বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই কলকাতা ও তার আশেপাশের শহর গুলি বাইকে ছেয়ে গেছে। এঁরা মূলত জোমাটো, সুইগি, ব্লিঙ্কিট এর মত food বা গ্রসারি ডেলিভারি করেন বা রাপিডো, উবের, ওলা, ইনড্রাইভ এর মত বাইক ট্যাক্সি চালান। ১৯৯০ এর পর বিশ্বায়ন এর প্রভাবে এই সব পেশার সৃষ্টি হয়েছে। পুরানো কল- কারখানা গুলোর স্মৃতি রয়ে গেছে শুধুমাত্র জায়গা গুলির নামের মধ্যে বা বাস-অটোর স্টপেজের মধ্যে ---- কাঁচকল, সুলেখা বা প্রবর্তক জুটমিল ইত্যাদি। এখন স্মার্ট ভারত আর তার হাউজিং সোসাইটিতে থাকা স্মার্ট নাগরিক যাঁরা কিনা ৫০ গ্রাম পোস্তও অ্যাপে অর্ডার করেন বা সিগারেটের দামও অনলাইনে স্ক্যান করে মেটান। এঁদের কাছে এসব কিছুই ভিডিও গেমসের মতো। টুক করে স্মার্ট ফোন থেকে ওলা বুক করে দিলাম বা সাধারণ ডাল ভাত খেয়ে অরুচি হয়ে গেছে সুইগি তে অফার চলছে বিরিয়ানির, অর্ডার করে দিলাম আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি(ওলা) ও বিরিয়ানি (সুইগি) চলে এলো। বেশ মজা তো। কিন্ত এই মজার পেছনে এদেশের ৭৫ লক্ষ শিক্ষিত মানুষ ২৪x৭ কাজ করে চলেছেন নিজেদের জীবন হাতে নিয়ে। বাইরের সাজসজ্জা বা বাইকের ব্র্যান্ড দেখে যতোই ভালো অবস্থা মনে হোক না কেন আসলে তাঁরা এই নব্য উদারবাদী অর্থনীতির নয়া শ্রমিক শ্রেণী। কলকাতা ও তার আশে পাশের জেলাগুলিতে এরকম কাজ করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশী। অথচ এঁদের না আছে ESI, Provident fund বা Medical benefit না আছে কাজের Guarantee। আমার কাছে সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত এক সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি আহ্বানপত্র এসে পৌঁছেছে। আমি তার বয়ান নিচে দিয়ে দিচ্ছি। আশাকরি গুরুর পাঠকেরা বা তাঁদের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের কাছে এটি দ্রুত পৌঁছে যাবে।
অল বেঙ্গল অ্যাপ - বেসড বাইক অপারেটরস্ ফোরাম
সাথী,
আমরা শিক্ষিত যুবেকেরা কোনও সরকারি ও কর্পোরেট সংস্থায় স্থায়ী চাকরির সুযোগ না পেয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে বাইক নির্ভর বিভিন্ন অ্যাপ যেমন ডেলিভারি, ফুড ডেলিভারি ও বাইক ট্যাক্সি এই সমস্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। আপাত দৃষ্টিতে স্বাধীন পেশা মনে হলেও আসলে এগুলি বড় বড় অ্যাপ - বেসড দেশি - বিদেশি কোম্পানির বাঁধা মজুরের মত বা কার্যত দাসত্ব করা। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সরকার ও অ্যাপ - বেসড কোম্পানি উভয়ই আমাদের উপর খড়গহস্ত। অথচ, আমরাই রাতে বেরাতে কি খবর হোক বা জরুরি ব্যবহার্য জিনিসপত্র বা রাতে সুরক্ষিতভাবে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে যাত্রীদেরও আমরা পরিষেবা দিয়ে আসছি। তা স্বত্ত্বেও সরকার নতুন নিয়ম চালু করেছেন ১লা এপ্রিল,২০২৫ থেকে সমস্ত অ্যাপ - বেসড বাইক অপারেটরদের ব্যক্তিগত বাইকের বদলে বাণিজ্যিক রেজিস্ট্রেশন করা বাইক দিয়েই পরিষেবা দিতে হবে। ফলে আমাদের মত সাধারণ গরীব শ্রমজীবী মানুষদের উপর আর একদফা অর্থনেতিক আঘাত এসে পড়েছে। এরফলে, পারমিট ফি হিসেবে বছরে প্রায় ১ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়াও বাণিজ্যিক মোটর বাইক বিমাও করতে হবে যা বর্তমান বিমার প্রিমিয়ামের থেকে প্রায় চারগুণ বেশি। এই অতিরিক্ত খরচের দায়ভার সরকার বা কোম্পানিগুলো নিতে রাজি নয়। ফলে টা আমাদেরই ঘাড়ে এসে পড়ছে। এর সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জরিমানা ব্যাপক বৃদ্ধি। আগে যেখানে সাধারণ ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে ১০০/ টাকা জরিমানা হত, এখন সেটাই বেড়ে ৫০০/ টাকা হয়েছে। এর উপর রয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ, সিভিক ভলেন্টিয়ারদের অযৌক্তিক ভাবে জরিমানা করার প্রবণতা। সরকার এদের হাতের স্মার্ট ফোনে জরিমানা করার এক অ্যাপ পাইকারি হারে বিলি করেছে। যা বাইক চালকদের বিরুদ্ধে যখন তখন রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে কেস দেওয়া। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর বা সুবিচার পাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সরকারি ফোরাম নেই। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত রয়েছে নিত্যদিন ট্র্যাফিক পুলিশ ,সিভিক ও হোমগার্ডদের চরম দুর্ব্যবহার (তুই তোকারি, দু অক্ষর, চার অক্ষরে বাপ বাপান্ত করা)। এর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোও শুধুমাত্র গ্রাহকদের তথাকথিত দুর্ব্যবহারের অভিযোগে যখন তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই হামেশাই আইডি সাসপেন্ড করা হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় অ্যাপ-বেসড বাইক অপারেটরের প্রায় কোনও দোষই নেই, উল্টে কাস্টমার/ যাত্রী সামান্য খুচরো বা অন্য কোনো ছোটখাটো বিষয় নিয়েও কোম্পানিকে মেল করে আইডি সাসপেন্ড করে দিচ্ছেন বা করার ভয় দেখাচ্ছেন ---- এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। উল্টোদিকে, আমরাই রাতে একা মহিলাকে তাঁকে তাঁর গন্তব্যে সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দিচ্ছি। অনেক সময়ই দেখা যায় বড় হাউজিং কমপ্লেক্সগুলোতে বাইক অপারেটররা ডেলিভারি করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা জঙ্গিদের মতো তল্লাশি চালায় ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অহেতুক সময় নষ্ট করে কাস্টমারের কাছে শুধু শুধুই কথা শুনতে হয় বা ইমেল করে কোম্পানিকে রিপোর্ট করে দেয়।
এমতবস্থায় সারা বাংলার বিশেষ করে কলকাতা ও শহরতলির অ্যাপ-বেসড বাইক অপারেটরদের সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যদি আমাদের অবস্থার প্রতি এখনই নজর না দিই তাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। চরম স্বেচ্ছাচারিতার পথ গ্রহণ করবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। ফলে, আমাদের এই মুহূর্তে প্রয়োজন নিজেদের নিজেরাই সংগঠিত করা একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের মধ্যে যা হবে আমাদের দাবি-দাওয়া, সমস্যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী হাতিয়ার। যদিও তা হতে হবে অবশ্যই সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত।
উপরোক্ত বয়ানের সঙ্গে যাঁরা সহমত হবেন তাঁরা বিলম্ব না করে দ্রুত প্রথমে এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে, যেমন হোযাটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম ইত্যাদিতে যত বেশি সম্ভব সহকর্মী সাথীদের কাছে ছড়িয়ে দিন। সংগঠিত হবার জন্য সবার কাছে নিজের দৈনন্দিন তিক্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করে, আগামী দিনে সংগঠিত হওয়ার প্রস্তুতি নিন। আসুন, আমরা একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি হোযাটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়ে তুলি -- যা আগামী দিনে সংগঠনের ভ্রূণ হিসেবে কাজ করবে। আমরা হোযাটসঅ্যাপ গ্রুপে আলোচনার মাধ্যমে একটি কনভেনশনে করে সংগঠিত হবো।
অভিনন্দন সহ
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।