এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ভ্রমণ  শনিবারবেলা

  • তবিলদারের দুনিয়াদারি - শহর থেকে শহরে - পর্ব ৬ - ডাবলিন দ্বিতীয় পর্ব

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ভ্রমণ | ১৭ মে ২০২৫ | ১৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  •  

    ডাবলিন পর্ব দুই 



    ট্রিনিটি কলেজ

    বিদ্যাপীঠে রাত্রিবাস 

    আমাদের দেশের গুরু গৃহে, বিদ্যাপীঠে ছাত্রগণ জলচৌকির ওপরে পাঠাভ্যাস এবং মাটির মেঝেতে আপন তালাই মাদুর পেতে রাত্রিবাস করেছে; সকল প্রকার বাহুল্য বর্জিত প্রকৃত পঠন পাঠন। অন্তত বাবার কাছে এমনই গল্প শুনে এসেছি। 

    ইউরোপের কোন বিদ্যায়তনে আমার দাখিলা হয় নি, সাউথ সিঁথির কাঁটাকল থেকে পেয়েছি আমার শেষ ডিগ্রি। একবার মাত্র অয়েল ট্রেডিঙের বিষয়ে কিছু জ্ঞান আহরণের সুযোগ দেবার জন্য সিটি ব্যাঙ্ক আমাকে অক্সফোর্ডের ম্যানর রোডে সেন্ট ক্যাথারিনস কলেজে একটি কোর্স করতে পাঠায়। এই শিক্ষা ছিল যদিও আবাসিক, কিন্তু কলেজে নয়, শয়নের ব্যবস্থা অন্যত্র। কলেজ বিল্ডিং অত্যন্ত হাল আমলের (প্রখ্যাত আর্কিটেক্ট আরনে ইয়াকবসেনের বানানো), ঐতিহ্য মণ্ডিত অর্থাৎ দেওয়ালে শ্যাওলা ধরা, বহু কাল চুনকাম হয় নি এমন প্রাচীন দেওয়াল নেই, অক্সফোর্ড সুলভ কোন চুড়ো নেই! কবে থেকে শুনে এসেছি অক্সফোর্ডের আরেক নাম ‘দি সিটি অফ ড্রিমিং স্পাইয়ারস’।

    নামকরা কিছু বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেকেন্ড হ্যান্ড সাক্ষাৎকার হয়েছে, যেমন বছর চল্লিশ আগে বর্ধমান মহারাজার সুপুত্র, রাজ কুমার জয়চাঁদের স্থানীয় অভিভাবক রূপে হ্যারো স্কুলে তাকে হোস্টেলের কক্ষে পৌঁছে দিয়েছিলাম (১৯৮৫)। সুটকেস দুটো রাখতেই ঘরের অর্ধেকটা ভরে গেছে, ভেবেছি এক টুকরো কাঁচের জানলাওলা এই ছোট ঘরে রাজকুমার কি ভাবে তিনটে বছর কাটাবে! 

    অনেক দিন কেটে গেলে কন্যা মায়াকে পর পর দু বছর তার অক্সফোর্ডের দুটি বিভিন্ন কলেজের আবাসিক সামার স্কুলে নিয়ে গেছি। সে সব একেবারে ঠিক পিকচার পোস্টকার্ড মার্কা! কিন্তু মায়ার সুটকেস সহ দুয়োরে এসেই জানা গেলো ছাত্র ছাত্রীদের পিতা মাতা কলেজের সদর দরোজা অতিক্রম করতে পারেন না। মায়ার কাছ থেকে পরে জেনেছিলাম সে কলেজ (সেন্ট এডমন্ড, সেন্ট বেনেট) যে অত্যন্ত ঐতিহাসিক সেটা ঘরে ঢুকেই সে বেশ বুঝেছে, ভেতরে মেরামত হয়নি দুশ বছরে, অতি ক্ষুদ্র, বড়জোর ২ বাই ৩ মিটার, একটি খাট, নড়বড়ে কাঠের ডেস্ক, সেন্ট্রাল হিটিং দূরের কথা একটা ইলেকট্রিক হিটার টিম টিম করে জ্বলে ঘরের কোণে, বাথরুম ভাগ করে নিতে হয় সেই ফ্লোরের বালিকাদের সঙ্গে, অন্য ফ্লোরে ছেলেরা সেই একই ভাগ বাঁটোয়ারা করে। তার দুখ ভরি কাহানিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আমার বাবার কাছে শোনা ‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’ আপ্ত বাক্যটির দুর্বল ইংরেজি অনুবাদ শুনিয়ে লন্ডন ফেরত এসেছি। 

    বিলিতি সিনেমায় যে ক্যাম্পাস লাইফের চেহারা দেখা যায়, অক্সফোর্ড কেমব্রিজে সে অর্থে কোন ক্যাম্পাস হয়তো দেখা যায় না। কারণ প্রতিটি কলেজের নিজস্ব গ্রাউন্ড আছে, কিছু বড়ো কলেজে যেমন নিউ কলেজ, মদালেন, সমারভিল বাদে কারোই তেমন পেল্লায় উঠোন নেই। মায়া বলে বোদলেয়ার লাইব্রেরির প্রাঙ্গণই অক্সফোর্ডের আসল ক্যাম্পাস, যেখানে সবার সাথে সবার দেখা হয়। 


    নিউ কলেজ


    সে লাইফটা টা কি রকম? উঁকি ঝুঁকি মেরে কি দেখা যায়? পিতা মাতা কি কেবল তিন টার্মের ফি, হোস্টেলের খরচা মিটিয়েই খালাস? 

    ডাবলিনের কেন্দ্রস্থল, স্টিফেন্স গ্রিনের অদূরে দেশের প্রাচীনতম বিদ্যায়তন ট্রিনিটি কলেজের ক্যাম্পাসটি বিশাল, সেখানে একটি কলেজ। আমার মতন মানুষের অহেতুক কৌতূহল মেটানোর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি সুবন্দোবস্ত করেছেন। জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাস কিছু দক্ষিণার বিনিময়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে রাত্রিবাস করা যায়, রীতিমত বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, যার নামই হল ফুল আইরিশ ব্রেকফাস্ট (ডিম, সসেজ, মাশরুম, টমেটো, ব্ল্যাক পুডিং, প্রচুর আলু এমনকি আলুর পিঠে বা প্যানকেক)! জানলা খুললেই সবুজ লন, পাথর বাঁধানো চত্বর, ট্রিনিটি কলেজের নানান ফ্যাকাল্টির ঐতিহাসিক বাড়ি, বেল টাওয়ার (কাম্পানিলে)। মনে হয় এই বুঝি ঘণ্টা পড়বে, পণ্ডিত মশায়ের ক্লাস, নর, নরৌ, নরাঃ। 

    ট্রিনিটি কলেজের শয়ন কক্ষ



    গরমের ছুটিতে সব ছাত্রছাত্রী ঘর শূন্য করে অন্তর্হিত হয় না। ক্যাম্পাস জীবনের কিছু অংশ সচল থাকে, তার অভিজ্ঞতাই বা কম কি? এ জন্মে কোন ইউরোপীয় বিদ্যায়তনের বেঞ্চিতে বসা হল না, কিন্তু সেই আবহাওয়ায় নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ তো পাওয়া গেলো! জানি না ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের দেখাদেখি কিনা, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের একাধিক কলেজে ছুটির সময়ে টুরিস্টরা রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়েছে, কোন কোন কলেজে সারা বছর। তবে ট্রিনিটি সহ সর্বত্র আইন হলো থাকা যাবে এক খেপে দিন কয়েকের জন্য মাত্র। ধরুন আপনার মেয়ে সেথায় পড়ছে, তার ওপরে নজর রাখার জন্য আপনি কলেজের একান্তে একটি কামরা ভাড়া নিয়ে সারা বছর বাস করতে পারেন না।

    গত দুই দশকে ডাবলিনের বাড়িঘরের দাম থেকে হোটেলের ভাড়া সবই বেড়েছে দুর্বার গতিতে – শেলবোর্ন হোটেলে রাত্রিবাসের ব্যয় এখন অন্তত বিশ হাজার টাকা, তাও অফ সিজনে। ট্রিনিটি কলেজের সাদাসিধে ঘরে নিদ্রা ও প্রাতরাশের দাম আট থেকে দশ হাজার। আরেকটা লাভ হলো হাউস মাস্টার বা কনসিয়ার্জের কাছে নানান গল্প শোনা- ডাবলিনের যুবক অস্কার ওয়াইল্ড কোন ঘরে ক্লাস করেছেন বা ড্রাকুলা স্রষ্টা ব্র্যাম স্টোকার কোন খানে বসে মদ্যপান করতেন, তার সঙ্গে কিছু রীতি রেওয়াজ, যেমন ট্রিনিটি কলেজে পরীক্ষা দেবার সময়ে ছাত্র ছাত্রীরা মগজে শান দেবার জন্য এক গ্লাস ওয়াইন চাইবার অধিকার রাখেন, যেমন কলেজ ক্যাম্পাসের মাঝের বেল টাওয়ারের নিচ দিয়ে হাঁটলে সামনের পরীক্ষায় নির্ঘাত ফেল। আইরিশদের মতন বাক্যবাগীশ দরবারি মানুষ পাওয়া ভার, তায় টুরিস্ট পেলে তো রক্ষে নেই।*

    ক্যাম্পানিল বেল টাওয়ার, ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন



    কেবলমাত্র অতিথিদের রাত্রিবাসের সুযোগ দেওয়া নয়, ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজ আরও কিছু বিষয়ে অক্সফোর্ড কেমব্রিজকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। 

    আমাদের চন্দ্রমুখী বসু এবং কাদম্বিনী গাঙ্গুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট, তাঁরা ডিগ্রি হাতে পেলেন ১৮৮৩ সালে। কানাডা এবং নিউজিলানডের দু জনকে ধরলে এঁরাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় এবং চতুর্থ ডিগ্রিধারী গ্র্যাজুয়েট। 

    ১৫৯৩ সালে স্থাপিত ট্রিনিটি কলেজ মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে ১৯০৪ সালে, পরীক্ষা পাস করলে ডিগ্রি দিয়েছে ঘটা করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় নশো বছর বাদে মহিলারা পাঠাভ্যাসের অধিকার পান কিন্তু ডিগ্রি নয়। সে কাগজটি প্রথম দেওয়া হয় ১৯২০ সালে। এ বিষয়ে কেমব্রিজ আরও প্রায় তিন দশক পিছিয়ে, সেখানে মহিলারা প্রথম ডিগ্রি পেয়েছেন এই মাত্তর ১৯৪৮ সালে। পরে এক সময়ে দুই স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেক জেগে ওঠে, আগে যারা পাঠক্রম সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের জানানো হয় ইউনিভার্সিটি অফিসে এসে তাঁরা ডিগ্রিটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন। একমাত্র মুশকিল ছিল এই যে তাঁদের অনেকেই তখন আর বেঁচে নেই। 

    ট্রিনিটি কলেজ

    ধর্ম বনাম বিদ্যা

    এক রাজা তাঁর বউকে বিদেয় দিয়ে অন্য মহিলাকে বিবাহ করতে চাইলেন। ধর্মগুরু বললেন, ঈশ্বরের সামনে আপনারা একে অপরকে জীবন সাথি হিসেবে বেছে নিয়েছেন, মৃত্যু বই কেউ কারো থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না। রাজা রুষ্ট হয়ে বললেন আপনি যদি সম্মতি না দেন, তবে থাকুন আপনার পাড়ায় ধর্মগুরু হয়ে। খ্রিস্টকে আমি মানি, মানবো, কিন্তু তাঁর বন্দনার জন্যে আমি দেশে আলাদা গিরজে খুলবো, সেখানকার পুরুত আমি বেছে নেবো, সে আমার কথা মতো কাজ করবে। আর এই যে এতদিন আমার দেশের গ্রামে গঞ্জে প্রভুর নামে যতো পূজো পার্বণী সিধে আপনার সিন্দুকে ঢুকত, সেটাও বন্ধ হবে।

    ধর্মগুরু তৎক্ষণাৎ রাজাকে ধর্মচ্যুত ঘোষণা করলেন। রাজা তাঁকে উপেক্ষা করে নিজের গিরজেয় সেই একই প্রভু খ্রিস্টের নাম নিয়ে পুনর্বিবাহ করলেন। 

    রাজা ইংল্যান্ডের টিউডর রাজবংশের কুলতিলক অষ্টম হেনরি, পোপ সপ্তম ক্লেমেন্ট। সাল ১৫৩৪। 

    পোপের আসন ইতিমধ্যেই টলমলো, মার্টিন লুথার নামের এক জার্মান সাধু ভিটেনবার্গ গিরজের দরোজায় ৯৫টি ইস্তেহার সেঁটে বলেছেন টাকা নিয়ে পুণ্য বিলোনোর ধান্দা বন্ধ করুন, ধর্মগুরু। লুথার না হয় এক কৌপীন পরিহিত সাধু মাত্র কিন্তু হেনরি একটা দেশের রাজা, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া শক্ত। অচিরেই হেনরি নেমে পড়লেন ঝাড়ে বংশে ক্যাথলিক উচ্ছেদ এবং তাঁদের মঠ মন্দির ধ্বংস প্রকল্পে। এ নিয়ে আলোচনা বিশেষ হয় না এ দেশে কিন্তু ইতিহাস বলে মাত্র চার বছরের মধ্যে হেনরির আদেশে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও আয়ারল্যান্ডে প্রায় এক হাজার ক্যাথলিক মঠ ধ্বংস করা হয়েছিল; একই প্রভু, অর্চনার স্টাইল আলাদা, বুকে ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে ফাদার, দি সন অ্যান্ড দি হোলি ঘোস্ট বলে ক্রুশ চিহ্ন আঁকা বন্ধ। 

    ইংরেজের সদ্য কবলিত উপনিবেশ, পশ্চিম ইউরোপের সর্ব প্রথম খ্রিস্ট অনুগামী, হাজার বছরের ক্যাথলিক দেশ আয়ারল্যান্ডে পরের পর ফরমান জারি হলো – দেশের রাজা ক্যাথলিক বিরোধী; জমি জমার মালিক হবেন প্রটেস্ট্যান্ট লর্ড কাউন্ট, তাঁরাই ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন আইরিশ পার্লামেন্ট, পোপ ভক্ত আইরিশরা থাকুন চাষের কাজ কর্ম নিয়ে। ডাবলিন শহরে অগাস্টিন সাধুদের মঠ অল হ্যালোসকে ভেঙ্গে দিয়ে তৈরি হলো একটি উচ্চশিক্ষার বিদ্যায়তন, তার প্রথম অধ্যক্ষ কেমব্রিজ ট্রিনিটি কলেজের অ্যাডাম লফটাস, তিনি নাম দিলেন তাঁর আলমা ম্যাটারের সঙ্গে মিলিয়ে, কলেজ অফ দি হোলি অ্যান্ড আনডিভাইডেড ট্রিনিটি অফ কুইন এলিজাবেথ, সংক্ষেপে ট্রিনিটি কলেজ। ডাবলিন ইউনিভার্সিটির অধীনে একমাত্র কলেজ। 

    শিক্ষায়তনের দ্বার তো খোলা থাকবে সকলের জন্য? সেখানে ধর্মের কথা ওঠে কেন? 

    আমি বরানগরে শ্রী রামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দের অনুসারী নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরে পড়েছি, হোস্টেলে থাকার সময় সন্ধ্যে ছটা বাজলে ‘খণ্ডন ভববন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়’ সাম গীতিতে ঠোঁট মিলিয়েছি। তারপর এলাম চার্চ অফ স্কটল্যান্ড প্রভাবিত কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। মেন হলে বাইবেলের নানান ছবি বাঁধানো ছিলো, প্রভুকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে বন্দনা করার প্রশ্ন ছিলো না। আমার ধর্ম কি, অন্য ধর্ম হলে সে মঠের প্রধানের কাছে এ কলেজে পাঠের অনুমতি নিয়েছি কিনা, কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এ সব নিয়ে কোন জবাবদিহি করতে হয়নি।

    আয়ারল্যান্ড স্বাধীন হয়েছে ১৯২২ সালে, প্রথমে আইরিশ ফ্রি ষ্টেট, তারপরে ১৯৪৯ সালে রিপাবলিক (নিজেকে রিপাবলিক ঘোষণা করার অপরাধে আয়ারল্যান্ডকে কমনওয়েলথ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা আজও এর সদস্য নয়) তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মের এই বেড়া বন্ধন তো উঠে যাবার কথা? সিটি ব্যাঙ্কের রিসার্চ বিভাগের ব্রিজেট র‍্যাটিগান (পরে মুডিজ রেটিং কোম্পানিতে, ফ্রাঙ্কফুর্টে চলে যায়) বলেছিল, আয়ারল্যান্ড এক ধর্মের দুই দলের রণক্ষেত্র! ১৯৭০ সাল অবধি ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হতে গেলে ক্যাথলিক চার্চের অনুমোদন নিতে হতো (ডিসপেনসেশন) এবং কোনো ক্যাথলিকের পক্ষে কলেজের সিনিয়র ফেলো অথবা প্রফেসর হওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। আমার দফতরের এক সহ কর্মী এডমন্ড ম্যাকগুইরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলাম, তার মতে ঐ ডিসপেনসেশন পাওয়াটা ছিল জরুরি কিন্তু পাওয়া যেত সহজেই। মেসেজটা হলো, মনে রেখো অন্য ধর্মের প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাচ্ছ। এই আলো আঁধারিটা থেকেই যায়, যেমন আইরিশ পতাকা- তার তিনটি স্ট্রাইপে তিনটি রং – বাঁদিকে সবুজ, ক্যাথলিক এবং গেলিক ঐতিহ্যের প্রতীক, ডান পাশে অরেঞ্জ, প্রটেস্ট্যান্টদের প্রতীক, মধ্যিখানে সাদা, এই দুই লড়াকু জনতার মাঝে শান্তির লক্ষ্মণ রেখা! 
     


    আইরিশ পতাকা

     

    ধর্ম বিবাদে আয়ারল্যান্ড ভাগ হয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডে গেলে তার আধুনিকতম চেহারা দেখা যায়, সে প্রসঙ্গ বারান্তরে। 

    গিনেস: ঘন কালো বিয়ারের বিশ্ববিজয় 

    দেশে থাকতে ট্রামে পাঞ্জাবি কন্ডাক্টর দেখি নি, ওয়াইন কখনো চোখে বা চেখে দেখি নি। সোনালি রঙের বিয়ার দেখেছি, তার অন্য রঙ হতে পারে জানা ছিল না। ফ্রাঙ্কফুর্টের এক আইরিশ পাবে প্রথম পরিচয় হলো যে কৃষ্ণবর্ণ বিয়ারের সঙ্গে তার নাম গিনেস, আর জানতাম গিনেস বুক অফ রেকর্ডস, যেটি এক সময়ে লন্ডনের গিনেস কোম্পানি প্রতি বছর আমাদের সিটি ব্যাঙ্কে ভেট দিতেন। 
     

    কৃষ্ণবর্ণ গিনেস বিয়ার


    মধ্যযুগের ডাবলিন ছিল দেওয়াল ঘেরা শহর, তার পশ্চিম দিকে, সেন্ট প্যাট্রিক গিরজে পেরিয়ে যে বিস্তৃত অঞ্চল আমরা এখন দেখি, সেই পাড়ার নাম ‘দি লিবার্টিজ’, আক্ষরিক অর্থে আইন এবং কর ব্যবস্থায় তাদের ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। ডাবলিন শহরের মেয়র বা ট্যাক্স কালেক্টর এখানে এসে হম্বিতম্বি করতে পারতেন না। আজ সেটি ডাবলিনের অংশ এবং সেখানকার অধিবাসীরা একই ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। সেই লিবার্টিজের সেন্ট জেমস গেটে একটি আদ্যিকালের ছোট ব্রুয়ারি ছিল। ১৭৫৯ সালে, পলাশীর যুদ্ধের দু বছর বাদে আর্থার গিনেস সেটির লিজ নিলেন, বার্ষিক দেয় মাত্র ৪৫ পাউন্ড। আমরা ৯৯ বছরের (উদাহরণ চিনের কাছ থেকে ব্রিটেনের নেওয়া হংকং লিজ) অথবা ৯৯৯ বছরের লিজ (উদাহরণ অনেক তবে হাতের কাছে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেস ফুটবল মাঠ) দেখেছি। কিন্তু আর্থার গিনেস সেই ব্রুয়ারি লিজ নিয়েছিলেন ৯০০০ বছরের কড়ারে যার তুলনা অর্থের বা ব্যাঙ্কিং-এর ইতিহাসে নেই। ব্যাঙ্কিং বিদ্যার ট্রেনিং ক্লাসে এটির উল্লেখ করা হয়ে থাকে - এখানে কার কেরামতি বেশি? লেসর (যিনি লিজ দিলেন) অর্থাৎ দি লিবার্টিজ কাউন্সিল যারা দীর্ঘ মেয়াদে একটি আয় নিশ্চিত করলেন, না লেসি, (যিনি লিজ নিলেন) আর্থার গিনেস যিনি অত্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদে কিন্তু স্বল্প ব্যয়ে এটির দখল নিলেন? পরবর্তী কালে গিনেস অবশ্য এই লিজটি কিনে নিয়েছিলেন, ততদিনে (১৮৮৬) গিনেস পৃথিবীর বৃহত্তম ব্রুয়ারি। 

    গিনেস প্রথমে বানাতেন আধা সোনালি রঙের পেল এল (লন্ডনের পাবে ইন্ডিয়া পেল এল আজও খুব চালু)। সেই সময়ে ব্রিটিশ জাহাজ দুনিয়া দখলের অভিযানে চলেছে, লম্বা সফরে খারাপ হয় না এমন বিয়ারের তল্লাশ করলেন আর্থার গিনেস- তার ফল হল ঘন কালো বিয়ার, স্টাউট বা পোর্টার বিয়ার, আয়ু অনেক বেশি। এর বিক্রি এত বেড়ে যায় যে বিগত দু শো বছরে গিনেস কোম্পানি আর কখনো অন্য কোন প্রকারের বিয়ার বানান নি। 

    সেন্ট জেমস গেট, গিনেস ব্রুয়ারি



    গিনেস ব্রুয়ারির গেট পেরোনোর সময়ে ডাবলিনের হপ অন হপ অফ বাসে টুর গাইড একেবারে পোকার ফেস করে বলেন, ‘এই দেখুন বাঁ দিকে আয়ারল্যান্ডের বৃহত্তম ব্রুয়ারি এবং তার উলটো দিকে ডাবলিনের সবচেয়ে বড়ো পাগলা গারদ। এই দুটোর মধ্যে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে ট্রিনিটি কলেজে কয়েকশ বছর যাবত গবেষণা চলছে’। ** 

    গিনেসের সঙ্গে সরকারি সাক্ষাৎ হলো একদিন সকালে, ১৭ই মার্চ; ডাবলিনে সেন্ট জেমস গেটের ব্রুয়ারির আট তলায়, সেই বাড়িতে প্রস্তুত হয় এই পানীয়। উপলক্ষ কোন ব্যক্তিগত বাসনা নয়, নিতান্তই ব্যাঙ্কের কাজ; আমাদের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সহ আরও কয়েকটি ব্যাঙ্ক মিলে আমরা একটি ঋণের আয়োজন করেছিলাম, আজ তার দলিল দস্তাবেজে স্বাক্ষরের দিন, চলতি কথায় লোন সাইনিং সেরিমনি। ঋণ গ্রহীতার নাম র‍্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক, জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রশ্ন উঠতেই পারে একটি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাঙ্কের ঋণের সঙ্গে ডাবলিন এবং গিনেসের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে, যেখানে কোনো আইরিশ ব্যাঙ্ক এই ঋণে অংশ অবধি নেয় নি।

    ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং-এর বাজারে লোন সাইনিং সেরিমনি আদতে ঋণ গ্রহীতার পক্ষ থেকে ঋণদাতাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি অনুষ্ঠান, বাংলা নববর্ষে খদ্দেরের মুখ মিষ্টি করানোর ইউরোপীয় সংস্করণ। একত্র বসে দীয়তাং, ভুজ্যতাং! তার আসর বসেছে নানান মঞ্চে, কখনো কোন গ্রিক দ্বীপে, তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে, প্যারিসের প্লাস দে লা কনকর্ডে কিন্তু সে ক্ষেত্রে সেই দেশের এক বা একাধিক ব্যাঙ্কের ঋণ গ্রহীতার সম্পর্ক ছিল। এখানে কী? 

    সুধী, এর উত্তর কোন ব্যাঙ্কিং বিধি বা আইরিশ নিয়মাবলীর ভেতরে নিহিত ছিল না 

    অজুহাতের নাম রাগবি! দিনটি ১৭ই মার্চ, যেদিন বিশ্ব জুড়ে তাবৎ আইরিশ বোমভোলা হয়ে পথে ঘাটে বেরিয়ে পড়ে, আয়ারল্যান্ডের পেট্রন সেন্ট প্যাট্রিকস ডে! আর ঠিক সেদিন দুপুরে আইরিশ রাগবির পবিত্র ভূমি ল্যান্সডাউন রোডে খেলা আছে। 

    ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মুক্ত নির্বাচন হলো, নেলসন ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতি। সে বছরেই সিটি ব্যাঙ্ক থেকে আমরা এই নতুন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম আন্তর্জাতিক ঋণ সংগ্রহের বাজারে নামি, যাকে বলে টেস্টিং দি মার্কেট। আমাদের প্রথম ঋণ গ্রহীতা র‍্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক, ছ মাসের জন্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার জোগাড় করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় সে যাবত আমার যাওয়ার কোন প্রশ্ন ছিল না, এখন দ্বার খুলে গেছে; ইতিহাসকে আপাতত শিকেয় তুলে দেশটা ও মানুষদের চেনার চেষ্টা করেছি। নিঃসন্দেহে সাদা দক্ষিণ আফ্রিকাকে একত্রিত এবং উত্তাল করেছে রাগবি, দ্বিতীয় স্থানে ছিল ক্রিকেট। 

    র‍্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্কের ডাবলিন শাখার অধ্যক্ষ পিটার রিড ফোনে বলেছিল, যদি তোমাদের সম্মতি থাকে আমরা ঐ লোন সাইনিংটা ১৭ মার্চ ডাবলিনে গিনেস ব্রুয়ারিতে করতে চাই, ওইদিনে সাউথ আফ্রিকা বনাম আয়ারল্যান্ডের রাগবি ম্যাচও আছে, ল্যান্সডাউন রোড পনেরো মিনিটের পথ! 

    সেন্ট প্যাট্রিকস ডে’ র ডাবলিন সকলের কাছেই বিরাট আকর্ষণ – সেখানে যেতে আমাদের সহযোগী কোন ইউরোপীয় বা লন্ডনে অধিষ্ঠিত এশিয়ান আমেরিকান ব্যাঙ্কের আপত্তি হবে না জানি তবু আমি লজিস্টিক্সটা বোঝার চেষ্টা করলাম। লোন সাইনিং সাধারণত হয় দুপুরে, লাঞ্চের সঙ্গে অথবা বিকেলবেলা, তারপরে ককটেলের আয়োজন থাকে। এই রাগবি ম্যাচ শুরু হবে তিনটেয়, বিরতি সহ দেড় ঘণ্টা বাদে শেষ। দল বেঁধে রাগবি ম্যাচ দেখতে গেলে খুব আর্লি লাঞ্চ করতে হয়।

    ম্যাচের পরে? অসম্ভব। খেলার মাঝে এত বিয়ারের বন্যা বইবে যে ফাইনাল হুইসেলের পরে আমাদের কলম ধরার ক্ষমতাই লোপ পাবে। তাহলে সই সাবুদের আয়োজনটা হবে কখন?

    পিটার বললে, ব্রেকফাস্টে। 

    তাঁর হিট করা বলটি কোর্টের বাইরে পড়েছে, আম্পায়ার আউট কল করেছেন। মানতে নারাজ প্রখ্যাত টেনিস প্লেয়ার জন ম্যাকেনরো। অত্যন্ত অবিশ্বাসের সঙ্গে আম্পায়ারের দিকে চেয়ে করুণ কণ্ঠে বলতেন, ইউ কান্ট পসিবলি বি সিরিয়াস! 

    পিটারকে বললাম, বিশ বছরে অনেক লোন সাইনিং করেছি কিন্তু এ যে সমস্ত প্রচলিত ধারার বাইরে! সকাল আটটার সময়ে উকিল, দলিল নিয়ে গিনেস ব্রুয়ারিতে লোন সাইনিং! আমার প্রভু ফিলিপ ক্র্যাকনেলকে মানিয়ে নেব কিন্তু অন্য ব্যাঙ্কারদের কি ভাবে বোঝাই? 

    পিটার বললে, ক্যান দে নট বি ব্রাইবড? ল্যান্সডাউন পার্কে ভি আই পি বক্সের টিকিট আছে সবার জন্য। 

    রাগবির মাঠে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হলো। উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড দুটি আলাদা দেশ, তাদের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত আলাদা কিন্তু যে আয়ারল্যান্ড টিম রাগবির মাঠে নামলো, সেটি এক সম্মিলিত দেশ, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড টিমের পরনে একই রঙের জার্সি! ডাবলিনের সেই ম্যাচে বেজেছে দুটি গান – আইরিশ জাতীয় সঙ্গীত, সোলজার্স সং এবং আইরিশ রাগবি অ্যানথেম, আয়ারল্যান্ড’স কল। 

    এক দেশ এক প্রাণ - রাগবি !



    যে টিম খেললো সেটি আয়ারল্যান্ড। একটাই দেশ।

    ধর্মের নামে দেশ বিভক্ত, কিন্তু রাগবির নামে আজ এইখানে, এই মাঠে গলা জড়িয়ে দাঁড়ালেন পনেরো জন। আয়ারল্যান্ডের ডাকে। নিজের দেশের কথা মনে করে হয়তো অকারণেই চোখে জল এলো। 

    প্রায় দেড় দশক কেটে গেছে, পিটার রিড র‍্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়ে আয়ারল্যান্ডের স্থায়ী বাসিন্দা এখন, সেদিনের অন্য ব্যাঙ্কার সঙ্গীরাও কে কোথায়, গিনেস বিক্রি হয়ে গিয়েছে, নাম বজায় রইল কিন্তু সে পরিবারের কারো কোন শেয়ার নেই, কোনো সদস্য বোর্ডে বসেন না, ল্যান্সডাউন রোডের স্টেডিয়ামের নতুন নাম হয়েছে আভিভা। মনে থেকে গেছে সেই দিনটা – মার্চের সকাল, বাতাসে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, আটটার সময়ে লিফটে গিনেসের বাড়ির আট তলায় উঠেছি, বিশাল কাঁচের জানলা দিয়ে দেখা যায় ডাবলিন শহর ও দূরে পাহাড়ের রেখা। ষোলো জনের জন্য সাজানো টেবিলে গিনেসের সারি! হলফ করে বলতে পারি ব্রেকফাস্টে কোন দিন বিয়ার খাই নি, তার প্রভাবে সাত সকালে ব্যাঙ্কের কোন কাগজে দস্তখৎ করি নি; সেই একবার মাত্র, নিতান্ত কর্মরক্ষার তাগিদে!

    ডাবলিনের সেই সকালটা খুব মনে আছে, রাগবি ম্যাচের খানিকটা, কিন্তু বাকি দিনটা নয়! 

    পুনশ্চ:

    এক 

    আমরা যেখানে এককালে ব্রেকফাস্ট করেছিলাম তার ছাদের ওপরে গিনেসের নতুন মালিকরা বানিয়েছেন ডাবলিনের নবতম আকর্ষণ, গ্র্যাভিটি বার। সেখান থেকে পাবেন একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ! গিনেস স্টোর হাউস টুর বুক করা যায়। সাত তলা জুড়ে গিনেসের বিশাল কর্মকাণ্ড একবার দেখে নেবেন, এরা ফ্রি বিয়ার দেবে বটে কিন্তু সেটা অ্যালকোহল বর্জিত।*** অতএব লিফট ধরে চলে যাবেন গ্র্যাভিটি বারে, সেখানে প্রকৃত বিয়ার মেলে তবে তার কল্যাণে যদি আপনার মনে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অবহেলা করার কোন আকস্মিক বাসনা জেগে ওঠে, সেটির প্রতিরোধের জন্য চতুর্দিকে শক্ত কাচের জানলা আঁটা আছে। 

    গ্র্যাভিটি বার



    দুই 

    ডাবলিনের ম্যাচে আইরিশ জাতীয় সঙ্গীতে (সোলজার’স সং) উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্লেয়ারদের কণ্ঠ মেলানো আবশ্যিক নয় কারণ তাঁরা সে দেশের নাগরিক নন। আয়ারল্যান্ড’স কল হল সেই সঙ্গীত যেটি দু দেশের দুই ধর্মের খেলোয়াড় একত্রে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে থাকেন। আইরিশ টিম যখন বিদেশের মাটিতে খেলে তখন কেবলমাত্র রাগবি অ্যানথেমটি বাজে, আয়ারল্যান্ড’স কল। 





    আয়ারল্যান্ড’স কল



    Side by side, we stand like brothers
    One for all and all together
    We will stay united through darker days
    And we’ll be unbeatable forever 
    Ireland, Ireland, together standing tall
    Shoulder to shoulder, we’ll answer Ireland’s call.
    ------

    *ট্রিনিটি কলেজ ওয়েবসাইটে ঘর বুক করতে পারেন। অক্সফোর্ডের অন্তত পাঁচটি কলেজে ইস্টার ও গরমের ছুটিতে বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে। নিজে কখনো থাকি নি তবে লোকেশন মাফিক অক্সফোর্ডে আমার সুপারিশ হলো ক্রাইস্টচার্চ কলেজ, সামনে ক্রাইস্টচার্চ মেডোস, অনতিদূরে টেমস, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড গল্পের গাছতলা! কেমব্রিজে এখন সেন্ট ক্যাথরিন, কুইন্স সহ অনেক কলেজে রাত্রিবাস করা যায়, ওয়েবসাইটে দেখে নেবেন। হোটেলে থাকার চেয়ে ঢের ভালো। 

    **গল্পটা আংশিক সত্য। গিনেস ব্রুয়ারির উলটো দিকে এককালের গ্রেঞ্জগরমান মানসিক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিন। 

    ***এই সুযোগে জানিয়ে রাখি আমস্টারডামের হাইনেকেন টুর বা কোপেনহাগেনের কারলসবার্গ টুরের পরে কিন্তু আসলি শক্তির বিয়ার পাবেন!
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৭ মে ২০২৫ | ১৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ১৭ মে ২০২৫ ১৩:৩০731425
  • গিনেস ব্রিটিশদের বেশ প্রিয়। আমি সাসেক্সে খেয়েছি প্রথম। মনে হল চিলড চিরতার জল। খেতে খেতে ভাল লেগে যায়।
    কেমব্রিজে অনেক কলেজ কনফারেন্স করার জন্য ভাড়া দেয় - বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট থাকার জায়গা দেয়। এর জন্য ব্যক্তিগত ভাবে থাকার আবেদন খুব একটা গৃহীত হয় না।
     
    সব চেয়ে প্রাচীন কলেজ হল পিটার হাউস। ওদের প্রচুর থাকার জায়গা। টার্মের সময় ও খালি পাওয়া যায়। কিন্তু ওদের যথেষ্ট টাকা তাই ভাড়া দেবার কষ্ট স্বীকার করে না। আমার এক পরিচিত চীনা মেয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে একটা ফ্ল্যাটলেট জোগাড় করেছিল। একদিন গিয়ে দেখলাম অনেক ফাঁকা। আমায় ভাড়া দেয় নি। ওদের ওখানে অবশ্য ফেলো'স গেস্ট হয়ে খুব কোজি অভিজাত ঘরে থাকা যায় দু তিন দিন। আমি অনেকবার থেকেছি।
    অক্সফোর্ডে একবার এক ছাত্রীর গেস্ট হয়ে টাকা পয়সা দিয়ে (অনেকদিন আগে তাই তিন পাউন্ড) স্পেশাল ডিনার খেয়েছিলাম। স্টুডেন্ট আর ফ্যাকাল্টির মিলিত ভোজন। অনেক কায়দা কানুন দেখা যায়। 
     
    দুই বিশ্ব বিদ্যালয়ের বেশ কিছু কলেজ লাঞ্চ ডিনার বাইরের লোক কে খেতে দেয়। একটু বেশি দাম নেয়। স্পেশাল ডিনার ও বুক করা যায়। হয়তো কলেজের কোন ফেলোর রেফারেন্স লাগে।
    ডাব্লিনে এরকম আছে কিনা আপনি বলতে পারবেন। আমি কখনো যাই নি।
  • হীরেন সিংহরায় | ১৭ মে ২০২৫ ১৩:৫৪731427
  • কেমব্রিজে Hughes Hall , St Catherine's , Westminster College এ সামারে থাকার জন্য নিয়মিত বিজ্ঞাপন করে UniversityRooms.com ( Hughes Hall এর ভাড়া এখন   ১২০ পাউনড )  সাইটে । Christ's College  আলাদা বিজ্ঞাপন করছে । আমার পরিচিতজনেরা থেকে এসেছেন। UniversityRooms.Com অক্সফোর্ডের কলেজের বুকিং নেয় , তার মধ্যে প্রধান পেমব্রোক, ক্রাইস্ট চার্চ , সেন্ট হিউস, লিঙ্কন , মদলেন ( Magdalen)।  অবশ্যই সামারে বা ইস্টারের ছুটিতে ।  
  • জয় | ১৭ মে ২০২৫ ১৫:২০731429
  • কি সমাপতন! গত হপ্তায় তো কেম্ব্রিজে রবিনসন কলেজ আর তারপর সেন্টার অফ ম‍্যাথামেটিক‍্যাল সায়েন্স গেছিলাম। জারার উইনি ওপেন ডে তে। সে তো আঁক কষে টষে পুরো ফিদা। আরো ফিদা অ‍্যাকোমডেশন দেখে! দুগ্গা দুগ্গা! আমারই কেমন নালন্দা নালন্দা লাগছিল। শাহীন মুখ ঝামটা দিয়ে বলল কলোনিয়াল হ‍্যাংওভারের আঁশটে গন্ধ! 
    সরোজিনী নাইডু আর সেই সময়ের কেম্ব্রিজে মেয়েদের ডিগ্রি না দেওয়া নিয়ে  চমৎকার গল্প আছে! হীরেনদা, আপনার হাতে খুলবে দারুন! লিখুন না  প্লিজ! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন