এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • আত্রেয়ীতে অবগাহন করে হাঁটা হয়নি আর সুবর্ণ‍রেখার তীরে - ২

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ০২ মার্চ ২০২৫ | ১০৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • | | | | | |
      রথতলায় মেলা‌ বসেছে। নাগরদোলা, চরকি বসেছে। বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান‌ লেগেছে। মণ্ডপে ঠাকুর দেখে ওরা মেলাতে ঘুরে বেড়ায়। কয়েকটা চটপটা পদ খাওয়া হয়। নাগরদোলায় চড়া হয়। করবী চড়ে না। ওর গা গুলোয়। নাগরদোলা‌র সীটে টপাস করে উৎপল বসে পড়ে অতসীর পাশে। অর্জুন হাত নাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা করবী‌কে। আন্দোলিত নাগরদোলা‌য় সামনে বসা অতসীর উচ্ছলতা উপভোগ করে সুমন। দু একবার চোখাচোখি হতে অতসী‌র দৃষ্টিতে যেন নীরব জিজ্ঞাসা ফোটে, কী দেখছি‌স অমন করে? সুমন‍ও নীরবেই জবাব দেয় - তোকে। 
     
      খানিক ঘোরাঘুরি করে অতসী বলে, এ্যা‌ই, অনেকদিন সিনেমা দেখিনি। কাছেই সিনেমা হলে বাসু চ‍্যাটার্জীর 'বাতো বাতো মে' চলছে, যাবি? ওরা সম্ম‌ত হয়। বাড়ি থেকে অনেকটা হেঁটে এসেছে পূজামণ্ডপে। মেলাতেও বেশ খানিক ঘোরাঘুরি হয়েছে। এবার একটু বসে সিনেমা দেখলে মন্দ হয় না। 
     
      এমন সময় করবী‌র স্কুলের একদল বন্ধুদের সাথে ওর দেখা হয়। ওকে ওরা ডাকাডাকি করতে থাকে। ও বলে, দিদি, আমি ওদের সাথে যাবো? অতসী বলে, যা না, তবে বেশী দেরী করিস না, বাড়ি গিয়ে মাকে বলিস আমরা নাইট শোয়ে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি। ফিরতে দেরী হবে, যেন চিন্তা না করে।
     
       সিনেমা হলে‌ও উৎপল আগে অতসী‌কে ঢুকতে দিয়ে চট করে ওর পাশে গিয়ে বসে পড়ে। অর্জুন সুমনের দিকে ইংগিতময় ভঙ্গিতে তাকায়। অমল পালেকর ও টিনা মুনিমের মাখোমাখো রোমান্টিক কমেডি। সাথে ডেভিডের অনবদ‍্য অভিনয়ের কাসুন্দি। মন্দ লাগে না। সিনেমা‌টা কলকাতা‌য় মেট্রোয় এসেছিল। তখন সুমনের দেখা হয় নি। বালুরঘাটে এসে দেখা হোলো অতসী‌র বলায়।
     
       দু ঘন্টায় শেষ হয়ে গেল সিনেমা। রাত সাড়ে দশটা। পুজোর সময় চারদিক আলোয় ঝলমল। তবু আর হেঁটে যেতে ইচ্ছে হয় না। ঠিক হোলো রিকশায় যাওয়া হবে। কাছেই রিকশা‌স্ট‍্যান্ড। ওমা! আবার উৎপল প্রথম রিকশায় অতসী‌কে উঠিয়ে টপাস করে চড়ে বসে ওর পাশে।
     
      নাগরদোলায় ঠিক আছে, সিনেমা হলেও না হয় হোলো কিন্তু এবার একটু বেশী হয়ে গেল। পিছনের রিকশা থেকে অর্জুন ওর দিকে কটমটে চোখে তাকিয়ে সুমনকে বলে, উৎপলটার রকম সকম দেখছিস! সব জায়গায় টপাস টপাস করে প্রথমেই গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ছে। কেমন আগলে আগলে রাখছে দেখ। যেন সদ‍্য বিয়ে করা ব‌উ। কেন রে বাবা, আমরা কী বাণের জলে ভেসে এসেছি? বসতে পারি না ওর পাশে? সিনেমা হলের সীটে একটু বাদে‌ই ব‍্যাটা কেমন অতসী‍র দিকে হেলে গিয়ে বসেছিল খেয়াল করেছিলি?
     
      সুমন বলে, ওমা, তুই সিনেমা ছেড়ে ঐসব দেখছি‌লি নাকি? আমি তো পর্দায় টিনা অমলের সিলসিলা থেকে চোখ‌ই ফেরাতে পারছিলাম না।
     
      উৎপলের রকমসকম দেখে, অর্জুনের কথা শুনে সুমনের মজা লাগে। বিগত তিন বছরের মেলামেশায় একদা স্কুল বান্ধবী কেতকীর সাথে তখন ওর সম্পর্ক‌টা বেশ মুচমুচে। ছিপছিপে, ফর্সা, সুন্দরী কেতকীর সাথে সপ্তাহে দু এক দিন ওদের বাড়ি গিয়ে আশ মিটিয়ে আড্ডা হয়। চম্পা, চামেলী, গোলাপের বাগে ঘোরাফেরা করলেও সুমন তখন কেতকী‌তে মগ্ন। 
     
      তবে অতসী‌র স্বভাব‌ও বেশ খোলামেলা, আন্তরিক। তাই ওরা দুজন অচেনা হলেও ও খুব সাবলীল‌ভাবে ওদের সাথে মিশছে, যেন অনেকদিনের চেনা। পুজোর সময় স্বল্পভ্রমণে এসে ওর সাথে ফুরফুরে মেজাজে হাসি মস্করা করতে সুমনের ভালো‌ই লাগছে। অতসী কিছু মনে করছে না, মজা পাচ্ছে দেখে বেশ লাগছে ওর সাহচর্য। উৎপল অতসীর কলেজের বন্ধু। তাই হয়তো পূর্ব‌পরিচিতির সূবাদে উৎপল একটু বেশি ঘেঁষাঘেষি করছে ওর সাথে। তাতে কী হয়েছে। সুমন, অর্জুন ওদের সাথে পড়ে না। এই যে কাল চলে যাবে ওরা, তারপর ছুটির শেষে উৎপলের সাথে অতসী‍র কলেজে দেখা হলেও ওদের দুজনের সাথে আবার কবে অতসী‌র দেখা হবে কে জানে। হয়তো আর কখনো দেখা নাও হতে পারে। সুতরাং এই মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে পারাই তো যথেষ্ট আনন্দময় অভিজ্ঞতা। 
     
      পেছনের রিকশায় যাচ্ছে অর্জুন আর সুমন। অর্জুন কবিতা লেখে। পত্রপাঠ ওর মাথায় দুষ্টুমি খেলে যায়। সুমনকে বুঝিয়ে দেয় কীভাবে একটা চার লাইনের তৎক্ষণাৎ উদ্ভাবিত গান সুর করে গলা ছেড়ে গাইতে হবে। চাঁদের দিকে মুখ তুলে বিরহী নেকড়ের কান্নার মতো শুরু করে অর্জুন :
     
    ইউ আর দ‍্য উইইইইনাআআর 
     
    উই আর দ‍্য লুউউউসাআআর 
    (ধুয়োয় সুমন)
     
    নো ম‍্যাটার - হাউ হার্ড উই ট্রাই 
    (যুগ্ম কণ্ঠে)
     
    উই উইল স্টিল বি লুউউসাআর 
    (যুগ্ম কণ্ঠে)
     
       হাওড়ায় ওরা যেখানে থাকে সেখানে ওরা তিনজনে‌ এক গোয়ালের গরু। অধিকাংশ সন্ধ‍্যায় উৎপলদের দোতলা বাড়ির ছাদে সবাই মিলে চুটিয়ে আড্ডা হয়। তাই অর্জুনের শয়তানি বুদ্ধি চকিতে বুঝে যায় উৎপল। আগের রিকশায় অতসীর পাশে বসে যেতে যেতে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে অর্জুনকে আরো রাগিয়ে দেওয়ার জন‍্য রিকশার সীটের পিছনে হাত রেখে অতসীকে বেড় দিয়ে বসে। অর্জুন‌ রেগে গিয়ে সুমনকে বলে, দেখেছি‌স, ব্যাটার হলে হেলে গিয়ে পাশে বসেও আশ মেটেনি, এখন রিকশা‌তেও কেমন জড়িয়ে বসেছে ওকে দেখ? পরক্ষণেই উচ্চকণ্ঠে আর্তচিৎকার করে: উই আর দ‍্য লুউউউসাআআর। 
              
                              * * * * * * * * * * 
     
        পরদিন রাতের বাসে ওরা চলে যাবে কলকাতা। সকালে চা জলখাবার খেয়ে উঠোনে বসে গল্পগুজব হচ্ছে। থেকে থেকে জড়িয়ে জড়িয়ে গেয়ে উঠছে অর্জুন - ইউ আর দ‍্য উইইইইনাআআর। প্ল‍্যান অনুযায়ী সুমন‌ও সানাইয়ের পোঁ ধরছে - উই আর দ‍্য লুউউউসাআআর।
     
      অতসী সাধাসিধে মেয়ে। ওদের এইসব ফিচলেমি বোঝা ওর সাধ্যে কুলোয় না। তায় উৎপলের কথা অনুযায়ী ও নাকি একটু ছিটগ্ৰস্ত। যদিও সেই প্রথম দিন সকালের আশ্চর্য কৌতূহল‍হীন আহ্বান ছাড়া এই তিনদিনের মেলামেশায় ওর আচরণে বিন্দুমাত্র বিসদৃশ কিছু চোখে পড়েনি। একদম স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে, গল্প করেছে, হেসেছে। অর্জুনের মতে, বরং সুযোগ পেলেই উৎপলের তিন তড়াকে অতসীর পাশে গিয়ে বসে পড়াটাই যেন বিসদৃশ লেগেছে। তাতে অবশ‍্য অতসীর কোনো হেলদোল নেই। 
     
      দশমীর সকালে কয়েকবার অর্জুন আর সুমনকে ইংগিত‌পূর্ণ ভাবে ঐ দুটো লাইন ঘুরে ফিরে আওড়াতে দেখে এবং তা শুনে উৎপলের মিচিক মিচিক হাসি দেখে অতসী‌ সুমনকে বলে, এই, তোরা তখন থেকে ঐ দুটো লাইন কী গেয়ে চলেছিস বল তো?
     
      সুমনের মাথায় তৎক্ষণাৎ খেলে যায় দুষ্টুমি। গম্ভীর মুখে বলে, একটা সিনেমার গান।
     
      অতসী সরল মনে জানতে চায়, কোন সিনেমা?
     
    ভাবলেশহীন মুখে সুমন বলে, অতল জলের আহ্বান।
     
       উঠোনে মোড়ায় বসে জল খাচ্ছিল উৎপল। সুমনের বলার ভঙ্গিতে ভ‍্যাক করে মুখ থেকে জল ছিটিয়ে হাসতে হাসতে বিষম খায় উৎপল। দুলে দুলে হাসে অর্জুন। অতসী ভ্যালভ্যাল করে এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ধ‍্যাৎ, কী যে বলিস তোরা, কেন‌ই বা হেসে গড়িয়ে পড়িস, বুঝি না বাপু।
     
      কিন্তু সকালের উজ্জ্বল আলোয় সুমন পরিস্কার বোঝে, কিছু না বুঝেও অতসী যেন একটু লজ্জা পেয়েছে। সহজাত মেয়েলি বোধে যেন বুঝেছে ওদের ঐ রহস‍্যময় রসিকতার প্রেক্ষাপটে হয়তো রয়েছে ও নিজেই। তাই ও যাতে বুঝতে না পারে সেভাবে ওরা নিজেদের মধ‍্যে মজা করছে। অতসী আর সেই প্রসঙ্গে কিচ্ছু বলে না। এই মেয়ে নাকি ছিটগ্ৰস্ত!
     
     
                                * * * * * * * * * * 
     
       সেবার বালুরঘাট থেকে চলে আসার পর আর দেখা হয়নি অতসীর সাথে সুমনের। বছর দুয়েক বাদে একদিন উৎপল সুমনকে বলে, জানিস, অতসীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোর আর অর্জুনের ঠিকানা ওর কাছে নেই। তাই আমাকে তিনটে কার্ড পাঠিয়ে তোদেরকে‌ও নিয়ে আসতে বলেছে বৌভাতের সন্ধ্যায়। যাবি?
     
       সুমনের পলকে মনে পড়ে যায় দু বছর আগে পাঁচদিনের সেই মনোরম ভ্রমণের স্মৃতি। কিছু সুন্দর মানুষের সাহচর্য - অতসী, করবী, মাসিমা। আত্রেয়ী নদী‌র পারে দুপুর রোদে ছাতা মাথায় উবু হয়ে বসে ছিপছিপে মেয়েটি মিটিমিটি হাসছে। নবমীর সন্ধ্যায় লাল শাড়ি পরে সেজেগুজে চলেছে ওদের সাথে মেলায়। অর্জুন আর সুমনের দু লাইনের ফিচেল গান শুনে চোখ কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট কিছু সুন্দর মুহূর্তে‌র মোজাইক। 
     
       অনেক মেয়েই আহামরি সুন্দরী হয় না। তবে কারুর স্বভাবে থাকে মধুর আন্তরিক‌তা, মায়াবী নম্রতা। তাদের ক্ষণস্থায়ী মাধূর্যময় সাহচর্য‌ও মনে রেখে যায় দীর্ঘ‌স্থায়ী ছাপ। অতসীকে সেরকম‌ই লেগেছিল সুমনের। দু বছর আগে সামান্য আলাপের সূত্রে অতসী ওদের দুজনকেও ওর বিয়েতে নেমন্তন্ন করায় খুব আনন্দ হয় সুমনের। উৎপলকে বলে, নিশ্চয়ই যাবো। তুই অর্জুনকে বল। 
       
      কনের সাজে নিশ্চয়ই কোনো ম্যাজিক আছে। নিত্যদিন দেখা পাড়ার অতি পরিচিত মেয়েটিকেও বিয়ের দিন কনের সাজে একদম অন্যরকম লাগে। অতসী তো শুভশ্রী। নতুন বৌয়ের সাজে খুব মিষ্টি লাগছে ওকে। ওদের হলের দরজায় দেখে উজ্জ্বল মুখে হাসে। হাত ইশারায় কাছে ডাকে। 
     
      বৌভাতের সন্ধ‍্যায় প্রথা অনুযায়ী একটা লাল ভেলভেট মোড়া সিংহাসনে রাণীর মতো সেজেগুজে বসে আছে অতসী। দু বছর আগে দেখা ছিপছিপে অতসী এখন একটু ভরন্ত হয়েছে - যেন সদ‍্য বর্ষা উত্তীর্ণ আত্রেয়ী। বিয়ের সাজে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য‌বতী নারীর লাবণ‍্যময় রূপ এক দৃষ্টি‌নন্দন অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির বরদান। 
     
       আজ রাতে ওর ফুলশয্যা। বিয়ে হয়ে গেলেও অদ‍্যাবধি কুমারী অতসীর মধ‍্যে দেখা যায় সেই পরিচিত আন্তরিক‌তা। বলে, কী রে, কেমন আছিস তোরা? টুকটাক কথা হয়। তার মাঝে অন‍্যান‍্য অতিথি‌রা আসেন। ও জোড়হাতে সবাইকে মিষ্টি হেসে নমস্কার করে। উপহার নিয়ে পাশে বসা মেয়েটিকে হস্তান্তর করে। কেউ পাশে দাঁড়িয়ে নতুন বৌয়ের সাথে ছবি তোলে। ওরা তিনজনে তখন একটু সরে দাঁড়ায়। ভীড় কমলে একফাঁকে সুমন সিংহাসনে‌র পাশে দাঁড়িয়ে মুখে দুখী দুখী ভাব ফুটিয়ে অতসীকে শুনিয়ে চাপা স্বরে গায় "উই আর দ‍্য লুউউউসাআআর"। 
     
       দুটি বছরের সময়ের অবদান, বিয়ের প্রস্তুতি, হয়তো আরো কিছু আনুষাঙ্গিক কারণে অতসী‌র মধ‍্যে এসেছে একটু পরিবর্তন। তাই এবার আর ও ভ্যালভ্যাল করে তাকায় না। চকিতে বুঝে যায় সুমনের রসিকতা। মুখ টিপে হেসে বলে, তুই ঠিক সেরকমই পাজি‌ রয়ে গেছিস। আর অসভ‍্য।
     
      সুমন বলে, তুই তো এমন ভাবে বলছিস যেন বহুযুগ বাদে দেখা হোলো, আমি যেন দাদু হয়ে গেছি। মাত্র দু বছরে কেউ বদলায়, যদি না ইচ্ছা‌কৃত বদল দেখাতে চায়?
     
      অতসী বলে, ধুস ভাল্লাগে না, তোরা এলি, কিন্তু একটু যে প্রাণ খুলে আড্ডা দেবো তার উপায় নেই। কেমন ঠাকুরের মতো আমায় সিংহাসনে বসে থাকতে হচ্ছে দ‍্যাখ। আচ্ছা শোন না, বিয়ের পর আমি ওর সাথে চলে যাবো ঘাটশিলা। ও হিন্দুস্তান কপারে চাকরি করে। আমি গিয়ে সংসার‌টা একটু গুছিয়ে নিয়ে তোদের খবর দিলে আসবি তোরা কদিনের জন‍্য? সেই বালুরঘাটে‌র মতো খুব মজা হবে? শুনেছি বড় কোয়ার্টার। কোনো অসুবিধা হবে না তোদের থাকার। আমরা সবাই মিলে সূবর্ণ‌রেখার তীরে বেড়াতে যাবো। আসবি তোরা?
     
      হায় রে বালিকা! এগুলো‌ই হয়তো অতসী‌র কিঞ্চিৎ ঢিলে স্ক্রুর লক্ষণ। ও কী বোঝে না বিয়ের পর অনেক পুরোনো সম্পর্কে‌র সমীক‍রণ যায় বদলে? তখন আর চাইলেই করা যায় না এমন অনেক কিছু যা প্রাণ চায়। অধিকাংশ বিবাহিত নারী‌‌র জীবন‌ই তখন চালিত হয় প্রাণনাথের চাওয়ায়। স্বামী খুব উদারমনস্ক হলে বা স্ত্রী খুব স্বাধীন‌চেতা হলে তবু কিছুটা অন‍্য কথা। 
     
      বিয়ের পর কুমারী জীবনের পু্রুষ বন্ধুদের বাড়িতে আমন্ত্রণ করে নদীতীরে ভ্রমণের বেড়ানোর পরিকল্পনা পতিদেবতার অপছন্দের তালিকা‌য় অন‍্যতম হ‌ওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। যে কোনো স্বাভাবিক মেয়ে বোঝে যে গোত্রান্তরের পর শুরু হয় এমন এক নতুন জীবন যেখানে অনেক পুরোনো ভালোলাগার কোনো জায়গা নেই। অতসী তা বোঝে না। ওর মনে কোনো মলিনতা নেই। তাই ও করে বসে অমন এক আন্তরিক কিন্তু অবাস্তব আমন্ত্রণ। 
     
       তবু যে সেদিন ওরা বলেছিল, আচ্ছা তুই ওখানে গিয়ে সেটল করে খবর দিস, যাবো একসময় - তা শুধু ওর মন রাখতে নয়। বালুরঘাটে অতসীর স্বাভাবিক আন্তরিক সাহচর্য খুব আনন্দ‌দায়ক লেগেছিল ওদের। অতসী‌র আকর্ষণ ছিল ওর স্বচ্ছতোয়া মনে‌র ঐশ্বর্যে। কিন্তু সুমন মনে মনে জানতো - বিনা বার্তায় বালুরঘাটে অচেনা অতসী‍র কাছে চলে গেলেও - কখনো আর যাওয়া হবে না চেনা অতসীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘাটশিলা - হাঁটা হবেনা ওর সাথে সুবর্ণ‍রেখার তীরে। জীবনে সব অভিলাষ পূরণ হয় না। কিছু অভিলাষ উপায় থাকলেও পূরণ করতে নেই। 
     
    (সমাপ্ত) 
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | |
  • ভ্রমণ | ০২ মার্চ ২০২৫ | ১০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন