

ব্যাঙ্গালোরে স্নাতক কলেজ পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনো শেষ করে গৌরী লঙ্কেশ দিল্লীতে চলে গেছিলেন স্নাতকোত্তর করতে, তারপর সেখানেই ইংরেজি ভাষার সাংবাদিক হিসেবে থেকে যান অনেকদিন। ২০০০ সালে তার বাবা, কন্নড় ভাষার লেখক পি লঙ্কেশের মৃত্যুর পর ব্যাঙ্গালোরে ফিরে এসে বাবার সম্পাদনা করা 'লঙ্কেশ পত্রিকে'র হাল ধরেন। কন্নড় ভাষার ওপর সেরকম দখল না থাকা সত্ত্বেও গৌরী জেদ এবং আত্মবিশ্বাস থেকে ধীরে ধীরে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে তিন বছরের মধ্যে হয়ে উঠলেন কর্ণাটকের দলিত, নারী এবং বাম আন্দোলনের প্রকাশ্য স্বর। ২০০৫ সালে পাবাগড়ে কর্ণাটকের পুলিশ চৌকিতে মাওবাদী আক্রমণের কারণে ভাইয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ায় আলাদাভাবে শুরু করলেন 'গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকে'। ২০০৭ এ বিজেপি কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসার পর তার পত্রিকা হয়ে দাঁড়াল উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতিরোধের মঞ্চ। সঙ্ঘ পরিবারের নির্লজ্জ শক্তি প্রদর্শন, হুমকিকে তিনি ভয় পেতেন না। ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ গৌরী লঙ্কেশ নিজের বাড়ির সামনে আততায়ীর গুলিতে খুন হন। এই হত্যার প্রতিবাদে 'আমি গৌরী' ব্যাজ বুকে লাগিয়ে পঁচিশ হাজার মানুষের মিছিল শহরের রাস্তায় নেমে আসে। কর্ণাটকের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের এসআইটি সতেরোজনকে গ্রেফতার করে, যারা সবাই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।
সোমনাথ গুহের এই বইটি সতেরো বছর ধরে নিজের পত্রিকায় কন্নড় এবং ব্যাঙ্গালোর মিররে ইংরেজি ভাষায় লেখা গৌরীর কিছু নির্বাচিত রিপোর্টাজ এবং নিবন্ধের বাংলা অনুবাদের সংকলন। গৌরী ছুঁয়ে গেছেন গুজরাট দাঙ্গা, বাবাবুদানগিরি বিতর্ক, জাস্টিস অজিত প্রকাশ শাহ, সাভানুর শহরে দলিত মেথর সম্প্রদায়ের আন্দোলন, আর্সেলর মিত্তলের বিরুদ্ধে দয়ামণি বার্লা, বাসবান্না প্রবর্তিত লিঙ্গায়েত ধর্মের ভুলে যাওয়া সাম্যবাদ, দলিত কবি হুচ্ছাঙ্গি প্রসাদের ওপর হিন্দু জাগরণ ভেদিকের আক্রমণ, কর্ণাটকে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলন, রোহিত ভেমুলা, জৈন মুনি তরুণ সাগর, বাবার সমসাময়িক ইউ আর অনন্তমূর্তি আর এম এম কলবুর্গির মত কন্নড় লেখকদের ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ। এছাড়াও এই বইতে যুক্ত হয়েছে গৌরীকে নিয়ে তার বোন কবিতা লঙ্কেশ এবং মা ইন্দিরা লঙ্কেশের স্মৃতিচারণা, ভুয়ো খবরের স্রোত নিয়ে লেখা গৌরীর শেষ সম্পাদকীয়।