এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - পর্ব ২২

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৩ আগস্ট ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • ছবি: রমিত 


    ব্যবসায় চিন্তা 

    আমার জীবন স্থির শান্ত গণ্ডীবদ্ধ জলাশয় নয়। এ যেন এক খরস্রোতা পাহাড়ী নদী, গতিময়, বহমান প্রবাহ। অথবা রণক্ষেত্রে অশ্বারোহী যোদ্ধার মত, সর্বদাই ছুটছে। 

    আগে বলেছি ইরান থেকে ফিরে আই সি এল ব্রাকনেলে কাজ নিয়েছি। ব্রাকনেল আমার বাড়ি থেকে চল্লিশ মাইল দূরে। প্রতিদিন আশি মাইল যাতায়াত করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। হ্যারোতে আমার বাড়ির কাছেই এক নামকরা সফটওয়ার হাউস ছিল, নাম ডেটা লজিক (Data Logic)। তাদের একটা বড় প্রোজেক্টের প্রোজেক্ট ম্যানেজারের পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। আমি আবেদন করেছিলাম। বেশ কয়েকটা সাক্ষাৎকারের পর আমি কাজটা পেয়েছিলাম। 

    প্রজেক্টটা তখন দ্বিতীয় পর্য্যায়ে। খুব জটিল ও সমস্যাসমাকীর্ণ প্রোজেক্ট। ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশের ক্রিমিনাল ডেটাবেস গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। বিপুল ডেটাবেস– ইংল্যান্ডের যত অপরাধী তাদের নাড়িনক্ষত্র ধরা আছে এই যন্ত্রে। আদি প্রোজেক্ট আই সি এল-র, ক্রেতা ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ। আই সি এল এই প্রোজেক্ট ডেটা লজিককে দিয়েছে রূপায়িত করার জন্য। আগের প্রোজেক্ট ম্যানেজারের চাকুরী চলে গিয়েছে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টির কারণে। তাই আমি এসেছি। আমি এসে কাঁটার চেয়ারে বসলাম। আমার কপালটাই এমন। আমাকে দুই সংস্থাকে খুশী রাখতে হবে-- ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ এবং আই সি এল। এদের কোন অভিযোগ না থাকলে আমার ‘বস’ খুশী। আর তা না হলে আমার চেয়ার টলোমলো। যা হোক শেষ পর্যন্ত আমি সফল হয়েছিলাম। ডেটা লজিক বুলেটিনে একটা লেখা বেরিরেছিল এই প্রোজেক্ট নিয়ে সেটা নিচে দিলাম:

     



    ডেটা লজিক বুলেটিন 



    ছবির ঠিক উপরের একটি বাক্য নীচে দিলাম:

    ‘Since January this year, this problem, among others, has been ably handled by Amal Biswas as Project Manager – Amal previously worked for ICL.’ 

    ‘এই বছরের জানুয়ারী থেকে, এই সমস্যাটি, অন্যান্য সমস্যার মধ্যে, অমল বিশ্বাস প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন– অমল আগে আইসিএল-এ কাজ করতেন।’ 

    এই বুলেটিনের অন্যত্র লেখা আছে (সে ছবি দেওয়া হয়নি এখানে):

    ‘Now the project development work is complete, we hope Amal has time to take a well-earned holiday. His skills and that of his team have been stretched to 150% utilisation’

    ‘অধুনা প্রোজেক্ট রূপায়ণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করি অমলের এখন সময় হবে যথোপার্জিত ছুটি নেওয়ার। তার এবং তার দলের দক্ষতা ১৫০% ব্যবহৃত হয়ে প্রসারিত হয়েছে।’

    প্রোজেক্ট শেষ হল। কয়েক মাস পরে আমার কাজও। 

    আমার কর্ম জীবনের শেষ চাকুরি এক বিখ্যাত রি-ইন্সুরেনস কোম্পানিতে। কোম্পানির নাম ট্রেড ইনডেমনিটি (Trade Indemnity)। এরা অন্য ইন্সুরেনস কোম্পানির রিস্ক (Risk) ইনসিওরেন্স করে। লন্ডনের ফাইনালসিয়াল অঞ্চল ‘সিটি’-তে এদের অফিস। আশি দশকের মাঝামাঝি আমি এই সংস্থায় যোগ দিই। এদের কর্মের হৃদপিণ্ড এক বিশাল আই সি এল কম্পিউটার। এই কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে প্রধানত এই কোম্পানির কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এই কম্পিউটার সিস্টেমের যে হেড বা পরিচালক তার পদোন্নতি হয়েছে। সে এখন একজন ডাইরেক্টর। সুতরাং কম্পিউটার সিস্টেম হেড-র পদ খালি। আর যতদিন সে পদে নতুন কোন ব্যাক্তি নিয়োগ না হবে ততদিন পর্যন্ত সে ডাইরেক্টরশিপের পদে বসতে পারছে না। তার নাম জন (আসল নাম মনে নেই)। 

    অনেক দিন থেকেই আমার এজেন্সির সঙ্গে এই শূন্য পদের জন্য আমাকে মনোনীত করার কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। প্রায় ছ-মাসে আমি তিনটে ইন্টারভিউ দিয়েছি। এটা এক লন্ডন ‘সিটি’ অফিসে এক সিনিয়র এক্সেকিউটিভের পদ। মনে রাখতে হবে আমি যে সময়ের কথা বলছি সে সময়ে ‘সিটি’র ফাইনান্সিয়াল বলয়ে ভারতীয় মুখ বিরল। যে কোন কারণেই হোক প্রায় ছ/সাত মাস পরে আমি ট্রেড ইনডেমনিটি (Trade Indemnity) থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পত্র পেলাম। 

    এই ধরণের কোন সংস্থায় কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা আমার নেই। আমি এ পর্যন্ত যে সব কোম্পানিতে কাজ করেছি তারা, এয়ারলাইন্স সংস্থা SITA ছাড়া, সবাই কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারার বা সফটওয়ার কোম্পানি। সুতরাং তাদের ধ্যান জ্ঞান চিন্তা, ব্যবসা-বাজার সবই কম্পিউটার বা কম্পিউটার সংক্রান্ত। তাই আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি বা আমার চারিপাশে যারা ছিল তারা সবাই কম্পিউটার কর্মী। আমরা সবাই এক ভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখানে এসে আবিষ্কার করলাম অন্য এক কর্ম সংস্কৃতি। এদের ব্যবসা কম্পিউটার নয়; এরা কম্পিউটার ব্যবহার করে এদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য। আমার চিন্তায় পরিবর্তন আনতে হবে। এই কর্ম সংস্কৃতির সামিল হতে আমার সময় লাগছিল। 

    তাছাড়া আর এক সমস্যায় পড়লাম। আমি এক আভ্যন্তরীণ ক্ষমতা দ্বন্দ্ব ও ডিপার্টমেন্টাল রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়লাম। সারা কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে আমিই একমাত্র ভারতীয়। এমনকি সমস্ত অফিসে আর কোন ভারতীয় দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। কেমন যেন একা একা বোধ করতে লাগলাম। কিন্তু বড় সমস্যা যেটা সেটা অন্যরকম। আমাকে যে পদটার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে সে পদটার জন্য এই বিভাগেরই আর একজন প্রার্থী ছিল, ডেভিড (ঠিক নাম মনে নেই)। ডেভিড অক্সফোর্ডের গ্রাজুয়েট, এই কম্পিউটার সিস্টেমের প্রায় জন্ম থেকে আছে, এর নাড়ি-নক্ষত্র জানে। সকলেই এবং ডেভিড নিজেও আশা করেছিল যে সে-ই এই পদটা পাবে। কিন্তু বোর্ড অফ ডাইরেক্টর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন বিভিন্ন কম্পিউটার সিস্টেমে অভিজ্ঞ নতুন রক্ত চাইছিল। তাই আমার আগমন। বলা বাহুল্য ডেভিড আমার উপস্থিতি ভাল চোখে দেখেনি। 

    আমার কাজে সফল হতে হলে এদের সিস্টেমটা ভালভাবে জানতে হবে। সেটা জানতে হলে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। আর সবচেয়ে যার সহায়তা বিশেষ প্রয়োজন সে ডেভিড। কিন্তু ডেভিড আমার সঙ্গে অসহযোগিতা করতে শুরু করল। আমি হোঁচট খেলাম। আমার পরিকল্পনা মত আমি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছি না। আমি মনে মনে অখুশী ও চিন্তিত। 

    অল্প দিনের মধ্যে আমি আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম। এখানে সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের (যার মধ্যে আমিও পড়ি) একটা অলিখিত গোষ্ঠী আছে যারা অফিস-শেষে পাবে (Pub) যায়, সপ্তাহ-শেষে নিজেদের মধ্যে গলফ খেলে, পার্টি করে। এরা অবসরে একত্রিত হলে রেসিং, গলফ, স্পোর্টস কার, সৌখিন স্যুইমিং পুল সহ হলিডে হোমের কথা বলে। অফিসের বাইরেও এরা মেলামেশা করে। সেটা এক অন্য জগত। এর কোন গুণই আমার নেই। আমি এদের ভাষায় কথা বলি না। আমি তাই এই গোষ্ঠীর সামিল হতে পারিনি। এ সংস্থার উপর তলায় থাকতে গেলে এ গুণগুলিরও প্রয়োজন। 

    আমি আর এক চক্রান্তে (চক্রান্তই বুঝি ঠিক শব্দ) জড়িয়ে পড়লাম। ডেভিড ও অন্যান্য টিম লিডাররা সিস্টেমের কোন সমস্যা হলে বা অতিরিক্ত স্টাফ বা সফটওয়ার বা কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে না জানিয়ে সোজা তাদের পূর্বতন ‘বস’ জনকে গিয়ে বলত। জন তখন ডাইরেক্টর। আমি এখন নতুন হেড। স্টাফের যা প্রয়োজন, সমস্যা, অভিযোগ আমাকে প্রথম জানানো উচিত। কিন্তু তা না করে সকলে সোজা জনের কাছে চলে যেত। জনও ওদের কথা শুনত ও যথাযত পরামর্শ দিত বা সমাধান করত। ক্রমে এমন একটা অবস্থা হল যে আমার ডিপার্টমেন্টের সব দায়িত্ব আমার অথচ কার্যত জনই সব কিছু চালাচ্ছে; দায় আমার কিন্তু আমার কোন ক্ষমতা নেই। 

    আমার বড় অফিসঘর, মোটা মাইনে, বড় গাড়ী, বাড়ির মর্টগেজ, ভাল বাৎসরিক বোনাস। কিন্তু তেমন কোন কাজ নেই। প্রথমে অস্বস্তি, পরে অবাঞ্ছিত মনে হতে লাগল। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। শুধু অর্থের জন্য কাজ নয়। স্বীকৃতি, আত্মসম্মান, মর্যাদা আমার কাছে অনেক বড়। ভাবছিলাম কাজটা ছেড়ে দিই। অনেক দিন থেকেই স্বাধীনভাবে নিজে নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিল- নিজেই নিজের ‘বস’। বিভিন্ন জায়গায় আমার কিছু ইনভেস্টমেন্ট ছিল। অফিসে কাজ নেই, হাতে সময় আছে। টেলিফোনে সে সব দেখাশোনা করতাম আর কম্পিউটার জগতে আমার জানাশোনা মানুষের সঙ্গে কনসালটেন্সির সুযোগ আছে কিনা সেই নিয়ে কথাবার্তা বলতাম। আমার ব্যাক্তিগত কারণে টেলিফোনের ব্যবহার নিয়ে জন একদিন কিছু মন্তব্য করে যা আমাদের মধ্যে উষ্মার সৃষ্টি করে। কাজে অসন্তুষ্টি, অবমাননা, বসের সঙ্গে মনোমানিল্য ইত্যাদি আমাকে অসহিষ্ণু করে তুলেছিল। জনের অনুরোধে কাজে আমি ইস্তফা দিলাম। সেই আমার শেষ চাকুরি। প্রতিজ্ঞা করলাম আর আমি কখনো কারোর চাকুরি করব না। 

    তখন আমার বয়স বায়ান্ন বছর। সূর্য মধ্য গগনে। আমার কোন কাজ নেই, আমার কোন উপার্জন নেই। আমি বেকার। 

    নিজেই নিজের কর্তা 

    মাস শেষ হলেই নিয়িমিত অর্থ ব্যাঙ্কে জমা পড়বে এর থেকে আশ্বস্ত জীবন আর হতে পারে না। ব্যবসা মানে মাস শেষে টাকা আসার কোন নিশ্চয়তা নেই। নিজের একক প্রচেষ্টায় উপার্জন করতে হবে। আপাতত সঞ্চয় ভেঙ্গে সংসার চালানো। তবু সেই জীবনই আমি বেছে নিলাম। আমি আমার নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করে আমার ব্যবসায়ী জীবন শুরু করলাম। A B Associates নামে আমি এক কনসালটেন্সি ফার্ম রেজেস্ট্রি করলাম। যাত্রা হল শুরু। নতুন জীবন নতুন উদ্যোগ। 

    নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলাম। অনু খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। আমার চাকুরি নেই, আমার কোন আয় নেই। আমি কার্যত বেকার। অনু আমাকে এমন অবস্থায় কখনো দেখেনি। বুঝতে পারলাম ও খুব মুষড়ে পড়েছে। 

    কম্পিউটার জগতে আমার অনেকদিনের অভিজ্ঞতা। প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ডিজাইন, কনসালল্টিং, ম্যানেজমেন্টের ছোটবড় পদে নানাদেশে নানা কোম্পানিতে, নানা মেশিনে কাজ করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস আছে। আমি সফল হবই। এ বৈতরণী আমি পার হবই। 

    সেটা বোধ হয় ১৯৮৭ সাল। দু একটা ছোটখাট কাজ পাচ্ছি। অনেকে আশ্বাস দিল তাদের নতুন প্রোজেক্ট শুরু হবে, তার কিছু কাজ আমাকে দেবে। আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ পৃথিবীর অর্থনৈতিক বাজারে কালোমেঘ দেখা দিল। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার স্টক মার্কেট ক্র্যাশ করল। আর তার জের সুনামির মত ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে ছড়িয়ে পড়ল। সব কোম্পানির অবস্থা খারাপ। আমাকে যারা কথা দিয়েছিল তাদের নতুন প্রজেক্টের কাজ আমাকে দেবে তারা সব পেছিয়ে পড়ল; বলল, আপাতত সে সব প্রোজেক্ট স্থগিত, ফ্রিজে রেখেছে সেগুলো সকলে। ইউকের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। বেকারের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে; ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই দেউলিয়া হয়ে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।

    আমি প্রমাদ গুনলাম। আমার হাতে কোন কাজ নেই, আমার কোন আয় নেই। আমি আমার পুঁজি ভেঙ্গে সংসার চালাতে শুরু করলাম। আমি কম্পিউটার ছাড়া অন্য ব্যবসায়ের কথা ভাবতে শুরু করলাম। আমার কোন ইগো নেই। আমাকে বাঁচতে হবে, আমি যে কোন ব্যবসা করতে রাজী। আমি একটা আমেরিকান কোম্পানির জল পরিশোধন যন্ত্র বিক্রির ব্যবসায় যোগ দিলাম। আমার সতীর্থদের সঙ্গে একত্রে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের কাছে অফিস নিলাম। আমি জানতাম এটা আমার অন্তরবর্তীকালীন অবস্থান- আমার আসল উদ্দেশ্য কম্পিউটার সংক্রান্ত ব্যবসা করা। 

    আমার এক অল্পচেনা বন্ধু, অমিত আচার্যর আমন্ত্রণে তার কোম্পানি সি টি এস এল-এ (CTSL) 
    কয়েক হাজার পাউন্ড লগ্নি করে তার কোম্পানিতে যোগ দিলাম। বছর খানেক ছিলাম সেই কোম্পানিতে। কিছু হচ্ছিল না। ছেড়ে দিলাম।

    তীর্থ চক্রবর্তী ওরফে দুষ্টুর সঙ্গে আমার আলাপ আমার বন্ধু ভাস্করের বাড়িতে। দুষ্টু ও পামের কথা আগে বলেছি। দুষ্টুর স্ত্রী পাম লেডী রানু মুখার্জীর নাতনী। দুষ্টু আমার থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোট; তবুও আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তীর্থ পেশায় একাউন্টান্ট। এক সময় তীর্থ লন্ডনের সব পাট চুকিয়ে দিয়ে দেশে চলে গেল। দেশে চলে যাওয়ার পরেও আমাদের যোগাযোগ ক্ষুণ্ণ হয়নি। দুষ্টু মাঝে মাঝে লন্ডনে আসত, আমাদের দেখা সাক্ষাত হত। আমরাও যখন দেশে যেতাম তখন দুষ্টু পামের নিউ আলিপুরের বাড়িতে আমন্ত্রিত হতাম।

    আমার কোম্পানি এ বি এসোসিয়েট ঢিমে তালে চলছে। আমার উদ্দেশ্য ছিল, আমার কোম্পানি ইউরোপ থেকে ফরমাইসি (bespoke) সফটওয়ার প্রোজেক্ট নিয়ে কলকাতায় কোন সফটওয়ার সংস্থায় প্রোগ্রামিং করে এদেশে বিক্রি করবে। ইংল্যান্ডে আমার অনেক কম্পিউটার কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে পরিচয় আছে। আমাকে যারা জানে তাদের আমার জ্ঞান ও যোগ্যতায় আস্থা আছে। কিন্তু আমার কোন ছোট বা মাঝারী সফটওয়ার হাউস জানা নেই দেশে বা কলকাতায়। একদিন দুষ্টু লন্ডনে আমার বাড়িতে এসেছে। গল্প করতে করতে দুষ্টু জানাল, ও দুচারজন কম্পিউটারের ছেলে নিয়ে একটা কোম্পানি করেছে যারা অন্য কোম্পানির সফটওয়ার লেখে। আমি ভাবলাম আমি তো প্রায় এই রকমই একটা খুঁজছিলাম। ওকে প্রস্তাব দিলাম দুজনে মিলে কিছু একটা করা যায় কিনা। ওর কোম্পানিতে আমার লগ্নী করার কোন ইচ্ছা ছিল না। ও আমাকে ওর কোম্পানিতে কাজ করতে আমন্ত্রণ জানাল। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আর কোনদিন চাকুরী করব না। আমি বললাম, আমার কোম্পানি এ বি এসোসিয়েট তোমাকে সফটওয়ার প্রোজেক্ট এনে দেবে আর তুমি সেটা তৈরি করে পাঠিয়ে দেবে। তীর্থ রাজী হল। জন্ম হল সিস্মেট্রিক ইন্ডিয়া লিমিটেড (Sysmetric India Ltd) ও সিস্মেট্রিক ইউ কে লিমিটেডের (Sysmetric UK Ltd)। 

    চুক্তি হল এ বি এসোসিয়েট সিস্মেট্রিক ইউ কের মারফত ক্রেতা এবং প্রজেক্ট সিস্মেট্রিক ইন্ডিয়াকে দেবে, পরিবর্তে এ বি এসোসিয়েট অর্ডার মূল্যের ২৫% নেবে। লাভ যা হবে তা সিস্মেট্রিকের। কলকাতার কোম্পানির যা খরচ তা সিস্মেট্রিকের, লন্ডনের কোম্পনির যা খরচ তা এ বি এসোসিয়েটের। কাজ শুরু হল। অপেক্ষাকৃতভাবে ইংল্যান্ডের চেয়ে কলকাতায় উৎপাদিত পণ্যের, আমাদের ক্ষেত্রে সফটওয়রের তৈরির খরচ অনেক কম। আমরা তাই কলকাতায় লেখা সফটওয়ার ইংল্যান্ড বা অন্য উন্নততর দেশে প্রচুর লাভে বিক্রি করতে পারতাম। সফটওয়ার আমদানিতে কোন শুল্ক লাগত না। 

    কয়েক মাসের মধ্যেই আমি অভূতপুর্ব সাড়া পেলাম আমার সম্ভাব্য ক্রেতামহলে। ইংল্যান্ডের কম্পিউটার বাজার আমার নখদর্পণে। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি ও সাফল্য তাদের আশ্বাস দিত যে আমি তাদের প্রোজেক্ট রূপায়ণ করতে সক্ষম হব। যার কাছে যাই সেই আমাকে অর্ডার দেয়। আমি এতটা আশা করিনি, তীর্থ তো না-ই। চাহিদা মেটাতে সিস্মেট্রককে আরো স্টাফ নিতে হল। একবছরের মধ্যে কর্মীসংখ্যা তিন থেকে পনেরো-ষোল হল। 

    আমাদের ক্লায়েন্ট বা ক্রেতা ইংল্যান্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ল। এই সময় ফ্রান্স ও নিউ জিল্যান্ডেও আমাদের ক্লায়েন্ট ছিল। এই সব ক্রেতা সবাই এসেছে আমার একক উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায়। এবং চুক্তি অনুযায়ী এরা সবাই আমার অর্থাৎ এ বি এসোসিয়েটের ক্লায়েন্ট ও সম্পদ। অতএব সিস্মেট্রিক ইন্ডিয়ার সকল আয়ের ও লাভের একমাত্র উৎস আমি- ওদের আর্থিক লাভ আমার নৈপুণ্য ও পরশ্রমের ফসল। এই সব ক্রেতাদের দেখাশোনা করা এবং এদের প্রোজেক্ট ডেলিভারি ও গুণমানের দায়ভারও আমার। লন্ডনের সব কাজ আমাকে একা করতে হয়। আমার নাওয়া খাওয়ার সময় নেই।

    এক বছরের মধ্যে সিস্মেট্রিক ইন্ডিয়া ফুলেফেঁপে উঠল। এই বৃদ্ধির মূল কারণ আমি অথচ এর লাভে আমার কোন অংশ নেই। সিস্মেট্রিক ইন্ডিয়ার মালিক তীর্থ ও পাম। এই কোম্পানির দুই ডাইরেক্টর তীর্থ চক্রবর্তী ও নয়নী চক্রবর্তী। 

    এত দ্রুত বৃদ্ধিতে কিছু সমস্যা দেখা গেল। তীর্থর কম্পিউটার সফটওয়ার হাউস পরিচালনা করার কোন অভিজ্ঞতা নেই। যখন কোম্পানিতে চারজন স্টাফ ও সহজ প্রোজেক্ট তখন সমস্যা কম। কিন্তু যখন ক্রেতা অত্যাধুনিক ও পরিশীলিত (sophisticated) এবং প্রজেক্ট জটিলতর তখন তা পরিচালনা করার জন্য কম্পিউটার অভিজ্ঞ ও দক্ষ অধিনায়কের প্রয়োজন। তীর্থর সেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ছিল না। অচিরে কোম্পানিতে ফাটল দেখা দিল। এ রকম যে হবে তা আমি আশঙ্কা করেছিলাম। সে সময় যা দরকার ছিল তা দু-জন অমলেন্দু বিশ্বাস- একজন কলকাতায় আর একজন লন্ডনে!

    অল্প সময়ের মধ্যে অভাবনীয়ভাবে এত কাঁচা টাকা আসায় তীর্থ অবিবেচকের মত খরচ করতে শুরু করল। এমন অবস্থায় বাড়তি টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা উচিত। তা না করে উল্টে নিজের ও নয়নীর জন্য দামী গাড়ী কিনল। নিউ আলিপুরে একটা বাড়ির নিচের তলা ভাড়া নিয়ে সেটা অনেক টাকা খরচ করে উচ্চমানের অফিসে পরিণত করল। কারণে অকারণে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করতে ট্যুর শুরু করল- লন্ডন ফ্রান্স, নিউ জিল্যান্ড। আমি নতুন কোন ক্লায়েন্ট পেলে তাদের সঙ্গে মিটিং করতে লন্ডনে চলে আসত। আমি অস্বস্তি বোধ করেছি, কখনো কখনো আপত্তি করেছি। কিন্তু সিস্মেট্রিকের টাকা কেমন করে খরচ হবে তাতে আমি কিছু বলতে পারি না। আমার কোন শেয়ার নেই সিস্মেট্রিকে। আমি এই কোম্পানির কোন ডাইরেক্টরও নই। 

    কিছুদিনের মধ্যে আমার ক্লায়েন্টরা অভিযোগ করতে শুরু করল। ঠিক সময় মত ডেলিভারি হচ্ছে না, সফটওয়ারে ‘বাগ’ দেখা যাচ্ছে, ভাল করে ‘টেস্ট’ না করেই কাজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে লাগল। ফ্রান্সের ত্যুঁলো শহরে ছিল আমার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তারা ক্রমাগত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার পর একদিন চলে গেল। চলে গেল লন্ডনের আর কয়েক জনও। নানা কারণে তীর্থর সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠল। আমি তা নিয়ে আলোচনা করলাম। একদিন আমি পারস্পরিক সৌজন্য ও বন্ধুত্ব বজায় রেখে সিস্মেট্রিক ছেড়ে দিলাম। 

    এতকাল পরে আমি আমার প্রিয় কম্পিউটার জগত থেকে বেরিয়ে এলাম। ব্যাঙ্গালোরে একটা পি সি বি কোম্পনির সহায়তায় লন্ডনে শুরু করলাম আমার নতুন ব্যবসা। এর কথা আমি আগে বলেছি তাই পুনরাবৃত্তি করছি না। তীর্থর সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। যোগাযোগ বজায় ছিল। প্রায় বছর দুই তিন পরে তীর্থ আবার আমাকে ওর সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিল। এবার অন্য শর্ত। সিস্মেট্রিকে আমার শেয়ার থাকবে এবং আমি লাভের অংশ পাব। আর কোম্পনি পরিচালনায় আমার মতামত গ্রাহ্য হবে। আমাকে একজন ডাইরেক্টর করতে চেয়েছিল কিন্তু ভারতীয় আইন ও জটিল নিয়ম বিধির কথা চিন্তা করে আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। যদিও সিস্মেট্রিক ইউ কে-র ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আমি। 

    সিস্মেট্রিকের তখন ইংল্যান্ডে একটি বড় ক্রেতা ছিল যে নিয়মিত কাজের অর্ডার দিত। আমার উৎসাহ ও উদ্যম আর আগের মত নেই। দিনে পনের ষোল ঘণ্টা পরিশ্রম করে প্রাণপণে কাজ করি না আর। তবু কয়েকটা নতুন প্রজেক্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই আগের মতই ডেলিভারি ও কোয়ালিটির সমস্যা দেখা দিল। তবু বেশ চলছিল। এই সময় লন্ডনের স্লাও অঞ্চলের এক ব্রিটিশ-ভারতীয়, কোম্পানির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এই কোম্পনির মালিকের নাম সতীশ শর্মা। ইতিমধ্যে আমি নিজ উদ্যোগে সল্ট লেকের সেক্টর ফাইভে একটা সফটওয়ার কোম্পানি তৈরির চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ঠিকমত পার্টনার ও মূলধন পাচ্ছিলাম না। সতীশও উত্তরভারতে এক সফটওয়ার কোম্পানি স্থাপনের কথা ভাবছিল। আমি সতীশকে কলকাতার কথা বিবেচনা করতে বললাম। তীর্থর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম সতীশকে। অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হল এই নতুন কোম্পানি কলকাতাতেই হবে। 

    এই সময় কলকাতার আজকাল ও প্রতিদিন পত্রিকায় এক প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। তার একটা নীচে দিলাম। 

     



    আমরা ‘স্যাসি’ নামে এক নতুন কোম্পানি তৈরি করলাম ইংল্যান্ডে। ভারতেও তার এক শাখা করলাম। খুব ঘটা করে তাজ হোটেলের এক কনফারেন্স রুমে কোম্পানির উদ্বোধন হল। ব্রিটিশ দূতাবাসের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হল। তখন বামফ্রন্ট সরকার। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী নিরুপম সেন। তাঁকেও আমন্ত্রণ জানান হল। আরও অনেককে। ব্রিটিশ দূতাবাসের প্রধান এসেছিলেন। আমদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিরুপম বাবু আসেন নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে এক নিম্ন পদের আমলা এসেছিলেন। মন্ত্রীমহোদয় অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন; এক বঙ্গ সন্তানের এত অল্প বিদেশী মুদ্রার লগ্নীর ব্যবসায়ে উৎসাহ দেয়ার মত সময় নেই তাঁর। 

    দুর্ভাগ্যবশত নানা কারণে এই ব্যবসা বছর দুইয়ের মধ্যে উঠে যায়। তত দিনে সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমভালে। আমার উৎসাহ স্তিমিত। কোন বড় মাপের কিছু করার ইচ্ছা নেই আর। স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা এসেছে জীবনে। সেই আগুন ও ক্ষুধা, কোনটাই নেই আর। একক ভাবে কন্সাল্টান্সি ছাড়া কিছু করি না। জেনেছি আমার বিজনেস মডেল- কলকাতায় প্রডাকশন কোম্পানি আর লন্ডনে মার্কেটিং কোম্পানি- সফল হতে পারে। কিন্তু তার জন্য দুজন অমলেন্দু বিশ্বাসের প্রয়োজন। একই সঙ্গে একজন লন্ডনে, অন্যজন কলকাতায়। আমি দ্বিতীয় অমলেন্দু বিশ্বাসকে খুঁজে পাইনি। 

    মাঝে মাঝে পিছনে তাকালে মনে হয় যদি সে দিন কুমার সাহেবের প্রস্তাবে সায় দিতাম তবে বুঝি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হত। 
     




    ক্রমশঃ


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৩ আগস্ট ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তপতী বিশ্বাস। সিংগাপুর। | 27.125.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৫:০৯733578
  • চমৎকার।. ঘটনাবহুল জীবন ও তার বর্ণনা। কত রকম অভিজ্ঞতা ।..ভাবতেই অবাক লাগছে ।আমরা যখন প্রথম নর্থ উইক পার্ক এর বাড়িতে গেছি ,  ১৯৮৮ নাগাদ তখন কিন্তু আমাদের কাছে উনি ভীষণ আন্তরিক , স্নেহপ্রবণ দাদা ও কবি। কাজের জায়গায় কত সংঘাত চলছে , তার আভাস ও পাইনি . এই খানেই উনি অন্য রকম। 
    ভালো থাকুন , সুস্থ্য থাকুন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন