পুলিশের চিঠির পরের পাতায় একটি চমকের সম্মুখীন হতে হলো।
আমার পরিণত বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁরা আমাকে একটি দ্বিতীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন – আমি যদি পুলিশ কর্তৃপক্ষ আয়োজিত গাড়ির গতি বিষয়ক সচেতনতার একটি কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত করতে পারি তাহলে ফাইন দিতে হবে না , লাইসেন্সে পয়েন্ট যোগ হবে না। এমনকি আমার গাড়ির ইন্সিউরেনস কোম্পানি আমার এই পদস্খলনের উপাখ্যান অবধি জানবেন না( এই দুষ্কর্মের কাহিনি চাউর হলে তাঁরা আমার বিমার প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দিতে পারেন ) । সামনের চার মাসের মধ্যে আমার বাড়ির নিকটবর্তী শিক্ষাকেন্দ্রে চার ঘণ্টার ক্লাস করতে হবে , ইন্টারনেটে বেছে নিন কোনদিন আপনার সুবিধে : দক্ষিণা নব্বুই পাউনড।
ঘোড়া জোতা ফিটনের উচ্চতম গতি কোথায় বাঁধা ছিল জানি না তবে মোটর গাড়ির আবির্ভাবের পরে গত শতাব্দীর গোড়ায় ইংল্যান্ডে প্রথম আইনি গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় চৌদ্দ পরে কুড়ি মাইল । কোন যন্ত্রপাতি নয়, স্টপ ওয়াচ হাতে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পুলিশ অনুমান করতো কোন গতিতে একটি গাড়ি দুটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। তাই দিয়ে জরিমানা ধার্য হতো । লর্ড মনটেগু মন্তব্য করেন এটি হাইওয়ে রবারি !
কত দ্রুত বেগে গাড়ি চলছে সেটা মাপার জন্য স্পিডক্যামেরার আবিষ্কার হয় নি। হয়েছে ঠিক তার উলটো কারণে।
মাউরিস গাটসোনিদেস নামের এক ডাচ রেসিং ড্রাইভার নিজের গাড়ির স্পিডোমিটারের সঙ্গে একটি পালস মাপার যন্ত্র লাগিয়ে দেখতে চাইলেন মোড় নেওয়ার সময়ে তাঁর গাড়ির গতি কতোটা কমাতে সক্ষম হচ্ছেন। ঠিকমত না কমাতে পারলে অঘটনের সম্ভাবনা। পরে সেই আইডিয়া থেকে তিনি বানালেন পথে পথে ধাবিত গাড়ির গতি মাপতে সক্ষম এক ক্যামেরা তার নাম হল গাটসোমিটার । ১৯৬৪ সালে ডাচ পুলিশের কোন তৎপর করিতকর্মা মানুষ ভাবলেন, এই মউকা পাওয়া গেল টাকা আদায়ের। সেই ক্যামেরাকে কাজে লাগিয়ে লর্ড মনটেগুর হাইওয়ে রবারিকে সম্পূর্ণ আইন সম্মত করে সরকারের রাজকোষ ভরে তোলার যে তরিকা ডাচেরা চালু করলেন, ইউরোপের সব দেশ তাকে হামলে নিলো ! ব্রিটেনে অবশ্য কিছু বিলম্বে , এই মাত্র ১৯৮০ সালে প্রথম স্পিডক্যামেরা বসানো হয় । আশ্চর্যের বিষয় কিছু নয়- এদেশে যখন এসেছি, এই চল্লিশ বছর আগে, সিট বেল্ট বাঁধা আবশ্যিক হলো , তাও কেবল ড্রাইভার ও সহ যাত্রীর জন্য ; বাকিদের সিটবেল্ট পরার নির্দেশ এলো আরও কয়েক বছর বাদে । জার্মানিতে গাড়ি চড়লেই বেল্ট বাঁধতে হতো সেই ১৯৭৫ সালে।
ভাবলাম নব্বুই পাউনড খরচা করলে যদি শাস্তিমূলক কোন পয়েন্ট যোগ না হয় তাহলে ক্লাসে না হয় চার ঘণ্টা বসে গতি বিষয়ে সচেতনতা অর্জন করে আসি। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স জার্মানির – সে দেশে একটা লিখিত পরীক্ষা পাশ করলে তবেই নিরীক্ষকের তত্ত্বাবধানে বসে গাড়ি চালানো শেখা সম্ভব ( ইংল্যান্ডে রিটন টেস্ট চালু হয়েছে বছর বিশেক আগে ) ; জার্মান লাইসেন্স আজীবনের । যখন ব্রিটেনে এলাম আমার সেই লাইসেন্স অনুবাদ করিয়ে এ দেশের মোটর ভেহিকল দফতরে জমা দিয়ে পেলাম ব্রিটেনে গাড়ি চালানোর আইনি অধিকার। সেটি ৬৫ বছর বয়েস অবধি ভ্যালিড তার পর বছর পাঁচেক অন্তর রিনিউ করাতে হবে ! তাঁরা অবশ্য আমাকে সান্ত্বনা দিলেন আমার আদি লাইসেন্স তাঁদের হেপাজতে রইল । আমি কখনো দেশ ত্যাগ করলে সেই জার্মান লাইসেন্স তাঁরা অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেবেন ।
ফ্রাঙ্কফুর্টে আমার ড্রাইভিং শিক্ষাগুরু কার্ল বলতেন ,’ যা শেখাচ্ছি তার অর্ধেকও মনে রাখবেন না পরে , কিন্তু কেতাবি আইনগুলো জেনে রাখুন। ফলে কোন আইনটা যে ভাঙ্গছেন সেটা নিজেই বুঝবেন , ধরা না পড়লেই হলো ।‘ স্থানীয় জেলা সদর গিলডফোরডে গতি সচেতনতার কেলাসে বসে বুঝলাম কার্লের কথা কতোটা সত্যি ছিল । একে তো আমার গাড়ি চালানোর কেতাবি শিক্ষা ব্রিটেনের নয় , হাইওয়ে কোড নামক বিলিতি বাইবেল পাঠ করি নি। তাই রাস্তায় ল্যাম্প পোস্ট থাকলেই যে তিরিশ মাইল গতি সীমা বাঁধা সেটা জানি না । মনে আছে জার্মানিতে শহর /গ্রামের মধ্যে (ইনারহালব গেশ্লসেনে অরটশাফট ) কত কিলোমিটার স্পিডে চালাতে পারি তার নির্দেশ সূচক সাইনবোর্ড দেওয়া আছে, তা সেখানে ল্যাম্প পোস্ট থাকুক আর নাই থাকুক ।
গতি শিক্ষা ক্লাসের মধ্যিখানে চায়ের বিরতি ছিল -সেই সময় লক্ষ করলাম উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোড্রেনডন গুচ্ছের সন্ধানে ধাবিত আঠারো কুড়ি বছরের কোনো যুবক যুবতী নয়, আমার কমরেডস ইন ক্রাইম প্রায় সকলেই মধ্য বা আমার মতন পরিপক্ব বয়েসি । এমন জায়গায় অনায়াসে জানতে চাওয়া যায় কে কোথায় কোন আইন ভঙ্গ করে এই করেকশনাল কারাগারে এয়েছেন । আমার মতন সকলেই কোন গ্রামে গঞ্জে গতি নিয়ম ভেঙ্গেছেন , ওই পাঁচ সাত মাইল বেশি ; কেউ পেরেনট-টিচার মিটিঙে সময়মত পৌঁছুনোর তাড়ায় , কেউ ডাক্তার দেখাতে। মোটরওয়ের খোলা হাওয়ার পালে গা এবং গাড়ি ভাসিয়ে , নিছক আইন ভাঙার আনন্দে কেউ অ্যাকসিলারেটর দাবান নি ।
ট্রাফিক লাইটের সঙ্গী ক্যামেরা
শিক্ষক রবার্ট অত্যন্ত ভালমানুষ । তাঁর কেলাসে পাশ ফেল নেই , নব্বুই পাউনড এবং হাজিরা দিলেই তিনি সন্তুষ্ট। কাউকে সরাসরি কোন প্রশ্ন করে বিড়ম্বনায় ফেলেন না – বড়জোর জিজ্ঞাসার বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন – যার ইচ্ছে সে সেই বলটা তুলে নিক । রাস্তায় ল্যাম্প পোস্ট না থাকলেও কোন রাস্তায় কোন স্পিডে গাড়ি চালানোর নিয়ম সেটা যে অধিকাংশ সময়ে পথের দুপাশে দুটি বিশাল ললিপপের মতন বোর্ডে সাজানো থাকে, তার নাম যে গেট সে তথ্য জেনে ধন্য হলাম। চেষ্টা না করেও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য গোচরে এলো – গোটা সারে জিলায় সেই মুহূর্তে ১২১টা স্পিডক্যামেরা আছে । কিন্তু যে কোন সময়ে মাত্র ৭১টি ক্যামেরায় ফিল্ম বা মেমরি কার্ড থাকে, অন্যগুলোতে ফ্ল্যাশ হয় কিন্তু ছবি ওঠে না । এই আমার প্রশ্ন করার সুযোগ – যদি ছবি না উঠবে তাহলে ক্যামেরার কাজ কি ? রবার্ট স্মিতমুখে বললেন , কোনো গাড়ি গতি সীমার ঊর্ধ্বে চালিত হলে , ফিল্ম থাকুক না থাকুক ক্যামেরা ফ্ল্যাশ করবে । আপনি তো জানেন না আপনি সত্যিকারের স্ক্রিনশট দিলেন কিনা কিন্তু ক্যামেরার ঝলকানি দেখেই আইন ভেঙ্গেছেন ভেবে অপরাধী বোধ করবেন । প্রতি মাসে একবার চেক করা হয় কোন ক্যামেরায় কতবার ফ্ল্যাশ হয়েছে। সেই হিসেবে ফিল্ম বা মেমরি কার্ড যোগ বিয়োগ করা হয় । আপনি যেখানে ধরা পড়েছেন সেখানে লাগানো ক্যামেরায় ছবি ওঠার চান্স অঙ্কের হিসেবে ষাট পারসেন্ট। কিন্তু সেদিন আপনার ভাগ্য খারাপ ছিলো । তবে লক্ষ রাখবেন সারের বহু ট্রাফিক লাইটেও ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে , সেটা স্পিড মাপার এবং কেউ রেড লাইট জাম্প করলো কিনা দেখার জন্য। সেই অপরাধের তাৎক্ষনিক দণ্ড তিনটে পয়েন্ট ।
আমার ছেলে ইন্দ্রনীল ছোটবেলায় বলতো পয়সা খরচা করে ক্যামেরা বসানোর কি দরকার , তার ছবি দিলেই তো লোকে সাবধান হবে ! ভাববে ছবি উঠতে পারে। এখন মোটরওয়েতে অনেক জায়গায় দেখি ক্যামেরার ছবি আছে- বিগ ব্রাদার ওয়াচিং ! রবার্টের কথা শুনে মনে হলো, আমার পুত্র সেটাই ভেবেছিল – বাট হি ইজ নট অলওয়েজ ওয়াচিং! কিন্তু সেই চান্স নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তুমি কি কেবলই ছবি
ক্যামেরা কোথায় কোনখানে থাকে? লুকিয়ে না প্রকাশ্যে ? তাকে চেনার উপায় কি ? এ ব্যাপারে ব্রিটিশ অত্যন্ত ভদ্র- এক সময় এ দেশে ক্যামেরা বসানো থাকতো ঘোর অরেঞ্জ রঙের পিলারের ওপরে ( এখন কটকটে হলুদ) । গোপন ক্যামেরাটি রবে না গোপনে – আপনার ফটোগ্রাফার ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘ লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’ বলবে সেটা আপনার অগ্রিম জেনে সতর্ক হবার সুযোগ আছে , যাতে কয়েক মুহূর্তের জন্যে আপনি নিয়মানুবর্তী সভ্য সচেতন নাগরিক হিসেবে গাড়ির গতি কমিয়ে সেই শুটিং জোন অতিক্রম করতে পারেন । একই সঙ্গে অন্ধ এবং কোন কারণে উন্মনা না হলে এই বর্ণাঢ্য ক্যামেরা বাহী পিলারটি চোখে পড়া কঠিন নয় । সে তুলনায় জার্মান পুলিশ অতীব বদমাইশ –তারা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখে কোথাও কোনো উঁচু বাড়ির ব্যালকনিতে, কারো ছাতে, এমনকি ফ্রাঙ্কফুর্টের একটা বিশাল মোড়ে মধ্যযুগের টাওয়ারের ওপরে ( স্থানীয় খবর কাগজ সেটা ফাঁস করেছে হালে)। এই রকমের বদবুদ্ধি ইউরোপের নানান দেশ আয়ত্ত করেছে। ফরাসি সীমান্ত পার হয়ে ব্রুঘে থেকে লিয়েজ যাওয়ার মোটরওয়ে পার হয়েছি বহু বার – কোথাও কোন স্পিডক্যামেরার আভাস অবধি দেখি নি । এক গুণীজন বলেছেন , বেলজিয়ামে মোটরওয়ের মাঝের ব্যারিয়ারের হেজে নাকি সেটা লুকোনো থাকে । সে পথে আমার নিয়মিত আসা যাওয়া , তবে ছবি এখনও ওঠে নি এই যা।
যারা এই গ্রীষ্মে ইউরোপে গাড়ি চালাবেন মনস্থ করেছেন তাঁদের আগাম সতর্কবাণী দিয়ে রাখি- বেশির ভাগ ক্যামেরা পাবেন মোটরওয়েতে নয়, শহরের ভেতরে মানে বিল্ট আপ এলাকায়; গড় হিসেব অনুযায়ী প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা সেখানেই বেশি ঘটে। মনে রাখবেন তারা সরকারি কর্মীর মতো নটা থেকে ছটা কাজ করে , সন্ধ্যে হলে ক্যামেরার বিশ্রাম , অনেক দেশে উইক এন্ডেও তাদের ছুটি । স্পিড ক্যামেরা মোতায়েন করার কাজে ইতালি একবারে নুমেরো উনো। স্বাভাবিক। যে দেশে প্রত্যক্ষ কর ফাঁকি দেওয়াটা জাতীয় স্পোর্টের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সেখানে নিজের দানাপানি যোগাড় করার জন্য সরকারকে অন্য পন্থা খুঁজতে হয় । কোনো ইতালিয়ান পৌরসভার বাৎসরিক আয়ের প্রধান আইটেম পারকিং মিটারের প্রাপ্য দেয় পূরণ না করার ফাইন এবং স্পিডিঙ জনিত জরিমানা । তারপরেই ব্রিটেনের স্থান। ইউরোপের দেশগুলি বুঝে ফেলেছে এই বাজারে খাজনা বা ট্যাক্স বাড়ানো শক্ত হলেও নাগরিকদের দ্রুত গতি বাহনের ছবি তুলে প্রভূত অর্থ অর্জন করা সম্ভব।
ফিনল্যান্ডে ফাইনের পরিমাণ পূর্ব নির্ধারিত বা ফ্ল্যাট রেট নয়। আপনার মাসিক আয়ের ওপরে সেটা স্থির হয়। নির্দিষ্ট গতিবেগ উল্লঙ্ঘন করে তাঁর হারলে ডেভিডসন বাইক চালানোর জন্য নোকিয়ার এক ডিরেক্টর আনসি ভানওকির জরিমানা হয় চোদ্দ দিনের মাইনে , এক লক্ষ ইউরো! নোকিয়ার এক লোন সাইনিং অনুষ্ঠানে গল্পটি শুনি তৎকালীন সি ই ও ওলিল্লার কাছে। হল্যান্ডে নির্ধারিত গতির দ্বিগুণ বেগে চালিয়ে ধরা পড়লে আপনার বাহনটি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার আছে ডাচ পুলিশের – শোনা যায় কোন রবিবার সকালে স্কিফোল এয়ারপোর্ট এলাকায় পুলিশ একটি ফেরারি গাড়ি তাদের খোঁয়াড়ে ভরে রাখে; চালকের গতি ছিল ঘণ্টায় দুশ কিলোমিটার ! শহরে বা গ্রামের ভেতরে ধীরে গাড়ি চালানো অবশ্যই বাঞ্ছনীয় । স্পিড ক্যামেরার পথিকৃৎ হল্যান্ড – তাঁদের দেশের ট্রাফিক পুলিস জানিয়েছে গত বছরের প্রথম চার মাসে দশ লক্ষ পেনাল্টি টিকিট ইস্যু হয়েছে তার সঙ্গে দেড় লক্ষ বিদেশি নাম্বার প্লেটের গাড়ি ( সাধু ও টুরিস্ট সাবধান !) । ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সকল দেশের ট্রাফিক পুলিশ দাবি করে স্পিড ক্যামেরা লাগানোর পরে পথ দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর হার অর্ধেক হয়েছে কিন্তু সকলে জানান না এ বাবদে তাঁরা কত আয় করেন । ব্যতিক্রম বেলজিয়ান পুলিস – তাঁরা জানিয়েছেন গত বছরে স্পিডিঙ ফাইন বাবদ সরকারের আয় প্রায় ছ কোটি ইউরো -কষ্ট ইনকাম রেশিও অত্যন্ত লোভনীয় । যে হারে ব্রিটেনের গ্রামাঞ্চলে ক্যামেরা বহনকারী হলুদ রঙের পিলারের সংখ্যা বাড়ছে তা দেখে অনুমান করে নিতে অসুবিধে হয় না ব্রিটিশ সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য ক্যামেরার জাল দেশময় বিছিয়ে দিতে তৎপর হয়েছেন ।
যে কোন গাড়ির লিফলেট বা ব্রশিউর হাতে তুলে দেখি - তাতে কত না গুণের ব্যাখ্যান – কিলোমিটারে কতো সামান্য তেল খায় , মেটালিক রঙ, অটোমেটিক গিয়ার, ব্রেকিং সিস্টেম ( এ বি এস ) , ছটা স্পিকার , মাত্র দশ সেকেন্ডে সে গাড়ির গতি শূন্য থেকে একশো কিলো মিটারে পৌঁছুতে সক্ষম। গাড়ির ড্যাশ বোর্ডের স্পিডোমিটার দেখলে জানা যায় তার উচ্চতম গতি বেগ ঘণ্টায় দুশো কিলোমিটার । এই সব মূল্যবান তথ্য জানিয়ে বিক্রেতারা মহার্ঘ্য গাড়ি বিক্রি করেন ।
সে যে মানে সব মানা
গাড়ির শো রুম থেকে বেরুলেই চোখে পড়ে নোটিস - শহরের ভেতরে গাড়ির গতির উচ্চসীমা ঘণ্টায় বিশ মাইল, একটু দূরে গেলে তিরিশ। মোটরওয়েতে ৭০ মাইল ( ১১২ কিমি ) গতি অনুমোদিত । সেখানে কদিন যাই ? যেখানে আমার নিত্যিদিনের ঘোরাঘুরি - হাটে বাজারে , বন্ধু সন্দর্শনে, তসেখানে আমার গাড়ির টিকিটি বাঁধা আছে তিরিশ বা বড়জোর পঞ্চাশ মাইল বেগে । প্রয়াত ভাস্করদার ( ভাস্কর দত্ত , সুনীলদার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু) পুত্র অর্ণবের বাড়ি থেকে কিছু সঞ্চিত বই সংগ্রহের জন্য উত্তর লন্ডনের স্টোক নিউইংটন গেলাম গত রবিবার - এককালের সেই বিখ্যাত ওয়েস্টওয়ে আকীর্ণ হয়ে আছে অজস্র ক্যামেরায়, ওয়েম্বলি, হ্যামারস্মিথ থেকে কিংস ক্রস ছাড়িয়ে গাড়ি চলে ধীরে মন্দ গতিতে, আইন বাঁচিয়ে ।
তাহলে এত ফাস্ট গাড়ি আমার কোন কাজে লাগে ?
জানি রথ চালকের অন্তবিহীন স্বাধীনতা আছে এক দেশে - কিছু নির্ধারিত এলাকা বাদে মোটরওয়েতে গাড়ি চালানোর গতির কোন উচ্চসীমা বাঁধা নেই , শুমাখার বা লুইস হ্যামিলটনের মতন যেখানে যেমন খুশি যে কোন স্পিডে হারিয়ে যেতে পারি । লুইবেক থেকে হামবুর্গের অত্যন্ত সমতল পথে ঘণ্টায় অনায়াসে দুশো কিলোমিটার গতিতে পৌঁছে মনে হয়েছে মাটি ছাড়ালেই তো প্লেন ! গতি আরেকটু বাড়ালেই হয়ে যাবো জন গ্লেন । কিন্তু নিত্যদিনের কাজের জগতে জার্মানিতেও তো আবার সেই ৩০/৫০ কিলোমিটারের শিকলি পরানো আছে।
আজ মনে পড়ে আমাদের প্রতিদিনের পথের ধুলায় সঙ্গী এক যান – গ্রামের কাঁকর বিছানো পথে , গরুর গাড়ি চলে চলে দু পাশে গভীর গর্ত মাঝখানে জেগে থাকা মাটির চরের সঙ্গে সমঝোতা করে , ছাগল গরু সাইকেলকে পাশ কাটিয়ে রাস্তায় শুকোতে দেওয়া ধানের ওপরে চলে যায় গাড়ি। সিঁথি বরানগরের অলিতে গলিতে ভেঁপু বাজিয়ে পথচারীকে জানায় আমি পেছনে আছি । উচ্চ গতির অহেতুক অহংকার ছিল না তার, হাটখোলা থেকে কলুটোলা, পদুমা গ্রাম থেকে কেন্দুলির মেলা ঠিক পৌঁছে দিয়েছে সে , তার নিজস্ব চালে। পথে হলো দেরি ? হোক না । দের আয়ে পর দুরুস্ত আয়ে ।
ততক্ষণ সিট বেল্ট বর্জিত আরামদায়ক গদিতে গা এলিয়ে দিয়ে বসে দুটো গল্প গাছা , পথচারী নিরীক্ষণ ।
দাও ফিরে সে অ্যামবাসাডার , লহ এ জাগুয়ার !
গতি সম্পর্কিত কবিতা -তুষার রায় এই ভাবেই তো গরুর গাড়ির গতি বাড়ালেই মোটর আবার মোটর থেকে মাটি ছাড়ালেই প্লেন আরো গতি বাড়ালে জন গ্লেন , পারে অভিকর্ষের বাইরে চলে যেতে