এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ২১ নীল বই হাতে ইউরোপীয় সীমান্তে 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৫৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • বৈঠকি আড্ডায় ২১

    দ্বিতীয় পর্ব :  ভিসার সন্ধানে একদিন  

    সোমবার , ২২ জানুয়ারি , ১৯৯০


    চেক ইন হয়ে গেছে, বোর্ডিং কার্ড নিয়ে এগুচ্ছি ইমিগ্রেশনের দিকে, এবারের মতো কলকাতা বাস হলো শেষ ।

    এক কর্মকর্তা আমাদের পাসপোর্ট নিরীক্ষণ শুরু করলেন; স্ত্রী পুত্র কন্যার ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিঃশব্দে ফিরিয়ে দিলেন। এবার আমার পালা। নীল বর্ণ অশোক স্তম্ভ ছাপ মারা ভারতীয় পাসপোর্টটি তিনি খুঁটিয়ে দেখেন, পাতার পর পাতা উলটে যান;  সে  সময়ে পাসপোর্টে জায়গা না থাকলে অতিরিক্ত পৃষ্ঠা জুড়ে দেওয়ার চল ছিল। এক সময় থামলেন ।

    - আপনার জার্মান ভিসা কোথায় ?
    -নেই। ইংল্যান্ডে কাজ করি,  বাংলাদেশ বিমানে কলকাতা থেকে লন্ডন ফিরছি ; সে  প্লেন প্রথমে যাবে ঢাকা , সেখানে কয়েক ঘণ্টা বিরতি , প্লেন বদল। তারপর একবার থামবে ফ্রাঙ্কফুর্টে । সেখানে যাত্রীদের ওঠানামা শেষ হলে উড়বে ইংল্যান্ড পানে।  ফ্রাঙ্কফুর্টে যারা নামবেন না তাদের ঠায় বসে থাকতে হবে প্লেনে, ডিউটি ফ্রিতে কিছু কেনা কাটার সুযোগ অবধি নেই। আমার জার্মান ভিসার কি প্রয়োজন? আসবার সময় হিথরোতে কেউ দেখতে চান নি,  তাহলে এখন কেন?
    - অল্প সময়ের জন্য হলেও এ প্লেন ফ্রাঙ্কফুর্টে  নামছে।  জার্মান  ট্রানজিট ভিসা না থাকলে আপনাকে এই ফ্লাইটে চড়তে দেওয়া যাবে না।
    -বিমান যে ইতিমধ্যে এয়ারলাইন্সের দায়িত্ব অনুযায়ী সব দেখে শুনেই আমাকে বোর্ডিং কার্ড দিয়েছে । কোন প্রশ্ন তোলে  নি।
    -সেটা বিমানের উচিত হয় নি। জার্মান ট্রানজিট ভিসা ছাড়া আপনি এ ফ্লাইটে যেতে  পারেন না।




    বিমান বাংলাদেশের প্রতীক


    স্ত্রী পুত্র কন্যা ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছে না। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাত বছরের ঐন্দ্রিলা বললে, বাবা তুমি  কি আমাদের সঙ্গে আসবে না ?

    কথা বার্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমি স্ত্রীকে  বললাম ,  তোমরা এই প্লেনে ঢাকা যাও। সেখানে তো ঘণ্টা পাঁচেকের বেশি ওয়েটিং। আজ যদি সময়মত ভিসার ব্যবস্থা করতে পারি, ঢাকায় দেখা হবে। নইলে আর কি, তোমরা ভালোয় ভালোয় লন্ডন পৌঁছোও,  আমি ভিসা জোগাড় করে নতুন টিকিট কেটে যাবো। এরা অবশ্য রিফানড দেবে বলে মনে হয় না।  

    পাসপোর্ট চেকিং -এর দোরগোড়ায় হাত তুলে তাদের বিদায় জানালাম। দু বছরের ইন্দ্রনীলের মুখে কোন কথা নেই।

    দাদা বউদি আমাদের নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সে আমলে মোবাইল নেই । কোন মতেই তাঁদের উদব্যস্ত করব না।

    অতঃপর?

    ভিসা জোগাড় করে ঢাকা পৌঁছে আজকের  লন্ডনগামী বাংলাদেশ বিমানের সেই প্লেন ধরা যেতে পারে কি? সেখানে  অনেকগুলো প্রশ্নচিহ্ন মুখব্যাদান করে আছে।

    জার্মান কনসুলেট যদি স্থান  বদল না করে থাকে তাহলে যেতে হয় আলিপুরে এক নম্বর হেসটিংস পার্ক রোডে। তেরো বছর আগের একদিন সেখানে শেষ গেছি, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাজে ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রথম বছরের বসবাসের অনুমতি সহ ভিসার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে।

    এখন বেলা এগারটা বাজে। কনসুলেটের ভিসা দফতর খোলা থাকবে কতক্ষণ ?

    আজ বিকেলে কলকাতা থেকে ঢাকা যাওয়ার কোন প্লেন আছে কি যেটা ধরে আমি সেই লন্ডন ফ্লাইট ধরতে পারি ? (১৯৯০ সাল- তখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্লেন হাওয়ায় উড়ত না) ।

    যদি ফ্লাইট থেকে থাকে তার টিকিট কোথায় পাবো ? তারা কি ক্রেডিট কার্ড নেবে? পকেটের টাকায় কুলোবে? 

    আমার বাংলাদেশি ভিসা নেই – ট্রানজিটের জন্য কি সেটা লাগে?  আবার কি সেই চক্করে পড়বো ?

    বিদ্যুৎচমকের মতন রিতা কুমারের কথা মনে পড়ল।  তিনি  তখন সিটি ব্যাঙ্ক চৌরঙ্গির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার গৌতম মজুমদারের সেক্রেটারি। অসম্ভব করিতকর্মা মহিলা, আজকের  গুগলের চেয়ে কিছু কম ছিলেন না। এয়ারপোর্টের টেলিফোন বুথ থেকে রিতাকে ফোন করে আমার দুঃখের বারোমাস্যা জানালাম। রিতা আমার ভাবনা বাড়ালেন না, একি বিপদ, কি হবে ইত্যাদি অনুষঙ্গ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে জানালেন জার্মান কনসুলেট সেই পুরনো ঠিকানায় আছে; আপনি এখন সেদিকে ধাবিত হন।  ভিসা পেলেই খবর দেবেন। রেস্ট ইজ অন মি - ইফ দেয়ার ইজ এ ফ্লাইট টু ঢাকা দিস আফটারনুন, ইউ উইল বি অন ইট। নাউ রাশ।

    আমার মতন সতত বিভ্রান্ত মানুষকে জীবনের অন্ধকার পথের মোড়ে আলোক বাতি দেখানোর জন্য কেউ যেন করুণাময় মানুষদের  মোতায়েন করে রেখেছেন । তার ইঙ্গিত অনেকবার পেয়েছি ।

    কাঁটাকলে অর্থনীতির ক্লাসে অসীমদা  (ডক্টর অসীম দাশগুপ্ত ) হ্যারড ডোমার গ্রোথ মডেল পড়াতেন। সেই বিশাল ভয়ানক ব্যাপারটা এক ধাক্কায়  ঘাড়ে না চাপিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করার মতন বলতেন , দেখ এটা হলো স্টেপ ওয়ান। বুঝলে তবে এগুবে, স্টেপ টু !

    আমার পরিবারের বাকি তিন সদস্যকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের হেফাজতে রেখে  টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে নিজেকেই বললাম

    স্টেপ ওয়ান – ট্যাক্সি ধরো।

    পাওয়া গেল শেয়ারের ট্যাক্সি, সে ট্যাক্সি সোজা আলিপুর যাবে না। তার প্রাথমিক গতি চিড়িয়া মোড় অভিমুখে, তারপর খদ্দের পেলে শ্যামবাজার হয়ে চৌরঙ্গি। সেখানে পৌঁছলে  চালককে বললাম আলিপুর মুখো কাউকে যদি না পান, মিটারে যা উঠবে তার ডবল দেবো।  বেজায় ঠেলায় পড়েছি ।
    -আচ্ছা চলুন, আলিপুরে কোথায় যাবেন ?
    -এক নম্বর হেসটিংস পার্ক রোড, জার্মান কনসুলেট। আপনি মিটার ডাউন করে অপেক্ষাও করতে পারেন। বেশিক্ষণ লাগবে না। 
    -তার পর কোথায় যাবেন ?
    -কনসুলেট থেকে বেরিয়ে এসে জানাবো। ততক্ষণ আমার ব্যাগটা একটু দেখবেন।

    ইংরেজিতে হাইট অফ এক্সপেকটেশন বোধ হয় একেই বলে । কতক্ষণে সেখানে পৌঁছুব   কনসুলেট খোলা না বন্ধ , ভিসা মিলবে কিনা কে জানে ! সেখানে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রাখব!




    এক নম্বর হেসটিংস পার্ক রোড,  জার্মান কনসুলেট


    এক নম্বর হেসটিংস পার্ক রোডের দ্বার  রুদ্ধ। ফোকর দিয়ে মুখ বের করে  প্রহরী জানালেন বারোটায় অফিস বন্ধ হয়ে গেছে । কনসুলেট  কাল নটায় আবার খুলবে। আমি কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করলাম, জানি । কিন্তু একবার আপনাদের  কোনো সায়েব বা মেম সায়েবের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন? কি বুঝলেন জানি না। তিনি  অত্যন্ত দ্বিধাভরে  একটা বোতাম টিপলে এক ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বর  ভেসে এলো , জানতে চাইলেন কি প্রয়োজন। পাহারাওলা কিছু বলার আগে আমি সরাসরি সেই মহিলাকে জার্মানে বললাম সুপ্রভাত , আমার ভীষণ সঙ্কট । লন্ডন যাবো কিন্তু আপনার দেশের ট্রানজিট ভিসা নেই বলে আমাকে প্লেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে ।  আমার স্ত্রী কন্যা পুত্র থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনার দ্বারস্থ হয়েছি । আমাকে দয়া করে একটা ট্রানজিট ভিসা দেবেন ?

    তিনি অনায়াসে বলতে পারতেন,  আগে আসেন নি কেন? আমার অফিস বন্ধ, লোকজন নেই। আমি এই খেতে  বসেছি, কাল আসবেন।

    পাঁচ সেকেন্ডের নীরবতা। এবার  ইন্টারকমে মহিলা প্রথমে প্রহরীকে ইংরেজিতে বললেন একে ভেতরে আসতে দিন। তারপর আমাকে  জার্মানে বললেন, লন পেরিয়ে সোজা যে দরজাটা পাবেন সেটা ঠেলে চলে আসুন । আমার সহকারীরা এখন কেউ নেই ,  কাগজপত্র, স্ট্যাম্প কোথায় আছে খুঁজতে হবে । ভাববেন না, আমি ট্রানজিট ভিসা দিয়ে দেব ।

    প্রহরীকে অনুরোধ করলাম আমি যদি ঢুকতে পারি, ট্যাক্সিওলা কি অন্দরে আসতে পারে?  তিনি একজিকিউটিভ ডিসিশন নিলেন , বললেন ঠিক আছে।

    লন পেরিয়ে একটা পেল্লায়  ঘরে ঢুকলাম, অনেক উঁচু সিলিং। নির্ঘাত হেসটিংসের ভূত এখানে রাতের বেলা ঘোরাফেরা করে । বিশাল টেবিলের অন্যপ্রান্তে এক মধ্যবয়েসি মহিলা একা বসে আছেন, মুখে মৃদু হাসির  রেখা। আশে পাশের ডেস্ক গুলো জনশূন্য। বললেন,  বসুন। কি ঘটনা সংক্ষেপে বলুন দেখি। যদি সময় থাকে।

    বাড়িয়ে চড়িয়ে কথা বলার সনাতন অভ্যেস ত্যাগ করে একটা সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, থাকেন লন্ডনে, জার্মান শিখলেন কোথায়?

    জানালাম ফ্রাঙ্কফুর্টে থাকতাম আগে , আমার জার্মানের ভুলত্রুটির জন্য গোয়েথে ইনসটিটিউট নয় একমাত্র আমিই দায়ী! তিনি আবার হাসলেন, ইন্টারকমে আপনি একটা মজার শব্দ ব্যবহার করলেন, ইখ বিন আউসগেলাদেন ওয়রডেন*! যেন জাহাজ থেকে মাল নামানো হচ্ছে ! আপনার সমস্যাটা আমার কাছে প্রাঞ্জল হয়ে গেল!

    সেটা কি আর ভেবে বলা?  গোরু হারালে এমনি হয়। এখন আমাকে ভিসা দিয়ে উদ্ধার করো মা জননী!

    হাতের কাছে পাঁচটা সাগরেদ না থাকলে অনেক বড়ো সায়েবকে পঙ্গু হয়ে যেতে দেখেছি। এঁকে দেখলাম এ টেবিল সে টেবিল ঘুরে ভিসার লেবেলের কাগজ আর স্ট্যাম্প জোগাড় করলেন। যদিও তিনি কোন ইচ্ছে প্রকাশ করেন নি তবু তাঁকে লন্ডনের ফ্লাইট টিকেট দেখালাম।  
     

    • আপনাকে চার দিনের অতিরিক্ত ভিসা দিলাম, যদি ফ্লাইট পেতে দেরি হয় !

    ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই। হয়তো প্রোটোকল ভেঙ্গে ট্যাক্সি  অবধি এলেন,‘এস ভিরড ক্লাপেন! ফারেন জি লোস!  গুটে রাইজে' (সব ঠিক হয়ে যাবে ,বেরিয়ে পড়ুন, শুভ যাত্রা)। কি মনে হলো, তাঁর  করকমল দু হাতে ধরে বললাম, আপনার এই সাহায্য কোনদিন ভুলব না। 
    কথার কথা। তাঁর নামটাও মনে নেই আজ।




    সেই জার্মান ট্রানজিট ভিসা



    ট্যাক্সি ড্রাইভার বললেন, এবার ?
    -টেলিফোন বুথ।
    জজ কোর্ট রোডের কোনায় পাওয়া গেল বুথ। ভিসা পেয়েছি জেনে রিতা  বললেন দু  ঘণ্টার ভেতরে ফ্লাইট আছে । আমি বলে দিচ্ছি তারা টিকেট রেডি রাখবে । ওরা চেক করে নিয়েছে , ঢাকা লন্ডন ফ্লাইটের বেশ খানেক  আগেই পৌঁছে যাবেন।  সিনক্লেয়ার বিমানকে জানিয়ে রেখেছে আপনি কলকাতা থেকে অন্য ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছে সেই লন্ডনের প্লেন  ধরবেন।  সিধে মির্জা গালিব  স্ট্রিটে সিনক্লেয়ারের অফিসে চলে যান।

    একটা সুর রিয়ালিসটিক ছবির মতন ঘটনাগুলো ঘটছে যেন ।

    সিনক্লেয়ারের অফিসে যেতেই দেখি টিকেট প্রস্তুত । গ্যাঁটের টাকায় তার  দাম  মেটানো গেল। 

    নিচে নামতে ট্যাক্সি ড্রাইভার বললেন, বলতে হবে না সার, এবার এয়ারপোর্ট !

    দমদমে নামিয়ে দেওয়ার সময় তিনি  গভীর সহানুভূতির সঙ্গে বললেন,  ভালো ভাবে যাবেন সার, যা ঝক্কি গেলো।

    বাংলাদেশ বিমানে চেক ইন করার সময়েও  মনে সংশয় – আমার পকেটে বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা যাবার ওয়ান ওয়ে টিকেট ।  সে দেশের ভিসা নেই , বাংলাদেশের  ট্রানজিট ভিসা লাগবে না তো ?

    বিমানের ডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম । মহিলা আমাকে আশ্বস্ত করলেন, কোন চিন্তা নাই  সার। আপনে প্লেন থেকে নেমে সিধা   ট্রানজিট ডেস্কে গিয়া  ঢাকা- লন্ডনের টিকেট দেখাইলেই বোর্ডিং কার্ড পেয়ে যাবেন । তারা আপনের কেসটা জেনে গেছে।

    ইমিগ্রেশনের লোক কোন প্রশ্ন করলেন না।

    দমদমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ট্যাক্সি ধরা থেকে ভিসা ও টিকেট নিয়ে ফিরে আসার সময় সীমা – তিন ঘণ্টার কম।

    কি ভাগ্যে কলকাতা লন্ডন ফ্লাইটে ঢাকায় প্রায় ছ ঘণ্টার গ্যাপ ছিল !

    ঢাকা এয়ারপোর্টে প্রতীক্ষা কক্ষের  সোফায় আধো ঘুমে আচ্ছন্ন ছেলে মেয়ে জেগে উঠে যখন দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল মনে হল সমস্ত দিনের শেষে সেটাই আমার সেরা পাওনা !

    পুনশ্চ:

    প্রায় পাঁচ দশকের নিরন্তর ভ্রমণে আমার পাসপোর্টগুলি ভরে গেছে নানান দূতাবাসের অজস্র ভিসার ছাপে। আজ মনে হয় অন্য কোথা নয়, অন্য কোনো দেশে নয় , এই কলকাতায়,  আলিপুরে শীতের স্তব্ধ দুপুরে সুপ্রাচীন হর্ম্য মণ্ডিত অট্টালিকায় নির্জন বিদেশি কনসুলেট অফিসে দয়াময়ী এক জার্মান মহিলার স্বাক্ষরিত বিনামূল্যের এই ট্রানজিট ভিসাটি  আমার সবচেয়ে মহার্ঘ্য সঞ্চয়।   

    *মাল তোলার ক্রিয়াপদ  লাদেন ( laden – ইংরেজি to load), মাল নামানো আউসলাদেন, পুরাঘটিত হলে আউসগেলাদেন ;  নির্জীব বস্তুর (inanimate object ) ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য । আমি সজীব প্রাণী তাই এক্ষেত্রে ‘আউসগেলাদেন’ শব্দের ব্যবহার ব্যাকরণ বিরোধী,  কিন্তু  ভাষার প্রতি এই দুরাচারকে তিনি সম্ভবত আর্ষ প্রয়োগ ধরে নিয়ে বললেন , দারুণ বর্ণনা দিয়েছেন ( গান্তস গেনাউ বেশ্রিবেন )!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৫৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 115.64.***.*** | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১১:২৪535415
  • আজব। এয়ারপোর্ট থেকে না বেরোলে ট্রানজিট ভিসা কিভাবে লাগতে পারে ? অদ্ভুত সব ইমিগ্রেশনে র লোকজন। 
  • শিবাংশু | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:২৭535421
  • যদি আমাদের সব গল্পই এমন মিলনান্তক হতো,  বোম্বাই সিনেমা পাত্তাড়ি গুটিয়ে 'কোকরাঝাড়'।  
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৪০535422
  • অমিত
     
    ঠিক তাই। বুঝে উঠতে পারি নি কেন। আমার সংগ্রহে মাত্র দুটি ট্রানজিট ভিসা আছে - অন্যটি জেব্রুঘে ফেরি স্টেশন থেকে ফ্রাংকফুরট যাবার ট্রেনে পাওয়া  বেলজিয়ান ট্রানজিট  ভিসা - কোন প্রশ্ন নয় , ট্রেন বেলজিয়াম দিয়ে জারমানি যাবে,সটান ভিসার ছাপ! 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৪৭535424
  • শিবাংশু 
    ট্যাক্সি ওলা যখন চিডিয়া মোডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে এসপলানাডের যাত্রী খুঁজছে তখন সন্দেহ হচ্ছিল - এ কেসটা কোনদিকে যাচ্ছে! চিৎ ইয়া পট
  • শিবাংশু | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৫:৪৩535427
  • আমাদের শৈশবে একটা একাংক নাটকের কথা শুনতুম। কিরণ মৈত্রের লেখা 'চব্বিশ ঘন্টা'। বাবা'র কাছে শুনেছি ওই লেভেলের মেলোড্রামা মনমোহন দেশাইও ভাবতে পারতো না। মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নাকি একটা পরিবার গিরিশ ঘোষের 'প্রফুল্ল' হয়ে গিয়েছিলো। আপনার সেই চার ঘন্টা নিয়ে একটা ওটিটি এপিসোড হয়ে যেতে পারে। :-) 
  • Saktinath Mukherjee | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৭:১৭535431
  • ভিসা থাকা সত্ত্বেও চেক-এ ঢুকতে দেয় নি।তার পিছনে ছিল মোরারজী দেশাই-এর সে দেশে যাওয়া। এক্ষেত্রে নিজের দেশের বিমানবন্দরে হয়রানির পিছনে ঐ রকম গুঢ় কারণ থাকতে পারে।
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৮ জুলাই ২০২৪ ০০:৩৭535446
  • "তারা কি ক্রেডিট কার্ড নেবে?"
    সেই সময় ক্রেডিট কার্ড ছিল? বাংলাদেশে তো মনে হয় আরো পরে এসেছে তাই না?
     
    "দমদমে নামিয়ে দেওয়ার সময় তিনি  গভীর সহানুভূতির সঙ্গে বললেন,  ভালো ভাবে যাবেন সার, যা ঝক্কি গেলো।"
    জার্মান কনস্যলুটের কর্মকর্তাটির পর ইনি। আসলে মানবিকতার কোন দেশ নেই,জাতি নেই সময় নেই। আর আমরা তা আ বুঝেই না এত বিভেদ করি। 
     
    শেষদৃশ্য  স্ত্রী-কন্যার সাথে মিলন দৃশ্যটি বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম। এত জীবন্ত এই বর্ণনাগুলি। 
     
    আমি ত প্রথমে ধাক্কা খেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল এ বছরে ঘটেনি তো? আপনার না ঢাকায় আসার কথা ছিল হীরেনদা? 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ জুলাই ২০২৪ ১২:২৪535466
  • কলকাতায় সীমিত প্রচলন ছিলো। চৌরঙ্গীর সরকারি বস্ত্র শিল্পের দোকানে নিতো তবে পাসপোর্ট দেখিয়ে। ১৯৮৯ সালে বালিগঞ্জ ধাবাতে বিনা বাক্যব্যয়ে ডাইনারস ক্লাব কার্ড নেয়! বিদেশী কার্ড  দোকানে বাজারে বিশেষ নিত না। 
     
    দুনিয়ার বহু ভালোমানুষের  একান্ত স্বার্থ বিহীন অনাবিল সহায়তা ছাড়া কি এতদিন বেঁচে বরতে থাকতে পারতাম মামুন!  
     
    জানুয়ারিতে যাওয়া হয় নি অন্য কারণে। বাংলাদেশে অনেকদিন যাবত ভিসা পাই অন এ্যারাইভাল। কোন সমস্যা নাই 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৮ জুলাই ২০২৪ ২৩:২৪535482
  • ওফ, এই পর্বটায় তো আমাদেরও উৎকণ্ঠা হয়ে গেছিল। কলকাতার বুকে ছোটো করে বেশ একটা ট্রাভেল থ্রিলারের রেশ পেয়ে গেলাম। 
     
    "কি মনে হলো, তাঁর  করকমল দু হাতে ধরে বললাম, আপনার এই সাহায্য কোনদিন ভুলব না। 
    কথার কথা। তাঁর নামটাও মনে নেই আজ।"
     
    এটার সাথে একমত হতে পারলাম না।  সত্যিই তো ওনার সাহায্য ভুলতে পারেন নি, ভোলা যায়ও না। নামে কি আসে যায়। এত বছর পরও ওনার কাজে একজন বাঙালি আনন্দ পাচ্ছেন, এই বা কম কি?
  • Ahsan ullah | ২১ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪২539547
  • আপনি উপরের স্তরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে পারতেন। গন্তব্য লন্ডন, বোর্ডিং কার্ড বাংলাদেশ বিমানের তাই ফ্রাংকফুটে কি হবে সে দায়িত্ব বাংলাদেশ বিমানের আপনার নয়। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বলতে পারতেন পরের বার সুবিধার জন্য ট্রানজিট ভিসা নিতে । অবশ্য জার্মান ইমিগ্রেশন যদি হয়রানির জন্য গোপনে সুপারিশ না করে থাকে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন