এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  মোচ্ছব

  • গেলুম সেবার ষষ্ঠীতে - ব্রাজিল থেকে পেরুতে

    Samaresh Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | মোচ্ছব | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৮৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • সাড়ে নয় থেকে প্রাক সতেরো অবধি ছিলাম হাওড়ায়, দশটি ব্লকের লিচুবাগান পুলিশ কোয়ার্টারে। রাস্তার ওপারে তিন ব্লকের ডাক্তার কোয়ার্টারস। তাতেই SSP অফিস কাম রেসিডেন্স। পাশে অনেকটা জমি‌ নিয়ে কলোনিয়াল স্টাইলে‌র CMO বাংলো। মাঝে খোলা পরিসরে বড় বড় গাছ, খেলার মাঠ। সেই খোলামেলা পরিসরে পুলিশ ও ডাক্তার কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের মিলিত দুর্গা‌পুজো হোতো।

    হয়তো বারো অবধি বজায় ছিল ছেলেবেলা। ক্রিকেট, ফুটবল জাতীয় কুলীন খেলায় সুবিধে ক‍রতে পারি নি। তাই ঘুড়ি, লাট্টু, ড‍্যাংগুলি, কাঁচের গুলি, পিট্টু জাতীয় অকুলীন খেলায় মেতে থাকতাম। কখনো গঙ্গায় গিয়ে ঝাঁপাতাম গঙ্গা পেরিয়ে ইডেন গার্ডেনের লেকে বোটিং করতে যেতাম। সেই উদ্দীপনা‌ময় ছেলেবেলা‌য় পুজোর কদিন আগে থেকে প‍্যান্ডেলে বাঁশের কাঠামোয় চড়ে চলতো দাপাদাপি। ক‍্যাপ বন্দুক উঁচিয়ে ছোটাছুটি। ইলেকট্রিক নুন দেওয়া হজমি‌তে তখন খুব কারেন্ট! রাতে প‍্যান্ডেল থেকে একটু দুরে আলোছায়া‌ময় পরিসরে লুকোচুরি খেলায় সে কী উত্তেজনা!

    বারো থেকে পনেরো - জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ‍্যায় - বয়ঃসন্ধি‌কাল। সেই দ্রুত পরিবর্তন‌শীল জীবনকালে নানা‌ভাবে রেখাপাত করে বিভিন্ন কৌতুহল, সংশয়, উত্তেজনা, আবিস্কারের অভিজ্ঞতা। ষোলো নাগাদ শুরু জীবনের মেজোবেলা। তখন পুজো প‍্যান্ডেলে ডাক্তার সেনের তিন রূপবতী কন‍্যার ঝকঝকে উপস্থিতিতে আবেশের ঘোর লাগতো মনে! লাটাই হাতে আকাশের দিকে তাকানোর কালে এসব এভাবে চোখে পড়েনি। দৃষ্টি আকাশ থেকে মাটিতে নামতে মনে হোলো তিন কন‍্যের আবির্ভাবে যেন সকালে প‍্যান্ডেল চত্বরে রোদের রঙ‌ও যেতো বদলে! বড় ও মেজো কন‍্যের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য‍্যের ঘোরে তখন পাক খেতো দাদা গোত্রের জনতা। আমি ভাড়ায় নেওয়া রেকর্ড প্লেয়ারে‌র সামনে বসে রেকর্ড বদলানোর ফাঁকে তৃষিত নয়নে চাইতুম - যদি ষোড়শী ছোট কন‍্যে এসে কোনো গানের ফরমাশ করে।

    চাতকের ভাগ‍্যে শিকে‌ও ছিঁড়তো। কখনো সে এসে রিনরিনে গলায় বলতো - "এ্যাই, হেমন্তর - আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা - আছে?" দুষ্টুমি‌ করে বলেছি, "নীল ধ্রুবতারা তো নেই, তবে, পথ হারাবো বলেই এবার - আছে, চালাবো?" মেয়েরা ছেলেদের থেকে আগেই বড় হয় যায় মনে। আমার ফক্কুরি বুঝে চোখের কোনে চিকণ হেসে পেলব কন‍্যে বলে, "আচ্ছা, তাই চালাও।"

    হেমন্ত‌র - "আমি‌ও পথের মতো হারিয়ে যাবো - আমি‌ও নদীর মতো আসবো না ফিরে আর…" - গোত্রের মেলাঙ্কলিক মেলোডি‌র রস নেওয়ার বয়স তখন‌ নয়। ষোড়ষীর উপস্থিতি‌তে ষোলোর সজীব হৃদয়ে তখন খ‌ই ফুটছে - ধিতাং ধিতাং বোলে। ছোটিও হয়তো বুঝতো - ঐ ছেলেটা ভেলভেলেটা কেন চিপকে থাকে রেকর্ড প্লেয়ারে‌র সাথে। মুখে স্বীকার না করলেও, অসভ্যতা না করলে, অতি হ‍্যাংলার মতো আদেখলাপনা না করলে, ছেলেদের নীরব মুগ্ধতা মাখা চোরা দৃষ্টি কোনো মেয়ের‌ই খারাপ লাগে না। তাই হয়তো আমায় ইমোশনালি রিহাইড্রেট করতে সে মাঝে মাঝে এসে করতো কোনো পছন্দের গানের ফরমায়েশ। তখন‌ও রবিগুরুর - "আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতে দোলে" - শুনিনি। তবে না শুনেও এক কোমল কিশোরী‌কে আসতে দেখে এক সুকুমার কিশোরের হৃদয় "বিশেষ" আনন্দে দুলে উঠতো। কারবাইডের টিনের ওপর বসার সেই হোলো শুরু।

    বিসর্জনের দিন সকালে‌ ডেকরেটরের লোক এসে চারপাশের ফ্লাডলাইট, লাল নীল সাজানো আলোর চেন খুলে নিয়ে গেছে। ভাসানের বিকেলে বেদী থেকে নামানো ছ‍্যানাপোনা সমেত দেবী‌কে সিঁদুর, সন্দেশ দিয়ে বরণ করে পাড়ার মহিলা‌রা নিবেদন করেছেন - আসছে বছর আবার এসো মা। গঙ্গা‌য় ভাসানের পর সন্ধ্যা আটটা নাগাদ দলের সাথে ফিরে এসেছি। প‍্যান্ডেলের বাইরে কয়েকটি ও ভিতরে পুজোর মঞ্চে জ্বলছে ম‍্যাড়মেড়ে হলুদ আলো। মহিলা‌দের সেই জোট তখন‌ও প‍্যান্ডেলে বসে গজালি ক‍রছেন - বিসর্জনের পর শান্তির জল‌ নিতে হবে।

    কদিনের অনন্ত দাপাদাপি‌র পর প্রতিমাহীন প‍্যান্ডেলের বাইরে চেয়ারে ম্রিয়মাণ হয়ে বসেছিলাম। ছোটি কাছে এসে বললে -"মা বলেছে, কাল সন্ধ্যায় বাড়িতে বিজয়া করতে আসতে, মনে থাকবে তো?" মুখ তুলে তাকাই। সেই মুখে যা লেগে আছে তা কী তার‌ও সামান‍্য আগ্ৰহ? না কী তা কেবল আমার‌ই মায়াবিভ্রম? তবে তা যাই হোক - এ‌ই আহ্বান ভুলে যাবো? ভোলা যায়? মনে হয় তাহলে বিসর্জনে‌ই সব শেষ নয়, তার পরেও থাকতে পারে কিছু তলানি আনন্দের রেশ!

    ….২…..

    সাত বছর লিচু‌বাগানে থেকে - সতেরোয় সেই কোয়ার্টার ছেড়ে চলে আসতে হোলো কালী ব‍্যানার্জী লেনের ভাড়া বাড়িতে। কারণ আমার পুলিশ পিতা বদলি হয়ে গেলেন হাওড়া জেলা পুলিশ বিভাগ থেকে আলিপুরে ভবানী ভবনে সিআইডি-তে। তাই কোয়ার্টার ছাড়তে হোলো। তার‌পর আর কখনো যাইনি পুজোর সময় লিচু‌বাগানে‌র প‍্যান্ডেলে। ততদিনে পড়ে ফেলেছি বেশ কিছু সুনীল। "স্বপ্ন লজ্জা‌হীন" পড়ে মনে হয়েছে - কিছু প্রিয় অতীতে মজে থাকা যায় - বাস্তবে তা আঁকড়ে ধরা যায় না। পুজোর সময় তখন উদ্দেশ্য‌হীন‌ভাবে ঘুরেছি অচেনা পাড়ার প‍্যান্ডেলে। ভালো লাগেনি।

    কুড়ির পরে বড়বেলার স্বাধীনতা উদযাপনের পালা শুরু হোলো। বাইশে চাকরি করতে গিয়ে একটা পুজো কাটলো ভাইজ‍্যাগে। সে আবার অন‍্য চমচমে অভিজ্ঞতা। কয়েকবার আমার প্রিয় বন্ধু ও অনবদ‍্য ভ্রমণসঙ্গী উৎপলের সাথে পুজোর সময় কলকাতার বাইরে চলে গেছি। ওর বাবার ছিল মনোহারী দোকান। ষষ্ঠী অবধি বিক্রিবাটা ভালোই হোতো। তখন ওকে খদ্দেরের ভীড় সামলাতে বাবার সাথে বিকেলে দোকানে বসতে হোতো। সপ্তমী থেকে কেনাকাটা‌য় ভাঁটা পড়তো। তাই আমরা দুজন কয়েকবার ষষ্ঠী‌র রাতে কলকাতা ছেড়ে বেড়াতে চলে গেছি দুরে - কখনো উত্তরবঙ্গে ওর কলেজ বান্ধবীর বাড়ি, কখনো দলে মিলে দার্জিলিং, অযোধ্যা পাহাড়। দুবার গেছি হিমালয়ে ট্রেকিং‌য়ে হর কি দুন, গোমুখ হয়ে তপোবন। ৮৮তে কোজাগরী পূর্ণিমা‌য় হর কি দুন বন বাংলো থেকে উজ্জ্বল জ‍্যোৎস্নালোকিত স্বর্গারোহিণী শৃঙ্গ ও তার নীচে যমদ্বার হিমাবহের অপার্থিব দৃশ্যে‌র কথা ভাবলে আজ‌ও গায়ে কাঁটা দেয়। ছিয়াশির পুজোর সময় একা চলে গেছি‌লাম HMI দার্জিলিং‌য়ে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্সে। একমাস দারুণ কাটলো। এসবের অন‍্য একটা উদ্দেশ্য‌ও ছিল, পুজোর সময় - হাওড়া, কলকাতার আনন্দ‌মুখরিত ভীড় থেকে সরে থাকা। যে ভীড়ে সামিল হতে পারবো না, তার থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়।

    পরবর্তীতে চাকরি জীবনে পশ্চিম‌বঙ্গের বাইরে থাকতে পুজোর ছুটিতে হপ্তা দুয়েকের জন‍্য কয়েকবার শ্বশুর, শাশুড়ি আমাদের কাছে এসেছেন। পুজোর কদিন বাড়িতে সবাই মিলে গল্প‌গুজব, প্রভূত পেটপুজো হয়েছে। পুজো প‍্যান্ডেলে‌ও গেছি। পুজোর পর আশপাশে ঘুরতে গেছি। লুধিয়ানা থেকে গাড়িতে ওনাদের নিয়ে গেছি কসৌলি, মনসা দেবী, ভাকরা বাঁধ, ধরমশালা, কাঙড়া, জ্বালামূখী, রেণুকাজী, মুসৌরী, ডাকপা‌থার, সিমলা হয়ে নারকান্দা। দশেরার সকালে নারকান্দা থেকে ফেরার সময় দেখি দোকানপাট সব বন্ধ। পথপার্শ্বে ভান্ডারা লেগেছে। সমাদরে ডাকলেন তাঁরা প্রসাদ নিতে। লুচি, সবজি, বুঁদির প্রসাদ দিয়ে জমি‌য়ে প্রাতরাশ হোলো।

    জামনগর ও লুধিয়ানা‌য় অনেক প্রবাসী বাঙ্গালী ছিল। ওখানে পুজোর পরিবেশ ছিল ঘরোয়া, যৌথপরিবারে বিয়েবাড়ির মতো। রোজ যেতাম। দিনে নিখাদ আড্ডা, নানা মজার গেমস্ এর পর পুজোর ভোগ প্রসাদের সাথে দুপুরের ভোজন। সন্ধ্যায় কালচারাল প্রোগ্রামের শেষে‌ও হোতো এলাহী সমষ্টি‌ভোজন। সে কদিন বৌমণির খুব মজা - প্রাতরাশ ছাড়া বাড়িতে রাঁধার কোনো বালাই নেই।

    পুজো পরিসরে মধ‍্যরাত পার করে‌ও কজনের সাথে চলতো বহুল হ‍্যাহ‍্যাহিহি সহযোগে এন্তার আন‌ওয়ান্ডিং আড্ডা। কারুর বাড়ি ফেরার ইচ্ছা‌ই নেই। জামনগর নিরাপদ জায়গা। উৎসবের মরশুমে গভীর রাতে‌ও অল্পবয়সী মেয়েরা পুরুষসঙ্গী ছাড়াই নির্ভাবনায় রাস্তায়, পার্কে, বিশাল লাখোটা লেকের ধারে ঘুরে বেড়াতো। দু দফায় ওখানে এগারো বছর বসবাসকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি। রাত দুটোয় হয়তো আমি প‍্যান্ডেলে বসে ধুয়ো তুলেছি - চলো আইসক্রিম খাওয়া যাক। দু তিনটে পরিবার মিলে হৈ হৈ করে গাড়ি নিয়ে চলে গেছি লাখোটা লেকের পাড়ে। গুজরাতে তখন নবরাত্রির মেজাজ। চতুর্দিকে আলো ঝলমল। অনেক লোকজন ঘোরাঘুরি করছে। জায়ান্ট হু‌‌ইল চলছে অতো রাতেও। মেলার মতো পরিবেশ। লুধিয়ানা ও জামনগরে থাকাকালীন পুজোর সময় উৎসবমূখর পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে দুরে অচেনা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার তাড়না কাজ ক‍রেনি। সেই পরিমিত ভীড়ে অনায়াসেই সামিল হতে পারতাম। সামিল হয়ে ভালো‌ও লাগতো।

    ২০১২তে তে জামনগর ছেড়ে চলে এলাম নভী মুম্বাইয়ের খারঘর। ওখানে‌ও বাঙ্গালী এ্যাসোশিয়েন ছিল। পুজোয় গেছি। তিন বছর পর চলে গেলাম হুবলী। ওখানে এক বছর থেকে মনিপালে গিয়ে কাটলো দীর্ঘ ছয়টি বছর। খারঘর ছাড়ার পর দুগ্গাপুজোয় কোনো উৎসবের আমেজ আর টের পাইনি। টের পাওয়ার কোনো তাগিদ‌ও অনুভব করিনি। শারদ উৎসবের কটা দিন কেটে গেছে আর পাঁচটা দিনের মতো‌ই। ২০২২ এর জুলাই থেকে আছি ব‍্যাঙ্গালোরে। এখানে অনেক বাঙ্গালী আছে। অনেক‌গুলো দুর্গাপূজা‌‌ও হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার, অচেনা বাঙ্গালী‌দের সাথে আলাপ করার কোনো উৎসাহ‌ অনুভব করিনি। আসলে আমাদের তিন জনের স্বভাবেই হয়তো আছে এসব ব‍্যাপারে উৎসাহে‌র অভাব।

    ২০২২এ পুজোর সময় হাওড়া থেকে শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে এসেছি ব‍্যাঙ্গালোরে আমাদের বাড়ি। কদিন ছেলের শরীর খারাপ ও বৃষ্টি‌বাদলের জন‍্য কোথাও যাওয়া হয়নি। বাড়িতে বসে‌ই টিভি দেখা, আড্ডা, নানা খাওয়াদাওয়া হচ্ছে। বৃহত্তর কলকাতায় পুজোর হৈচৈ‌য়ের খবর টিভি‌তে আসছে। কলকাতা‌য় বেহালার কাছে যে বড় আবাসনে আমাদের ফ্ল‍্যাট তালাবন্ধ পড়ে আছে, সেখানে পুজোর সময় আনন্দ‌ময় মাতামাতি‌র খবর WA গ্ৰুপ‌বাহিত হয়ে আসছে - ছবি, ভিডিও। তবু মনে বিশেষ অনুরণন‌ ওঠে না।

    ….৩…..

    সেবার দুর্গাষষ্ঠীর দিনটা বেশ কাটলো আমার। বিনা পয়সায় ভার্চুয়ালি করে এলাম দক্ষিণ আমেরিকার Transoceanica হাইওয়ে ধরে ৬৩০০ কিমি‌র - ছদিনের - বিশ্বের দীর্ঘ‌তম বাসযাত্রা। তা শুরু হয়েছিল পূবে অতলান্তিক উপকূলে ব্রাজিলের রাজধানী রি‌ও ডি জেনেরিও থেকে। দক্ষিণ আমেরিকার পেট চিরে - আমাজন বর্ষা‌বন পেরিয়ে - বিশ্বের দীর্ঘ‌তম (৭৩০০ কিমি) আন্দিজ পর্বতমালার ১৫'৫০০ ফুট উচ্চতা‌র একটি হাই-পাস টপকে সেই এপিক বাসযাত্রা শেষ হোলো পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে পেরুর রাজধানী লিমায়। সেই অনবদ‍্য অভিজ্ঞতা‌র অভিঘাত বর্ণনা‌র আগে প্রাককথন হিসেবে হ‍্যাজটা একটু বেশী‌ই হয়ে গেল। বুড়ো বয়সে বাজে বকা রোগ আরকি।

    শোয়ার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে, হেডফোন লাগিয়ে নিমগ্ন হয়ে ইউটিউবে দেখছি‌লাম জার্মান চ‍্যানেল DW কৃত পাঁচ পর্বের একটি সুদীর্ঘ ডকুমেন্টারি। চ‍্যানেলটি আমার সবিশেষ প্রিয়। ওরা সুঠাম ডকু‌গুলি বানায় বেশ খেটে‌। সাড়ে তিন ঘণ্টার ডকুটির ৪২ মিনিটের প্রথম পর্বটি দেখেছি‌লাম সকালে। পৌনে তিন ঘন্টার বাকি চারটি পর্ব এক ঠায়ে দেখতে শুরু করেছি‌লাম সন্ধ্যা ছটায় - শেষ হোলো রাত দশটায়। YT প্রিমিয়াম প‍্যাকেজ নিয়েছি বলে মাঝে বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা নেই। তবু সময় বেশী লাগলো - কারণ বেশ কয়েক জায়গায় রি‌ওয়াইন্ড করে দেখেছি, মাঝে মাঝে পজ্ করে নেটে সার্চ করে কিছু প্রেক্ষাপট জানতে চেয়ে‌ছি। তাই আমার পড়া, দেখার গতি বেশ শ্লথ। ছে‌লে তখন নিজের ঘরে পিসিতে গেম খেলছিল। বৌমণি, শ্বশুর, শাশুড়ি বসার ঘ‍রে টিভি দেখছি‌ল, গল্প করছি‌ল। আর আমি ভার্চুয়ালি ঘুরে বেড়াচ্ছি‌লাম দক্ষিণ আমেরিকা‌য়।

    ২০১১ সালে দক্ষিণ আমেরিকা‌য় চালু হয়েছিল ৬৩০০ কিমি‌র Transoceanica Intercontinental হাইওয়ে। পেরুর Ormeno বাস কোম্পানী লং রুটে বাস চালায়। ২৫ বছরের চেষ্টায় পেরুর Ormeno সংস্থা ব্রাজিলের ব‍্যুরোক্র‍্যাসির বাঁধন পেরিয়ে World's Longest Continuous Bus Service (গিনেস রেকর্ড মতে) চালু করলো। ২০১৬তে একটি মার্সিডিজ লাক্সারি বাসে সেই মেডেন ভয়েজের ওপর তৈরী হয়েছিল ডকুটি। DW টিম‌‌ও সেই যাত্রা‌য় ছিল। নেটে ডকুটি পাবলিশ হয়েছিল ০৩.০২.১৭ আমি দেখলাম ০১.১০.২২ - প্রকাশের সাড়ে পাঁচ বছর পরে। রিও থেকে লিমা‌র নির্ধারিত যাত্রা‌সময় ছিল ১০০ ঘন্টা - টিকিটের মূল‍্য - ১৮৫ ইউরো - তখন ইউরো‌র বিনিময় মূল‍্য ৭৫ টাকার হিসেবে ১৪ হাজার টাকা। উড়োজাহাজে ঐ পথ পাড়ি দিতে লাগতো মোটে সাত ঘন্টা।

    ডকুটি‌ দেখা‌র অভিজ্ঞতা অনন্য - কারণ তা কেবল সেই বাসযাত্রা‌র ওপর নয়। ঐ পথের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় - কৃষি - পশুপালন - জনজীবন - জীবিকা - পরিবেশ - বন‍্যপ্রাণ - ইতিহাস - সভ‍্যতার কুৎসিত আগ্ৰাসন - ইত‍্যাদি ধরার চেষ্টা হয়েছে। কিছু অংশ স্পর্শকাতর মানবিক‌তার দলিল - কিছু অংশ মন খারাপ করা পীড়াদায়ক - যেমন দেখানো হোলো কীভাবে এই হাইওয়ের প্রভাবে এবং মানুষের সর্বগ্ৰাসী লোভে প্রায় ষোলোটি জনজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে - বে‌আইনি গোল্ড মাইনিং‌য়ের ফলে একদা সমৃদ্ধ অরণ্য‌ অঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে - পারদ দূষণে জলসম্পদ হয়ে গেছে বিষাক্ত - ফলে বহু মানুষ অজান্তেই হয়েছে আক্রান্ত। মানুষের চূড়ান্ত অবিমৃষ‍্যকারিতায় এই বিনাশ হয়ে চলেছে অপ্রতিহত গতিতে।

    সেই প্রথম বাসযাত্রা‌য় ছিল চারজন চালক। পরে থাকবে তিনজন - ৪ ঘন্টার শিফটে তারা পালা করে চালাবে। পাহাড়ি পথে কখনো গতি ৩৫এ নেমে এলেও সোজা, মসৃণ হাইওয়েতে জব্বর মার্সিডিজ বাস ছুটেছে ১০৫ কিমি গতিতে। মূখ‍্য চালক ৬১ বছর বয়সী পেরুবাসী ড‍্যানিয়েল ম‍্যানসিলা। বড় অমায়িক মানুষ সে। আমার তো তাকে লেগেছে ঐ ডকুর প্রাণস্বরূপ। অভিজ্ঞ চালক ড‍্যানিয়েল ২০১৬ তক্ বিগত ৩৪ বছরে গড়ে মাসে বিশ হাজার কিমি হিসেবে আশি লক্ষ কিমি বাস চালিয়ে‌ ফেলেছেন - মানে পৃথিবী থেকে চাঁদে যাওয়ার দূরত্ব কভার করেছেন বিশ বারের‌ও বেশী!

    সেবার এক জায়গায় বিক্ষোভ‌করীদের দীর্ঘ পথ অবরোধ, জানলার ভাঙা কাঁচ সারানো, এক শহরে দীর্ঘ শোভাযাত্রা - এহেন নানা কারণে ১০০ ঘন্টার যাত্রা শেষ হোলো ১৪৪ ঘন্টায়। এমন দীর্ঘ যাত্রায় বাস ড্রাইভিং - আন্দিজের পাহাড়ি পথে ১৫,৫০০ ফুটে ওঠা - বেশ পরিশ্রম সাপেক্ষ ব‍্যাপার। ড‍্যানিয়েলের শরীর, মন এবার বিশ্রাম চায়। ভাবে এই যাত্রা‌র পর অবসর নেবে। তবে Ormeno'র সাথে এতোদিনের রিস্তায় ড‍্যানিয়েল বোঝেন, কোম্পানি চাইলে, সে অনুরোধ তিনি ফেলতে পারবেন না, আরো কিছুদিন বাস চালাতে হবে তাঁকে।

    প্রথম যাত্রা‌য় রিও থেকে Ormeno'র এক আধিকারিক অস্কার ভ‍্যাস্কুয়েজ-সল্ফ‌ বাসে গেছি‌লেন। মূলতঃ অস্কারের উদ্যোগে‌ই চালু হয় এই রিও অবধি বাসরুট। অস্কার বলেন - এই প্রোজেক্ট ছিল তঁর স্বপ্ন। কেউ যদি তার স্বপ্নের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন প্রাণ - তা সফল হ‌ওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অস্কারের স্বপ্ন সফল করতে Ormeno কোম্পানি‌ও বহুদিন ধরে তাঁকে প্রভূত উৎসাহ দিয়ে গেছে। সেই প্রথম যাত্রা‌র শুরুতে রিও থেকে কোনো যাত্রী ছিল না। প্রথম যাত্রী উঠলো ৬০০ কিমি পরে সাও পা‌ওলো থেকে। গোটা যাত্রা‌য় বাস প্রায় ফাঁকাই গেল।

    বাসে ছিলেন এক রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার। তিনি আবার গীটার বাজিয়ে গান গান। পেরুর লিমায় পৌঁছে আরো দশ ঘন্টার বাসপথে এক শহরে তার নিবাস। আট বছর আগে পরিবার ছেড়ে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে তিনি এসেছি‌ল রোজগার করতে। তখন তার পুত্র ছিল আট বছরের বালক। এবার সে লিমা গিয়ে দেখবে সে রূপান্তরিত হয়েছে ষোলো বছরের এক হৃষ্টপুষ্ট প্রাকতরুণে। আট বছর পরে পিতা পুত্রের সেই আবেগমথিত আলিঙ্গনের দৃশ‍্য এ ডকুর অনেক মানবিক দলিলের মধ‍্যে আমার অন‍্যতম লেগেছে। তবে আটদিন পরিবারের সাথে কাটিয়ে আবার তাদের ফেলে তিনি চলে যাবেন ঐ বাসে করেই ৫৭০০ কিমি দুরে সাও পাওলো - ওখানে রোজগার করে অর্থ পাঠাবেন লিমায় - চলবে তার পরিবার। আবার কতদিন বাদে আসবেন লিমায় ঠিক নেই।

    বাসে ছিল দুটি সুদর্শন জার্মান তরুণ। কিছুদিন কাজ করে পয়সা জমি‌য়ে তারা দুই বন্ধু মিলে দেশ দেখতে বেরিয়ে‌ছে। ট‍্যাঁকের জোর কম - তাই চলেছে বাসে। ছিল তিন বোন। সবার বড় যে সে এক বছর তেইশের তরুণী‌। বেশ দেখতে তাকে। সুন্দর মুখের কদর সর্বত্র। তাই জার্মান ক‍্যামেরা‌ম‍্যান‌ও তাকে নানা এ্যাঙ্গেল থেকে বেশ কয়েকবার ধরলো। তরুণী বিনদাস। তবে পেরুর পুষ্টিকর জাতীয় খাদ‍্য সেভিসে (Ceviche) খাওয়া‌র ফলে‌ই কিনা কে জানে - তার চেহারা অত‍্যন্ত বলিষ্ঠ। তার প্রেমিক দুবলা-পাতলা হলে এ‌ই ভীম ভবানী সুন্দরী তাকে প্রেমের আবেগে কষে জাপটে ধরলে সে বেচারা‌র নাভিশ্বাস উঠতে পারে।

    পথে পড়লো স্প‍্যানিশ ভাষায় Parque Nacional del Manú অর্থাৎ Manú National Park - আয়তনে ১৭ হাজার বর্গ কিমি‌। UNESCO Natural Heritage'র তকমাপ্রাপ্ত মানু অরণ‍্যে ছটা সিমলিপাল ধরে যাবে। ৬৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে বিস্তৃত আমাজন বর্ষা‌বন পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে খ‍্যাত! মানু-রা তার‌ই ছত্র‌ছায়ায় থাকা তুতো ভাইবোন। আন্দিজের হাই পাস পেরিয়ে বাস থামলো সমূদ্রতল থেকে এগারো হাজার ফুট উচ্চতা‌য় কুসকো (Cusco) - অতীতে ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী। কুসকো নামটা স্মৃতি‌তে বড় নাড়া দিলো।

    …৪….

    করোনাকালে ২০২১এ কিছুদিন কলকাতা‌র বাসায় ঘরবন্দি হয়ে ছিলাম। তখন নিভৃত বিশ্রামে কিছু ব‌ই পড়েছি। তার মধ‍্যে অন‍্যতম বুদ্ধদেব বসুর 'গোলাপ কেন কালো' এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রর 'সূর্য কাঁদলে সোনা'। দুটো‌ই গড়িয়াহাটের ফুটপাতের পুরোনো ব‌ইয়ের ঠেক থেকে কুড়ি, পঁচিশ টাকা দরে কেনা। পাঠাভিজ্ঞতার নিরিখে 'গোকেকা' ও 'সূকাঁসো' লেগেছিল রত্নসম। প্রেমেনদার 'সূকাঁসো' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তখন গুগলদা জন্মায় নি। রেফারেন্স হিসেবে ভরসা জাতীয় গ্ৰন্থাগার। ব‌ই‌টা পড়ে উপলব্ধি করেছি 'সূকাঁসো' লিখতে ওনাকে কত পড়তে হয়েছে! অবাক হয়েছি কীভাবে ঘনাদার মতো একটি কল্পিত চ‍রি‌ত্রর পূর্বপুরুষের উদ্ভবের কাহিনী ঐতিহাসিক বাস্তবতার সাথে অসাধারন, সুস্বাদু দক্ষতায় মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি। 'সুকাঁসো' পড়ে মনে মনে আর একবার প্রণাম করেছি প্রেমেনদা‌কে। এযাবৎ অসংখ‍্য না হলেও কিছু ব‌ই পড়েছি। বয়সের সাথে ব‌ই পড়ার নেশা পেকেছে। আমি স্মৃতি‌ধর ন‌ই। তাই অনেক পাঠাভিজ্ঞতা বিশদে মনে নেই। তবে কিছু ব‌ই পড়ার গভীর অভিঘাতটুকু মনে রয়ে গেছে। 'সূকাঁসো' তেমন একটি ব‌ই।

    সূদুর স্পেন থেকে অতলান্তিক মহাসাগর পেরিয়ে স্প‍্যানিশ অভিযাত্রী ফ্র‍্যানসিস্‌কো পিজারোর পেরু অভিযান এক রোমহর্ষক এ্যাডভেঞ্চার। কল্পকাহিনী‌কে হার মানায়। প্রথম দু বারের ব‍্যর্থ‌তার পর তৃতীয়বারের চেষ্টায় মাত্র শদেড়েক ঘোড়স‌ওয়ার সৈন‍্য ও আগ্নেয়াস্ত্র‌র বলে বলীয়ান হয়ে পিজারো হাজার পঞ্চাশেক ইনকা যোদ্ধা‌বেষ্টিত ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপাকে কৌশলে কাজামারকার যুদ্ধে বন্দী করেন। সেটা ১৫৩২ সাল। মুক্তি‌পণ হিসেবে আতাহুয়ালপা দিলেন বাস্তবিক এক ঘর সোনা। পিজারোর মনে হোলো পেরু সম্পর্কে যে গুজব তিনি এতদিন শুনে এসেছেন - ওখানে সোনার প্রাচূর্য অবিশ্বাস্য - তা তাহলে সত‍্য!

    বিপুল মুক্তি‌পণ দেওয়া সত্ত্বেও পিজারো ছলনা করে পরের বছর ১৫৩৩ সালে হত‍্যা করলেন - শেষ ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপাকে। সম্রাটের মৃত্যুতে শোকাহত, নেতৃত্বহীন, বিহ্বল ইনকা সৈন‍্যদলের অনেকে কচুকাটা হোলো বিদ্যুৎ‌গতির ঘোড়স‌ওয়ার স্প‍্যানিশ যোদ্ধাদের উন্নত স্প‍্যানিশ তরোয়ালের ঘায়ে। ঘোড়া প্রাণী‌টি‌ই এযাবৎ ছিল তাদের অদেখা। বাকি‌রা ভয়ে আত্মসমর্পণ করলো। সে বছরই পিজারো দখল করলেন ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী কুসকো। শেষ হয়ে গেল হাজার বছরের আন্দিজ সভ‍্যতার শেষ অধ‍্যায় - একশো বছরের ইনকা সাম্রাজ্য। পিজারো‌র সেই তৃতীয় পেরু অভিযান অভিযাত্রী‌ক দুঃসাহসিক‌তার এক চরম নিদর্শন। ১৫৩৫ সালে পিজারো স্থাপনা করলেন লিমা - যা বর্তমানে পেরুর রাজধানী। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেই লিমাতেই পিজারো ১৫৪১ সালে রাজনৈতিক হত‍্যা‌র শিকার হয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করলেন।

    পঞ্চদশ শতকে নতুন দেশ আবিস্কারের নেশা ধরেছিল ইওরোপের কিছু দেশে - মূলতঃ স্পেন ও পর্তুগাল। লেজুড় নেদারল্যান্ডস, নর‌ওয়ে। তার মূলে ছিল মূলতঃ চারটি কারণ। অজানা অসীম মহাসাগরে পাড়ি দিতে সক্ষম উন্নতমানের নৌযান বানানো‌র সক্ষমতা, অকূল পাথারে নেভিগেশনে দক্ষতা অর্জন, দুর্জয় সাহস আর সীমাহীন লোভ। তখন স্পেন ও পর্তুগালের সম্রাট নিজেদের মধ‍্যে আলোচনা করে ঠিক করলেন, এসো বাপু, আমরা দুজনায় নতুন নতুন সমূদ্র অভিযান করে কুমারী পৃথিবীর যতটা সম্ভব দখল করে নি‌ই। শুরু হোলো Expeditions to explore New World. এভাবেই মেক্সিকো, পানামা, পেরু, ইকোয়োডর, বলিভিয়ায় স্থাপনা হলো স্প‍্যানিশ কলোনি। ঐসব দেশে আজ‌ও মূখ‍্য ভাষা স্প‍্যানিশ - বহু জায়গা‌র নাম স্প‍্যানিশ। ব্রাজিলে ছিল পর্তুগিজ আধিপত্য। ব্রাজিলের সরকারি ভাষা আজ‌ও পর্তুগিজ।

    সেই লুটমারীর দৌড়ে একটু দেরী‌তে সামিল হোলো ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি। তবে সাম্রাজ্যবাদের দৌড় বা ইম্পিরিয়াল কলোনিয়াল লিগেসিতে ক্রমে ব্রিটেন সবাই‌কে পিছনে ফেলে নিলো মূখ‍্য আসন। দখল নিল আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা - স্প‍্যানিশ‌দের ভাগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইত‍্যাদি প্রভৃতি। ভূমিপুত্র আদিবাসী রেড ইন্ডিয়া‌নদের খেদিয়ে আমেরিকায় বসতি স্থাপনা করতে এসেছি‌ল ইওরোপিয়ান সেটলার‌দের দল - স্পেন, পর্তুগাল, হল‍্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স এবং অবশ্যই ব্রিটেন থেকে। ভাবলে অবাক লাগে কীভাবে ব্রিটেনের মতো একটা ক্ষুদ্র দ্বীপ ক্রমশ চড়ে বসলো নানা ইওরোপিয়ান দেশের মিলিত কলোনিয়ালিস্টদের মাথায়। আমেরিকা চলে গেল ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের মুকুটের অধীনে।

    বাসযাত্রার ভিডিও দেখার কদিন আগে আর একটি DW ডকুমেন্টারি দেখেছি‌লাম - A Train ride thru American History - New Orleans to New York. সেবার‌ও ৪২ মিনিটের ভিডিওটি দেখতে বেশ সময় লেগেছিল। কারণ এক‌ই। দেখতে দেখতে নেটে পার্শ্বচারিতার স্বভাব। বুড়ি ছুঁয়ে‌ জেনেছি‌লাম কীভাবে ৪.৭.১৭৭৬ আমেরিকা ব্রিটিশ মুকুটের অধীনতা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে‌ছিল স্বাধীনতা। ৮৪ বছর পর - ১৮৬১-৬৫তে দেখা গেল চার বছরের ক্ষণস্থায়ী এক দেশজ কলঙ্কিত অধ‍্যায় - CSA বা Confederate States of America যা শেষ হোলো আমেরিকা‌ন সিভিল ওয়ারে - আব্রাহাম লিঙ্কনের রাজনৈতিক হত‍্যায়। ১৮৬১তে দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি হিসেব শপথ নিয়ে লিঙ্কন চেয়েছিলেন দাস ব‍্যবসা‌র অবসান ঘটাতে। কিন্তু CSA তে অংশগ্রহণ‌কারী প্রদেশগুলি চেয়েছিল দাসব‍্যবসার আইনী অধিকার। ফলে লাগলো স্বার্থে‌র সংঘাত - বাঁধলো রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ - চার বছরে মারা গেল সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ। তবু লিঙ্কন শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছেন গৃহযুদ্ধ - অবসান ঘটেছে দাস ব‍্যবসা‌র।

    …৫….

    জীবন সায়াহ্নে‌র আলস‍্যময় অবসরে শখের জানার নেশায় ধরেছে। এসব জানা বাকি জীবনে কোনো প্রয়োজনে আসবে না। শুধু জানা‌র আনন্দে‌ই জানা। পার্শচারিতা‌র স্বভাবে‌ই চলে গেছি‌লাম দক্ষিণ আমেরিকা‌র Transoceanica হাইওয়ে ছেড়ে বহুদুরে - উত্তর আমেরিকায় অতীতের গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে। ফিরে আসি বর্তমান পথে।

    আন্দিজ পাহাড়ের কোলে সুউচ্চ কুসকোর আশি কিমি দুরত্বে অবস্থিত ইনকা শক্তি‌পীঠ পবিত্র মাচু পিচু। ১৪৫০ সালে তৈরী হয়ে ইনকা সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫৭২ সালে পরিত্যক্ত হয় মাচু পিচু। অতঃপর সুদীর্ঘ ৩৩৯ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে গেল মাচু পিচু। আমেরিকা‌ন ঐতিহাসিক, অভিযাত্রী হিরাম বিংহ‍্যাম ১৯১১ সালে খুঁজে পেলেন মাচু পিচু। ২০১৭ সালের হিসেবে মাচু পিচুর দর্শনী ৩৪ ইউরো বা ২৫০০ টাকা। তবু দর্শকদের ঢল নামে সেখানে। দৈনিক ৩ হাজার - বছরে ১০ লক্ষ। টিকিট বিক্রি থেকে আয় বছরে ২৬ লক্ষ ইউরো বা ভারতীয় মূদ্রা‌য় ২০০ কোটি টাকা।

    আধিকারিক‌দের আশংকা ঐ বিপুল পরিমাণ দর্শকদের পদভারে‌ই হয়তো নড়বড়ে হয়ে যাবে মাচু পিচুর ড্রা‌ই ম‍্যাসোনরি টেকনিকে বানানো স্থাপত্য‌গুলি। তাও না হয় মেনে নেওয়া গেল। চেষ্টা করে যেতে হবে লাগাতর রক্ষণাবেক্ষণের। কিন্তু কিছু বিকৃতমনস্ক দর্শক - মূলতঃ মহিলা - ওখানে উলঙ্গ হয়ে ছবি তুলে তাদের দেহসৌষ্ঠব আন্তর্জালে ছড়িয়ে দেন। এমন বিকৃত আচরণে আহত হয় মিস্টি‌‌ক পবিত্রভূমি মাচু পিচু‌কে জড়িয়ে থাকা স্থানীয় মানুষের ভাবাবেগ। মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী।

    আন্দিজের কুসকো থেকে ক্রমশ লিমা‌র পথে বাস নেমে আসে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে। সুদীর্ঘ ১৫০০ কিমি ব‍্যাপী উপকূলীয় মরু অঞ্চল ধরে বাস চলতে থাকে। লিমা থেকে ৪০০ কিমি আগে মরু জমি‌তে ছড়িয়ে আছে মানবেতিহাসের আর এক বিষ্ময় - বিরাট আকারের কিছু Geoglyphs - বা ভূচিত্র। প্রত্নতাত্বিক‌দের অনুমান, খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচশো থেকে পাঁচশো খ্রীষ্টাব্দ - হাজার বছর ধরে বালিতে নালি কেটে বানানো হয়েছিল ঐ সব বিশাল ভূচিত্র। কিন্তু কেন ওগুলো বানানো হয়েছিল তার কোনো সর্বজন‌গ্ৰাহ‍্য যৌক্তিক ব‍্যাখ‍্যা আজ‌ও পাওয়া যায়নি। তার মধ‍্যে বিখ্যাত - নাজাকা লাইনস - UNESCO World Heritage Site.

    নাজাকা লাইনসের কথা প্রথম জেনেছি‌লাম আঠারো বছর বয়সে - এরিক ফন দানিকেনের ব‌ইতে। বাষট্টিতে ভার্চুয়ালি বাসে করে গেলাম তার পাশ দিয়ে। তাই নাই বা যাওয়া হোলো দূর্গাপূজা‌র প‍্যান্ডেলে - তাও বেশ কাটলো সেবারে‌র দুর্গাষষ্ঠীর দিনটা - সুদুর দক্ষিণ আমেরিকা‌য় এক বিচিত্র বাস সফরে - ক্রমশ ভালো লেগে যাওয়া কিছু অচেনা মানুষের সাহচর্যে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৮৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রাণী | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৫524059
  • কিছু মনে করবেন না। একটি তথ্য ভুল মনে হচ্ছে। সূর্য কাঁদলে সোনা ১৯৬৯ এ প্রকাশিত।
  • Samaresh Mukherjee | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২২524063
  • # ইন্দ্রানী
    না, এতে মনে করার কিছু নেই। মনযোগী পাঠিকা হিসেবে আপনি একটা তথ‍্যগত ভুল দেখিয়েছেন। আমি সেটা সংশোধন করে দিচ্ছি। হয়তো আমি যে ব‌ই‌টা  কিনেছি‌লাম সেটা ১৯৮২ মূদ্রণ হবে। ধন্যবাদ।
    তবে এর ফলে (প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯) আমার মূল বক্তব্য‌টা আরো জোরালো হয় - অর্থাৎ গুগলদার জন্মের, আন্তর্জাল আসার আরো অনেক আগে ঐ ব‌ই লেখা‌র জন‍্য প্রয়োজনীয় তথ‍্য পেতে ওনাকে কত খাটতে হয়েছে! 
    প্রসঙ্গত বলি, আমার প্রিয় লেখক নারায়ণ সান‍্যাল মহাশয়কেও  "চীন ভারত লং মার্চ" - লিখতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে‌। কারণ ঐ ব‌ই লেখার জন‍্য কিছু মূল‍্যবান রেফারেন্স ব‌ই উনি জাতীয় গ্ৰন্থাগারেও খুঁজে পাননি, পেয়েছেন কারুর ব‍্যক্তিগত সংগ্ৰহ থেকে। অর্থাৎ ইন্টারনেট, ডিজিটাল আর্কাইভ এসব আসার আগে গবেষণা‌ধর্মী লেখার জন‍্য লেখকদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। 
     
  • Ranjan Roy | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩০524099
  • আহা, সূর্য কাঁদলে সোনা!
    ১৯৭০ সালে ভিলাইয়ের বঙ্গীয় কৃষ্টি পরিষদের লাইব্রেরিতে কেনার পর আমি প্রথম পাঠক;  লাইব্রেরিয়ানকে পটাতে হয়েছিল। বলেছিলাম হাতে লেখা বইয়ের রেজিস্টার কপি করে দেব। বইটা এখন ডিসপ্লে করবেন না, বড়রা আগে তুলে নেবে।
    সেই বয়সে খুব ভালো লেগেছিল আতাহুয়াল্পা নামটা আর তলোয়ারবাজির বর্ণনা, তার কিছু স্ট্রোকের স্প্যানিশ নামগুলো। 
  • Samaresh Mukherjee | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:২৪524102
  • রঞ্জনবাবু,
    আপনার "হারানো কলকাতার গল্প" পড়েই আপনাকে আমি মনে মনে খুব পছন্দ করে ফেলেছি। আপনি আমার থেকে ৯ বছর এগিয়ে কিন্তু "সূ-কা-সো" পড়ে ফেলেছে‌ন ৫১ বছর আগে। ১৯ বছর বয়সে কৌতূহল, আগ্ৰহ থাকে তুঙ্গে। তাই পড়ার অভিঘাত‌ও হয় তীব্র। আমি সুকাসো পড়েছি ৬১ বছর বয়সে, তবু ঘটনাপ্রবাহ এবং তার সূচারু বুননে অভিভূত হয়েছি। এসব‌ই হয়তো কালজয়ী লেখা‌র বৈশিষ্ট্য।

    আমি‌ও ঐ বয়সে অজিত দত্তর অনবদ‍্য অনুবাদে দানিকেনের পাঁচটি ব‌ই খুব আগ্ৰহ নিয়ে পড়েছি‌লাম। মায়া, আজটেক, ইনকা কালের কিছু বিচিত্র সব প্রাচীন স্থানের নাম - সাকসা‌ইহুয়ামান, টিয়াহুআনাকো …আমাকেও বেশ নাড়া দিয়েছিল - বিশদ কিছু না জেনেও। পরে জানা গেছে দানিকেন একটি বিতর্কিত চরিত্র। তিনি নানা কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন তুলে এমন একটি হাইপোথিসিস খাড়া করতে চেয়েছিলেন যা প্রমাণিত না হলে‌ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত সেই ব‌ই বিক্রির রয়‍্যালটিতে‌ই তাঁর ইহকাল দিব‍্যি কেটে যাবে। সে অন‍্য প্রসঙ্গ। 
    ভালো থাকবেন।
  • Ranjan Roy | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪০524153
  • শীতকালে  কোলকাতায় এলে আড্ডা হতে পারে।
  • Samaresh Mukherjee | ০২ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৩524185
  • বিষয়ের প্রেক্ষিতে সুচিন্তিত, মননশীল লেখা, কখনো প্রকাশভঙ্গি‌তে উপভোগ্য রসবোধ, অন‍্যের লেখা‌র ওপর মতামত জ্ঞাপনে বুদ্ধি‌দীপ্ত, শালীন, সুরুচির ছাপ বা নিজের লেখা‌র ওপর মন্তব্যের ওপর প্রতিমন্তব‍্যে সহিষ্ণু, মার্জিত প্রতিক্রিয়া - এহেন সব প্রত‍্যাশিত ভদ্রজনোচিত প্রতিক্রিয়াগুলি পাবলিক ফোরামে এখন‌ও দেখা যায়। তবে তুলনায় বেশ বাড়ছে অভদ্রতা, অসহিষ্ণুতা, আক্রোশ, কুরুচিকর প্রকাশভঙ্গি‌র উদযাপন। 

    এসব দেখলে মন ভারাক্রান্ত হয়। 

    আপনার সাথে আলাপ করার ইচ্ছা আছে। তবে ব‌ইমেলার প্রাঙ্গণে বা কফিহাউসের মতো হট্টগোলে আমি স্বচ্ছন্দ ন‌ই। দুই থেকে চার, পাঁচের মুষ্টিমেয় পরিধি‌তে (গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক আলোচনা‌ নয়) খোলামেলা মত বিনিময়, গল্পগাছা ভালো লাগে। আড়াই বছর পরে নভেম্বরে কলকাতা যাওয়ার কথা হচ্ছে। হাটের মধ‍্যে মোবাইল নম্বর দেওয়ার দরকার নেই। যদি মেল আই‌ডি শেয়ার করেন, যোগাযোগ করবো।
     
    ভালো থাকবেন।
  • Ranjan Roy | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১১524228
  • ranjanr52@gmail.com 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন