এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • শিবাজী ও শম্ভাজীের হিন্দুরাষ্ট্রঃ ইতিহাসবিদ আচার্য যদুনাথ সরকারের চোখে -- পর্ব ২

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৩ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    শম্ভাজীকে নিয়ে আচার্য যদুনাথের মন্তব্য

    “শিবাজীর জ্যেষ্ঠপুত্র শম্ভাজী হলেন তাঁর প্রৌঢ় বয়সের অভিশাপ। উনিশ বছরের যুবকটি হিংস্র, লোভী, অস্থিরমতি, নির্বুদ্ধি এবং তাঁর মধ্যে নৈতিকতার ছিঁটেফোঁটাও নেই। এক বিবাহিত ব্রাহ্মণ যুবতীর সঙ্গে বলাতকারের দোষে শিবাজী তাকে পানহালা দুর্গে আটকে রাখেন। কিন্তু সে তার পত্নী যেসুবাঈ এবং কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দিলীর খাঁয়ের সঙ্গে যোগ দেয়”।

    শিবাজী তাকে ধরতে সৈন্য পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু দেরি হয়ে গেছল। শম্ভাজী তার পিতার বিরুদ্ধে মোঘল সেনাপতির সঙ্গে যোগ দিতে চায় এই মর্মে দিলীর খাঁকে পত্র পাঠিয়েছিলেন। তখন আহ্লাদে আটখানা দিলীর নিজে কিছু সৈন্য নিয়ে শম্ভাজীকে সুরক্ষা দিয়ে নিজের কেল্লায় নিয়ে আসেন। ( পৃঃ ৩৬২)

    দিলীর চিঠি লিখে সম্রাটকে এই সুসংবাদ জানিয়ে দিলে শম্ভাজীকে ঔরংজেবের আদেশে সাতহাজারী মনসবদার করা হয় এবং একটি হাতি উপঢৌকন দেয়া হয় (নভেম্বর, ১৬৭৮)। তারপর দিলীর খাঁ এবং শম্ভাজী বিজাপুর আক্রমণের তোড়জোড় করেন।

    সিদ্দি মাসুদ শিবাজীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে যে ফৌজ পাঠানো হয় তাদের লক্ষ্য স্পষ্টতঃ সাহায্যের বদলে বিজাপুর কব্জা করা। মাসুদ ফৌজকে দুর্গের বাইরে থাকতে বললে সন্ধি ভেঙে যায় এবং শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠা ফৌজ বিজাপুরের আসেপাশে লুটতরাজ শুরু করে। এবং ধনী বানিয়াদের বন্ধক বানিয়ে মুক্তিপণ চায়।

    ইতিমধ্যে দিলীর খানের ফৌজ আক্রমণ করলে মারাঠা ফৌজ সরে পড়ে। মারাঠাদের বিরুদ্ধে বিজাপুরের সেনাপতির নাম ভেঙ্কটাদ্রি মুরারী! (৩৬৪) এপ্রিল ১৬৭৯ নাগাদ দিলীর খানের ফৌজ শম্ভাজীর সহায়তায় ভুপালগড় অধিকার করে। সেখানে শিবাজী বহুবছর ধরে তাঁর সম্পদ এবং ধনরত্ন সঞ্চিত করে রেখেছিলেন। দিলীর খান লুটতরাজের পর ভুপালগড়ের কেল্লা ধ্বংস করে। কিন্তু দিলীর খানের বিজাপুর অভিযান ব্যর্থ হয়।

    সিদ্দি মাসুদের সঙ্গে সন্ধি না হওয়ায় দিলীর খাঁ এবং শম্ভাজীর সম্মিলিত ফৌজ ১৪ নভেম্বর, ১৬৭৯ তারিখে শিবাজীর মিরাজ-পানহালা দুর্গ আক্রমণের অভিলাষে এগিয়ে যান। শম্ভাজী গর্ব করে বলছিলেন — যে উনি সহজেই তাঁর নিজস্ব মারাঠা অনুগামীদের নিয়ে পানহালা দুর্গ অধিকার করতে পারবেন।

    তাতে মুঘল সাম্রাজ্যের এই এলাকায় বিস্তার সহজ হবে, আর মিরাজের ছোট ছোট সেনানায়কদের এক মোগল এজেন্ট ইতিমধ্যেই কিনে নিয়েছে।(পৃঃ ৩৭৩)

    কিন্তু এই বাহিনী প্রথমে বিজাপুর সংলগ্ন এলাকায়, যেমন বাহমনহালি, মাখনপুর আর জলগেরি দখলের সময় নৃশংস অত্যাচার এবং লুটপাট ও ধংসলীলা চালিয়ে গেল। তারপর টিকোটা নামক সমৃদ্ধ জনপদে পৌঁছে গেল যেখানে ধনী বণিকেরা সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইখলাস খানের অগ্রণী বাহিনী ওখানে পৌঁছে গেল। তখন
    হিন্দু তথা মুসলিম পরিবারের মেয়েরা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে নিজেদের আঙিনার কুয়োর মধ্যে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করল।
    সম্পূর্ণ গ্রাম বিধ্বস্ত হল। হিন্দু এবং মুসলিম মিলিয়ে প্রায় ৩০০০ পুরুষকে বন্দী করে দাস বাজারে বিক্রি করে দেয়া হল।

    এরপর বন্দীসমেত বাহিনী এগিয়ে চলল বিজাপুরের দিকে। আথনী জনপদ বিধ্বস্ত করে তার বাজার পুড়িয়ে দেয়া হল। এখানে সব নিবাসীরা হিন্দু। দিলীর ওদের বন্দী করে বিক্রি করে দিতে চাইলেন। তখন মোঘল এবং মারাঠাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল।

    শম্ভাজীর আপত্তি শোনা হল না। উনি দিলীর খাঁর বিষয়ে ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হচ্ছিলেন। ২১ নভেম্বর আথনী ছেড়ে আইনাপুরের দিকে যাবার সময় দিলীর খবর পেলেন শম্ভাজী পালিয়ে বিজাপুরের দিকে চলে যাচ্ছেন।

    নভেম্বর ১৬৭৮ নাগাদ শম্ভাজী মোঘল বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই শিবাজীর চরেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছিল এবং গোপনে নানাভাবে বোঝাচ্ছিল যে উনি কাজটা ঠিক করেন নি। মারাঠা দলে (শিবাজীর সঙ্গে) ফিরে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত।

    এমনকি, ওঁর শ্যালক মহাদাজী নিম্বলকর, তখনও মুঘল বাহিনীর দলে, শম্ভাজীকে তিরষ্কার করেছিলেন। কিন্তু শম্ভাজী এমন যে সেটা দিলীর খাঁকে জানিয়ে দিলেন। ফলে নিম্বলকরকে শাস্তিস্বরূপ ক’দিন বন্দী হয়ে থাকতে হয়।

    শম্ভাজী ২০ নভেম্বর ১৬৭৯ নাগাদ তাঁর স্ত্রী এবং দশজন অনুচরকে নিয়ে গোপনে বিজাপুর রওনা দিয়ে সেখানের দুর্গের অধিপতি সিদ্দি মাসুদের আশ্রয় গ্রহণ করেন। দিলীর জানতে পেরে ২৮ নভেম্বর একজন দূত পাঠান যাতে মাসুদ প্রচূর উপঢৌকন নিয়ে শম্ভাজীকে দিলীরের হাতে তুলে দেয়। শম্ভাজী ভেতর থেকে টের পেয়ে ওখান থেকে পালিয়ে শিবাজীর শরণে এসে পানহালা দুর্গে আশ্রয় নিলেন। (পৃঃ ৩৭৫)

    এইভাবে শম্ভাজীর পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মুঘল বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক বছর ব্যাপী অধ্যায় শেষ হল।
    *সভাসদ ৯৩ (শিবাজীর পার্ষদদের রেকর্ড) অনুসারে শম্ভাজীকে ভেতর থেকে খবর দিয়ে পালাতে সাহায্য করেছিলেন দিলীর স্বয়ং।

    যদুনাথ বলছেন — এটা একটু অবিশ্বাস্য।

    মনে হয়, উনি ঠিক বলেছেন। বিজাপুর কেল্লার ভেতর থেকেই শম্ভাজী খবর পেয়েছিলেন। কিলাদার সিদ্দি মাসুদ শিবাজীর অনুরক্ত এবং দিলীর খাঁর দুশমন ছিলেন।

    নভেম্বর ১৯৭৯ এর গোড়ায় শিবাজীর ফৌজ দিলীর খাঁয়ের হাতে দু’বার পর্যুদস্ত হয়। শিবাজী তখন পানহালা দুর্গ রক্ষার জন্য অন্য অনেক দুর্গ থেকে সৈন্য এবং কামান পানহালায় নিয়ে আসেন। মারাঠা সৈন্যের মধ্যে সংশয় ছিল, কারণ শিবাজীর পুত্র শম্ভাজী মুঘল বাহিনীর শিবিরে। ২ ডিসেম্বর ১৬৭৯ শম্ভাজী পানহালা দুর্গে শিবাজীর সঙ্গে মিলিত হলে উনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বিশাল মারাঠা বাহিনী খান্দেশ, বেরার এবং বালাঘাট অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াল ও বণিকদের লুঠে নিল। তারপর ৬ ডিসেম্বর ১৬৭৯ ঔরঙ্গাবাদের কাছে জালনায় পৌঁছল।

    সেখানে একজন বিখ্যাত সুফী সন্ত ছিলেন — সৈয়দ জান মহম্মদ। শিবাজী কোন ধর্মের সন্তদের আশ্রমে হামলা পছন্দ করতেন না। তাই জালনা জনপদের অধিকাংশ ধনী পরিবার ওনার আশ্রম ও বাগানবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু মারাঠা ফৌজের অগ্রণী বাহিনীটি ওনার আশ্রমে হামলা করে, ওনার অনুরোধ উপেক্ষা করে অন্যদের সঙ্গে ওনাকেও আহত করে।

    জনশ্রুতি — ওনার অভিশাপের ফলেই শিবাজী এই ঘটনার পাঁচ মাসের মধ্যে মারা যান। তার আগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি সয়ে শিবাজী মুঘলদের বেড়াজাল কেটে পানহালা দুর্গে এসে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বড় ছেলে শম্ভাজীর সঙ্গে মিলিত হলেন।

    শিবাজীর শেষ জীবন

    শিবাজীর বয়েস হয়েছে। শরীর ভাল নয়। বিদ্রোহী বড় ছেলে মাত্র পিতার কাছে ফিরে এসেছে বটে, কিন্তু তাকে কতখানি ভরসা করা যায়? সে কি মারাঠা সাম্রজ্যের যোগ্য উত্তরাধিকারী ?

    আচার্য যদুনাথের ভাষায়ঃ
    “The character of his eldest son filled Shiva with gloomiest anticipations about the future. A profligate, capricious and cruel youth,
    devoid of every spark of honour patriotism and religious fervour, could not be left sole master of Maharashtra”.

    “But a born judge of character like Shivaji soon perceived that his sermons were falling on deaf years”. (p. 381)

    এদিকে শিবাজীর হারেমে ষড়যন্ত্রের বিষ। শিবাজী একটা ভুল করেছিলেন। আগের তিন পত্নী এবং দুই পুত্রসন্তান থাকা সত্ত্বেও ৪৭ বছর বয়সে আরও তিন অল্প বয়েসি কন্যাকে বিয়ে করলেন।

    শম্ভাজীর মা গত হয়েছেন। রাজারামের মা সয়া বাঈ স্বামীর মন পাওয়ার জন্যে নানারকম টোটকার প্রয়োগ শুরু করলেন। অবশেষে জ্বর এবং আমাশায় বারোদিন ভুগে শিবাজী ৫ এপ্রিল, ১৬৮০ সালে প্রাণত্যাগ করলেন। বয়েস ৫৩ পুরো হয় নি। মৃত্যুর একটা সম্ভাব্য কারণ (মুসলিম সন্তের অভিশাপের কথা একটি মত) সয়াবাঈ নাকি বিষ দিয়েছিলেন যাতে শম্ভাজী নয়, রাজারাম সিংহাসনে বসেন।

    শম্ভাজী ক্ষমতা লাভের পর সয়াবাঈকে উপরোক্ত অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন।

    আচার্য যদুনাথের মতে ওটা অজুহাত, পথের কাঁটা সরানো আসল উদ্দেশ্য। (পৃঃ ৩৮৩)।

    শিবাজী তাঁর অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে সুরাত ধ্বস্ত করেছিলেন ১৬৬৪ সালে। তখন ঔরংজেবের নির্দেশে কিলার মাটির দেয়াল ভেঙে ইঁটের গাঁথনি দেয়া হয়। কিন্তু ১৬৭০ সালে শিবাজী ফের সুরাতকে লুঠে নেন। কার্তোজি গুজর বা প্রতাপ রাও (উপাধি) তাঁর ফরমানে ওই দুটো আক্রমণের উল্লেখ করেছেন।

    তারপর শিবাজীর সেনাপতি প্রতাপ রাও গুজর ১৬৭২-৭৩ সালে এইরকম ফরমান জারি করলেনঃ
    শোন শোন হে যত কানুনগো, বণিক, মহাজন, ইংরেজ, ফরাসী এবং ওলন্দাজ কুঠিয়াল ও সমস্ত সুরাতবাসী! গত এক বছরে সুরাত বন্দরে যত পণ্য কেনাবেচা হয়েছে তার সঠিক হিসাব দাও। শিবাজী মহারাজ ওই বিক্রিবাট্টার জন্য দেয় শুল্কের এক-চতুর্থাংশ ‘চৌথ’ ধার্য করেছেন যা তাঁর বীর সেনাবাহিনীর জন্যে দিতে হবে। আদায়ের দায়িত্ব উনি আমাকে দিয়েছেন। ওনার সেই আদেশ অনুসারে আমি এই লিখিত নির্দেশ জারী করছি যে ভাল চাও তো আমার পাঠানো গোমস্তাদের হাতে তোমরা ঠিকমত হিসেব বুঝিয়ে দাও, এতে রাজ্যেরই মঙ্গল। নইলে আমার ফৌজ তোমাদের ঘরবাড়ি ধুলিসাৎ করে দেবে। জনপদের কোন চিহ্ন থাকবে না। আমাদের ক্রোধের থেকে একটা লোকও রক্ষা পাবে না। যদি ভাব সম্রাটের সাহায্য নিয়ে রেহাই পাবে তাহলে মস্ত ভুল করবে। এর আগে আমরা দু’দুবার হামলা করেছি। তাতে উনি কী করলেন? পৃঃ ১৫৭-৫৮

    প্রতাপ রাওয়ের চিঠির উত্তরে সুরাতের কুঠিয়ালদের বক্তব্যঃ
    শোন হে অল্পবুদ্ধি প্রতাপ রাও এবং তার মারাঠি ব্রাহ্মণের দল তথা বর্গিবাহিনী! চিঠিটা মাত্র কদিন আগে আমাদের হাতে এসেছে। ওহে পাজি অত্যাচারী! আমাদের সম্রাটের অনুগত রাজা জয় সিং সহজেই তোমাদের শিবার গলায় দড়ি দিয়ে আগ্রায় সম্রাটের পদচুম্বন করিয়েছে। এমনকি বিজাপুর ও এবং হায়দ্রাবাদের শাসকেরা — শাহজী যাদের দরবারে সামান্য সেবক ছিলেন — সম্রাটের কাছে মাথা নুইয়ে বছরের পর বছর নিয়মিত কর দিয়ে নিজেদের মানসম্মান রক্ষা করে চলেছেন। তুমি আমাদের সম্রাটের প্রতাপের কতটুকু জান? এই অপমানজনক উক্তির জন্যে তোমার জিভ কেটে ফেলা হবে। সুরাত এখন আর গর্তে লুকনো ইঁদুরদের স্থান নয়। এখানে এখন সিংহ বিচরণ করে। শাহজাদা আসছেন সত্তর হাজারের বিরাট ফৌজ নিয়ে। লুকিয়ে পড়, নইলে শকুন ও চিলের খাদ্য হবে। পৃঃ ১৬০

    এর উত্তরে ১৬৭২ সালে প্রতাপ রাও ইখলাস খানের নেতৃত্বে আসা মোগল ফৌজকে কচুকাটা করেন এবং ইখলাস খানকে বন্দী করেন। কিন্তু বিজাপুরী ফৌজের সঙ্গে এক দুঃসাহসিক হামলায় জড়িয়ে প্রতাপ রাও জানুয়ারি ১৬৭৪ সালে নিহত হন। পৃঃ ১৬১

    ১৬৮০ সালে শিবাজীর মৃত্যু হলে শম্ভাজী ক্ষমতায় এসে শিবাজীর সঞ্চিত ধনরত্ন এবং অন্য সম্পদের পরীক্ষা করে একটি সুচী তৈরি করেন। পৃঃ ১৬৭
    তাতে অস্ত্রশস্ত্র, ফসলের ভান্ডার, অলংকার, পশুধন এবং পুরুষ (১০০০) ও নারী (৬০০) দাস দাসী সব নথিবদ্ধ হয়েছে। পৃঃ ১৭২

    ১৬৮১ সালে ঔরংজেবের বিদ্রোহী চতুর্থ সন্তান মহম্মদ আকবর রাজপুতানার কিছু অংশ দখলের চেষ্টায় বার বার পরাজিত হয়ে শেষে দুর্গাদাস রাঠোরের সঙ্গে সহমত হলেন যে মুঘল সাম্রাজ্য বাঁচানোর একমাত্র উপায় – ঔরংজেবের গোঁড়া হিন্দুবিরোধী হামলা বন্ধ করা এবং তার জন্যে তাঁকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করা। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় উনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে দুর্গাদাস রাঠোর এবং মারাঠা রাজ্যের রাজা শম্ভাজীর শরণাপন্ন হলেন। বেশ কয়েক বছর শম্ভাজীর সঙ্গে থেকে সম্রাটের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে রইলেন। কিন্তু শেষে ব্যর্থ হয়ে পারস্যে নির্বাসিত জীবন যাপন করে ওখানেই মারা গেলেন। পৃঃ ১৭৯

    ১১ মে, ১৬৮১ তে শম্ভাজীকে লেখা চিঠিতে উনি প্রস্তাব দিলেন যে পিতা ঔরংজেবকে গদিচ্যুত করতে পারলে আকবর হবেন মুঘল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর এবং শম্ভাজী হবেন দাক্ষিণাত্যের রাজা। পৃঃ ১৮২

    ২০ মে ১৬৮১ তে দ্বিতীয় পত্র পাঠালেন। নভেম্বর ১৬৮২ সালে শম্ভাজী অম্বরের রাজা রাম সিংকে চিঠি লিখে বললেন হিন্দুবিরোধী দুষ্ট সম্রাটকে শেষ করতে হবে। আসুন আমরা এক হই! ও হিন্দুদের ভেবেছেটা কী! আপনার পিতা রাজা জয় সিং ঔরংজেবকে দিল্লির সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। আপনিও শাহজাদা আকবরকে দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে খ্যাতিমান হোন। আমরা, দুর্গাদাস রাঠোর সবাই আপনার সঙ্গে আছি। তাই শাহজাদা আকবরকে কয়েকবছর ধরে আমার কাছে আশ্রয় দিয়েছি। পৃঃ ১৮৫, ৮৬, ৮৭।

    শম্ভাজী এবং মোগল সাম্রাজ্য

    শম্ভাজীর রাজত্ব ছিল নয় বছর (মে ১৬৮০ — ফেব্রুয়ারি ১৬৮৯)। মারাঠি তথ্যসূত্র বলতে একমাত্র চিটনিস বাখার — যা ১৮১০ সালে লেখা এবং একেবারেই নির্ভরযোগ্য নয়। পৃঃ ১৯৩ কিন্তু ইংরেজি, ফরাসি ও পর্তুগীজ দস্তাবেজএর সাহায্যে অনেকখানি ফাঁক ফোকর ভরাট করা সম্ভব হয়েছে।

    এর কারণ দুটো।

    এক, এগুলো শম্ভাজীর সমসাময়িক।
    দুই, এগুলোতে স্থান কাল তারিখ নাম ইত্যাদি খুঁটিনাটি স্পষ্ট করে দেয়া, ফলে ক্রস চেক করতে সুবিধে। পৃঃ ১৯৩

    ইংরেজ ডেসপ্যাচগুলো থেকেঃ

    ২৭ এপ্রিল ১৬৮০ শম্ভাজী শাসন ক্ষমতা নিয়ে নিজেকে রাজা ঘোষণা করেছেন। তাঁর পিতার সময়ের যত সুবেদার, হাবিলদার –সবাইকে ডেকে নিয়ে কাউকে কাউকে বন্দী করেছেন, কিছু লোককে বরখাস্ত করেছেন। বাকিরা আগের ভূমিকায়।

    ৩০ জুন, ১৬৮০ আন্নাজী পণ্ডিত শেকলে বাঁধা। মোরো পণ্ডিত এখনও ওনার বিশ্বাসভাজন।

    অক্টোবর-নভেম্বর ১৬৮০। ব্রাহ্মণেরা শম্ভাজীকে শত্রু ঘোষণা করেছেন। শম্ভাজী জনার্দন পণ্ডিতের মত সম্মানীয় এবং রাজা শিবাজীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জনার্দন পন্ডিতকে বন্দী করেছেন।
    আরও অনেক বড় বড় আধিকারিককে বন্দী করেছেন। জানুয়ারী ১০, ১৬৮১ নাগাদ জিঞ্জিতে অশান্তি। রাজা শম্ভাজী কিলাদারকে আদেশ দিয়েছেন প্রদেশের রাজ্যপালকে বন্দী করতে।
    পোঙ্গল উৎসবে যোগ দিতে জিঞ্জি এসে রাজ্যপাল সহজেই বন্দী হলেন। পৃঃ ১৯৮

    ৩০ অগাস্ট ১৬৮১ শম্ভাজী অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন। কিছু ব্রাহ্মণ যেমন আন্নাজী পন্ডিত, কেশো পণ্ডিত, প্রহ্লাদ পণ্ডিত ওনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র রচে ছিল। একটি মাছ রান্না করা পদে বিষ মেশানো ছিল। একজন বালক জানতে পেরে আগেভাগে সতর্ক করে দেয়। তিনি ওই খাবার খানিকটা একটি কুকুর এবং একজন ভৃত্যকে খেতে দেন। দুজনেই মারা যায়। ষড়যন্ত্রকারীরা বন্দী হয়। পৃঃ ২০০

    ১২ অক্টোবর, ১৬৮১ শম্ভাজী আটজন ষড়যন্ত্রকারীকে হাতির পায়ের তলায় পিষে মারার আদেশ দেন এবং বুরহান পুর গিয়ে আকবরের সঙ্গে মিলিত হয়ে দিল্লি অভিযানের প্রস্তুতি করতে থাকেন। শম্ভাজীর ইচ্ছেয় সৎভাই রাজারামের মা সয়া বাঈকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়।

    ১৩ নভেম্বর ১৬৮১ শম্ভাজী বুরহানপুরে আকবরের সঙ্গে মিলিত হলেন। পৃঃ ২০২

    ডিসেম্বর ১৬৮১ ফাদার মার্টিনের ডায়েরি থেকেঃ

    রাজা শম্ভাজী ব্রাহ্মণদের হত্যা করার ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ওঁর সন্দেহ ব্রাহ্মণেরা ওর নাবালক ভাইকে জেল থেকে বের করে এনে মারাঠা সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় বসাতে চায়, এভাবে চোদ্দ জন ব্রাহ্মণকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে। দেখার বিষয়, যেদিন উনি বেশি সুরাপান করেন সেদিনই ব্রাহ্মণদের প্রতি তাঁর সঞ্চিত ঘৃণা বাইরে প্রকাশ পায়। আর উনি যাকে ইচ্ছে তার গর্দান নেবার আদেশ দেন। পৃঃ ২০২

    শম্ভাজীর পতন শুরুঃ

    নভেম্বর ১৬৮৩ শম্ভাজী যেভাবে তাঁর পিতার সময়ের সচিব ব্রাহ্মণদের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্য্যবহার করছেন এটা ওনার পতন ডেকে আনবে। ব্রাহ্মণেরা ভোলে না আর ওরা হিন্দু রাজাদের পরামর্শদাতা হয়ে থাকতে অভ্যস্ত।

    মে ১৬৮৫। শম্ভুজী রাজার বাড়াবাড়ি, ক্রুরতা, তাঁর অনেক আধিকারিককে ষড়যন্ত্রে প্রেরিত করছে। অনেককে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুজন দেশাই গোয়ায় পালিয়ে গেছে। রাজা চাইছেন ওদের আত্মসমর্পণ, কিন্তু ভাইসরয় রাজি নন। মনে হচ্ছে দুটো নেশনের মধ্যে (পর্তুগীজ মারাঠা?) যুদ্ধ ঘনিয়ে এল। পৃঃ ২০৩

    শম্ভাজী রাজার হিংসা, ক্রুরতা, লাম্পট্য তাঁকে প্রজাদের মধ্যে অপ্রিয় করে তুলেছে। ফলে কিছু নেতৃস্থানীয় ব্রাহ্মণ তাঁকে হত্যা করানোর জন্য মোগল সাম্রাজ্যের সেনাপতিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গোপনে শম্ভাজীর অবস্থান সম্পর্কে খবর পাঠাচ্ছেন। নিজেরা হাত নোংরা করতে চান না। এবার তাঁরা শম্ভাজীকে পরিকল্পনা মাফিক শিকারে পাঠালেন। সেখানে শম্ভাজী চারদিকে মোঘল সৈন্যের ঘেরাবন্দীর ফাঁদে পড়লেন। সম্রাটের নির্দেশে তাঁর ছিন্নশির বেশ কয়েকটি জনপদে এবং নগরে সবার সামনে প্রদর্শিত হল। পৃঃ ২০৪

    শম্ভাজী রাজার এলাকায় ব্যবসা করা মুশকিল। রাজা থেকে তাঁর মন্ত্রী এবং সাধারণ কর্মচারি – সবাই ঘুষ চায়। পৃঃ ২০৬

    ২ এপ্রিল ১৬৮৫। থানা এবং চাউল থেকে যে তাঁতিরা আসত তারা আর আসছে না। এটা হয়েছে শম্ভাজী রাজা চাউল কেল্লা অবরোধ করার পর থেকে। সেখানে ৬০০ তাঁতি পরিবার ছিল। চারশ এখানে কোন ভবিষ্যত নেই মনে করে আগেই অন্যত্র চলে গেছল। যারা রইল তাদের মধ্যে ১৫০ পরিবার মৃত, রয়েছে বাকি ৫০। পৃঃ ২০৬

    শম্ভাজী কীভাবে ধরা পড়লেন

    ঔরংজেব মারাঠাদের থেকে পানহালা দুর্গ ছিনিয়ে নিতে বিজাপুর থেকে মুকারব খানকে পাঠালেন তিনি প্রথমে শম্ভাজীর খবরাখবর পেতে গুপ্তচর নিযুক্ত করলেন। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর এল শম্ভাজী সিরকে পরিবারের (সৎমায়ের আত্মীয়) সঙ্গে সম্পত্তির ঝগড়া মেটাতে রায়গড় থেকে খেলনা দুর্গে গিয়েছিলেন। এখন কাজ সম্পুর্ণ করে সঙ্গমেশ্বর গিয়েছেন। সেখানে তাঁর বন্ধু এবং মন্ত্রী কবি কৈলাশ রম্য প্রাসাদ এবং প্রমোদ উদ্যান নির্মাণ করেছেন। রাজা ওখানে গিয়ে আমোদপ্রমোদে মেতে আছেন। খান গুটিকয় বিশ্বস্ত সঙ্গী নিয়ে কোলহাপুর থেকে ৪৫ কোশ দূরের সঙ্গমেশ্বরের জন্য রওনা হলেন। তিনি সাধারণ পথ ছেড়ে দুর্গম রাস্তা ধরে এগোলেন। রাজা শম্ভাজীর চর খবর নিয়ে এল — মোগলেরা এখানকার খবর পেয়েছে। ওরা আসছে, শীগগিরই হামলা করবে। কিন্তু মদমত্ত রাজা চেঁচিয়ে উঠলেন — তোমরা কি পাগল হলে? কোন মোগল এখানে আসতে পারে না। তারপর ইশারা করলেন ওদের গর্দান নিতে। পৃঃ ২০৮

    হামলা হল। চার-পাঁচ হাজার বর্শাধারী মারাঠা ফৌজ প্রতিরোধ করল। কিন্তু কবি কৈলাশ তিরবিদ্ধ হতেই ওরা রণে ভঙ্গ দিল। শম্ভাজী এবং কবি কৈলাশ তাঁর প্রাসাদের গোপন কক্ষে লুকিয়ে রইলেন। কিন্তু চরদের থেকে সঠিক খবর পেয়ে সেনাপতি মুকারব খানের পুত্র ইখলাশ খান প্রাসাদ ঘেরাও করে সার্চ করে ওদের দুজনকে পেয়ে চুল ধরে বাইরে টেনে আনলেন। শম্ভাজীর পঁচিশ জন সেনা নায়ক সপরিবারে বন্দী হলেন। ঔরংজেব তখন আখলুজে শিবির লাগিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে বন্দী শম্ভাজীকে হাতে পায়ে শেকল পরিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া হল। কোন স্থানীয় জাগিরদার বা ক্ষত্রপ মাঝপথে হামলা করে শম্ভাজীকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করল না। পৃঃ ২০৯

    ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৬৮৯ ঔরংজেবের বাহিনী বাহাদুরগড়ে পৌঁছলে বন্দী শম্ভাজীকে দরবারে পেশ করা হল।

    ঔরংজেব আদেশ করলেন এই দুই জনকে (শম্ভাজী এবং কবি কৈলাশ) ভাঁড়ের পোশাক পরিয়ে এখান থেকে চার মাইল পর্যন্ত যত জনপদ রয়েছে সেখানে সর্বসাধারণের সামনে ঘুরিয়ে আনা হোক। এদের উটের পিঠে চড়িয়ে কাড়া নাকাড়া শিঙা বাজিয়ে এমন তামাশা করা হোক যাতে কাফিরেরা নিরাশ হয় এবং মুসলিমেরা উৎসাহিত হয়। এইভাবে অপমানিত করে দরবারে পেশ করার পর সম্রাট আদেশ দিলেন যে একে শাস্তি দেয়ার জন্যে নিয়ে যাওয়া হোক। শম্ভাজী দু’বার সম্রাটের সহৃদয়তাকে উপেক্ষা করে পালিয়ে গেছলেন। একবার পিতা শিবাজীর সঙ্গে, আর একবার দিলীর খাঁর আশ্রয় থেকে। তাই সেরাত্রেই তাঁর দুটো চোখ উপড়ে নেয়া হল। পরের দিন কবি কৈলাশের জিভ কেটে ফেলা হল।

    ১১ মার্চ ১৬৮৯ তারিখে শম্ভাজী এবং কবি কৈলাস –দুজনেরই বধ্যভূমিতে গর্দান গেল।

    গুজরাতের পাটন নগরের নাগর ব্রাহ্মণ ঈশ্বরদাসের ফার্সিতে লেখা বই থেকেঃ

    দু’দিন পরে সম্রাট রহুল্লা খানকে আদেশ দিলেন – যাও, শম্ভাজীকে জিজ্ঞেস কর —ও র সব ধনসম্পত্তি কোথায় লুকিয়ে রেখেছে। আর আমার ওমরাহদের মধ্যে কে কে ওর সঙ্গে গোপনে চিঠি চালাচালি করত? শম্ভাজী বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর অন্তিমকাল উপস্থিত। তিনি সম্রাটের বাপান্ত করে ছাড়লেন। খান ফিরে গিয়ে সাহস করে সবটা বলে নি। কিন্তু যতটুকু বলেছে তাই যথেষ্ট। সম্রাট বললেন ওর দু’চোখ গেলে দাও। তাই করা হল।

    সেদিন থেকে গর্বিত রাজা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলেন। রক্ষীদের শত অনুরোধেও টললেন না। এভাবে কয়েকটা দিন কাটল।সম্রাটের কাছে খবর পৌঁহল। তাঁর নির্দেশে বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে শম্ভাজীর শরীরের একেকটা অঙ্গ টুকরো করা হল। তারপর ছিন্নশির ঔরঙ্গাবাদ থেকে বুরহানপুর পর্য্যন্ত জনসাধারণকে দেখানো হল। তারপর দিল্লি নিয়ে নগরের দ্বারে টাঙানো হল। পৃঃ ২১১

    শেষপাতে

    যদুনাথ সরকারের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে দুটো দিক।

    এক, বোম্বাইয়া সিনেমায় যাই দেখানো হোক, ঔরংজেব শিবাজী এবং শম্ভাজীকে ইসলাম কবুল করতে বলেন নি। নিজের সেনাপতি জয় সিং এবং যশবন্ত সিং বা মেবারের রাণা রাজ সিং — কাউকেই মুসলমান হতে চাপ দেয়া হয় নি। মোগল সম্রাট চাইছিলেন প্রশাসনিক আনুগত্য, বশ্যতা এবং সম্পদের ভাগ। শম্ভাজীকে চাপ দেয়া হয় শিবাজীর রত্নভাণ্ডারের খোঁজ দেয়ার জন্যে।

    দুই, শিবাজী প্রবলপ্রতাপ মোগল সাম্রাজ্যের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধেছিলেন। দাক্ষিণাত্যের বড় অংশ, মহারাষ্ট্র, মাদ্রাজ ও মহীশূরের বেশ বড় অংশ দখল করে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সমগ্র ভারত জুড়ে এক হিন্দু ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা কখনই তাঁর পরিকল্পনায় ছিল না।

    (শেষ)
    =================================
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • ধারাবাহিক | ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন