এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ভূতের নিত্যতা সূত্র  (ভূত চতুর্দশী ইস্পেশাল)  

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | ৫২ বার পঠিত
  • ভূতের গল্প প্রথম কে লিখেছিলেন সেটা জানা নেই, তবে ভূতের গল্পের বাজার যে এখনও বিদ্যমান সেটি হলফ করে বলতে পারি। কিন্তু ভূতেরা কি সেই খবর জানে?  

    ধরুন, নিশুতি রাতে বাজার বসেছে। ভূতেরা থলি হাতে নিয়ে গেঁড়ি গুগলি, পচা মাছ ইত্যাদি কিনছেন। আর সেই বাজার থেকেই থপাস করে কে যেন একটা পচা ডিম ছুঁড়ে মারল আপনার মাথায়। কেমন লাগবে?
     
    অথবা ধরুন নেট ফ্রি বলে নিশুতি রাতে আপনি মোবাইলে সিনেমা দেখছেন। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, একটা হাত গ্রিল আর জানালার মধ্যে দিয়ে ঢুকে টুক করে আপনার মোবাইলটা নিল কেড়ে। আপনার তখন ‘কিংকর্তব্যকংবিমূঢ়ানন্ড’ অবস্থা! ওদিকে খোনা গলায় বাইরে কারা যেন হাসতে থাকল। কী করবেন তখন?
     
    আমাদের বাংলাদেশে এখন যত না ভূত তার থেকে বেশি ভূতের গল্প। আর তার থেকেও বেশি সেই গল্পের লেখক-লেখিকা!  

    আচ্ছা, ভূতের গল্প লিখতে গিয়ে ভয় পেয়েছেন?

    ফেসবুকে এই প্রশ্নের উত্তরে বেশ কিছু কমেন্ট এসে জুটল। একজন লিখেছেন – আমি পেয়েছি; তবে গল্প লিখে নয়। একটা তন্ত্র উপন্যাসের রিভিউ লিখে। দু’দিন ধরে মনে হয়েছে স্রষ্টা নিজে ভূত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছেন। আর শুধু মনে হত জানালার পাশে জামরুল গাছের তলায় নিজের ‘বান্টু’ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তবে সেটি ‘বান্টু’ না কি ‘Ubuntu’ সেটা অবশ্য আমি জানি না।  

    আবার একজন লিখলেন – অনেকদিন ধরেই একটা সিমেন্টজমজমাট ভূতের গল্প মাথায় ঘুরছিল। একদিন ঠিক করলাম লিখেই ফেলি। দিনটা ছিল অমাবস্যার রাত। সে রাতে ভোজন সেরে দাঁতে মাজন করে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে চেয়ার টেনে টেবিলে খাতা খুলে বসেছি গল্পটি লিখব বলে।

    তারপর খাতার পাতায় কলমটি ছোঁয়াতেই তার থেকে ভৌতিকমন্ডলাকমন্ডুলুপ্রভা বিচ্ছুরিত হল। কলমটি আমার হাত থেকে ছিটকে পড়ল। আর দুম করে চলে গেল কারেন্ট। আমি খানিক অজানাকম্পিত ছমছমেস্তম্ভিত ভয়ার্তবিম্বিত চোখে ফোনটা হাতড়াতে থাকলাম! তারপর ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে কলমটি আবিষ্কার করে টেবিলে তুলে রাখতে যেতেই চড়াং! দেখলাম খাতাটা নেই; ভ্যানিশ হয়ে গেছে! হঠাৎই তখন শীতল বাতাস বয়ে চলার বিচিত্রানুভূতি পেলাম। সব কিছু নিস্তব্ধ; কানে কোনরকম শব্দই পৌঁছচ্ছে না; (আলুর)দম বন্ধ হয়ে আসছে। একটু (আলুর)দম নেওয়ার জন্য বাইরের দরজাটা খুলতেই কাকে যেন দেখতে পেয়ে ছমছমেভয়ার্ত চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম।

    তারপর জ্ঞান যখন এল, দেখি ঘরে দিব্যি কারেন্ট রয়েছে। আমি চেয়ারেই বসে আছি। সামনে রয়েছে টেবিল আর টেবিলে রয়েছে খুলে রাখা খাতা! আমার হাতে ধরা রয়েছে কলম। সভয়ে দেখলাম যে কলমের গায়ে লোম গজিয়েছে! সঙ্গে স্মৃতিতে সেই ভেবে রাখা ভূতের গল্পটি আর মনে নেই। কে বলতে পারে সেই গল্পটি যদি লিখে উঠতে পারতাম সেইদিন, তাহলে আজ বিখ্যাত হতাম না…।

    আমরা জানি যে কর্পুর খোলা রাখলে উবে যায় বা জল বাস্প হয়ে যায়। এখন এই কর্পুর যে উবে গেল বা জল যে বাস্পে পরিণত হল, এরা যদি ভৌতিক পরিবর্তন হয়, তাহলে কি বলা যায় যে সেই উবে যাওয়া কর্পুর বা বাস্পই হল আসলে ভূত!

    চাল থেকে ভাত – এটিও যদি ভৌতিক পরিবর্তন হয় তাহলে আমরা কি রোজ ‘ভূত’ দিয়ে মাছ, মাংস, ডাল আর তরকারি মেখে খাই? ভাভাগো!

    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘গরমভাত অথবা নিছক ভূতের গল্পে’ গাঁ দেশের যে ছবি এঁকেছিলেন তা পড়লেই কেমন যেন গা গুলিয়ে ওঠে। সেখানে দেখা যায় যে ভূতের দাম ক্রমশ বাড়ছে কিন্তু মানুষের দাম কমতে থাকছে বা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।  

    এই গল্প নিয়ে বিপ্লব রায়চৌধুরি মহাশয় ‘শোধ’ বলে একটি হিন্দি সিনেমা বানিয়েছিলেন যা পুরস্কৃত হয়েছিল।

    গল্পটি খানিকটা এইরকম। গাঁয়ের রাজনীতির কারণে খুন হয় সুরেন্দ্রের বাবা। গ্রামে প্রচার হয় যে তার বাবার নাকি ভূতের হাতে মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সুরেন ভূত টুতে বিশ্বাস করে না। তাই ভূত ধরার অছিলায় সে ভূতের দাম দিনকে দিন বাড়াতে থাকে। এটা ছিল তার প্ল্যান যার সাহায্যে সে তার বাবার খুনিকে ধরতে চেয়েছিল। সে তাতে শেষে সফলও হয় এবং সেই দরিদ্র পীড়িত, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজে সুরেন প্রমাণ করে যে ভূত বলে আসলে কিছুই নেই।     

    কিন্তু সেই সমাজ কি আদৌ পাল্টেছে? পাল্টালে কতটুকু পাল্টেছে?

    অপরদিকে ভূত ধরার নিনজা টেকনিকের কথা চারমুর্তি সিনেমার একটা গানে আমাদেরকে বলছিলেন পটলডাঙার টেনিদা – ‘… দেখা যদি পাই তার / টেনে দেবো ঠ্যাং / জুজুৎসু প্যাঁচে ব্যাটা হয়ে যাবে ব্যা অ্যা অ্যাঙ!’

    অর্থাৎ জুজুৎসু প্যাঁচে ভূতের ঠ্যাং টেনে তাকে ব্যাং-এ পরিণত করা যায়!  

    আচ্ছা, কখনও ভেবে দেখেছেন যে ভুতে কী খায়? ভূত কি তেলেভাজা খায়? ছোলাভাজা খায়? বিড়ি? কই গল্পে ভূতকে বিরিয়ানি, মাংস, পিৎজা, পাস্তা, চিলি চিকেন বা কাঁকড়ার ঝাল খেতে তো পড়িনি বাপু? মাছের কথাই পড়েছিলাম। ভূত কি পান্তা ভাত বা পান্তা বিরিয়ানিও খায়?
     
    আচ্ছা, ভূত কি কয়লা, গরু, রেশন – এইসব পাচার করে? ভোট চুরি করে? ফেক নিউজ ছড়ায়? সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেয়? ভূতেদের কি আচ্ছে দিন এসে গেছে? ভূত কি সরকারি সমস্ত কিছু বেচে দেয়? বা ভূতের মাথায় অক্সিজেন কি কমে যায়? নাকি ভূত আবার বিচারকদের জুতোও ছুঁড়ে মারে? তেনারা কি স্কুল আর পুরসভার চাকরি চুরি করে? ভুতেরা কি ইতিহাস পাল্টে দেয়? কখনো কেউ শুনেছেন যে ভূতেরদের বাড়িতে কাড়ি কাড়ি বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া গেছে? ভূতেরা কি উন্নয়নের নামে জলাশয় বোজায়? জঙ্গল কেটে ফেলে? পরিবেশ দূষিত করে? ছাপ্পা ভোট দেয়?

    জানি না। তবে ভূত শিকারি মেজকর্তা বা সেই পাতালঘরের ভূতনাথ নন্দী বা কোনও বিশিষ্ট ভূত বিশেষজ্ঞরা হয়ত বলতে পারবেন। তাঁদের কাছে কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ রইলো।   

    তাহলে কি ভূতের গল্পগুলো গাঁ দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল মন্বন্তরের পর? আর সেই সময় কোথায় বিরিয়ানি আর কোথায়ই বা পিৎজা-পাস্তা? ভূতকে মাংস খেতেও পড়িনি বাপু। কারণ তখন গ্রাম বাংলার বাড়িতে বাড়িতে মাছের রান্নাই হত বেশি আর মাছের রাজা ছিল ইলিশ। হয়ত সেই ক্ষিদেজর্জর পেটে মাছ নিয়ে হেলতে দুলতে আসা কোনও গেরস্তকে মাঠের মাঝখানে খোনা গলায় ভয় দেখিয়ে মাছটাকে বগলদাবা করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। হয়তো কোনও আখাম্বা লম্বা লোক গাছে উঠে ঠ্যাং নাড়িয়ে ভয় দেখাতো।

    আর পরে এইসব কর্মকান্ড কুসংস্কারগ্রস্ত অলৌকিকপ্রবণ মনের ভিতর আগাছার মতো ফনফনিয়ে বেড়ে গিয়েছিল। সঙ্গে স্বর্গ নরক ভূত প্রেত রাক্ষস খোক্কস ইত্যাদির জমি যে অনেক আগে থেকেই ছিল তৈরি।  

    আসলে কি গা ছমছমে? আসলে কি মনের ভেতরের আতঙ্ক? আর সেটা আছে আমাদের মাথার মধ্যেই? আমরাই কি হ্যালুসিনেট করি? স্লিপ অ্যাম্নেশিয়াটাই বা কি? আমাদের কালেক্টিভ আনকন্সাস্নেসেই কি ভয়ের বাস? যা পরিবেশ পরিস্থিতিতে ট্রিগার্ড হয়?  

    আমার তো বাবা ভূতের থেকে মানুষদেরকেই বেশি ভয় লাগে।

    শুনেছিলাম যে ‘ভূত’ বানান ভুল লেখায় এক লেখকের বিরুদ্ধে নাকি মানহানি মকদ্দমা ঠুকে দেওয়া হয়েছিল আর সেই কাজটি করেছিলেন নাকি ‘নিখিল ভৌতিক শব্দভাণ্ডার সমিতির ভূতেরা’!

    ওদিকে কোথাও আবার প্রশাসনকে ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তো প্রকাশককে ব্যাস্ত থাকতে হয় ছাপাখানার ভূত নিয়ে। আবার ১০০ দিনের কাজের ভূতুড়ে জব কার্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেছে!

    কথায় বলে ভূতের বেগার খাটা! মানে টাকা ছাড়া বা কম টাকায় কেউ যদি আপনাকে খাটিয়ে নেয় সেটা তাহলে ভূতের খাটনি? আবার বলা হয় যে কাউকে রঙ মাখিয়ে ভূত করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি যাদেরকে খুব করে রঙ মাখিয়ে দেওয়া হয় তারাই কি ভূত? নাকি যারা বেগার খাটেন তারা ভূত?  

    এখন প্রশ্ন হল যে ভূত চিনবেন কী করে? ভূত শনাক্তকরণ পদ্ধতিটি কি?

    ভূতের নাকি ছায়া পড়ে না। আলো ভেদ করে চলে যায়। পায়ের পাতা আর মুন্ডু ৩৬০ ডিগ্রি নাকি ঘোরাতে পারেন কেবলমাত্র ভূতেরাই। ভূতেদের সামনে আয়না ধরলে নাকি সেখানে আবার প্রতিবিম্ব দেখা যায় না। আর এইসব যদি কারুর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় সেইই নাকি ভূত!

    কথায় বলে ঠিক দুপুরবেলা ভূতে মারে ঢেলা। মানেটা কী? রাতদুপুরে বেরোতে মানা করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ বেরোলেই নাকি ভূতের ঢেলা খেতে হবে। তবে যেখানে সারারাত ধরেই যানবাহন চলে বা মানুষের যাতায়াত চলে সেখানেও কি ভূতেরা ঢেলা মারতে আসেন?

    ভূত নাকি আলোকে ভয় পায়। কেউ কেউ বলেন যে অন্ধকার জমেই নাকি ভূত হয়। তাহলে ভূত জমে কী হয়?
       
    আমরা কিন্তু দেখেছি যে ভূত সমাজেও কিন্তু ধর্ম বা জাতপাতের বিভাজন রয়েছে। মামদো আর ব্রহ্মদত্যির সামাজিক সম্মান সেখানেও কিন্তু এক নয়। আর এটি থেকেই বোঝা যায় যে ভূত ব্যাপারটা আসলে কাদের সৃষ্টি।

    ঠিক কত রকমের ভূত আছে আমাদের বাংলায়?

    শাকচুন্নি; পেত্নি; দামোরি; বেশো ভূত; পেঞ্চাপেচি; আইলি/গেইলি; মেছো ভূত; মামদো; গেছো; আলেয়া; বেঘো ভূত; স্কন্ধকাটা; কানাভুলো; ব্রহ্মদৈত্য; বোবা; শিকোল বুড়ি; নিশি; গুড্রো বোঙ্গা; ধন কুদ্রা; পিশাচ; বিটাল; যক্ষ; জ্বিন; একানোর; তিন মিঞ্ছে; বামন ভূত প্রমুখ। 

    আচ্ছা, মানুষ মরলে যদি ভূত হয়, তবে ভূত মরলেও কি মানুষ হয়?

    মানে ব্যাপারটা কি দ্বিমুখী পরিবর্তন? নাকি তাপ গতিবিদ্যার সূত্রের মতো একমুখী? যদিও ভূতেদের বাচ্চাদের দিনের বেলায় বেরোতে মানা করা হয়। বলা হয় খবরদার! একদম বেরোবি না। মানুষ ধরে নিয়ে যেতে পারে!

    জানা যায় যে একেবারে প্রথম দিকে বাংলার লোককাহিনী ও রূপকথার একমাত্র উপাদান ছিল ভূত। শ্রী লাল বিহারী দে বাংলার অনেক লোককাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে প্রথম প্রকাশিত তাঁর ‘ফোক-টেল্‌স অফ বেঙ্গল’ বইটিতে ভূতুড়ে এবং অতিপ্রাকৃত প্রানীদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক আশ্চর্যজনক কাহিনী এতে রয়েছে।

    দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার মহাশয়ের সম্পাদিত ‘ঠাকুমার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’, ‘ঠান দিদির থলে’ এবং ‘দাদামশাইয়ের থলে’ ইত্যাদিতেও বিভিন্ন ধরণের অতিপ্রাকৃত সত্তা খুঁজে পাওয়া যায়।

    তবে আমার কেন জানি মনে হয় যে কাহিনীগুলি আসলে সাঙ্কেতিক ভাবে লেখা। ইংরেজদের রাজত্বকালের সময়ে সেগুলি প্রকাশিত হলেও সেখানে গ্রামবাংলার কোনও কোনও অঞ্চলের দুঃখ দুর্দশা অত্যাচার অনাচার ইত্যাদি যেন বিশেষ সাঙ্কেতিক ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা আরও ভালো বলতে পারবেন।

    ‘লে লে লুল্লু!’ লুল্লু ভূতের গল্প অনেকেই পড়েছেন। এখন আবার কার্টুনও তৈরি হয়েছে তাকে নিয়ে।

    টি. এন. মুখার্জী রোড কোথায় কোথায় আছে জানা নেই, যদিও বালি-উত্তরপাড়ারটি হল তারকনাথ মুখার্জীর নামে।

    তবে আরেক টি. এন. মুখার্জী মানে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই লুল্লু ভূতের গল্পের লেখক। তিনি ছিলেন কলকাতার ভারতীয় যাদুঘরের কিউরেটর এবং ইংরেজি ও বাংলা – উভয় ভাষাতেই লেখালেখি করতেন। যাদুঘরের প্রদর্শনী নিয়ে ইয়োরোপের কিছু শহরেও ঘুরেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ মহাশয়।
     
    তা গল্পটি এইরকম। আমীরের বাটি দিল্লী শহরে। একদিন অন্ধকার রাত্রিতে নিজের স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য তিনি বললেন – ‘লে লুল্লু’! আমীর জানতেন যে লুল্লু হল একটি বাজে কথা; কিন্তু তিনি জানতেন না যে ঠিক সেই রাত্রে তার ছাদের আলসেতে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল স্বয়ং লুল্লু ভূত। সে চমকিত হয়ে শুনল যে আমীর তার পরমা সুন্দরী বউকে তাকে নিয়ে যেতে বলছে। ব্যাস। যেই বলা সেই কাজ। ‘চকিতের ন্যায়’ দুর্ভাগা রমণীকে লুল্লু আকাশপথে কোথায় যে উড়াইয়া লইয়া গেল, তার আর ঠিক নাই।
     
    তারপর বউয়ের খোঁজে গনৎকার, রোজা, ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণের সখা ভূত ইত্যাদির সাহায্যে আমীর জানতে পারল যে লুল্লু তার বউকে গেছে নিয়ে। তারপর একে একে এলেন ঘ্যাঁঘোঁ, নাকেশ্বরী, গোঁগোঁ। আমীর পৌঁচ্ছলেন ভীমতালে। সেখানে গিয়ে দেখা হল তার স্ত্রীর সঙ্গে। শুনলেন যে তাকে নাকি লুল্লু বিবাহ করবে।

    এদিকে লুল্লু হল নাকি সভ্য ভব্য নব্য ভূত। সবেমাত্র ভূতগিরি সে শুরু করেছিল। আর সে আমীরের বৌকে তোফা রেখেছে। কোনও কিছুর নাকি অভাব রাখে নি। কিন্তু এতো সবের পর কি ভূতের সঙ্গে কোনও পরমা সুন্দরী রমণী ঘর করতে পারে?

    তাই বর বউ মিলে লুল্লুকে চন্ডুর নেশা দিলেন ধরিয়ে। এদিকে লুল্লু একদিকে ‘সাবাং’ মাখছে আর অন্যদিকে দেদার চন্ডু টানছে। শেষে সেই চন্ডুর নেশার কাছে হার মেনে লুল্লু আমীরকে তার বউ সমেত ফিরিয়ে দিল আর নিজে আফিম থেকে শুরু করে চন্ডু ইত্যাদি মহানন্দে টানতে থাকল।

    নেশার কী মহিমা বাওবা!

    একদিকে চন্ডুর মোহিনী শক্তিতে লুল্লু সমস্ত নারীকে মা মা বলে ডাকতে শুরু করে দিল। অপরদিকে সঙ্গে আবার দুধ-ঘি খেয়ে তার গায়ের রঙ ফর্সা হয়ে গেছে। কিন্তু তাকে দিয়ে কাজও করাতে হবে; বসিয়ে বসিয়ে আর ক’দিন? এদিকে যেহেতু গোঁগোঁর পরামর্শে আমীর তার স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছিলেন তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাকে কাগজের সম্পাদক করে দিলেন। সঙ্গে রইলো চন্ডুখোর লুল্লু! আর সেই কাগজের খ্যাতি দেশে বিদেশে পড়ল ছড়িয়ে!

    এটা কোন কাগজ রে বাবা! আমাদের কলেজ স্ট্রীটে?  পাঠকরা কেউ অনুধাবন করতে পারেন?           
     
    অন্যদিকে, ‘ভূশন্ডির মাঠে’ গল্পে পরশুরাম আমাদের বাতলে দিলেন যে কারা ভূত হয় আর কারা হয় না। আবার ভূত হয়েই বা তারপর কী কী ঘটে।  

    তিনি লিখছেন – ‘মানুষ মরলে ভূত হয়, সেটা সকলেই শুনেছেন, কিন্তু এই থিয়োরির সঙ্গে স্বর্গ, নরক, পূনর্জন্ম – খাপ খায় কী করে? প্রকৃত তথ্য হল এই – নাস্তিকদের আত্মা নেই। তারা মরলে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসে পরিণত হন। সাহেবদের মধ্যে যারা আস্তিক তাদের আত্মা আছে বটে, কিন্তু পূনর্জন্ম নেই। তারা মৃত্যুর পর ভূত হয়ে প্রথমত একটি বড় ওয়েটিং রুমে জমায়েত হন। সেখানে কল্পবাসের পর তাদের শেষ বিচার হয়। রায় বের হলে কিছু ভূত অনন্ত স্বর্গে, বাকি সকলে অনন্ত নরকে আশ্রয় লাভ করেন। সাহেবরা জীবদ্দশায় যে স্বাধীনতা ভোগ করেন ভূতাবস্থায় সেটা অনেকটা কমে যায়। বিলিতি প্রেতাত্মা বিনা পাসে ওয়েটিং রুম ছাড়তে পারেন। যারা প্ল্যানচেট দেখেছেন তারা জানেন বিলিতি ভূত নামানো কীরকম কঠিন কাজ!’

    তিনি আরও লিখছেন – ‘হিন্দুর জন্য আলাদা ব্যবস্থা কারণ আমরা পূনর্জন্ম, স্বর্গ, নরক, কর্মফল তথা ঋষিকেশ নির্বাণ মুক্তি সবই মানি। হিন্দু মরলে প্রথমে ভূত হয় এবং যেখানে সেখানে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারে। দরকার পড়লে ইহলোকের সঙ্গে কারবার করতে পারে। এটা কিন্তু মস্ত বড় সুবিধে। কিন্তু এই অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী নয়। কেউ কেউ দু’চারদিন পরেই পূনর্জন্ম লাভ করে, কেউবা দশ কুড়ি বছর পর, কেউবা দু’তিন শতাব্দী পরে। ভূতদের মাঝেমাঝে চেঞ্জের জন্য স্বর্গ ও নরকে পাঠানো হয়। এটা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। কারণ স্বর্গে খুব ফুর্তিতে থাকা যায় এবং নরকে গেলে পাপ ক্ষয় হয়; সুক্ষ্ণ শরীর বেশ হালকা ঝরঝরে হয়। তাছাড়া সেখানে অনেক ভাল ভাল লোকের সঙ্গে দেখা হবারও সুবিধে আছে’।     

    ভূত নিয়ে সাহিত্যে ও সিনেমায় অনেক কিছু হলেও যারা এদেশে সর্বপ্রথম ভূতেদের থেকে বিপুল অর্থ রোজগার করলেন মানে ভূত কলে পেষাই করে দেদার ইনকাম করলেন, তারা হলেন রামসে ব্রাদার্স!

    কঙ্কাল ফংকাল, অতৃপ্ত আত্মা ফাত্মা, মনস্টার, ফন্সটার মানে যেখানে যত ভূত ছিল সব ঝেঁটিয়ে এনে জড় করলেন হিন্দি সিনেমায়। ভূত পেষাই করে কীভাবে টাকা রোজগার করা যায় সেটা এই সাত ভাই আর দুই চম্পা খুব ভালো ভাবেই জানতেন। 

    গুপী বাঘা শুধু ভূতের খাবারই খেতেন; কিন্তু এই রামসে ভাইয়েরা এইসব হড়হড়ে যৌনতা মিশ্রিত ভূতের ছবি খুব কম টাকায় বানিয়ে ভাসিয়ে দিলেন প্রেক্ষাগৃহ থেকে প্রেক্ষাগৃহে। আর আয় করতে থাকলেন টাকার পর টাকা। অনেকটা ঠিক আই.পি.এল. এর মতো।

    ‘দো গজ জমিন কে নীচে’ এর সাফল্যের পর গেস্ট হাউজ, ভীরানা, পুরানা মন্দির, পুরানি হাভেলি, বন্ধ দরওয়াজা, সাবুত… মানে দর্শককে ভূত আর যৌনতার ককটেল আর মকটেলে দিলেন বুঁদ করে। একটা ভৌতিকানন্দময় চনমনে ভাব বিরাজ করতে থাকল দর্শকদের রক্তমজ্জায়। তারা হামাগুড়ি ও মামাগুড়ি দিয়ে যুগপৎ ভয় ও আনন্দে অবগাহন করতে করতে পরম প্রশান্তি লাভ করতে থাকলেন।  

    ভীরানার সেই ‘জ্যাসমিন’কে মনে আছে? দাউদ (জ্যান্ত ভূত) নাকি তাকে বিবাহ (!) করতে চাওয়ায় তিনি মুম্বাইয়ের সদ্যপ্রাপ্ত খ্যাতি ছেড়ে সটান পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। মৃত ভূত তবু ভালো, কিন্ত্য জ্যান্ত ভূতের ফ্যাচাং অনেক।    

    উপরোক্ত সিনেমাগুলিতে গল্প বলতে ছিল চূড়ান্ত গাঁজাখুড়ি সব ঘটনা কারণ এমনিতেই ভৌতিক জগত পুরোপুরি একটি অবাস্তব জগত, সেখানে বাস্তব জগতের কোনও নিয়মই টেঁকে না আর যখন তখন তেনারা উদয় হন কীনা। ফলে খানিকটা বিদেশ থেকে আমদানি করে তাকে খানিকটা দেশীয় গ্রাম্য সংস্কার ব্লেন্ড করে পরিবেশিত করতে থাকলেন ততোধিক ‘ভূত বুভুক্ষু’ জনতার দরবারে। জানি না এরা সত্যজিত রায়ের ‘মণিহারা’ সিনেমাটি দেখেছিলেন কী না?

    তবে ভারতীয় বাজারে ভূতের সিনেমার, তা যতই অবাস্তব এবং ওচাটে হোক না কেন, যে একটা বাজার রয়েছে, সেটা অনুধাবন করবার জন্য তাঁদেরকে অন্তত কোনও ‘অর্থভৌতিক’ (অর্থনৈতিক নয়) পুরস্কার দেওয়া উচিৎ ছিল।    

    জানি না সেইসব সিনেমার ভূতেরা আবার এই সাত রামসে ভাইদের কাছ থেকে কাটমানি বা চাঁদা বা ইলেক্টোরাল বন্ড বাবদ টাকা চাইতে আসতেন কী না!    

    পরে অবশ্য মুম্বাই সিনেমার জগতে ‘ভাটেরা’ আবার এইসব শুরু করেছিলেন। সেখানে আবার ভূতেরা রেপ ও শ্লীলতাহানি করে থাকেন!

    আমাদের কলকাতায় অনীকবাবু অনেকদিন পর উপহার দিলেন ভূতের ভবিষ্যৎ আর ভবিষ্যতের ভূত। আমরা দু’চোখ ভরে দেখলাম। যদিও শোনা গেছিল যে আবার তাঁর দ্বিতীয় সিনেমাটি নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ভূতেদের নাকি যৎপরোনাস্তি অস্বস্তি হয়েছিল!
     
    আবার অধুনা ‘স্ত্রী’ নামক ভৌতিক বার্তামূলক ছবিতে সমাজ সংস্কারের একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। আসলে ভূত ব্যাপারটা মানুষ খুব খায় আর ভূতেদের মাধ্যমে যদি লোকশিক্ষে হয় (!) তাহলে শুধু ভূত (অতীত) কেন, বর্তমান আর ভবিষ্যতেরও তাতে আপত্তি থাকবার বোধহয় কথা নয়!  কী বলেন?  

    তবে হিন্দি ‘ভুল্ভুলাইয়া’ সিনেমাতে ভূতে পাওয়া ব্যাপারটা যে একটা সাইকোলজিক্যাল সমস্যা সেটা দেখানোর চেষ্টা করা হয় ভূতজর্জর পেঁচোকর্দমাক্ত সমাজকে চেতনায়িত করবার জন্য।  

    গত সরকারের রাজত্বে ‘বিজ্ঞান’ নিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রাজ্যের নানান জায়গায় গিয়ে গিয়ে যদিও বা ভূত এবং বুজরুকি ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবুও কোন এক তন্ত্রমন্ত্র বলে ভূতেরা আবার এই সরকারের আমলে বেশ জেঁকে বসলেন কিন্তু।
     
    একদল আবার এটাকে প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি বলে হাতে কীসব যন্তর টন্তর নিয়ে ‘ভুতিং রেডিয়েশন’ মাপতে এখানে সেখানে যেতে থাকলেন। এদেরকে আমার কেন জানিনা ‘হকিং রেডিয়েশন’ মাপবার জন্য ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজেনে পাঠাতে ইচ্ছে করে। ইউ টিউবের দৌলতে তাদের সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুচমুচে উপাখ্যান পৌচ্ছে গেল আমাদের চোখ ও কানের দোরগোড়ায়। আর আমরা সেসব হুলিয়ে দেখে বা শুনে বললাম – কী? বিশ্বাস হল তো?

    কেউ কেউ আবার হাত্তা দিয়ে ঘুড়ির মাঞ্জা সুতো পেড়ে নেওয়ার মতো হাত্তা মেরে আত্মা নামাতে থাকলেন। সরাসরি ভূতের সঙ্গে টক শো বা ঝাল শো করে করে ভেদ করলেন জটিল সব রোমহর্ষক রহস্য।  

    অনেক লেখকের মধ্যে ছিল একই সঙ্গে যৌক্তিকতা ও ভৌক্তিকতার এক ঘুটঘুটেস্পন্দিত ছমছমেমন্ডিত মিশেল! যেমন, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। তাঁর সেই সময়ে বা তারও আগে পরে বহু বছর ধরে সন্ধ্যাবেলায় বাড়িতে বাড়িতে মুড়ি, আলুর চপ, বেগুনির সঙ্গে বসে যেত ভূত নামানোর আসর। বাংলা মিডিয়াম ইংলিশ মিডিয়ামের থেকেও তখন আলোচিত হত ভূত নামানোর মিডিয়ামদের নিয়ে! ভয়ানক কদর ছিল তাদের। আমাদের কলকেতার বাবুরাও কিন্তু বাদ যেতেন না।   

    তা এই ভূত নিয়েই পাড়ার রোয়াকে একদিন শুরু হয়ে গেল বাকযুদ্ধ। প্রসঙ্গ – এত মানুষ এল কোথা থেকে?
     
    তাতে ব্রজদা গম্ভীরভাবে বললেন, “যে আদিতে যে সমস্ত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ এবং বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীরা ছিল, তারা প্রথমে মরে গিয়ে ভূত হল। তারপর সেই ভূত আবার মরে গিয়ে জমাট বেঁধে মানুষ হল”।

    “তোমার মুন্ডু”, ঘনাদা বলে উঠল। তারপর বলল, “ভূতেদের জগতেও অভিযোজন হয়েছে; অভিব্যাক্তি হয়েছে। যেভাবে পৃথিবীতে এককোষী অ্যামিবা ইত্যাদি থেকে মানুষ এসেছে, ঠিক সেইভাবে এককোষী ভূত থেকে আজকের এই বহুকোষী ভূত এসেছে। বুঝলে?”।

    “কিন্তু সমস্যার তো কোনও সমাধান হল না…”, বলেই জুনিয়ার সুপারভাইজার তাকালেন সিনিয়ারের দিকে।

    সিনিয়ার তখন বাজার করে এসে সবে খবরের কাগজটা দেখছিলেন। আড়চোখে সবাইকে মেপে নিয়ে বললেন, “শুনুন। ভূত মানে হল অতীত। আপনার ছোটবেলার যে ছবি, ওটাই হল আপনার ভূত। আর ভূত হল কালের সঙ্গে সম্পর্কিত একটা ব্যাপার। ফলে হকিং যেমন ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ লিখে গেছেন, আমিও তেমনি লিখছি…”

    “কী?”

    “ভূতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস”। পাশের দোকান থেকে দিয়ে যাওয়া চায়ের ভাড়টা নিয়ে তাতে একটা গভীর চুমুক মেরে আবার বলতে থাকলেন সিনিয়ার সুপারভাইজার, “সেখানে, ইয়ে মানে তাতে ভূতের ছবি, তাদের বিবর্তনের ইতিহাস, প্রাগৈতিহাসিক ভূত, পৌরাণিক ভূত, ঐতিহাসিক ভূত, ডাইনোসর ভূত – সব থাকবে। সামনের ‘ভূতেদের বইমেলাতে’ বেরোবে…! তারপর ভূতের টাইট্রেশন; নাইট্রেশন… ভুতিং রেডিয়েশন! ওসব মেলা ব্যাপার বুইলে?”

    শুনে আমরা তো থ। খালি ব্রজদা প্যাঁক দিয়ে হাসতে থাকলেন। বললেন, “তাহলেও ভূত আর মানুষের সংখ্যার ব্যাপারটা কিন্তু মিটল না”। 

    সেটা শুনে খানিকটা রুষ্ট হয়ে সিনিয়ার সুপারভাইজার বললেন, “বটে? যে বাক্যটা দিয়ে বইটা শুরু করেছি, সেটা শুনবেন?”

    “হ্যাঁ”।

    “বেশ। সেটা হল – ‘সারা বিশ্বের, হ্যাঁ, সারা বিশ্বের মোট ভূত আর অদ্ভুতদের (সমস্ত জীবিত উদ্ভিদ-প্রাণী) মিলিত সংখ্যা হল ধ্রুবক’। অনেকটা সেই ভর আর শক্তির নিত্যতা সূত্রের মতো। আর এটাই হল আমার আবিষ্কৃত ‘ভূতের নিত্যতা সূত্র’; বুইলেন?”   

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | ৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন