এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - পর্ব ২৪

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৩ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত 



    গোলাপী কাফে 

    কবিতার নেশা কোনোদিন ছাড়বে না। এটা ম্যালেরিয়া জ্বরের মত। একবার ধরলে ছাড়ে না আর। রক্তে বীজাণু থেকেই যায়। মাঝে মাঝে হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে আর তখনি ঝর্ণা কলমের কালো জলে কাগজ ভিজে যায়। কয়েকটা পঙক্তি না বেরোনো পর্যন্ত সে জ্বর ছাড়ে না। পঞ্চাশ-ষাট দশকে প্রথম যৌবনে আমরা কয়েকজন সেই জ্বরে ভুগেছিলাম। সেই নেশায় মত্ত হয়ে ছিলাম- ভবিষ্যতে জীবিকার জন্য কি করব তার জন্য বিশেষ কিছু চিন্তা ছিল না। তবে এ কথা জানতাম কবিতা লিখে ভাত-কাপড়ের সুরাহা হবে না। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেছিলাম। কলেজ জীবনের প্রথম ধাপের পড়াশুনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাস্তবটা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিতে শুরু করল। পত্রিকা বন্ধ হল। কিন্তু কবিতার ভূতটা ঘাড় থেকে নামলো না আর। 

    ষাটের দশকের মাঝামাঝি দেশ ছেড়ে ইংল্যান্ডে এলাম। নতুন দেশ, নতুন জীবন। ইউনিভারসিটি জীবন, কর্মজীবন, নতুন নতুন মানুষ, নতুন আবহাওয়া, নতুন সমাজ ব্যবস্থা, নতুন সংস্কৃতি। চোখ খুলে, হৃদয় মেলে, প্রাণভরে আস্বাদন করছি। সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করছি। এদেশের অনেককিছুই ভাল লাগছে- আবার অনেক কিছুই নয়। যা যা আমার ভাল লেগেছিল তার মধ্যে প্রথম সারির প্রথমে যেটা আছে সেটা হচ্ছে এখানকার লাইব্রেরি। যে বই পড়তে চাই সে বই দেশে থাকতে কখনো পাইনি। আমার নাগালের মধ্যে কোনো লাইব্রেরি ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না।

    লন্ডন শহর কয়েকটি কাউন্সিল বা বরো নিয়ে তৈরি। সব বরোতেই (কাউন্সিল) একটা প্রধান লাইব্রেরি আছে আর আছে পাড়ায় পাড়ায় ছোট লাইব্রেরি। আমরা তখন যে কাউন্সিলে থাকতাম তার নাম হ্যারো। এর প্রধান লাইব্রেরিটা বেশ বড় সড়। এটা মূলতঃ তথ্যসন্ধান ও তথ্যনির্দেশক পাঠাগার (Reference Library); ওখানে তথ্য সংগ্রহ করা বা বসে পড়ার জন্য। যদিও বই ধার করে বাড়িতেও আনা যেত। এখানে একটা বিশাল পড়ার ঘর আছে যেখানে প্রায় সত্তর-আশি জন মানুষ বসে পড়াশুনা করতে পারে। প্রায় নিঃশব্দ নিরিবিলি পরিবেশ। পড়ুয়ারা কেউ ফিসফিস করেও কথা বলে না পাছে পাশের পাঠকের একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটে। তাক থেকে মনোমত বই বা পাঠ্য কিছু বেছে নিয়ে বসলে দু-দন্ড কেটে যায় শান্তিতে। পড়া শেষে বইটা যথাস্থানে রেখে যাওয়াটাই রীতি।

    সব পাড়াতেই একটা করে ছোট লাইব্রেরি আছে। বই, খবরের কাগজ, বিভিন্ন বিষয়ের অজস্র সাময়িক পত্রিকা, পড়ার জায়গা ছাড়াও এই লাইব্রেরিগুলোতে বহুরকমের আলোচনার আসর বা আড্ডা হয়। এটা ছিল স্থানীয় মানুষের অক্সিজেন বা দৈনন্দিনের তাড়না ভুলে অন্য এক পান্থশালায় কিছুক্ষণের জন্য আশ্রয় নেওয়া।

    সে সময় প্রায়ই শনি রবিবার পুত্রদের নিয়ে লাইব্রেরিতে যেতাম। ওরা ছোটদের কোনে (চিল্ড্রেন্স কর্ণার) বই বা কমিক বই নিয়ে বসে যেত। এ দেশে আমার প্রথম যুগে এই লাইব্রেরিগুলো থেকে সাহায্য পেয়েছি অনেক। কলেজে পড়ছিলাম যখন তখন পাঠ্যপুস্তক কেনার সামর্থ্য ছিল না। কলেজ লাইব্রেরি থেকে বই পাওয়া যেত- কিন্তু চাইবার আগেই অন্য ছাত্ররা সেগুলো ধার নিয়ে যেত। তখন আমার পাড়ার লাইব্রেরিই একমাত্র ভরসা ছিল। কী কী বই চাই সেগুলোর নাম লিখে লাইব্রেরিয়ানকে দিলে তিনি অন্য লাইব্রেরি থেকে সে বইটা আনিয়ে দিতেন। অথবা সে বইটা নতুন কিনে লাইব্রেরির গ্রন্থতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিতেন। বইটা এসে গেলে একটা পোস্টকার্ড দিয়ে জানিয়ে দিতেন- বইটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে- আমি যেন সময় করে নিয়ে যাই। 

    ইদানীং লোকাল অথোরিটি বা কাউন্সিলগুলোর টাকাকড়ির টানাটানি চলছে। লাইব্রেরি পরিষেবার বরাদ্দ অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট লাইব্রেরির সংখ্যা কমেছে। বেশ কিছুকাল আর নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহার করি না; তাই জানি না লাইব্রেরিতে সেই আগের মতো সুযোগ সুবিধা আছে কিনা। তবে আজকাল ডিজিটাল যুগে ছাপার অক্ষরে বই পড়া ছাড়াও অন্য মাধ্যমেও বইয়ের স্বাদ পাওয়া যায়। আমাজন, গুগল, মাইক্রোসফ্টের কল্যাণে বা কিন্ডল (Kindle) প্রভৃতির মাধ্যমে হাজার গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি বন্দী করে রাখা যায়; আর তা সুবিধামত ট্রেনে বাসে যেতে যেতে বা অল্প অবসরেও পড়া যায়। লাইব্রেরির চেহারাও আর আগের মতো নেই। অনেক আধুনিক হয়েছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। পাড়ার লাইব্রেরিতেও এখন অনেক কম্পিউটার স্ক্রিন- পড়ুয়ারা বই পড়া ছাড়াও পুরদমে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে।

    আগের লাইব্রেরির কথায় ফিরে যাই। লাইব্রেরিগুলো শুধু বই ধার দেওয়া ও পড়ার ব্যবস্থাই করত না। প্রধান গ্রন্থগারিক সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চক্রের ব্যবস্থাও করতেন। এবং সাধারণ পাঠকদের এই ধরণের আসরের আয়োজন ও পরিচালনার জন্য উৎসাহ দিতেন। এইরকম দু’একটা আসরে আমি মাঝে মাঝে গিয়ে বসতাম। তবে দুটো আসর আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। একটা হল গল্প উপন্যাস পড়া এবং আলোচনার (রিডিং সার্কল), অন্যটি কবিতার আসর (পোয়েটস কর্ণার)। লাইব্রেরির একটা অংশ খালি করে দেওয়া হত এই আসরের জন্য। সকলে গোল হয়ে বসতো- দশ পনেরো জনের বেশি হতো না- এদের মধ্যেই একজন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে পরিচালনার দায়িত্ব নিত। রিডিং সার্কলে যারা নিয়মিত আসত তাদের জানিয়ে দেওয়া হত পরের আসরে কি আলোচনা হবে। সাধারণত সেটা হত কোন এক লেখক বা উপন্যাস-প্রবন্ধ বা ছোট গল্প। 

    পোয়েটস কর্ণারটা একটু অন্যরকমের। এখানেও কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনা হত। তবে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হত অংশগ্রহণকারী কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের উপর। এরকম আসরে আমি প্রায়ই যেতাম এবং মাঝে মাঝে অংশ নিতাম। নিজের কবিতা পড়তাম। একবার এমনই এক আসরে গিয়ে একটা নতুন কিছু পেলাম যা আমাকে চমক দিয়েছিল। এখানে কয়েকজন তরুণ তরুণী কবির সঙ্গে আলাপ হল। তাদের এক অভিনব কর্মকান্ড দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।

    এদের নাম (মোবাইল পোয়েটস) ‘চলমান কবিচক্র’। এরা লন্ডনের হ্যামস্টেড অঞ্চলের এক রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যুক্ত। এ রেস্টুরেন্টটা একটু আলাদা; এখানে যাঁরা আসেন তাঁরাও, বোধ করি, একটু আলাদা ধরণের মানুষ। চলমান কবিচক্র এই রেস্টুরেন্টে কফি বা ভোজ্যবস্তুর সঙ্গে কবিতা পরিবেশন করে। রেস্টুরেন্টের নাম ‘কাফে রুজ’।

    “জরুরী চব্বিশ ঘণ্টার এই চলমান কবিচক্র আপনাকে নিয়ে যাবে এক আবেগময় ভ্রমণে, জাদুকরী আসরে, মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতায়, আশ্চর্য ইন্দ্রজালে ঘেরা কল্পনার রাজ্যে; আপনাকে যুগপৎ স্তম্ভিত ও অনুপ্রাণিত করবে।“ 

    চলমান কবিচক্র বলছেন, “কবিরা পরিবেশন তালিকা থেকে আপনার পছন্দমত কবিতা আপনার খাবার টেবিলে এসে শুধু আপনার জন্যই কবিতা পড়ে শোনাবেন। যখন খাবারের নির্দেশ দেবেন তখন বলুন কি কি কবিতা শুনবেন, কবিরা সময়মত আপনার টেবিলে চলে আসবেন। এই বিশেষ পরিষেবার জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে না। আবার আসুন, বারবার আসুন! আমরা এখানে প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসি। তাছাড়াও ভুলে যাবেন না যে আপনার পছন্দমত কবির কবিতা পড়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করতে পারেন এবং আমাদের কাজের কথা জানতে পারেন। জানতে পারেন কেমন করে আপনিও চলমান কবিচক্রে যোগ দিতে পারেন। এই নাম্বারে ......... আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”

    এদের তালিকায় অনেক কবি ও কবিতার নাম আছে। কয়েকজন কবির নাম দেওয়া যাক--- শেক্সপীয়র, ইয়েটস, রিলকে, রবার্ট ফ্রস্ট, শেলী, ফিলিপ লারকিন এবং আরো অনেকে। রেস্টুরেন্টটা খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। 

    একজন উপভোক্তার মন্তব্য উল্লেখ করছি ... “আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন মোবাইল কবি এন্ড্রু বিন্ডন। কাব্য, পদ্য ও মোবাইল ফোন ... আমরা হাসলাম, আমরা কাঁদলাম, তারপর আরো শ্যাম্পেনের গ্লাস ভরলাম।”

     


    কাফে রুজের কবিতা মেনু 



    কতদিন স্বপ্ন দেখেছি, আমি কলেজ স্ট্রীটে একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছি। এক তরুণ কবি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ করেছি …। তারা এসে ওই ‘চলমান কবিচক্রে’র মত কবিতা পাঠ করে শোনায়। আমি তাদের সামান্য কিছু সাম্মানিক দিই। 

    বহুকাল আর হ্যামস্টেড অঞ্চলে যাইনি। জানি না এখনো কাফে রুজ আছে কিনা। তবু এখনো স্বপ্ন দেখি, আমার স্বপ্ন নিয়ে অন্য এক বঙ্গ সন্তান কলেজস্ট্রীটে এইরকম এক রেস্টুরেন্ট করেছে। সেখানে তরুণ কবিরা এসে খাবার টেবিলে কবিতা পড়ে শোনাচ্ছে।

    স্টেলা নোয়া 

    আমার প্রথম প্রেম কবিতা -- পড়া ও শোনা এবং অল্পস্বল্প লেখাও বটে। মূলত কবিতা আমাকে যেভাবে নাড়া দেয়, যেভাবে সাড়া জাগায় অন্য কোন শিল্পসাহিত্য আমাকে সেভাবে অমৃত লোকে পৌঁছে দেয় না। জীবিকা অর্জনের দায়ে কর্মজীবনের চাপ-উত্তরণের মধ্যেও সেই অন্বেষণ আমার দ্বিতীয় জীবনের অন্য স্রোতস্বিনীকে বহমান রেখেছে। তাই বুঝি সেই অদম্য ইচ্ছা আমার সমান্তরাল জীবন টেনে নিয়ে গেছে এ দেশের তৎকালীন বঙ্গ সংস্কৃতি ও বঙ্গ সাহিত্য মহলে। সর্বদা কবিতা চর্চা, সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্য কর্মী সম্প্রদায় ছুঁয়ে থেকেছি। এই নেশাই নিরন্তর আমাকে মৌমাছির মতো ফুলরেণুর সন্ধানে ছুটিয়ে বেড়িয়েছে। 

    যারা আমার পৃথিবী ঘিরে আছে তারা আমার নিকট আত্মীয়, বৃহত্তর আত্মীয়গোষ্ঠী, বন্ধুবর্গ, আমার সমান্তরাল জীবনের অ-সাধারণ মানুষ। আমার মস্তিষ্ক ঘিরে আছে সেইসব চরিত্রগুলো যাদের আমি কখনো দেখিনি, যারা আমার পরম আত্মীয, যারা আমার চিন্তাকে আমার মানবিকতাকে তিল তিল করে রূপ দিয়েছে। যাদের শুধু দেখেছি কালজয়ী সাহিত্যের অসংখ্য চরিত্রে। আর আছে কিছু চিন্তা নায়ক কিছু মনীষী। এরা সবাই আমাকে গড়ে তুলেছে। সেই সব রক্ত মাংসের মানুষ যাদের আমি সংস্পর্শে এসেছি, সেইসব কল্পনার মানুষ যাদের সঙ্গে আমার পরিচয় শুধু ছাপার অক্ষরে বা রুপোলি পর্দায়, সেই সব মনীষী যাঁরা পৃথিবীতে গভীর দাগ চিহ্ন রেখে গেছেন, তাঁরা সবাই মিলে তৈরি করেছেন আমার জগত।

    আমার এই জগতের অতি ক্ষুদ্রতম একটি অংশ আমার অনেক দিনের, অল্প দিনের, দুদিনের বা দুদন্ডের পরিচিত কিছু নর-নারী। অনেকের কথাই জানাতে ইচ্ছা করে যারা আমাকে ছুঁয়ে গেছে, নাড়িয়ে গেছে, ভাবিয়ে গেছে। অনেক দেরিতে শুরু করেছি, দিন শেষ হয়ে আসছে। জানি যাদের কথা বলতে চাই তাদের সবার কথা বলার আগেই আমার সূর্য ডুবে যাবে।

    আমার চেতনায় রবীন্দ্রনাথ, আমার মননে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ আমার হারানো পথের দিশা, একাকিত্বের দোসর। কর্মজীবনের ব্যস্ততা বা অবসর জীবনের সময় প্রাচুর্য, কোন অবস্থাই আমাকে রবীন্দ্রচর্চা থেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখেনি। কখনো ঘরের কোনে, কখনো বা সক্রিয় অংশগ্রহণে। তাই রবীন্দ্র প্রসঙ্গ থেকেই শুরু করা যাক।

     



    স্টেলা নোয়া (এস্টনিয়া)



    বলটিক সাগরের তীরে দুটি ছোট্ট দেশ- লাটভিয়া ও এস্টোনিয়া। দুই দেশের দুটি রবীন্দ্র প্রেমী মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এঁরা শুধু রবীন্দ্র উৎসাহী নন, এঁরা নিজ নিজ গুণে এক একজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। সুদূর উত্তর ইউরোপে এমন মানুষ বিরল। অধ্যাপক ভিক্টর ইবুলিস (Prof. Ivbulis) ল্যাটভিয়ার মানুষ আর স্টেলা নোয়া (Stella Noa) এস্টোনিয়ার। এঁদের দুজনের সঙ্গেই পরিচয় হয়েছিল লন্ডনে টেগোর সেন্টার ইউকের আয়োজিত আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মেলনে। স্টেলা নোয়া স্বল্পভাষী। সম্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে, খাবার টেবিলে, চায়ের আলাপচারিতায়, এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে গাড়িতে কথা হতো। স্টেলার দুঃখ রবীন্দ্রনাথ কখনো এস্টোনিয়ায় আসেন নি। অথচ তিনি প্রায় ইউরোপে সব দেশেই গিয়েছিলেন। মাত্র ১.৪ মিলিয়ন মানুষের ছোট্ট দেশ এস্টোনিয়া- ফিনো-উগ্রিকভাষী (Fino-Ugric) মানুষের বাস। এই ভাষার সঙ্গে ইউরোপের কোন ভাষার মিল নেই একমাত্র ফিনিশ ও হাঙ্গেরিয়ান ছাড়া। অভিমান করে বললেন, “এস্টোনিয়া ছোট্ট দেশ, তায় অচিন ভাষা। তাই বোধহয় আসেননি।”

    কুড়ি বছর বয়সে স্টেলা যখন বহির্জাগতিক শক্তির উপর গবেষণা করছিলেন তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও কবিতা থেকে তাঁর কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান। রবীন্দ্র চর্চার শুরু সেই থেকেই। রবীন্দ্রনাথ পড়ার জন্য বাংলা শিখলেন। এবং বাংলা থেকেই রবীন্দ্র সাহিত্য অনুবাদ শুরু করলেন এস্টোনিয়ান ভাষায়। বললেন, “জানেন, আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ খুবই পরিচিত ও পঠিত। তাঁর মনে হয় এস্টোনিয়ার মানুষ ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’ও রবীন্দ্রনাথ পড়বে।”

    কথায় কথায় অনেকবারই বললেন ভারতবর্ষের সঙ্গে ওঁদের দেশের মানুষের একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে। আমাদের মতই পরাধীনতার একটা জ্বালা আছে ওদের মধ্যে। গলার স্বরে একটা চাপা বেদনার আভাস পাচ্ছিলাম। ৭০০ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এস্টোনিয়া বিদেশী শক্তির অধীনে কাটিয়েছে- জার্মান সুইডিশ ডেনিশ রাশিয়ান। বিংশ শতাব্দীর শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তিম কালে ১৯৯১ সালে ওরা স্বাধীনতা ফিরে পায় আবার। এস্টোনিয়ার লোকেরা অবশ্য রবীন্দ্রনাথকে চিনেছিল অনেক আগে। রাজধানী টালিনে ১৯২২/২৩ সালে ডাকঘর মঞ্চস্থ হয়েছিল। তারপর প্রায় ৬০ বছর পরে আবার মঞ্চস্থ হল।

    স্টেলা বললেন, এস্টোনিয়ান অতি মধুর ভাষা, সব ইউরোপিয়ান ভাষার মধ্যে সবচেয়ে মিষ্ট ও সুন্দর। আমার কাছে বাংলা ভাষাই পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতি মধুর ভাষা। আ মরি বাংলা ভাষা। একটা এস্টোনিয়ান কবিতার দুটো লাইন পড়ে শোনালেন স্টেলা। যে ভাষা আমি জানি না, বুঝি না, যার সব শব্দই আমার কাছে অর্থহীন, তা যে এত সুন্দর হতে পারে তা কল্পনাও করিনি। উচ্চারিত শব্দপুঞ্জ অনুরণিত হতে থাকলো আমার অন্তরে, চেতনার গভীরে। 

    রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে আধ্যাত্মিক মনন ও চিন্তা স্টেলাকে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আকর্ষণ করেছিল। তাই তিনি নিরন্তর প্রবাহিনী। নিয়মিত ভাবে তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ করেছেন স্বভাষী মানুষের জন্য। স্টেলার কথায়, “এতদিন ভেবেছিলাম রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ করা ও রবীন্দ্রবাণীর অন্তরঙ্গ হওয়াই বুঝি আমার দেবতা আমার কাছে চান। কিন্তু এখন অনুভব করছি এটাই যথেষ্ট নয়। তাই আমি তার ভেরী তুলে নিয়েছি আর তাতে ধ্বনি তুলেছি।”

    “তোমার শঙ্খ ধুলায় পড়ে/কেমন করে সইব। Thy trumpet lies in the dust / how could we endure. যদিও আমার সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, তবুও তোমার ইচ্ছা আমাকে আমার অসীমে নিয়ে যাবে।”

    রবীন্দ্রনাথের কবিতার সৌন্দর্য ও গীতিময়ী ছন্দ স্টেলার হৃদয় বীণার তারে এমন ঝংকার তুলেছিল যে তিনি মুগ্ধ না হয়ে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতাই তিনি মনের মধ্যে গেঁথে রেখে প্রভাত সন্ধ্যার প্রার্থনাতে জব করেন, বিশেষ করে গীতাঞ্জলির সেই গান ---
    That I want thee --- let my heart repeat without end…. 
    চাই গো আমি তোমারে চাই/তোমায় আমি চাই ---
    এই কথাটি সদাই মনে/বলতে যেন পাই। 

    স্টেলার উদ্যোগে এস্টোনিয়ার সারেমা দ্বীপে East West Centre- পূর্ব-পশ্চিম কেন্দ্র- স্থাপিত হয়েছে। সেন্টারটি ক্ষুদ্র- উৎসাহী কর্মী সংখ্যা মাত্র দশ। কিন্তু কার্যসূচী উচ্চাকাঙ্ক্ষী, গভীর চিন্তা ও দূরদৃষ্টির ফল। পরিকল্পনার নাতিদীর্ঘ তালিকায় দুই চারটি শব্দ আমাকে স্পর্শ করল- এই কেন্দ্রে বাংলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। আমি পুলকিত হলাম।
    ‘The activities of the Centre are based on the idea cherished by R. Tagore about harmonising Eastern spirituality with Western scientific mentality, about man’s and woman’s creative unity.’ 

    এই কেন্দ্রের কার্যক্রম আর. টেগোরের আশীর্বাদের ভিত্তিতে তৈরি যা প্রাচ্যের আধ্যাত্ববোধ ও পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান বোধের মেলবন্ধন ঘটাবে, যা পুরুষের ও নারীর সৃষ্টির ঐক্য আনবে। 

    সেটা ২০০০ সালের কথা। স্টেলার সঙ্গে ২০১১ সালে আবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু ওদের সেন্টারের খবর নেয়া হয়নি আর।

    ভিক্টর ইবুলিস 

    প্রথম পরিচয়ের পরেই প্রফেসর ভিক্টর ইবুলিসের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা বোধ করছিলাম। বাংলার জাতীয়তাবাদ ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এমন সার্বিক জ্ঞান ও সহানুভূতি সম্পন্ন এই ব্যক্তিত্ব আমাকে অভিভূত করলো। ওঁর সঙ্গে আলোচনায় আমি সেই অগ্নি যুগে, সেই ইতিহাসের উথালপাথাল অধ্যায়ে ফিরে গেলাম। উনি বলতে লাগলেন বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলনের কথা, অনুশীলন সমিতির কথা, অরবিন্দ-বারীন ঘোষের বোমার মামলার বিবৃতি ইত্যাদি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের আগে ও পরে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিশ্লেষণ, তাঁর ন্যাশনালিজম ও স্বদেশীকতা, গান্ধীজীর সঙ্গে রাজনৈতিক মতানৈক্য- অনায়াসে অবলীলায় আলোচনা করতে লাগলেন তিনি। 

     



    ভিক্টর ইবুলিস (ল্যাটভিয়া)
     



    এমনটাই অবশ্য আশা করেছিলাম। টেগোর সেন্টারের আমন্ত্রণে প্রফেসর ইবুলিস এসেছিলেন ‘ঘরে বাইরে’-র উপর বক্তৃতা দিতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর অন্তত দু দশক পর্যন্ত ভারতবর্ষ তথা বাংলার রাজনৈতিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের পুংখানুপুঙ্খ জ্ঞান না থাকলে, আমার ধারণা, ঘরে বাইরের পটভূমিকা ও চরিত্রগুলির সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। সুতরাং এ বিষয়ে তাঁর ব্যুৎপত্তি দেখে খুব একটা অবাক হইনি। কিন্তু তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও ব্যাপ্তি উপলব্ধি করে আমি অভিভূত না হয়ে পারিনি। 

    যে নিষ্ঠা ও উৎসাহ এক ছাত্র-গবেষককে উচ্চমানের বিশেষজ্ঞ করে তোলে সেই বিরল গুণের অধিকারী এই মানুষটি। প্রাক যৌবনে যেসব ঐতিহাসিক আলোচনায় উত্তেজিত হতাম সেইসব তথ্য এক বিদেশী পন্ডিতের আলাপচারীতে ক্ষণে ক্ষণে চমৎকৃত হচ্ছিলাম।

    বাংলা সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। নিখিলেশ বিমলা সন্দীপের চরিত্র ও তাদের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক বঙ্গ সমাজের ক্রম বিবর্তনের ফসল। আমার বিশ্বাস, মাতৃভাষা বাংলা না হলে হয়তো রবীন্দ্রনাথ বোঝা যায় কিন্তু তা হৃদয়ঙ্গম করা যায় না, বুদ্ধি পেরিয়ে হৃদয়ে পৌঁছয় না, মরমে পশে না। রসের সব সম্ভার নিয়ে মনকে আপ্লুত করে না- ভাবের অমৃত লোকে পৌঁছে দিতে পারেনা। তেমনি বোধহয় বাংলার ঘরে জন্ম না নিলে, বাংলার সমাজের অঙ্গাঙ্গী না হলে বুঝি রবীন্দ্রনাথের চরিত্রগুলি অন্তরঙ্গ ভাবে উপলদ্ধি করা যায় না। কিন্তু হয়তো আমি কট্টরপন্থী, পক্ষপাতিত্ব দোষে দোষী। যে পারে সে ঠিকই পারে।

    সন্দীপ-বিমলা-নিখিলেশের মনস্তত্ত্ব ও ব্যবহারের মূল্যায়ন করতে হলে সে যুগের ঐতিহাসিক পটভূমি ও বঙ্গসমাজের সঙ্গে অন্তরঙ্গ পরিচয় থাকা প্রয়োজন। ভিক্টর ইবুলিসের সঙ্গে “ঘরে বাইরে” নিয়ে আলোচনা কালে আমার একবারও মনে হয়নি যে মানুষটি বাঙালি নন।

    প্রসঙ্গক্রমে বলি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০২ সালে প্রফেসর ইবুলিসকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত 
    করেছিল। 

    তিনি আমাকে বোঝাচ্ছিলেন ঘরে বাইরে আদর্শগতভাবে গোরারই উত্তরসূরী। গোরাই রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ভারতীয় নায়ক, যার কাছে সব ভারতবাসী এক– জাতিভেদ নেই, বর্ণভেদ নেই, ধর্মভেদ নেই। বলতে লাগলেন ইংরেজের প্ররোচনা, বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব, হিন্দু মুসলমান বিভেদের পরিকল্পনা। ১৯০৪ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকাতে লর্ড কার্জনের বক্তৃতা, যেখানে কার্জন বলছেন বিভক্ত বাংলা পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের এমন অধিকার দেবে যা তারা নবাবী আমলের স্বর্ণযুগেও পায় নি। কবির কথার প্রতিধ্বনি করে বললেন, এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ইংরেজ হিন্দু মুসলমান বিরোধের ইন্ধন যোগাবে, কিন্তু এটাই আশ্চর্যের কথা যে ইংরেজের পক্ষে এই কর্মটি আদৌ কিভাবে সম্ভব হলো।

    ওঁর মতে স্বভাবতভাবেই “ঘরে বাইরে” রবীন্দ্রনাথের বহু আলোচিত উপন্যাস। তবুও হয়তো পাঠক এর কথা ভুলে যেত যদি না এটি একটি অনবদ্য সাহিত্য শিল্প হতো। এর গতি, গীতিময়ী কাব্যিক প্রকাশ, তিন চরিত্রের অন্তর্দন্দ্ব, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, তাদের নিজের নিজের জীবনের টানাপোড়েনের বিশদ বিবরণ, একত্রে এ এক অতুলনীয় সৃষ্টি। তাঁর চোখে নিখিলেশ ভারতীয় ঐতিহ্যের যাহা মঙ্গলকর যাহা সৎ সেই সব গুণের প্রাণবন্ত প্রতীক। বিমলা চিরকালীন ভারতীয় নারীর প্রতিরূপ। আর সন্দ্বীপ পাশ্চাত্য মননে দীক্ষিত আক্রমণাত্মক স্বদেশী জাতীয়তাবাদী। আসলে এত সহজ ভাবে এই চরিত্রগুলিকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য চরিত্রের মতো এরাও বাস্তব ও আদর্শের সংমিশ্রণে সৃষ্ট। সংসারের প্রতিদিনের মানুষ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বের সংশ্লেষণ। তাই বুঝি এরা এত ভাবপ্রবণ, রোমান্টিক। এই জন্যই বোধহয় কোন কোন সমালোচকের মতে এই উপন্যাস একটি রূপক কাহিনী (an allegory)।

    আমার কথায় সায় দিয়ে তিনি বললেন, সব মিলে এই উপন্যাস যে কোনো অনুবাদকের ভীতি। সেরকম ভয় তাঁরও হয়েছিল। এর ভাষা এত সমৃদ্ধ ও প্রয়োগ এত উচ্চমানের যে অন্য ভাষায় এর অনুবাদ প্রায় অসম্ভব। (এ মন্তব্য কি রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সাহিত্যকর্ম গান কবিতা গল্প উপন্যাস সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়?) তবুও তিনি জোর দিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই এর অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন।

    তাঁর আলোচনায় এমন কিছু তথ্য ছিল যা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারিনি। কখনো নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল, কখনো ঈষৎ লজ্জিত। বললেন লাটভিয়াতে সমস্ত বিদেশী সাহিত্যের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ সর্বোচ্চ পঠিত। আশ্চর্য হলাম, এই লন্ডন শহরেই নামকরা বইয়ের দোকানেও রবীন্দ্রনাথের বই পেতে গলদ্ঘর্ম হতে হয়। অবশ্য সে সমস্যা অনেক কমেছে এখন– আমাজন ও ইন্টারনেটের কল্যাণে। পরে যা শুনলাম তা আরো চমকপ্রদ। ল্যাটভিয়ার এক প্রধান শহরে রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ নাটক অভিনীত হয়। এ খবরে আমি আশ্চর্য হয়নি, কিন্তু আশ্চর্য হলাম যখন শুনলাম যে নাটকটি অবিরাম ছ-মাস চলেছিল। রবীন্দ্রনাথের নিজের দেশেও বুঝি এমন ঘটনা কেউ কল্পনা করতে পারবে না। 

    বাংলাভাষী ও ভারতীয়দের বাইরে রবীন্দ্র-অনুরক্ত ও রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদদের আর একটা জগত আছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই শুধু অনুবাদের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সন্তুষ্ট থাকেননি। এঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বাংলা শিখেছেন শুধু রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির অন্তরঙ্গ হতে। প্রোফেসর ইবুলিস সেই শ্রেণীর একজন। ইনি ল্যাটভিয়ান ভাষায় বেশ কিছু রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছেন।

    ক্রমশঃ 

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন