

খেলা
অযথা বিকেলে খেলা ফেলে
চলে যায় দূরে, খামারের সীমানা আকুল
কোলাহল এখনো প্রবল
বিকেলে খোলামকুচি হাওয়া
রাধিকা চলেছে দূরে রাধিকার পথভরা ভুল
বিকেলের খেলা ফেলে, স্নান শেষে, পাড়ায় পাড়ায়
রাধিকা চলেছে দুরে, দোলখেলা সেরে
রাধাচূড়া পিচ ঢালা পথে
অযথা রেখেছে এতো ফুল।
এই কবিতাটা কার লেখা জানেন? বলছি, শুনুন।
তার আগে বলি যে সে এক দিন ছিল যখন, প্রিয় কবিতা প্রিয় বন্ধুকে পাঠাতাম অহরহ। সেই এক হাতে বইয়ের পাতা, স্পাইনের উপর আঙুল রেখে সন্তর্পণে আরেক হাতের দ্রুত লিখে নেওয়া। “পড়েছিস? পড়িস! পড়লি?” … কখনো-সখনো এস-এম-এস - দুই আঙুলের সুচারু ট্র্যাপিজ। পাঠাই, উত্তর আসে, আসে না বা, ভুলে যাই, উঠে পড়ি, কোনোদিন উঠি না, কিছু দেরি হয়ে যায়। কবিতা পুড়িয়ে দিলে কী হয়? পাথর?
হ্যাঁ, উত্তর আসতো সেই এক পুরনো গল্পদের দিনকালে, আমাদের ফোন ছিলো না পকেটে, তবু গুচ্ছ কবিতা ও মেঘ জমে ছিলো মাথায়, তাদের উড়িয়ে দিতে পারতাম কবুতরের মত যদৃচ্ছ, খামখেয়ালি, সুউচ্চ মিনার থেকে। “পরিপাটি বিষাদের টুপি” পরে তারা উড়ে যেতো অলৌকিক ঠিকানায়। মনে পড়ে সেই আমাদের ক্ষুদে ফোন, রোমান হরফে ফুটে ওঠা কিছু “অপয়া বিষাদ”, কিছু মন উচাটন, আর ঘর-বার, ঘর-বার। পাড়ার ক্লাবে-ক্লাবে ক্যারম বোর্ডের উপর ঠিক তখন জ্বলে ওঠে হলুদ আলো।
মনে পড়ে, পড়ে না? আচ্ছা, আরেকটা কবিতা পড়ুন তাহলে।
পাড়ার গল্প
গল্পগুলি পুরনো আর ঘষা
কাঁচের মত, একটু দেখা যায়
আর বাকিটা কি'রম কারিকুরি
সময় গেছে কষ্টনদীর ঢেউয়ে
পাড়ার মোড়ে জোনাক জ্বলে নেবে
পাড়ার মোড় আলোয় আলোময়
গল্পগুলি হলুদ আলো মোড়া
নিওনবাতি নেহাৎ অপচয়
উঠোন জুড়ে জোছনা ঢলোঢলো
লেবুর ফুলে আদর অভিমান
জোছনা ঢলে শহরে আর গাঁয়ে
স্মৃতির ঘরে ধূলার পরিমান
চিকন শ্যাম নারিকেলের পাতা
হাওয়ায় দোলে ঝাঁকিয়ে দিয়ে সুখ
হাওয়ার ঝোঁকে পালক মায়াঘেরা
পড়ার ঘর, আয়না ঘেরা মুখ
তক্তপোশে মাদুর, স্বরলিপি
দরজা ঘিরে অল্প আয়োজন
জীবন কাটে বিকাল গুলি গুণে
রাধার মনে কষ্টনদী, ঢেউ।
—
পল ভ্যালেরি না মালার্ম না মেরি রুয়েফল কে যেন সেই লিখেছিলেন যে কোনো কবিতাই আসলে শেষ হয় না, কোনো এক সময় তাদের হাত ছেড়ে চলে আসি আমরা, ‘দে আর মিয়ারলি অ্যাবানডনড।’ অর্থাৎ, জীবনে যেমন ঠিক যতগুলো শুরুয়াৎ, ততগুলিই শেষ, কবিতার পৃথিবীতে শুরুয়াৎ-ই শুধু, শেষ কটিই বা? কোথায় যায় সেইসব কবিতারা? সব প্রেম কী অব্যয় হয়, সব ক্রিয়াপদ অসমাপিকা? জানি না। এর উত্তর এই ছোট্ট কবিতার বইটিতে অন্তত নেই। কী আছে তাহলে?
আছে একটা সেপিয়া রঙের ছবি, যেন চেনা বায়োস্কোপ। একটানা কবিতাগুলি পড়তে হবে বিকেলে, তারপর বুকের উপর আর্ধেক ভাঁজ করে বইটি রেখে চোখ বুজলেই দেখা যাবে সেই অদ্ভুত ছবি। সেই ছবি আমার চেনা, তবু সেই ছবি যেন দূরে সরে যায়, ঘষা কাচের ওপারে। প্রত্যেকটি শব্দ যেন দাঁড় বেয়ে যেতে চেষ্টা করছে সেই ছবির কাছে, অথচ, প্রত্যেকটি শব্দই অবধারিত ভাবেই তাকে নিয়ে চলেছে আরও দূরে। স্রোত তাকে অপর করেছে। শহর থেকে, নদী থেকে, প্রায়ান্ধকার বাড়ি থেকে। সে চলেছে সেখানে, যেখানে তাকে কেউ চিঠি লিখবে না প্রত্যহ।
কলকাতা
কলকাতা তো অন্য লোকের।
আমার শহর গুটিশুটি লোডশেডিঙের চাদর মোড়া রিক্সা প্রধান
রেলগাড়িটা দিনের মধ্যে দুয়েকবারই ঘাই মেরে যায়
উপকন্ঠে। আবোলতাবোল দালানকোঠা মঠ্মসজিদ মর্চে পড়া কামান
এদিক ওদিক সবুজ সবুজ রাত্রিবেলা বেজায় রাত্রি।
লম্ফ জ্বেলে গ্রামীণ লোকের হাট বসে ফাঁক ফোকর খুঁজে
মাংসের চাট, ঝাল ছুঁয়ে যায় ব্রহ্মতালু।
বাড়ি ফিরছে ট্রাফিক পুলিশ, অন্ধকারে
পানের দোকান। গঙ্গা কিংবা পদ্মা নদী
এই দিকে নেই। বুঢ়া লুঈয়ের আশীর্বাদী।
বাঁধের বাঁধন এদিক ওদিক। ঠিক ধরেছো, রবীন্দ্রনাথ
শহরজোড়া একের থেকে অন্যরকম সকল ঠাকুর
মুর্তি গড়ার কারিগরে খেয়াল মত, শালপ্রাংশু
ততটা নন, বেঁটেখাটো, মানুষ যেমন।
শহর বাড়ছে। উপকন্ঠে, কিনার ঘেঁষে।
উড়ালসেতু, ঝকঝকে মল, বাড়ছে এবং
অপর হচ্ছে।
কলকাতা তো তোমার শহর।
আমার কিসে
উচ্চারণের আড়ষ্টতা, কফি হাউস।
একটু তবু কিনার ঘেঁষে বসি আরকি
ঠেলেঠুলে সাইড দিন না, এই যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে।
আস্তিনে তার গোপন কথা। এই শহরটা আমার নয় তো।
তোমার শহর। একটু আমি বসে পড়ছি
আড়ষ্টতা চাপছি আরকি,
উপকন্ঠে ঘাই মারছে শহর থেকে শহর বদল।
ফিরছে না কেউ বাড়ির দিকে।
আলো জ্বলছে সন্ধ্যেবেলা।
কোনো এক বিখ্যাত কবির তত্ত্ব ছিলো যে কোনো কোনো ভাষায় নাকি মানুষ সারা জীবন ধরে যা কিছু বলে তার সবটাই একটা, মাত্র একটাই বাক্য - তার প্রথম অস্ফুট ডাক থেকে শেষ পারানির কড়ি - মাঝের সমস্ত যতিচিহ্ন অজস্র সেমিকোলন। একটি মানুষ, সেই তত্ত্ব অনুসারে, আসলে একটিই বাক্য - হয়তো একটি দীর্ঘ কবিতা, যা সে সারা জীবন ধরে রচনা করে চলেছে নিজের অজ্ঞাতসারে।
আমি তত্ত্ব বুঝি না, আমি বুঝি সায়নদার কবিতা আমার কাছে কী? এই কবিতাগুলি সূচিভেদ্য অন্ধকার জঙ্গলের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কানে আসা বহুদূরের কোনো এক ক্ষীণতনু মুখচোরা নদীটির স্বর। আমি এই অন্ধকার বন হাতড়ে হাতড়ে, ক্ষত ও ক্ষয় নিয়ে শুধুই পৌঁছতে চেষ্টা করছি সেই নদীটির দিকে। যতোই যাই ততো অন্ধকার ঘন হয়, তবু মনে হয় এইসব শীতের নীরবতা ঠেলে একদিন সেই একলা তীরে দু-দণ্ড বসতে পারলে বড্ড শান্তি পাই আমি।

সায়নদার, হ্যাঁ, এই কবিতাগুলি সায়নদার। সায়ন কর ভৌমিকের। বইয়ের নাম আপাতত "রাধিকা ও আর্শোলা"। বইটি বেরুবে বইমেলায়। গুরুচণ্ডা৯-র তরফে। আমার কাছে অবশ্য হুতোদা। হুতোদার বই বেরুচ্ছে, খুব মজা।
এই লেখাটা আসলে দত্তকের ডাক, তবু, এ আমার প্রিয় কবিতার বই। একটু অভিমান লেগে আছে আস্তিনে - কিনে ঠকবেন না, উপকৃত হবেন, না চুল পড়া অথবা অগ্নিমান্দ্য সেরে যাবে অথবা বুদ্ধি খুলে যাবে এইসব কিছুই বলতে আমি অপারগ। তবে, বলতে পারি যে এই চটি কবিতার বইটিতে একটি লুকোনো জাদুকরী বীজ আছে কোথাও, একদিন সে আলোর দিকে মাথা তুলে ডালপালা মেলে দাঁড়াবেই এইটুকু প্রতিশ্রুতি আমি দিতেই পারি।
—
পুনশ্চ – গুরুর এই বইপ্রকাশের পদ্ধতিটা জানেন, তাঁরা এ-ও নিশ্চয়ই জানেন যে, গুরুর বই বেরোয় সমবায় পদ্ধতিতে। যাঁরা কোনো বই পছন্দ করেন, চান যে বইটি প্রকাশিত হোক, তাঁরা বইয়ের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অর্থভার গ্রহণ করেন। আমরা যাকে বলি দত্তক। এই বইটি যদি কেউ দত্তক নিতে চান, আংশিক বা সম্পূর্ণ, জানাবেন guruchandali@gmail.com এ মেল করে।
aranya | 2601:84:4600:5410:b8d6:5e3c:f459:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:৪৮736361
r2h | 134.238.***.*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:৩২736362
kk | 2607:fb91:4c21:664d:985c:a917:2ace:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৪০736363
r2h | 134.238.***.*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৪৬736364
kk | 2607:fb91:4c21:664d:985c:a917:2ace:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৫২736365
ইমন ভাষা | 2401:4900:733e:a5c6:246b:14ff:fea5:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৪৮736380
কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৮736382