এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি  আড্ডায় আবার - পর্ব ২৮ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ জুন ২০২৫ | ২৮৯ বার পঠিত
  • বৈঠকি আড্ডায় আবার ৮  

    পূর্ব পশ্চিম ৭ 

    পেয়েছি  ভিসা বিদায় দেহ 

    অক্টোবর ১৯৭৭

    পুজোর আগেই আলিপুরে এক নম্বর হেসটিংস পার্ক রোডের জার্মান কনসুলেটে আমার ভিসা আবেদন জমা দিয়ে এসেছি ।  তার সঙ্গে  স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার  ফ্রাঙ্কফুর্টে অফিসে নিযুক্তি পত্র , তৎসহ ড্রেসনার ব্যাঙ্কে অ্যাপ্রেনটিসশিপের অনুমোদনের চিঠি  সেই কটা মাস  তাঁরা আমার থাকা খাওয়া এবং শিক্ষা বাবদ সকল ব্যয়ভার বহন করবেন। আপনি এসে দেখা দিন তারপর সব ব্যবস্থা হবে এমন নয়; স্বভাবসিদ্ধ জার্মান তৎপরতার সঙ্গে ড্রেসনার ব্যাঙ্ক জানিয়েছে ডিসেম্বর মাসের তিন  তারিখে ইজারলোনের  গোয়েথে ইনসটিটুটে ক্লাস শুরু হবে । আলাদা  করে পেয়েছি ইজারলোন শহরের ম্যাপ,  স্থানীয় টুরিস্ট আকর্ষণের তালিকা ( বিসমার্ক টাওয়ার , জাইলার জে নামক একটি লেক!)।  সেটি মোটেও কিছু উৎসাহজনক নয় বলে তাঁরা যোগ করেছেন আপনি অবশ্যই কলোন শহরের বিষয়ে অবগত আছেন; তার  দূরত্ব মাত্র একশ কিলোমিটার , ট্রেনে সোয়া ঘণ্টা।  উলটে পালটে সে সব দেখে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।  কবে মুজতবা আলী সায়েবের  লেখায় পড়েছি  বন শহরের পাঠাভ্যাসের কালে কারো কল্যাণ কামনায় তিনি কলোনের জোড়া গিরজেয় মোমবাতি চড়িয়েছিলেন , প্রচণ্ড শীতের রাতে ঠা ঠা চাঁদের আলোয় হেঁটে গেছেন তার পাশ দিয়ে।


    গোয়েথে ইনসটিটুট, ইজারলোন  
     
    আমার সহপাঠী, পরে স্টেট ব্যাঙ্কের সহকর্মী ঠনঠনে দেব বাড়ির হাঁদু আগেই বলেছিল ব্যাঙ্ক তোকে বিলেত পাঠাচ্ছে বটে কিন্তু পাসপোর্ট ভিসার কাজটা তোকেই করতে হবে।  কথাটার সার সত্য বুঝতে সময় লাগে নি।  হাঁদুর একান্ত সহযোগিতায় পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল,ভিসা জোগাড় করার কাজ সম্পূর্ণ আমার একার। তারই মধ্যে  বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা চলছে,  পঞ্চাশ বার বিদায় নিচ্ছি। এমন সময়ে ব্যাঙ্ক মারফত একটি চিঠি পেলাম ড্রেসনার ব্যাঙ্ক থেকে, আগের চিঠির সূত্র ধরে অত্যন্ত  নম্র ভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ফ্রাঙ্কফুর্টের শুমানস্ত্রাসের ৪৮ নম্বর বাড়ির চার নম্বর অ্যাপার্টমেনটটি আমার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । একেই  বোধহয় বলে পোলাইট রিমাইন্ডার।


    প্রথম আবাস, ফ্রিৎস-লুয়েরম্যান স্ত্রাসে 4, ইজারলোন 

    ২ অক্টোবর ছিল বিজয়া দশমী ।  পুজোর পরে গ্রাম থেকে ফিরে অফিসে এসেই জার্মান কনসুলেটে ফোন করেছি । রিসেপশনের ভদ্রমহিলা ভিসা দফতরের অধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দিন দিলেন । দু দিন বাদে  জজ কোর্টের মোড়ে নেমে এক নম্বর হেসটিংস রোডের বাড়িতে স্বল্প ব্লনড দাড়ি ওলা ক্ষীণকায় যে ভিসা অফিসারের সঙ্গে আমার ইন্টারভিউ হল তাঁকে বেশ চিন্তিত মনে হলো । আমি কি উদ্দেশ্যে,  কতদিনের জন্যে যাচ্ছি (সে সব লিখিতভাবে পেশ করা হয়েছে কবেই ), জার্মান আদৌ জানি কিনা ( উত্তর খুবই সংক্ষিপ্ত ,নাইন,  তবে গিয়ে নির্ঘাত শিখে নেবো)  এমনই প্রশ্নাবলী শুনে মনে হলো তিনি পত্রপাঠ ভিসা দেবেন না , একবার চোখে দেখে বাজিয়ে নেবেন কোন মানুষকে তাঁর দেশে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন।  এক সময়ে তিনি বললেন , পশ্চিম ইউরোপের বাজারে এখন মন্দা ,অর্থনীতি ছাড়াও এখন সময়টা বেশ জটিল যাচ্ছে  । ব্যাপারটা ঠিক কি , কার অবস্থা খারাপ  এসব বিষয়ে কিছু বললেন না । ডিপলোম্যাটরা কখনো ঝেড়ে কাশেন না , সে  কথার অর্থ বোঝা গেলে তাঁদের পদচ্যুতি হয়। আমি হু হাঁ করে শুনে গেলাম,  জার্মানিতে যাই ঘটুক না কেন, আমার স্টেট ব‍্যাংকের চাকরি ; সেটা যাবার নয়।

    বিদায় নেবার সময় কর মর্দন করে বললেন, একবার ফোন করে সামনে সপ্তাহে এসে ভিসা নিয়ে যাবেন।

    সেকালে ইন্টারনেট নেই, বাংলা কাগজে বিদেশ বলতে বিলেত আমেরিকার খবর ছাপা হয়,  সি এন এন অনেক  দূরে , ক্রিকেটের হাল হকিকত জানতে বি বি সি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে স্পোর্টস রাউনড আপ শুনি ।  তবু এরই মধ্যে  দিন দুয়েক আগে আনন্দবাজার পত্রিকার পেছনের  পাতায় সোমালিয়ার মোগাদিশুতে ছিনতাইকারিদের কবল থেকে লুফতহানসার একটি বিমান উদ্ধার করা গেছে বলে পড়েছি।

    আমার জানার কোন কথাই নয় যে ঠিক সেই দিনই  প্রায় এক মাস আগে অপহৃত জার্মান এমপ্লয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের মাথা (বুন্দেসফেরবান্দ ডের ডয়েচেন ইন্দুস্ত্রি ) হানস মারটিন শ্লায়ারের মৃতদেহ একটি আউডি  গাড়ির ভেতরে পাওয়া গেছে ,  মুলহাউসের পথে , ফ্রান্স/জার্মান সীমান্তে । তার মাত্র কয়েকমাস আগে, জুলাই মাসে,  ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে ওবারউরসেলে ড্রেসনার ব্যাঙ্কের সি ই ও ইউরগেন পনটো নিহত হয়েছেন  তাঁর বসার ঘরে। স্টামহাইম জেলখানায় আত্মহত্যা করেছেন তিনজন সন্ত্রাসবাদী  বন্দি ।

    এই সময়টাকে বলা হবে  জার্মানির হেমন্ত ।  

    ভিসা পাওয়া গেল ।  ২০শে অক্টোবর ,  ১৯৭৭।

    নভেম্বরের ২৫ তারিখে  দমদম থেকে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাজে দু বছরের কড়ারে ফ্রাঙ্কফুর্ট যাত্রা;  আবার আসিব ফিরে ।  

    জার্মান  হেমন্ত  : ডয়েচার হ্যারবসট

    আমাদের সকলের মৃত্যু হবে এদের হাতে – এরাই আউশভিতস প্রজন্ম  । যারা আউশভিতস বানিয়েছিল তাদের সঙ্গে তাত্ত্বিক আলোচনা চলে না।  তাদের হাতে আছে অস্ত্র , আমাদের নেই। 

    আন্দ্রেয়াস বাদার গুডরুন এনসলিন  
    রোটে আরমে ফ্রাকতশিওন
     

    আন্দ্রেয়াস বাদার গুডরুন এনসলিন 
     
    মায়ের হাতে অতি যত্নে বাঁধা একমাত্র সুটকেসটি আথেন্স থেকে আমস্টারডামের উড়ানে পথভ্রষ্ট হয়েছে কোথাও। একটি হাত ব্যাগ নিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টে নেমে নিজেকে ভীষণ একা মনে হলো , কেউ নিতেও আসে নি।  এখন  হি হি ঠাণ্ডার ভেতরে এই অপরিচিত দেশে  রাতের আস্তানা খুঁজতে হবে,  ভাষাটাও জানি না । একজন করুণাময় ভদ্রলোকের শরণাপন্ন হলাম , তিনি ইংরেজিতে বলে দিলেন কিভাবে ট্রেন ধরে ফ্রাঙ্কফুর্ট মেন স্টেশনে যেতে হবে , টিকিট কাটার তরিকা দেখিয়ে দিলেন । ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টেশনে পৌঁছেই দেওয়ালে কিছু নোটিস বা বিজ্ঞপ্তি দেখলাম । ভাষা জানি না , পড়ে বোঝা অসম্ভব ।  কোন সিনেমার বিজ্ঞাপন বলে মনে হয় নি-  মহিলা পুরুষ মিলিয়ে পনেরোটি  পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নিচে ছোট ছোট অক্ষরে তাদের নাম লেখা ।
     

    সন্ত্রাসবাদীদের সন্ধানে

    কোনো  হট্ট মন্দিরে শয্যা জুটবে কিনা সেটাই তখন  প্রধান চিন্তা আমার, এই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট চালচিত্রের ব্যাপারটা পরে কখনো জেনে নেওয়া যাবে।  স্টেশনের উলটো দিকে রেড লাইট ডিসট্রিক্টের মধ্যে আপোলো পেন্সিওনে  প্রথম রাত কাটিয়ে পরের দিন প্রথমে স্টেট ব্যাঙ্ক অফিসে ও পরে শুমানস্ত্রাসের অ্যাপারটমেনটে আমার স্থান খুঁজে নিয়েছি , তারপর ট্রেনে চড়ে ডাচ সীমান্তের কাছাকাছি ইজারলোন শহরের গোয়েথে ইনসটিটিউটে হাজিরা, একবার ট্রেন বদলে । এই যাত্রায় আবারও দেখি সেই অস্পষ্ট পনেরোটি মুখের ছবিওলা ইস্তেহার স্টেশনের দেওয়ালে সাঁটা । আমাদের শিক্ষিকা ব্রিগিটে লেনহার্ডের কাছে জানলাম এঁরা একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য,  যার নাম রোটে আরমে ফ্রাকতশিওন, এর আ এফ  ( RAF)।  তিন নেতা ইতিমধ্যে নিহত যাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন আন্দ্রেয়াস বাদার ও গুডরুন এনসিলিন ; এঁদের নাম লোকমুখে ছিল বাদার /মাইনহোফ গ্রুপ।  তাদের পরবর্তী কিছু সদস্য , যাদের বলা হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম , পুলিশ তাদের সন্ধান চালাচ্ছে , তাদের ছবি গুলি  এখন দেখছি।

    ক্রমশ জেনেছি এর আ এফ কোন রাজনৈতিক দল নয়, একটি গুপ্ত সমিতি। মাত্র কয়েক বছর আগে কলকাতার দেয়ালে স্লোগান দেখেছি, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস ।  কিন্তু  এঁরা দেয়ালে লেখেন না, লিফলেট বিলি করেন না, জন সমর্থন আদায়ের জন্য পথ সভা করেন না। এঁরা আরবান গেরিলা, বেবি বুমার, যুদ্ধের পরে প্রথম প্রজন্ম ।

    মূলত বামপন্থী, এঁদের প্রতিবাদ ফ্যাসিজম, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ।

    ১৯৩৩ সালে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি ছিল ইউরোপের বৃহত্তম কমিউনিস্ট দল।  সে বছর রাইখসটাগে আগুন  লাগানোর মিথ্যা অভিযোগে পার্টি ব্যান হলো -  ১৪ই জুলাই, ১৯৩৩ । ১৯৫৬ সালের ১৯শে আগস্ট গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মান সরকার আবার কমিউনিস্ট পার্টি  ব্যান করলেন , এবারে কিছু পোড়ে নি তবে এঁদের কার্যবিধি নাকি নতুন রিপাবলিকের সঙ্গে মেলে না ।  তিরিশের দশকের জার্মান ফ্যাসিজম এবং  পাঁচের দশকের মুক্ত গণতন্ত্র   দু পক্ষই প্রখর ভাবে কমিউনিস্ট বিরোধী; এই একটা  জায়গায়  তারা সম্পূর্ণ একমত হলো, তেইশ বছর আগে পিছে।   

    ভিয়েতনাম যুদ্ধে বাদার মাইনহোফ দেখলেন আমেরিকান  সাম্রাজ্যবাদের করাল থাবা , সাধারণ গ্রাম্য চাষির নির্যাতন।  

    আরও দেখা গেল, গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানির  রাজনৈতিক  শাসক গোষ্ঠীর চরিত্রটি  একেবারে আলাদা, একপেশে।  ডাইনে বা বাঁয়ে নয়, প্রায় মাঝখান দিয়ে হাঁটেন,  সেনটার লেফট সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সেনটার রাইট ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাট মিলে কখনো বানান এক মহা কোয়ালিশন। কানু বিনা গীত নাই, বেশি বাঁয়ে ডাইনে বা ভিন্ন মতের কোন দলের সেখানে স্থান নেই। গণতন্ত্রে সব মতের স্থান হবার কথা কিন্তু পশ্চিম জার্মানিতে সেটি ঘটতে আরও বিশ বছর লেগে যাবে।

    অচলপত্রে দীপ্তেন সান্যাল লিখেছিলেন, উত্তম নিশ্চিন্তে চলে বিশ্বজিতের সাথে, তিনিই  সৌমিত্র যিনি চলেন তফাতে । পশ্চিম জার্মানির প্রথম তিরিশ বছরের রাজনীতিতে  তফাতে চলার কোন রেওয়াজ ছিল না। চলো নিয়মমতে, একসাথে ।

    মনে আছে আটের দশকের গোড়ায় কি পরিমাণ উপেক্ষা অবহেলার মাঝে গ্রিন পার্টির অভ্যুদয় হয়েছে।  

    অত্যন্ত বিতর্কমূলক শোনাবে কিন্তু ঠিক সেই সময়ে পূর্ব জার্মানিতে পার্টির সংখ্যা সাতের বেশি, তাদের একটি দলের নামের মধ্যেই ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট শব্দগুলি নিহিত! নিতান্তই লোক দেখানো গণতন্ত্রের ছল কেন না  শেষ অবধি একটি দলের আধিপত্যকে  মেনে নিতে হয়েছে সেটা তাডের সংবিধানে লেখা ছিল।

    নতুন জার্মানির রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিলেন কারা? এঁরা কি নাৎসি কলঙ্ক বিহীন , বর্ণ এগেন গঙ্গাজলে ধোয়া, গণতন্ত্র ও  ব্যক্তি স্বাধীনতার পুরোহিত,  যারা নতুন সংবিধানের প্রথম লাইনে লিখলেন, মানুষের মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়? মর্যাদার রাজনৈতিক রঙ কী?

    বাদার মাইনহোফ গ্রুপ বললেন, না, কিছুই বদলায়নি, সেই একই চরিত্রের একই ধ্যান ধারনার মানুষজন  যাদের হাতে নাৎসি আমলের অনেক রক্ত লেগে আছে তারাই আজ ব্রাউন শার্ট ফেলে দিয়ে সাদা জামা পরে শাসন করছে।

    তাহলে ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়?

    ৮ই মে, ১৯৪৫ , নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দিনে, দেশের জনসংখ্যা কম বেশি সাত কোটি , নাৎসি পার্টির রেজিস্টারে এক কোটি নাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে বিজয়ী চার শক্তি তাদের শত্রুর,  মতান্তরে নাৎসি পার্টির,  শেষ রাখতে চাননি।  সর্বসম্মতিক্রমে নাগরিকদের পাঁচ ভাগে ভাগ করা হলো –

    প্রধান অপরাধী,  যাদের হাতে ছিল রাষ্ট্র শক্তি (হাউপটশুলডিগে)
    কর্মকর্তা যারা দফতর চালিয়েছেন (বেলাস্টেট)
    তাঁদের সহকারী (মিনডারবেলাস্টেট )
    নিরীহ অনুগামী (মিটলয়ফার)
    সম্পূর্ণ নির্দোষ (ঊনশুলডিগে)

    জার্মান আত্মসমর্পণের আগেই হিটলার, গোয়েবলস আত্মহত্যা করেছেন, রিব্বেনত্রপ, কাইটেল ফ্রাঙ্ক সহ দশটি পালের গোদার  বিচার, শাস্তি, ফাঁসি  হল নুরেমবের্গে। ফাঁসির  দড়ি এড়াতে গোয়েরিং বিষপান করলেন। আমেরিকান দখলি জোনের লানডসবের্গ,  ব্রিটিশ জোনের হামেলিন , নরওয়ে নেদারল্যান্ডস চেক পোল্যান্ড লাটভিয়া  ইত্যাদি মিলিয়ে আরও পাঁচশ জন ফাঁসিতে চড়লেন  বা ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ খোয়ালেন।  
      
    নাৎসি পার্টির খাতায় যাদের নাম ছিল তাঁরা সকলেই নর নিধন যজ্ঞে নামেন নি , তেমনই খাতায় নাম না লেখানো মানুষও  লুণ্ঠন বা অত্যাচারের অভিযানে পিছিয়ে থাকেন নি, বরং তুমুল সমর্থন দিয়েছেন। গোটা দেশটাকে তাই বলে  তো আর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না । অতএব শুরু হলো  নাৎসি শুদ্ধির  যজ্ঞ (ডি নাৎসিফিকেশন, এনটনাতসিয়েরুং) বা পরীক্ষা ।  এই পরীক্ষায়  ছিল ১৩১টি প্রশ্ন।  নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ  করার জন্য একটি বা দুটি সাক্ষী যথেষ্ট (শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল), লিখিত নয় মৌখিক ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট পেলেই  যথেষ্ট; যেমন হের মূলার অত্যন্ত ভালো মানুষ, তাঁকে কখনো স্বস্তিকার সামনে সেলাম করতে দেখি নি।

    তবু ফেল করেন  পঁচিশ হাজার, তাঁদের হয় জেলে নয় পাঠানো হয় চরিত্র সংশোধনী কারাগারে। কেউ পুরো সময়টা  জেল বা ক্যাম্পে  কাটাননি,  আগেই ছাড়া পেয়ে যুদ্ধোত্তর জার্মান সমাজে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন জেল যাত্রা বা এক্স নাৎসি তকমা কোন কাজের প্রতিবন্ধক হয়  নি।

    জার্মান ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে বহু হাজার নাৎসি দক্ষিণ আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন মূলত আর্জেন্টিনা ব্রাসিল চিলে উরুগুয়েতে। পশ্চিম জার্মান সরকার জানতেন আডলফ আইখমান বুয়েনোস আইরেসের কোন বাড়িতে থাকতেন, ১৯৫০ সালে বন সরকার তাঁর স্ত্রী পুত্রের জার্মানি  ভ্রমণের ভিসা মঞ্জুর করেছিলেন। কুখ্যাত ডাক্তার ইওসেফ মেঙ্গেলের হদিশ বন সরকারের জানা ছিল- তাঁরা ডাক্তারের শান্তি বিঘ্নিত করেন নি। বাজারি খবর মাফিক আমরা জেনেছি মেঙ্গেলে বা আইখমান পলাতক।

    নতুন চ্যান্সেলর কনরাড আদেনআউয়ারের চিফ সেক্রেটারি , জার্মান সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান আমলার পদে অধিষ্ঠিত হলেন মার্কামারা নাৎসি আইনজ্ঞ হানস গ্লোবকে,  ১৯৩৫ সালের কুখ্যাত নুরেমবের্গ জাতি আইনের অন্যতম প্রণেতা (অসাধারণ প্রাশিয়ান লজিক - ৩/৮ ইহুদি , যার অন্তত একজন পুরো ইহুদি এবং একজন আধা ইহুদি ঠাকুরদা/ দাদু আছেন/ছিলেন- তিনি মিশ্রিত জাতি, সরকারি কাজের অযোগ্য )  যিনি আদেশ দিয়েছিলেন নবজাত  ইহুদি সন্তানের নাম হতে হবে ইজরায়েল, কন্যার নাম সারা যাতে এদের  সহজেই চিনে নিয়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো যায় । এই নিযুক্তির সামান্য প্রতিবাদ হয়েছিল-  আর কাউকে পাওয়া গেল না ? এক সুপরিচিত  নাৎসিকে এই কাজ  দেওয়া হলো  ?

    আদেনআউয়ার বললেন,  সব সময় নাৎসি,  নাৎসি আওয়াজ তুললে রাজকার্য চলে না (ঠগ বাছতে গাঁ উজোড়)।  আমার এমন মানুষ চাই যারা ইতিহাসটা জানে, এই জার্মানিতে গ্লোবকের চেয়ে উপযুক্ত লোক অমিল। । তার সঙ্গে জুড়ে দিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত লাইন,  যতদিন পরিষ্কার জল না পাওয়া যাচ্ছে ততদিন নোংরা জলে কাজ চালাতে হয় ।

    নাৎসি উত্তর যুগে কতোটা নোংরা জল জার্মান জীবনে , ব্যুরোক্রেসি, রাজনীতি , সেনা বাহিনী, গোয়েন্দা বিভাগ , বিচার বিভাগে ঢুকেছিল  হামবুর্গের স্পিগেল পত্রিকা  তার একটি পরিমাপ করে, ১৯৮০ সাল নাগাদ ।

    যদিও পয়লা দফায় পশ্চিম জার্মানিতে নাৎসি দরদী সন্দেহে পাঁচ লক্ষ লোকের  ও পূর্ব জার্মানিতে তিন  লক্ষ লোকের কাজ গেছে সাময়িকভাবে , তাঁরা কেউ দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকেন নি। , এটি প্রমাণিত সত্য যে ১৯৪৫ থেকে ১৯৮০ অবধি পশ্চিম জার্মান গোয়েন্দা বিভাগে  ( বুন্দেস নাখরিখটেন দিনসট ) অর্ধেকের বেশি প্রাক্তন গেস্টাপো কর্মী কাজ করেছেন, তার বস রিচারড গেহলেন এমন তৎপর নাৎসি গোয়েন্দা ছিলেন, আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান  তাঁকে কাজ দিতে চান  গেহলেনের সুযোগ্য  সহকারী পদে নিযুক্ত হলেন ভিলহেলম কিরখবাউম যিনি যুদ্ধের সময়ে রাশিয়ান ফ্রন্টে সামান্যতম সন্দেহের কারণে বহু মানুষ মেরেছিলেন। । বুন্দেস ক্রিমিনাল আমটেও সম সংখ্যক এস এ বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত হয়েছেন, তার অধ্যক্ষ   থিও সেভেকে  ছিলেন কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী এস এস স্রমফুয়েরার, প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় দিয়েছেন , ‘ আমি প্রাক্তন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট ‘ ।  জার্মান বিচার বিভাগে প্রায় ৮০ শতাংশ জজ  নাৎসি যুগের আদালতের বিচারক ছিলেন ( ফোলকসগেরিখট)  যারা ১৯৩৩-১৯৪৫ এই  মাত্র বারো বছরে তাঁদের ক্যাঙ্গারু কোর্টে অন্তত পঞ্চাশ হাজার মানুষকে সামান্যতম অপরাধে ফাঁসিতে চড়িয়েছিলেন।  

    নাৎসি আমলে শারীরিক ভাবে পঙ্গু অথবা অক্ষম মানুষকে বাঁচিয়ে না রাখার পলিসি ছিল ( জাজমেনট অ্যাট নুরেমবের্গ ছবিটির কথা মনে করুন ) – তার হোতা ভ্যারনার ফিলিঙ্গার ও হানস নাখটহাইমের কোন শাস্তি হয় নি , তাঁরা জার্মান  পার্লামেন্টের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।

    শার্টের রঙ বদলে গেছে  এখন সবাই চলে নতুন নিয়ম মতে , ভালো মানুষ ।

    স্পিগেলের তথ্য অনুযায়ী ( বুন্দেসটাগ ডকুমেন্ট ১৭/৮১৩৪ ) নতুন রিপাবলিকের প্রথম পঁচিশ বছরে পঁচিশ জন মন্ত্রীসভার সদস্য, একজন রাষ্ট্রপতি (ওয়াল্টার শীল) একজন চ্যান্সেলর (কুর্ট গিওরগ কিসিঙ্গার ) নাৎসি পার্টির / দলীয় বিভাগের কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন । বিখ্যাত বিদেশ মন্ত্রী লিবারাল দলের হান্স দিতরিখ গেনশার ( যিনি  ১৯৮৩ সালে দল বদল করে সেনটার লেফট সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ও হেলমুট শ্মিড  সরকারের পতন ঘটিয়ে রক্ষণশীল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের হেলমুট কোলকে রাজা বা চ্যান্সেলর বানান )  নাৎসি দলের সক্রিয় মেম্বার ছিলেন।  

    পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটাকে পশ্চিম জার্মান সরকার মোটে বরদাস্ত করেননি । বেয়াতে ক্লারসফেলড পার্লামেন্ট গ্যালারি থেকে চ্যান্সেলর কুর্ট গিওরগ কিসিঙ্গারকে উদ্দেশ্য করে , ‘ নাৎসি , নাৎসি ‘ রব তুলেছিলেন। সেই অপরাধে অসাধারণ তৎপরতার সঙ্গে সেদিনই তাঁর বিচার এবং কারাদণ্ড হয় ; শাস্তির এই ক্ষিপ্রতা কিছু লোককে নাৎসি  রেজিমের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল ।

    নাৎসি পার্টিতে নাম লেখানো যে সব মানুষ  পার্লামেন্টের মেম্বার হয়েছেন তার তালিকা অতি দীর্ঘ।

    পুঁজিবাদী অর্থনীতির পোস্টার চাইল্ড  পশ্চিম জার্মানি ।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকান মার্শাল এইড ও জার্মান পেশির সমন্বয়ে  সেখানে ঘটল  এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক  ইকনমিক মিরাকল, ভিরটশাফটস ভুনডার ! নাৎসি যুগের দাগি আসামিরা নতুন করে গড়ে তুললেন বিধ্বস্ত জার্মান শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে  তাঁদের মধ্যে অন্যতম   হানস -মারটিন শ্লায়ার।

    বাইশ বছরে নাৎসি পার্টির যুব সঙ্ঘের সক্রিয় কর্মী ( ক্রম সংখ্যা ৫০, ৫৬,৫২৭) ইহুদি ছাত্রদের সংস্পর্শ এড়াতে হাইডেলবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সভা পরিত্যাগ,  এস এস ( শুতসস্টাফেল, সুরক্ষা বাহিনী , প্যারা মিলিটারি ফোরস ) ওবারস্টুরমফুয়েরার,  ফ্রান্সের যুদ্ধে  আহত হলে তাঁর মেনটর শীল পাঠালেন প্রাগের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের কাজে , চেক বোহেমিয়া ও মোরাভিয়াতে স্লেভ লেবর ও এরিয়ানাইজেশনের ভার দিয়ে ।  ১৯৪৫ সালে গা  ঢাকা দিলেন , ধরা পড়লে জানালেন তিনি এসে এসে অতি নিচু পদে ছিলেন , তিনশ মার্ক জরিমানা দিয়ে  ছাড়া পেয়ে ডাইমলার বেন্তসে যোগ  দিলেন, দ্রুত পদোন্নতি ,  বোর্ড মেম্বার হলেন।   সমস্ত জার্মান কোম্পানির  শীর্ষে এমপ্লয়ার ফেডারেশনের কর্তা পদে বসে নির্মম হাতে সব ধর্মঘটের  শ্রমিক অসন্তোষের মোকাবিলা করেছেন । টি ভি ডিবেতে তাঁর আগ্রাসী উপস্থিতি   দর্শকদের আরেক যুগ মনে করিয়ে দিয়েছে।

    ১৯৬৮ সালের প্যারিস কমিউন , প্রাগের বসন্তে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন যুদ্ধোত্তর প্রজন্মের রোটে আরমে ফ্রাকতশিওন । সেই উন্মাদনার দিনে  জুন মাসের দু তারিখে বার্লিনে ইরানের শাহের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলে  আঠাশ বছরের বেনো ওনেসর্গেকে পুলিশ মাথায় গুলি করে মারে । এই ঘটনাটিকে  রোটে আরমে ফ্রাকতশিওনের প্রতিবাদের ট্রিগার বলে মনে করা হয়। তাঁদের হিট লিস্টে আমেরিকান আর্মি,ক্যাপ্টেনস অফ ইন্ডাস্ট্রি, পুলিশ , পশ্চিম জার্মান সরকারের প্রতিভূ যা কিছু।  

    যেমন ১৯৭১ সালের মে মাসে ফ্রাঙ্কফুর্টে আমেরিকান সৈন্য ব্যারাকে বম্বিং , পরের বছর মে মাসে কারলসরুহে বিচারিক হত্যা ১৯৭৫ সালে স্টকহলমে জার্মান এমবাসি অবরোধ ও দু জনের হত্যা, জুলাই ১৯৭৭ ড্রেসনার ব্যাঙ্ক চিফ ইউরগেন পনটো হত্যা , সেপ্টেম্বর মাসে হান্স মারটিন শ্লায়ারের অপহরণ , বন্দি এর আ এফ সাথিদের মুক্তির দাবিতে লুফতহানসা বিমান লানডশুট হাইজ্যাকিং - নানান হাওয়াই বন্দর ঘুরে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে অবতরণ । চ্যান্সেলর হেলমুট শ্মিড সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন না , তিনি শার্প শুটার পাঠালেন, যাত্রী মুক্তি এবং হাইজ্যাকার নিধন হলো। সেই খবর পেয়ে অপহৃত হান্স মারটিন শ্ল্যায়ারের নিধন এবং সেই সন্ধ্যায় কোন আশ্চর্য ভাবে স্টামহাইম জেলে বন্দি আন্দ্রেয়াস বাদার , গুডরুন এনসলিন, , ইয়ান কার্ল রাস্পে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হলেন , এটি সরকারি ভাষ্য  হাই সিকিউরিটি প্রিজনে রিভলভার পেলেন কোথায় তাঁরা ?  দুর্জনে তাকে পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের  আখ্যা দিয়েছে।

     


    ইউরগেন পনটো, চিফ, ড্রেসনার ব‍্যাংক



    বন্দি দশায় হান্স মারটিন শ্লায়ার

    এঁরা ছিলেন এক প্রতিবাদী সন্ত্রাসযুগের  প্রথম প্রজন্ম ।

    দ্বিতীয়  প্রজন্ম দেখা দেবে দু বছর বাদে; আমেরিকান সেক্রেটারি অফ স্টেট আলক্সান্দার হেগ আক্রান্ত হলেন বেলজিয়ামে , প্রাণে  বাঁচলেন। তারও কয়েক বছর বাদে ডয়েচে ব্যাঙ্কের চিফ আলফ্রেড হেরহাউসেনের বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ গাড়ি ছিন্নভিন্ন হবে ফ্রাঙ্কফুর্টের উপকণ্ঠে ।

    আমি সেই  জার্মান হেমন্ত কালে এসেছি এই দেশে।  টেলিভিশন দেখি,  বুঝি না প্রায় কিছুই, খবরের কাগজ অনেক দূরের কথা। গোয়েথে ইনসটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জিজ্ঞেস করে যতটুকু জানতে পারি ।  ভাষা শিক্ষা শেষে কাজ করেছি ইউরগেন পনটো হাউসে; দেখলাম অফিসে ঢুকতে গেলে পরিচয় পত্র পেশ করতে হয়, সেগুলি খুঁটিয়ে দেখা হয়।  ড্রেসনার ব্যাঙ্কে আমাদের বারবার বলা হতো চিন্তার কোন কারণ নেই , এই সন্ত্রাসবাদের  কারণেই এতো কড়াকড়ি চালু হয়েছে । পথে ঘাটে  কোন  বাড়তি সিকিউরিটি চোখে পড়ে নি। কলকাতায় সাতের দশকে একদিন রেশনের দোকানে একজন সম্পূর্ণ অজানা মানুষ আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন অভিজিত আমাদের বাড়ি আসে কি না।  আমার এই  একান্ত সন্দেহজনক চেহারা দেখেও রক্তক্ষয়ী  জার্মান হেমন্তে কেউ কোনদিন পথে থামিয়ে প্রশ্ন করে নি আমি কে, কি,  কেন ।  তাদের গোয়েন্দা দফতর সব  খবর রাখেন,  হর তালে কি চাবি রখখে,  হর চাবি কা তালা।  আম নাগরিক উদাসীন , কিছু কোথাও হচ্ছে বলে  শোনা যায়, পঁচিশ তিরিশ বছর বয়েসি  কিছু সন্ত্রাসবাদী মাঝে মধ্যেই ঝামেলা করে ,খ্যাতনামা লোকেরা নিহত হন পথে ঘাটে কিন্তু সাধারণ মানুষকে সেটা ছুঁয়ে যায় না । জার্মান পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, ক্রিমিনাল আমট রক্ষা করবে তাঁদের।

     




    ইউরগেন পনটো প্লাতস, ইউরগেন পনটো হাউস যেখানে কাজ করেছি। ১৯৭৭

    জীবন চলে স্বছন্দে , চাকরি আছে, খাবার জোটে, বছরে ছ সপ্তাহের ছুটি,  পথ ঘাট নিরাপদ , ডয়েচে মার্ক প্রবল  শক্তিশালী । ঈশ্বর তাঁর স্বর্গে , পৃথিবীতে সব ঠিকঠাক।
     
    আমরা আর সেই পরাজিত দুঃস্থ জার্মান জাতি নই ।

    এখন আমরা আবার কেউ (Wir sind wieder wer )।

    আপাতত ।

    দুই জার্মানির পুনর্মিলনের পরে  যে  সন্ত্রাসবাদ দেখা গেছে  তার দায়ভাগ তৎক্ষণাৎ রোটে আরমে ফ্রাকতশিওনের ঘাড়ে চাপানো হয় ;কিন্তু সেখানে আরেক বিতর্কের অবকাশ প্রকট হলো, সে প্রসঙ্গ বারান্তরে ।  

    ক্রমশ

    পু: আমার কথা

    সেই হেমন্তের দিনগুলিতে যা দেখেছি , শুনেছি এ শুধু 
    তারই বয়ান ।  আমি এক নিরীহ পথচারী , সামান্য নিরপেক্ষ দর্শক মাত্র ।

    দূত  এবং কথক অবধ্য।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ জুন ২০২৫ | ২৮৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - Suvankar Gain
    আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবাঞ্জন | 2409:4060:2e13:f673:2076:bf66:e088:***:*** | ২১ জুন ২০২৫ ১৩:১১732116
  •  যথারীতি অসাধারণ হয়েছে দাদা l জার্মানীর ইতিহাসের একটা ফেলে আসা , জোর করে ঢেকে রাখা , কুয়াশাঘেরা একটা সময়কে আপনি ফুটিয়ে তুলেছেন l এই সময়কার কথা লেখবার জন্য আপনি বাংলা সাহিত্যে পথিকৃৎ l অবশ্য আপনি তো হেমন্তের কথা লিখছেন , আর হেমন্ত মানেই তো কুয়াশা l                                                    তবে অদ্ভুত একটা বিষয় , ষাটের দশকের শেষদিকে ইরানের শাহের স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে জার্মান যুবকেরা কেন মাথা ঘামাচ্ছেন এটা তো বুঝলামনা l তখন তো ইন্টারনেট নেই , তাহলে তারা ওসব জানলেন কি করে ? আমি যতদূর জানি , ইরানের  শাহের বিরোধী হিসাবে সুপরিচিত খোম শহর নিবাসী সেই বিখ্যাত ইমাম তখনো বয়সে প্রৌঢ় , খুব সম্ভবতঃ ইরাকে নির্বাসিত , দুনিয়াতে কেউই তার নাম জানেনা l জার্মান এই যুবকেরা কি তার দলের লোক নাকি ? তা নাহলে জার্মান যুবকেরা কি করে ইরানের শাহের শাসন নিয়ে মাথা ঘামাতে গেলো ? গ্রেটা থুনবার্গ বা ভারুফাকিস জাতীয় আক্টিভিজম তখনো ভবিষ্যতের সুদূর গর্ভে ! তাহলে ব্যাপারটা কি ? 
  • Debanjan | 2409:4060:2e13:f673:2076:bf66:e088:***:*** | ২১ জুন ২০২৫ ১৩:১৮732117
  • আরেকটা কথা এই পর্বটা মনে হয় হবে পর্ব ২৮ l আগের সপ্তাহেরটা তো সাতাশ নম্বর পর্ব ছিলো l 
  • হীরেন সিংহরায় | ২১ জুন ২০২৫ ১৪:৩৫732118
  • ইজারলোনে গোযেথ ইনস্টিটিউটে আমার সহপাঠীনি  ছিলেন এক ইরানিয়ান ডাক্তার। আয়াতোলা  খোমেনি তখন ফ্রান্সে আশ্রিত। তাঁর পক্ষে ইউরোপে ইরানিয়ানরা মুখর। RAF শাহকে সাম্রাজ্যবাদের  প্রতিভূ দেখেছেন। শাহের  বার্লিন সফরে যে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয় তাতে গুলি চলে। মনে রাখতে হবে সেটা প‍্যারিস কমিউন এবং পরাগের বসন্তের সময় যুব জনতা উত্তাল। 
     
    আমি ড‍্যানিয়েল কন বেনডিটকে দেখেছি আমাদের ব‍্যাংকের। উল্টোদিক বইয়ের দোকান ছিল । আমার জার্মানি বইতে বয়ান আছে।
     
    ধন্যবাদ। এটা পর্ব ২৮ হবে। ঠিক করে দিয়েছি 
  • asim nondon | ২২ জুন ২০২৫ ২১:২৩732135
  • হীরেন সিংহরায় দাদা, আপনি যে সময়ের কথা বলছেন; তখন মনে হয় না জার্মান দেশে তেমন কেউ যেতে চাইতো। অথচ এখন তো জার্মান দেশে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। 
    অসাধারণ লেখা। সেই সময়কার জার্মানের রাজনৈতিক বাস্তবতা একদম  জলবৎ তরলং ভাবে উঠে এসেছে!
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ জুন ২০২৫ ২২:৫৭732136
  • অসীম 
     
    হক কথা !একেবারে মোক্ষম জায়গাটা ধরে ফেলেছেন  । সে সময়ে কেউ জার্মানি যেতো না , এমনকি ইউরোপের  বড়জোর ইতালিয়ান ইউগোস্লাভ  বাদে।  ব্যাঙ্কিঙ্গেও নয়। ১৯৮৫ সালে যখন ফ্রাঙ্কফুর্ট ছেড়েছি, কোন সুইস অস্ট্রিয়ান নরডিক স্প্যানিশ ব্যাঙ্কের একটিও ব্রাঞ্চ ছিল না ।  আমার আট বছরে ফ্রাঙ্কফুর্ট বাঙালি সমাজে দ্বিতীয় বঙ্গ সন্তানকে পদার্পণ করতে দেখি নি আমার আগে যারা এসেছিলেন তাঁরা ঐ জাহাজে করে জেনোয়া বন্দর , সেখান থেকে ট্রেনে  জার্মানি , ১৯৬০/৬২ সালে শেষ।  পরে আর নয় । ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে একটি মাত্র ভারতীয় রেস্তোরাঁ ছিল মালিক  দুঃখ করতেন, কোন ভারতীয় নেই, কে খাবে এখানে ? জার্মানরা ঝাল মশলা খাঁয় না ! আজ দশের বেশি রেস্তোরাঁ , জার্মানরা দলে দলে খায়। অনেক জার্মান ইউনিভারসিটিতে ইংরেজিতে পড়ান ও ডিগ্রি দেওয়া হয়।  ফ্রাঙ্কফুর্টে বাঙালির সংখ্যা এত বেশি যে তিনটে পুজো হয় - ১৯৮০  সালে আমরা প্রথম পূজোর কর্মী বাহিনীর সদস্য হালে প্রয়াত প্রবীর  দাশগুপ্ত প্রথম নেতা ! 
    অশেষ ধন্যবাদ এই খেইটা ধরিয়ে দেবার জন্য।  
  • asim nondon | ২৩ জুন ২০২৫ ২০:৪০732148
  • হীরেন সিংহরায় দাদা,  যেহেতু রেস্তোরাঁর কথা বললেন; এখন তো বিশ্বের সকল কোণাতেই মনে হয় ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে। যাক।  তবে জার্মানি এখন বিশ্বের অন্যতম শান্তিপ্রিয় সভ্য দেশ হিসেবে স্বীকৃত! এবং বাঙালিরা এখন দল বেঁধে সেই দেশে যায়। তবে বাঙালির মাঝে বিশেষত বাঙাল/ বাংলাদেশিদের মাঝে কিন্তু এখনও অনেক নাজিভক্ত/হিটলারভক্ত লোক আছে। আমার নিজের পরিচিত বেশ কয়েকজনের মুখে হিটলার-প্রেমের কথা শুনেছি। তাদের মতে নাকি হিটলার সঠিক ছিল!! অথচ যতদূর জানি  সেই জার্মানির মানুষেরাই হিটলারকে তাদের ইতিহাসের কালো অধ্যায় মনে করে। এবং হিটলারের গুণগান গাওয়া লোকদের সন্দেহের চোখে দেখে। আর এদিকে আমাদের এই বাঙাল সমাজ!! হায়,  কী আর বলবো?!! 
     
    দাদা, আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার এই সিরিজটা বিরাটকায়। আমি কেবল এই ২৮ তম পর্বই প্রথম পড়েছি। এবং আগ্রহ বোধ করছি। ধীরে ধীরে আমাকে পেছনের পর্বগুলোও পড়তে হবে। আপনার জন্য ভালোবাসা রইলো। এবং শুভ কামনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন