

যে সব দিনে ঘুম থেকে উঠে রানীর ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি ভেসে আসত - ফ্রকের বেল্ট ফরফরিয়ে উড়ে যাওয়া জীবন, যে জীবনটা এই তেরোতলার জানালা থেকে দেখা পৃথিবীর মত সত্যি কিন্তু অবিশ্বাস্য, যে সব দিনে রানীর আনন্দ দুঃখ সব একই সঙ্গে হত, হাসিকান্না সব এক সঙ্গেই পেত, সেই সব দিনে রানী নিশ্চিত জানতেন হীরেমন পাখি আসবে। সে পাখির মন্ত্রণায় মনের জোর পেতে পেতে ঘন ঘন বিদেশ যাওয়া রাজামশাইয়ের কাছে রানী একদিন আবদার করে বসলেন - এ রুম অফ মাই ওন। তারপরের দিন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বায়না। তারপর অনিবার্য সংঘাত এবং রাজামশাইয়েকে বাই বাই বলে রানীর একা ভাড়াবাড়িতে উঠে আসা। ওয়ান রুম, ওয়ান কিচেন, ওয়ান বাথরুম। সে বাথরুমের কল থেকে রাতভর টপ টপ জল পড়ে। সে ঘরের চুনকাম করা খরখরে দেওয়ালে আয়না আর ক্যালেন্ডারের মাঝে একটাই আর্টওয়ার্ক। রানীর আঁকা। আকাশি আকাশ জুড়ে একটা রংচটা, ডানাভাঙা হতকুচ্ছিত পাখি উড়ছে।
এতদূর পড়ে কি আপনার রানিকে খুব চেনা চেনা লাগছে?
রানির মতই যোগমায়াও ছোট থেকেই পাখি হয়ে যেতে পারতেন, যে কোনো রাস্তার গোলকধাঁধায় কখনো হারিয়ে যেতেন না। পৌরসভায় 'সরণী সংরক্ষণ ও সংযোজন' বিভাগে কাজ পেলেন। সেখানেও যোগমায়া সারাদিন ম্যাপ ঘাঁটতে ঘাঁটতে সহ কর্মচারীদের কাছে হয়ে উঠলেন জলজ্যান্ত, রক্তমাংসের গুগুল ম্যাপ। ডিপার্টমেন্ট ডিজিটাল হবার সার্কুলার এল। যোগমায়া টিকে গেলেন কারণ অ্যানালগ মানচিত্রের ঢিপি, রেজিস্টার ফেলে দেওয়ার মর্মে কোনো সার্কুলার এল না। ক্যাবিনেটের ধুলোয় যোগমায়া খুঁজে বার করলেন এক হারিয়ে যাওয়া রাস্তা - দস্তুরিখানা স্ট্রিট। রিটায়ার করার পর যোগমায়া হালদার সেখানে হারিয়ে গেলেন।
অথবা গার্লস স্কুলের দিদিমণির পদ থেকে রিটায়ার করার পর বিখ্যাত প্রবাসী অধ্যাপকের প্রাইভেট সেক্রেটারির কাজ করা সনকা সেন। অনিদ্রার সমস্যা তার কোনোদিন ছিল না। সনকা বিশ্বাস করতেন কেরামতিটা তার ঝকঝকে বিবেকের। এক ঘটনার পর তার চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল। ভোরের দিকে চোখ লেগে এলে শুরু হত স্বপ্নটা। যারা বলে স্বপ্ন সাদাকালো , ভুল বলে। কারণ সনকার স্বপ্নে শেষ নভেম্বরের বিকেল বিষণ্ণ নীল, মাঠ গাঢ় সবুজ, মাঠচেরা রাস্তার পিচ কুচকুচে কালো। সে কালোর ওপর দিয়ে সনকা হাঁটছেন...
অথবা পার্থদাকে বিয়ে করে বড়বাজারের বর্মন প্যালেসে আটকে যাওয়া মহুয়া আর তার পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো সই রুমেলা। একদিন মহুয়া অন্ধকার দেওয়ালে খুঁজে পায় আধখোলা দরজা , সেখান দিয়ে গেলে সিঁড়ি, বারান্দা পেরিয়ে লুকোনো সিংহাসন। লাল ভেলভেটের গদি, হাতল ও পায়ায় সিংহের থাবা, জোড়া সাপের মুকুট। মহুয়া বুঝতে পারে রোজ হারাতে হারাতে তাদের কোন জিনিসটা হারিয়ে গেছে। ভয়।
ফেসবুক বহির্ভূত নেটদুনিয়ায় বাংলা লেখেন এবং পড়েন, এরকম অনেকেই কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার পনেরো ষোলো বছরের পুরোনো 'অবান্তর' ব্লগের মাধ্যমে পরিচিত। সে ব্লগের বাইরেও নানা সময়ে তার লেখা গল্পের সঙ্গে যদি আপনার ইতিমধ্যেই পরিচিতি না হয়ে থাকে তাহলে ৯ টি গল্পের এই সংকলনটি আপনার জন্য, যেখানে হীরেমন, জেঠিমা বা চিলেকোঠার উন্মাদিনীর মত সমস্ত চেঞ্জ এজেন্টদের মাধ্যমে তীর্যক কলমে কুন্তলা লিখে রেখেছেন নারীবাদের পুরুষকার।
বই: একা মেয়ে বেঁকা মেয়ে
লেখক: কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক: গুরুচণ্ডা৯
প্রকাশ: ২০২৬
প্রচ্ছদ: রমিত চট্টোপাধ্যায়
যাঁরা গুরুর বইপ্রকাশের পদ্ধতিটা জানেন, তাঁরা অবগত আছেন, যে, গুরুর বই বেরোয় সমবায় পদ্ধতিতে। যাঁরা কোনো বই পছন্দ করেন, চান যে বইটি প্রকাশিত হোক, তাঁরা বইয়ের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অর্থভার গ্রহণ করেন। আমরা যাকে বলি 'দত্তক'। এই বইটি যদি কেউ দত্তক নিতে চান, আংশিক বা সম্পূর্ণ, জানাবেন। এই লেখার নিচে। অথবা guruchandali@gmail.com -তে ইমেল করে।
দত্তক প্রসঙ্গে - কী ও কেন >> (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=28892)