এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  ইতিহাস

  • একাত্তর; আবার ফিরে দেখা

    দীপ
    আলোচনা | ইতিহাস | ২১ নভেম্বর ২০২৫ | ৩১ বার পঠিত
  • প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ১৯৭১, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অগণিত শরণার্থীর ইতিহাস।
    এই ইতিহাস আমরা যেন ভুলে না যাই!
     
    ফিরে দেখা একাত্তর
     
    "সময়টা জুন মাসের মাঝামাঝি। সাংবাদিক জন সার গিয়েছেন করিমপুরে। বৈষ্ণব ভক্তিবাদের প্রবক্তা চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের এই গ্রামটি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে। এখানে রাস্তা দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার শিকার হয়ে এরা হারিয়েছেন এদের স্বজন, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ। ধারাবাহিক মৃত্যুর তাড়া খেয়ে এইসব ভয়ার্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে জন্য ভারতে ছুটে আসছে। সরাসরি গুলির হাত থেকে ঈশ্বরের দয়ায় এরা বেঁচে এসেছে। কিন্তু নতুন করে পড়েছে নতুন নতুন মৃত্যুর ফাঁদে। এদের পিছনে মৃত্যু। সামনে মৃত্যু। বায়ে মৃত্যু। ডানে মৃত্যু। সর্বত্রই মৃত্যুর ভয়ঙ্কর থাবা এদের তাড়া করে ফিরছে।
     
    সাংবাদিক জন সার করিমপুরের রাস্তায় দেখতে পেলেন অসীম দৈর্ঘের লম্বা শরণার্থী মানুষের মিছিল। তাদের কারো কারো মুখে রুমাল গোজা। একটা লোকের কাছে তিনি গেলেন। কোনোভাবে রুমালটি মুখ থেকে সরিয়ে লোকটি শুধু বলতে পারলেন, কলেরা। কলেরা। আর কিছু বলার নেই। পিছনে পাক সেনাদের গুলি। আর সঙ্গে কলেরা। সামনে অন্ধকার। কোথায় চলেছে তারা—কেউ জানে না। মৃত্যুকে সঙ্গী করে তবু তারা এগিয়ে চলেছে।
     
    করিমপুরের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটি চলে গেছে কোলকাতা বরাবর, তার বামদিকে শরণার্থী শিবির। এখানে আশ্রয় নিয়েছে ১৫০০০ মানুষ। এই শরণার্থী শিবিরে কলেরা নির্মমভাবে হানা দিয়েছে। ৭০০ জন ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে। বাকীরা শিবির ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পালাবে কোথায়? কলেরাও তাদের সঙ্গে চলেছে। খোলা জায়গায় পড়ে আছে মরা মানুষ।
     
    জন সার দেখতে পাচ্ছেন-- ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে এসেছে। তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ছিড়ে খুড়ে খাচ্ছে মরা মানুষের দেহ। তাদের চোখ চক চক করছে। কিন্তু মৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশী যে শকুনের খেয়ে শেষ করতে পারছে না। শকুনদেরও খাওয়ায় অরুচি এসে গেছে। মরা মানুষের গা থেকে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলেছে জামা কাপড়। তাদের অনেকের তখনো গা গরম। সবেমাত্র মরেছে। পথে ঘাটে নালা নর্দমায়—সর্বত্রই কলেরায় মরা মানুষ পড়ে আছে। জন সার দেখতে পেয়েছেন একটি শিশুর মৃতদেহ। শিশুটির গায়ে একটি শাড়ির অংশ পেঁচানো। তাঁর হতভাগী মা পেঁচিয়ে পুটুলি বানিয়েছে। ট্রাকের চলার সময় অসুস্থ শিশুটি মারা গেছে। চলন্ত ট্রাক থামেনি। মৃত ছেলের জন্য ট্রাক থামানো কোনো মানেই হয় না। আরও অনেক মৃতপ্রায় মানুষ এই ট্রাকেই ধুঁকছে। আগে পৌঁছাতে পারলে হয়তো কোনো হাসপাতাল পাওয়া যেতে পারে। তাদের সুযোগ মিলতে পারে চিকিৎসার। বেঁচেও যেতে পারে। এই আশায় সময় নষ্ট করতে কেউ চায় না। শিশুটির পুটুলী করা মৃতদেহটিকে ট্রাক থেকে রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে।
     
    একটি ওয়ান ডেকার বাসের ছবি তুলেছে জন সারের সঙ্গী ফটোগ্রাফার মার্ক গডফেরি। বাসটির হাতল ধরে ঝুলছে কয়েকজন হতভাগ্য লোক। আর ছাঁদে বসে আছে--সব মিলিয়ে জনা সত্তর জন। কেউ কেউ বমি করছে। কারো কারো মুখে রুমাল চাপা। কেউ কেউ রুমালের অভাবে হাতচাপা দিয়েছে। ছাঁদের মানুষের বমি জানালা দিয়ে বাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আর বাসের মধ্যের বমি জানালা দিয়ে বাইরে ছিটকে পড়ছে। পথে। ঘাটে। মাঠে। খালে। জলাশয়ে। হাটন্ত মানুষের গায়ে। বমির সঙ্গে জীবনবিনাশী কলেরার জীবাণু। এইসব হতভাগ্য মানুষের চোখ গর্তের মধ্যে ঢোকানো। আর তার মধ্যে জ্বল জ্বল আতঙ্ক। বাসভর্তি করে কলেরা চলেছে। বাইরে পড়ে আছে একটি মৃতদেহ।
     
    ‘এই সব মানুষ এত বেশী সংখ্যায় মরেছে যে আমরা গুণতে পারিনি। গোণা সম্ভব নয়।‘ একজন স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিক জন সারকে বলছেন, এরা জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে। তারা চলছে তো চলছেই। তীব্র রোদে হাঁটতে হাঁটতে তারা ক্লান্ত—অবসন্ন। তৃষ্ণার্ত হয়ে পথের পাশ থেকে আঁজলা ভরে কলেরাদুষ্ট পানি পান করছে। তারা এত দুর্বল হয়ে পড়ছে যে, আক্রান্ত হওয়ার পর একদিনও টিকতে পারছে না। মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়ছে।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন