এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায়  আবার ২৯ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২৫ বার পঠিত
  • পূর্ব- পশ্চিম ৮

    ঘটি বাটি পুকুর দালান বাজার দোকান

    ব্রিটিশ সৈন্যের  ইউনিফর্ম পরে আরব ভূমি থেকে অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্য উচ্ছেদের লড়াই করেছিলেন  টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স ;  তিনি ভেবেছিলেন ইংরেজের সহায়তায় কয়েকশ বছরের পরাধীনতার শেষে আরব শক্তি তাদের বাসভূমিতে হারানো গৌরবের স্থানটি আবার অধিকার করবে;  দামাসকাস বিজয়ী বাহিনীর শীর্ষে ছিল আরব সেনা । যুদ্ধ বিজয়ের সংবাদ নিয়ে তিনি রাজা ফয়জলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন;  রাজা বললেন তরুণ, তোমার কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবার তুমি ফিরে যাও ইংল্যান্ডের সবুজ সারেতে , এবার বাকিটা আমাদের , বৃদ্ধদের হাতে ছেড়ে দাও । ছবির শেষ দৃশ্যে টি ই লরেন্স , লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া , উটের ওপর সওয়ারি কিছু আরব সৈন্যকে পাশ কাটিয়ে মোটর  বাইকের ধুলো উড়িয়ে চলে যান সুয়েজ বন্দর  থেকে ইংল্যান্ডের জাহাজ ধরতে। তিনি জানেন আরব আবার বঞ্চিত হবে , ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার ইতিমধ্যেই আরব দেশগুলির ভবিষ্যৎ মালিকানা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন- ফ্রান্স পাবে লেবানন জর্ডান সিরিয়া , ইংরেজের ভাগে ইরাক কুয়াইয়েত প্যালেস্টাইন । সবার অজান্তে  সাইকস/পিকো প্ল্যান মাফিক তুর্কি শাসনের স্থান নিলো ব্রিটিশ/ ফরাসি, আরবের কপালে  ঢু ঢু ।

    ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের একদিন  উত্তাল যৌবন জল তরঙ্গ  লৌহ যবনিকা তুচ্ছ করে বার্লিন দেয়ালের বাধা ভেঙ্গে , ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ, গ্লিনিকে সেতু পেরিয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতার আনন্দমেলায়  পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনকে একটি বিশাল মিলিত জনসমুদ্রে একত্রিত করেছিল । তাঁরা কি জানতেন তরুণের উচ্ছ্বাস , যুবকের শৌর্যের সেটি শেষ সন্ধ্যা ছিল ? যুদ্ধে বিজয় সম্পন্ন -এবার  সন্ধির বানী । এবার আলোচনায় বসবেন দুই পক্ষের বিচক্ষণ  মানুষেরা ।

    পূর্ব জার্মানি, ডয়চে ডেমোক্রাটিশে  রেপুবলিক  ( ডে ডে এর )  একটি আলাদা দেশ  –  বার্লিন  সহ পাঁচটি প্রদেশে  ( ব্রান্ডেনবুর্গ,মেকলেনবুর্গ -ফোরপমারন , জাকসেন-আনহালট , জাকসেন , থুরিঙ্গেন ), বাস করেন দেড় কোটির কিছু বেশি মানুষ , সরকারি মালিকানায় প্রায় হাজার  প্রতিষ্ঠান,  স্টিল মিল থেকে বাবেলসবের্গ ফিল্ম কোম্পানি ; তাদের  সবার সাইনবোর্ডে  লেখা  ফোলকসআইগেনেবেত্রিব , ভি ইবি , জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান (আমাদের দেশে কিছু সাইনবোর্ডে যেমন লেখা থাকে ভারত সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান), জাতীয় আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলার (ভারতের অর্ধেক) । বেকারি নেই ,  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ রাশিয়ানরা ৫০% জার্মান কারখানার যন্ত্রপাতি নিজের দেশে পাচার করা সত্ত্বেও ১৯৮০ সাল নাগাদ মাথা পিছু বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতে  ও শিল্প দক্ষতায় সে দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ গোটা কমিউনিস্ট পূর্ব ইউরোপে নাম্বার ওয়ান। কেউ গৃহহীন ( অবদাখলোস ) নয়, রাস্তায় ভিখিরি নেই , চুরি ডাকাতি , পথে ঘাটে মারপিট শনিবারের সন্ধ্যাবেলায়  মদ্যপ উল্লাস নেই। হয়তো তেমন দ্রুত গতির নয় ,মালিকানা পেতে সময় লাগে কিন্তু মানুষ চড়েন নিজের দেশে তৈরি ত্রাবান্ত, ওয়ারটবুর্গ  গাড়ি।  বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রতি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার ।  অবসর কাটানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির খোঁজ পড়ে না , কর্ম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বা সরকারি হলিডে হোম আছে । খেলাধুলার অজস্র ক্লাব , আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে সরকারের উৎসাহে এবং  অর্থ বিনিয়োগের কল্যাণে  পূর্ব জার্মানি অলিম্পিকে প্রথম পাঁচটি দেশের একটি।
     

     
    ভি ই বি ( ফোলকসআইগেনেবেত্রিব) কার্ল তসাইস ইয়েনা 

    কমিউনিস্ট পূর্ব ইউরোপের এই একমাত্র দেশ যেখানে  সরকারিভাবে স্বীকৃত সাতটা ব্লক পার্টি (  কৃষক , গিরজের পাদ্রি, শ্রমিক ইউনিয়ন,, যুব জনতা, ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাট, সাবানে ধোয়া প্রাক্তন নাৎসিদের ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ) - তারা নির্বাচনে লড়ে, আসন পায় কিন্তু শাসন করে না।  কেননা  সংবিধানে লেখা আছে, সোভিয়েত সমর্থিত সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক একতা দল ( সোতসিয়ালিস্তিশে আইনহাইটস পারতাই ) একমাত্র শাসক দল,  অন্যরা মতামত দিতে পারেন মাত্র।  


     
     
    পূর্ব জার্মান লোকসভা - কমিউনিস্ট ইউরোপের একমাত্র বহুদলীয় পার্লামেন্ট 
     
    পশ্চিম জার্মানি, বুন্দেসরেপুবলিক ডয়েচলানড , মুখ চলতি ভাষায় শুধুই  বুন্দেসরেপুবলিক , অর্থে প্রতিপত্তিতে  ইউরোপের এক নম্বর দেশ , দেড় ট্রিলিয়ন ডলারের জাতীয় আয় , শিক্ষা ফ্রি , কিনডারগারটেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতি নাগরিকের জন্য সুনিশ্চিত ;  কখনো বিমার দরুন সামান্য প্রিমিয়াম দেয়, পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একই সেবা দিতে পারে অধিক অর্থের বিনিময়।  বেকারি নির্মূল হয় নি, ভিখিরি আছে, গৃহহারার সংখ্যা এবং  নানান  ধরনের অপরাধ   ক্রমবর্ধমান ,টেলিভিশনে সবচেয়ে পপুলার সিরিয়ালের নাম ডের কমিসার ( পুলিশ কমিশনার) যিনি নিত্য নতুন অপরাধের আসামি খোঁজেন ।

    মুক্ত  নির্বাচন হয় , বাড়ির জানলা খুলে দেশের চ্যান্সেলরের ও তাঁর চোদ্দ পুরুষের শাপ শাপান্ত করলে পুলিশ আসে না কিন্তু সকলেই জানেন অপ্রকাশ্যে কোন বিগ ব্রাদার সব দেখে যাচ্ছেন।


     
    জার্মানিকে মারক্সিজম মুক্ত করো 
    বার্লিন জো পালাস্ত ১৯৩৩ 

    লাইপৎজিগে বিশাল এক বিশাল জনসভায় পূর্ব জার্মান নেতা ঘোষণা করলেন একশো সাত বছর আগে, ১৪ই মার্চ ১৮৮৩  সালে কার্ল মার্ক্সের মৃত্যু হয়েছিল, আজ আমরা মারক্সিজমের মৃত্যু ঘোষণা করছি জার্মানির মাটিতে ১৪ই মার্চ ১৯৯০ । সেপ্টেম্বরে  দুই  ( দুই জার্মানি ) প্লাস চার ( বিজয়ী শক্তি – আমেরিকা , ব্রিটেন , ফ্রান্স , সোভিয়েত ইউনিয়ন) মস্কো চুক্তিতে সই করলে পূর্ব জার্মানির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিলুপ্ত  হলো।


     
    রোলা দুমা (ফ্রান্স) ডগলাস হার্ড ( ইউ কে) এডভারদ শেভরনাযতসে ( সোভিয়েত ইউনিয়ন) জেমস বেকার (ইউ এস এ ) লোথার দে মাজিয়েরে ( ডি ডি আর ) হান্স-দিত্রিখ গেনশার ( এফ আর জি ) 
     
    মস্কো চুক্তি ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ 
     
    লরেন্স অফ অ্যারাবিয়ার শেষ দৃশ্যে রাজা ফয়জল বলেছিলেন, তরুণ যুদ্ধ জয় করে , বয়স্ক  মানুষেরা সন্ধিচুক্তির খসড়া বানায় ।

    পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে পূর্ব ও পশ্চিমের শীর্ষ নেতারা যথাক্রমে ত্রাবান্ত ও মার্সিডিজ গাড়ি থেকে নেমে বৈঠকে বসলেন।

    পূর্ব জার্মানির নেতা মদরো বললেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চুরমার হয়ে যাওয়া দেশকে গত
    চল্লিশ বছর যাবত অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা  যেখানে নিয়ে এসেছি সেখানে মানুষের দারিদ্র্য নেই।  মানি আমাদের রাজনীতি ছিল অন্য,  তেমনই বিক্রির বাজার , মুদ্রানীতি , প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন সবই আলাদা । জানি পশ্চিমি বাজারি লড়তে গেলে যে পরিমাণ  অর্থ নিবেশ , ইনভেস্টমেন্ট  প্রয়োজন সেটা  আমাদের হাতে নেই ।  আমরা চেষ্টা করেছি জীবনযাত্রার মানকে উন্নত রাখতে, বিদেশি দেনার বোঝা নামিয়ে আনতে।  ফলে ঘাটতি পড়েছে বিনিয়োগে  । পশ্চিম জার্মানির তুলনায় আমরা বাজারি দক্ষতায় পিছিয়ে আছি, পথ পরিবর্তনের কাল এখন , অনেক কিছু শেখার আছে  তবে  আমাদের বিশ্বাস যদি আর্থিক সহায়তা এবং টেকনিকাল সহযোগিতা পাই, ধীরে হলেও আমরা সঠিক নিশানায় পৌঁছুতে  পারি -আপাতত আমাদের এই দুই দেশ চলুক সমান্তরাল রেল লাইনের মতন , থাকুক আমাদের মুদ্রা মার্ক, অবশ্যই বদলে যাবে তার ম্যানেজমেন্ট , ফিস্কাল পলিসি । আমাদের মিলিত উদ্যোগে এই দুটি লাইন একদিন আর সমান্তরাল থাকবে না , মিলে মিশে  এক হবে।   

    পশ্চিম জার্মানির নেতা হেলমুট কোল বললেন,  পাশাপাশি দুটো জার্মানি নয়, আমি চাই একটাই লাইন,  একই শৃঙ্খলা, দুটি দেশ নয়,চাই একটি দেশ – এক জাতি এক প্রাণ একটা ! পুনর্মিলন , রি ইউনিফিকেশান।  একই স্টাইলের ডেমোক্রেসি , বাজারি অর্থনীতি ,ব্যাঙ্কিং  আর সবার আগে, একই মুদ্রা , কারেন্সি ইউনিয়ন !  

    পূর্ব জার্মানি ছিল সোভিয়েত ব্লকের সুপার স্টার , তার মাল বেচেছে পোল্যান্ড বুলগারিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নকে,  শিল্প ব্যবস্থা টিকে ছিল সরকারি সৌজন্যে , পুবের কমিউনিস্ট দেশ গুলির কেনার  ক্ষমতা কমে গেছে।  প্রতিযোগিতা কাকে বলে সেটা কারো জানা নেই ।  দাম বাঁধা, শুল্ক নামক কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে নিজের দেশের শিল্প সুরক্ষিত – গাড়ি বলতে ত্রাবান্ত ( যেমন এক সময়ে আমাদের দেশে গাড়ি বলতে হিন্দ মোটরের অ্যামবাসাডর বা প্রিমিয়ার পদ্মিনী)  শুল্কের বেড়া তুলে দিলে ত্রাবান্ত ভারটবুর্গের বিক্রি শূন্যে পৌঁছুবে , শিল্প সামগ্রী দামের  দিকে দিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে দাঁড়াতে পারবে না মোটেও।  পূর্ব ইউরোপের দুই দেশের মধ্যে অনেক সময়ে কেনা বেচা হয়েছে সরাসরি মুদ্রায় নয়, খাতা কলমে নম্বর ট্রান্সফার করে – বুক এন্ট্রি ।   পুবে হয় নি ইনভেস্টমেন্ট, কল কবজা সুপ্রাচীন। তাদের হয় সংস্কার করতে নয় ভেঙ্গে ফেলতে হবে।

    তবু ক্ষীণ কণ্ঠে পূর্ব জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী ক্রিসটা লুফট   বললেন, প্রয়োজনমত আমরা শিল্পের সংস্কার , চুরমার, নবীকরণ ,বেসরকারিকরণ সম্পন্ন করবো , সেটা আমরা ভালো বুঝবো , কেননা এ গুলো আমাদেরই বানানো। অর্থ সাহায্যের  ভিক্ষাপাত্র হাতে বনের মিটিঙে পৌঁছে ক্রিসটা লুফট , চাইলেন পনেরো বিলিয়ন ডি মার্কের এককালীন অর্থ সাহায্য । সেই প্রথম তিনি পশ্চিমে এসেছেন ; পরে ক্রিসটা লেখেন,  সেদিন মনে হয়েছিল যেন অন্য কোন গ্রহে এসেছি, অফিসের সামনের ফোয়ারায় জল ঝরছে , পালিশ করা মেঝে !  

    নিরাশ হয়ে ফিরলেন। বন সরকারের অর্থমন্ত্রী থেও ভাইগেল বললেন, একটি ফুটো পয়সাও নয় । ইট ইজ মাই ওয়ে অর  হাইওয়ে। আমাদের প্রাথমিক কাজ  অবিলম্বে সমস্ত ফোলকসআইগেনেবেত্রিব ,  জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলির বেসরকারিকরণ,  তাদের বেশির ভাগের যা জীর্ণ দশা , কেউ চট করে কিনবে বলে মনে হয় না । তাই আমরা এখন খুঁটিয়ে দেখব আপনাদের কোন ব্যবসা এখুনি বন্ধ করা উচিত, কোন ব্যবসাকে সারিয়ে সুরিয়ে বেচা যায় , কোনটাকে সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়।  এ থেকে প্রভূত অর্থাগম হবে যা পূর্ব জার্মানির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।  এটি বিশাল কর্ম, কোন সরকারি আমলার কাজ নয়, পশ্চিম জার্মানির শিল্প দুনিয়ার যোগ্যতম লোক এনে আমরা স্থাপনা করবো একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ট্রাস্ট কোম্পানি ( ত্রয়হানডআনস্টালট )- সেটির মালিক সরকার কিন্তু থাকবে বেসরকারি দক্ষ লোকের পরিচালনায় । সম্পূর্ণ স্বাধীনতা সহ,  কোন কারখানা বন্ধ বা কাকে বেচা হবে সে বিষয়ে এমনকি জার্মান চ্যান্সেলরের নয়, ত্রয়হানডের সিদ্ধান্ত ফাইনাল।

    পূর্ব জার্মানির কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের  পঞ্চাশ লক্ষ কর্মীর রুটি রুজি নির্ধারণের দায়িত্ব যার হাতে তুলে দেওয়া হলো সেই ত্রয়হানডআনস্টালটের কর্তা রূপে মঞ্চে আবির্ভূত হলেন ডেটলেফ কারসটেন রোভেডার।

    সাক্ষাৎ  দেখি নি তাঁকে কিন্তু নামটা অচেনা নয় ।

    সাতের দশকে ডর্টমুণ্ডের হোয়েশ হানডেল নামক একটি স্টিল কোম্পানি ভারতে প্রভূত সামগ্রী রপ্তানি করতো।  স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ইস্যু করা লেটার  অফ ক্রেডিটের সঙ্গে এক্সপোর্টের কাগজপত্র নিরীক্ষা করে ফ্রাঙ্কফুর্ট অফিসে আমরা তাদের বিল মেটাতাম।  হর্সট ইওলিতস ছিলেন সেখানে আমাদের সহযোগী – তিনি ফ্রাঙ্কফুর্টে এলেই আমার বস অরটউইন ও আমাকে  শহরের পদচারি এলাকায় টোমাটে নামের একটি পাবে নিয়ে যেতেন এবং অনাবিল পান করাতেন ডরটমুনডার ইউনিয়ন ( ডরটমুনডার আকতশিএন ব্রাউয়ারাই- ডি এ ব পিলস) বিয়ার।  মনে আছে খালি গ্লাস গুলি তিনি সাজিয়ে রাখতেন পাশাপাশি যাতে আমাদের মনে থাকে আজ কটা গেলাস খালি করেছি। হের ইওলিতস  ছিলেন হোয়েশ হানডেল কোম্পানির একেবারে ঘরের ভেতরের লোক , সতেরো বছর বয়েসে অ্যাপ্রেনটিস হয়ে কাজ শুরু করেন । আমার সঙ্গে শেষ দেখা ৪ঠা জুলাই ২০০৬ , সেদিন আমি সপুত্র ডরটমুণ্ডে জার্মানি বনাম ইতালি ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল সেমি ফাইনাল খেলা দেখতে যাই ।

    হের ইওলিতসের কাছে ডেটলেফ কারসটেন রোভেডারের নাম শুনেছিলাম। ১৯৮২/৮৩ সাল নাগাদ হোয়েশ হানডেলের অবস্থা খারাপ; প্রতিবেশী এবং শত্রু ক্রুপ স্টিল তাকে দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে । সি ই ও রোভেডার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কর্মীকে তাড়িয়ে বা ভি আর এস দিয়ে কোম্পানির ব্যাল্যান্স শিটকে পদস্থ করেছিলেন – ১৯৮৩ সালে জার্মানির সবচেয়ে খ্যাতনামা বিজনেস পত্রিকা ম্যানেজার ম্যাগাজিন তাকে সে বছরের সেরা ম্যানেজারের পদক প্রদান করে । হের ইওলিতসের কিসসা মাফিক  রোভেডার অফিসে  এমনই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন চাকরি হারাবার ভয়ে কোন সহ কর্মী তাঁর  সঙ্গে একই লিফটে উঠতে চাইতো না! কখন যে কোন প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর না পেলে কাজ থেকে ছুটি করিয়ে দেবেন। মানুষ ছাঁটাই বিদ্যেয় ইনি আমেরিকার বিখ্যাত কস্ট কাটার জি ই কোম্পানির জ্যাক ওয়েলশের সমগোত্র ছিলেন ।

    দুই জার্মানির মধ্যের বেড়া ভাঙল নভেম্বর ১৯৮৯ । তখনো দেশ আলাদা কিন্তু সীমান্ত বা রক্ষী নেই । ১৯৯০ সালের মার্চে পূর্ব জার্মানির স্বাধীনতা মেনে নিলো চার শক্তি।   পয়লা মে ১৯৯০ চ্যান্সেলর হেলমুট কোল একটি আড়াই মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বললেন, প্রিয় দেশবাসী  আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি পূর্ব জার্মানিতে বাজারি অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে পর  তিন বছরের মধ্যে পূর্ব জার্মানির ছটি অঞ্চল , বার্লিন, মেকলেনবুর্গ ফোরপমারন -পমেরানিয়া -, জাখসেন-আনহালট, জাখসেন, ব্রান্ডেনবুর্গ, থুরিঙ্গের  একটি প্রস্ফুটিত ময়দানে  ( ব্লুহেনডে লানডশাফটেন ) পরিণত হবে* ।

    ফুলের বাগানে চাষ বা চারা দেওয়ার আগেই কারো বাগানে  ফুল ফুটল!  জানুয়ারি ১৯৯০ সালে, পশ্চিম জার্মানির বৃহত্তম বীমা  কোম্পানি আলিয়ান্তস পূর্ব জার্মানির একমাত্র বীমা  প্রতিষ্ঠান স্টাটলিখে ফেরজিখেরুংএর ৫১% অধিগ্রহণ করে ২৭০ মিলিয়ন ডি মার্কের বিনিময়ে ;  তখন তাদের ইস্যু করা পলিসির সংখ্যা তিরিশ লক্ষ।  কোন অকশন, কোন প্রকাশ্য টেন্ডার হয় নি । ঠিক একই ভাবে  ফেব্রুয়ারি মাসে স্টাটসবাঙ্ক ( পূর্ব জার্মান স্টেট ব্যাঙ্ক ) পশ্চিম জার্মান ডয়েচে ব্যাংকের কবলিত হলো ।  এই দু ডিলকে টেক্কা মারে বারলিনার বাঙ্ক ( আমার বেশ কয়েকজন  চেনা লোক সেখানে তখন ) – তারা পুবের বারলিনার স্টাডবাঙ্ক কিনল মাত্র  ৪৯ মিলিয়ন ডি মার্কের বিনিময়ে ; বারলিনার স্টাডবাঙ্কের খাতায় মোট খদ্দেরের ঋণ ১২ বিলিয়ন মার্ক , সবটাই সরকারি গ্যারান্টি সহ।  কেনা দামের ২০০ গুন তার মূল্য ! পশ্চিম জার্মানির চারটে  বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক মোট ৮২৫ মিলিয়ন ডি মার্কে কয়েকটি ব্যাঙ্ক কিনে নেয় , তাদের মোট সরকারের গ্যারান্টি করা অ্যাসেটের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডি মার্ক ! ফ্রাঙ্কফুর্টের  সমবায়িক ব্যাঙ্ক , ডি জি ব্যাঙ্ক পূর্ব জার্মান গেনোসেনশাফটবাঙ্ক কেনে ১০৬ মিলিয়ন ডি মার্কে , সরকারি গ্যারান্টি সহ ঋণের পরিমাণ ১৫.৫ বিলিয়ন ডি মার্ক !  ব্যাঙ্কের কোন খদ্দের দেউলে হলে সরকার তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেবেন ব্যাঙ্ককে।  

    কোন প্রতিযোগিতা , টেন্ডার বাদেই পশ্চিম জার্মানির ব্যাঙ্কগুলি এক বিলিয়ন ডি মার্কের বিনিময়ে কিনে নিল প্রায় সত্তর বিলিয়নের অ্যাসেট –একেবারে আইনসম্মত ভাবে , মাথার ওপরে সরকারের অভয় হস্ত নিয়ে  লুট পাট- লাইসেন্স টু স্টিল  ।  ইংরেজিতে ফায়ার সেল বলে একটা প্রচলিত কথা আছে – ঘর পোড়া দ্রব্য সামগ্রী যে কোন দামে বেচা । এক্ষেত্রে দৃশ্যত কোন আগুন  লাগে নি ,মালিকানা বদলেছে মাত্র ! কে যে কার সঙ্গে কথা বলে কিভাবে এই টেক ওভারের কাগজপত্রে মঞ্জুরির সই সাবুদ জোগাড় করলেন, কেহ জানিল না ! কেহ  প্রশ্ন করিল না ।

    নামমাত্র মূল্যে  পূর্ব জার্মানির ঘটিবাটি কাঁসা পেতল জমি জিরেত কেনা শুরু করলেন পশ্চিমের ঘাগু ব্যবসায়ীরা ;  সেখানে যারা কাজ করেন সেই আম আদমির ওপরে তার  কোন প্রভাব পড়ল না। তাঁদের চাকরি বজায় রইল ।  তাঁরা যেমন আসতেন যেতেন তেমনই আসেন যান , কেবল নতুন বসেদের সেলাম করতে হয়, এই যা ।

    আপাতত।

    গভীর অন্ধকার আসিছে মন্দ মন্থরে।

    পয়লা জুলাই ১৯৯০ তখনো দুটো  আলাদা দেশ , হেলমুট কোল তাঁর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, বুন্দেসবাঙ্কের , প্রেসিডেন্ট কার্ল অটো পোলের সুপারিশকে  উপেক্ষা  করে দুই দেশের কারেন্সি ইউনিয়ন ঘোষণা করলেন- এবার প্রায় মূল্যহীন এক পূর্ব  জার্মান মার্কের বিনিময়ে পাওয়া যাবে এক শক্তিশালী ডি মার্ক।  সেই দিনে  ট্রাকে ট্রেনে বস্তা বস্তা কাঁড়ি কাঁড়ি মহার্ঘ্য ডি মার্ক এসে পৌঁছুল পূর্ব জার্মানির গ্রাম শহর গঞ্জে – এই বার্তা রটি গেল ক্রমে -  এবে  হবে অর্থ বিনিময়!  প্রথম চার হাজার পূর্ব জার্মান মার্কের বদলে পাবেন চার হাজার পশ্চিম জার্মান ডি মার্ক তার বেশি হলে  ২:১ হারে ।  দু দিন আগেও বিনিময় হার ছিল ৪.৫:১ । হঠাৎ নবাবে দেশ ভরে গেল।

    কার্ল অটো পোল বলেছিলেন দুই দেশের মুদ্রাকে সমান হারে পরিবর্তন করাটা সঙ্গত  হবে না , তাতে অকারণে মুদ্রাস্ফীতি অনিবার্য ।  তিনি ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন । আকস্মিক কারেন্সি ইউনিয়নের প্রতিবাদে পোল কাজে ইস্তফা দিলেন।   জার্মান বুন্দেসবাঙ্কের ইতিহাসে একমাত্র স্বেচ্ছা নির্বাসন।

    এলো মেলো করে দে মা

    আমার মতন বিভক্ত জার্মানি দেখেছেন , দৈনিক ভিসায়  পশ্চিম থেকে পূর্ব বার্লিনে গেছেন যারা  আলেকজান্দারপ্লাতস ছিল তাঁদের  ঘোরাঘুরির কেন্দ্রবিন্দু । রাত্তির বারোটা  বাজার আগেই ঊনটারগ্রুনড  বান ধরে পশ্চিম বার্লিনে ফিরতে হয়েছে।  

    জুন ১৯৯০ পূর্ব জার্মানির লোকসভা ( ফোলকসকামার ) আইন পাশ করে যে প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক অনুমোদন দেয়,  সেপ্টেম্বর ১৯৯০ ডেটলেফ রোভেডার পূর্ব বার্লিনের আলেকজান্দারপ্লাতসে ত্রয়হানডআনস্টালট নামক সেই  ট্রাস্ট কোম্পানির  পত্তন করলেন তাঁদের কাজ হবে দশ হাজার কোম্পানি, পঁচিশ হাজার এস এম ই সাড়ে সাত হাজার হোটেল , রেস্তোরাঁ এবং তেতাল্লিশ লক্ষ একর জায়গা জমি  পুকুর বাগান বেসরকারিকরণ। পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের জান  মালের মালিক এই ত্রয়হানড , সে সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো  একক প্রতিষ্ঠান।

    মাত্র ৩৮০ জন কর্মী নিয়ে অগণ্য মানুষের ভাগ্য নির্ণয় পদ্ধতি শুরু করেছিল ত্রয়হানড ( শেষ বছরে চার হাজার)   ।  কাজটা  পর্বত প্রমাণ – সম্ভাব্য ক্রেতা দেখতে চাইবেন বিক্রয়যোগ্য কোম্পানির সঠিক কাগজপত্র , যিনি কিনতে এসেছেন তিনি ঠিক কি রকমের লোক ,তাঁর নামে দুটো দেওয়ানি কেস ঝুলছে কিনা, একটা কেমিক্যাল কোম্পানি চালানোর প্রমাণিত দক্ষতা আছে কিনা  সেটাও তো জানা দরকার । হামবুর্গ থেকে কেউ কিছু কিনতে এসেছেন বলেই কি তাঁর হাতে কোম্পানির সদর দরজার চাবি ধরিয়ে দেওয়া যাবে ? মুফতে ?

    নানান কাহিনী শোনা যায় ।

    জুরিখের নাম্বার প্লেট ওলা মার্সিডিজ গাড়ি থেকে একজন নামলেন ত্রয়হানড অফিসের সামনে , চোখে রেবানের রোদ  চশমা হাতে মোটা ব্রিফকেস ;   টি ভি রিপোর্টাররা হামলে পড়লেন,  আপনি কোনো  বিশেষ কোম্পানি কিনতে এসেছেন কি ? তিনি উত্তর দিলেন,না,  দেখি কোনটা সস্তায় পাওয়া যায়,  সেই বুঝে । প্রতিটি  ক্রেতা জানেন এই বিক্রির পিছনে  বিরাট প্রমাণ সাবসিডি বা অনুদান মঞ্জুর করা আছে, ঠিকমত মাছটি ধরা নিয়ে কথা । তাহলেই সাবসিডির কল খুলে যাবে ; এক মার্কে কোম্পানি কেনার সুবাদে উঠে আসবে কয়েক মিলিয়ন মার্ক সাবসিডি।


     
    ত্রয়হানড অফিসে খদ্দেরের লাইন
     
     
    এসেন শহরের ছোট একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মিখায়েল রোটমান । ঠিক যে কিসের ব্যবসা করতেন জানা নেই ; একটি সুইস  রেজিস্টার্ড কোম্পানি বানালেন , কেমাটেক ।  এসেনের একটি ফ্ল্যাট তার ঠিকানা । তিনি কিনে ফেললেন  বারলিনার ওয়েরমেআনলাগেনবাউ নামের একটি সফল  কোম্পানি , তারা বার্লিন শহরের ঘর গরমের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু সামগ্রী যেমন ইলেকট্রিক ও গ্যাস হিটার সরবরাহ করে ।  সেপ্টেম্বর ১৯৯০ সালে তার অ্যাসেট ৩৮ মিলিয়ন ,  অস্থাবর সম্পত্তি ১৫৩ মিলিয়ন , ঋণ ৩১ মিলিয়ন । মিখায়েল রোটমান সেটি কিনলেন দু মিলিয়ন ডি মার্কে , ত্রয়হানডের অঙ্ক জানা মানুষদের মতে সেটাই অনেক।  কোম্পানির দরজায় তালা পড়ল শিগগির।  ১২০০ কর্মচারীর ১১৯৫ জন বরখাস্ত হলেন বাকি পাঁচ জনকে নিয়ে বারলিনার ওয়েরমেআনলাগেনবাউএর অস্থাবর সম্পত্তি বেচে ১৭৪ মিলিয়ন ( কোম্পানি ভ্যালুয়েশনের সময়ে ত্রয়হানড জানান ওসব সম্পত্তি বেচে কিছু পাওয়া যাবে না ) পকেটে পুরলেন, তার সঙ্গে কিছু সাবসিডি ।  পরের বারো বছর আপন ইয়টে দুনিয়ায় টহল দিলেন , ২০০৯ সালে ধরা পড়ে এখন জেল খাটছেন ।  কিন্তু করদাতার দুশ মিলিয়ন ডি মার্কের কোন খবর নেই।

    ত্রয়হানডের কোন যে দোষ নাই বন্ধু ! অর্থমন্ত্রী থেও ভাইগেল বিশেষ অর্ডিন্যান্স পাশ করে ত্রয়হানডের অফিসারদের কোন সিদ্ধান্তের জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ ছুটকারা দিয়েছেন- তাঁদের অ্যাকশন জনিত কোন লোকসানের জন্য কেউ দায়ী নন।

    বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি সংস্থা এলফ আকিতেন, পরে টোটাল এনার্জি,  কিনলেন পূর্ব জার্মানির বৃহত্তম কেমিকাল  কোম্পানি লাউনাভেরকে – ৯০ মিলিয়ন  ডি মার্কের সাবসিডি যে কোন গহ্বরে ঢুকে পড়েছিল তার সন্ধান মেলে নি। বাজারে গুজব চলতেই থাকে ত্রয়হানডের কর্মীরা  কোন খোঁজ খবর বা  ডিউ ডিলিজেন্স না করেই  কোম্পানি বেচার কাজ চালাচ্ছেন ।  

    মনে রাখা প্রয়োজন অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশের অর্থ ব্যবস্থার  মতো পূর্ব জার্মানিতে টাকা পয়সার হিসেব নিকেশ হতো দু ভাবে – ক্যাশ ,যেমন বেতন, অন্যটা কাগজি ট্রান্সফার । এক ডিপার্টমেন্ট কিছু কিনল আরেক ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে অথবা পেলো সরকারি লোন ;খাতায় ডেবিট ক্রেডিট এন্ট্রি হলো, ক্যাশে দেওয়া নেওয়া হলো না ।  পয়লা জুলাই ১৯৯০ সালে ১:১ হারে পূর্ব জার্মান মার্ককে পশ্চিমের ডি মার্কের সমান করে দেওয়ার ফলে কাগজ কলমের আদান প্রদানটা বদলে গেল ; ক্যাশে এবার অঙ্কটা আর মেলানো গেলো না,  পূর্ব জার্মানির যে কোন উৎপাদিত সামগ্রীর দাম বেড়ে গেল সাড়ে  চার গুণ।   

    এ বিষয় বারান্তরে । 
     

     
     
    ডেটলেভ কারস্টেন রোভেডার 

    প্রায় অবশ্য দ্রষ্টব্য একটি টি ভি ইন্টারভিউতে রোভেডার বললেন  অর্থমন্ত্রী ফ্রাউ লুফট পনেরো বিলিয়ন ডি মার্ক অর্থ সাহায্য চেয়েছিলেন । অর্থমন্ত্রী ভাইগেল রাজি হন নি কেন না  আমার মতে পূর্বের রুগ্ন দুঃস্থ শিল্প  প্রতিষ্ঠানগুলিকে জোড়াতালি দিয়ে চালালে হয়তো আরও তিন বছর কোনমতে এগুলি টিকে থাকতে পারতো ।  আমাদের এখন শক্ত হাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে – কোনটা বন্ধ ,কোনটা ঠিক দামে বিক্রি করা যাবে।  বেসরকারিকরণ থেকে আসবে প্রচুর অর্থ।

    টি ভি অ্যাংকর : আমরা শুনেছি  হোয়েশ হানডেলের সি ই ও পদে থাকাকালীন আপনি লাখ খানেক লোক ছাঁটাই করেছেন । আচ্ছা বলুন তো যাদের আপনি চোখে দেখেন নি ,চেনেন না জানেনা না তাদের তাড়ানো বোধহয় সহজ ?

    রোভেডার          :হ্যাঁ।  অবশ্যই সহজ।  আমার মনে কোন অনুভূতি হয় না ।

    টি ভি অ্যাংকর : এখন পূর্ব জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে চল্লিশ হাজার মানুষ কাজ হারাচ্ছেন , বেকারির হার প্রায় চল্লিশ শতাংশে পৌঁছেছে । প্রতি সোমবার আপনার অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয় যেমন এক সময়ে কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে হয়েছে। আজ বেকারের সংখ্যা তিনের দশকের বিশ্ব মন্দা অথবা হিটলারের জার্মানিতে প্রথম বছর গুলিতে এর চেয়ে অনেক বেশি । এমনটা চললে আরেকটি বিপ্লবকে কি আটকানো যাবে ?

    রোভেডারঃআমাদের তাই করতে হবে যা আবশ্যক ।

    টি ভি অ্যাংকরঃআপনি কি বোঝেন জার্মানিতে আজ আপনি সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ?

    রোভেডার নিরুত্তর।

    ছ মাস বাদে, পয়লা এপ্রিল ১৯৯১ সন্ধ্যে সাড়ে আটটায় ডুসেলডরফ -নিদারকাসেলে  শ্রেষ্ঠী এবং ধনী জনের  খাস বসত এলাকা,  কাইজার ফ্রিডরিখ রিং ৭১ নম্বর বাড়ির দোতলায় তাঁর বসার ঘরে জানলার কাঁচ ভেদ করে আসা একটি গুলিতে নিহত হলেন ডেটলেফ কারস্টেন রোভেডার ।  

    দেওয়াল ভাঙ্গার সেই উত্তাল সন্ধ্যের পরের দিনগুলিতে সদ্য লদ্ধ স্বাধীনতার স্বাদ  তিক্ত হতে থাকে।      

    ক্রমশ

    *দশ বছর বাদে একটি একান্ত বৈঠকে হেলমুট কোল বলেন, ব্লুহেনডে লানডশাফট ছিল এক অলীক প্রতিশ্রুত, ডাহা মিথ্যে (আইনে টোটালে লুইগে ) । তখন সেটা বলা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিল না।

    ‘অচ্ছে দিন’ এর  অথেনটিক জার্মান পূর্বসূরি।

    মূল সূত্র

    হামবুর্গের স্পিগেল পত্রিকা এবং জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলের আরকাইভ
    জার্মান ডকুমেন্টারি – গল্ডরাউশ – ডি গেশিখটে ডের ত্রয়হানড ( জিরো ওয়ান )
    জার্মান ডকুমেন্টারি – আউসফেরকাউফ ডের ডে ডে এর 

    একটি সম্পূর্ণ অনাবশ্যক উড়ো খই ট্রিভিয়া

    একটা দারুণ কিছু করে ফেলার বা তার সুখ্যাতি করার জন্য খানিকটা চপল অর্থে আমরা প্রায়ই  বলে বা শুনে থাকি ‘দিস ইজ দি বেস্ট থিং সিনস স্লাইসড ব্রেড ‘ । দশ ইঞ্চি লম্বা  একটা খোপে ভরে  সমান মাপে মতো রুটি কাটার যন্তর আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকার আইওয়াতে  ডেভেনপোর্ট শহরের স্যাকরার দোকানের কর্মচারী আরেক রোভেডার , অটো ফ্রেডারিক রোভেডার ।   জুলাই ১৯২৮।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন