এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   ইতিহাস

  • মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা 

    দীপ
    আলোচনা | ইতিহাস | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২২ বার পঠিত
  • একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী ও তার সহযোগী রাজাকারদের হাতে অগণিত মানুষ নিহত হন। এঁদের বলিদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে।
     
    এই সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই। দীর্ঘদিন ধরেই তারা সক্রিয়, এখন আরো বেশী। নির্লজ্জের মতো তারা বলে, আটাত্তর বছরে কিছুই ঘটেনি! এদের চেনা একান্ত প্রয়োজন।
     
    মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
    এই ইতিহাস আমরা যেন ভুলে না যাই!
     
    --------------------------------------------------------------------
     
    নাম ছবি দাস, জন্ম ১৯৫৪ সালে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের স্থান সিঙ্ঘপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী যখন ঝালকাঠি আক্রমণ করে তখন ছবি স্বামীপুত্র কন্যা নিয়ে এই গ্রামে পালিয়ে আসেন। দেখতে পান গ্রামে অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
     
    এর তিনদিন পরে পাকবাহিনী ও রাজাকার বাহিনী এই গ্রামে গানবোটে করে আসে। তারা গুলি করতে করতে গ্রামে ঢোকে। সবাই আগান বাগানে পালিয়ে গেল। ছবি বিশ্বাস গোয়াল ঘরে লুকিয়ে রইলেন। পাকবাহিনী তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। রাজাকাররা জিজ্ঞেস করল, "তোর কী জাত?"
     
    আগেই কপালে সিন্দুর দেওয়া বন্ধ করেছিল হিন্দু মহিলারা। হাতের শাঁখা খুলে ফেলেছিল। ছবি বিশ্বাস তাদেরকে উত্তর দিল, জাত খ্রিস্টান। 
    তারা তার হাতের সোনার বালা কেড়ে নিল। তারপর তার দূর সম্পর্কের দেবেন মামাকে বাগান থেকে ধরে আনল। 
     
    ছবি দাস লিখেছেন, "বড় একখান উঠানের পাশে নারকেল গাছের সাথে দাড় করাইয়া আমার চোখের সামনে গুলি করল তারে। একটা কপালে আর একটা বুকে।
    একখান চিৎকার দিয়া চিৎ হইয়া পড়ল মামা।
    আউশ ধানখেতে অনেক পুরুষ মানুষ পলাইয়া ছিল। ধানখেত বেড় দিয়া ধইরা ফেলাইল কতজনরে। গোয়ালের পাশ দিয়া যখন তাগো নিয়া যায়, দেহি তার মধ্যি আমার বড় ননদের দেওর বিমল। বিমল আমারে দেখতি পাইয়া কাইন্দা ফেলাইল। কইল, বৌদি মায়েরে আমার কথা কয়েন।
    সেইদিন মোট তেরো জনকে এইখান থেকে ধইরা গরু যেমন ধাওয়াইয়া নিয়া যায়, সেই রকম পাল ধইরা লইয়া গেল নদীকূলে। সেখানে গুলি ক‌ইরা মারা হ‌ইলো। 
    খানিক দূরে যাইয়া দেহি তরু দত্তর ছেলে গোপাল বছর ষোলো বয়স হইবে, মনে হয় দৌড়াইয়া সরছিল, পিছন থেইক্যা তারে গুলি করছে। পেটের পাশে গুলি লাগছে, নাড়িভুড়ি বাইরাইয়া পড়ছে। ছেলেটা তহনও মরে নাই। 'একটু জল একটু জল' বইলা দাপাদাপি করছে।"
     
    ছবি বিশ্বাসের আত্মীয় ছায়ার সতের-আঠারো বছরের ভাইকে গুলি করে মারা হয়েছে। ছায়া নদীকুলে গিয়ে দেখেন, একটা ট্যাকের পাশে হাত বান্ধা একটার পর একটা মানুষ পড়ে আছে। তখন তারা আর মানুষ নয়, লাশ। এদের মধ্যে তিনজনকে চিনলেন ছায়া। তার স্বামী, ভাশুর আর প্রতিবেশীর ছেলে বিজয়। 
     
    এই সময় নদী দিয়ে একজন মুসলমান চাষী নৌকা করে আউশ ধান কেটে বাড়ি ফিরছিল। ইশারা করে ডাকল ছায়া। নৌকা ভিড়ল তীরে। ছায়া তার পায়ে পড়ে কইল, "তুমি আমার বাপ। আমারে তুমি ছাড়া সাহায্য করার কেউ নাই।"
     
    গ্রামের উদার সরল চাষি, তার নৌকার সব ধান নামিয়ে দিল নদীর চরে। তারপর ধানকাটার কাস্তে দিয়া সব মৃতদেহগুলোর হাতের বাঁধন কেটে দিল। দুইজনে মিলে তিনখানা লাশ টেনে তুলল নৌকায়। আর লাশগুলো পড়ে রইল নদীর ধারে...অন্ধকারে...
     
    ----------------------------------------
    বইয়ের নাম : ভাগফল ৭১, মেয়েদের কথা।
    সংকলন ও সম্পাদনা : ঝর্ণা বসু
    -----------------------------------------
     
    আমার নানা ফজরের নামাজ পড়ে ক্ষেতে পাট কোপাতে গেলেন। তখন ১১টার মতো বাজে। তারপরে পাকিস্তানিরা রাস্তা দিয়ে যাবার সময়ে তাকে দেখে তার কাছে গেল। তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি হিন্দু না মুসলমান। 
     
    তখন তিনি বললেন, আমি মুসলিম। তিনি চার কালেমা পড়ে তাদেরকে শোনালেন। তখনও তারা বিশ্বাস করলো না। তাকে উলঙ্গ হতে বললো। 
    তিনি বললেন, আমি উলঙ্গ হতে পারবো না।
    তখন তাকে গুলি করলো। তিনি পাট ক্ষেতে মারা গেলেন। 
     
    সেখানে একটা গরু ছিলো, সেটাকেও গুলি করলো।
    ------------------------------------------------------------------------
    মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী-ভাষ্য-
    বর্ণনাকারী
    রিজিয়া বেগম
    গ্রাম : বাদলা, পোস্ট : দেহেরগাতি।
    উপজেলা : বাবুগঞ্জ। জেলা : বরিশাল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন