আমি আঁকতে পারিনা, ছবি তুলতেও পারিনা, মাঝে কেমন মনে হত কথায় ছবি আঁকব, পরে বুঝলাম কতটা অবুঝ হলে এরকম ভাবতে পারি নিজের সম্পর্কে, কথায় ছবি আঁকতে পারা আমার মত সাধারণের পক্ষে সহজ বা সম্ভব নয়,খুব কম জনই তা পারে!
ছবি দেখতে যে আমি ভীষণ ভালোবাসি সেটা মোটামুটি এত বছরে আমার কাছে পরিস্কার, আঁকা ছবি বা তোলা ছবি যাই হোক না মাধ্যম , কথাহীন ছবি। তবে আমি কোনো প্রচলিত রীতি নিয়ম মেনে ছবি দেখিনা, ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজের মত করে তাকে পড়ি, সেই মুহুর্তে আমার অনুভূতি, দেখে কী মনে হচ্ছে, শুধু চোখের ভালোলাগা বা খারাপ লাগা নয়, আমার সমস্ত চেতনা দিয়ে দেখা। একজন মানুষকে যেমন সামনে দেখে, কখনো আলাপ করে, কথা শুনে  বুঝতে চেষ্টা করি, ভালো খারাপ, পছন্দ, অপছন্দ, ছবিরাও আমার কাছে তেমনি ।
তবে যেভাবে আমি কোনোদিন মানুষ খুঁজিনি, সেরকম আমি ছবিও খুঁজিনা। চলতে চলতে হঠাৎ দেখা, আলাপ হওয়া মানুষ যখন ভালোলাগে তখন যেমন উপলব্ধি হয়, তেমনি হয় চেনা অচেনা শহরে অখ্যাত বিখ্যাত মিউজিয়াম বা প্রদর্শনীতে ঢুকে এরকম কোনো কিছু দেওয়ালে হঠাৎ আবিস্কার করে, কিছুক্ষনের জন্যে চারপাশ ভুলে ছবিদের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা, সঙ্গীসাথীরা বেশীরভাগ এরকম কিছু হলে বিরক্তই হয়, এক জায়গায় এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কী হল, একই জিনিস কতক্ষণ ধরে দেখবে!
আমি অবশ্য এতে বিশেষ দমি না, অনেকসময় এমনও হয় ঘোরা শেষ হলে আবার ফিরে গেছি একই ছবির কাছে। আসলে তো ছবিই, মানুষ নয় যে পছন্দের হলে ভালোলাগার হলে, দেখার আকুলতা হলেও, ফেরা কিছুতেই যাবেনা!
জীবনে চাওয়া পাওয়া আমার বিশেষ নেই, আর যাও আছে সেগুলো ঠিক প্রথাগত নয় বলে তা বলার মত নয়। একটা খোলা আকাশ সব কালেই চাহিদায় ছিল, এবং সব কালেই তা না পাওয়ার লিস্টিতে জ্বলজ্বল করে। তবু কোনো শহর দেখলে দেশে বা বিদেশে, যেখানে এরকম কোনো জায়গা দেখি, গোছানো, ভালোবাসায় মোড়া, ছবিদের বাড়ি, মনে হয় সারাদিন সেখানেই কাটিয়ে দিই।
আজকাল মানুষ নিয়ে তেমন ভাবতে ভালো লাগেনা, কিন্ত আবার মনে হয় না ভাবাটাও ঠিক নয়। গত দেড় দশক ধরে যা হয়ে চলেছে কেমন মনে হয় মত্তহস্তীর লীলা, সবকিছু তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এর মাশুল কীভাবে দিতে হবে আগামী প্রজন্মকে তা ভাবতে সাহস হয় না। শুধু মনে হয় কিছু একটা নিশ্চয় হবে, কোনো ভালো কিছু, যা সব কালোর বিনাশ করে আবার গড়বে সব কিছু নতুন করে।
তবে আপাতত আমরা মানব জাতি  পৃথিবীজুড়ে  যেন সব খারাপের স্ট্যান্ডার্ড কে ছাপিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে চলার প্রতিযোগিতায় নেমেছি দিন প্রতিদিন। অসলোর মুঙ্ক মিউজিয়ামে সম্প্রতি দেখে এলাম "স্ক্রীম"। সেই দেখার খুশী থেকে দু ফ্লোর ওপরে উঠে একটা বিশাল হল জুড়ে দেখা হল মন খারাপের মেঘেদের সাথে।
 "জিফজাফা"।  তিরিশটা উইন্ড টারবাইন ঘুরলে বাতাসে যে শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হবে, তা বোঝাতে শিল্পী আবু হামদান একটি মিউজিকাল স্কোর কমপোজ করেছেন। জিফজাফা একটি আরবিক শব্দ যার মানে হল হাওয়া,উইন্ড। সিরিয়ার গোলান হাইটস যা ইজারায়েলের কব্জায় আছে সেখানে আরব গ্রামগুলির কাছাকাছি একটি বৃহৎ খোলা জায়গা জুড়ে তৈরি হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উইন্ড টারবাইন যার বিরোধিতা চলছে অনেক জায়গায়, জিফজাফা এই বিরোধের একটি অন্যতম রূপ। এই প্রজেক্ট হলে বিশেষজ্ঞের মতে গোলান হাইটস থেকে আরবদের চলে যেতে হবে,সরে যেতে হবে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে , আর সেটাই সম্ভবত ইজরায়েলের মূল উদ্দেশ্য, এই প্রজেক্টের পিছনে , গ্রীন এনার্জির নামের আড়ালে নিজেদের এজেন্ডা পূরণ করা। আমেরিকার গোলান হাইটস এ উইন্ড প্রজেক্টে সম্পূর্ণ সম্মতি ও আশীর্বাদ রয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এটি ডিসপিউটেড ল্যান্ড,এখানে প্রজেক্ট করার অনুমতি নেই। 
মুঙ্ক মিউজিয়ামে এক বিশাল হল জুড়ে দেওয়াল জোড়া স্ক্রিনে গোলান হাইটস এর ছবি চলছে আর বসার ব্যবস্থা রয়েছে , রয়েছে হেডফোন আবু হামদানের সৃষ্টি শোনার জন্যে, একটি অভিনব প্রচেষ্টা সারা বিশ্বের কাছে নিজেদের কথা পৌঁছে দেওয়ার। সবাই ঢুকছে নীরবে , বসছে , শুনছে , হয়ত বা বেদনায় কিংবা সংকল্পে!    
 
 
আপাতত একটু মাটির কথায়,আমার দেশের কথায় আসি। মাস কয়েক আগে পরিবেশ সংক্রান্ত একটি কনফারেন্সে ডাক পড়েছিল। মূল মঞ্চে নয়, একটি বাড়তি সেশনের প্যানেল আলোচনায়।
আমার শেষ কাজের জায়গায়, সেই সময়ে পরিবেশ মন্ত্রকের পল্যুশন সংক্রান্ত একটি বেশ বড়সড় ডিরেক্টিভ এসেছিল, মূলত পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্যে। ২০১৫ র প্যারিস কপের পরবর্তীতে দেশের ক্লাইমেট পলিসি রূপায়নের লক্ষ্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্ণয়, এবং এটি বলবৎ করার আগে প্রচুর আলোচনা, রিসার্চ সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের জানিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছে, এবং অনেকের অনেক যুক্তি আপত্তিতে সেভাবে কর্ণপাত না করেই সরকার ২০১৬ র ডিসেম্বরে এই নোটিশ জারি করে।
সেইমত সরকারী ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি কাজ করতে শুরু করে বা করতে বাধ্য হয়, খরচ সাপেক্ষ এই প্রজেক্ট গুলির কাজ শুরু হয়। সেই হিসেবে কাজ ধীরগতিতে হলেও, এত বছরে এর পেছনে অনেক টাকাই খরচা হয়ে গেছে, সরকারের।
কিন্ত বেসরকারি যারা আছে, যার মধ্যে প্রধান হল “নাম নেওয়া যাবেনা” কম্পানি, যারা হল এখন ভারতের সবচেয়ে বড় পাওয়ার কম্পানি, তারা সরকারী নোটিশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, এই খরচসাপেক্ষ প্রজেক্ট, যা লাভক্ষতি নয় শুধু পরিবেশের জন্যে করতে হত, তার কোনো উদ্যোগই নেয় না।
এখন যখন খাতায় কলমে ২০১৬ র নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত জগত সভায় নিজেদের পরিবেশ উদ্যোগের ফলাফল দেখানো হেতু, ডিফল্টারদের ওপর পেনাল্টি বা শাস্তিস্বরূপ তাদের দোকান বন্ধ করার সময় এসেছে, তখন নানাভাবে , না পন্থা অবলম্বন করে ,  যথা পোষা এন জি ওদের সাহায্যে বা সরকারের বাইরে থেকে পরিবেশ অ্যাকশন ফোরাম ইত্যদি খুলে তাদের মাধ্যমে, ২০১৬ র নোটিশ ভ্রান্ত ছিল, আমাদের দেশের জন্যে এর দরকার নেই এইসব প্রমান করে সরকারের ওপর তথাকথিত চাপ সৃষ্টি করে, এই ডিরেকটিভের নির্দিষ্ট আদেশ মুছে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে, যাতে লঘু করে দেওয়া যায় নির্দেশাবলী, আর পেনাল্টি ও শাস্তি বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
শুরু করার পেছনে তখন অন্য খেলা ছিল এখন শেষ করতে আর এক খেলা শুরু! এ ছিল এই কনফারেন্স এর একটি অন্যতম হিডেন এজেন্ডা !
 
আমি কোভিড লকডাউনের সময় অনেক জায়গা থেকে অনলাইন কনফারেন্সে বলার জন্যে ডাক পেতাম। ক্লিন এনার্জি, এনার্জি সেক্টরের এমিশন, জিরো কার্বন, রিনিউএবল ওয়েস্ট এগুলো আমার প্রিয় চর্চার বিষয়, শেষ কাজের জায়গায়, পল্যুশনের যেসব প্রজেক্ট হয়েছে ২০১৬ র পর , তার দেখভাল, প্ল্যানিং ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেছি। গ্লোবাল এনার্জি পড়ার সময়, প্যারিসের ও আগে থেকেই আমরা জিরো কার্বন, ক্লিন এনার্জি এসব আলাদা মডিউল হিসেবে পড়েছি।
সেই কারণে কিছুজন হয়ত আমাকে নানা জায়গায় শুনে থাকবে। এই সাম্প্রতিককালে ভূমিষ্ঠ হওয়া ক্লাইমেট একশন  ফোরামে প্রচূর রিটায়ার্ড সরকারী আমলাশামলা রা আছে, তাদের কেউ কেউ আমার কোনো কোনো অনলাইন সেশনেও চেয়ার টেয়ার করে থাকত কোভিডে। লকডাউনের পরে অবশ্য যেহেতু আমি কোনো সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নেই, বা সরকারের ক্লোজ অথবা নামী কেউ নই তাই ফিজিক্যাল কনফারেন্সে আমার খুব একটা খোঁজ এতদিন পড়েনি। অথচ এরকম একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, যেখানে ওয়ার্লড ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড নেশন ইত্যাদি  থেকে প্রতিনিধিরা আসছে সেখানে ডাকল কেন!
 
পরে বুঝলাম যে ওরা এই প্যানেলকে দিয়ে বলাতে চাইছিল যে ২০১৬ র একটি নির্দেশ ভুল ছিল, আসলে এই জিনিসের আমাদের দেশে মোটেও দরকার নেই। কিন্ত আমার পুরনো কম্পানি এ জিনিস ইমপ্লিমেন্টশনের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে, প্রচুর পয়সা যা আদতে সরকারের , খরচা হয়ে গেছে এ বাবদ, সরকারী তাড়াতেই। এখন সেখানকার কাউকে ডেকে বা এমনকী যারা রিটায়ার্ড বড় কর্তা তাদের দিয়েও আর এ বিষয়ে অন্য কথা বলানো সরকারের জন্যেই ঠিক দেখাবে না, অফিশিয়ালি বলতে পারে না। তাই আমার মত ফ্রি ফ্লোটিং কে ডেকেছে, যার নামে হত ইতি গজ র মত কম্পানির বিশেষজ্ঞ ট্যাগ লাগানো যায় অথচ তা অফিশিয়াল হবেনা। এগুলো অবশ্যই আমার ডিডাকশন। আমি ছাড়া আমাদের কম্পানির আরো দুজন কে ডেকেছিল যারা সরাসরি পরিবেশ দপ্তরে কাজ করেছে একদা তবে ওই খুব উপর লেভেলের নয়!
এমনকী দিল্লি আই আই টি ও নাগপুরের একটা সংস্থাকে দিয়ে এর সমর্থনে সার্ভে স্টাডিও করিয়েছে এরা। আমি সেই স্টাডি রিপোর্ট পড়ে গেছিলাম, পয়েন্ট ধরে ধরে এই স্টাডির মেথডে কী ভুল আছে বলেছি যখন এবং তাতে আরো লোকে একই সুরে কথা বলায়, ব্যাপারটা তখনকার মত কেঁচে গেল। একজন রিটায়ার্ড সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের ভদ্রলোক এসে পরে শুধু বললেন “আর চাকরি করলে না কেন? সব ছেড়ে দিলে কেন?” আর একজন সাংবাাদিক এসে ধরে পড়ল, কনট্যাক্ট নাম্বার দিন, তাকে বললাম, “ভাই, আমার বর এখনো চাকরি করে, একজনেরটা রাখতে হবে।”
এসব নিয়ে বিশদ তো খোলা পাতায় লেখা যায়না তাই লিখিনি। দিল্লির পল্যুশন নিয়ে যা কদিন ধরে নাটক চলছে তাই দেখে মনে পড়ে গেল আর একটু লিখতে ইচ্ছে হল।
 
উক্ত কনফারেন্স টি মূলত করা হয়েছিল দিল্লি সরকারের একশ দিনের উদযাপনে, দিল্লি সরকারের উদ্যোগে, কেন্দ্রীয় সরকারের স্নেহচ্ছায়ায়। বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধি, কর্পোরেট আই আই টি, দিল্লি ইউনি, পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিটি সরকারী বিভাগের আমলাদের উপস্থিত ছিল ভরপুর । পেটিএমের প্রধান যে এত পরিবেশপ্রেমী তা আগে কেউ কোথাও জানত! 
এতকাল এই চত্বরে বাস করা ও কাজের সুবাদে কিছু কিছু কনফারেন্স জাতীয় জায়গায় এর আগেও গেছি, বর্তমান শাসনকালের আগে। কিন্ত এই প্রথম মনে হল ভেতরে ভেতরে একটা বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে, যা হয়ত আমাদের ধারণার বাইরে। বাইরে থেকে ভোট ভোট হিন্দু মুসলিম পাকিস্তান এ দল ও দল করা এগুলো একটা যাকে বলে ফ্যাসাড…….আসল তলে তলে কোর ভ্যালু গুলো, দেশের সমাজের ফ্যাব্রিক টা খুব সুচতুর ভাবে সার্জিকাল প্রিসিশনে বদলে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ গুলোর যেন এক ধরণের জম্বিফিকেশন হচ্ছে! 
কথাবার্তা ভাইবস কোনো কিছুকেই আর কোনোভাবে চেনা পরিধিতে রিলেট করা যাচ্ছে না। প্রধান অতিথি ছিল একজন অতি বৃদ্ধ সাদা কাপড়ে মোড়া যে নাকি নাগপুরে আর এস এসের পরিবেশ বিভাগের প্রধান। তাকে ঘিরে লোক দেখে ও তার দাপট দেখে অজানা লোকের প্রধান সেবক বলে ভ্রম হতে পারে। সে তার ভাষনে শুধু বলে গেল, হিন্দু ধর্মে পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে যা এখন সব বলা হচ্ছে করা হচ্ছে, দু হাজার বছর আগে থেকেই বলা হয়েছে করা হয়েছে। আমরা যা করি যেভাবে থাকি যদি ধর্ম সঠিক পালন করি তাহলেই পরিবেশ ঠিক থাকবে। লোকজন এমনকি কর্পোরেট কর্নধাররাও তার পায়ে লুটিয়ে পড়ছিল।
একজন এম পি তার ভাষণে গান গাইল “দিল্লি বদল রহি হ্যায়”, স্বরচিত, এবং গলাটি দিব্য, হবেনা কেন, পূর্বাশ্রমে তার পেশা ওই ছিল তো।
মুখ্যমন্ত্রী রোজ বিকেলে যমুনা আরতি করে, যাতে যমুনা তার ওপর কৃপা করে নিজে নিজেই সাফ হয়ে যায়। সেসব সেরে তার আসতে দেরী হল। তার আগে প্রধান অতিথি চলে গিয়ে তার আসনে এসে বসেছে সাদা মলমলের কুর্তা পাজামায় মোড়া আর এক বৃদ্ধ, দিল্লি আর এস এসের শাখা প্রবন্ধক। সমস্ত কর্মকর্তারা, বড় মেজ সব তার আশেপাশে মোসায়েবের মত একটু কথা, একটু কৃপাদৃষ্টির আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ওয়ার্লড ব্যাঙ্ক, ইউ এন, আই ই এ, এসব জায়গায় যারা আছে এদেশের প্রতিনিধি বা পদাধিকারী তাদের রকম দেখেও মনে হল এরাও আসলে আশীর্বাদধন্য জনতা সব, যেদিকে দেখি সবই গৈরিকবরণী।
মুখ্যমন্ত্রীর আরতিতে দেরী আছে খবর আসাতে এই শাখা ভদ্রলোকের অনুমতি নিয়েই ফাইনাল রেকমেন্ডশেন পড়া শুরু হল। যারা পুরো ইভেন্টটি করল তাদের সিইও নিউ ইয়র্ক ফেরত, প্রাক্তন আই এম এফ, আই আই এম, ভাষণে শাখা প্রবন্ধকের উপস্থিতির জন্যে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে ভাবুক হয়ে চোখে জল এনে ফেললেন, মনে হল সাক্ষাত ভগবান এসে তার আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চে বসেছে।
 
হবে নাই বা কেন? আরতি শেষ করে যমুনার পল্যুশন কম করে মুখ্যমন্ত্রী সভাস্থলে শেষ পর্যন্ত পা দিলেন যখন, ঢুকেই সটান মঞ্চে উঠে শাখা প্রবন্ধকের পায়ে পড়লেন। তারপরে তাকে নিয়ে উল্লাস আদিখ্যেতা সব থিতিয়ে এলে ভাষণ দিতে উঠে বলে “ লাও, দেখি তোমরা এত কান্ড করে কী সব রেকমেন্ডেশন, অ্যাকশন প্ল্যান বানিয়েছো দেখি।”
অনেক কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে একখানা মহা স্যানিটাইজড দশ পয়েন্টের রেকমেন্ডেশন বানানো হয়েছিল, তার হাতে দেওয়া হল।
ভদ্রমহিলা পুরো যাত্রার মন্থরা টাইপের মুখ করে প্রত্যেকটা পয়েন্ট বলে বলে, “হো গিয়া, কর দিয়া”, একশ দিনেই এসব করে দিয়েছি, তোমরা কিছুই খবর রাখোনা। কাল থেকে রাস্তায় পাঁচটা ইলেকট্রিক বাস চলবে “দেবী” নামে, প্রধানমন্ত্রীর ছবি সহ, ওই ছবির জোরেই পাঁচ দিকের হাওয়া একেবারে শুদ্ধ হয়ে যাবে……. সত্য সাঁইয়ের থেকে কম নাকি আমাদের বাবা!
তবে আসল বাবা কারা তা সম্পরকে চক্ষু কর্ণের বিবাদভঞ্জন হয়ে গেল, এই একটি যাত্রায়!
দিল্লির স্বচ্ছ জল, নির্মল হাওয়ার গ্যারান্টি সুনিশ্চিত করে যমুনা পুজারিনী, একশ দিনেই সব কাজ করে ফেলা মহামানবী ( আর কারুর কথা মনে পড়ছে? ঘরের কাছে কেউ?) আরেকবার বাবাজীর পায়ের ধূলো নিয়ে বিদায় নিলেন।
দিল্লি ও এন সি আর বাসী তার ফল যে হাতে নাতে পাচ্ছে স্বর্গরাজ্যে তাতে আর সন্দেহ নেই। বাকী সব নিন্দুকের রটনা!
তবে ক্লাইমেট, পরিবেশ সংরক্ষণ, ইত্যাদি বিষয়ক কোনো বাইট দেখলে কেমন একটা কমেডি চ্যানেল ভাইব আসে, শুধু এ কমেডিতে হাসি আর আসেনা, শিরদাঁড়ায় কেমন একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।