এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চরকি

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ৪৪ বার পঠিত
  • সে একটা কাঠবেড়ালি। তার নাম চরকি। আমাদের চারতলার ফ্ল্যাটে মাঝেমাঝেই ঢুকে পড়ে। পাইপ বেয়ে বারান্দায় ঢোকে এবং সেখান থেকে ঘরে। এক দিন বিস্কিট রাখার প্লাস্টিকের কৌটোর ঢাকনা ফুটে করে দিচ্ছিল। আমি রান্নাঘরে ছিলাম। কৌটোটা ছিল বাইরের ঘরে। ক্রমাগত ঠকঠক শব্দ শুনে এ ভরে এসে দেখি ঢাকনাটায় অনেকগুলো ফুটো করে ফেলেছে। আমাকে দেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। দৌড়নোর কি গতি! গতির জন্যই আমি নাম দিয়েছি চরকি।

    আশেপাশে অনেক গাছ ছিল আগে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটা বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে । এমন কিছু লোক থাকে বড় গাছ দেখলেই কেটে ফেলার জন্য যাদের হাত নিশপিশ করে। অথচ এই গাছগুলোর জন্য তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ক্ষতি হয় এমন নয়। এই সমস্ত লোক ভারি শয়তান, এদের সর্বনাশ হো'ক। সব সময় গাছ কাটতে না পারলেও গাছের ডাল ছেঁটে ফেলার জন্য এরা করপোরেশনে তদ্বির করে। আমাদের ব্লকের বাঁ দিকটায় রাস্তার ওপর কি অপূর্ব একটা গুলমোহর গাছ ছিল! ডার মস্ত ডালপালাতগুলো আমাদের বারান্দার কাছাকাছি চলে আসত। কত কত পাখি রাতে ঘাড় গুঁজে তার ডালগুলোয় ঘুমতো। ডাল কেটে কেটে সুপরিকল্পিতভাবে সেই গাছটাকে মেরে ফেলা হল। কত কত পাখি বেঘর হয়ে গেল।

    মনে আছে একেক দিন দুপুরে একটা হলুদ পাখি গাছটার একটা হাল্কা ডালে এসে বসত। তারপর কখনো ডালটার ওপরে বসে দোল খেত, কখনো বা ডালটা ধরে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে মহানন্দে দোল খেত। বারান্দা থেকে আমি দেখতাম। কি ভালোই না লাগত! একটা গাছ মানে পরিবেশের একটা স্তম্ভ, চোখেরও স্বস্তি কিন্তু অনুভূতিবিহীন মানুষ তা বোঝে কোথায়?

    হয়তো কোনো এক সময় এই গুলমোহর গাছটাতেই চরকির বাবা-মায়ের ঘর ছিল। এখন হয়তো চরকির কোনো স্থায়ী বাসা নেই। আমাদের ব্লকের বাঁ দিকে একটা বটগাছ আছে। সেইখানে ওর বাসা হলেও হতে পারে। এই গাছটাতে চরকি ওর পরিবারের সঙ্গে থাকে কি? ব্লকের পেছন দিকে একটা কদম গাছ আছে। সেটাতে আগে অনেক ফুল ফুটত। আজকাল গাছটায় অত ফুল আসে না। এটারও অনেক ডাল ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এই গাছটাতে কোনো প্রাণী বা পাখির বাসা আছে বলে মনে তো হয় না। আআশেপাশে আরো কয়েকটা গাছ আছে- কৃষ্ণচূড়া এবং নাম না জানা কয়েকটা বড় গাছ। জানি না সেগুলোর কোনটায় ওর বসবাস।

    যাই হোক, চরকি মাঝেমাঝে বারান্দা থেকে সোফায় ওঠে তারপরে চরকির মতো সরে যায়। এক পাশে ছোট্ট একটা সোফায় আমি কখনো কখনো বসে থাকি। এক দিন সোফার থেকে বিদ্যুতের মতো লাফ দিয়ে নেমে কি মনে করে লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠেছিল। উঠেই অবশ্য নেমে গেল। কখনো কখনো মেঝে থেকে লাফ দিয়ে খাটেও ওঠে।

    আমাদের গৃহ সহায়িকা বলে খাবারের অভাব হলে চরকি আমাদের কাছে চলে আসে। এখানে ওখানে দুই খরগোশের ছাড়ানো ছোলা ছড়ানো থাকেই। তবে দুই খরগোশের সঙ্গে ওকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি আমি। অ্যান্ডি চলে গেছে, এখন রয়েছে স্যান্ডি আর ফুকুরো। ভয় লাগে, চরকি যেন কখনো ওদের ক্ষতি না করে দেয়। চিড়িক চিড়িক ডাকে বুঝতে পারি ও এসেছে তবে ঘন ঘন আসে এমন নয়। অনেক দিন না এলে ভয় লাগে। বিপদ হ'ল না তো?

    প্রকৃতি ও প্রাণীদের প্রতি মানুষের মায়াদয়া কমছে কিনা জানি না। সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না তা ঠিক। তবে খুব বেশি দরদও তো টের পাই না, যত দরদ সবই ফেসবুকে। এত বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে শুধু প্রার্থনা, এই শহরের সমস্ত চরকি সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক।

    শুভশ্রী রায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন