এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মহিলাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার এলেন না কেন? 

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৫৩ বার পঠিত
  • এই বিতর্ক সভার মডারেটর লর্ড ভানু।

    ভানুঃ বন্ধুগণ। বেশীক্ষণ আর আপ্নেগো খারাইয়া রাখুম না। অইসে কী, রাস্তায় আওনের সময় কিসু মহিলা গুন্ডার পাল্লায় পরসিলাম। তার মইদ্যে একজনা আসিল মিস প্রিয়ংবদা। ফস কইর‍্যা মুহে একহান সিগারেট ধরাইয়া বাঁকা চোখে হুঁশিয়ার করলো আমায়। কইল, টপ কইর‍্যা কোনো প্রতিযোগিনীর প্রেমে য্যান না পইর‍্যা যাই। তা না অইলে কইসে বাড়ি ফিরা আইলে চিপায় লইয়া আমারে দিয়া ভরোত্তলন করাইবো। আমি তো ভয়ে ফুপাইয়া ফুপাইয়া কাঁদতে লাগ্লাম। তয় মালপো মাসিমা আইস্যা আমারে মহিলা গুন্ডাদের হাত থিক্যা ছিনাইয়া এইমাত্র স্কুটিতে কইর‍্যা এইহানে ছাইড়া দিয়া গেলেন। [ঘাড় ঘুরিয়ে বিতর্ক সভার বিষয়টা আরেকবার দেখে নিলেন] যাউক।যা কইতে আসিলাম, দেহেন আপ্নেগো কী মত অইব তা সম্যক জানা নাই, তয় চোখ বুইজ্যা একবার ভাবেন, যদি রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ারকে দাঁড়ি, গোঁফ কামাইয়া, মুখে রুজ, পমেটম, পায়ে আলতা মাখাইয়া, বা আজকাল যা সব অইসে, ওইসব ম্যানিকিওর আর পেডিকিওর করাইয়া, লগে বেনারসি বা জামদানি পরাইয়া দেওন যাইত, সঙ্গে লম্বা একহান ঘোমটা, বা আজকালকার সব ফ্যাশনের পোশাক পরাইয়া দেওন যাইত তয় দ্যাখতাম কোন হালায় চিনতে পারত, যে হেতারা মহিলা না পুরুষ? তাই আমার মতে...

    দর্শকঃ(শম্ভু) আপনার মত শুনতে আসিনি। বেশি কথা বললে না স্যাট তুলে নিয়ে যাব।

    ভাঃ হ। আমার ভুল হইয়া গেসে। আইজ এই বিতর্ক সভার পক্ষে বক্তব্য রাখবেন মেস ম্যানেজার তুলসী দাদু, ভানু গোয়েন্দার সহকারী মিঃ জহর, ইন্ডাস্ট্রীয়ালিস্ট কমল মিত্র, লেখক জটায়ু, আফিমখোর কমলাকান্ত, কারখানার সিনিয়র সুপারভাইজার বাঁড়ুজ্জ্যে বাবু। আর বিপক্ষে বক্তব্য রাখবেন প্রবীনা গৃহবধূ মলিনা দিদু, বসন্তবিলাপ বা দম্পতি নাটকের গীতাদেবী, পিয়ানো বাদক মেদিনী দেবী, কচি সংসদের সদস্য লালিমা পাল(পুং), আধুনিকা শ্রীমতী ভয়ঙ্করী ওরফে দোলন, এবং ধন্যি মেয়ে খ্যাত মিস মনসা। আর ঘণ্টা বাজাইয়া বক্তব্যের সময় নির্ধারণ করবেন আমাগো মেসের দুষ্টু মিষ্টি তারাভক্ত ব্যোমকালী বাবু।

    ব্যোঃ মা, তারা

    ভাঃকী?

    ব্যোঃ [ঢং]

    ভাঃ প্রথমে কইবেন মলিনা দিদু

    মঃ উফ বাবাগো, সংসার সামলাতে সামলাতে হাড় মাস কালি হয়ে গেল একেবারে। গোয়ালে জাবদা দাও, রান্না করো, ছেলেমেয়ে সামলাও, কুলদেবতার পুজো, চাকর বাকরদের সামলানো। উফ। [কথাগুলো তুলসী দাদুকে লক্ষ্য করে]  প্রথম প্রথম সেই যে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে কত চাঁদ দেখাতো আমায়, আহা!, আহাকত আহ্লাদ। সেই তখন থেকেই আমার চোখে ঘুম ছিল না। ডাক্তার বলল ইন্সোমেনিয়া না কী সব ঘ্যাচাং। ঘুম চোর কোথাকারের! আমার সব ঘুম তো তুমিই চুরি করে নিয়েছে গো । আমি তখন মাথায় অ্যালবট কেটে আসতুম। মুখে রাঙা খিলি পান। দুজনে চিবোতুম আর হ্যারিকেনের আলোয় আমাদের পেরেম হত। [দর্শকদের দিয়ে তাকিয়ে] কিন্তু হাতা খুন্তি হাতে থাকলে কী আর আমরা পেন পেন্সিল তুলে নিতে পারব গা? কক্ষনো না। কিন্তু নিতে হবে। পুরুষদের পুরুষদেরএই চক্রান্ত ভেস্তে দিতে হবে...। আমরা যদি ওদের থেকে ভালো রাঁধুনি হতে পারি, তবে কেন ওদের থেকে ভালো লেখক হতে পারব না? হতেই হবে..., কারণ লেখাও আসলে একধরনের রান্না...

    ব্যোঃ [ঢং]

    তুলসী দাদুঃ এই যে মহিলাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার এলেন না, আমি বলি কী, কে কোথায় এলো না এলো, তাই নিয়ে বিবাদ বিসংবাদ না করে, বরং দেখি কে কোথায় এলো। হ্যাঁ। কে কোথায় এলো। এই যে লিখেছে, মহিলাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার এলেন না কেন? তো, অসুবিধেটা কোথায়? এই যে আমাদের পুটু, কেমন কোল আলো করে এলো, এই যে সকালে দুধওয়ালা এলো, এই যে sms এলো, এই যে বৃষ্টি এলো, এই যে তুমি এলে......, ওমা! কোবতে হয়ে যাচ্ছে গো। যেমন তাসের দেশে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, এলেম নতুন দেশে। আহা। আমারও শখ ছিল বুইলেন লেখক হওয়ার। কিন্তু মেসের ম্যানেজারি করা, আর বাড়ি ফিরে সেই শুকনো মুড়ি আর বাতাসা। তারপর হুঁকো আছে তো তামুক নেই, তামুক আছে তো টিকে নেই, টিকে আছে তো আগুন নেই ..., লাইফটা একেবারে লাবড়া হয়ে গেল মশাই। তবে আমি হলে সম্পাদকই হতুম, লেখক নয়।

    ব্যোঃ [ঢং]

    গীতা দেবীঃ এই সব আদিখ্যেতা একদম ভালো লাগে না আমার। পাড়ার কচি কচি মেয়েরা ছেলেদের পেছনে পেছনে বাইকে করে ঘুরলে লেখাপড়াটাই বা করবে কখন আর লেখাপড়া না করলে রবীন্দ্রনাথ কেন, কানাই ম্যাস্টুরও কি হতে পারবে? বলি আমার তো তিনকাল গিয়েছে, এখন তোরা যদি উল্লুস ঝুল্লুস করে বেড়াস, তখন লেখা কি তোদের নাতনি এসে লিখে দিয়ে যাবে? আমার স্বামী মানে সেই হেপো রুগিটার সেবা করতে করতে জীবন খ্যাংরা ঝ্যাঁটা হয়ে গেল একদম। কিন্তু ওর ডাক্তার বন্ধুকে দেখো, এখনো কেমন তরতাজা, কেমন সুপুরুষ। যখন তার ওই দরাজ গলায় ‘বউঠান’ বলে আমায় ডাক দেয়, তখন মনে হয় ওঁর সামনে বসলেই দু’একটা কবিতা বেরিয়ে আসবেই আসবে। [ঘড়ির দিকে তাকিয়ে] ওমা দেখেছেন, সিধুকে সেই কখন বলেছি, ইভিনিং শোয়ের ৩ টে টিকিট কেটে আনতে। পচার মা দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ওদিকে ডাক্তারবাবুও ... [সিধুকে সামনের সীটে বসে থাকতে দেখে। সঙ্গে একটা মেয়ে। নাম আলো] এই হারামজাদা, বলি টিকিট না কেটে এখানে কী করছিস রে? আর সঙ্গে ওটা কে? দাঁড়া, আসতে দে আজকে তোর মেসোকে...

    ব্যোঃ [ঢং]
      
    জহরঃ [ সিট থেকে উঠেই আঁতিপাঁতি, এদিক সেদিক খুঁজতে শুরু করলেন] 

    রবিঃ কী হল মশাই?

    জঃ সাট আপ। ভাবছি মেয়েটা কোন দিকে পালাল? লাল টিলা না সবুজ টিলা?

    সিধুঃ আপনি কোন দিকের?

    জঃ থামুন।  দিল্লী থেকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে এসে উঠল গায়কের বাড়িতে। তারপর দেখি ওমা! থিয়েটারে খুশী বানু হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম যে সে ফৈজাবাদ থেকে নাকি এসেছে। তারপর দেখলাম হঠাৎ ছেলে হয়ে গেল মশাই। এইসব করলে, লেখার কাজ কখন করবে শুনি? তবে আমি নিজে একবার ব্যবসা করতে গিয়ে মালিকের কাছে বেদম বকা খেয়েছিলাম। বলেছিলাম যে হাতি কিনে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলব। সে তো শুনে আমাকে এই মারে কী সেই মারে। আমি ওকে বলেছিলাম যে হাতিটাকে কিনেই যে মেরে ফেলব তার কারণ মরা হাতি শুনেছি লাখ টাকা; জিন্দা হাতির আবার কোনও দাম আছে নাকী? যাইহোক, চিঠি লেখার ধাতটা আমাকে ধরিয়েছিল ওই গৌড়হরি। ভেবেছিলাম একটা ‘সবিনয়ে নিবেদন’ লিখব। তেল চুরি করে পয়সা রাখতাম ভালো বই কিনব বলে। ভাবলাম ভগবানকে বলে মাফি চেয়ে নেব। কিন্তু ভগবানকে পাঠাতে গিয়ে দেখি সেটা চলে গেল মালিকের কাছে! সেইজন্য বলছি কে যে কে আর কী যে কী? এটা কে জানে রে বাবা। এই যেমন, অনিলা দেবী।  কে তিনি? খুঁজতে গিয়ে দেখি তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। নীহারিকা দেবী কে সেটা জানতে গিয়ে দেখি তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত। সেই জন্যই বলি ঝগড়াঝাঁটি হটান। হয়ত দেখা যাবে রবীন্দ্রনাথ আর শেক্সপীয়ারেরও খানকতক করে মহিলা ছদ্মনাম আছে। হয়ত আমরা জানি না। তাহলে কী হল?

    শঃ মেরুন টিলা।

    জঃ এইরে! যেতে হবে...

    ব্যোঃ [ঢং]

             
    শ্রীমতী দোলন ভয়ঙ্করীঃ যদি কোথাও কিছু বেচাল দেখেছি, তবে ছাল ছাড়িয়ে ডুগডুগি বাজাব এই বলে দিলাম।  এটা সবাইকে জানতে হবে, যে আসলে আমরা মানে মহিলারা নিজে বেশি লিখিফিকি না; আমরা লেখাই। আসলে আমরা বলি না, আমরা বলাই।

    রবিঃ বলাইচাঁদ বুঝি?

    দোঃ কোন যমের বাচ্চা এই কথা বলল রে? এই আলু? আলু? এই হতভাগা আলু। [এদিক ওদিক দেখে] শালা। ঠিক কোথাও বসে গাঁজা টানছে মনে হয়। আমার একদম পুরুষদের ল্যাঙবোট হয়ে ঘুরতে ইচ্ছে করে না। আমি যা করবো সেটা নিজের ইচ্ছায় করবো। নেহাত নিজের বাবা টাকা রোজগার করে নিয়ে আসে বলে বাবা বলে ডাকি, নয়ত টেরিটি বাজারে শুঁটকি মাছের কারবার করার জন্য কবেই ছাল ওর ছাড়িয়ে নিতাম। আমার আর বাবার দাপটে কাক চিল পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে বসতে ভয় পায় বুঝলেন? আমার ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে পুরুষগুলোকে নাকে দড়ি দিয়ে চরকির মতো ঘোরাতে। সেই জন্য এলাকায় ক্যারাটে, কুংফু এই সবের ক্লাব খুলব ভেবেছি। আমাদের মেয়েদের মধ্যে যারা যারা কী সব নেই ভেবে ভেউ ভেউ করে কাঁদছেন, তারা খোঁজ করুন, কোথায় কোথায় ভালো শক্ত দড়ি পাওয়া যায়। তারপর সেগুলো ওদের নাকে বেঁধে বনবন করে ঘোরান। শুধু ঘোরানোর সময় দেখে নেবেন ক্লক ওয়াইস না অ্যান্টি ক্লক ওয়াইস ঘোরাচ্ছেন। একরকম ভাবেই ঘোরাবেন, তা না হলে আবার সেক্স চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। আমার বোন, ঝুলনের প্রেমে এক ওইরকম কবি পড়েছিল বুঝলেন। বলে কীনা প্রাইভেট গাড়ি থাকতে সে নাকি ঝুলে ঝুলে বাসে ট্রামে যাতায়াত করে কারণ সে ঝুলনকে বুঝতে, ওকে উপলব্ধি করতে চায়! ন্যাক চৈতন এলেন আমার। ওকে বলেছি, খবরদার, আবার বাড়িতে দেখলে রোষ্ট করে বুলডগ দিয়ে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে খাওয়াব।

    ব্যোঃ [ঢং]

    কমল মিত্রঃ আমি মনে করি জীবনে ও কাজে একটা সাধনা থাকা চাই। হ্যাঁ, একটা সাধনা থাকা চাই আর চাই সঙ্গে লেগে থাকা। আর সেটা না থাকাতেই মহিলাদের মধ্যে তাঁরা আসেননি। অনেক মহিলা সুযোগ পাননি এটা সত্যি। তাঁদেরকে সমাজের অনেক বাধাবিপত্তির বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। তারা শোষিত ও অবহেলিত হয়েছেন একথাও সত্যি। কিন্তু এমনও কিছু মহিলা আছেন যারা সময় ও সুযোগ পেলেও হেলায় হারিয়েছেন। কিছু মহিলাকে দেখবেন যেখানে সেখানে পিএনপিসি করবার স্বভাব। ফাঁক পেলেই হল। পুকুরঘাটে, ময়লা ফেলতে গিয়ে আবার সব্জি কিনতে গিয়ে। খালি গুজগুজ আর ফুসফুস। গুজগুজ আর ফুসফুস। সঙ্গে পাড়ার কে কী করল, কে কী নতুন ডিজাইনের জামাকাপড়, গয়না কিনল, কে কী রান্না করলো, টিভির সিরিয়ালের গল্প – কী নেই। আর এখন হয়েছে এক এই সোশ্যাল মিডিয়া। খালি এই করলাম আর সেই করলাম বলে ছবি সাঁটানো আর নানা রকম নাচ করে করে পোষ্ট ভাইরাল করে দেওয়া কিছু মহিলার কাজ হয়েছে। আর সাহিত্য করেই বা হবেটা কী শুনি? তার চেয়ে কমার্স, ট্রেড, চেম্বারস - এইসব আমি বেশি পছন্দ করি।

    দর্শক(নবদ্বীপঃ) এই টেম্পো, সাইড সাইড...

    কমল মিত্রঃ[কে বলল দেখতে থাকে] সেই জন্য বলছি, আমি যদি রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ারের বাবা হতুম, তবে তাঁদের হয় ফোর্ড  নয়ত টাটা বানিয়ে ছাড়তুম। এই যে, আমার বউ শান্তনার আদরের কুকুর, ঝুনু সোনা, চাঁদের আলোয় মাতাল হয়ে এদিক সেদিকে ঢুকে পড়ছিল। এখন আমরা যদি সাহিত্যের নেশায় চুড় হয়ে এবং চাঁদের আলোয় মাতাল হয়ে এ বাড়ি সে বাড়ি ঢুকে পড়ি ,অবস্থা কী ভয়ঙ্কর হতে পারে, একবার ভেবে দেখেছেন? ঝুনু না হয় কুকুর বলে ছাড় পেয়েছে। আমাদের কেউ ছাড় দেবে ভেবেছেন?  পেঁদিয়ে...

    নঃ বৃন্দাবন, মথুরা, আগ্রা - একেবারে নিখরচায় ভ্রমণ করিয়ে দেবে।

    কঃ [কে বলল দেখতে থাকে। তারপর খুঁজে না পেয়ে] তাই জানবেন পুরুষ বা মহিলাদের মধ্যে যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ার যে আসেননি সেটা খুব আশীর্বাদ, খুব মঙ্গলের। একে ‘RUM-এ রক্ষে নেই, VODKA দোসর’।  পুরুষ মহিলা , এই এতো এতো রবীন্দ্রনাথ আর শেক্সপিয়ার নিয়ে তো দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যেত মশাই। একটা লাঠালাঠি শুরু হলে দেশের সাহিত্যনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, একবার ভেবে দেখেছেন?

    ব্যোঃ [ঢং]।

    ধন্যি মেয়েঃ [হাতে আঁশ বটি] আমি হলাম হাড়ভাঙা গাঁয়ের মেয়ে। গুলি, ডান্ডা , ছেলেদের সঙ্গে মারপিঠ, এইসব নিয়েই থাকতাম। আর মামার জন্য আনা তোতলা ভট্টাচার্যের চন্নামৃত নিতাম খেয়ে। সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খেতাম পান্তাভাত। পড়াশোনা তেমন একটা করতাম না। অপোনেন্ট দলের পেলেয়ারের মোজাতে ব্যাঙ ঢোকানো বা গলায় ঘুঁটের মালা পড়ানই ছিল আমাদের মেয়েদের টাইম পাস। এই নিয়েই ছিল আমাদের মেয়েবেলা। বহুদিন যদিও আমাদের পড়াশোনা করতেই দেওয়া হয় নি। হানা নিউম্যানকে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল। ইহুদী বিদ্বেষের কারণে তাঁকে হারাতে হয়েছিল চাকরি। গণিতে পারদর্শী হাইপেশিয়াকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। কেটে নেওয়া হয়েছিল খনার জিভ। ‘ম্যাথেমেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের অফ অ্যামেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্টকে একটা চাকরির জন্য দোরে দোরে ঘুরতে হয়েছিল শুধুমাত্র মহিলা হওয়ার জন্য। আমাদের ভোট দেওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বেয়াক্কেলে ফুটবল খেলাই যত গোলমাল করে দিল। বিয়েতে পড়া হল শ্রাদ্ধের মন্ত্র। বন্দুক দেখিয়ে জোর করে যদি বিয়ে দেওয়া যেতে পারে, তবে বন্দুক দেখিয়ে কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস বা গান লেখানোই বা যাবে না কেন? একটা মন্ত্র পড়ে দিলেই ব্যাস। দেখি কোন মিনসে একবার আসে। আঁশ বটি নিয়ে এমন বাই বাই করে ঘোরাবো যে নান চাকু ফাকুও পাত্তা পাবে না।    

    ব্যোঃ [ঢং]

    জটায়ুঃ [এদিক সেদিক ভয়ে ভয়ে দেখে নিয়ে] না। দেখছিলাম এখানে আবার মগনলাল আসে নি তো? উফ বেনারস আর নেপালে যা করেছে আমায় নিয়ে, বলবার মতো ভাষা নেই বুঝলেন? ওকে দেখলেই আমার বুক, ঠ্যাং মায় সব্ব শরীর কাঁপতে থাকে। আর ও যখন আমায় আঙ্কেল বলে ডাকে, কেবল তখনই আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। হ্যাঁ, মাইরি বলছি। তবে ওই গ্লোবট্রটার ভদ্রলোকের থেকে আত্মরক্ষার জন্য আর কুকরীর ওপর ভরসা করি না মশাই। ‘শনি মনসা’ দেখাবার নাম করে অস্তরটা ঝেড়ে দেওয়ার পর থেকেই নিজের কাছে একপিস করে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ারের রচনাবলীর খন্ডগুলো রাখছি। বেচাল দেখলেই ছুঁড়ে মারব। তবে আজ এই হাইলি সাস্পিসাস বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে আমার ছদ্মবেশের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মছলিবাবার ছদ্মবেশে যেভাবে ফেলুবাবু মগনলালকে পাকড়াও করে ছিলেন, সেইরকম মহিলাদের ছদ্মবেশ ধারণ করে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ার কোথাও আবার যান নি তো? যদি প্রমাণ হয় যে গেছিলেন, তবে তো এই বিতর্কের অবসান আমিই করে দিলাম। সেটা হল এই যে, ছদ্মবেশে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ারও হয়তো একজন মহিলা ছিলেন। অর্থাৎ মহিলা বেশেও তাঁদের ছবি থাকলে এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে যে মহিলাদের মধ্যেও ওঁরা আছেন।  ভিক্টোরিয়ান আমলে অনেক ইংরেজ মহিলা পুরুষ ছদ্মনামে লিখতেন। যেমন জর্জ এলিয়ট। আর এই নিয়ে আমি এবার একটা থ্রীলার লিখছি। নাম দিয়েছি ‘কবিতার কশাঘাত’ বা ‘ছদ্মবেশে ছদ্মদেশে’।

    ব্যোঃ [ঢং]

    মেদিনী দেবীঃ দেখুন, আমার স্বামীর খুব ইচ্ছে ছিল যে আমি পিয়ানো শিখি। কিন্তু সময় করে উঠতে পারিনি। খুব বিরিয়ানি খেতুম তো। ওভার ওয়েট হয়ে গেছিলুম। তারপর গার্গীর ওখানে টাইপরাইটারে রমাবাবুর আঙুল সঞ্চালন দেখে আমি নিশ্চিত হলুম যে উনি একজন খুব বড় পিয়ানো বাদক। কিন্তু গার্গীকে বলতে যাব বলাতে রমাবাবু বললেন যে গার্গী ওকে ছাড়বে না, ছাড়বেই না। আসলে এই যে মেয়েরা মেয়েদেরকেই ইর্ষা করে, অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায় না, সেইজন্যই মেয়েদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার কেন,  রমাবাবুর মতো একজন শিল্পীও জন্ম নেননি, যিনি একাধারে দুই হাতে ডিক্টেশন নিতে পারেন, টাইপ করেন শব্দের গতিতে, গান করেন, ড্রাইভিং জানেন এবং সঙ্গে কবিতা, উপন্যাসও লেখেন। রমাবাবুকে যখন ইমেল করি তাতে কী বলে যে সম্বোধন করব বুঝেই উঠতে পারি না। শ্রীচরণ কমলেষু না কল্যানীয়, না কল্যানীয়া। অফিসে অবশ্য অনেকে ওকে ‘গোঁফ কামানো রাই’ বলে খ্যেপায় শুনেচি। চকোলেট আর টফি টিফি দেয়। কিন্তু তাতে উনি বিন্দুমাত্র বিরক্ত হন না। ইস, রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার যদি এমন ‘গোঁফ কামানো রাই’ হতেন আর আমি যদি তাদের চকোলেট আর টফি দিতে পারতুম...  

    ব্যোঃ [ঢং]

    কমলাকান্তঃ [ঢুলু ঢুলু চোখে মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাঁড়ালেন] বলি কী যেন বলিতে হইবে? আহা, প্রসন্ন থাকিলে বড় ভালো হইত।  এই বিতর্ক সভায় কিঞ্চিৎ বক্তব্য রাখিবার কথা ভাবিতে গিয়া আমার আবার সেই গরু চুরির সাক্ষ্যের কথা মনে পড়িয়া যায়। এখন কথা হইল, রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার মহিলাদের মধ্যে আসিলেন না কেন? উহারা যেই হওন, প্রথমত দেখিতে হইবে উহারা কাদের? উহারা কি যে বাড়ির ছেলে তাহাদের? যে ইস্কুলে লেখাপড়া করতেগেছিলেন, সেইখানকার? আত্মীয়ের? প্রেমিকার? বউয়ের? ছেলেপেলের? ছাপাখানার নাকি প্রকাশকের? । সুতরাং এই যে গোল হইতেছে তাহা সঠিক নহে। পূর্বকালে মহারাজ শ্যেনজিতকে তাহার প্রশ্নের উত্তরে একজন বলিয়াছিল যে, “গোপস্বামী ও তস্কর, ইহাদের মধ্যে যে ধেনুর দুগ্ধ পান করে, সেই তাহার যথার্থ অধিকারী”। সেইরূপ রবীন্দ্রনাথ ও শেক্সপীয়ার, ওঁরা আসলে হইলেন পাঠকের এবং পাঠিকার।। হ্যাঁ, পাঠক এবং পাঠিকার। আর পাঠকের এবং পাঠিকার হইলে সব সমস্যার সমাধান হইয়া যায়। পাঠকের মধ্যে মহিলা পুরুষ দুইই থাকিতে পারে। আর কে কোন স্থলে আসিল কী আসিল না, তাহা লইয়া কলহ বিবাদের প্রয়োজন থাকিতে পারে না।  [পেছনে ছবির দিকে তাকিয়ে] আমার তো আবার দুজনকেই কেমন যেন মহিলা মহিলা লাগিতেছে...,

    নবঃ হ্যাঁ। আফিম চড়িয়ে এলে পুরুষকে তো নারী বলে মনে হবেই…

    কমলাঃ [এদিক ওদিকে তাকিয়ে] কে ফুট কাটিল? [তারপর কাউকে ঠাহর করতে না পেরে] যাহা হউক, তবে ইহা হলফ করিয়া বলিতে পারি যে মহিলাদের মধ্যে লেখার ভাব ও তেজ আনিতে হইলে তাহাদেরও প্রত্যহ কিন্তু আমার মতো কিঞ্চিৎ আফিম বা গাঁজা সেবন প্র্যাকটিস করিতে হইবে , নচেৎ হইবে না বলিয়া আমি মনে করি। আফিম আর গাঁজার দমে সনেট না বনেট, এই কী যেন?

    কেষ্ট[দর্শক]ঃ  ঠাকুর, [হিক] মানে, স্যার, ইয়ে, মৌতাতের সময় কী হয়েছে?

    কমলাঃ ক্যা রে তুই? মৌতাতের আবার সময় কীর‍্যা ব্যাটা? ‘অজরামরবৎ প্রাজ্ঞঃ বিদ্যাং নেশ্চাঞ্চ চিন্তয়েৎ...’

    ব্যোঃ [ঢং]
         
    লালিমা পাল (পুং)ঃ টুং। আমি সত্যি কিন্তু পুং। আসলে কেষ্টদার ফরমায়েসিতে দার্জিলিং-এর মুনসাইন ভিলায় গিয়ে শুনি সস্ত্রীক ব্রজেনদা, মংকি মিত্তির ডালকুত্তা পাহাড়ে না গিয়ে সেখানে এসে উঠেছে। ব্রজেনদার বউ আবার এখান থেকে কিনে নিয়ে যাবে ত্রিশ ছড়া পাথরের মালা আর ৪ ডজন ঝ্যাঁটা।  নকুড় মামা, মানে যিনি আমাদের সবার সরকারী ও আধা সরকারি মামা, বেশ গাইগুই করছিলেন। বলছিলেন, গরমের থেকে বাঁচবার জন্য কলকেতার সব বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ছাতের ওপর অয়েলক্লথ পেতে তার ওপর বরফ ছড়িয়ে রাখলেই তো হয়, এতো খরচ করে দার্জিলিং-এ আসবার আবার দরকার কী বাপু? কী বিটকেল বুড়ো রে বাবা! তারপর বলবে বালিশের কী দরকার? রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ারের রচনাবলী মাথায় দিয়ে শুলেই তো হয়। তবে ছিল বটে একজন। বাংলার বাঘ। পেলব যখন তার কাছে নিজের নাম পাল্টাতে গেছিল, তখন তিনি ইয়েক ভ্যলুম এনসাইক্লোপিডিয়া ছুঁড়ে মেরেছিলেন। [গলা খ্যাঁকারি দেয়] কোকিলের ডিমের সঙ্গে মকরধ্বজ বাটা না খেয়ে খেয়ে আমার গলাটা জাপানী ঘড়ির মতো হয়ে গেছে। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, যেমন আমরা কেষ্টদার মতো না পেকে, কচিই রয়ে গেলাম; তবে অচিরেই পাকবো। দেখবেন, বেশির ভাগ মহিলারা সবসময় কচি থাকতে চান। কচি কচি। কুচু কুচু। তাই ঠিক মতো না পাকবার ফলে মহিলাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার আসেনি বলে আমি মনে করি। ‘পাকা’ মানে আমি বলতে চাইছি যতটা সম্ভব জ্ঞান আত্তিকরণ করে এবং সমাজকে ভালোভাবে আগাপাশতলা মাপার কৌশল আয়ত্ত করা। আর সেইজন্য সমস্ত মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলছি, তারা যদি উত্তম রূপে পাকতে চান, তাহলে তাদের অদ্যই ‘কচি সংসদের’ সভ্য হতে হবে। পাকা টুং।      

    ব্যোঃ [ঢং]

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ [সঙ্গে জুনিয়ার সুপারভাইজার তালুকদার বাইরে থেকে এসে পাশে দাঁড়ালেন] 1914 এ, হ্যাঁ, ১৯১৪-এ কাইজার যখন আমার বিয়ের সম্বন্ধ করবে বলে চিঠি দিল, তখন আমি তাকে লিখলুম যে বিয়ে আমি এখনই করব না। আমি কাইজারকে আরও লিখলুম যে আগে আপনি প্রথমে ফাইজার বলে একটা কোম্পানি খুলুন। সেখানে সিনিয়ার সুপারভাইজারের পোস্টটা আমায় দিন। তারপর আমি দেখছি..., কারণ মেয়েরা আবার বেকার ছেলেদের বিয়ে করতে চায় না কীনা?  

    তালুকদার; [বাঁড়ুজ্জে বাবুর পায়ে প্রণাম করে] স্যার!!

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ ধুৎ, ধুৎ। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। শেক্সপীয়ার যখন কোন ভাষায় লিখবেন বলে মনস্থির করে উঠতে পারছিলেন না, তখন আমার উর্ধতন ১৮ তম পুর্বপুরুষ ‘অ্যানি হ্যাথাওয়া’-কে দিয়ে বলে পাঠালেন, যে আগেই তুমি কিন্তু লিখতে যেও না। আগে অভিনয় করো। আগে অভিনয়ের দল খোলো। তারপর লেখো।  

    তালুকদার; [বাঁড়ুজ্জে বাবুর পায়ে প্রণাম করে] উফফ, স্যার!!

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ ধুৎ, ধুৎ। এই সরো। সরো তো। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। প্রথমে কমেডি লিখে তেমন কল্কে না পাওয়ায় আমার উর্ধতন ১৮ তম পুর্বপুরুষ আবার শেক্সপীয়ারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ট্র্যাজেডি লিখতে। ব্যাস। লাগ ভেল্কি লাগ। তাহলে কৃতিত্বটা আসলে কার? শেক্সপীয়ারের না আমার উর্ধতন ১৮ তম পুর্বপুরুষের? যে লেখে না যে লিখতে বলে? এই যে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা, তার ‘অমিত রায়’টি কে? কার চরিত্রের ছায়া আছে এখানে? প্রশান্ত আমাকে বলেছিলেন...

    তালুকদার; [বাঁড়ুজ্জে বাবুর পায়ে প্রণাম করে] কার, স্যার? আপনার?

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ ধুৎ, ধুৎ। না। অমিত রায় আসলে হলেন আমার বিলেত ফেরত কুট্টি কাকা...। সে জন ডানের খুব ভক্ত ছিল..., Hold your tongue and let me love ...  

    উত্তমঃ স্যার, বলছিলাম যে আপনার একটা ছবি পাওয়া যাবে?

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ কেন?

    উত্তমঃ Whats app আর ফেসবুকে ছাড়তাম।

    বাঁড়ুজ্জেবাবুঃ [উত্তমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে] আপনার কপালে একটা আলো দেখতে পাচ্ছেন? একটা জ্যোতি? আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি। জানবেন সেখানে খানিকক্ষণ পরে একটা ১০০ পাওয়ারের বালব জ্বলে উঠবে। তবে আমি কায়দাটা শিখিয়ে দিলে বালবটা LED হবে, নয়তো সেটা সাধারণ হলুদ আলোর বাল্ব হয়ে যাবে আর ইলেকট্রিকের বিল বেশি উঠবে।  তাই বলছিলাম যে কে কী লিখল না ভেবে, আমাদের ভাবা উচিৎ কে কী লিখতে বলল। তাই যদি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পরিসংখ্যানটা আবার আমিই খানিকটা প্রশান্তকে শিখিয়েছিলুন কীনা..., হ্যাঁ, তাই যদি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহিলাদের জন্যই, মানে মহিলাদের হৃদয় জয় করবার জন্যই তাঁরা রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপীয়ার হতে পেরেছিলেন, তবে তো মহিলাদেরই জয়।

    উত্তমঃ আপনার ঐ উর্ধতন ১৮ তম পুর্বপুরুষ কী মহিলা ছিলেন?

    ব্যোঃ ঢং।

    [এই কথায় একটু শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু মডারেটর ভানু এসে সামলালেন]

    ভাঃ আরে, থামেন। থামেন। গোল কইরেন না। হগগল্ডি লোকে প্যাঁচাল পারলে বিতর্ক সভা এক্কেরে মাসের বাজার অইয়া যাইবো। [সবাই চুপ করে যায়] আফনারা ইয়ুং পড়েন নাই? কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং? ইয়ুং কইসেন ‘#অ্যানিমা’ আর ‘#অ্যানিমাস’। আর সায়েন্সে আসে #কিউপ্রিক আর #কিউপ্রাস, আবার #ফেরিক আর #ফেরাস, #সালফিউরিক আর #সালফিউরাস। আসলে প্রত্যেক মান্সের মধ্যেই নারী ও পুরুষ দুইই আসেন; ওই ‘অ্যানিমা’ আর ‘অ্যানিমাস’। যেমন এই যে আমি? একই সঙ্গে রমা গুপ্ত, আবার রমাপদ গুপ্ত। ‘পদ’ বাদ দিলেই নারী, আর ‘পদ’ থাকলেই পুরুষ। তয় যদি দেহন যায় দীর্ঘাঙ্গী কুনো পাঞ্জাব প্রদেশের মহিলা, নাম ‘রবিন্দর’ কিন্তু ‘নাথ’ নাই। দেখতে এক্কেরে রবীন্দ্রনাথের মতো, লেখালেখি করে অথবা ইয়োরোপের কোনও ‘পিয়ারী’ নামের মহিলা কিন্তু ‘শেক্স’ নাই, ব্যাস তয় আর চিন্তা কীসের... [দর্শক আসন থেকে পচা ডিম আর ট্যমেটো ছোঁড়া শুরু হয়ে যায়]   অহন আর কিছু কউম না। বাবারে! পচা ডিম মারে কেডা? ঠিক করসি, মিস প্রিয়ংবদার কাসে আর ফেরত যামু না, আমার মেদিনী দেবীই ভালো।

    ব্যোঃ মা, তারা। [ঢং।ঢং।ঢং।]

    [রবীন্দ্রনাথের পর বাঙালির মধ্যে যাঁর নাম করতে হয় তিনি হলেন শ্রদ্ধ্যেয় #সত্যজিৎ_রায়। তিনি একাধারে ইলাস্ট্রেটর, গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন, গল্প, উপন্যাস লিখেছেন, চিত্রনাট্য লিখেছেন আর সিনেমা পরিচালনা করেছেন।  মজা করে মহিলাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ার কেন আসেননি লিখলেও আমরা জানি যে তার কারণ আমাদের ২০০০ বছরের সমাজের মধ্যে পাওয়া যাবে। কেউ কেউ সুযোগ না পেয়ে তাঁর কাঙ্ক্ষিত কাজটা করতে পারেন নি; কেউ কেউ আবার সুযোগ পেয়েও হেলায় হারিয়েছেন। সময় নষ্ট করেছেন। সমাজে মহিলাদের স্বাধীনতার ওপর অনেক অনেক অত্যাচার নেমে এসেছে। পুরুষরা তাদের কখনও ক্ষমতার নামে, আবার কখনও বা ধর্মের নামে তাদের জ্যান্ত হত্যা করেছে। এখনও সেসব চলছে। ইরানে সম্প্রতি ‘হিজাব বিরোধী’ আন্দোলনে অনেক মেয়েকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মহিলারা আজও লড়াই করছেন; ঘরে এবং বাইরে।

    তবুও তার মধ্যেও যাঁদের নাম এখানে লিখতে ইচ্ছে করছে তাঁরা হলেন #অ্যাংনোডিকে, #বেগম রোকেয়া, #সাবিত্রী_বাই_ফুলে, #প্রীতিলতা, #জেন_অস্টিন, #অ্যানা_ফ্রাঙ্ক, #মায়া_আঞ্জেলৌ, #রানী_প্রথম_এলিজাবেথ, #ক্যাথরিন_দ্য_গ্রেট, #সোযর্নার_ট্রুথ, #রোসা_পার্ক্স, #মালালা_ইউসুফজাই, #মারি_ক্যুরি, #অ্যাডা_লাভলেস, #এডিথ_কোয়ান এবং #অ্যামেলিয়া_ইয়ারহার্ট প্রমুখ। আগেই বলেছিলাম যে necessary and sufficient condition. #Steffi_Graph-এর কথা একবার ভাবুন। ‘Open Era’-তে পুরুষদের আগে ২২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম সঙ্গে কেরিয়ার স্ল্যাম জিতেছিলেন। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিল্পকলা, খেলাধুলা, সিনেমা পরিচালনা, গান লেখা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে মহিলারা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন ও করছেন। আশাকরি আগামী ১০০ বছরের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ারের মতো শুধু নয়, তাঁদের থেকেও বড়মাপের সৃষ্টিশীল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মহিলা পৃথিবীতে আসবেন। রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়েই শেষ করি, “নিশিদিন ভরসা রাখিস / ওরে মন হবেই হবে”। মহিলাদের শুধু নিজেদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। ধন্যবাদ]
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন