এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ১৯ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ জুন ২০২৪ | ৭৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • বৈঠকি আড্ডায় ১৯

    দর দস্তুর – দেশে দেশে

     
    • কচু কত করে মণ ? কুমড়ো ?

    দাম শুনে নারাণ বলে ,  আধ মণ লিব। এই দামে লয়।  

    পঞ্চমী পুজোর দিন মা আমাকে আমাদের কিষেন  ( কৃষাণ ) নারাণ বাগদির সঙ্গে দুবরাজপুরের হাটে পাঠিয়েছে । সপ্তমী ও নবমীর দিন লোক খাওয়ানো হয়, অনেক পরিমাণে  কাঁচা সবজি অর্থাৎ কচু , কুমড়ো কেনা হবে তার সঙ্গে কিছু আলু , শাক ।  আমার ভূমিকা সেখানে নীরব দর্শকের।  এক এক জায়গায় নারাণ জিজ্ঞেস করে এটা কত টাকা সের ( যদিও মেট্রিক তখন সবে চালু) ওটার দাম কতো । শুনে নিয়ে বললে,  বড্ডা বেশি যে ‘।

     ‘চলো আগাই , আরও দেখি যেঁয়ে' বলে আমাকে প্রায় বগলদাবা করে সে চলে  আরেক ব্যাপারীর দিকে । অবনী মুদির দোকানের সামনে একটা টিলার মতন জায়গায় আমাদের গরুর গাড়ি বাঁধা আছে,  চেনা বলদ দুটি খড় চিবোচ্ছে।  বিশাল হাট , কচু আলু কুমড়ো বিক্রেতার অন্ত নেই কিন্তু নারাণ বাগদি কেন এক জায়গায় কিছু না কিনে আবার আরেক ব্যাপারির  দিকে এগুচ্ছে ? এক সময় জিজ্ঞেস করলাম , মা আমাকে যা টাকা দিয়েছে তাতে এখানেই কিনতে পারি না ? নারাণ বাগদি বললে যা দাম বলছে তাই দেবো কেন ?  দর দাম করতে হবে না ?

    বছর দশেক বয়েসে বীরভূমের দুবরাজপুরে হয়তো প্রথম সেই শব্দের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।  যে যা দাম চাইছে সেটা দেওয়ার কথা নয়,  দর দাম করতে হয়।  নইলে মা বলবে,  হ্যাঁরে তোকে  ছেলে মানুষ পেয়ে ঠকিয়ে দিয়েছে । নারাণে   কি করছিল?

    ওই ঠকে যাওয়ার ভয় থেকেই কি দরাদরির সূচনা? সঠিক দামটা কি ? দর করেও কি সেটা জানা যায় ?

    বহু বছর বাদে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙ্গের বাজারে এসে অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের দেখা পেলাম । তাঁরা বহু অর্থব্যয়ে এম বি এর ক্লাসে আহরিত শব্দমালা আওড়ান কথায় কথায় :  ‘প্রাইস ডিসকভারি’ , ‘মার্কেট রিড ‘,’সফট সাউনডিঙ’, 'মার্কেট ইনটেল‘ ।  

    দুবরাজপুরের হাটে নারাণ বাগদি সেটাই আমাকে  হাতে কলমে দেখাচ্ছিল।  

    দস্তুর কথাটা আমরা পেয়েছি  ফারসি থেকে-  নিয়ম কানুন,  কায়দা,  পদ্ধতি। মূল পার্সি পুরোহিতের নাম দস্তুর,  তাঁরা নিয়ম কানুন মাফিক কাজ করেন, যা থেকে এসেছে ‘ দস্তুরমতো ‘ । দরাদরি করার প্রথাকে কি তাই  দর  দস্তুর বলে ?  ক্রমশ দেখা গেল  আমাদের দৈনিক জীবনে এই বারগেনিং এর বিরাট ভূমিকা আছে ; ‘মাছের বাজার ‘  আসলে স্টক এক্সচেঞ্জের মতো একটা ট্রেডিং ফ্লোর । দরাদরি যখন সামগ্রিক রূপ নেয় তাকে বলি কালেকটিভ বারগেনিং !
    বাল্যাবস্থা থেকে জেনেছি আশু বাবুর বাজার,  টালা পার্কের ঝাল মুড়িওলা,  দমদম রোডে বম্বে সাইকেল রিপেয়ার শপে দর দাম করা যায় কিন্তু পাইকপাড়া থেকে দু নম্বর বাসে উঠে বলা যায় না হিন্দ সিনেমায় নামবো ; চোদ্দ পয়সা কেন  একটু কম করে  এগারো পয়সার টিকিট দিন না  ( শ্যামবাজার অবধি আট , বিবেকানন্দ রোড এগারো, হিন্দ সিনেমা চোদ্দ এসপ্ল্যানেড সতেরো পয়সা ভাড়া তখন – আহা সে এক সময় ছিল!)

    সিনেমার টিকিট দশ  আনা ( ৬৫ পয়সা )  এক টাকা চার আনা (এক টাকা পঁচিশ পয়সা) – বাঁধা দর।  কিন্তু রমরমা ছবির টিকিট পাওয়া যেতে পারে সিনেমা হলের কাউনটারে নয়, মিত্রা মিনার ছাড়িয়ে , দর্পনা সিনেমার পাশের গলিতে । সেই কবে কালা বাজার ছবিতে দেব আনন্দ ‘ দো কা পাঁচ’ বলতে বলতে সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করেছেন।  পরে বিজ্ঞ ব্যাঙ্কারদের কাছে প্রভূত জ্ঞানের বাণী  শুনে মনে হয়েছে সেটা আসলে ছিলো  আজকের ভাষায়  ‘ সেকেন্ডারি মার্কেট’!  বন্ড বা লোন বাজারে ছাড়ার পরে ঋণ গ্রহীতার অবস্থা এবং  দেশের রেটিং অনুযায়ী যে দরে কেনাবেচা হয়ে থাকে সেটাই তো সেকেন্ডারি মার্কেট প্রাইসিং !  

    শ্যামবাজারের চৈতন্য বস্ত্রালয়ের গদির পেছনে ‘ এক দাম ’ কথাটা এমব্রয়ডারি করে কাচের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা ছিল  ।  সেখানে শাড়ি কিনতে গিয়ে মা বলেছে , এটার দাম একটু কম করুন না।  বিক্রেতা সেই লেখাটা দেখিয়ে দিয়ে বলেন নি দেওয়ালের ফ্রেমে কি বাঁধানো আছে পড়ে  দেখুন । বরঞ্চ বলেছেন,  মাসিমা যদি দুটো শাড়ি কেনেন তাহলে না হয় ….

    আজকে যখন দোকানে দোকানে লেখা দেখি ‘ বাই ওয়ান,  গেট ওয়ান ফ্রি ‘ , শ্যামবাজারের চৈতন্য বস্ত্রালয় মনে পড়ে যায়।

    বেনটিঙ্ক স্ট্রিটে,  চিনে বাজারে জুতো কেনার গল্প খুব চালু ছিল । সেই চিনে বাজার যেখানে দোকানদার একদিন পথ চলতি মানুষকে  থামিয়ে বলেছে  , সাহেব, টেক টেক নো টেক নো টেক, একবার তো সি‘ । জুতোর দোকানি একাশি টাকা বললে আপনি পাল্টা প্রস্তাব দেবেন , আঠারো । মানে ওই সংখ্যা গুলো জায়গা বদলাল। এটা স্টারটিং গান ফায়ার - এবার দর কষাকষি শুরু।  

    একদিন কলকাতা থেকে আইন কানুনের সব্বনেশে দেশ জার্মানিতে এসে দেখলাম সেটা চলে কেতাবি মতে , শৃঙ্খলার ভিত্তিতে , অর্ডার - অরডনুং ! সুপার মার্কেটে দরাদরি হয় না, ফ্রাঙ্কফুর্টের ক্লাইন মারকট হালেতে চাষিরা যে সব দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে বসেন  সেখানেও ‘এক দর ‘ । তবে এক টুকরো চিজ ফিরিতে খাইয়ে দেন । ফ্ল্যাট বাড়িতে ঢুকলেই দেখা যায়  একটা ইস্তেহারে টেন কমান্ডমেন্ট  লটকানো আছে – এই বাটিতে  বাস করিতে গেলে আপনাকে কি কি মান্য করিতে হইবে । যেমন  রাত্তির নটার পরে স্নান করা নিষিদ্ধ , যদি আপনি ওপরের কোনো  তলায় থাকেন –স্নান শেষে বাথটাবের জল  পাইপ দিয়ে জলপ্রপাতের মতো নেমে এলে তার শব্দে শিশু  ও বৃদ্ধদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়।

    ‘ বউনির সময়’, ‘ আপনার কথা থাক,  আমার কথাও থাক’ ‘ কেনা দামটা অন্তত দিন বাবু’  এমন  সংলাপ শুনে, ‘  আজ  নগদ কল উধার’ ‘ ধার চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ‘ নোটিস পড়ে  বড়ো হয়েছি । এ দেশে এসে সেটা বেমালুম ভুলে যেতে হলো । ডিসকাউনট শব্দটা সে আমলে জার্মানিতে প্রায়  অচেনা। ইংল্যান্ডে এসেও সেই একই দৃশ্য , চলো নিয়মমতে । এমনি করে দিন টিন কাটছিল,  হঠাৎ একটা অগ্নুৎপাত ঘটল।  

    সিটি ব্যাঙ্কে  আমার বস  জো ম্যাকেভিতসের বাড়ি গেছি লন্ডনের হল্যান্ড  পার্কে। । তাঁর স্ত্রী কিম,  কোরিয়ান;  তিনি বান্ধবী লিনের সঙ্গে  হ্যারডসে শপিঙের গল্প বলছিলেন।  সব কিছুর দাম যথারীতি উচ্চাঙ্গের । বস্তুটি যাই হোক না দোকানটার নাম যে হ্যারডস।  তা তিনি অগ্নি মূল্যের একটি বিছানার চাদরের সেট নিয়ে সেলস কাউনটারের মহিলাকে  বলেছেন , আপনি দামটা চার পার সেন্ট কম করুন। এমন প্রশ্ন সে মহিলা কখনো  শোনেন নি -  জ্ঞান হারানোর আগে বলেছেন , সেকি ? দাম যা  লেখা আছে সেটাই  তো দেবেন ।

    কিম তাঁকে বলেছেন , ক্রেডিট কার্ডে কিনলে আপনাদের  তিন চার পার সেন্ট কমিশন দিতে হয় ।  আমি ক্যাশ দেবো , ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে যা দিতেন তার চেয়ে নয় এক পার সেন্ট কম ডিসকাউনট দেবেন।  

    বস্টনে জন্ম,  লেখা পড়া । জো’ র চাল চলন আচার ব্যবহার অত্যন্ত পরিশীলিত- এমন নিপাট ভদ্রলোক জীবনে কম দেখেছি  ।  কিমের  কাহিনি শেষ হলে একটু বিব্রত মুখে আমাকে বললেন, কিম হ্যারডসের দুর্গে কোন ডিসকাউনট পায় নি , ওই জ্ঞান দেওয়াটাই সার হয়েছে।

    তাঁকে থামিয়ে দিয়ে কিম বললেন তোমাকে আরেকটা কথা তো বলা হয় নি।  আমার বান্ধবী লিন একটা সোফা দেখছিল । সেটারও তেমনি অসভ্য রকমের দাম। সোফাটা  বেড হয় কিনা , পুল আউট করে দেখার  সময়  তলায় লাগানো ফার্নিচার মেকারের নাম নম্বরটা সে  পেয়ে যায় । তৎক্ষণাৎ  ইয়র্কশায়ারের ওয়েকফিল্ডে সেই দোকানে  ফোন করে বলেছে আপনার কারখানা থেকে সরাসরি কিনবো , দাম বলুন।

    ম্যাকেভিতস দম্পতি এখন কানেকটিকাটের ওয়েস্টপোর্ট শহরে থাকেন। বছর কয়েক আগে নিউ ইয়র্কে এক কোরিয়ান রেস্তোরাঁয় আমাদের আপ্যায়ন করেছিলেন ।  কথায় কথায় হ্যারডসের গল্পটা আবার উঠলো ! 

    ক্রমশ  জানলাম ওয়েম্বলিতে গুজরাতির ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি , সাউথহলের বস্ত্রালয়ে দরাদরি হয় – সেটা তো প্রত্যাশিত । মুহ মাঙ্গা দাম দিয়ে দিলে তো খেলাটা শুরুই হয় না । আমার ভ্রমণের ভূগোল বদলাতে থাকে । ফিক্সড প্রাইস অনেক জায়গায় খাটে  না, ইংল্যান্ডেও নয়।

    শ্রমিক কৃষকের স্বর্গরাজ্যে প্রথম জীবন কাটিয়ে আমার স্ত্রী রোদিকা এই দর দাম বস্তুটির বিষয়ে  সম্পূর্ণ অবজ্ঞাত ছিল।  সরকারি দোকানে  মাখন  সসেজ  না থাকলেও তার দাম লেখা থাকতো । দোকানের পেছনের দরোজা দিয়ে  আরেক দামে যে দু নম্বরি কারবার হয় তার গল্প শোনা কিন্তু  সে জানতো ওটা পার্টির সঞ্চালকদের টেরিটোরি । সে বিষয়ে চর্চা না করাই ভালো -আপনি বাঁচলে বাপের নাম  এই প্রবাদের অনুরূপ  রোমানিয়ান ভার্শন আছে ( মাম দুস বউ,  শি আম ভেনিত ভাকা ) ।

    নেপলসে ঘুরছি। রোদিকা বললে , দ্যাখো দোকানের জানলায় নানান পোশাক সাজানো আছে কিন্তু কোন দাম লেখা নেই । বললাম গিয়ে জিজ্ঞেস করো।


    নেপলসের দোকান

    আমরা যেমন হিন্দি জানি বলে উর্দুতে বাক্যালাপে নিজেদের সক্ষম মনে করি, রোমানিয়ানরা  ধরে নেয় তারা ইতালিয়ান জানে (দুটোর সূত্র অবশ্য এক-ভালগার ল্যাটিন )।  দোকানে ঢুকে সে জিজ্ঞেস করেছে ওই ড্রেসটার দাম কতো । দোকানি বলেছে , সিনিওরা , দিপেন্দে ( ইট ডিপেনডস )।  শুনে রোদিকা ক্ষিপ্ত – কিসের ওপরে ডিপেনড করে ? দাম লিখতে পারেন না ?

    কিছু না কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে একটু শান্ত হলে তাকে ওই নেপলসেই আমার একটি অভিজ্ঞতার গল্প বলি।  

    স্টেট ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজের সময়ে প্রথমবার নেপলস এসেছি , সঙ্গে শ্রীধর ( যে পরে ব্যাঙ্কের অন্যতম শীর্ষস্থান আলোকিত করে ) । আইল অফ কাপরির   বোটের জন্য আমরা অপেক্ষারত । সামনে একটা ছোট্ট ঝাঁপে বসে এক মাঝ বয়েসি ইতালিয়ান মহিলা পিকচার পোস্ট কার্ড বেচছেন , তার পাশেই আছে অজস্র পাথরের মালা , সবই নাকি ভিসুভিয়াসের ক্রেটারের প্রস্তর চূর্ণ ।  অলস কৌতূহলে সেদিকে তাকিয়ে আছি। এক আমেরিকান টুরিস্ট কিছু কিনলেন। লক্ষ করলাম দাম দেবার পরে তিনি  তাঁর পকেট থেকে ক্যালকুলেটর বের করে কি যেন হিসেব করছেন - সে সময়ে দু হাজার ইতালিয়ান লিরায় এক ডলার । কিছু কেনাকাটা করতে গেলে অনেক শূন্য সামলাতে হয়। হিসেব নিকেশ করে তিনি হয়তো অনুধাবন করলেন বড়ো বেশি ডলার ব্যয় করে ফেলেছেন।  তিনি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে ইতালিয়ান দোকানিকে বললেন,  ইউ নো, দিস ওয়াজ এ রিপ অফ প্রাইস, এ রিপ অফ!

    রিপ অফ কি , সেটা খায় না পেতে শোয় তা  ইতালিয়ান মহিলা জানেন না ।  সেটাকে হয়তো কমপ্লিমেন্ট মনে করে মাথা দুলিয়ে বললেন,  সি,  সি,  সিনিওর,  রিপ অফ ! 


    ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজারের প্রবেশ পথ

    বারগেনিং বা দর দস্তুরের মক্কা,  জেরুসালেম,  বারাণসী দেখেছি । তার নাম ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার ( কাপালচারসি – ঢাকা বাজার ), তিরিশ হাজার বর্গ মিটার ব্যাপী পাঁচশ বছরের পুরনো এই দুনিয়ার প্রথম শপিং মল।  তার শাখা প্রশাখা দেখেছি সারায়েভো , তিউনিস - কোথায় নয়। দিনে তিন লক্ষ মানুষের ‘ফুট ফল’ হয়; এ হেন জিনিস নেই যা আপনি এখানে পাবেন না । তার চেয়েও বড়ো কথা আপনি  যা কিনতে আসেন নি , যার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আধ ঘণ্টা আগেও  আপনার কোন জ্ঞান গম্মি ছিল না প্রচুর দরাদরি করে সেই রকম কিছু একটা কিনে দাঁও মেরেছেন ভেবে আপনি বীর দর্পে গ্র্যান্ড বাজার পরিত্যাগ করে গালাতা ব্রিজের দিকে যাবেন।

    সে পথে বাঁ হাতে আবার পড়বে মিস্র বাজার । যদিও সেটা জামা কাপড়ের নয় , দুনিয়ার হাজার পাঁচেক মশলা মেলে সেখানে কিন্তু দরা দরির দস্তুর সম্যক চালু।  


    গ্র্যান্ড বাজারের অন্দরে

    লেদার জ্যাকেট কিনবো । গ্র্যান্ড বাজারের দোকানে ঢুকতেই উদ্বাহু  আপ্যায়ন -  আসুন , বসুন কি নেবেন চা না কফি না কোলা ? চমৎকার আরামদায়ক চেয়ারে বসে রোদিকা ‘কফি’  উচ্চারণ করতেই  একটি যুবক ত্রস্ত পদে তার খোঁজে বেরিয়ে পড়ল।  এবার  জ্যাকেট প্রদর্শন ও নিরীক্ষণ শুরু: আচ্ছা,এটা দেখুন,  ওটা দেখুন , শুঁকে দেখুন , লেদারের গন্ধ পাচ্ছেন কি ? আহা , একটা থ্রেড বের করে দেশলাই কাঠি দিয়ে পুড়িয়ে দেখাব, আসলি ( তুর্কিতে একই শব্দ, অর্থ ) লেদার ।

    এটার কতো দাম ? দোকানি অমায়িক হেসে বললেন, ম্যাডাম, আমরা হাজারের নিচে বেচি না তবে আপনার জন্যে আটশ ডলার ( টার্কিশ লিরা নয়, ডলারে দাম জানাচ্ছেন, আমি সেটাকে পাউনডে অনুবাদ করে রোদিকাকে শোনাচ্ছি - ঝরিয়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের  শিক্ষা – অঙ্ক কষতে পারি মনে মনে, লুকিয়ে চক এবং ডাস্টার!)।

    এই আমার কিউ, দাবার বোর্ডে নেক্সট মুভ ।  দাম শোনামাত্র উঠে  দাঁড়িয়ে বাইরের দরোজার দিকে এক পা বাড়িয়েছি , ‘রোদিকা  চলো,  এখান  থেকে বেরিয়ে পড়ি’ । দোকানদার ও  তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা জোর করে আমাদের চেয়ারে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে – সার এই আপনার খাঁটি তুর্কি কফি এলো বলে ! আহা,  আপনারা বসুন, দেখুন।  দামের আলোচনা সবসময় করা যায় । আপনারা আমার মেহমান, আমার বন্ধু  । তা বলুন না কোনটা আপনার পছন্দ?

    এবার রোদিকার মুভ- ‘ ইংল্যান্ডের  ক্যাটালগে ঠিক এমনি লেদার জ্যাকেট দেখেছি , তার দাম সাড়ে  চারশ ডলার ‘ । দোকানি এবার মনে মনে অঙ্ক কষে হাত কচলে বললেন , ম্যাডাম আমার বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে যে ।

    এটি পাঁচ নয়, তিন অঙ্কের নাটক – একসপজিশন : কুশীলবের প্রবেশ ও আলাপ , কফি প্রস্তাব , রাইজিং অ্যাকশন –দর দাম, উইংসের পাশ দিয়ে মঞ্চ ত্যাগের হুমকি ;  ক্লাইম্যাক্স – দু পক্ষের সম্মতিতে দ্রব্য ও মুদ্রা বিনিময় ।

    ফলিং অ্যাকশনের স্থান নেই , আর রেজোলিউশন  ওই ক্লাইম্যাক্সের অন্তর্ভুক্ত।   

    টিউনিস, সারায়েভোর বাজার , বাহরেন , দুবাইয়ের সুক থেকে বার্সেলোনার লাস রামবলাস সর্বত্র এই নাটক মঞ্চায়িত হতে দেখেছি ।

    দুশ ডলারে কেনা সেই আজানু লম্বিত লেদার জ্যাকেট আজও রোদিকা সগর্বে ও সানন্দে পরিধান করে থাকে।

    করাচীর আই আই চুন্দ্রিগর রোডের সিটি ব্যাঙ্ক অফিসে একাধিক  বার  গিয়েছি। এমনি একদিন  দুপুর বেলা নাগাদ লাঞ্চের পরে কোন মিটিং নেই  দেখে ভাবলাম পাকিস্তানের ফরেন এক্সচেঞ্জ আয় একটু বাড়িয়ে  আসি । ফাইনানশিয়াল ইন্সটিটিউশনের হেড ইউসুফ নজরকে বললাম একবার বোহরি  বাজার যাবো , শলওয়ার কমিজ কিনতে । সঙ্গে কাউকে দেবে ? ইউসুফ বললে , কেন ?  এটা কি  বিলেত আমেরিকা না চিন জাপান ?  তোমাদের বম্বে কলকাতার সঙ্গে কোন তফাৎ নেই। এটা কি বিদেশ মনে হচ্ছে?  একা যেতে পারো না?

    সঙ্গত  প্রশ্ন । দুটি বিদেশি ব্যাঙ্কের কাজে ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় সে দেশের  মানুষকে কাছ থেকে দেখেছি , তাদের কখনো পর মনে হয় নি। । ‘ইন্ডিয়া সে আয়ে হ্যাঁয়’  ‘ জানা  মাত্র  করাচীতে যে খাতির যত্ন জুটেছে তা দিল্লী মুম্বাই চেন্নাইতে কখনো আশা করতে পারি না-  সেখানে আমি আরেক বিদেশি ।

    তবু  বললাম , না,  মানে স্থানীয় লোক সঙ্গে থাকলে দর দাম করা যায় ।

    সে আমলে মাথা ভর্তি চুল, দাড়ি  । আমাকে ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করে ইউসুফ  বললে, হীরেন,  তুমি মোটামুটি উর্দু বোঝো, বলো । দোকানদারের সঙ্গে গপশপে  কোন অসুবিধে হবে না। বরং তোমার  চুল দাড়ি দেখে সে  ভাববে মৌলভি এসেছে।  স্বচ্ছন্দে দরাদরি করতে পারো।

    ট্যাক্সি নিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে বোহরি বাজারে নেমেছি , একেবারে কলকাতার বড়ো বাজার ! সরু গলির দুপাশে পসরা - রান্নার হাঁড়ি থেকে বাই সাইকেলের ঘণ্টি,  কি নেই !  কোথাও পরের পর শলওয়ার কামিজের দোকান। একটা  দোকানে  দাঁড়িয়ে দাম জিজ্ঞেস করলাম । যা বললে তার অর্ধেক দেবো শুনেই দোকানদার দু হাত বাড়িয়ে আমার ডান হাত ধরে ফেললে , ‘মৌলভি, মেরে ঘর মে বিবি বাল বচ্চে হ্যাঁয়, কুছ তো রহম কিজিয়ে । বস,  আপকি  খাতির , দস  রূপয়ে কম লেঙ্গে !   

    সেই  মুহূর্তে  দুবরাজপুরের হাট , নেপলসের চেনত্রো কমারচিয়ালে , ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার,  ওয়েম্বলির  ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি,  সাউথহলের জামা কাপড়ের দোকান,  করাচীর বোহরি  বাজার একাকার হয়ে গেলো ।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ জুন ২০২৪ | ৭৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 163.116.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ১২:১৫533871
  • টার্কির এই ​​​​​​​বাজারটা ​​​​​​​বাকেট ​​​​​​​লিস্টে ​​​​​​​রেখেছি। ​​​​​​​একবার দেখতে ​​​​​​​যেতেই ​​​​​​​হবে যে কোনোভাবে। কয়েক বছর আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে এটা নিয়ে খুব ভালো লেখা এসেছিলো। সেই থেকে ইচ্ছে।  
     
  • | ২৯ জুন ২০২৪ ১৩:২৭533873
  • আপনি করাচী গেছেন পড়ে এমন হিংসে হল না... একেবারে নীল সবুজ হিংসে। sad 
    আমি তো বোধহয়  জীবনেও পাকিস্তানের ভিসা পাব না। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৯ জুন ২০২৪ ১৩:৪০533874
  • না পাবার কোন কারণ নেই। আমার চেনা জানা মানুষ আসা যাওয়া করেন, কাজে অকাজে । আমি ভারতীয় ও ব্রিটিশ দুই পাসপোর্টেই গিয়েছি । কোনদিন ভুলব না আমার নীল পাসপোরটের পাতা উল্টে পালটে দেখলেন না - ছাপ দিলেন  ইমিগ্রেশন অফিসার  -  ওয়েলকাম টু পাকিস্তান !
     
    আপনি যদি আমন্ত্রণ পত্র চান  জানাবেন । 
  • hmm | 139.99.***.*** | ২৯ জুন ২০২৪ ১৩:৪৭533875
  • ভাগ্যিস দাড়িটা রেখেছিলেন, মোল্লা ভেবে ডিসকাউন্ট দিল। হিন্দু জান্তে পারলে ত...
  • হীরেন সিংহরায় | ২৯ জুন ২০২৪ ১৪:৪৩533876
  • এটি অসম্ভব ভুল ধারণা ।এর বেশি কিছু বলার নেই। 
  • | ২৯ জুন ২০২৪ ১৫:১২533878
  • ওবাবা এত o খাবি না আঁচাবো কোথায় কেস। নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই।  আপনার সাথে ​​​​​​​যোগাযোগ ​​​​​​​করব ​​​​​​​তাহলে ​​​​​​​একটু ​​​​​​​তৈরী ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​নিয়ে।  এমনিতে ​​​​​​​একটা ​​​​​​​সোলো ​​​​​​​ব্যাকপ্যাকার্স ​​​​​​​অরোরা ​​​​​​​ট্রিপের ​​​​​​​প্ল্যান ​​​​​​​করছি, ​​​​​​​ভাবছিলামই ​​​​​​​আপনার ​​​​​​​সাথে ​​​​​​​যোগাযোগ ​​​​​​​করব ​​​​​​​কিছু ​​​​​​​টিপস ​​​​​​​এন্ড ​​​​​​​ট্রিকস ​​​​​​​এর ​​​​​​​জন্য। ​​​​​​​আপনার ​​​​​​​ঐ ​​​​​​​হোটেল ​​​​​​​খরচ ​​​​​​​বাঁচাতে ​​​​​​​আর ​​​​​​​সময় ​​​​​​​বাঁচাতে ​​​​​​​রাত্রের ​​​​​​​ট্রেনজার্নি ​​​​​​​করার বুদ্ধিটা ​​​​​​​হেব্বি ​​​​​​​পছন্দ ​​​​​​​হয়েছিল। ​​​​​​​
     
    এমনিতে নীলান্জন হাজরা যেমন বার দুয়েক গেছেন সাংবাদিক হিসেবে। তো আমি যেটা জানি ঐরকম সাংবাদিক বা কোন শিল্পী, লেখক ইত্যাদিরা আবেদন করলে ভিসা পেয়ে যান। কিন্তু আমার মতন কোনও বিশেষ গুণ না থাকা পাবলিক নিছক লাহোর করাচী মহেঞ্জোদড়ো দেখতে যেতে চাই বললে নাকি ভিসা রিজেক্ট হয় বেশিরভাগ।  তীর্থযাত্রী হিসেবে হিঙ্গ্লাজের ভিসা পাওয়া যায় কিন্তু আমার তাতে আগ্রহ নেই। 
     
    হ্যাঁ ভিসার চক্কর পেরিয়ে যেতে পারলে অশাধারণ আতিথেয়তা পাওয়া যায় তা জানি। 
  • | ২৯ জুন ২০২৪ ১৫:৪৫533879
  • *হিংলাজ
    **অসাধারণ
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৯ জুন ২০২৪ ১৫:৫৭533881
  • দ দি, ভিসা না পাওয়ার কোনো কারণই নেই। তুমি তো ইউ টিউবে ট্রাভেল ব্লগ দেখো, দীপ বলে একজন আছে 100 and above বোধয় চ্যানেলের নাম। দিব্যি ঘুরে এসেছে পাকিস্তানের সবকিছু। কোনো অসুবিধা হয়নি।
    তাছাড়া ব্যবসায়ীরা তো নিয়মিত পাকিস্তান , চীন যায়। ভিসা পেতে আটকায় না তো।
     
  • | ২৯ জুন ২০২৪ ১৯:৪২533890
  • রমিত, 
    দীপ মানে যিনি ফুড ভ্লগিং করেন তো?  একটু ঘেঁটে দেখলাম ইনি তো কর্তারপুর সাহিব গেছিলেন শুধুমাত্র।  কর্তারপুরে পাঞ্জাব থেকে প্রতিবছর বহু লোক যায়। কথিত আছে ওখানে গুরু নানক দেহত্যাগ করেছিলেন। শিখদের ধর্মস্থান। ওখানে যেতে ঠিক ভিসা লাগে না, মানে কর্তারপুর করিডর দিয়ে গেলে। ভ্যালিড পাস্পপোর্টসহ অনলাইনে আবেদন করতে হয়। 
    বললাম না ধর্মীয়স্থানের জন্য আবেদন করলে ভিসা পাওয়া যায়। কিন্রু শুধুই সেই জায়গার জন্য। আচ্ছা হিংলাজে পুজো দিয়ে একটু তক্ষশীলা ঘুরে আসি - উঁহু সেটি হবে না। 
     
    আমার তো হায় কোনোই ধর্মীয়স্থানে আগ্রহ নাই। 
  • Suvasri Roy | ৩০ জুন ২০২৪ ১০:৫৫533919
  • অসাধারণ! দুর্দান্ত উপভোগ্য লেখা।
  • শিবাংশু | ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:২৭534036
  • @হীরেনস্যার, 
    বহুদিন আগের কথা। অল্প বয়স। প্রথম হায়দরাবাদে গিয়েছি। সে ছিলো এক অন্য শহর। একদিন বিকেল বেলা সেখানে ওল্ড সিটি, চারমিনার এলাকায়। চন্দ্রবাবু নাইডু তখন ডাক্তারি করেন। তাঁর শ্বশুর মশাই সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। নববিবাহিত ব্রাহ্মণীর জন্য কিছু মুক্তোর ইয়ে নিতে হবে। সঙ্গে অশোক আগরওয়াল। ঘাটশিলার ছেলে, তবে দিল্লিতে পড়াশোনা করেছে। জায়গাটা দেখে মনে হলো কাহিরা, দামাস্কাস, ইস্তান্বুলের গ্র্যান্ড বাজারের ছোটো সংস্করণ। কম দামে খাঁটি বস্তু পাওয়া যাবে এমন একটি দোকানের নাম কেউ সিফারিশ করেছিলো। সে দোকান মস্তো।  ঢুকতেই 'চায়-কাপি-কোল্ড্রিং'-এর ধাক্কা। তার পর একের পর এক দ্রব্যের আগমন। ব্যাংকের লোক শুনে খান জাঁহাখানের ভাগনে ভেবেছে। আমি কলকাতার লোক নই। দরদস্তুর করার ব্যাপারে কিছু দাড়ির লজ্জা তখনও ছিলো। মানে দোকানি একশো বললে আশির নিচে নামাটা 'অভদ্র' ব্যাপার মনে হতো।  সেভাবেই এক-আধটা সামগ্রী। অশোক ব্যাটা দেখি দোকানির সঙ্গে দেশ গাঁয়ের গপ্পো করছে। জানা গেলো এই সব ব্যবসায়ী তিন-চারশো বছর আগে রাজস্থান-হরিয়ানা থেকে এখানে এসেছিলেন। বেশ কামারাদোরি গড়ে উঠতেও দেখলুম। আমি জিনিস নিয়ে পয়সা দিয়ে দেবার পর দোকানি অশোককে জিগালো 'আপ কে লিয়ে ক্যা দিখাউঁ?'। অশোক বলে কী, 'কুছ ভি মত দিখাইয়ে, য়হি বেহতর হ্যাঁয়।' 
    দোকানি অবাক হয়ে বলে, 'কিউঁ, কিউঁ?'
    অশোক বলে, 'মহারাজ, ম্যাঁয় ভি অগ্রসেন পরিবার কা হুঁ। মেরে মিত্র অস্সি রুপইয়া চুকায়া। ম্যাঁয় তো পঁয়তিস কা উপর নহি জাতা...'
     
  • শিবাংশু | ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:৩৩534037
  • কেন সারা পৃথিবীতে অগ্রসেন পরিবার দর-দস্তুর করায় নোবেল দাবি করে, তার প্রমাণ পেলুম আরো একবার...
     
  • হীরেন সিংহরায় | ০১ জুলাই ২০২৪ ২৩:১৬534038
  • ফাটাফাটি! অগ্রসেনী পদবী হয় না? শুনেছি বোধহয়!
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০১ জুলাই ২০২৪ ২৩:২৫534039
  • দ দি ঠিক বলেছ, অনেকদিনের আগের ভিডিও তো খেয়াল ছিল না, আবার দেখলাম, শুধু কর্তারপুরই গিয়েছিল। 
    তবে শুধু কর্তারপুর নয় আরো ১৪টা জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায় পিলগ্রিম ভিসাতে। 
     
    Shadani Darbar in Hyat Pitafi, Ghotki
    Katasraj Dham in Lahore
    Gurudwaras of Nankana Sahib
    Gurudwara Panja Sahib, Hasan Abdal
    Samadhi of Ranjit Singh, Lahore
    Gurudwara Dera Sahib, Lahore
    Gurudwara Janam Asthan, Nankana Sahib
    Gurudwara Deewan Khana, Lahore
    Gurudwara Shaheed Ganj, Singhanian, Lahore
    Gurudwara Bhai Tara Singh, Lahore
    Gurudwara of Sixth Guru, Mozang, Lahore
    Birthplace of Guru Ram Das, Lahore
    Gurudwara Cheveen Padshahi, Mozang, Lahore
    Shrine of Data Ganj Bakhsh, Lahore
    Mirpur Mathelo, Sindh
     
    আর নইলে একটা ফেক রিলেটিভ জোগাড় করতে হবে পাকিস্তানে যে ইনভাইট করবে ;-), বা বিজনেস ভিসা ট্রাই করতে হবে।
  • হীরেন সিংহরায় | ০১ জুলাই ২০২৪ ২৩:২৫534040
  • আমার সহপাঠী তপনের লেখা থেকে 

      প্রথমবার গড়িয়াহাট ফুটপাথের দোকান থেকে কুট্টিপিসি যখন ১৪০ টাকা দামের পুঁতির মালা ২০ থেকে শুরু করে প্রায় একশত বাক্য ব্যয়ের মধ্যেই ৩৫ টাকা দিয়ে কিনে সগর্বে দোকান থেকে বাইরে এসেই আমাকে বললেন,...এবার হাঁ মুখটা বন্ধ কর, 
    ...আমার বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি।
  • শিবাংশু | ০২ জুলাই ২০২৪ ১১:১৫534048
  • @হীরেনস্যার, 
    হরিয়ানায় হিসারের কাছে অগরোহা নামে একটা রাজ্য ছিলো। সেখানে একজন কিংবদন্তির রাজা ছিলেন। নাম, অগ্রসেন। তিনি নাকি আবার রামের পুত্র কুশ-এর বংশধর। তাঁর ছিলো আঠেরোটি পুত্র। তাঁদের বংশধরদের জেনেরিক নাম 'অগরওয়াল'।  এঁরা একটা গোষ্ঠী। ভারতবর্ষের সমস্ত প্রান্তে তাঁদের বসতি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই গোত্র নাম ব্যবহার করেন। যথা, গর্গ, গোয়ন, গোয়ল, কনসল, বিন্দল, মিত্তল, জিন্দল, সিংঘল, তায়ল, বনসল, মুঞ্জল ইত্যাদি ইত্যাদি। আশা করি বুঝতে পারবেন 'অগ্রসেনী'-দের প্রতাপের বহর কেমন? 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ জুলাই ২০২৪ ০২:২৪534131
  • অশেষ ধন্যবাদ। এটা একেবারেই জানতাম না । এখন এই পদবি গুলি দেখেই মালুম হলো অগ্রসেনের  প্রতাপ কোন লেভেলের । ব্যাংক অফ বরোদায় আমি এক অশোক গুপ্তাকে জানতাম - তার ছেলে অংকিত খানডেলওয়াল লেখে! আগরওয়ালের নানান বানান দেখেছি। 
  • Supriyo Mondal | ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৩534137
  • চৌধুরি বা চৌধরিও হয় সম্ভবতঃ 
  • শিবাংশু | ০৫ জুলাই ২০২৪ ১১:২৮534194
  • @হীরেনস্যার,
    আগরওয়াল, অগরওয়াল, অগ্রবাল নামের গোষ্ঠীটি মূলত বণিক জাতির অন্তর্গত। উত্তর ভারতীয় বণিকদের মধ্যে অগরওয়াল ছাড়াও আরও নানা উপশাখা আছে। যথা, মাহেশ্বরী, অসওয়াল, জয়সওয়াল, খান্ডেলওয়াল, শ্রীমালি ইত্যাদি ইত্যাদি। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ব্রাহ্মণত্বের দাবিদার, কেউ ক্ষত্রিয়ত্বের। উচ্চবর্ণের উত্তর ভারতীয় 'শুদ্ধ' ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা কায়স্থরা বণিক জাতির এই Class promoting দাবিকে খুব হ্যাটা করে থাকেন।  ভারতবর্ষের বর্ণাশ্রমী ব্যবস্থাকে ভিতর থেকে না চিনতে পারলে শেষ পর্যন্ত এদেশের সমাজতন্ত্রী দলগুলির মতো দশা হয়ে যায়। শুধু 'হিন্দু' জনগোষ্ঠী নয়। মুসলিম, ক্রিস্চিয়ান এমন কি শিখ সমাজের মধ্যেও বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা বেশ গভীরগামী। ব্যবস্থাটা ভিতর থেকে বদলাতে হবে। 'সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ'। আমাদের সঙ্গে রুশ বা চিনা সমাজব্যবস্থার এখানেই তফাৎ। 

    @Supriyo Mondal,
    'চৌধুরী' বা 'চওধরী' ( দশ-বারো রকম বানান আছে) নবাবি উপাধি। আক্ষরিক অর্থে কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এই উপাধির লোকজন দেখা যাবে। এই পদবিটি জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে ভূমি-অধিকারীদের মওরসি পট্টা। ব্রাহ্মণ, ছত্রি, জাঠ, কায়স্থ, বনিয়া, ভূমিহর, সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পদবিটি পাওয়া যাবে। এমন কি তপশিলভুক্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও।  
     
  • Prativa Sarker | ০৬ জুলাই ২০২৪ ১১:১১534252
  • লেখাটা যথারীতি দারুণ লাগল। তবে একমেবাদ্বিতীয়ম হল গিয়ে হাতিবাগান। দেশ বিদেশে এর জুড়ি মিলবে না। দরদাম করতে পারি না বলে রঙ্গ দেখতাম শুধু। দরদাম থেকে হাতাহাতি অব্দি গড়িয়েছে দেখেছি। খুবই মিলিট্যান্ট হকারকুল। তবে দোকান ভাঙা পড়লে এদের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে না ভাবতে কষ্ট হয়।
  • রঞ্জন | 2402:e280:3d02:20a:82b7:fb4e:7b61:***:*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫১534473
  • যেমন হীরেনদার লেখা, তেমনই বাকিদের ধরতাই।
    আড্ডা জমে ক্ষীর!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন