এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - পর্ব ১৭

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪৬ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত 



    আমার কখনো মনে হয়নি ব্যাঙ্কে ডলার না জমিয়ে কিছু সোনা কিনে রাখি ভবিষ্যতের জন্য। আমার মাইনের টাকা সুইস ব্যাঙ্কে জমা পড়ত, সে টাকায় হাত দিতে পারতাম না। কিন্তু per diem বা দৈনিক হাত খরচ যা পেতাম তা-ও খরচ করার কোন সুযোগ ছিল না। সুতরাং তার বেশির ভাগটাই জমে যেত।

    ইরান এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আস্তে আস্তে ফিরে আসছে। ইউনিভার্সিটি এখনো বন্ধ। ঠিক করলাম এই সুযোগে সকলে মিলে ইরান ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। দিলীপ দামলে একা থাকে। আমরা যাচ্ছি শুনে ও আমাদের সঙ্গী হল। আমি, অনু, বুবাই, গৌতম ও দিলীপ, আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য – ইরানের কয়েকটা শহর দেখা। আকাশপথে যাত্রা নয়। মাটির সঙ্গে মিতালি করে মরুভূমির পথ ধরে চলা। আমরা কোচে করে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ইরান ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য শিরাজ। আবাদান থেকে কোচ ছাড়ল সূর্য ডুবে যাওয়ার পর। যেতে যেতে অন্ধকার নেমে এলো। মরুভূমির রাস্তা দিয়ে ঘন কালো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আমাদের কোচ ছুটে চলেছে। চারিদিকে নিকষ কালোর আবরণ। হঠাৎ দূরে কখনো কখনো দেখা যায় দুচারটা টিম টিমে আলোর আভাষ; বোধ হয় কোনো বেদুইনদের তাঁবু। আর মাঝে মাঝে দেখা যায় নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ভেদ করে লেলিহান অগ্নিশিখা গগন স্পর্শ করছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চারিভিতে আলোর রোশনাই। সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। আশ্চর্য, মরুভূমিতে এমন অগ্নিযজ্ঞ কেন? আমি অবাক! পরে জেনেছিলাম মরুভূমির মধ্য দিয়ে পেট্রলিয়াম পাইপ গিয়েছে। সেই পাইপ থেকে গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়, আর সেই গ্যাস আগুন হয়ে জ্বলে। যেতে যেতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, অনু সারা রাত জেগে সেই যাত্রা উপভোগ করেছে।

    শিরাজ শহরে এসে পৌঁছুলাম। পাহাড় ঘেরা এক ছোট্ট শহর; ছিমছাম, সুন্দর। শিরাজ ইউনিভার্সিটির নাম আছে। এখানে শুনেছি বেশ কয়েকজন ভারতীয় অধ্যাপক আছেন। আমরা শহরটা ঘুরে বেড়ালাম। শিরাজ সুন্দর সুন্দর বাগান বা পার্কের জন্য বিখ্যাত। আর আছে দর্শনীয় মসজিদ। মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রার্থনা স্থানের উপর আমার একটা দুর্বলতা আছে। সেটা কোন ধর্মীয় কারণে নয়; তাদের স্থাপত্য, নির্মাণ, শিল্প ও কারুকার্য আমাকে আকর্ষণ করে। একটা দেশের ও জাতির জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয় এই সব প্রতিষ্ঠানে। শিরাজের নাসির আল-মুল্ক মসজিদের আভ্যন্তরীণ কারুকার্য দেখে আমার অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ হয়েছিল। কি শান্ত পরিবেশ! কি মনোরম চোখ জুড়ানো স্থপতি!



    নাসির আল-মুল্ক মসজিদ, শিরাজ

    রাস্তাঘাট বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে এক দ্রষ্টব্য হল হাফেজের সমাধি।



    হাফেজের সমাধি স্মারক


    ইরানের চার বিখ্যাত কবি: ফিরদৌসী, হাফেজ, রুমী আর ওমর খৈয়াম। ফিরদৌসী, হাফেজ, রুমী আমি পড়িনি। তবে এঁদের সৃষ্টির কথা আমি পড়েছি। ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের বাংলা অনুবাদ আমি পড়েছিলাম। কান্তি চন্দ্র ঘোষের অনুবাদ আমাকে অভিভূত করেছিল। তার একটা অনবদ্য রুবাইয়াত আমার হৃদয়ে গাঁথা হয়ে আছে। হাফেজের সমাধিতে বসে আমি কান্তি ঘোষের ওমর খৈয়াম আবৃত্তি করলাম:

    সেই নিরালা পাতায় ঘেরা
    বনের ধারে শীতল ছায়,
    খাদ্য কিছু, পেয়ালা হাতে,
    ছন্দ গেঁথে দিনটা যায়।

    মৌন ভাঙ্গি মোর পাশেতে
    গুঞ্জে তব মঞ্জু সুর,
    সেই তো সখী স্বপ্ন আমার,
    সেই বনানী স্বর্গপুর।

    জানিনা হাফেজ কিছু মনে করলেন কি না। হাফেজ আমাকে ক্ষমা করুন।

    ইরানের পারসেপোলিসের কথা পড়েছিলাম। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট, পারসিপোলিস ইরানের প্রাচীন রাজধানী। শিরাজ শহরের উত্তর-পশ্চিমে মাত্র ৩০ মাইল দূরে। শিরাজে যখন এসেছি তখন পারসেপোলিস না দেখে ফিরে যাওয়ার কোন অর্থ হয় না। আমরা পারসেপোলিসের পথে রওনা হলাম। ঐতিহাসিকদের মতে এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থপতি শিল্পের নমুনা --- প্রত্নতাত্বিক ধ্বংসাবশেষ।




    পারসেপলিস স্থাপত্য ১



    পারসেপলিস স্থাপত্য ২


    প্রথম দরায়ুস দি গ্রেট (Darius I the Great) খৃস্টপুর্ব ৫১৮ সালে পারসেপোলিসের পত্তন শুরু করেন এবং তাঁর পুত্র প্রথম জেরেক্সেস (Xerxes I) ও পৌত্র প্রথম আরটাক্সেরক্সেস (Artaxerxes I) এই বিশাল প্রাসাদ নগরী তৈরি করেন। খৃস্টপূর্ব ৩৩০ সালে, তৃতীয় দরায়ুসের (Darius III) রাজত্বকালে আলেকজান্ডার পারসিপোলিস আক্রমণ করে ও নগর এবং প্রাসাদ সমূহ ধ্বংস করেন । এখনো এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে সেই সব অসামান্য স্থাপত্য শিল্প ও কারুকার্যের নমুনা। আমি সেই ভগ্নাবশেষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার বিশালত্ব, ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনুমান করে অভিভূত হলাম। বিশালাকার প্রবেশদ্বার, গগনচুম্বী কারুকার্যময় স্তম্ভ, দেয়ালে খোদিত অতিকায় জন্তুদমনকারী সম্রাট, সারি সারি সৈন্যদল, সভাসদ ও অতিথি ইত্যাদি সাক্ষী হয়ে আছে তিন হাজার বছরের স্থাপত্য; সে যুগের সৃষ্টি ও শিল্পীর কল্পনা আর কারিগরের দক্ষতা। কি আশ্চর্য সব কারুকার্য! কি অপূর্ব ভাস্কর্য!

    সেই বিরাট রাজ দরবারের সামনে দাঁড়িয়ে তিন হাজার বছরের পুরানো এক দিনের ছবি আমার চোখে প্রাণবন্ত হয়ে উঠল - আমার কল্পনা আমাকে নিয়ে গেল সেই সভায় যেখানে রাজা দরায়ুস বসে আছেন সিংহাসনে সভাসদ পরিজনসহ। এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বিজিত ও সুহৃদ রাজন্যবর্গ নানা রকমের উপহার নিয়ে অপেক্ষা করছে রাজ সাক্ষাতের জন্য। গর্বিত রাজা একে একে সকলকে সম্বর্ধনা করছেন। সভায় বসে আমি সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্যে মগ্ন হয়ে আছি।

    অনুর কথায় সম্বিৎ ফিরল --- ‘এবার চলো। ফিরতে হবে।’ তিন হাজার বছর পার হয়ে কি এত সহজে ফেরা যায়?

    আমরা পারসেপলিস থেকে বেরিয়ে ইস্ফাহানের পথে রওনা হলাম। ইস্ফাহান একদা সাফাভিদ আমলে ইরানের রাজধানী ছিল। অনেক পর্যটকের মতে ইস্ফাহান মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সুন্দর শহর। ইস্ফাহান শহর বিখ্যাত তার পারসিয়ান স্থাপত্যশিল্প, আচ্ছাদিত সেতু, রাজকীয় প্রাসাদ, কারুকার্য-করা মসজিদ, প্রশস্ত রাস্তা, বৃহৎ সুসজ্জিত পার্কের জন্য। আমরা বিপ্লবের ঠিক পরে পরেই ইস্ফাহান গিয়েছিলাম। কোন পর্যটক ছিল না; রাস্তায়, দোকানে বাজারে প্রায় লোকজন নেই বললেই চলে। আমরা ধীরেসুস্থে দ্রষ্টব্যস্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম - অতি বৃহৎ নক্স-ই জাহান স্কোয়ার, ইমাম মসজিদ, আলি কাপু প্রাসাদ, শেখ লফতুল্লহ মসজিদ।




    নাকশ-ই-জাহান স্কোয়ার, ইস্ফাহান


    ইমাম মসজিদ খুব বিখ্যাত। এর মস্ত ডোম সবুজ টালি দিয়ে ঢাকা। আমরা মসজিদের ভিতরে
    প্রবেশ করলাম। অনু মাথায় ঘোমটা দিল, আমরা ছেলেরা মাথায় রুমাল দিলাম। ভিতরে বিভিন্ন রঙের কাঁচ আর টালির কাজ দেখে মোহিত হয়ে গেলাম। কি অপূর্ব সে সব কারুকার্য!




    ইমাম (শাহ) মসজিদ, ইস্ফাহান



    ইমাম (শাহ) মসজিদের কাজ



    ইমাম (শাহ) মসজিদের খিলান


    পথে যেতে যেতে ইস্ফাহানের প্রান্তে একটা ছোট নাম-না-জানা মসজিদ দেখে ভিতরে যাওয়ার ইচ্ছা হল। বিপ্লবের পর সব কিছুই আলগা আলগা। মসজিদের সামনে কোন মানুষ বা রক্ষী নেই। দরজা খোলা। আমরা ভিতরে ঢুকলাম। মনে হল যেন আলাদিনের গুহায় ঢুকেছি। মণিমাণিক্য নেই কিন্তু চারিদিকে দেওয়ালে ঢাকা সমস্ত পরিসরটা আলোয় আলোময়। দেওয়াল, স্তম্ভ, সিলিং সর্বত্র স্বচ্ছ, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ নানা রঙের কাঁচ দিয়ে অলংকৃত করা। আর সেগুলো থেকে বাইরের সামান্য আলো প্রতিফলিত হয়ে এক রহস্যময় আলোর যাদুতে ঘরটাকে একটা মায়াবী স্বপ্নপুরী সৃষ্টি করেছিল। আমাদের মুগ্ধ করেছিল। আমি মোহাবিষ্টের মত একটা স্তম্ভে হেলান দিয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করলাম অনেকক্ষণ।

    ইস্ফাহান ভ্রমণের পর আমরা আবাদানে ফিরে এলাম।

    ডঃ শর্মা, ডঃ রায়ডু, রাজু, দিলীপ দামলে, হ্যারোন্ড – একে একে সবাই আবাদান ছেড়ে চলে গেল। এক মাসের মধ্যে আমারও চুক্তির মেয়াদ শেষ যাবে। আমার যাওয়ার বাধা নেই আর। অনুকে বললাম, তুমি বুবাই গৌতমকে নিয়ে কলকাতায় চলে যাও। আমাকে লন্ডনে যেতে হবে – ব্যাঙ্ক, সাউথ হ্যারোর বাড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থা সেরে তারপর কলকাতা যাব। অনু আর বুবাই গৌতমকে কলকাতার প্লেনে তুলে দিলাম।

    প্রায় এক মাস পরে আমি একা লন্ডনে ফিরে এলাম। অবসরে আলস্যে দিন কাটছে। এখন কিছুদিন আর ছুটোছুটি নয়। চাকুরি নয়। টেলিফোনে সময় কাটে। বন্ধুবান্ধব সকলকে জানাচ্ছি আমি এসেছি, পুরানো সহকর্মীদেরও। ইরানে যাওয়ার আগে আমি আইসিএল-এ (International Computer limited) কাজ করতাম। আইসিএল-র আমার পুরানো ম্যানেজারদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল ছিল। অনেকেই বলেছিল, যোগাযোগ রেখো। আমি একজনকে ফোন করালাম। সে ফোন ধরে বলল, “কেমন আছো? কবে ফিরলে?” – তার গলার স্বরে আন্তরিকতার সুর। সৌজন্য শেষ হলে জানাল, “তোমার মত একজনকে আমরা খুঁজছি। কাল চলে এস। কথা হবে।” দেখা করলাম তার সঙ্গে। সে আমাকে একটা অফার দিল। আমি আইসিএল-এ আবার যোগ দিলাম।

    জীবনে চলতে চলতে অনেক পথ দুর্গম হয়েছে, অনেক পথ একাধিক পথের সঙ্গে মিশেছে। নিমেষে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবার কোন পথে যাব। যে পথে চলছিলাম সেই পথেই চলব না অজানা অচেনা পথে নামব। নতুন পথের শেষে কি আছে জানিনা। এ কী উন্নততর বৈভবের নিশানা, না মরীচিকার হাতছানি। যে পথ নিইনি সে পথ নিলে কি হত তা কেউ জানে না। জীবনের অন্বেষণে বার বার আমি একই ক্ষণে একাধিক পথের মুখোমুখি হয়েছি। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কোন পথ বেছে নেব। আজ-যা-আছে-কাল-তাই হবে এই পথ, বা যে পথে আমি চলেছি সেই পথেই চলব, না নতুন পথে যাত্রা শুরু করব। নতুন পথের শেষে সর্বনাশ অথবা পুরস্কার, সম্মান, প্রতিষ্ঠা এবং বিত্তের প্রতিশ্রুতি!

    ইরান থেকে ফিরে স্যুইস ব্যাঙ্কে যে সব ডলার জমা হয়ে ছিল সে সব তুলে লন্ডনে নিয়ে এলাম। অনেক দিনের ঘুমিয়ে-থাকা ইচ্ছাগুলো আবার জেগে উঠল। সল্টলেকের জমিটা কেনা হয়ে পড়ে ছিল। বাড়ি করার মত সামর্থ্য ছিল না। সেটা শুরু করলাম। সল্টলেকের কথা পরে বলেছি। সাউথ হ্যারোর সেমি-ডিটাচড বাড়িটা বিক্রি করে হ্যারোতে একটা বড় ডিটাচড বাড়ি কিনলাম। আর একটা কাজ করলাম যা আমার সে সময়ের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না। আইসিএ-লে আমার সমযোগ্য পদে যারা কাজ করত তাদের প্রায় সকলেরই একটা হলিডে হোম ছিল। আমার ওইরকম একটা কেনার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু সল্টলেকের বাড়ি ও হ্যারোতে নতুন বাড়ি কেনার পর উদ্বৃত্ত আর ছিল না তাই হলিডে হোম কেনা হয় নি। আশাটা একটু নিচু করে স্পেনে একটা টাইম শেয়ার ফ্ল্যাট কিনলাম।

    অতলান্তিক মহাসাগরে এক ছোট্ট দ্বীপ। সেই দ্বীপের একদিকে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, গগনচুম্বী টেডে পর্বত, অন্যদিকে জনবসতি। বিস্তীর্ণ প্রান্তর প্রাগৈতিহাসিক পাথরে ঢাকা। শুনলাম স্টানলি কুবরিকের বিখ্যাত ফিল্ম 2001:A Space Odyssy-র পটভূমিকা হয়েছিল এই পাথর প্রান্তরে।




    টেডে পর্বত (Mt. Teide)


    আর অন্য দিকে দিগন্ত প্রসারী সমুদ্র সৈকত - সেখানে কোথাও সাদা বালি, কোথাও কালো বালি, কোথাও জল থেকে মাথা উঁচু করে উঠেছে ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়। সমুদ্র সৈকতের উপর সারি সারি দৃষ্টি নন্দন বড় বড় অট্টালিকা। এই অট্টালিকাকে গুলোতে আছে ছোট বড় ‘অ্যাপার্টমেন্ট’ ও ‘হলিডে হোম’ বা ছুটি কাটানোর ঘর। দ্বীপের নাম টেনেরিফ – স্পেন রাজ্যের অংশ। আমি ছোটকাল থেকেই বেড়াতে ভালবাসি। দেশে থাকতে অর্থাভাবে সে সাধ ভাল করে মেটাতে পারিনি। লন্ডনে এসে সময় পেলেই আমরা সপরিবারে ঘুরে বেড়াতাম। কখনো ‘বেড ও ব্রেকফাস্ট’ নিয়ে থাকতাম কখনো বা ক্যারাভানে। ডিসেম্বরে বড় ছুটিতে দেশে যেতাম মাকে দেখতে। কখনো বা গাড়ী নিয়ে একাহাতে গাড়ী চালিয়ে স্ত্রীপুত্রসহ ইউরোপ ঘুরে বেড়াতাম।

    ইরান থেকে ফিরে এসে মনে হল দূর কোন দ্বীপে একটা বাড়ি কিনে রাখলে কেমন হয়? তখন কলকাতায় সল্টলেকে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জমানো অর্থের সিংহভাগ খরচ হয়ে গিয়েছে সল্টলেকে বাড়ি করতে। কোন দ্বীপে বাড়ি কেনার মত অর্থ সামর্থ্য আর নেই। তবু ইচ্ছাটা ছোট করে টেনেরিফে একটা ‘টাইম শেয়ার ‘অ্যাপার্টমেন্ট’’ কিনলাম। ‘টাইম শেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট’ মানে ক্রেতা বছরের নির্ধারিত সময়ের কয়েক সপ্তাহ সেই ‘অ্যাপার্টমেন্ট’-র মালিক হয়।




    অনু ও আমি -- আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে


    সেই সপ্তাহগুলো ক্রেতা সেখানে থাকতে পারে বা ভাড়া দিতে পারে। আমি দুসপ্তাহ কিনে ছিলাম টেনেরিফের সমুদ্র সৈকতের একটি অট্টালিকায়। বুবাই গৌতম তখন ইউনিভার্সিটিতে। অনু আর আমি যেতাম টেনেরিফে। বিয়ের পর আমরা দুজনে, শুধু দুজনে, দূরে কোথাও ছুটি কাটাইনি। যেখানেই যেতাম সেখানে সর্বদাই আত্মীয় স্বজন বা পুত্র পরিবৃত। টেনেরিফের সমুদ্র তীরে আমরা কুজনে দুজনে কাটিয়েছি। দিনগুলো খুবই আনন্দের ছিল তাই বিশেষভাবে স্মরণীয়। টেনেরিফের সেই দিনগুলোর স্মৃতি আমাকে চিরজন্ম সুখ দিয়েছে। আমরা খুব উপভোগ করেছি।


    ক্রমশ:



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন