্থ শ্রেয়াংসগিরি
     
       জলাশয়ের উত্তর ও পশ্চিম পাড়ে স্নানের বাঁধানো ঘাট। জলাশয়ে একটু আধটু শালুক ফুটে আছে। একটি লোক পুঁচকে ডিঙি নিয়ে জালে মাছ ধরছে। ভারি স্নিগ্ধ দৃশ‍্য। অটোস্ট‍্যান্ডের আশপাশে কয়েকটি মোটে দোকান। সেদিন সন্ধ‍্যা‌য় এসে দেখেছি‌লাম তাদের কয়েকটি দোকানে মোমবাতি জ্বলছে। কথা বলে জানলাম, কোথাও তার ছিঁড়ে বিজলি চলে গেছে। অনেকেই হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে‌ছে। বিল দেয়না। তাই পর্ষদ‌ও মাস দেড়েক হয়ে গেছে সারায় নি। ওদের‌ অভিযোগ করার রাস্তা নেই। চলছে কোনো মতে। এই সব দেখলে মনে হয় মানুষ কত অল্পে চালিয়ে নিতে পারে।

        
    সরোবরের পশ্চিম পাড়ে বিদ্যালয়। ছেলেমেয়েরা উঠোনে মোটা শতরঞ্জি পেতে শীতের মিঠে রোদে বসে পড়ছে। মধ‍্য ত্রিশের শিক্ষিকা চেয়ারে বসে পড়াচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে দেখি। মন হামা দেয় শৈশবে গ্ৰামের স্কুলের স্মৃতি‌তে। অচেনা মানুষ দেখে কয়েকজন পড়ুয়া‌ ঘাড় ঘুরিয়ে আমায় দেখে। মনযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে দেখে আমি এগিয়ে যাই। ওরা পড়তে থাকে। 

         
      অনতিদূরে একটি বাড়িতে হয়তো কিছু মেরামতির কাজ হচ্ছে। সামনে বালি পড়ে আছে। বালি দেখলে ঘাঁটতে ইচ্ছা করে না এমন ক্ষুদে খুব কম‌ই হয়। তাই তিনটি তিন সাইজের ক্ষুদে তাতে খেলা করছে। দুটি ছেলে জ‍্যাকেট চাপিয়ে‌ আছে। পুঁচকে মিষ্টি হিরো‌ইনের হয়তো শীতবোধ কম। তিনি  হাতকাটা কালো ফ্রক পরে চুটকি বেণী দুলিয়ে ওদের সাথে খেলছেন। তিনজনে‌র‌ই নগ্নপদ। কোদালের হাতল প্রায় তেনার সমান লম্বা তবু ওটি নিয়ে‌ই মাঝের ক্ষুদে মহারাজ গামলায় বালি ভরার কথা ভাবছে। এমন সব মজারু দৃশ‍্য দেখতে দেখতে বুকে পিঠে দুটো স‍্যাক নিয়ে টুকটুক করে এগো‌ই।
     

     
       স্কুলের একটু পরে উজ্জ্বল গোলাপি রঙের পঞ্চায়েত ভবন। বাইরে কজন রোদে বসে গজালি করছেন। আমায় পরদেশী বুঝে ডাকেন। আমার তাড়া নে‌‌ই। চেয়ারে বসে ওনাদের সাথে খানিক গল্পগাছা হয়। তার‌পর এগোই জৈনতীর্থ‌র দিকে।

    1. বাহুবলী মন্দির 2. পুরোনো ধর্মশালা   3. রায়পুর‌ওয়ালে নতুন ধর্মশালা 4. নির্মিয়মান মন্দির 5. সন্তনিবাস  6. চৌবিশি মন্দির  7. আদিনাথ মন্দির. দক্ষিণে পাহাড়ে আছে কয়েকটি সাধনগুফা
     
      তীর্থে‌র বিরাট পরিসর। তিনদিকে অনেক ঘর। দক্ষিণে প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভনাথ বা আদিনাথজীর পুত্র বাহুবলী বা গোমতেশ্বরের মন্দির (1)। এই সিদ্ধক্ষেত্রটি চতুর্থ শতাব্দীর। ১৯৯১ থেকে গণাচার্য বিরাগসাগর মহারাজের উদ‍্যোগে তীর্থ‌ক্ষেত্রে‌র বিকাশ শুরু হয়েছে। উনি এখানেই পাহাড়ের ওপরে গুহায় দীর্ঘদিন তপস্যা করেছি‌লেন। আমি যখন গেছি, পরিসর জনহীন। জায়গাটা একান্তে। জৈন উৎসবের সময়  ভক্তসমাগম হয়, নয়তো সারাবছর জনবিরল‌ই থাকে।  
     
    ঠিক দুপুর বেলা - ভূতে মারে ঢেলা
       বাড়ি থেকে বেরোনোর মাসখানেক আগে ফোনে এই ক্ষেত্রে‌র কোষাধ্যক্ষ নবীন জৈনের সাথে কথা হয়েছিল। তিনি থাকেন ৩০কিমি দূরে দেবেন্দ্রনগরে। আমি জৈন সম্প্রদায়ের ন‌ই, কলকাতার মাছখেকো বঙ ব্রাহ্মণ। তবু এতোদূরে এক অপ্রচলিত জৈনতীর্থ দর্শন ক‍রতে যেতে চাই শুনে ঘর পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।  আজ পান্না থেকে র‌ওনা হ‌ওয়া‌র আগে ফোন করেছি‌লাম। কলকাতা থেকে আসছি বলতে‌ই চিনতে পারে‌ন। বলেন, ওখানে ম‍্যানেজার শৈলেশ জৈনকে আপনার কথা বলে দিচ্ছি। গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করবেন। এখন ফাঁকাই আছে।
      কিন্তু এখানে এসে কাউকে কোথাও দেখছি না‌। সার সার ঘর তালা বন্ধ। একটি ঘরের দরজায় পর্দা রয়েছে। হয়তো ওখানে কেউ হবে ভেবে দরজায় কড়া নাড়ি। মধ‍্য চল্লিশের এক মহিলা দরজা খুলে রুক্ষভঙ্গিতে বলেন, কী চাই? বলি, শৈলেশ জৈন আছেন? নেহি, বাহার গিয়া - দড়াম করে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন। হতভম্ব হয়ে যাই। 
     
       তখন দেখি দুর থেকে একটি লোক এদিকে আসছে। এতক্ষণ দেখতে পা‌ইনি তাকে। কাছে এসে বলে, ওর নাম সুরেশ, এখান‌কার চৌকিদার। আমি এখানে বেড়াতে এসেছি,  নবীন জৈনের সাথে কথা হয়েছে ঘর পাওয়ার - এসব জানি‌য়ে বলি - উনি অমন ওভাবে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলেন কেন?
     
        সুরেশ হাত জোর করে বলে, বাবুজী, উনি‌ শৈলেশজীর পত্নী। ওনার মাথার গণ্ডগোল আছে।  মেহেরবানী করে ওনার ব‍্যবহারে কিছু মনে করবেন না। কার্যকারণ জেনে ক্ষণপূর্বের বিষ্ময়সূচক মৃদু খারাপ লাগার অনুভূতি সহানুভূতি‌তে বদলে যায়। সুরেশ বলে, শৈলেশজী সালেহা গেছেন। আসতে দেরী হবে। আপনি নবীনজীকে ফোন লাগান। স্পীকার‌ফোন অন করে কথা বলাই সুরেশের সাথে। নবীনজী অতি সজ্জন। শৈলেশ বাইরে গেছে শুনে সুরেশকে বলেন, মুখার্জী‌সাবকো রায়পুর‌ওয়ালে কামরা দে দো। ধন‍্যবাদ জানি‌য়ে ফোন রাখি। 
     
        এবার সুরেশ গিয়ে নক করে দরজায়। মহিলা‌টি বেরিয়ে খরখরে চোখে দেখেন আমায়। এখন তো জানি উনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই ভাবলেশহীন মুখে গোবেচারা‌র মতো দাঁড়িয়ে থাকি। সুরেশ বলে, নবীনজী সে বাত হুয়া, রায়পুর‌ওয়ালে মকান কা চাবি দিজিয়ে। মহিলা‌টি ঢুকে যান ঘরে। একটু পরে, ঠিক দুপুর বেলা, ভূতে মারে ঢেলার মতো - ঝরাং করে খোলা দরজা দিয়ে একটা চাবি‌র গোছা এসে পড়ে উঠোনে। আমি একটু চমকে গেলেও সুরেশ নির্বিকার। চাবি কুড়িয়ে বলে, চলিয়ে বাবুজী। 
     
    ভবঘুরের কপালে জোটে গুরুকৃপা  


     
       উত্তর আর পশ্চিম দিকের সাদামাটা ধর্মশালার ঘরগুলো‌র তুলনায় একটা নতুন বাড়ির সামনে আসে সুরেশ। প্রায় ৭৫x৫০ ফুট আয়তাকার একতলা বাড়ির সামনে ফলকে লেখা - গুরুকৃপা পরিবার - রায়পুর‍ (সবুজ তীর)। সুরেশ জানায় রায়পুরে‌র এক জৈন পরিবার যাত্রী‌সেবার নিমিত্তে এটা বানিয়ে দিয়েছেন। ভাবি - জয় গুরু - এমন সদ্ভাবনায় ধন‍্য হয় আমার মতো ভবঘুরে। তার পাশেও তৈরী হচ্ছে আর একটি ধর্মশালা (লাল তীর)। তার মানে তখন জনহীন হলেও কোনো জৈন উৎসবের সময় যথেষ্ট ভক্তসমাগম হয় এখানে। এমন ব‍্যাপার ২০১৯এ দেবগড় জৈনতীর্থে‌ গিয়ে‌ও দেখেছি। ধর্মশালায় অনেক ঘর কিন্তু তখন কেউ নেই।


         
       লোহার গেটের তালা খুলে ঢোকে সুরেশ। টাইল বসানো কোর্ট‌ইয়ার্ড‍। বড় দলে এলে চেয়ার পেতে জমি‌য়ে আড্ডা দেওয়ার জন‍্য ওটা অনবদ‍্য। কোর্ট‌ইয়ার্ডের উত্তরে গেট।  বাকি তিনদিকে দশটি একতলা ঘর। দক্ষিণে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি। সব ঘর খালি। তার একটার তালা খোলে সুরেশ। ভিট্রিফায়েড টাইলের মেঝে। দে‌ওয়ালে ডিসটেম্পার। ম‍্যাট্রেস পাতা দুটো সিঙ্গল খাট। দেওয়া‌লে ক্লথ হ‍্যাঙার, তাক। আয়না, আলো, প্লাগ পয়েন্ট, পাখা।  সব একটি। সংলগ্ন বাথরুম। ওয়াশ বেসিন। গীজার নেই। ছোট্ট একটা কিচেন প্ল‍্যাটফর্ম‌ও আছে। তীর্থযাত্রীদের জন‍্য বাহুল‍্যবর্জিত ঘর - যেটুকু না হলে নয় - সেটুকুই আছে। 


       
       তখন প্রায় একটা বাজে। সুরেশ বলে, এখানে খাবার দাবার কিছু পাবেন না, আশপাশে হোটেল‌ও নেই। দুপুরে কী খাবেন? বলি, আমার কাছে কিছু খাবার আছে, চালিয়ে নেবো। ও বলে, তাহলে আপনি বিশ্রাম করুন। ম‍্যানেজার সাহেব এলে খবর দেবো ওনাকে। কিছু বখশিশ দিই ওকে। নমস্কার করে চলে যায় সুরেশ।
    সকালে চান করে বেরিয়ে‌ছি। বেড়াতে গিয়ে শীতকালে রোজ চান করা আমার কাছে জরুরী নয়। জায়গাটা ফাঁকা। খুব নির্জন। দক্ষিণ দিকে পূর্ব পশ্চিমে ছড়ানো পাহাড়। ভালো‌ই ঠাণ্ডা। তাই আর চানের হ‍্যাপায় না গিয়ে সারভাইভ‍্যাল কিট খুলি। মুড়ি, ছোলা/বাদাম ভাজা, বিস্কুট, ম‍্যাগী, চা, চিনি, গুঁড়ো দুধ, কাজু, কিসমিস, খেজুর, মটরশুঁটি, গাজর, চিকি - যা আছে কাল ডিনার অবধি চলে যাবে। 

      অনেকে‌র কাছে সুস্বাদু ভোজন‌ও ভ্রমণের একটা মুখ‍্য অনুষঙ্গ। ভ্রমণকালে লোকাল কুইজিন এক্সপ্লোর করা গুরুত্ব পায়। হেরিটেজ ট‍্যূরিজমের মতো ফুড ট‍্যূরিজম নামক ব‍্যাপার‌ও শোনা যায়। তবে কমখরচে একাকী ভ্রমণে আমার কাছে ভোজন মূলতঃ ক্ষুধানিবৃত্তির প্রয়োজনে - রসনা‌তৃপ্তির বাসনা তখন গৌণ। সেসব হয় বাড়িতে থাকলে।  আমার কাছে ম‍্যাগী এবং চা করার জন‍্য মেসটিন থাকে। কিচেন প্ল‍্যাটফর্মে দুটো ইঁট পেতে, খবরের কাগজ, কাঠকুটো দিয়ে আগুনের জোগাড় করতে হবে। আশির দশকে পুরুলিয়ার জঙ্গল পাহাড়ে  রক ক্লাইম্বিং ক‍্যাম্পের দিনগুলোর স্মৃতি অমলিন। বয়স হলে শরীর মন একটু আরাম চায়। তবু একাকী ভ্রমণে মন্ত্রশক্তির ঈশ্বর পাটনীর মতো সাময়িকভাবে ফিরে যাই ঘাসমূলে। 

    দূর্ভাগ্য‌তাড়িত সহৃদয় ম‍্যানেজার 
       হালকা লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি‌লাম। তিনটে নাগাদ আসে শৈলেশজী। বছর বাহান্ন বয়স হবে। রোগা, হাসিখুশী মানুষ। প্রথমেই হাতজোড় করে ক্ষমা চায়। সুরেশ বলেছে তাকে কী হয়েছে। বলি, ঠিক আছে, আমি কিছু মনে করিনি। বাস্তবিকই অন্তর থেকে বলেছি। এযাবৎ কতো সুস্থ মানুষের অসুস্থ আচরণ দেখেছি। উনি তো মানসিক ভারসাম্য‌হীন। তাই ওনার আচরণে মনে করার কিছু নেই। 
     
      শৈলেশ ওর কথা বলে। বেশি পড়াশোনা করেনি। ঘরে মন টেকেনি বলে বছর সতেরো বয়সে জৈন সাধুদের সাথে পদযাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। এভাবে কাটে বছর পনেরো। ও নিরুদ্দেশ হয়নি, বাড়ির সাথে যোগাযোগ ছিল। ওর সুন্দর স্বভাব, সততা, সেবার মনোবৃত্তির জন‍্য অনেকের প্রিয় ছিল। বয়স তিরিশ হয়ে গেলে বাড়ি‌র, সমাজের লোকজন বলে বিয়ে থা করে সংসার করতে। কিন্তু মন্দিরে পুজো আচ্চা, তীর্থ‌ক্ষেত্রে‌র টুকটাক কাজ ছাড়া আর তো কোনো যোগ্যতা নেই। বিয়ে করে চলবে কীভাবে? তখন জৈন সমাজ ওকে এই ক্ষেত্রে‌র পূজারী কাম ম‍্যানেজার নিযুক্ত করে। বিশ্বস্ত বলে নির্মাণ কাজে খরচের হিসেব‌ও রাখে। হাজার পনেরো মাইনে পায়। বাথরুম সহ একটা ঘর ও কিছু আসবাব পেয়েছে। জল, বিদ্যুৎ নিঃশুল্ক। উৎসবের সময় যাত্রীদের থেকে‌ ভালো‌ বখশিশ পায়। এতেই চলে যায়। ওখানে খরচ‌ও কম। 
     
         বছর বত্রিশে বিয়ে হয় শৈলেশের। পাত্রীর যে মাথায় গণ্ডগোল আছে সেটা চেপে যায় বাড়ির লোক। এমনি‌তে দেখে বোঝা‌ও যায় না। মাঝে মাঝে খর চোখে তাকায়, গুম হয়ে থাকে, নয়তো আপন মনে অস্পষ্ট বিড়বিড় করে। তখন অনেকে শলা দেয় ছেলেপুলে হলে ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের বছর দুয়েক বাদে একটি মেয়ে হয়। দু বছরের শিশুকে ছিটগ্ৰস্ত মা একদিন হঠাৎ মাটিতে আছড়ে ফেলতে যায়। ভাগ‍্যিস শৈলেশ কাছেই ছিল। চকিতে গিয়ে ধরে ফেলে। সে যাত্রা মেয়েটি বেঁচে যায়। শিশুটি মরে গেলে মাকে‌ও হাজতে যেতে হোতো। নয়তো পাগলাগারদে। সেই থেকে শৈলেশ আগলে রাখে মেয়েকে। মাঝেও আরো কয়েকবার অমন হতে যাচ্ছিল। বছর চারেকের মাথায় মেয়েকে কাটনীতে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় শৈলেশ। ওখানে মা, অবিবাহিত দাদা, ছোট ভা‌ই ও তার বৌ, সবাই একসাথে থাকে। ওদের কাছে‌ই মেয়ে বড় হতে থাকে।
     
       শৈলেশ আর সন্তান চায়নি। কিন্তু অনেকে শলা দেয় হয়তো কন‍্যাশিশু বলে কোনো কারণে ছিটগ্ৰস্ত মা ওকে মেরে ফেলতে যাচ্ছিল। হয়তো তার মনে পুত্রসন্তানের আকাঙ্খা ছিল। ছেলে হলে হয়তো ঠিক‌ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান যে ছেলেই হবে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবু সবার শলা শুনে দিশেহারা শৈলেশ অসীম দ্বিধান্বিত হয়ে পুনরায় পুত্রার্থে মিলিত হয় স্ত্রী‌র সাথে। আশ্চর্য আপতনে এবার পুত্র‌‌ই হয়। যত্ন‌ আত্তি, স্তন‍্যদান - মানে মায়ের যা যা করা উচিত, সব‌ই করে তার ছিটগ্ৰস্ত বৌ। তবু বছর তিনেকের মাথায় তাকে‌ও একদিন মাটিতে আছড়ে ফেলতে যায়। সেবার‌ও শৈলেশ ঠিক সময়ে বাধা দিয়ে ধরে ফেলে।
     
       আমি নীরবে ওর কথা শুনছি‌লাম। কেন‌ই বা শৈলেশ এক অচেনা পরদেশী যাত্রী‌কে তার জীবনের একান্ত ব‍্যক্তি‌গত কথা বলে যাচ্ছিল কে জানে। হয়তো ওর বৌ আমার সাথে দূর্ব‍্যবহার করা সত্ত্বেও আমি ওর সাথে সহানুভূতি‌র সাথে কথা বলেছি - সেটা একটা কারণ হতে পারে। তাছাড়া আমি বয়স্ক মানুষ। তাই হয়তো বৌয়ের আচরণের জন‍্য মার্জনা চাইতে গিয়ে তার প্রেক্ষাপট ব‍্যাখ‍্যা করতে ঐ সব বলছি‌ল।  বলে, বাবুজী সেই সাত আট বছর আমার যে কীভাবে কেটেছে কী বলবো। পৃথিবীতে সন্তানের সব থেকে কাছের মানুষ মা। সেই মায়ের কাছ থেকে যদি  সন্তান‌কে বাঁচিয়ে রাখতে বাবাকে সর্বক্ষণ পাহারা দিতে হয়, আপনি‌ই বলুন, কেমন লাগে? আমি ওদের রেখে কোথাও যেতে পারতাম না। সেই ক’বছর আমার মা এসে ছিলেন আমাদের কাছে।
     
       বলি, ডাক্তার দেখান নি? ও বলে, দেখিয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তার কিছু ধরতেই পারলো না। বললাম না, এমনি‌তে দেখে, কথাবার্তা বলে কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু যে মা নিজের সন্তান‌কে আছড়ে ফেলতে চায় সে পাগল নয়তো কী?  বলি, আপনার কখনো ওনার সাথে থাকতে ভয় করে নি? শৈলেশ বলে, সত‍্যি বলতে কী, প্রথম ঐ ঘটনার পর রাতে ওর পাশে শুতে একটু অস্বস্তি হোতো। ভাবতাম কোনো অপদেবতা ভর করেনি তো? কিন্তু এযাবৎ আমার সাথে কোনো হরকৎ করেনি। পাগলে‌ও নিজের ভালো বোঝে। হয়তো জানে আমি‌ই ওর একমাত্র আশ্রয়।
     
       শৈলেশের ব‍্যাখ‍্যা আমায় ভাবায়। মানবমনের কতটুকু‌ই বা জানি। বলি, আচ্ছা আপনি তো বিয়ে করতেই চাননি। তবু যারা আপনাকে বিয়ে করতে জোর করেছি‌ল, তাদের ওপর বা ধরুন মেয়ের মাথার দোষের কথা লুকিয়ে বিয়ে দে‌ওয়ার জন‍্য শশুরালের লোকজনদের ওপর বা বৌয়ের ওপর কখনো রাগ, আক্ষেপ হয়েছে? কথা হচ্ছিল ছাদে বসে। শীতার্ত মেঘলা বিকেল।  দুরে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আত্মমগ্ন হয়ে শৈলেশ বলে - না, বাবুজী। বৌয়ের ওপর রাগ করার তো প্রশ্ন‌ই আসে না, ও তো বিমার। যা ক‍রেছে, জেনেবুঝে তো করেনি। যারা আমায় বিয়ে করে সংসারী হতে বলেছিল, তারাও তো আমার ভালো‌ই চেয়েছিল। ওর বাড়িতে‌ ভেবেছি‌ল বিয়ে হলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। সেটা হয়নি। আমাদের দূর্ভাগ্য। অনেকে বলেছিল, বৌকে ডিভোর্স করতে। মন মানেনি। অসহায় একটি মহিলা, কোথায় যাবে? তাই এভাবেই কেটে গেল বিশ বছর। একটা কথা বুঝেছি বাবুজী, নসীবের লিখন কে খন্ডাবে, আপনি‌ই বলুন।

        শৈলেশের জবাব নাড়া দেয়। নিয়তিবাদীদের এই এক সুবিধা - কপালের লিখন, পূর্বজন্মের কর্মফল - এই সব বিশ্বাসে ভর করে দুঃখময় জীবনে আক্ষেপ থাকলেও অস্থিরতা, অক্ষম ক্রোধ গ্ৰাস করে না। তাই ও শান্ত ভাবে মেনে নিয়েছে ওর ভাগ‍্যবিপর্যয়। ওর বৌ‌ও তো কম দূর্ভাগ্য‌বতী নয়। মা হয়ে‌ও সন্তানদের ভালো‌বাসা পেলো না। তখন মেয়ের বয়স আঠারো, ছেলের বারো। চার ও তিন বছর বয়স থেকে মাকে ছেড়ে ঠাকুমা, কাকিমা, কাকু, জেঠুর কাছে বড় হয়ে বাবার পরে ওরাই ওদের নিকটজন। ওদের মায়ের প্রতি কোনো টান‌‌ নেই, বিতৃষ্ণা‌ও নেই। দু একবার বৌকে নিয়ে গেছি‌ল কাটনী। ছেলে, মেয়ে মায়ের কাছে ঘেঁষতে চায়নি। সেই থেকে মাঝেমধ্যে শৈলেশ একাই যায় কাটনী। সবার সাথে দেখা করে আসে। সে‌ই কদিন ওর বৌ এখানে একা‌ই থাকে। 
     
       শৈলেশ বলেছিল, মুখার্জী‌সাব, আপনি তো কাটনী যাবেন, ওখানে‌ও জৈন ধরমশালাতেই উঠবেন। পাশেই একটা বাড়িতে ওরা সবাই থাকে। সময় পেলে গিয়ে দেখবেন, মায়ের মাথার গণ্ডগোল হলেও ওরা কিন্তু স্বাভাবিক। ওখানে ধরমশালার ম‍্যানেজার খুব ভালো। আমার বড়দা ওখানে কাজ করে। আপনি একা মানুষ, আমি বলে দেবো, ঘরের যা ভাড়া তার থেকে কম‌ই নেবে। এখানে‌ও এ ঘরের ভাড়া তিনশো। ফাঁকা‌ই পড়ে আছে। আপনি দেড়শো‌ই দেবেন। 
     
        শৈলেশের আন্তরিক‌তা ছুঁয়ে যায়। নির্জন তীর্থ‌ক্ষেত্রে দুর্ভাগ‍্যতাড়িত পরিবার‌টির জন‍্য খারাপ লাগে। বলি, কাটনীতে গেলে অবশ্যই দেখা করবো  ওদের সাথে। আমি কথা রেখেছি‌লাম। নিম্ন‌বিত্ত পরিবার। আড়াই‌ খানা ঘরে‌ সবাই কোনোমতে থাকে। আমি যেতে শৈলেশের বাহাত্তর বছরের  মা মেঝেতে আসন পেতে, পাশে বসে গল্প করতে করতে খুব যত্ন করে খা‌ওয়ালেন। ভাই, ভায়ের বৌ আন্তরিক‌ভাবে গল্প করলো। শৈলেশের মেয়ে ঋতু এগারো ক্লাসে পড়ছে। সপ্রতিভ, স্বাভাবিক। ছেলেটি শান্ত। নাম জিতু। সিক্সে পড়ে। ঋতু এই বয়সেই ভালো রান্না শিখে গেছে। বললো, সেদিনের দুটি পদ ও রেঁধে‌ছে। স্কুল, পড়াশোনা সামলে কাকীমা‌কে বাড়ি‌র কাজে সাহায্য করে। আসলে মা, বাবা ছেড়ে দুরে অন‍্যের আশ্রয়ে যারা বড় হয় তারা হয়তো নিজে‌ও বোঝে,  আত্মীয়‌তা সত্ত্বেও ওরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাই সাধ‍্যমতো প্রতিদান দিতে চেষ্টা করে।
     
      শৈলেশ বললেন, এখানে তো কিছু পাওয়া যায় না, রাতে আমাদের সাথে খাবেন। তবে আমরা তো সূর্যাস্তের পর‌ই সাড়ে ছটার মধ‍্যে খেয়ে নি। আপনাদের অতো তাড়াতাড়ি ডিনারে‌র অভ‍্যাস নেই। আপনি আটটা নাগাদ আসবেন। খাবার করা থাকবে, কেবল গরম করে দেবো। বলি, তার কোনো দরকার হবে না, আমার কাছে যা শুকনো খাবার আছে, তাতেই হয়ে যাবে। তবে আমার কাছে বর্তন আছে। যদি ঐ কিচেন প্ল‍্যাটফর্মে‌ ইঁট পেতে একটু আগুন জ্বালি, চা, ম‍্যাগী করার জন‍্য, অসুবিধা নেই তো? যাওয়ার আগে সব পরিস্কার করে দিয়ে যাবো।

        শৈলেশ বলে, তার কোনো দরকার নেই। ছোট গ‍্যাস স্টোভ আছে। দিয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছে মতো চা, ম‍্যাগী বানান তবে ডিম সেদ্ধ করবেন না, এটা জৈন সিদ্ধক্ষেত্র, বুঝতে‌ই পারছেন। বলি, তাহলে তো খুব ভালো হয়। বাঙ্গালী‌রা আমিষ খায় বলে কিছু জৈনতীর্থে ঘর দিতে চায় নি। বুঝি‌য়ে বলাতে এযাবৎ অনেক জৈন তীর্থে থেকেছি। কোথাও ফিরিয়ে দেয় নি। মাস দুয়েকের জন‍্য যখন একা বেরোই, মাছ মাংস খাই না। রাস্তায় কখনো ডিমসেদ্ধ খাই বটে তবে এসব জায়গায় থাকলে কখনো‌ই নয়। ভরসা করতে পারে‌ন।

         শৈলেশ বলেন, আমি জানি বাঙালী‌রা আমিষভোজী। স্বামী বিবেকানন্দ‌ও মাছ, মাংস খেতেন। তাতে আমার কিছু এসে যায় না। যাদের যেমন আচার। আপনি এই বয়সে এতোদিন ধরে একা ঘুরছেন। এমন বিরান জায়গায় তিনদিন থাকবেন বলছেন। তার মানে আপনি একটু অন‍্য ধরনের মানুষ। আমি অন্ততঃ এমন কাউকে দেখিনি। বললেন যখন, অবশ‍্য‌ই আপনি অন‍্যের আস্থার মর্যাদা রাখবেন। আমি সুরেশকে বলছি, ওর বাড়িতে মোষ আছে, দুধ দিয়ে যাবে। 
    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৩ মার্চ ২০২৪ | ৯১৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লোকটা - Kunal Basu
    আরও পড়ুন
    কবিতা  - S Azad
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Basu | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৩:৫২529741
  • দুটো ব্যাপার।
    ভদ্রমহিলা মানসিক বিকারগ্রস্ত কিনা এইটা ঠিক করেছে একদল পুরুষ, ডাক্তার বলেন নি। কাজেই তার উষ্ম মানসিক বিকৃতি না হয়ে এই লোকটির প্রতি বিরক্তি, এও হয়তযহতে পারে, যার জন্য আপনার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। উত্তর মধ্য ভারতে মহিলাদের মানসিক নির্যাতন এবং তারপর মানসিক বিকারগ্রস্ত লেবেল দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া কিন্তু অবিরল নয়। 
    দুই, মাছ মাংস যে অর্থে আমিষ, মোষের বা গরুর বা যে কোন পশুর দুধই বা আমিষ নয় কোন যুক্তিতে? 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:1a1:3b51:3ed4:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৫:০৭529742
  • ত্রিকাল চৌবিশি মন্দির কি চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মূর্তি গোল করে বসানো?
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:১৩529749
  • @ পলিটিশিয়ান - আপনার জিজ্ঞাসা‌ নিয়ে ভাবতে গিয়ে বুঝলাম, আমার বিবরণে একটু ভুল হয়ে গেছে। আসলে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, পৌরাণিক এসব বিষয়ে আমার জ্ঞান খুব‌ই সীমিত। তবু আপনার জিজ্ঞাসা‌র যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু ভুল মনে হলে জানাবেন:
    হিন্দুশাস্ত্রে চারটি যুগের ধারণা আছে - সত‍্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি। এই চতুর্যুগ চক্রাকারে চলতে থাকে। এভাবে চতুর্যুগের এক হাজার চক্র (cycle) সম্পন্ন হলে তাকে এক কল্প ভাবা হয়। তেমনি আছে তিনটি লোকের বা ত্রিলোকের ধারণা - স্বর্গ - মর্ত‍্য - পাতাল।

    জৈন ধর্মে‌ও তেমনি তিনটি কালের ধারণা আছে - অতীত - বর্তমান - ভবিষ্যত। এই তিন কালকে ত্রিকাল বলা হয় এবং চতুর্যুগের মতো এই ত্রিকাল‌ও চক্রাকারে চলতে থাকে। সুতরাং “ত্রিকাল চৌবিশি” বলতে তিনটি কালের চব্বিশ‌জন তীর্থঙ্কর বোঝায়। তারা হলেন অতীতকালে প্রথম তীর্থঙ্কর শ্রী নির্বাণনাথ ও ২৪তম শ্রী শান্তনাথ। বর্তমান কালের - প্রথম শ্রী ঋষভদেব / আদিনাথ‌জী এবং ২৪তম শ্রী মহাবীরস্বামী / বর্ধমান‌জী। ভবিষ্যতকালের প্রথম শ্রী মহাপদ্মনাথজী এবং ২৪তম শ্রী অনন্ত‌বীর্য‌নাথজী।

    সুতরাং “ত্রিকাল চৌবিশি মন্দির” বললে সেখানে ৩x২৪ = ৭২ টি তীর্থঙ্করের মূর্তি / মন্দির থাকার কথা। তেমন আছে‌ও ঝাড়খণ্ডের পরেশনাথ পাহাড়ে (সম্মেধ শিখরজী) এবং আরো অনেক জৈন তীর্থে। শ্রেয়াংসগিরি পাহাড়ে ঐ গোলাকার মন্দির সমূহে আছে কেবল এবং সেগুলি বর্তমান কালের চব্বিশ‌জন তীর্থঙ্করের মূর্তি। তাই ঐ গোলাকার মন্দির সমূহকে আমার “ত্রিকাল চৌবিশি মন্দির” লেখা ভুল হয়েছে। লেখা উচিত ছিল “চৌবিশি মন্দির”। 

    এই প্রসঙ্গে বলি, বর্তমান কালের ২৪তম তীর্থঙ্কর শ্রী মহাবীর‌স্বামী‌জী‌ই খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর বা আড়াই হাজার বছর আগের চরিত্র। তাঁর চব্বিশ জেনারেশন আগে শ্রী আদিনাথ‌জীর কাল তাহলে অন্ততঃ আরো হাজার দেড়েক বছর আগেকার কথা। সুতরাং তার‌ও আগে অতীত কালের চব্বিশজন তীর্থঙ্কর হয়তো একটি ধারণা মাত্র - তার ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। 

    তেমনি বর্তমান কালের শেষ / ২৪তম তীর্থঙ্কর শ্রী মহাবীরশ্বামীর পরেশনাথ পাহাড়ে জীবনাবসানের পর আড়াই হাজার বছর পার হয়ে গেলেও এবং ভবিষ্যত‌কালের ২৪ তীর্থঙ্করের ধারণা জৈন ধর্মবিশ্বাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলেও এযাবৎ ভবিষ্যত কালের প্রথম তীর্থঙ্কর শ্রী মহাপদ্মনাথজী‌র বাস্তব অস্তিত্ব নেই। থাকলে তিনি‌ও তো বর্তমান কালের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। তাই আমার মনে হয় ভবিষ্যত কাল হয়তো চিরকাল ভবিষ্যতে‌র গর্ভেই থেকে যাবে। 

    আপনার জিজ্ঞাসা‌র জন‍্য ধন্যবাদ। ম‍্যাপের লেবেলিংয়ে ভুলটা ঠিক করে দিয়েছি। 
     
  • Ranjan Roy | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৮529750
  • সমরেশ ভাই ,
    ফাটাফাটি। জৈনধর্মের ত্রিকাল এবং প্রতিকালে ২৪ জন তীর্থংকর! কিছুই জানতাম না। পলিটিশিয়ানকে ধন্যবাদ একটি ভ্যালিড প্রশ্ন করে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করানোর জন্যে।
     
    অরিনদা,
    আপনি বলছেন যুক্তির কথা, বিজ্ঞানের কথা।
    কিন্তু বাস্তবে চলছে লোকবিশ্বাসের কথা।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৩:২৫529752
  • অরিনবাবু,

    ১. ম‍্যানেজার শৈলেশের স্ত্রী‌র জ্বলজ্বলে দৃষ্টি, রুক্ষ কথাবার্তা‌র ধরণ দেখে‌‌ও প্রথম দর্শনে আমার‌ তাকে মানসিক‌ বিকারগ্ৰস্ত মনে হয়নি। কারণ মুখের ওপর দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলেও সে আমার প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিয়েছিল। তবে মনে হয়েছিল মহিলা‌টির স্বাভাবিক সহবৎবোধ নেই। সে ঘোর উন্মাদ নয় বলেই শৈলেশ‌ও তার সাথে বিয়ের পর তখন অবধি বিশ বছর ঘর করছে - ডিভোর্স করেনি বা পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেয়নি। 

    তবে বাৎসল‍্যবোধ একটা প্রবল প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি (Natural Instinct) । তাই কোনো মা যখন দুবার তার শিশুসন্তান‌কে মাটিতে আছড়ে ফেলতে যায় - সেটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক আচরণ বলা যায় না। তাই সে মানসিক বিকারগ্ৰস্ত না হলেও তার আচরণ ক্ষেত্রবিশেষে একটু বা বেশ অস্বাভাবিক। তার অস্বাভাবিক‌তা কেবল পুরুষদের বা বাড়ির লোকের মনে হয়নি। শৈলেশ ওকে একবার সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে‌ও গেছি‌ল। সব শুনে তাঁর‌ও মনে হয়েছিল মহিলা‌টি একটু অস্বাভাবিক কিন্তু সেই অস্বাভাবিক‌তা সবসময় প্রকাশ হয় না বা তার মাত্রা‌ও সর্বদা প্রবল হয় না বলে তিনি কিছু করতে পারেন নি। শৈলেশের আর্থিক সামর্থ্য, পরিস্থিতি এবং তেমন মানসিকতা‌ও ছিল না যে তাকে দীর্ঘমেয়াদী সাইক্রিয়াটিস্টের পর্যবেক্ষণে রাখবে। 

    শৈলেশের কথা শুনে এ‌ও মনে হয়নি যে মহিলা‌টি তার স্বামীর ওপর বিরক্ত। বরং উল্টো‌টাই মনে হয়েছে। কারণ তার বাড়ি‌র লোক তো তাকে বেড়াল পার করার মতো বিয়ে দিয়ে হাত ঝেড়ে ফেলেছে। তাই কিছু অস্বাভাবিক‌তা সত্ত্বেও মহিলা‌টি বোঝে শৈলেশ‌ই তার একমাত্র আশ্রয়। তার অস্বাভাবিক‌তার লেয়ার অনুধাবন করতে এই লেখাটি‌র তৃতীয়/অন্তিম পর্বের শেষটা দেখতে অনুরোধ র‌ইলো।

    ২) জৈন ধর্মে অহিংসা জীবনের বিভিন্ন আচরণে একটি Guiding Factor. তাই জৈন সাধু / সাধবীরা রাতে রাস্তায় সফর করতে চান না যাতে অন্ধকারে কোনো কীট পতঙ্গ মাড়িয়ে না ফেলেন। অনেক জৈন মন্দিরে রাতে খুব মৃদু আলো জ্বলে যাতে উজ্জ্বল আলোর আকর্ষণে পোকামাকড় এসে আহুতি না দেয়। সূর্যাস্তের পর আহার না করাও ঐ কারণে। আহারে‌র চয়েসের ক্ষেত্রে‌ও যথাসম্ভব কম অহিংসা মান‍্য বিষয় - তাই মাটির তলার জিনিস - আলু, মূলো, গাজর, পিঁয়াজ ওরা খেতে চান না। এক তো ওগুলো তুলতে গেলে খুরপির আঘাতে মাটির তলায় কেঁচো বা অন‍্য কীট মারা যেতে পারে। তাছাড়া শেকড়সুদ্ধ উপড়ে নিলে ঐ গাছগুলি‌ও মারা যায়। 

    তবে অধিকাংশ জৈনদের কাছে দুধে আপত্তি নেই।  তার‌‌ও কারণ আছে। এখনকার মতো ইঞ্জেকশন দিয়ে বা কমার্শিয়াল ডেয়ারি ফার্মে যেভাবে গরুগুলিকে কেবল‌মাত্র দুধ দোয়ার জন‍্য পালন করা হয় সে তুলনায় একদা গৃহপালিত গরু, ছাগলকে যত্ন করে পালন করে যথাসম্ভব কম কষ্ট দিয়ে দুগ্ধ দোহন করা হোতো। তাই দুধ জৈন ডায়েটে বর্জনীয় নয়। তবে পশুপ্রেমী, নিরামিষাশী মানেকা গান্ধী দুধ বর্জন করতে বলে একবার হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।

    নিরামিষাশী মহাত্মা গান্ধী‌ও আজীবন ছাগদুগ্ধ পান করেছেন বলে শুনেছি। আমি এযাবৎ বেশ কয়েকটি জৈনতীর্থে গেছি। এক জৈনতীর্থে জৈন ভোজনশালায় দুপুরে খেতে গিয়ে দেখলাম, স‍্যালাডে শশার সাথে মূলোও রয়েছে। ম‍্যানেজার‌কে জিজ্ঞাসা করেছি‌লাম - জৈনরা তো মাটি‌র তলার সবজি খান না বলে শুনেছি - তাহলে স‍্যালাডে মূলো কীভাবে এলো? উনি বলেছিলেন, সময়ের সাথে অনেক কিছুই আর মানা সম্ভব হয় না।

    এই প্রসঙ্গে একটা WiKi link রাখলাম - সেখানে  “lacto-vegetarian” অংশটি দেখলে হয়তো আপনার জিজ্ঞাসা‌র জবাব পাবেন।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৩529756
  • @সমরেশবাবু
     আমি ভারতীয় মানসিকতা আর মনোরোগ সম্বন্ধে যতটুকু সামান্য জানি, তার ভিত্তিতে যুক্তিগত অনুমান করছিলাম যে যা শুনছি দেখছি সবটাই ভদ্রমহিলার স্বামী বা তাঁর পরিবারের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে, ভারতে তো বটেই, মানসিক অসুস্থতার একটা ব্যাপার থাকে | শিশুকন্যাটিকে আছাড় মারার ব্যাপারটি ভদ্রমহিলার নিজের বয়ানে নয়, তাঁর স্বামীর বয়ানে |  তাহলেও ভদ্রমহিলা এতগুলো বছর মানিয়ে নিয়ে রইলেন, এমন একটা জায়গায় যেখানে আপনার বর্ণনা পড়ে মনে হয়নি তাঁর সামাজিক মেলামেশার সুযোগ রয়েছে | হিন্দি বলয়ের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে "মেয়েদের" দাগিয়ে দেবার ব্যাপার যে নেই তা নয়। যাকগে, এ ব্যাপারে আপনার লেখা আরেকটু এগোক, না পড়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করা মনে হয় সমীচিন হবে না। 
     
    @রঞ্জন, :-), আপনি যেমন লিখলেন, আমার বক্তব্যটি একেবারেই যুক্তির প্রেক্ষিতে।
    দুধের ব্যাপারটা গোলমেলে, এবং সমরেশবাবুর উইকি লিঙ্কে ব্যাপারটি কি এর বর্ণনার বাইরে কিছু বলে নি। সায়েবের ভেজিটেরিয়ানিজমে মাছও চলে ("জলের শস্য?") | 
    কিন্তু প্রাণীহত্যা বা প্রাণীকে কষ্ট না দেয়া যদি একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হয়, তাহলে দুধ,  ঘি, মাখন, মধু, রেশম, পশম, ইত্যাদিও বর্জন করাই  শ্রেয় নয় কি? মানুষ বাদে অন্য কোন প্রাণী অপরের দুধ পান করে না।  
     
    সূর্যাস্তের আগে খাওয়া (বা একবেলা খাওয়া), বৌদ্ধধর্মেরও রীতি, তবে সাধারণত সংঘেই চলত, তার কারণ যেহেতু শ্রমণরা বাড়ি বাড়ি ভিক্ষাপাত্র নিয়ে যে যা দিতে পারতেন তাই সকলে ভাগ করে খেতেন, বুদ্ধদেবের অনুশাসন ছিল যে কেবল একবেলা, দিনের বেলা দুপুর অবধি যা পাওয়া যাবে তাই দিযে সেদিনের মত খেতে হবে তো সে এখনো প্রায় সমস্ত সংঘে  (আমি যতদূর জানি) চলে, এমনকি retreat গুলোতেও এইটাই রীতি। তার সঙ্গে অহিংসার কোন সম্পর্ক আছে বলে জানতাম না | জৈনদের অন্যরকম মনে হয়। 
     
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:ff3d:ace8:e20d:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:০৪529765
  • সমরেশবাবু, বুঝিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
     
    আসলে ওই গোল মন্দিরটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ভারতে চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির গোল হয়। কালনায় একশো আটটি শিবমন্দির গোল করে সাজানো। গ্রীকরা গোল মন্দির বানাতো দেবীদের জন্য। ওই গোলাকৃতি মন্দিরকে তারা বলত থোলস। ওরাকল অফ ডেলফির মন্দির নাকি থোলস ছিল। রোমানরাও গোল মন্দির বানাত, গ্রীকদের স্টাইলেই।
     
    চৌবিশি মন্দির আমি বেশি দেখিনি। তাদের মধ্যে এটিই গোল দেখছি।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৮529795
  • পড়ে ফেললাম। দারুন লাগল। সঙ্গে আপনার পর্যবেক্ষণ গুলি উপরি পাওনা। ওনার স্ত্রীর ব্যাপারটা মনকে ভারাক্রান্ত করে দিল। সাথে যে আত্মীয়ের বাড়িতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকার কথাটা বললেন, ওটাও নিদারুণ সত্যি।
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ মার্চ ২০২৪ ০০:০৯529803
  • শৈলেশ খুব ভাবাচ্ছে,  খুব সাধারণ হয়েও কি অসাধারণ! 
     
    জৈন ধর্মের সার কথা জানা হলো। 
     
    আর এই একক যাত্রার ভ্রমণ কাহিনীর রীতিমতো ভক্ত হয়ে গেলাম। যদিও সময়াভাবে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ছি। 
     
    শাবাশ yes
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৬ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১529811
  • এই লেখাটি‌র ওপর দুজন প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৫ রেটিং দিয়েছেন। একজনের জিজ্ঞাসা‌য় আমার একটি ভুল সংশোধিত হয়েছে। অন‍্যেরা জানি‌য়েছেন এ লেখাটির প্রেক্ষিতে তাদের ভাবনা এবং ভালো লাগা। 
     
    তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন‍্যবাদ।

    পোষ্ট করছি এর দ্বিতীয় পর্ব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন