ছবি: রমিত
আমার কখনো মনে হয়নি ব্যাঙ্কে ডলার না জমিয়ে কিছু সোনা কিনে রাখি ভবিষ্যতের জন্য। আমার মাইনের টাকা সুইস ব্যাঙ্কে জমা পড়ত, সে টাকায় হাত দিতে পারতাম না। কিন্তু per diem বা দৈনিক হাত খরচ যা পেতাম তা-ও খরচ করার কোন সুযোগ ছিল না। সুতরাং তার বেশির ভাগটাই জমে যেত।
ইরান এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আস্তে আস্তে ফিরে আসছে। ইউনিভার্সিটি এখনো বন্ধ। ঠিক করলাম এই সুযোগে সকলে মিলে ইরান ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। দিলীপ দামলে একা থাকে। আমরা যাচ্ছি শুনে ও আমাদের সঙ্গী হল। আমি, অনু, বুবাই, গৌতম ও দিলীপ, আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য – ইরানের কয়েকটা শহর দেখা। আকাশপথে যাত্রা নয়। মাটির সঙ্গে মিতালি করে মরুভূমির পথ ধরে চলা। আমরা কোচে করে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ইরান ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য শিরাজ। আবাদান থেকে কোচ ছাড়ল সূর্য ডুবে যাওয়ার পর। যেতে যেতে অন্ধকার নেমে এলো। মরুভূমির রাস্তা দিয়ে ঘন কালো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আমাদের কোচ ছুটে চলেছে। চারিদিকে নিকষ কালোর আবরণ। হঠাৎ দূরে কখনো কখনো দেখা যায় দুচারটা টিম টিমে আলোর আভাষ; বোধ হয় কোনো বেদুইনদের তাঁবু। আর মাঝে মাঝে দেখা যায় নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ভেদ করে লেলিহান অগ্নিশিখা গগন স্পর্শ করছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চারিভিতে আলোর রোশনাই। সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। আশ্চর্য, মরুভূমিতে এমন অগ্নিযজ্ঞ কেন? আমি অবাক! পরে জেনেছিলাম মরুভূমির মধ্য দিয়ে পেট্রলিয়াম পাইপ গিয়েছে। সেই পাইপ থেকে গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়, আর সেই গ্যাস আগুন হয়ে জ্বলে। যেতে যেতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, অনু সারা রাত জেগে সেই যাত্রা উপভোগ করেছে।
শিরাজ শহরে এসে পৌঁছুলাম। পাহাড় ঘেরা এক ছোট্ট শহর; ছিমছাম, সুন্দর। শিরাজ ইউনিভার্সিটির নাম আছে। এখানে শুনেছি বেশ কয়েকজন ভারতীয় অধ্যাপক আছেন। আমরা শহরটা ঘুরে বেড়ালাম। শিরাজ সুন্দর সুন্দর বাগান বা পার্কের জন্য বিখ্যাত। আর আছে দর্শনীয় মসজিদ। মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রার্থনা স্থানের উপর আমার একটা দুর্বলতা আছে। সেটা কোন ধর্মীয় কারণে নয়; তাদের স্থাপত্য, নির্মাণ, শিল্প ও কারুকার্য আমাকে আকর্ষণ করে। একটা দেশের ও জাতির জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয় এই সব প্রতিষ্ঠানে। শিরাজের নাসির আল-মুল্ক মসজিদের আভ্যন্তরীণ কারুকার্য দেখে আমার অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ হয়েছিল। কি শান্ত পরিবেশ! কি মনোরম চোখ জুড়ানো স্থপতি!