এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন পর্ব ৩৩ (শেষ পর্ব)

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৩২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি: রমিত 




    অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও স্ত্রী-পুত্র-পরিবার

    আমার এ আলেখ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না আমি আমার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও দুই পুত্রের কথা বলি। সেটা ২০০০ সালের শুরু। এই সময় আমার কলকাতার কমপিউটার ব্যবসায়ে মন্দা চলছিল। লন্ডন থেকে কলকাতায় ব্যবসায় দেখাশুনা করা ক্রমশঃ দুরূহ হয়ে উঠছিল। যাদের উপর কলকাতার কাজকর্মের দায়িত্ব ছিল তাদের পরিচালনা পদ্ধতির সঙ্গে, তাদের কাজ, আমার মনোমত হচ্ছিল না। আমদের বাজার ইংল্যান্ড, ক্রেতারা সব ইংল্যান্ড ও ইউরোপে। সেলস ও মার্কেটিং-র সব দায়িত্ব আমার। আমাদের সফটওয়ার তৈরি হত কলকাতায়। গুণমান বজায় রাখা ও নির্দিস্ট সময়ে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া একটা বিরাট সমস্যা ছিল। আমার মনে হয়েছিল আমাদের যা দরকার তার জন্য দুজন অমলেন্দু বিশ্বাস একই সময়ে লন্ডন ও কলকাতায় সশরীরে বিরাজমান থাকবে যা অসম্ভব। নব্বই দশকের শেষদিকে আমাদের ক্রেতারা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ড ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু সেই ব্যবসা আস্তে আস্তে নীচের দিকে যেতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত আমি এই ব্যবসাটা আমার কলকাতার অন্য শরিকের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে ছেড়ে দিলাম। এ সব কথা আমি আগে বলেছি।

    কিছুদিন আমার কোন আয় ছিল না। সংসার চালানোর খরচ ও নতুন ব্যবসায়ে লগ্নি ইত্যাদি কারণে আমার বেশ কিছু ঋণ হয়ে গিয়েছিল। আমি যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমি নিয়মিত কিছু সঞ্চয় করতাম এবং সেটা মুখ্যতঃ স্টক মার্কেটে। আমার বেশ কিছু অর্থ সঞ্চিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে ঋণও ছিল, কিন্তু সর্বদাই ঋণের পরিমাণ সঞ্চয়ের থেকে কম। এমনি চলছিল।

    একসময় খুব অল্পদিনের জন্য অবিমৃষ্যকারিতা আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল। আমার স্বভাবজাত বিশ্লেষণ বুদ্ধি ও যুক্তি আমাকে ত্যাগ করেছিল। স্টক মার্কেট তখন ঊর্ধমুখী। আমি ঋণ নিয়ে কিছু ‘হাই-রিস্ক’ বা উচ্চ-ঝুঁকি-পুর্ণ আমেরিকান স্টক কিনেছিলাম। এই স্টক গুলো বেশ ভালই করছিল। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রাঘাত। সে দুর্যোগ আমার আয়ত্তের বাইরে। পৃথিবীর অর্থনৈতিক বাজারে এমন দুর্যোগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনো ঘটেনি। ২00৮ সালে সারা পৃথিবীতে স্টক মার্কেট ‘ক্রাশ’ করল, সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারের পতন ঘটল। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই দুর্ঘটনার প্রভাব আমার অর্থনৈতিক জগতে এক বিরাট আঘাত হানল। আমার সঞ্চয়ের বেশিরভাগ এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল।

    News: The 2008 financial crisis, also known as the global financial crisis, was a major worldwide economic crisis, centered in the United States, which triggered the Great Recession of late 2007 to mid-2009, the most severe downturn since the Wall Street crash of 1929 and Great Depression.

    ভাবানুবাদ:
    খবর : ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক দুর্যোগ, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দুর্যোগ নামে পরিচিত, ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়, তা বিরাট আর্থিক মন্দার উদ্দীপক হয়ে উঠে। এই মন্দা ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যবর্তী কাল পর্যন্ত ছিল। এই ভয়ঙ্কর নিম্নমুখী অবস্থা ১৯২৯ সালের ওয়াল স্ট্রীট ( এমেরিকান স্টক মার্কেট ) পতন ও ‘মহা মন্দা” -র পর আর কখনো হয় নি।

    এক দিনে আমার হাজার হাজার ডলার উধাও হয়ে গেল।

    মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমি কাউকে কিছু বলিনি, অনুকেও না। দুদিন পরেই অনু অবশ্য বুঝতে পেরেছিল আমার কিছু একটা হয়েছে। অগত্যা অনুকে সব বললাম। শুনে ওর খুব মন খারাপ হয়ে গেল। একটু তিরস্কার করল আমাকে, কেন ধার শোধ না করে টাকা লগ্নী করতে গিয়েছিলাম স্টক মার্কেটে।

    বুবাই তখন তার নিজের সংসার শুরু করেছে। নিজে বাড়ি করে চলে গিয়েছে। এ বাড়িতে শুধু আমি, অনু ও গৌতম। আমাদের আর চার বেডরুমের বড় বাড়ি দরকার নেই। আমরা ছোট বাড়িতে চলে যেতে পারি। আমার জানাশোনা ও বন্ধু বান্ধবরা অনেকেই তাই করেছে। ভাবছিলাম এই বাড়িটা বিক্রি করে, সামগ্রিক ব্যয়ভারকে ‘ডাউনসাইজ’ বা নিম্নগামী করে একটা ছোট বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু অনু সেটা ভাল মনে নেবে কি ?

    অন্য আর একটা পথ আছে। এই বাড়িটা মর্টগেজ দিয়ে কিছু টাকা নেওয়া। কিন্তু এই বয়সে আমাকে কেউ কোন মর্টগেজ দেবে না। অন্য উপায় বাড়িটা বন্ধক রেখে উঁচু সুদের হারে তাদের শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া। কোনটাতেই অনুর মত নেই।

    ইতিমধ্যে অনু বুবাই গৌতমকে সব কিছু বলেছে। একদিন বুবাই গৌতম এসে আমাকে ধরল ; “বাবা, তোমার কি হয়েছে বল।“ আমার বিপর্যয়ের কথা বললাম ওদের। আর আমি কি করার কথা ভাবছি তাও বললাম। গৌতম বলল “কোনমতেই তুমি এ বাড়ি বিক্রি করবে না বা বাড়ি বন্ধক দেবে না। বন্ধক দিলে আর ফেরত পাবে না।“ দুদিন পরে গৌতম এসে বলল, “ তোমার কত টাকা ধার আছে বল। আমি সব শোধ করে দিচ্ছি। “ বুবাইও বলল ও-ও কিছু টাকা দেবে। কিন্তু বুবাই নিজের সংসার চালিয়ে টাকা জমাতে পারে না। ওর কাছে বেশি টাকা নেই। গৌতম আমাদের সঙ্গে থাকে। আর ও বি বি সি-তে ভাল চাকরি করে। ভাল আয়, খরচ কম। গৌতম একদিন নিঃশব্দে আমার ব্যাঙ্কে প্রায় সত্তর হাজার পাউন্ড জমা দিয়ে দিল। ( সঠিক অঙ্কটা মনে নেই )। সে যুগে সত্তর হাজার পাউন্ড অনেক টাকা – কোন কোন মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয়। জানি না গৌতমেরও বোধ হয় শেষ সঞ্চয় । আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। কি উদার মন ! বুবাইও ওর সব জমানো টাকা থেকে কয়েক হাজার পাউন্ড দিয়েছিল।

    প্রয়োজনে টাকার যে মূল্য তা তাৎক্ষণিক অর্থমূল্য দিয়ে মাপা যায় না। এক পয়সাও লক্ষ টাকার তুল্য হতে পারে। সে অমূল্য, কোন অঙ্ক তা ছুঁতে পারে না। তবু একটা অঙ্ক যদি বসাতেই হয় তবে আজ আঠারো-উনিশ বছর পরে এই মুদ্রা স্ফীতির যুগে নাম মাত্র সুদ যোগ করে তা ভারতীয় মুদ্রায় বোধ হয় কয়েক কোটি টাকা হবে।

    গৌতম ওই রকমই। নিজের কথা ভাবেনি। সর্বস্ব নিয়ে বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।

    বুবাই মেধাবী ছাত্র ছিল। স্কুলে সব শিক্ষকের প্রিয়। লেখাপড়া ও খেলাধুলা দুই বিভাগেই সমান পারদর্শী। ইংরেজি সাহিত্য থেকে ফিজিক্স, সাঁতার থেকে রাগবি সব তাতেই উৎকৃষ্ট দক্ষতার পরিচয়। ভাল অভিনয় করতে পারত। ওদের স্কুলে একবার গলসওয়ার্দির ‘স্ট্রাইফ’ নাটক হয়েছিল। সে নাটকে মুখ্য চরিত্রে বুবাই অভিনয় করেছিল। দর্শকরা ওর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। মনে আছে অনু আর আমি থিয়েটার হলে যখন ঢুকেছি তখন আমাদের দেখামাত্র স্কুলের হেডমিস্ট্রেস এগিয়ে এসে আমাদের নিয়ে প্রথম সারিতে বসিয়ে দিয়ে বললেন, “তোমাদের ছেলে স্বাভাবিক অভিনেতা। দেখো ও বড় হয়ে এক বিখ্যাত অভিনেতা হবে।“ আশ্চর্য, হেডমিস্ট্রেসের কথা সত্য হয়েছিল। বুবাই নামকরা অভিনেতা হয় নি তবে উত্তরকালে নাটক ও মিউজিক-কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং সফল হয়েছিল। এই পেশাতে ওর জীবনযাত্রা সচ্ছল।

    বুবাই (অংশুমান)



    বুবাইর কথাবার্তা, চিন্তা ভাবনা, কর্মকাণ্ড আমার জানাশোনা অন্য ছেলেদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তখনি বুঝেছিলাম ও ছকেবাঁধা জীবনে চলবে না। স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনিভারসিটিতে গেল নাটক ও ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে। কিন্তু মাঝপথে ছেড়ে দিল। বলল, “এখানে যা পড়াচ্ছে তা আমার আগেই পড়া হয়ে গিয়েছে। এখানে নতুন কিছু শেখার নেই আর। আমার ভাল লাগছে না। শুধু সময় নষ্ট।“ ওর ইউনিভারসিটির টিউটর আমাদের এক দীর্ঘ চিঠি লিখলেন আক্ষেপ করে অংশুমানের মত এমন প্রতিভাবান ছাত্রকে হারানোর জন্য। আমরা যেন ওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করি। সে চিঠির কিছু অংশ নীচে তুলে দিলাম।

    চিঠির অংশ



    প্রথম দুই প্যারাগ্রাফের অনুবাদ ঃ
    নাট্য বিভাগ
    ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার
    অক্সফোর্ড রোড, ম্যানচেস্টার, এম ১৩ ৯ পি এল

    মাননীয় মিঃ ও মিসেস বিশ্বাস,

    আমি অংশুমানের শিক্ষক হিসেবে লিখছি এবং যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে লিখছি তবুও আমার এ মন্তব্যের বেশিরভাগই আমার বিভাগের সকল সতীর্থ শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হবে।
    আমরা অংশুমানকে হারানোর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত যেহেতু আমরা মনে করি অংশুমান গত কয়েক বছরের মধ্যে এক অতি প্রতিভাবান ছাত্র, এবং এই বছরে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছাত্র। যদি তার ব্যর্থতা অবুদ্ধি ও অযোগ্যতার জন্য হত তবে বোধহয় সকল পক্ষের, আপনারা সহ, মেনে নেওয়া সহজ হত। কিন্তু এ তার বুদ্ধির অভাবের জন্য নয়, কোন অতি জটিল কিছু যা অংশুমানের সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে শিক্ষাসূচী বিষয়ে এবং সামগ্রিকভাবে এই বিভাগের ( শিক্ষা-পদ্ধতির) দিকে।

    সব বুদ্ধিমান ছাত্রের মতই অংশুমানেরো সমস্যা হয়েছিল নিজেকে কোন শিক্ষাসূচী বিষয়ে সম্পূর্ণ ভাবে নিমজ্জিত করার যাতে সে যথেষ্ট আগ্রহী নয় বা যে পদ্ধতির উপর তার আস্থা কম । এই অবস্থায় অন্যান্য ছাত্রদের মত শিক্ষাসূচী বিষয়ে যতটুকু-করা-দরকার সেই টুকু করেই অংশুমান সন্তুষ্ট ছিল না শুধুমাত্র ‘শিক্ষা-পদ্ধতি’কে খুশী রাখার এবং তার পরও তার নিজের ভালোলাগা-বিষয় অন্বেষণ করার। ... ...
    ... ...

    এ চিঠিটা দীর্ঘ। সেটা দিলাম না। শেষের দিকে ওর টিউটর অংশুমানের প্রতিভা (talent), বুদ্ধি (intelligence) ও যোগ্যতার(ability) ভূয়সী প্রশংসা করে অংশুমানকে Drama Department থেকে হারাচ্ছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং আমাদের সমবেদনা জানিয়েছেন।

    কিন্তু বুবাই যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা থেকে ওকে চ্যুত করা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরেরও সাধ্য নেই, আমরা তো কে। ও আমাদের কোন কথা শুনল না। আমাদের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। ওর ভবিষ্যৎ কি ?

    জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে কি করবি তুই?“
    উত্তর “আমি মিউজিক নিয়ে পড়ব।“

    কিন্তু এ-লেভেলে ওর মিউজিক ছিল না। সুতরাং কোন ইউনিভারসিটি ওকে মিউজিকে ডিগ্রী করতে দেবে না। ও একবছর নিজে নিজে মিউজিক নিয়ে পড়াশুনা করল। তারপর মিউজিকে এ-লেভেল করল, এবং রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়া ডারটিংটন কলেজে মিউজিক নিয়ে পড়তে শুরু করল। এখান থেকে খুব ভাল ফল করে ডিগ্রী করল। মিউজিক ও নাটক নিয়ে নিজে ফ্রিলান্স (Freelance) শিল্পী রূপে জীবিকা শুরু করল।

    বুবাইর একুশ জন্মদিনে আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। নিচে দিলাম।

    অংশুমান : একুশ জন্মদিনে।।

    অমৃত তেজ আর দুরন্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
    ওই যুবক ঘুরে বেড়ায়
    শুধু বেঁচে থাকা নিয়ে জীবন রাখা
    তা মানে না ও --

    জীবনের অর্থ খুঁজে নিয়ে
    জীবনকে পেতে হবে
    ভালো মন্দর সীমানা ছাড়িয়ে
    নীতি লজ্জার গণ্ডি ভেঙে
    সংস্কারকে শিকেয় তুলে
    সব অভিজ্ঞতার শরিক হতে চায় সে।

    কর্ম যদি মর্মে লাগে
    প্রাণপণে সে কর্ম করে
    ফল নিয়ে নেই মাথা ব্যথা।

    সৃষ্টির তাগিদেই বহমান
    সফলতার সংজ্ঞা প্রশান্ত সুখ
    স্বীয় মনের নির্ণয়,
    কোনো গোষ্ঠীর মানদণ্ড নয় --
    যশ নয় বিত্ত নয়
    সৃষ্টিতে মাতাল।।

    আকন্ঠ পিপাসা আর অজস্র স্বপ্ন নিয়ে
    ওই যুবক ঘুরে বেড়ায়।।
    ... ... ...

    বুবাই কখনো একটা বৃত্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেনি। ওর বিভিন্ন বিষয়ে আগহ। সর্বদাই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যাস্ত। ম্যানচেস্টার ইউনিভারসিটিতে যখন ছিল তখন ও বিপাসনা পদ্ধতিতে যোগ সাধনা শুরু করেছিল। মাঝে মাঝে বিপাসনার আশ্রমে গিয়ে থাকত সপ্তাহদুয়েক। একবার আমাদের অবাক করে এমন এক কাণ্ড করল যে আমরা ভয়ে মরি। দক্ষিণ লন্ডনের এক হলঘরে একটা কালো বাক্সের ভিতরে অন্ধকারে অনশনে সমাধিস্ত হয়ে ছিল টানা দশ দিন।

    এই কালো বাক্সের মধ্যে বুবাই। বাইরে আমি ও অনু।



    অনু আর আমি প্রতিদিন সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা উৎকণ্ঠিত হয়ে বসে থাকতাম। দেশ বিদেশের সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানে ভরে থাকত ঘর। দশ দিনের শেষে বুবাই যখন বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো সেদিন অনু ওকে দেখে কেঁদে ফেলেছিল --- স্বস্তি ও আনন্দের কান্না। সারা ঘরে স্তিমিত আলো। ডাক্তারের পরামর্শে ওর চোখে কালো চশমা। দশ দিন আলো দেখেনি যে হঠাৎ আলো দেখলে তার চোখের ক্ষতি হতে পারে। হাততালি ও মৃদু মিউজিকের শব্দে বুবাই আস্তে আস্তে বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে শুরু করল। পরিচালকরা তাদের থামিয়ে বুবাইকে একটা ঘরে নিয়ে বসাল। একটু লেবুর রস খেয়ে বুবাই বলল, “আমি প্রস্তুত। আমি ওদের প্রশ্নের উত্তর দেব।“ আমি আবার অবাক হলাম। দশ দিন উপবাসের পর ওর কথা বলার শক্তি আছে এখনো ? বুবাই একটা একটা করে সকলের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকল। পালি ভাষায় অনেক উদ্ধৃতি দিয়ে ও ব্যাখ্যা করতে থাকল কেমন করে দশ দিন একটা বাক্সে অন্ধকারে অনশনে কাটিয়েছে। অনর্গল এক ঘণ্টার বেশি ও বক্তৃতা দিয়েছিল সেদিন।

    কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় এই খবরটা খুব বড় করে অর্ধ-পৃষ্ঠা জুড়ে বেরিয়েছিল। এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার লন্ডনের নিজস্ব সংবাদদাতা শ্রাবণী বসু। এর আগে ও পরে শ্রাবণী অংশুমানের অনেক খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। শ্রাবণীকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

    বুবাই (অংশুমান)



    এমন অনেক কর্মকান্ড বুবাই করেছে যা আমরা ঘটনার পরে জেনেছি। তার মধ্যে দু’একটা উল্লেখযোগ্য। অংশুমান রাশিয়ায় কস্মোড্রোমে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিহীন (Zero Gravity ) আবহাওয়ায় ভেসেছে। প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে Hermit বা ঋষির জীবন যাপন করেছে ; গাছের নীচে শুধু ফলাহার করে কাটিয়েছে দুমাস।

    থিয়েটার, মিউজিক ও শিক্ষকতা সূত্রে বহুদেশ -- চীন, মায়নামার, মঙ্গোলিয়া, কলম্বিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশ ভ্রমণ করেছে।

    অংশুমানের কর্মক্ষেত্র ‘আন্তর্জাতিক আন্তঃবিভাগীয় শিল্পকলা’ ( International Interdisciplinary Arts ) .

    কৌতূহলী পাঠক বুবাইর সঙ্গীত, থিয়েটার ও শিল্প জীবনের বিস্তারিত ধারা দেখতে পাবেন ওর ওয়েব সাইটে -

    ঘটা করে বুবাইর বিবাহ হোল বার্লি হোল্ডেনের সঙ্গে – ইংরেজি প্রথা মতে ইংল্যান্ডে ও হিন্দু মতে সল্ট লেকের বাড়িতে। বিয়ের আগের দিন বুবাই বার্লিকে নিয়ে কলকাতার কাছে ( বোধহয় সোদপুরে ) বিপাসনা আশ্রমে যোগসাধনা করতে গেল। বার্লিকে সকলেরই পচ্ছন্দ। বিয়ের পর বুবাই চলে এলো লন্ডনে কিন্তু বার্লি থেকে গেল কিছুদিন সল্টলেকে – বাঙ্গালী পরিবারের সঙ্গে, বাঙ্গালিয়ানা শিখতে। কয়েক বছর বাদে ওদের সংসারে এলো ফুটফুটে দুটি সন্তান --- অশীন ও উমা, এক ছেলে ও এক মেয়ে।

    বার্লি ভাল ছবি আঁকতে পারত। প্রচুর সময় দিয়েছে বাঙলা ভাষা শিখতে ও বাঙলা সংস্কৃতির শরিক হতে। তবু বার্লি বোধহয় বুবাইর পড়াশুনা শিল্পবোধ ও বুদ্ধিজীবী মননের সমকক্ষ হতে পারে নি। আমার নিজের ধারণা কোথাও যেন একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। যাই হোক ওদের বোঝাপড়ায় ফাটল দেখা দিল। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। বার্লি সাধারণ ভালো মেয়ে। বুবাই সহিষ্ণু কর্তব্যপরায়ণ ভালো ছেলে। আমার মনে হয় ওরা ইচ্ছা করলে দুজনে মিলে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারত। কিন্তু তা হয় নি। ওদের ডিভোর্স হয়ে গেল।

    অশীন উমা তখন শিশু। অশীন উমা বুবাইয়ের প্রাণ। বার্লি ফুলটাইম কাজ করত; সুতরাং বুবাই ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করত বেশি ; ওদের সঙ্গে সময় কাটাত বেশি। ডিভোর্সের পর বার্লি চাইল অশীন উমার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে। এদেশের নিয়ম মত সেটাই স্বাভাবিক। আমার ভয় হল বুবাই যদি অশীন উমাকে হারায় তবে ও বুঝি পাগল হয়ে যাবে বা এমন কিছু করবে যা আমি কল্পনা করতে পারি না। আদালতে বুবাই ওর বক্তব্য রাখল এবং বিচারককে রাজী করাল যে ও একাই মা-বাবার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম এবং ওদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতেও প্রস্তুত। বিচারক ওর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে বুবাইকেই অশীন উমার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিল।

    বুবাইকে ওর ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ওর চরিত্রের দৃঢ়তা ও একাগ্রতার দৃষ্টান্ত আমি আরও একবার দেখলাম। সেই শিশুকাল থেকে অশীন উমার স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত বুবাই কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাবা ও মা-র উভয়ের কর্তব্য একা পালন করেছে ; অর্থ উপার্জন থেকে শুরু করে রান্না করা, ঘর সংসারের সব কাজকর্ম করা, ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, তাদের হোম-ওয়ার্কে সাহায্য করা ইত্যাদি যাবতীয় দায়ভার ও একা হাতে করেছে। বলিহারি যাই।

    বিয়ের পর দিন থেকেই বার্লি আমাকে ‘বাবা’ ও অনুকে ‘মা’ বলে ডেকে এসেছে। ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও বার্লি আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেনি। আমার ও অনুর জন্মদিনে প্রতিবার ফুল ও চকোলেট নিয়ে আসে। অনুর অসুস্থতার সময়ে মাঝে মাঝে এসে অনুর পা জড়িয়ে বসে থাকত, অনুর গায়ে মাথায় ভালবাসার হাত বুলিয়ে দিত। অনুর ক্রিমেশনে আবেগময়ী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছিল বার্লি ।

    গৌতম অন্তর্মুখী ও স্বল্পবাক। গৌতমের কথা বলতে গেলে আমার কলমে ভাষা আসে না। ওকে যত দেখি তত অবাক হয়ে যাই। আশ্চর্য ছেলে।
    অনু কখনো গৌতমকে ছাড়তে চায় নি। গৌতমও মাকে ছাড়েনি। শিশুকালে মা যেমন ছেলে গৌতমকে স্নেহে যত্নে পরিষ্কার পরিছন্ন করে মানুষ করেছিল। অন্তিমকালে মাকে গৌতম তেমনি ভালবেসে যত্নে পরিষ্কার পরিছন্ন করে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দিত। ওর নিষ্ঠা দেখে আমি অবাক হয়ে যেতাম।

    গৌতম (কিংশুক)



    ইউইভার্সিটির পড়া শেষ করে গৌতম বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিল বুবাইর মত, এদেশে যেমন সাবালক ছেলেরা চলে যায়। অনু যেতে দেয় নি, বলেছিলো, “বিয়ে করে তারপর যাস। “ গৌতম বিয়ে করে নি ; সারা জীবন তাই আমাদের কাছেই থেকে গেল। সেই অর্থে ওর নিজস্ব কোন সংসার ছিল না । আমাদের সংসারই ওর সংসার। অনু অসহায় হয়ে কর্ম ক্ষমতা হারাল যখন আর আমি অশীতিপর বৃদ্ধ, তখন গৌতমই সংসারের সব ভার নিলো । অনুরই মত নিপুণ ভাবে সংসার চালিয়েছে। দেখেছি যখন যা দরকার সেটা বলার আগেই এসে গেছে। সব দিকেই ওর লক্ষ, মার যেন কষ্ট না হয়, বাবার যেন অসুবিধা না হয়।

    গৌতম জিওলজিতে ডিগ্রি করেছিল এবং কম্পিউটার নিয়ে পড়াশুনা করেছিলো। কিন্তু পড়া শেষ করে অর্থ অর্জনের জন্য কোন কাজ বা চাকুরী করার প্রবণতা দেখা গেল না। বুবাই গৌতম ছোট বেলায় মার কাছে গান শিখত। সঙ্গীত বা মিউজিক ওদের ধমনীতে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বুবাই থিয়েটার, সঙ্গীত ও শিল্পকে তার পেশা করে নিয়েছিল। গৌতম ছোটবেলায় গিটার বাজাত। কলেজ জীবনে কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করে সেই জ্ঞান সঙ্গীতে আরোপ করল।

    গৌতম (কিংশুক)



    গৌতম ইলেক্ট্রনিক্স মিউজিক সুরু করল এবং সুনাম করল। বিভিন্ন জায়গায়, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আমন্ত্রণ পেতে সুরু করল। ওর মিউজিকের রেকর্ড প্রকাশিত হল। সে সব রেকর্ড এখনো শুনেছি জাপানে বিক্রি হয়। ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের জন্মকালে মিউজিক প্রডাকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের এক ব্যবসায় শুরু করল। আমি মনে মনে শঙ্কিত হয়ে উঠলাম। ওর বয়স বাড়ছে। এ পথে কোন নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নেই। ওর কোন নিয়মিত উপার্জন নেই। আমি ওকে মাঝে মাঝে বলতে লাগলাম একটা ভাল চাকুরি নিতে। আমার বলার জন্য বা ওর নিজের আগ্রহে ও কাজের চেষ্টা সুরু করল।

    কিছুদিন পরেই গৌতম আমাকে একটা সুখবর দিল। ও বিবিসি-তে একটা কাজের অফার পেয়েছে। বিবিসির ব্রডকাস্টিং ডিপার্টমেন্টে এক টেকনিক্যাল পদে। বিবিসি ওর কম্পিউটারের জ্ঞান ও দক্ষতায় খুব খুশী হয়েছিল। অল্প দিনের মধ্যেই ওর দ্রুত পদোন্নতি হয়ে ডিপার্টমেন্টাল হেড হয়ে গেল। অধুনা গৌতম কোন এক শাখার পরিচালক।

    গৌতম সব জানে, সব কাজেই পারদর্শী। ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ’ সব করতে পারে আর যা করে তা অতি দক্ষতার সঙ্গে করে। আমাদের আউটহাউসটা রুগ্ন হয়ে পড়ে যাছে ; গৌতম এগিয়ে এল। সেটা ভেঙ্গে নিজে ডিজাইন করে নতুন করে তৈরি করল। একটা আধুনিক নতুন কাঁচঘর ও দেয়াল-ছাদ ঢাকা বিনোদনের জায়গা তৈরি হল। পঙ্গু মা এই বাথরুম আর ব্যবহার করতে পারে না ; গৌতম বাথরুম ভেঙ্গে নিজের পরিকল্পনা মত মায়ের উপযোগী বাথরুম করে দিল। মা আর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পরে না ; গৌতম মায়ের জন্য চেয়ারলিফট বসিয়ে দিল। বাবার শোবার ঘরের ড্যাম্প দেখা দিয়েছে, পুরানো ওয়ালপেপার খুলে খুলে আসছে। বাবা মা দেশে গিয়েছে ; এটাই সুযোগ --- গৌতম কাজে লেগে গেল। অনেক দিন দেশে কাটিয়ে লন্ডনে ফিরে এলাম। শোবার ঘরে ঢুকে অভিভূত। আমার চোখে আনন্দাশ্রু। পুরানো আসবাবপত্র নেই আর। নতুন আসবাবপত্র, দেওয়ালে নতুন ওয়ালপেপার, মেঝেয় নতুন কার্পেট, জানালায় ভেলভেটের পর্দা। নতুন সাজে আমাদের বেডরুম। আমরা খুব খুশী, গৌতমের চোখে তৃপ্তির হাসি। এই গৌতম। অনু চলে গেছে, আমি এখন একা। গৌতম আমার অন্ধের যষ্টি --- ওকে ছাড়া আর চলে না।

    তবু গৌতম একেবারে একা নয়। ওর এক জন সঙ্গী আছে – ওর গার্লফ্রেন্ড। নাম ভেরা। চেকোস্লোভাকিয়ার মেয়ে। ব্রডকাস্টিং টেকনোলজি বিশারদ, বিবিসিতেই ব্রডকাস্টিং বিভাগে কাজ করে। সেও আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির প্রায় সব অনুষ্ঠানে আসে। অনু ও আমার জন্মদিনে কার্ড ও উপহার নিয়ে আসে। বিপদে আপদে পাশে এসে দাঁড়ায়।

    ... ... ...

    ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ সালে দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী থাকার পর অনু দেহত্যাগ করল। এক অসামান্যা নারীর জীবনাসান হল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনুর অজস্র বন্ধু ও গুণগ্রাহী মানুষেরা আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়ে ওকে বিদায় দিল। অনুর একটা একান্ত নিজস্ব রত্ন ভাণ্ডার ছিল যা আমি কখনো দেখিনি। সেটা একটা বাক্স, কিন্তু সেখানে সোনা বা মুক্ত মাণিক্য নেই, আছে বহু চিঠি পত্র, ছবি আর কিছু খাতা পত্র ও নোটবই। অনুর মৃত্যুর পর আমি ও বুবাই গৌতম সেই বাক্স থেকে একটা নোটবই আবিষ্কার করি। তাতে লেখা আছে ওর পড়া বই থেকে মনিষীদের উক্তি। সেই নোটবইয়ের প্রথম পাতায় লেখা আছে,

    'আমায় মনুষ্যত্ব দাও
    আমায় মানুষ করো।'

    শ্রী অরুন্ধতী

    অনু সামগ্রিক অর্থে সত্যই একজন ‘মানুষ’ ছিল। ‘মানুষ’ হওয়ার জন্য এমন আকুলতা, এমন ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা যে না দেখেছে সে কল্পনা করতে পারবে না। মনুষ্যত্বের এমন পূর্ণ আধার আমি আমার জীবনে খুব কম দেখেছি।



    অরুন্ধতী (অনু)



    আমি অতি ভাগ্যবান। অনুর মত নারীকে আমি পেয়েছি আমার জীবনে, আমার দুই অসাধারণ পুত্রের জননী রূপে। বুবাই (অংশুমান) গৌতম (কিংশুক ) বুদ্ধিমান, সৎ, কর্তব্যপরায়ণ ও পরোপকারী। দুজনেই নিজ নিজ পেশায় কৃতি ও সফল। আমার মত ভাগ্যবান এ জগতে আর কে আছে?

    আমার অতি স্নেহের ও ভালবাসার দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র আমার পৌত্র ও পৌত্রী, অশীন ও উমা, যাদের জন্য এ লেখা তারাই আমার ধারাকে বহন করে নিয়ে যাবে।

    অশীন



    উমা



    এত যুগ পেরিয়ে এসে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে চেনে না। কারো কাছে আমার সমগ্র "আমি"কে কখনো তুলে ধরতে পারিনি । বিভিন্ন সময়ে আমার বিভিন্ন সত্তার টুকরো টুকরো অংশের শরিক হয়েছে অনেকে; কিন্তু কেউ ‘সার্বিক আমাকে’ দেখেনি। এই ব্যস্ত পৃথিবীতে আমার কথা শোনার মত সময় নেই কারো। তবু কেউ যদি এ লেখা পড়ে তবে হয়ত কিছুটা জানবে আমাকে এবং তখনই সার্থক হবে এ পরিশ্রম, আমার এ প্রচেষ্টা।

    আমার মনের গহন গভীরে যে অমৃত ভান্ডার আছে তার নাগাল পেল না কেউ। আমার সম্পূর্ণ "আমি"কে জানল না কেউ।

    তুমি মোর পাও নাই, পাও নাই পরিচয়।

    খরস্রোতা পাহাড়ী নদী এতকাল ধরে অবিশ্রান্তভাবে বয়ে চলেছে। পাহাড়ের পথ বেয়ে, অন্ধকার গুহার মধ্য দিয়ে, পাথরে আছাড় খেতে খেতে, দুর্গম পথ ধরে অসংখ্য জনপদ পেরিয়ে, গভীর জঙ্গল ভেদ করে সমতলে এসে শান্ত হয়েছে। এখন আর সে খরস্রোতা নয়, সে নিরীহ, শান্ত। নেই আর সেই দুরন্ত গতি ; গতি তার এখন ধীর মন্থর। সে এখনো বয়ে চলেছে একদিন সাগরে মিলবে বলে। সে সব পেয়েছির দেশে এসে গেছে। আর কিছু চাওয়ার নেই, আর কিছু পাওয়ার নেই। এখন শান্তি, অপার শান্তি।

    সমাপ্ত

    --------- ০ ---------

    লেখকের কথা

    এক গৃহহীন পিতৃহীন তরুণ, যার বর্তমান সমস্যাসমাকীর্ণ, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তবু সে কবিতা লেখে, স্বপ্ন দেখে; দারিদ্র্য তাকে ম্রিয়মাণ করেনি, অভাব তাকে নত করেনি, সে অহরহ নিজেকে নিয়ে ভাবে, আত্মবিশ্লেষণ করে, জীবনকে সে আলিঙ্গন করে জীবন যা দিয়েছে - যেমন দিয়েছে সব নিয়ে, মেনেছে 'ভাল মন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লহ সহজে' --- এ আলেখ্য তেমন এক মানুষের জীবনী। কাঙ্ক্ষিত জীবনের অন্বেষণে সে ঘুরে বেড়িয়েছে, সে পরবাসী হয়েছে কিন্তু শিকড়কে শক্ত হাতে ধরে রেখেছে।

    অষ্টআশি বছরের এই দীর্ঘ জীবনে আমি বহু দেশ ঘুরেছি, বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছি, বহু অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছি। এই কাহিনী সেই জীবনের বিস্তৃত ‘ক্যানভাসে’ যে চিত্র ফুটে উঠেছে ‘সেই দিন সেই মন’ তার প্রতিফলন। আমার উত্তরসূরীদের জন্য আমার দৃষ্টিতে দেখা সেই ছবি এঁকে রেখে গেলাম।

    জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভ্রাতৃ প্রতিম দুজন মানুষ আমার জীবনতৃষ্ণা উজ্জীবিত করে রেখেছে। আমার প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনে এদের সাহচর্য আমার মননে নতুন প্রদীপ জ্বালিয়েছে। প্রথম জন হীরেন সিংহরায় আর দ্বিতীয় জন সৌম্যেন অধিকারী।

    হীরেনের সঙ্গে আমার আলাপ ভাস্করের বাড়িতে সুনীল গাঙ্গুলীর সঙ্গে আড্ডাকালে; প্রায় তিরিশ কি চল্লিশ বছর আগে। তখন নিয়মত দেখা হত, আমাদের বাড়িতে বা ভাস্করের বাড়িতে বা অন্যত্র। তারপর ভাস্কর গত হওয়ার পর হীরেন হারিয়ে গেল। বহুকাল দেখা হয় নি। কয়েকমাস আগে হঠাৎ আবার দেখা। সেটাও ভাস্কর-সূত্রে --- ভাস্কর-জায়া ভিক্টোরিয়ার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে। "অমলেন্দুদা, কেমন আছেন? কি করছেন আজকাল? এখনো লিখছেন কি?" কথা হল না বেশি। আমাদের দুজনেরই তাড়া ছিল। টেলিফোন নাম্বার বিনিময় করে বিদায় নিলাম।

    সন্ধ্যাবেলা হীরেনের টেলিফোন এলো। তারপর ইতিহাস। হীরেনের আগ্রহে ও উৎসাহে আমার বহুকালের বাক্সবন্দী সাহিত্য ভাণ্ডার পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ এল। প্রথমে গল্প, কবিতা তারপর শুরু হোল ‘সেই দিন সেই মন’-র ধারাবাহিক প্রকাশ। হীরেনকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ।

    অন্যজন সৌম্যেন অধিকারী। সৌম্যেনের সঙ্গে প্রথম আলাপ মাত্র কয়েক বছর আগে ভারতীয় বিদ্যাভবনে এক সঙ্গীতের আসরে। তারপর টেগোর সেন্টারে আমন্ত্রণ করি গাইবার জন্য। সেদিন টেগোর সেন্টারে যে আসর শুরু হয়েছিল সে আসর শেষ হোল প্রায় মধ্য রাত্রে আমাদের হ্যারোর বাড়িতে। প্রথম আলাপের পর প্রতি বছর একাধিক বার সৌম্যেন আমাদের বাড়িতে এসেছে। বন্ধুত্ব গভীর হল। সৌমেনের আগ্রহে ও উদ্যোগে আমার লেখা গান রেকর্ড করে ইউটিউবে প্রকাশিত হল এবং পরে আমার কবিতা এবং অরুন্ধতীর গান।

    হীরেন ও সৌম্যেন আমাকে অনেক তথ্য দিয়েছে এবং সেগুলোর সত্যতা যাচাই করে আমাকে নিশ্চিন্ত করেছে ও লিখতে উৎসাহ দিয়েছে।

    সৌম্যেনকে আমার অজস্র ধন্যবাদ।

    ... ...

    এই লেখার শুরুতে এবং চলাকালীন আমি চারজন প্রিয়জনের অবদান স্বীকার করতে চাই। এরা চারজন আমার পুত্র অংশুমান (বুবাই), কিংশুক (গৌতম) এবং অশীন (পৌত্র) ও উমা (পৌত্রী) । এরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করেছে ও উৎসাহ দিয়েছে। এরা আমার বৃহৎ ফোটো, ভিডিও, ক্যাসেট টেপ লাইব্রেরী থেকে ছবি বেছে, ‘স্ক্যান’ করে, টেপ ‘ডিজিটাইসড’ করে সময় মত আমাকে সরবরাহ করেছে। এদের সাহায্য না পেলে আমার এ-লেখা সম্পূর্ণ হত না। বুবাই-র সঙ্গে আমি নিয়মিত আলোচনা করেছি কোন তথ্য বা কোন খুঁটিনাটি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করব, তা নিয়ে। কম্পিউটার সংক্রান্ত ‘টেকনিকাল’ সমস্যায় পড়েছি অনেকবার। সেই সব সময়ে গৌতম সাহায্য না করলে আমি বিপদে পড়তাম। বুবাই-গৌতম-অশীন-উমা বিভিন্ন সময়ে আমার জীবনের টুকরো টুকরো গল্প শুনে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে সেগুলো লিপিবদ্ধ করার। এদের সকলকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। এদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

    সর্ব প্রথমে আমি সুদীপ্ত কবিরাজকে জানাই আমার অজস্র ধন্যবাদ। আমার অনুরোধে সুদীপ্ত ‘সেই দিন সেই মন’-র বিশ্লেষকের দৃষ্টিকোন দিয়ে একটি মননশীল ভূমিকা লিখে দিয়েছেন এবং আমাকে মূল্যবান পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে সাহায্য করেছেন। সুদীপ্ত কবিরাজের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার আত্মজীবনী বিষয়ে আমি বহুদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীলাঞ্জনা কবিরাজের সঙ্গে আলোচনা করেছি। নীলাঞ্জনা আমাকে সর্বদাই উৎসাহ দিয়েছে এবং আমার মনোবল অটুট রাখতে সহায়তা করেছে। নীলাঞ্জনাকে অনেক ধন্যবাদ।

    আমার একমাত্র বোন, খুকু(তৃপ্তি), আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সব গল্প, সব ঘটনা জানে। খুকু সকলের খবর রাখে, সকলের সঙ্গে আজও যোগাযোগ বজায় রেখেছে। খুকু আমার বৃহত্তর পরিবারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’। খুকুর কাছে আমি অনেক না-জানা গল্প শুনেছি। আমার সব তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করে নিয়েছি খুকুর কাছ থেকে। খুকুকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

    আমার সেজ ভাই হাঁদি (নির্মলেন্দু ) আমার অনেক সমস্যায় পাশে থেকেছে। আমার বাবা-মার দুর্দিনে, আমার অবর্তমানে সংসারের দুর্দশা দেখেছে। সেসব অন্ধকার দিনের দুর্বিসহ জীবনের অনেক কথা আমার অজানা ছিল। হাঁদি সেই দুঃসহ দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে পুংক্ষানুপুক্ষ বিবরণ দিয়েছে। হাঁদির কাছে সেসব কাহিনী না শুনলে আমার এ-লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। হাঁদিকে আমার অসংখ্য দন্যবাদ।

    আমার ছাত্র জীবনের কফি হাউস যুগের বন্ধু, দীপ্তিময় রায় (দীপু), আমার অনেক তথ্যের ভুল সংশোধন করে দিয়ে আমাকে ঋণী করেছে। এবং ওয়েব সাইটে বিভিন্ন সময়ে মূল্যবান মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। দীপুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    জগত(বেনু) ব্যানার্জী, আমার পুরানো বন্ধু, অধুনা আমেরিকাবাসী, আমার আত্মজীবনীর নিয়মিত পাঠক, সময়ে সময়ে প্রশংসাসূচক মতামত জানিয়ে আমাকে উদ্দীপিত করেছে। বেনুকে ধন্যবাদ।

    ‘সেই দিন সেই মন’ গুরুচণ্ডালীর ওয়েব সাইটে ধারাবাহিক রূপে প্রকাশিত হতে শুরু হয়। এই দীর্ঘ দশ মাসে আমি বহু ইতিবাচক মতামত পেয়েছি পাঠক পাঠিকার কাছ থেকে। শংকর প্রসাদ রায় (মানু), আমার ছোটমামার পুত্র, ‘ডানলপ’ কোম্পানির উল্লেখে প্রশ্ন না করলে, ভুল সংশোধন করে ‘জেসপ’ নাম পরিবর্তন করার সুযোগ হত না। শংকরকে ধন্যবাদ। আর ধন্যবাদ তার সহৃদয় প্রশংসাসূচক মন্তব্যের জন্য।

    তপতী (তপতী বিশ্বাস, সিঙ্গাপুর) আমার সকল পাঠক পাঠিকার মধ্যে অন্যতম। তপতী ‘সেই দিন সেই মন’-র সব পর্বেই অনুপ্রাণিত মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করেছে এবং আমার কিছু ভুলে-যাওয়া স্মৃতি তুলে ধরেছে। তপতীকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ।

    রীতা রায়কে ধন্যবাদ José Paz Rodríguez- র নামের বাংলা বানান সংশোধন করে দেওয়ার জন্য। অনামিতা(আনা)কে ধন্যবাদ অনেক ঘটনা ও তথ্য বিষয়ে আমাকে অবহিত করার জন্য। রঞ্জন রায়কে তাঁর রসগ্রাহী মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই রাণা(সিঙ্গাপুর), শ্রী মল্লার, শিবাংশু, নরেশ জানা, আসরাফুল ইসলাম, সৌমিত্র, Syandi, সঞ্জয় দাস(রাণা), বুলু, সৌমি(মলি), বিশাখা দেব(মিঠু), ও শুক্লাকে তাদের স্বতঃস্ফুর্ত মনোগ্রাহী মন্তব্যের জন্য।

    গুরুচণ্ডালীর সম্পাদকমণ্ডলী বিশেষ করে রমিত চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই আমাকে শক্তি-শরত-ভাস্কর বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে উৎসাহিত করার জন্য।
    ধন্যবাদ জানাই গুরুচণ্ডালীর সকল পাঠকবৃন্দকে।

    ... সর্বোপরি, যাকে মনে করে এ-লেখা শুরু ও শেষ সে আমার পরম প্রিয় চিরসঙ্গী, সে অরুন্ধতী। তার কাছে আমি চিরঋণী, চিরকৃতজ্ঞ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন