এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ভ্রমণ  শনিবারবেলা

  • তবিলদারের দুনিয়াদারি পর্ব ১৫ - নর্ম্যান্ডির তটে -১

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ভ্রমণ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত
  • নর্ম্যান্ডির তটে ১

    সমুখে শান্তি পারাবার 
     



    গেন্ট, বেলজিয়াম 

    ৬ জুন, ১৯৯৪ 

    সিটি ব্যাঙ্কের কাজে আমার ইউরোপ ভ্রমণ প্রায় সাপ্তাহিক ব্যাপার তখন। হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স গাড়িতে যাই, কখনো ফ্রাঙ্কফুর্ট অবধি; অন্যত্র হাওয়ায় উড়ে। এর কারণ দ্বিবিধ; একে তো গাড়ি চালাতে ভালোবাসি, আড়াই বছর অন্তর নতুন বাহন জোটে। আর একটা নিতান্ত গদ্যময় কারণ– সাক্ষ্য-প্রমাণ সহ বছরে ব্যাঙ্কের কাজে তিন হাজার মাইল চালালে ফ্রি তে পাওয়া গাড়ি নামক ফ্রিঞ্জ বেনিফিটের ওপরে দেয় ট্যাক্স কমবে তিরিশ শতাংশ। একা থাকি, কুকুর বেড়াল অবধি নেই, পানসির অভাব অতএব চালাও গাড়ি। সময় অসময় বলে কোন কথা নেই, রবিবার সন্ধ্যেয় বেরিয়ে কখনো একটু রাতে ব্রাসেলস পৌঁছেছি; রু রিভোলি ওয়ান ওয়ে, একদিন মাঝ রাতে প্লাস ভেন্দম দিয়ে রু স্ক্রাইবের প্যারিস ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলের দরোজায় পৌঁছেছি, তখন ফ্রান্সের রাত একটা। দরোয়ানকে চাবিটি ধরিয়ে দিয়ে নেমে পড়েছি, আমস্টারডামে বদ্ধ পাগল বাদে কেউ গাড়ি পার্ক করার কথা ভাবে না, তাই কাছাকাছি কোথাও যেমন উটরেখটে ইয়ারবোরসেয় রেখেছি গাড়ি। এতকাল বাদে ঠাণ্ডা মাথায় লেখার সময়ে একটু বিভ্রান্তি জাগে – সত্যি, একদিন এই সব ঘটেছে আমার জীবনে? 

    একটা দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে। জুন মাস। ইউরোটানেল খুলতে এক বছর বাকি, ডোভার থেকে রাতের জাহাজ ধরে খুব ভোরে বেলজিয়ান বন্দর জেব্রুঘে পৌঁছেছি, ঠা ঠা করছে আলো, যাবো ব্রাসেলস। জেব্রুঘে শহরে কালপাত করা বৃথা, আমেরিকানরা যাকে ওয়ান হর্স টাউন বলে এটি তাই। শহরের মাঝে এক অসহনীয় স্ট্যাচুর পাশ কাটিয়ে এসেছি যেখানে রাজা লিওপোলডকে অসীম কৃতজ্ঞতায় ঘিরে আছেন কঙ্গোর মানুষ, সেই কঙ্গো যেখানে বেলজিয়ানরা বধ করছিল দেড় কোটি মানুষ। সেখানে নয় ক্রসান সহ কফি খাবো গেনট শহরে- এককালের ব্যস্ত বন্দর, কাপড়ের ব্যবসার রমরমা ছিল। হল্যান্ড থেকে কেটে নিয়ে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি করা বেলজিয়াম নামক কৃত্রিম দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর, বলতে গেলে ফ্ল্যানডারসের রাজধানী; হল্যান্ডের যে কোন কোনায় তাকে বেশি মানায়। শেলডে নদীর পাশে পুরনো সেন্ট বাভোস ক্যাথেড্রালের পেছনে গাড়ি পার্ক করে পাথরে বাঁধানো হাজার বছরের উন্মুক্ত চত্বরে বসেছি, কফি খাবো। পাশেই নিউজ স্টল। রাশি রাশি খবরের কাগজ ঝোলানো আছে লোহার আংটায়। তিনটি ভাষার প্রাধান্য, ফরাসি, ফ্লেমিশ বা ডাচ এবং জার্মান। চ্যানেল পেরিয়েই আমি জার্মান খবর কাগজ খুঁজি বিশেষ করে বিল্ড (অর্থ ছবি, জোহানেসবার্গে ঠিক এই রকম চেহারার আফ্রিকানস খবর কাগজ মেলে– Beeld, মানে ছবি !) নামক সনসনি খেস কেচ্ছার পত্রিকা যেটি লন্ডনের দি সান কাগজের সমতুল্য ট্যাবলয়েড। আট পাতার কাগজ, সেখানে কোন খবরকে দুশোর শব্দের বেশি জায়গা দেওয়া হয় না। আশ্চর্যের বিষয় যে ব্রিটেন বাদে ইউরোপের প্রায় সর্বত্র এটি মেলে, অসলো থেকে স্পেনের বিচ অবধি। যখন জার্মানি আসি এর দাম ছিল কুড়ি ফেনিগ (সে কালে আমাদের ৮০ পয়সা), এখন ডবল। পাশাপাশি অনেক দৈনিক, ফ্লেমিশ ডে স্টানডারড, ডে মরগান, হেট লাটস্টে নিউজ, ফরাসি ল্য লিব্র; বিল্ড ছাড়াও অন্য জার্মান কাগজ ফ্রাঙ্কফুরটার আলগেমাইনে। যেভাবে একটা স্ট্যান্ডে ক্লিপ দিয়ে আটকানো আছে, আমার কফির টেবিল থেকে প্রতিটির হেড লাইন দৃশ্যমান। 

    একটু দূর থেকে দেখে মনে হল প্রত্যেক সংবাদ পত্রের প্রথম পাতায় যুদ্ধের ছবি কেন? ট্যাঙ্ক, হাওয়াই জাহাজ, ফুল আর্মার সৈন্য। প্রথম ভাবনা হল– কোথাও যুদ্ধ লাগল নাকি? সব কাগজেই এক খবর? ভোরে জেব্রুঘেতে নেমে থেকে এই ষাট কিলোমিটার গাড়ি চালিয়েছি, রাস্তায় কোন সাইরেন শুনিনি, সাঁজোয়া গাড়িও তো দেখলাম না। যুদ্ধটা লাগলো কোথায়? 

    বিল্ড হাতে নিতে ভ্রম নিরসন হল। যুদ্ধের খবর সব কাগজেই, তবে সে আজকের নয়, ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই। এই ৬ই জুন ব্রিটিশ আমেরিকান কানাডিয়ান ফ্রি ফ্রেঞ্চের নর্ম্যান্ডি তটে অবতরণ; পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম নৌ এবং স্থল বাহিনীর যুগপৎ অভিযান– অপারেশন ওভারলর্ড। তিরিশ বছর আগে এলিট সিনেমা হলে দেখেছিলাম ড্যারিল এফ জানুকের, দি লংগেস্ট ডে। আজ সেই দিনের সুবর্ণ জয়ন্তী। এই অঞ্চলে তার আগের দিন মিত্র শক্তি প্লেন থেকে নামিয়ে দেয় অজস্র ডামি প্যারাট্রুপার; জার্মান জেনারেলরা ধরে নেবেন আক্রমণ এখান থেকে শুরু হবে। ভেবে রোমাঞ্চ হলো ইতিহাসের পাতায় পড়া সিনেমায় দেখা রণক্ষেত্রের মধ্যে ঢুকে পড়েছি; বসে আছি উত্তর সাগর বরাবর গাঁথা হিটলারের আটলানটিক ওয়ালের অনতিদূরে, গেন্টে। 

    সে আমলে পিকচার পোস্ট কার্ড লেখার প্রথা ছিল। যখন যেখানে গিয়েছি, ছেলে মেয়েকে দু লাইন লিখে সে কার্ড পোস্ট করেছি, আজও তার ব্যত্যয় হল না। লিখলাম অর্ধ শতাব্দী আগের এই দিনে ইউরোপকে নাৎসি শাসন থেকে মুক্ত করতে দেড় লক্ষ যোদ্ধা নর্ম্যান্ডির বিচে নেমেছিলেন। 

    মনে রেখো তোমাদের আজকের স্বাধীনতার জন্য আমরা তাঁদের কাছে ঋণী

    হোয়েন ইউ গো হোম, টেল দেম অফ আস, অ্যান্ড সে 
    ফর দেয়ার টুমরো উই গেভ আওয়ার টুডে 

    গেন্ট থেকে অয়রোপা স্ত্রাসে, ই ৪২ রাজপথ জাভেন্তেম এয়ারপোর্টের কাছে মুড়ে একেবারে সিধে চলে যায় জার্মান সীমান্ত অবধি; আমি অবশ্য নেমে যাবো সেই মোড়ের একটু আগেই। হাতে সময় আছে; এগারোটায় ব্রাসেলসে ব্যাঙ্ক মিটিং। সোফিতেল হোটেলে চেক ইন করে বেশভুষা বদলানো যাবে স্বচ্ছন্দে।

    যাবার পথে একটা কথা বারবার মনে হলো। 

    পাঁচই জুনের রাতে পোর্টসমাউথ সাউদামপটন থেকে নর্ম্যান্ডিগামী ছোট ছোট ল্যান্ডিং ক্রাফটে নিজের এম ওয়ান রাইফেলটি দু পায়ের মাঝে ধরে, ব্যাগে একদিনের মত র‍্যাশন নিয়ে যে দেড় লক্ষ সৈন্য বসে ছিলেন তাঁরা কি ভাবছিলেন? তাঁরা জানতেন সাগরের ওপারে নর্ম্যান্ডি বিচে কোন ফরাসি বালিকা ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না। এই পূর্ণিমার চাঁদ অস্ত গেলে তাঁরা বন্দুকটি নিয়ে নামবেন এক কোমর জলে, বিচে সারি সারি সাজানো আছে ট্যাঙ্ক সাঁজোয়া গাড়ি আটকানোর কয়েক লক্ষ লোহার ত্রিকোণ বর্ম, মাটিতে মাইন; একটু ওপরে তাঁদের তাক করে আছে অজস্র কামানের মুখ, বিচে দাঁড়িয়ে আছেন জার্মান সৈন্য, ল্যান্ডিং বোট থেকে নেমে শক্ত মাটি অবধি পৌঁছুতে পারবেন? 

    মৃত্যুর মুখোমুখি




    এই কঠিন সংগ্রামে অনেকে প্রাণ হারাবেন, কিন্তু আমি নয়। আমি লড়াই করে বাঁচব, একদিন প্যারিসের, ইউরোপের মুক্তি দেখব। 

    এই জীবনের সকল প্রতিকূলতার ভেতরে অনেক বার, অনেক অনেক বার নিজেকে বলেছি সামনের এই লড়াইয়ে আমি জিতব। 

    ভিনচেরো। 

    ডের লেঙ্গস্টে টাগ / দি লংগেস্ট ডে 

    চল্লিশ লক্ষ সৈন্য, হাওয়াই জাহাজ, ট্যাঙ্ক সহ বাইশে জুন ১৯৪১ হিটলারের রাশিয়া আক্রমনের (পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম স্থল অভিযান, অপারেশন বারবারোসা) চাকা দু বছরের মধ্যেই অন্তহীন স্টেপ ভূমির কাদা ও তুষারে আটকে গেছে; শুরু হয়েছে নাৎসি বাহিনীর অগৌরবের পশ্চাদপসরণ। হিটলার ও তাঁর জেনারেলদের মনে কোন সংশয় ছিল না যে হাতিকে পাঁকে পড়তে দেখে মিত্র বাহিনী তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেলের জলটুকু পেরিয়ে ইউরোপীয় ভূখণ্ডে হানা দেবেই। প্রশ্নটা কখন নয়, প্রশ্ন হল কোথায়। 

    ক‍্যালে থেকে হোয়াইট ক্লিফস অফ ডোভার




    জলপথে ডোভার থেকে ক্যালের দূরত্ব তিরিশ কিলোমিটার। ফ্রান্সের বাড়ি যাবার সময়ে গাড়ি সহ চ্যানেল টানেল দিয়ে সাগর পার হতে লাগে ৩৫ মিনিট। কোন উজ্জ্বল দিনে ফ্রান্সের কাপ গ্রি নেজ থেকে ডোভারের ঝকঝকে হোয়াইট ক্লিফস দেখে ভেবেছি, এই তো এতো কাছে ! দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব এখানে সবচেয়ে কম, রোমেল সহ অনেক জার্মান জেনারেল ধরে নিয়েছিলেন আক্রমণ আসবে অন্য কোথা নয়,এই পা দে ক্যালেতে। এরউইন রোমেল একদিন এইখানে দাঁড়িয়ে তাঁর বাইনোকুলার বাগিয়ে ইংল্যান্ডের দিকে চেয়েছিলেন – ভেবেছিলেন এই শান্ত সমুদ্রের ওপারে হয়তো তৈরি হচ্ছে কোন মারণ ফৌজ? তিনি বলেছিলেন, যেদিন শত্রু এই জলসীমা পার হয়ে তার হাওয়াই জাহাজ ও নৌ বহর নিয়ে ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের কিনারায় আক্রমণ শুরু করবে, সেই দিন, সেই প্রথম চব্বিশ ঘণ্টা হবে আমাদের জার্মানদের ও শত্রু সৈন্যের পক্ষে সমান গুরুত্বপূর্ণ, নির্ণায়ক দিন, কেননা সেটাই হবে দীর্ঘতম দিন, দি লংগেস্ট ডে (ডের লেঙ্গস্টে টাগ, যা থেকে প্রযোজক ডারিল এফ জানুক তাঁর ছবির নাম রাখেন)। 

    শত্রু যেখানেই ইংলিশ চ্যানেলের জলবাধা অতিক্রমের চেষ্টা করুক না কেন, তাকে ঠেকিয়ে শুধু নয় আবার ঠেলে জলে ফেলে দেবার উদ্দেশ্যে কেবল মাত্র চ্যানেল নয়, উত্তরে নরওয়ের ট্রণ্ডহাইম থেকে দক্ষিণে স্প্যানিশ সীমান্ত অবধি পাঁচ হাজার কিলোমিটার ব্যাপী সমুদ্রতটরেখা বরাবর এক প্রতিরক্ষা কলাম গড়ে তোলা হয়েছিল, তার নাম আটলান্টিক ওয়াল। আক্ষরিক অর্থে সেটি কোনো দেওয়াল নয়- সুদীর্ঘ তট জুড়ে চার লক্ষ ট্যাঙ্ক প্রতিরোধী ট্র্যাপ, মাইন, কয়েক কিলোমিটার অন্তর বাঙ্কার, কামান বসানোর পাথুরে ফোকর - এক সুসজ্জিত যুদ্ধ যন্ত্র শত্রুর আগমনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। উবি সাঁ লোতে আমাদের গ্রামে যাওয়ার পথে থেমে এমনি অনেক বাঙ্কার দেখেছি ক্যালে ও বুলয়নের মাঝে; তারা অজর অমর – কোন মশলায় যে তৈরি ! নরওয়ে ডিফেন্স ফোর্স হালে ট্রণ্ডহাইমে আটলান্টিক ওয়ালের মিনি দুর্গ গুলিকে উড়িয়ে দেবার জন্য প্রচণ্ড শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করেও তার বিন্দুমাত্র ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। 

    আটলান্টিক ওয়ালের মিনি দুর্গ




    বছর খানেক আগে আমেরিকান বাহিনী সিসিলিতে নেমেছে। একমাস আগে ১৯৪৪ সালের মে মাসে মন্টি কাসিনোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর মিত্রশক্তির সামনে রোমের পথ উন্মুক্ত। ইউরোপের একটি ফ্রন্ট খুলে গেছে – এবার ইংল্যান্ডের দক্ষিন তট হতে খুলবে দ্বিতীয় ফ্রন্ট, ফ্রান্স অভিযান আসন্ন। তার বিশাল প্রস্তুতি যে চলছে জার্মান হাই কম্যান্ড সে খবর ঠিকই রাখতেন। কিন্তু তার স্থান? নিশ্চিত ক্যালে? 

    লংগেস্ট ডে ছবি দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে রোমেল ও জার্মান হাই কমান্ড, ভেরমাখটের ফোকাস ছিল ক্যালেতে। এটি হয়তো ঐতিহাসিক সত্য নয়; রোমেলের কম্যান্ড সেন্টারের অবস্থান ছিল প্যারিসের উত্তর পশ্চিমে শাতো লা রোশ গুইয়ন যেখান থেকে নর্ম্যান্ডি বিচ এবং ক্যালের প্রায় সমান দূরত্বে। একই সময়ে আরেক জার্মান জেনারেল এরিখ মার্কস বলেছিলেন আক্রমণ আসবে নর্ম্যান্ডি বিচে– তার কারণ শত্রু ধরে নেবে সেটি আমাদের হিসেবের বাইরে এবং ক্যালের তুলনায় সমতল, সে বিচে ট্যাঙ্ক চালানো সহজ কিন্তু ভেরমাখট তাঁকে বিশেষ পাত্তা দিলেন না সিনিওরিটিতে তিনি রোমেলের নিচে ! 

    হল্যান্ড থেকে নর্ম্যান্ডি অবধি বিস্তৃত উপকূলে শত্রুকে ঠেকানোর দায়িত্বে ছিল রোমেলের আর্মি গ্রুপ বি– তাদের অফিস প্রত্যহ এই অঞ্চলের আবহাওয়া রিপোর্টের ছানবিন করে; গোটা মে মাস ইংলিশ চ্যানেল ঝড় ঝঞ্ঝায় বিপর্যস্ত, প্রায় কুড়ি বছরের রেকর্ড। পাঁচই জুন বৃষ্টি আরও বাড়ল, পূর্বাভাস জানায় এমনি ঘনঘটা চলবে আরও পাঁচ দিন। শত্রু সৈন্যের অবতরণের জন্য চাই শুক্লপক্ষের চাঁদের আলো, স্থির সাগর এবং ভোরের ভাঁটা। রোমেল বললেন এই পরিস্থিতিতে আক্রমণের আশংকা আছে বলে তিনি মনে করেন না। দুপুর নাগাদ তিনি তাঁর কমান্ড সেন্টার থেকে আর্মি মার্সিডিজ গাড়িতে উঠলেন; যাবেন পূর্বে। সন্ধ্যে নাগাদ পৌঁছুবেন স্টুটগার্টের শ’খানেক মাইল দক্ষিণে তাঁর বাড়ি, হ্যারলিঙ্গেন। পরের দিন, ছয়ই জুন তাঁর স্ত্রী লুচিয়ার (জন্মসূত্রে পোলিশ/ইতালিয়ান) জন্মদিন; প্যারিস থেকে তাঁর জন্য স্পেশাল অর্ডার মাফিক জুতো বানিয়েছেন, সেটি স্বহস্তে লুচিয়াকে দেবেন। 

    রোমেল যখন তাঁর স্ত্রীর জন্মদিনের উপহার নিয়ে কমান্ড সেন্টার ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন, ঠিক সেই সময়ে লন্ডনের গ্রিনহ্যাম কমন থেকে ১০১ এয়ারবোর্ন ডিভিশন নর্ম্যান্ডির পানে ওড়বার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাঁদের শুভ কামনা জানিয়ে আইসেনহাওয়ার তাঁর অফিসে ফিরে এসে একটি নোট লিখলেন তাঁর প্যাডে; 

    শেরবুর্গ -লে হাভর এলাকায় আমাদের পরিকল্পিত আক্রমণ সফল হয়নি। আমি সমস্ত সৈন্যকে ফিরিয়ে আনার আদেশ দিয়েছি। আমার পাওয়া যাবতীয় তথ্যের ভিত্তিতে আমি এই দিনে এইখানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের প্যারা ট্রুপাররা, নৌ বহর এবং সেনারা তাদের অপরিসীম বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ব্যর্থতার দায়িত্ব একমাত্র আমার। 

    ডোয়াইট ডি আইসেনহাওয়ার 
    জুন ৫ 

    আইসেনহাওয়ার এর নোট




    ছয়ই জুন সকালে নর্ম্যান্ডি ল্যান্ডিং সফল হয়েছে জেনে আইসেনহাওয়ার সেই কাগজটি মুচড়ে তাঁর টেবিলের তলায় রাখা আবর্জনার বিনে ফেলে দিয়েছিলেন; পরে তাঁর এক সহকারী এটি উদ্ধার করে। রণ রক্ত সফলতা নয়, এক সম্ভাব্য ব্যর্থতার সব দায় নিজের মাথায় নেওয়ার এমন দৃষ্টান্ত দুনিয়ার লড়াইয়ের ইতিহাসে বিরল। 

    ছয়ই জুন খুব ভোরে টেলিফোন বাজলো রোমেলের ভিলা লিনডেনহোফে– মিত্রশক্তি বাহিনীর ল্যান্ডিং শুরু হয়েছে, ক্যালের চারশ কিলো মিটার দক্ষিণে, ব্রিটিশ সমুদ্র তটরেখা থেকে দূরতম ফরাসি উপকুলে। নর্ম্যান্ডিতে। 

    নর্ম্যান্ডির দিন 

    ফ্রান্সের পূর্ব উপকূলে লে হাভর আর শেরবুর্গ ব্যস্ত বন্দর। তাদের মাঝামাঝি প্রায় অর্ধ চন্দ্রাকৃতি সমুদ্রতটের নাম নর্ম্যান্ডি বিচ। অবতরণ ও আক্রমনের প্ল্যান ছিল পাঁচটি ল্যান্ডিং জোনে – আমেরিকান আক্রমণ শুরু হল একেবারে পশ্চিমে উটা এবং ওমাহা বিচে, তারপরের বিচ ‘গোল্ড’ (ব্রিটিশ), জুনো (ব্রিটিশ কানাডিয়ান), সোর্ড (ফ্রি ফ্রেঞ্চ, পোলিশ, কমনওয়েলথ) জুন মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখের ভেতরে প্রায় দেড় লক্ষ স্থলসেনা প্যারা ট্রুপার বিমান বহর এতে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথম ল্যান্ডিং-র দিন, ছয়ই জুন, নিহত হন সাড়ে চার হাজার, আহত হন সমসংখ্যক। অন্যদিকে জার্মান মৃতের সংখ্যা সাত, আহত তিন হাজার এ সবই তথ্য নিষ্প্রাণ কাগজে লেখা নথি। এঁদের ঘর সংসার ছিল, ছিল খেলার মাঠের আড্ডা, প্রিয়া ঘরণী পুত্র কন্যা প্রিয়জন, জীবন যে রকম কোথাও কোন মায়ের সন্তান।
     


    ডি ডে, মিত্রশক্তি বাহিনীর ল্যান্ডিং


    দুটি বিশ্বযুদ্ধের বিষয়ে যতটুকু সম্ভব জানবার চেষ্টা করেছি; ইউরোপ এসে ইস্তক ইতিহাসে উল্লিখিত নানান ঘটনাস্থল দেখেছি যেমন সারায়েভোর ল্যাটিন ব্রিজ, ভেরদাঁর কিলিং ফিল্ডস, সম নদীর যুদ্ধক্ষেত্র আরদেন ফরেস্টে বাস্তয়েন, ডানকার্ক, হিটলারের ওলফশান্তসে (রাসটেনবুরগ, পোল্যান্ড)। আমাদের উবি সাঁ লো গ্রামে আছে কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেটারি, উত্তরে থেকে দক্ষিণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অগুনতি সমাধি। সেখান থেকে অনতিদূরে বেলজিয়ামের ইপ্র শহরের মেনিন গেটে প্রতি সন্ধ্যায় আটটার সময়ে ট্রাফিক থেমে যায়, একশো বছর আগের লক্ষ মৃতের সম্মানে আজও বিউগলে দি লাস্ট পোস্ট বাজে। যুদ্ধ অমানবিক তাই আমার কাছে যুদ্ধের ইতিহাস মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি, জিও পলিটিকাল ইমপ্লিকেশন নয়– আমি খুঁজি মানুষের গল্প- সারায়েভোর ল্যাটিন ব্রিজের কোনায় দাঁড়ালে যেন দেখতে পাই রাজকীয় মার্সিডিজ থেমেছে, সতেরো বছরের এক যুবক কাফে থেকে বেরিয়ে দুটি গুলি চালায় নিখুঁত নিশানায়; যুবরাজ যুবরানি নিহত। 

    কতবার ভেবেছি, একদিন নর্ম্যান্ডি যাব। শৌর্য বীর্যের গাথা নয়, শত্রু মিত্র নয়, একান্ত মানুষের কথা মনে করতে, যাদের সকলেই পেশাদার সৈন্য ছিলেন না। কেউ একদিন কলম নামিয়ে রেখে বন্দুক তুলে ধরেছেন সকলেই ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সংগ্রামে ধেয়ে যাননি- কিং অ্যান্ড কান্ট্রি? কোন কিং কার কান্ট্রি? আঠারো বছরের জার্মান তরুণ কেন লড়েছিল তার ফুয়েরারের নামে না তার দেশের পতাকার সম্মানে? 

    একদিন সুযোগ এলো; রোদিকার এক বান্ধবী ইসাবেলা, দীর্ঘদিন কানাডা বাসিনী তিনি নর্ম্যান্ডি যেতে চান; জুনো বিচে কানাডিয়ান সৈন্যেরা অসীম বীরত্বের সঙ্গে লড়েছিল, সেখানে আছে তাঁদের নাম লেখা স্মৃতি ফলক তাঁর পরিচিত কিছু কানাডিয়ান পরিবার সেই সব নাম লিখে দিয়েছেন। 

    গোল্ড বিচ

    নর্ম্যান্ডি সৈকতে সেনা অবতরণ

    নর্ম্যান্ডির সমুদ্র  সৈকত এখন




    আমাদের প্রাথমিক গন্তব্য ছোট বিচ আরোমানশ, গোল্ড বিচ, যেখানে ব্রিটিশ সেনারা নামেন এবং ঠিক এখানেই বানানো হয় প্রথম মালবেরি হারবার বা অস্থায়ী/সাময়িক জেটি যেখান থেকে সাপ্লাই পৌঁছুবে সংগ্রামরত সেনাদের কাছে। আজকের গোল্ড বিচ শান্ত উপকূল শহর, দূরে ঝলমল করছে ইংলিশ চ্যানেল। আজ রবিবার এই ছোট্ট শহর লোকে লোকারণ্য। নর্ম্যান্ডি বিচে যারা আসেন তাঁরা সকলেই আমাদের মতন টুরিস্ট নন, অনেকের কোন না কোন যোগ আছে, তাঁরা এক ধরনের তীর্থযাত্রী, খোঁজেন কোনো চেনা মানুষের স্মৃতি, কারো দাদু কারো প্রপিতামহ লড়েছেন এই বিচে, কেউ বা শায়িত আছেন সমাধিস্থলে। 

    চমৎকার দিন, দিব্যি যে কোন কাফের বাইরে বসা যায়, এমন সময়ে মায়া আমাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করে চলে গেছে উলটো দিকের আরেক কাফের টেবিলে। সেখানে বসে আছেন ব্রিটিশ আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত তিনজন প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈনিক, তাঁদের যুদ্ধের মেডাল বুকে ঝোলানো। বছর সাতেকের এই মেয়ে তাঁদের সঙ্গে কি আলোচনা করছে? রোদিকা ও আমি এগিয়ে যেতেই একজন বললেন, আপনাদের মেয়ে? জানেন এখুনি আমাদের কি বলেছে? থ্যাঙ্ক ইউ ফর সেভিং আস! 

    তিনজন ভেটারেন ও মায়া




    এঁদের বয়েস নব্বুইয়ের কাছাকাছি, দুজনের বাড়ি এসেক্স, একজনের কেন্ট ১৯৪২ সালে সেনা দলে নাম লিখিয়েছিলেন, নর্থ আফ্রিকা ক্যাম্পেন দেখেছেন। তারপর অ্যাকটিভ সার্ভিস ১৯৪৩ সালে, ডি ডে ল্যান্ডিঙের প্রস্তুতি চলেছিল এক বছর ধরে শত্রুর অগোচরে! জার্মান কামান ও বন্দুকের গুলি এড়িয়ে কোমর জলে হেঁটে তিনজন ঠিক এইখানে ডাঙ্গায় উঠেছিলেন। বছরে কয়েকটা দিন তাঁরা এই গোল্ড বিচে আসেন, পুরনো দিনের গল্প করেন তবে আজ এই বাচ্চা মেয়েটির ধন্যবাদ পেয়ে তাঁরা অভিভূত (ওভারহোয়েলমড) বোধ করেছেন। 

    গর্ব বোধ করলাম। দেড় দশক আগে বেলজিয়ামের গেন্টে বসে একদিন আমার প্রথম দুটি ছেলেমেয়েকে লিখেছিলাম, মনে রেখো তোমাদের আজকের স্বাধীনতার জন্য আমরা তাঁদের কাছে ঋণী। আজ আমরা কেউ বলে দিইনি, মায়া সেই গল্প মনে রেখেছে। 

    গোল্ড বিচে একটা পতাকা স্থায়ী ভাবে ঝুলছে, তাতে লেখা ‘মেরসি’ 
    তলায় ৬ই জুন ১৯৪৪


    মেরসি



    মনে পড়ল ঘরে না ফেরা এক আহত সৈনিকের আর্তি :


    তোমরা যখন ফিরবে ঘরে সেদিন তাদের বোলো


    আমরা দিলাম আমাদের আজ


    তারা দেখবে ভোরের আলো

    হোয়েন ইউ গো হোম, টেল দেম অফ আস অ্যান্ড সে


    ফর দেয়ার টুমরো উই গেভ আওয়ার টু ডে


    (জন ম্যাকসওয়েল এডমনডস, কোহিমা এপিটাফ, ১৯৪৪)


    নর্ম্যান্ডির সমুদ্রতটে  দাঁড়ালে সব কথা বন্ধ হয়ে যায়।


    পুনশ্চ:


    এখনো আমার পরিক্রমার অনেক  বাকি। এক নির্বাক স্মরণ যাত্রা এবার আমাকে নিয়ে যাবে সেথায় যেখানে শত্রু মিত্র পাশাপাশি অনন্ত শয়নে শায়িত ।


    সমুখে শান্তি পারাবার ।

    ক্রমশ 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন