

দেখতে দেখতে পঁচিশটা বছর কাটানো হয়ে গেল এই দেশটাতে। মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারি না, কোনটা আমার বেশি কাছের: যেখানে আমার মায়ের গর্ভ থেকে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম, পেলেবেড়ে উঠেছিলাম; নাকি যেখানে আমার নাড়িছেঁড়া ধনটিকে জন্ম দিয়ে বড়ো করে তুলেছি। মনে হয় দুটি দেশই সমমাত্রায় আমার ভালোবাসা, মমত্ব এবং মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে। আমার বাসভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে আজ যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে, তার আঁচ আমেরিকার আর পাঁচজন নাগরিকের মতো আমাকেও গভীরভাবে বিচলিত করে তুলেছে।
এই মুহূর্তে গত ১৮ ই অক্টোবরে ঘটে যাওয়া ''নো কিংস'' বিক্ষোভ নিয়ে দেশে-বিদেশে চায়ের কাপে তুমুল তুফান উঠলেও, বস্তুত এটা ছিল ‘’নো কিংস’’ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়; ''নো কিংস ডে'' র সূচনা কিন্তু হয়ে গিয়েছিল সেই ১৪-ই জুন, ২০২৫।
এখানে একটু জানিয়ে রাখি যে, ২০২৫-এর জানুয়ারিতে, হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হয়ে কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে এযাবদ তিনটে বৃহৎ ট্রাম্প-বিরোধী গণবিক্ষোভ হয়েছে। প্রথম বড় ধরনের দেশব্যাপী ট্রাম্প-বিরোধী মিছিলটি সংঘটিত হয় ৫ এপ্রিল, ২০২৫ যখন ট্রাম্পের সাবেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতি ইলন মাস্ক নবনির্মিত ‘ডজ়’ (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি/ DOGE’) - এর প্রধান হিসেবে, ‘অপ্রয়োজনীয়’ খরচ কাটছাঁট করার নামে ব্যাপক সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের খসড়া তৈরি ক’রে ফেলেন। ট্রাম্প-বিরোধী এই বিক্ষোভটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী "হ্যান্ডস অফ!" প্রতিবাদেরই একটা অংশ, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ও কর্মকাণ্ড, সরকার ও অর্থনীতির উপর তার বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকরা একযোগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
যাই হোক ফিরে আসি ‘’নো কিংস ডে'’ প্রসঙ্গে। ২০২৫ সালের ১৪-ই জুন মধ্যপশ্চিম আমেরিকায় আমার ছোট ইউনিভার্সিটি টাউনেও এই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে "নো কিংস ডে" ৱ্যালির খবর পাওয়ামাত্রই ঠিক করে নিয়ে ছিলাম যে, শনিবার অপরাহ্নের সেই বিক্ষোভের সামিল হবো। শেষমুহূর্তে আমার শ্বেতাঙ্গিনী প্রতিবেশী রেচেলও আমার সঙ্গী হতে চাইল। সিঙ্গেল-মাদার রেচেলের সমস্যা হলো: তার দেড় বছরের ছেলে এনড্রুকে সে কোথায় রেখে যায়। নাহ, বেবিসিটিংয়ের জন্য মনমতো কাউকেই পাওয়া গেল না। অগত্যা পুত্রকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল সে। যা ভাবা তাই কাজ! পেটটি পুরে এনড্রুকে খাইয়ে, ফ্রেশ ডায়াপার পরিয়ে, ভালমতন স্ট্রলারে বেঁধেছেঁদে তাকে সাথে করেই রেচেল আমার সঙ্গ ধরল।
আমাদের গন্তব্যস্থান ছিল স্টেডিয়াম বুলেভার্ড- শহরের ফুটবল খেলার স্টেডিয়াম, সেখানেই জমায়েত হওয়ার কথা সকলের। গাড়ি চালিয়ে আমাদের এলাকা থেকে সেখানে পৌঁছাতে সাধারণত ১১-১২ মিনিটের বেশি সময় লাগে না, কিন্তু ইভেন্টের দিন হলেই, সে রেগুলার-সিজন গেম হোক বা স্প্রিং গেম, বা অন্য কিছু, ওই ব্যস্ত অঞ্চলে পার্কিং-স্পট পাওয়া লটারি জেতারই সমান হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং আমরা আগেভাগেই ঠিক ক’রে নিলাম যে, সঙ্গে কোনো গাড়ি নেব না, হেঁটেই পৌঁছাব অকুস্থলে।
মেইডেন লেন থেকে শুরু করে প্রথমে ব্রডওয়ে স্ট্রিট, তারপর মেইন স্ট্রিট ধরে যখন আমরা লিবার্টি স্ট্রিটে পৌঁছালাম, তখনই মানুষের ঢল নজরে এল, যদিও সেখান থেকে স্টেডিয়াম বুলেভার্ডের দূরত্ব তখনও দুই মাইলেরও বেশি। আশেপাশে বহু মানুষ হেঁটে চলেছেন, আমাদের চলার গতিও ক্রমে ক্রমে স্তিমিত হয়ে আসছে। শুনতে পেলাম, মানুষের ভিড় নাকি এখান থেকে শুরু হয়ে সেই স্টেডিয়াম পর্যন্ত চলে গিয়েছে। খুবই বিস্মিত হলাম: সে তো অনেক লম্বা পথ, এত লোকও তাহলে হাজির হয়েছে আজ! যাই হোক, গুটিগুটি পায়ে এগোতে এগোতে আমরা শেষমেশ গন্তব্যস্থানে পৌঁছে গেলাম। খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য ফুটবল ভক্তরা স্টেডিয়ামে ঢোকার যে প্রধান রাস্তাটি ব্যবহার করেন, দেখলাম সেই রাস্তার পাশে পাশেই হাজার হাজার বাসিন্দা সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের হাতে-ধরা, বুকে-ঝোলানো পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে প্রাঙ্গন ছয়লাপ। কেউ কেউ প্রতিবাদী গানের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরছেন। থেকে থেকেই বজ্রকণ্ঠে স্লোগান উঠছে: ‘’নো থ্রোনস, নো ক্রউনস, নো কিংস’’। তাদের ভিড়ে মিশে যেতে যেতে আমরাও আবেগতাড়িত কণ্ঠে গলা মেলালাম: ‘’নো থ্রোনস, নো ক্রউনস, নো কিংস’’। দেখতে দেখতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা আর প্রতিরোধের গানে ভ’রে উঠেছিল আমাদের সেদিনের সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। সমাবেশের পর আমরা শহরের রাস্তা ধ’রে মিছিল ক’রে হেঁটে গিয়েছিলাম। মুখে লাগানো প্যাসিফায়ারের সদ্ব্যবহার করতে করতে আমাদের সঙ্গের খুদে নাগরিকটি তার বড়ো বড়ো নীল চোখ মেলে দিব্যি ঘাড় ঘুরিয়েফিরিয়ে চারপাশের সবকিছু দেখছিল আর মিটি মিটি হাসছিল। গর্বের হাসিতে রেচেলের মুখচোখও কেমন জ্বলজ্বল করছিল। ওদের দুটিকে আর চারপাশের উদ্দীপনাময় ঝকঝকে চোখগুলোকে লক্ষ করতে করতে হঠাৎ ঠাওর হয়, আমার প্রবীণ চোখও বেশ জ্বালাজ্বালা করছে।
জেনেছিলাম, আমার শহরের প্রায় আট হাজার মানুষ সেদিন অংশগ্রহণ করেছিলেন। শুধু আমার শহর বলে নয়, আমেরিকার আনাচেকানাচে অসংখ্য মানুষ তাঁদের প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিলেন সেই ১৪-ই জুন।
কী হলো সেদিনের বিক্ষোভ আন্দোলনের ফলাফল?
ট্রাম্প এবং তাঁর মিত্ররা একজোটে দেশজুড়ে যে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা দখলের বাড়াবাড়ি এবং দুর্নীতির চাষাবাদ চালাচ্ছেন তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপই এই জাতীয় কর্মকাণ্ড এবং গণসংহতির দিন পালিত হয়। বারবার একটাই কথা উঠে আসছিল থেকে থেকে: আমেরিকা কোনো হবু রাজাদের সহ্য করবে না। এ দেশ কেবলমাত্র তাঁর জনগণের জন্য, কোনো রাজন্যবর্গের জন্য নয়। স্বচক্ষে দেখেছি, সেদিনের সেই শান্তিপূর্ণ ৱ্যালিতে অংশগ্রহণকারী মানুষেরা বেশিরভাগই সাধারণ আমেরিকান, পেডিগ্রি নামের কোনো বোঝা তারা বহন করছেন না, এঁরা সেই সকল মানুষ যাঁরা ‘’ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’’ আন্দোলনের সময়ও ছুটে এসে রাস্তায় নেমেছিলেন, কারণটা সেই একই - গণতন্ত্রের রক্ষা। সেই কাজে এদেশের মানুষ কখনো পিছিয়ে যায়নি, যেতে পারে না।
প্রশ্ন উঠতে পারে ১৪-ই জুনটাকেই কেন আন্দোলনের জন্য বেছে নেওয়া হলো? আসলে ১৪-ই জুন হলো মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। আর কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনও ছিল সেই একই দিনে। সেদিন ‘’ফ্ল্যাগ ডে’’ উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ট্রাম্প। ন্যাশনাল মলের সেই উৎসবে হাজার হাজার সেনার বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজের সাথে সাথে চলে ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, আতশবাজির ঢালাও প্রদর্শনী। ১৯৯১ সালে, উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকার জয়লাভের পর অনুষ্ঠিত বিজয়োৎসবকেও হার মানিয়ে দিয়েছিল ১৪-ই জুনের এই অত্যন্ত ব্যয়বহুল ধুমধাম। মনে হচ্ছিল যেন কারুর রাজ্যাভিষেক উদযাপিত হচ্ছে। সারা দেশে জুড়ে যখন নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে যেতে বসেছে, মুদ্রাস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে, হোমলেসনেস উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কাটছাঁট চলছে, তখন এই রাজসূয় আয়োজনের পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ অপচয় ছাড়া আর কী? একদিকে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় হুহু করে বাড়ছে, অন্যদিকে বিলিওনিয়ার মিত্রদের জন্য ট্রাম্প বিশাল বিশাল উপহার বিতরণ করছেন, ভাবা যায়? যার-পর-নাই ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিনিরা তাই এবার জাতীয় প্রতিবাদে মুখিয়ে উঠেছেন।
১৪-ই জুনের সেই একদিনের আন্টি-ট্রাম্প আন্দোলন, চার মাস পর, ১৮-ই অক্টোবর, যে আরও অনেকগুণ জোরদার হয়ে উঠেছে, তাতে আর সন্দেহের অবকাশ কোথায়। চুপ করে থাকার সময় যে এখন পেরিয়ে গেছে, কারণ এ লড়াই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই। ৫০টি রাজ্য আর ওয়াশিংটন ডিসিতেই শুধু এই আন্দোলন আজ আর থেমে নেই, বিশ্বের বিভিন্ন শহর, যেখানেই স্বাধীনতাপ্রেমী, গণমতবিশ্বাসী মানুষ রয়েছেন, সেখানেই এই প্রতিবাদের তাঁত ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ লক্ষেরও বেশি সাধারণ মানুষ ২,৭০০টিরও বেশি অনুষ্ঠানে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছেন: আমেরিকাতে কোনও রাজা নেই, দেশের ভালোমন্দ নির্ধারণের বিচার ও ক্ষমতা জনগণের উপরই অর্পিত রয়েছে। ট্রাম্পের রাজাসুলভ আচরণ, একাধিপত্য কোনোমতেই মেনে নেওয়া চলবে না।
সত্যি কথা বলতে কী: ২০২৫-এর জানুয়ারী ২০-তে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে পদাসীন হওয়ার পরদিন থেকেই আমেরিকানরা দেখে চলেছেন ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে মানুষের বাকস্বাধীনতার উপর একপেশে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের জন্য মানুষকে আটক করেছে, তাঁদের চাকরি কেড়ে নিয়ে সরাসরি তাঁদের পেটে লাথি মেরেছে, আমেরিকান নাগরিকদেরকে দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছে।
এই তো সেদিন, ১৭ অক্টোবর, আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে পুরোনো দিনের রিপাবলিকান নেতা জর্জ স্যান্টোসকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু, বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ ক’রে সেই শাস্তি রুখে দেন ট্রাম্প। এখানেই তিনি থামেননি, সংশ্লিষ্ট রায়টিকেই বাতিল ক’রে দেন তিনি। ভাবতে আশ্চর্য লাগে আদালতকে অমান্য করার এই অধিকার তাঁকে কে দিল। দিনে দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রদর্শন বেড়েই চলেছে। তাঁর প্রশাসন আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় মুখোশধারী আইস (U.S. Immigration and Customs Enforcement) এজেন্ট অতর্কিতে পাঠিয়ে দিয়ে গোটা সম্প্রদায়কেই আতঙ্কিত করে তুলেছে। অভিবাসী পরিবারগুলিকে লক্ষ্য ক’রে আইস প্রোফাইলিং করছে, এবং তারপর কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাঁদেরকে আটক করছে। যত্রতত্র হানা দিয়ে লিগাল সিটিজেনদেরকেও মাঝরাতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আইস। নির্বাচনকে পাত্তা না দেবার হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প। যখন সাধারণ মার্কিন পরিবারগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং শিক্ষার ব্যাপারে সরকারি সাহায্য, সেটা না করে তিনি যেটুকু বা আছে, জেনেবুঝে তা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। ভোটারদের মুখ বন্ধ করার জন্য মানচিত্রে কারচুপি করছেন। ট্রাম্পের অভিবাসন, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নীতির বিরুদ্ধে মানুষের বিশ্বাস ঘুচে গেছে। কিন্তু তিনি মনে করছেন: তাঁর শাসন নিরঙ্কুশ। কিন্তু আমেরিকায়, আমাদের কোন রাজা নেই, এবং আমরা বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে পিছু হটব না।
"নো কিংস" বিক্ষোভ কোনও সরকারী সংস্থার সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি হলো, ইনডিভিসিবল, ফাইভজিরোফাইভজিরোওয়ান (৫০৫০১--৫০টি রাজ্য, ১টি আন্দোলন) মুভমেন্ট এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের মতো কয়েকটি প্রগ্রেসিভ গোষ্ঠীর একটি জোট দ্বারা আয়োজিত গণ-সমাবেশের একটি দিন। এই আন্দোলনকে কোনো রাজনৈতিক রঙে রাঙানো ঠিক হবে না। "নো কিংস" কেবল একটি স্লোগান নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এর মূল প্রোথিত রয়েছে এমন এক ভিত্তিপ্রস্তরের উপর যেখান থেকে মার্কিন জাতির জন্ম হয়েছে। এদেশের সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখেন, প্রতিদিনের জীবনযাপনের চর্যায় নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক কর্তব্যপালনের ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট সচেষ্ট। গণতন্ত্র রাখার জন্য জান লড়িয়ে দিতে তাঁরা পিছপা হন না। ২০২০ সালে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদের সময় সারা দুনিয়া তা দেখেছে। কারণ এই দেশ রাজা, একনায়ক বা অত্যাচারীদের নয়। এখানে কোন সিংহাসন নেই। কোন মুকুট নেই। কোন রাজা নেই। এ দেশ জনগণের, আমাদের।
লক্ষ করার মতো বিষয় যে এখন এমন এক সময়ে ‘’নো কিংস’’ বিক্ষোভ হচ্ছে, যখন কেন্দ্রীয় তহবিলের জোগান না থাকার কারণে মার্কিন সরকার ফেডারেল শাটডাউনের মধ্য দিয়ে চলছে। ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থার কারণে বহু ফেডারেল কর্মসূচি ও পরিষেবা বন্ধ হয়ে আছে, মানুষের ক্ষোভ উথলে উথলে উঠছে। কে বলতে পারে, এই শাটডাউন ‘’নো কিংস’’ আন্দোলনকে এক নতুন তাৎপর্য প্রদান করবে না এবং ফেডারেল কর্মীদেরকেও আন্দোলনে যোগদান এবং সমর্থন করার জন্য তাঁতিয়ে তুলবে না। দেখা যাক, কথাতেই তো আছে "আশায় বাঁচে চাষা"।