এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় আবার     ৪ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৯৬ বার পঠিত
  • বাদ বেরকা / থুরিঙ্গেন

    অরটউইনকে দেখতে যাবো  থুরিঙ্গেনের বাদ বেরকা সানাটোরিয়ামে  ।

    ফ্রাঙ্কফুর্টে প্লেন থেকে নেমে সাধারণত   অটোবান ধরে গিয়েছি গিসেন মারবুরগ হয়ে খাড়া উত্তর অথবা দক্ষিণে ;  পুবমুখো হবার কোন বাণিজ্যিক কারণ ছিল না, ব্যক্তিগত তো নয়ই।  বছর দশেক আগে দুই জার্মানির পুনর্মিলন সরকারি ভাবে ঘোষিত হবার আগে হাইকের বাড়ি একবার গেছি , সেটাও থুরিঙ্গেনে, স্টাডরোডায় । আঠাশ বছরের পুরনো রুদ্ধ দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে কিন্তু পশ্চিমের লোক হু হু করে পূবে যাচ্ছে না, কেবল পুবের সক্ষম মানুষ পশ্চিমে আসছে এমন কথা বাজারে বেশ চাউর ।

    ফ্রাঙ্কফুর্ট- ফুলদা হয়ে যে  পথে আমার যাত্রা সেখানেই পড়ে আইজেনাখ, পুরনো পূর্ব জার্মানির এবং সমগ্র কমিউনিস্ট পূর্ব  ইউরোপের পশ্চিমতম শহর , সীমান্তে হতে মাত্র দশ কিলোমিটার । ১৯৪৫ সালে নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিজয়ী সোভিয়েত সরকার সেখানে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে কুলুপ মেরে দেয়,  কোন বর্ডার ক্রসিং ছিল না পরবর্তী চল্লিশ বছর । দরোজা এখন খোলা ;  অরটউইনের বাবা বলেছিলেন সম্ভব হলে আইজেনাখ ঘুরে যেতে ।  মারটিন লুথার হেথায় বসে গ্রিক থেকে চাষা ভুষোর পাঠযোগ্য জার্মানে বাইবেল অনুবাদ করে পোপের রোষানলে পড়েছিলেন । এই শহরের আরেকটি সাম্প্রতিক খ্যাতি আছে , ১৮৯৮ সালে জার্মানির অন্যতম প্রথম গাড়ির ও পরে বি এম ডব্লিউ মোটর বাইকের কারখানা ছিল আইজেনাখে।  দেশভাগ হলে পূর্ব জার্মান সরকার তার নাম বদলে দিলেন,বি এম ডব্লিউ বা বায়ারিশে মোটরেন ভেরকে নয় আইজেনাখ মোটরেন ভেরকে ,  ই এম ডব্লিউ ।  সাম্যবাদী অবরোধ ভেঙ্গে গেছে বলেই সেখানে  টাকা ঢালায় সিটি ব্যাঙ্কের কোন আগ্রহ নেই।  মিউনিকের  আসলি বি এম ডব্লিউতে আমাদের আসা যাওয়া।

    ফ্রান্সের কিছু অটোরুটের নম্বরের সঙ্গে একটি নামও থাকে;  যেমন লিওঁ থেকে মার্সেইগামী এ ৭  আমরা চিনি  অটোরুট দু সোলেই  ( Autoroute du Soleil - মোটরওয়ে টু দি সান,  যার দক্ষিণতম অংশটুকু নাৎসিদের বানানো)  বলে। জার্মান অটোবানের  নম্বর আছে, নাম নেই; তবে আইজেনাখের পথের খানিকটা অংশ ‘বুরগেনস্ত্রাসে ‘ (  দুর্গ সরণি ) নামে পরিচিত। মনোযোগ দিয়ে লক্ষ না করলে দিনের বেলায় কোন দুর্গ চোখে পড়ার কথা নয় কিন্তু সাঁঝের বেলায়  সেখানে ঘটে  আলোর ম্যাজিক।


     
    দুর্গের বাতি 
     
    এক ঘণ্টা আগে ফ্রাঙ্কফুর্ট ছেড়েছি, একটু অন্ধকার নেমে এসেছে;  এমন সময়ে যেন কোন মন্ত্রবলে পথের দু পাশের বিভিন্ন পাহাড়ের  দুর্গের মাথায় একসঙ্গে জ্বলে উঠলো তিনটি আলোর মশাল। এই আশ্চর্য দীপ মালিকার মুখ চলতি নাম দ্রাই গ্লাইখেন , এক চেহারার ত্রিমূর্তি । সমতল থেকে  সম্ভাব্য আক্রমনের দিকে নজর রাখতে  গ্লাইখে, ম্যুলবুরগ ও ভাকসেনবুরগ  এই তিনটি দুর্গ স্থাপিত হয়েছিল কয়েকশ বছর আগে।  সেখানে  সারা  রাত মশাল জ্বলে শত্রু সৈন্যকে সাবধান করতে, অটোবানে ধাবমান গাড়ির আরোহীদের লাইট শো দেখানোর জন্য নয়।  

    ছোটবেলায় মধ্য প্রদেশের পিপারিয়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পাহাড় পেরিয়ে ছিন্দওয়ারা যাবার পথে দেখেছি অনেক  উঁচুতে কোথাও আলো জ্বলছে । কে থাকে সেখানে? আজ সেই দিনের কথা মনে পড়ল।

    বাদ বেরকা পৌঁছুতে  রাত হল । গ্রামের পথ জনশূন্য। ছোট্ট হোটেলের রিসেপশন চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে না । অনেকবার মোবাইলে ফোন করলে পর একজনের সাড়া পেলাম।  ঘুম চোখে দরোজা খুলে  ঘরের চাবি দেওয়ার সময় জানালেন , রান্নাঘর বন্ধ ( ডি কুখে ইস্ট তসু )।  কি আর করা যাবে,  পেটে কিল মেরে ব্রেকফাস্টের অপেক্ষা।  কাল সকালে অরটউইনের সঙ্গে দেখা হবে।

    প্রদেশের নাম থুরিঙ্গেন , ভূগোলের মাপে এককালের জার্মান সাম্রাজ্য এমনকি  আজকের জার্মানির একেবারে মধ্যস্থলে।  এই  প্রাশিয়ান আমলের জাকসেন (স্যাকসনি) ,অনেক ঘাট ঘুরে এঁদের  পূর্ব পুরুষ ইউরোপের পশ্চিমের একটি ছোট দ্বীপে বাসা বেঁধেছিলেন,  তাঁরাই  আদি স্যাকসন । দিয়ে গেছেন আজকের ইংরেজি ভাষার অ আ ক খ।

    ফ্রাঙ্কফুর্টের শ্রেষ্ঠ সন্তান ইওহান ভলফগাং ফন গোয়েথে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন থুরিঙ্গেনে । সাহিত্য রচনার ফাঁকে দীর্ঘদিন থুরিঙ্গেনের  রাজ পরিবারে  বিভিন্ন কর্ম করেন , খনি আধিকারিক, রাজ পরামর্শক এমনকি অর্থমন্ত্রীর পদে। ভাইমার শহরে  তাঁর  বাস প্রায় পঞ্চাশ বছরের।


     
    কবি ও সম্রাটের আসর  এরফুরটের রাজবাড়ি 
    ২ অক্টোবর ১৮০৮ 
     
    ১৮০৬ সালে ফরাসি জয়রথের সামনে চূর্ণ হয়েছে প্রাশিয়া অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার রাজ শক্তি  ।  এরফুরটে এসে বিজয়ী সম্রাট নেপোলিয়ন দরবার বসালেন – জানালেন থুরিঙ্গেনের অর্থমন্ত্রী নয়, কবি গোয়েথের সঙ্গে দেখা করতে তিনি ইচ্ছুক  । এরফুরটের রাজবাড়িতে ২ অক্টোবর ১৮০৮ সালে সম্রাট ও কবির  ঘণ্টা দেড়েকের সেই সাক্ষাৎকারের ফরাসিতে লেখা বিবরণ একটি অনন্য দলিল ।  ফরাসি সাহিত্য দিয়ে আলোচনা শুরু;  গোয়েথে বললেন তিনি ভলতেয়ারের মাহোমেত জার্মানে অনুবাদ করেছেন । নেপোলিয়ন  বললেন, ওটা কেন করলেন ? এমন কিছু ভাল লেখা নয় । আপনি এতো ট্র্যাজেডি লেখেন – মনে রাখবেন আসল ট্র্যাজেডি ভাগ্যের নয়, রাজনীতির খেলা । আপনার লেখা আমি পড়েছি কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় ভেরথার ( ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি, প্রথম গদ্যগ্রন্থ) । গোয়েথে সম্পূর্ণ অভিভূত হয়ে বন্ধুদের বলেছিলেন, জানো , সম্রাট আমার প্রায় সব লেখা পড়েছেন , ভেরথার বইটি তাঁর ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে রক্ষিত থাকে !

    নেপোলিয়নের পুস্তক প্রীতি ছিল কিংবদন্তি স্বরূপ।  অবসর সময়ে রাজা প্রজা সকলেই বই পড়েন কিন্তু বই ছিল নেপোলিয়নের সব সময়ের সঙ্গী , এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি যাচ্ছেন সমরে, তাঁর রথের পিছনে চলেছে  ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ( জার্মানে Feld Bibliothek);কোন বই পড়া শেষ হলে তিনি গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতেন।   

    ১৮১৩ সালে এরফুরটের অনতিদূরে ইলম নদীর তীরবর্তী বেরকা গ্রামে খনিজ জলের উষ্ণ প্রস্রবণ আবিষ্কৃত হলে হাইনরিখ শুলতস নামক এক ব্যবসায়ী সেখানে একটি স্পা শহর গড়ে তুলতে চান।  থুরিঙ্গেনের অর্থমন্ত্রী ইওহান ভলফগাং ফন গোয়েথে সেটি একবার সরেজমিন তদন্ত  করার পরে নিজেই প্রমোটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন । তাঁর  কাছে বাদ বেরকা চির কৃতজ্ঞ- গরম জলের সেই ফোয়ারাটির নাম গোয়েথে ব্রুনেন।


     
    গোয়েথে ব্রুনেন 
     
    সেই ফোয়ারাটির পাশ দিয়ে হেঁটে  পরের দিন অরটউইনের সানাটোরিয়ামে গিয়ে  জেনেছিলাম আমার ইউরোপ প্রবাস কালের প্রিয়তম বন্ধু অরটউইন দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ।  এই কি মৃত্যুদণ্ড ? পরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ সেরে গেছে বলে তো জানি ।ডাক্তার কোন ইঙ্গিত দিতে অক্ষম । এখন চিকিৎসা,  আশা,  অপেক্ষা এবং প্রার্থনা।

     যৌথ নিঃশব্দতা শেষ হলে  অরটউইন বলল,  মনে আছে আমাদের বন্ধু , নয়স্টাডের ওয়াল্টার ক্লাইন বলত , জীবনকে তেমনি মেনে নাও জীবন যে রকম ? তার সেই ফালতসের উচ্চারণে , মুস মান ডাস লেবে এবে নেমে ভি ডাস লেবে এবে ইষ্ট ! ( Muss Man das Leben eben nemhmen wie das Leben eben ist)

    হালকা জ্যাকেট গায়ে গলিয়ে অরটউইন বললে, তোমার গাড়ি কোথায় ? ভো ইস্ট দাইন ভাগেন ? রান্নার  জগতে  থুরিঙ্গেনের শ্রেষ্ঠ অবদান, সাদা সসেজ খাওয়াবো !

    পরের তিন দিন থুরিঙ্গেন দাপিয়ে বেড়ালাম । প্রথম স্টপ হাইকের বাড়ি, স্টাডরোডা।  **

    বাদ ব্যরকা থেকে স্টাডরোডা বেশি দূর নয়। সানাটোরিয়াম থেকে বিকেল অবধি  ছুটি করিয়ে অরটউইনকে গাড়িতে  তুললাম। থুরিঙ্গেন অত্যন্ত সবুজ ,  নিচু টিলা আর নদীতে ভরা । বাদ বেরকা লিম নদীর ওপরে, স্টাডরোডা রোডা নদীর তীরে ।এবার এলাম ইয়েনাকে পাশ কাটিয়ে । রাস্তায় পড়ে  মাগদালা গ্রাম । এর ইতিহাস ঠিক খুঁজে পাই নি । তবে ইসরায়েলে গালিলি হ্রদের পাশে আছে মাগদালা,ক্রিশ্চিয়ান বাইবেলের মারি মাগদালেনার জন্মস্থল।

    বাইশ বছর আগে বেআইনি অনুপ্রবেশ করেছিলাম হ্যারমেসডরফে – পুলিশ , স্তাসি বা পার্টির ভয় তুচ্ছ করে পাড়া ভেঙ্গে পড়েছিল হাইকেদের রান্নাঘরে ।  সেটাই বসার ঘর।  সেখানে আসবাব ছিল সামান্য । এগারো বছর আগে এই মাক্স শিফারডেকারস্ত্রাসেতে এসে আমরা রান্নাঘরে বসিনি,  সোফায় বসেছি বসবার ঘরে ।  প্রতিবেশীরা এসেছিলেন , সংখ্যায় কম , কৌতূহল অনেক বেশি । আজ আমরা আরও সুন্দর সাজানো বৈঠক খানায় আড্ডা দিলাম । দারুণ বাড়ি । বাইরে ঝকঝকে গাড়ি ।

    আজ কোন প্রতিবেশী আসেন নি ।


    হাইকে টরস্টেন অরটউইন 
     
     
     
     
    অরটউইনকে সানাটোরিয়ামে জমা করে দিতে হবে সন্ধ্যে সাতটায় । মাথা গুনতি হবে তখন। ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বিদায় নিতে হল । আবার আসব বলে এলাম।

    বদলেছে অনেক কিছু।   
     
     

     
    স্টাডরোডায় সন্ধ্যা 

    অতীতের দুর্বল পঙ্গু পূর্ব জার্মান মার্ককে  (  মার্ক ডের ডে ডে এর) আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে  অর্থ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করেছিল যে মহার্ঘ্য  ডয়েচ মার্ক , তার স্থান নিয়েছে আরও এক শক্তিশালী মুদ্রা, ইউরো: ১.৯৯ পুরনো ডয়েচ মার্কের বিনিময়ে পাওয়া গেছে এক ইউরো । বদলেছে তো  আরও অনেক কিছু - পুবের রাস্তাঘাট , টালির চাল , বাড়ির  দরোজা দেওয়াল মেরামত হচ্ছে , মেতটে  হলদে রঙের দেওয়ালে পড়ছে রঙ্গিন পোঁচ। লিডল , আলদি সুপার মার্কেট  সর্বত্র , ক্বচিৎ কোথাও গ্রামের চাষিরা সবজিটা মুরগিটা নিয়ে মার্কট প্লাতসে বসে, ট্রাবান্ত ওয়ারটবুরগ গাড়ি রাস্তায় দেখা যায় না, পয়সা খরচা করে মিউজিয়ামে তাদের দেখতে যেতে হয় , টেলিফোন ঘরে ঘরে । এগারো বছর আগে স্টাডরোডায় এসে মনে হয়েছিল জার্মানি কোথাও ছেড়ে এসেছি , এ এক অন্য দেশ। আজ হাইকের বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে মনে হল আমার চেনা জার্মানির কোন একটা ছোট শহর থেকে বেরুচ্ছি ।

    বদলালো তো আরও কিছু ; যেমন , একশোর বেশি দেশে ছিল জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (  ডয়েচে ডেমোক্রাটিশে রেপুবলিক, ডে ডে এর )  দূতাবাস । ১৯৭০  সালে দিল্লিতে পাপুর ছবির প্রদর্শনী করতে গিয়ে  পরিচয় হয়েছিল ডে ডে এর  দূতাবাসের কালচারাল আটাশের সঙ্গে , খুব কৌতূহলের সঙ্গে দেখলেন, নানান প্রশ্ন করলেন পরিষ্কার ইংরেজিতে । আজ তাঁর মতন কালচারাল আতাশে কেন,কাজ হারিয়েছেন তদানীন্তন পূর্ব জার্মানির একশোর বেশি রাজদূত, ফার্স্ট সেকেন্ড অফিসার।  দেশ যখন একটা,  দূতাবাস হবে একটাই।

    রাজা অপ্রসন্ন হলে রাজদূতের গর্দান এবং চাকরি দুটোই যেতে পারে। দুই রাষ্ট্রের  মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ উৎপন্ন  হলে রাজ দূতাবাসের দরোজায় তালা পড়ে। যেমন ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে বার্লিনের ৭৩ নম্বর ভিলহেলমস্ত্রাসের রাইখ চ্যান্সেলরিতে গিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেনের  যুদ্ধ ঘোষণাপত্রটি বিদেশ মন্ত্রী ইওয়াকিম ফন রিব্বেনত্রপের সহকারীর ( রিব্বেনত্রপ দেখা করেন নি ) হাতে দিয়ে রাজদূত সার নেভিল হেনডারসন  দু কদম দূরের ৭০ নম্বর ভিলহেলমস্ত্রাসের ব্রিটিশ দূতাবাসে ফিরে বলেছিলেন , পাততাড়ি গুটোও ,আমরা চললাম ( প্যাক ইয়োর ব্যাগস, অফ উই গো ) । যুদ্ধ শেষে সেই বাড়িতেই ফেরেন নতুন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ।  

    জার্মানির পুনর্মিলনের সঙ্গে সঙ্গে  এক ধাক্কায় একশো রাষ্ট্রদূতের ছুটি হলো।

    অন্যদিকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক রাষ্ট্রটি ভেঙ্গে গেলে  তার চৌদ্দটি রাজ্য  নতুন পতাকা উড়িয়ে হাজারের বেশি নতুন দূতাবাস খোলে। চক্রবৎ পরিবরতন্তে সুখানি দুখানি চ ।

    নতুন জমানায় ব্যবসা বাণিজ্যের খবর কি ?

    এই নিয়ে এরফুরটের পাবে বসে অরটউইনের সঙ্গে অনেক কথা হল।

    যুদ্ধ বাধানোর অপরাধে বিজয়ী শক্তিগুলি ১৯১৮ সালের ভারসাই শান্তিচুক্তিতে জার্মান রাষ্ট্রের ওপর যে  বিশাল ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়েছিল সেটিকে অর্থনীতিবিদ জন মেনারড কেইনস দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে নির্দেশ করেছিলেন ( ইকনমিক কনসিকুয়েনসেস অফ পীস )। ১৯৪৫ সালে বিধ্বস্ত জার্মানির পশ্চিম অংশ শাস্তি নয়, পেলো এক উদার অনুদান , মার্শাল এইড ; সেটি সোভিয়েত প্রভাবিত এলাকার জন্যেও  দিতে রাজি ছিলেন  আমেরিকান সরকার কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তা প্রত্যাখ্যান করে ।  উলটে পূর্ব জার্মানির কাছে সোভিয়েত ইউনিয়ন পেশ করল একটি পেল্লায় বিল- যুদ্ধ বাধানোর ক্ষতিপূরণ । দাবি মেটানোর অর্থ নেই, ঘটি বাটি ক্রোক করা হলো । সোভিয়েত এঞ্জিনিয়াররা যতটা পারলেন পূর্ব জার্মানির কল কারখানার যন্ত্রপাতি উপড়ে নিয়ে ট্রেনে বোঝাই করে দেশে পাঠালেন। সেটি তৎকালীন পূর্ব জার্মানির সামগ্রিক শিল্প ক্ষমতার প্রায় চল্লিশ শতাংশ। ভারসাই চুক্তি মোতাবেক ফরাসি এঞ্জিনিয়াররা ১৯২০-১৯৩০ পশ্চিম জার্মানির জারল্যান্ডে ঠিক এই কাজটি করেছিলেন।

    ড্রেসডেনে দেড়শ বছরের পুরনো একটি ক্যানটিলিভার ব্রিজ আছে , রঙ নীল;  তাই লোকমুখে তার নাম নীল বিস্ময় ( ডের ব্লাউয়ে ভুনডার ) । সেখানে একটি স্মারক লিপিতে লেখা দেখেছি

     “১৯৪৫ সালে রাশিয়ান ভাইয়েরা আমাদের নাৎসি অত্যাচার থেকে মুক্তিদানের কৃতজ্ঞতায় “

    কমিউনিস্ট প্রচার যন্ত্র,  যেমন কার্ল এডুয়ার্ড ফন শ্নিতসলারের সাপ্তাহিক কালো চ্যানেল ( শোয়ারতসে ভেলে ) প্রোগ্রাম , একনিষ্ঠ ভাবে জনতাকে জানিয়েছে – পূর্ব জার্মানিতে কেউ নাৎসি পার্টির সদস্য ছিলেন না ,  এরা  পশ্চিম থেকে এসে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের একনায়কত্ব  প্রতিষ্ঠা করেছে , সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই সন্ত্রাস থেকে আমাদের মুক্ত করেছে ।

    অতএব  মুক্তিপণ দিতে জনতার আপত্তি থাকার কথা নয়;  এইভাবে ক্ষতিপূরণের তেতো পিলটি হজম করানো হয়েছিল।

    দুই জার্মানির রাজনৈতিক পুনর্মিলনের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়ী চাঁদ সদাগরের কোন মঙ্গল কাব্য গাওয়া হলো? অরটউইন ও আমি দুজনেই আমাদের দুই ব্যাঙ্কের তরফে  ( সিটি ও ব্যাঙ্ক অফ নোভা স্কোশিয়া ) সেটা জানতে একান্ত উৎসুক ছিলাম । নতুন কোনো  শাকের খেতের সন্ধান মিলবে সেথা ? যেমন আমরা পোল্যান্ড চেক রোমানিয়া স্লোভাকিয়াতে নিতুই নব কিছু খুঁজে পাচ্ছি ? কিন্তু সে গুড়ে যে বিস্তর বালি দেখা যাচ্ছে যেন !  

    প্রথমে আমরা বুঝিনি – কমিউনিজমের পতনের পরে আমরা আমেরিকান ব্যাঙ্কের এবং পুঁজিবাদের ধারক ও বাহক হয়ে এক নতুন বাণিজ্য ব্যবসার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছি চেক পোল্যান্ড হাঙ্গেরি রাশিয়াতে ,  আধুনিক ব্যাঙ্কিঙ্গের অরধেক তৌর তরিকা শিখিয়ে আমাদের জন্য জুতসই ফি আদায় শুরু করেছি । সেটা পূর্ব জার্মানিতে সম্ভব হল না কেন ?   

    আমরা স্বখাত সলিলে ডুবেছি। পূর্ব জার্মানিকে পুঁজিবাদী টেকনিক শেখাল  পশ্চিম জার্মান কর্পোরেট দুর্বৃত্ত , আমাদের সব ঘাঁত ঘোঁত তাদের জানা। আমরা ভেবেছিলাম মার্জার অ্যাকুইজিশনের ডিল পাবো কিন্তু কপাল মন্দ, ফ্রাঙ্কফুর্ট ডুসেলডরফ এসেনের সি এফ ও সি ই ওরা গুরুমারা বিদ্যে শিখে ফেলে আমাদের বাড়া ভাতে ছাই দিলেন।  

    পূর্ব জার্মানির সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের খাতা পত্র খুলে দেখার ভার পেলো একটি প্রকাণ্ড অডিট ফারম ( ত্রয়হানডআনস্টালট )। তারা যেন  তত্ত্বাবধায়ক সরকার।  সব কোম্পানির তাবৎ হিসেবপত্র খুঁটিয়ে দেখে সেগুলিকে হাটে বেচবে , সেটা একটা খোলা ময়দান । সকলের যে  খদ্দের জুটবে এমন কোন কথা নেই ।  তবে বিভিন্ন দেশের ক্রেতা  এসে কোম্পানির ভালো মন্দ বুঝে নিয়ে কেনবার প্রস্তাব দিতে পারবেন। সেটা  গ্রহণ করা বা না করা  ত্রয়হানডআনস্টালটের কাজ ; তারা সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ , মিলিত জার্মানির শুভ চিন্তক ; অবশ্যই তথাকথিত গুড ফেথে।  কার্যত দেখলাম  যা কিছু কেনার মতন ছিল সবই পশ্চিম জার্মানির কোন না কোন কোম্পানির খপ্পরে গেলো ,  ফরাসি ইতালিয়ান ডাচ তাঁদের মূল্যবান গাড়ি চড়ে পূর্ব জার্মানির সাইট সীইং শেষে প্যারিস মিলান আমস্টারডাম ফিরলেন।

    নীলাম ঠিক কিভাবে হলো  কোন পদ্ধতিতে তা নিয়ে প্রশ্ন করার কোন স্থান নেই , বিশ্বাসে মিলয়ে ব্যবসা।  সস্তার মাল কিনতে হতাশ কিছু ছোট খাট প্রমোটার খানিক গাঁই গুই করলেন ; ঠিক সেই সময়ে মস্কো বা কাজানের কারখানার ক্যান্টিনে ভাউচার বা স্লিপ কিনে  কতিপয় ধুরন্ধর লোক কিভাবে রাশিয়ার জাতীয় সম্পদ বেদখল করে অলিগারক সম্মানে পূজিত হয়েছেন সে প্রসঙ্গ জার্মান প্রেসে উঠলো , কিন্তু তখনই চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের সেই তরজা গান শুরু হলো – প্রিয় দেশ ( যে কোন বক্তিমে আরম্ভ করতেন লিবে নাতশিওন বলে ), আমার  পূর্ব জার্মানি হবে প্রস্ফুটিত পটচিত্র ( ব্লুইহেনডে লানডশাফট) ।

    এবার পুঁজিবাদী বাজারের  আসল খেলা – যারা কিনলেন তাঁরা ঢাকি সমেত প্রতিমা কিনতে আসেন নি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঢাক ঢোল শানাই  ইত্যাদি আনুষঙ্গিক উপচার বাদ দিয়েই  কল কারখানার দখল নিলেন ।  ফলত পূর্ব জার্মানিতে দেখা গেল বিশাল হারে কর্মী ছাঁটাই  এবং লিকুইডেশন – কারখানার ঝাঁপ বন্ধ ।

    ১৯৯০ সালে স্টাডরোডায় হাইকের বাড়িতে এক ভদ্রমহিলা বলেছিলেন ( আগের পর্ব , পূর্ব পশ্চিম দুই পশ্য ) তিনি জানতেন  চাকরি কারো যায় না , পূর্ব জারামানিতে কেউ বেকার থাকে না , কারখানা বন্ধ হয় না । এবার তারই ধুম পড়ে গেল । চল্লিশ বছরের চেনা দুনিয়ায় সকলের কোন না কোন কাজ ( বেশেফটিগুং ) ছিল, মাইনে ছিল, ষাট বা পঁয়ষট্টি বছরে পেনশন ছিল । তবে এই নতুন সিস্টেমে বাক স্বাধীনতা আছে , স্টাসি নামক গোয়েন্দা দফতর সর্বদা নজর রাখে না ,  সস্তায় জিনস, মেক আপ মেলে , পয়সা থাকলে যে কোন দেশে যাওয়া যায়।

    পালা  বদলের পালা?

    পুনশ্চ

    **আমার রচনার এই অংশটুকু ‘পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি ১ম খণ্ডে ‘ প্রকাশিত  । পূর্ব  ও পশ্চিম জার্মানির  পুনর্মিলনের আলোচনার প্রেক্ষিতে  স্টাডরোডায় হাইকের বাড়ি যাওয়ার গল্পটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যারা আমার বইটির সঙ্গে পরিচিত তাদের কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিয়ে  এবং নতুন পাঠকের সুবিধার্থে সেটি  সংক্ষিপ্ত রূপে  পুনরায় উদ্ধৃত করছি :

    এগারো বছর আগে যে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিঙে আটকে দুটো ঝরঝরে ট্রেন পার হয়ে যেতে দেখেছিলাম সেখানে প্রকাণ্ড ফ্লাই ওভার। পেরিয়ে গেছি নানান গ্রামের রংচটা হলদেটে বাড়ি, সারি সারি। এখন  সুন্দর সাজানো লিডল মার্কেট  স্টাডরোডা ঢুকে চমক লাগলো -  হাজার বছরের পাথরে বাঁধানো পথ সাফ সুতরো করা হয়েছে । প্রাচীন টাউনহল যেন ফিল্মের সেট। নতুন অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক। গতবারে দেখেছি ভাঙ্গা টালির ছাত । এবারে দেখলাম সব বাড়ির চালে চকমক করছে টালি। অরটউইন জানালে ওগুলো সেরামিক নয়, প্লাস্টিক বা কৃত্রিম টালি। তার আয়ু অনেক বেশী । রাস্তার নাম,  বাড়ির নম্বর লেখা।

    আর গাড়ি  ! দুনিয়ার যাবতীয় মডেলের গাড়ি  চরে  বেড়াচ্ছে অথবা ড্রাইভে রাখা আছে ।  সুপার মার্কেট । ডাক্তার খানা । ব্যাঙ্ক । সারি দিয়ে গাছ। কেয়ারি করা ফুলের ঝাড় । পথ জনশূন্য । সবাই কোন কাজে গেছে ।

    আউগুসট  বেবেল স্ত্রাসের মোড়-  এখানে একদিন  গাড়ি থামিয়ে জানতে চেয়েছিলাম মাকস শিফারডেকার স্ত্রাসে কিভাবে যাব ।দশ বছর আগে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একজনকে প্রশ্ন করলে তিনজন হাজির হতেন । এখন একজন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দূরের কথা ,কারো দর্শন পাওয়া দুষ্কর ।   নীল শাদা অক্ষরে আছে মাক্স শিফারডেকার স্ত্রাসে । চেনা বাড়ি  চেনা মুখ । তেরো নম্বর । আমূল পরিবর্তিত । সেই চকচকে টালি , রাস্তা থেকে ওঠার ধাপ গুলো সুন্দর রঙ করা। হাইকে খুব খুশী হল আমাদের দেখে । জাখসেন / থুরিঙ্গেনের উচ্চারণে একটা বড়ো আদরের  টান আছে । অনেকটা আমাদের বীরভূম বর্ধমানের মতন । ‘ কতদিন পরে এলে গো ‘ এ বাক্যের সম্যক অনুবাদ হয় না কিন্তু হাইকের কণ্ঠে  আমি  সেই সুর শুনলাম।

    বাড়ির ভেতরটা দারুণ সাজানো । আগে মেঝেতে ছিল কাঠের পারকেট । এখন চমৎকার নকশা করা টাইলে বাঁধানো । প্রকাণ্ড রঙ্গিন টেলিভিশান । সোফা এতো বড়ো সেখানে শুয়ে পড়তে  ইচ্ছে করে। বসতে নয় ।

    গতবারে হাইকের মা, এরিকার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি  মারা গেছেন তিন বছর আগে। বাবা হ্যারবেরট একা থাকেন হ্যারমসডরফের সেই বাড়িতে । ছোট টরস্টেন ফিরল স্কুল থেকে ব্যাগ কাঁধে ! মারকুস অল্প সময়ের জন্যে কিনডারগারটেনে ঢুঁ মারে । বিকেল গড়ালে ফ্রাংক ফিরে  এলো কাজ থেকে।  গাড়ী সারানোর ব্যবসা । স্টাডরোডার অনেক উন্নতি হয়েছে। শহর ছেড়ে যাবার উন্মাদনা হাইকের নেই । যদিও  কেউ কেউ অন্যত্র যায় চাকরির সন্ধানে । হাইকে বলল তোমাকে বলেছিলাম না ? আমরা কোথাও যাব না । ভালমন্দ যা হবে থেকে যাব এই ভিটেতে।  ঠিক বলি নি ?

    ফুটবলের কথা উঠল অবধারিত ভাবেই

    হাইকের বর ফ্রাংক স্থানীয় দল কার্ল-তসাইস ইয়েনার ফ্যান  আমাদের পশ্চিমের বুন্দেসলিগার সমতুল্য ছিল পূর্ব জার্মানির ওবারলিগা সেখানে ইয়েনা উঁচু আসনে থাকতো আমি ১৯৯০ সালে ফ্রাংককে বলেছিলাম এতদিন সেই দল তোমার দেশে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যারা ভালো খেলেছে ! এবার ফুটবলে দেখবে টাকার খেলা – নতুন বুন্দেসলিগাতে হয়তো ওবারলিগার দু চারটে টিম টিকে থাকবে ফ্রাংক বললে ঠিক তাই হয়েছে হান্সা রস্তক আর ডিনামো ড্রেসডেন ছাড়া বাকিরা উড়ে গেলো ধরে নিন বার্লিনের ময়দানে যারা খেলেছে দেওয়াল ভাঙ্গার আগে অবধি তারা খেলতে গেলো নয় কলোনের মাঠে – কলকাতার ময়দান ছেড়ে শালকের কচু বনে

    আরেকটা অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ উঠল- আমার সময়ে পশ্চিম জার্মানির ফুটবল মাঠে দু দলের সমর্থকদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা অবশ্যই হতো  মার পিট খুন খারাবি নয়  কেভিন নামক ওয়েরডা ব্রেমেনের এক সমর্থকের ছুরিকাঘাতে মৃত্যু ছাড়া এবার পূর্ব জার্মানিতে নানান গুন্ডাগরদির গল্প শোনা যাচ্ছে! ফ্রাংকের মতে দোষটা কার বলা শক্ত  তবে ফুটবলের গ্যালারিতেই  ওয়েসি আর ওসির প্রথম সাক্ষাৎকার হচ্ছে !

    এমনি গল্পে সময় কেটে গেলো । আমরা চার জন আর দুটি কৌতূহলী বালক !

    ক্রমশ :

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c65:4660:81a:8b77:1072:***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০২542456
  • লেখক বিশ্বভ্রামণিক।  বিশ্বনাগরিকও। এই প্রশ্নটা করবার সেরা মানুষ। 
    আমি প্রায়ই একটি কথা ভাবতে বসি। এই যে চিনদেশে সকলের পেটে ভাত আছে, শিক্ষা এবং কাজের নিশ্চয়তা আছে, সেটা  বাকস্বাধীনতা এবং ফাটা জিনসের থেকে ঢের ভালো নাকি অতীব খারাপ। বাক বা অন্যান্য মানবিক স্বাধীনতার ব্যবস্থাপকরা পেটে ভাত যোগাতে প্রায়ই অক্ষম হন কেন!  অথবা উল্টোটা?  দুটোর মধ্যে  বিরোধ কি এমনতরই যে ইটোপিয়া ছাড়া গতি নেই?  কেন এমন? 
     
    প্রতিবেশীরা একজনও আসেনি বলে যে কতকিছু বলে দিলেন!  
  • হীরেন সিংহরায় | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৯542457
  • বড়ো কঠিন প্রশ্ন করলেন ।
     
    জার্মানিকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি , এখনো সে দেশে ঘর  আছে  কিন্তু বেশি চিনেছি পশ্চিম জার্মানিকে ।  আমি বারবার লিখেছি পশ্চিম জার্মানিতে থাকার সময় পূর্বের অস্তিত্বকে চিনতে অস্বীকার করেছি কেন না  লৌহ যবনিকা আমাদের মনের ভেতরেই ছিল ।  ১৯৮৯ সালের পরে  পোল্যান্ড থেকে রাশিয়া লিথুয়ানিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া ধাওয়া করেছি বাণিজ্যের সন্ধানে । লাইপজিগের ট্যাক্সি ড্রাইভার বলেছিল মানুষের জীবনে যা জরুরি সেগুলো সস্তা অথবা ফ্রি ছিল কমিউনিস্ট আমলে।  জিনস বা মেক আপ মহার্ঘ্য । এখন উলটো । দৈনন্দিন জীবনের যা প্রয়োজন তার দাম বেশি , জিনস সস্তা । কাজের সময় এ সব দেশে অনেক ঘুরেছি হয়তো ভালো করে দেখিনি কিন্তু আমার  রোমানিয়ান পত্নীর দরুন এবং নিতান্ত পারিবারিক সূত্রে যা দেখি শুনি তাতে আপনার প্রশ্নটাই মনে জাগে । দেওয়াল ভাঙ্গার রাতে কি খুঁজেছে পূর্ব জার্মানির মানুষ - বাক স্বাধীনতা জিনস রেডিও টি ভি ?  কিন্তু বিনিময়ে ফ্রি শিক্ষা স্বাস্থ্য নাগরিক নিরাপত্তা কেন দিতে হবে ? অনেক কিছু  খারাপ ছিল কিন্তু ভালোটা বিসর্জন দিতে হবে ?   ভুল করে চাই ? যাহা চাই তাহা পাই না ? 
     
     
    দুদিকেই অনেক কথা বলার আছে । বলে যাই । 
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c65:4660:81a:8b77:1072:***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৩২542458
  • বলুন প্লিজ। আমরা শোনার অপেক্ষায় রইলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন