এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • এই সময়ের আরভ ,আতিশীরা এবং স্নোপ্লাউ সিনড্রোম।

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২২ অক্টোবর ২০২৫ | ২১ বার পঠিত
  • এই সময়ের আরভ, আতিশীরা এবং স্নোপ্লাউ সিনড্রোম।
     
    এক সময় পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের খুব জনপ্রিয় একটা শ্লোগান ছিল – ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। ভারতবর্ষের বিপুল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে পরিবার সীমিতকরণে প্রোৎসাহিত করতেই তৈরি করা হয়েছিল এমন বাক্য বন্ধ। সেই সময় আমরা সবাই পেরিয়ে এসেছি অনেক অনেক কাল। কথা মেনে আমাদের শহরাঞ্চলের পরিবারগুলো এখন অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে – আড়াই জনের পরিবার। পরিবারতো ছোট হলো কিন্তু সুখ এলো কি? এই মুহূর্তে এমন প্রশ্ন‌ই বারংবার ঘুরে ফিরে সামনে আসছে নানান ঘটনার অনুষঙ্গে। 
     
    আসুন আমরা আজকে , দেশের উদীয়মান স্মার্ট সিটি গুরুগ্রাম থেকে ঘুরে আসি। সপ্তাহের একটা কাজের দিন। খানিক আগেই সূর্যদেব পাটে বসেছেন। সন্ধ্যা নামতেই শহরের পট রীতিমতো বদলে গেছে। আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে শহরের বাড়িঘর, দোকানপাট, রেস্তোরা, মাল্টিপ্লেক্স - সব কিছু। আকাশ ছোঁয়া সোসাইটি বিল্ডিংগুলোর আট তলার একটা ফ্ল্যাটে আমরা এখন নজর দেবো। এই ফ্ল্যাটটিতেই থাকে আরভ ও তার মা - বাবা। আরভের বয়স দশ। পড়াশোনার ব্যাপারে এখন‌ই বেশ আগ্রহী। এখনও কোনো টিউটর নেই। আরভের মা ই তার পড়াশোনার দেখভাল করেন। তিনি নিজেও উচ্চ শিক্ষিতা। আরভকে তিনি নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলতে চান। ছেলেকে নিয়ে কতো স্বপ্ন তাঁর!
     
    ব‌ই খাতা নিয়ে আরভ স্টাডি টেবিলে বসতেই আরভের মা পাশে এসে বসেন। আজকাল স্কুলে স্কুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সারাদিন স্কুলে কী পড়াশোনা হলো তার খবরাখবর এই গ্রুপ পেজ থেকেই পাওয়া যায়। আরভের মায়ের এতে ভারি সুবিধা হয়েছে। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেকেও বেশ আপ টু ডেট রাখতে পারেন। তিনি জানেন আজকাল এই প্রবল কম্পিটিশনের যুগে অভিভাবকদের সবসময় সচেতন থাকতে হয়, নাহলেই পিছিয়ে পড়তে হয়। বারবার হোয়াটসঅ্যাপ খুলে খুলে দেখতে থাকেন তিনি।
     
    আরভ খাতা খুলে হোম‌ওয়ার্কের কাজ শুরু করতে না করতেই তার মা খাতাটা একরকম ছিনিয়ে নেন। আরভের মা ততক্ষণে ইউ টিউব খুলে ফেলেছেন। “এখানে এতো সহজ সমাধান থাকতে খামোখা মাথা খাটিয়ে সময় নষ্ট করার দরকার কি আরভের?”- শর্টকাটে কাজ হাসিলের এই সহজ উপায়ের কথা ভেবে নিজের মনেই নিজে মুচকি হেসে ওঠেন তিনি। রোজ‌ এমনটাই করেন। এতে আরভের খাটনি অনেক কমে যায়। আরভের মা সবসময় লক্ষ রাখেন যাতে ছেলের সামান্য ‘তকলিফ’ না হয়। তাঁর বান্ধবী আতিশীর মাকেও শিখিয়ে দিয়েছেন মেয়ে মানুষ করার কায়দা কানুন। ছোটো পরিবারের সমস্যার শুরু বুঝি এখানেই।
     
    সন্তানের প্রতি মায়ের বাৎসল্য বা ভালোবাসা নতুন কোনো আলোচনার বিষয়‌ই নয়। তবে এই অতি ভালোবাসা যে বিড়ম্বনার সমতুল তা খুব স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে এই অতিরিক্ত সচেতনতার বিষয়টিকে Snowplow Syndrome বলা হয়। নিজের সন্তানের সামনে আসা যে কোনো সমস্যাকে, তা সে হোম‌ওয়ার্ক করা হোক, ব‌ইপত্র গুছিয়ে নেওয়া হোক -- সবেতেই আগবাড়িয়ে আগুয়ান মায়েরা। সন্তানের বিকাশমান সত্তাকে উপেক্ষা করেই মায়েরা এগিয়ে যান ভালোবাসার দোহাই দিয়ে। মায়ের দেখাদেখি বাবারাও সামিল হন সন্তানদের সামনের যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধানে। একালের প্যারেন্টিং এর এমনটাই নাকি দস্তুর!
     
    পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের শহরগুলোতে অভিভাবকত্বের এই নতুন ধারাটি ক্রমশই সবল হয়ে উঠছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে সামাজিক ও পারিবারিক আবহের সাম্প্রতিক পরিবর্তন‌ই Snowplow Syndrome এর বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। একালে এক পরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা। চারপাশের বাতাবরণে প্রবল কম্পিটিশনের দুন্দুভি নিনাদ। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া চলবে না। নিজেদের অবদমিত ইচ্ছেগুলো সন্তানের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চান না একালের অভিভাবকরা। আর এটা করতে গিয়ে সন্তানের সব কাজ নিজেরাই করে দিতে পিছপা নন তাঁরা। আমেরিকায় বরফ পড়লে একরকম সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হয়ে যায় বড়ো বড়ো বুলডোজার মেশিন। সেই মেশিন দিয়ে বরফ সরিয়ে প্রায় নিমেষেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয় রাস্তাঘাট। বরফ গলার সময়টুকুও দিতে নারাজ তারা। ছেলে বা মেয়ে হোম ওয়ার্ক নিয়ে বসতে না বসতেই অনেক বাবা - মা তা করে দেবার জন্য উশখুশ করতে থাকেন। মায়েরা এই বিষয়ে অতি তৎপর। পাছে হোম ওয়ার্ক করতে গিয়ে ছেলে বা মেয়ের কোনো কষ্ট হয়,তাই বুলডোজারের মতো চট্জলদি ছেলে বা মেয়ের হোম ওয়ার্কের দায়িত্ব নিজেরাই কাঁধে তুলে নেন কিংবা অন্য কোনো কাজের ক্ষেত্রেও বাবা মায়েরা 
    আগবাড়িয়ে সন্তানের কাজটা করে দেন। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই প্রবণতাটিই হলো আধুনিক Snowplow Syndrome    
     
    যেসব অভিভাবকদের মধ্যে এই সিনড্রোমের প্রভাব লক্ষ করা যায় তাঁরা আসলে নিজের সন্তানের খুব বড়ো ক্ষতি করছেন। ভুলগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েই পরবর্তী সময়ে নিজেদের শুধরে নিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারি। পাছে নিজেদের সন্তানেরা ভুল করে বসে, সেই কারণেই একালের অভিভাবকরা তাদের হয়ে কাজ করে দিচ্ছেন। এটা ছেলেপিলেদের শিখনের ভিতটাকেই যে নড়বড়ে করে দেয়। ফলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হলে আজকের শিশুটি তখন দিশেহারা হয়ে পড়বে। সেই কবে আমাদের রবি ঠাকুর “প্রাণ দিয়ে দুঃখ সয়ে” বড়ো হবার কথা বলে গিয়েছিলেন, একালের অভিভাবকদের একাংশ সেসব কথা মনে রাখার প্রয়োজন‌ই মনে করেন না।
     
    প্রশ্ন হলো, কেন এক শ্রেণির অভিভাবকদের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে? মনোবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে যা Snowplow Syndrome এর বাড় বৃদ্ধির মূল কারণ। তাঁদের মতে –
     
    অণু পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া 
     
    সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ভারতের মহিলাদের জন উৎপাদিকা হার ( fertility rate) ১৯৯০ সালের ৩.৪ থেকে কমে ২.০ তে এসে ঠেকেছে। এরফলে বিগত সময়ের তুলনায় পরিবারের আয়তন ক্রমশই কমছে। এরফলে বাবা মায়ের সমস্ত ভালোবাসা, আবেগ, নজর এখন ঐ সবেধন নীলমণির ওপর। তাকে আগলে রাখতে গিয়ে নিজেরাই বুলডোজার হয়ে উঠেছেন বাধা সরাতে।
     
    সামাজিক স্তরে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া 
     
    “এটা কম্পিটিশনের যুগ। একটুও পিছিয়ে পড়া চলবে না। পিছিয়ে পড়লেই চাপা পড়তে হবে। তুমি না পারলে আমরা আছি।”-- এই মানসিকতার কারণেই অভিভাবকদের ছুটে চলা, সন্তানটিকে ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া। আজকাল সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাবা মায়েরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন– নামীদামী স্কুল, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফলতা,আই আই টি অথবা মেডিকেল কলেজ, …….। এই সবই ওই সন্তানের হিতার্থে। ফলে চিন্তা আর পিছু ছাড়ে না। সন্তানের সামনে কোনো বাধা যাতে না আসে, তারজন্য নিরন্তর বুলডোজার চালিয়ে যান বাবা মা। নিজেদের অজান্তেই এক সময় তাঁরা Snowplow Syndrome এর শিকার হন।
     
    সামাজিক মাধ্যমের প্রবল চাপ 
     
    একালে আমাদের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের সন্তানেরা কী খাবে, কতটা খাবে ,কী পরবে, কোথায় পড়াশোনা করবে , কোন্ স্ট্রিম বেছে নেবে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠার জন্য?-- সেইসব ঠিক করে দিতে আজকে সমাজ মাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অভিভাবকরা এগুলোর দ্বারা পরিচালিত হন। আজকাল অনেক অনেক এডুকেটর, এডুকেশন ইনফ্লুয়েন্সার মঞ্চে হাজির হয়েছেন। তাঁরাই ঠিক করে দিচ্ছেন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য কেমনভাবে পড়বে,প্রোজেক্ট কীভাবে তৈরি হবে, 
    কোন্ বিষয় নিয়ে প্রজেক্ট করলে মার্কস বেশি মিলবে এসব খুঁটিনাটি বিষয়। এইসব দেখে শুনে অভিভাবকরা সক্রিয় হয়ে উঠবেন তাতে আর আশ্চর্য কি! হচ্ছেন‌ও তাই।
     
    অতিমারি পরবর্তী সময়ের প্রভাব 
     
    অতিমারির ভয়ঙ্কর সময়টা কাটিয়ে উঠলেও তার দুঃস্বপ্ন থেকে আমরা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারিনি। অতিমারির দীর্ঘায়িত পর্বটি আমাদের মধ্যে এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। স্কুলের প্রাত্যহিক জীবন থেকে দূরে সরে থাকা, অনলাইনে পঠনপাঠনের কাজ চালানো, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়ে যাওয়া বিচ্ছিন্নতা – এসবের ফলে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীরা নয় তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ছেলেমেয়েদের যাতে আরও কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে না হয় সেজন্য অভিভাবকরাই তাঁদের প্রতি আর‌ও আবেগঘন হয়ে ওঠেন। 
     
    “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিভাবকদের উপলব্ধির স্তরেও গভীর পরিবর্তন এসেছে। বাবা মায়েরা সন্তানের সাফল্য কামনা করবেন,এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এখন অভিভাবকরা চাইছেন যে তাঁদের সন্তানরা যাতে কোনোরকমেই ঈপ্সিত সাফল্য থেকে বঞ্চিত না হয়। এজন্য তাঁরা যতদূর সম্ভব ছেলেমেয়েদের আগলে আগলে রাখছেন। তাঁরা বুঝতে চাইছেন না যে সন্তানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হলে,তারা ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের সামলে নিতে পারবেনা। অতিরিক্ত আরাম আয়েশে রাখলে সন্তানদের মধ্যে কখনোই বাস্তব জীবনের প্রতি স্বচ্ছ ধারণা গড়ে উঠবে না। এমনটা তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশের অন্তরায়।” – এমনটাই মনে করেন দিল্লির শিশু মনোবিদ্ ডাঃ সঙ্গীতা ভাটিয়া।
     
    সঙ্গীতা দেবীর মতে, “ কখনো কখনো এই অতিরিক্ত দেখভাল 
    নজরদারির জন্য কড়া মনোস্তাত্বিক মাশুল দিতে হতে পারে সন্তানদের।” জার্নাল অফ চাইল্ড এন্ড ফ্যামিলি স্টাডিজ - এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের সূত্রে জানা গিয়েছে যে স্নোপ্লাউ গোছের অভিভাবকতার দরুণ ভবিষ্যতে সন্তানদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ, কোনো কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারার অক্ষমতা ও সিদ্ধান্তহীনতার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
     
    সঠিক তথ্য না থাকলেও, অনুমান করা হয় যে এই মুহূর্তে এ দেশের শহুরে পরিবারগুলোর ৫% – ১৩% পরিবারে একটিমাত্র শিশু রয়েছে। “ এইসব পরিবারের শিশুরা বাবা - মা ছাড়া আর কারও সঙ্গে নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে পারে না। ভাই বোন কেউ না থাকায় তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবেশটিও সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে। তাদের ঘিরে থাকা বাবা মা যতটা অতিসক্রিয় থাকেন সন্তানেরা ঠিক ততটাই নিষ্ক্রিয়তার শিকার হয়। কারণ তারা জানে যে,বাবা মা ই সব করে দেবেন। এইভাবে এই সব সন্তানেরা এক সময় ভাবতে শুরু করে যে বাবা মা ছাড়া তাদের পক্ষে কোনো ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।”-- ডাঃ সঙ্গীতা ভাটিয়া এমনটাই মনে করেন।
    ২০২২ সালে অশোকা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, পরিবারে একটিমাত্র সন্তান থাকলে সে পড়াশোনার ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও, পরিণত বয়সেও সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তারা তাদের অভিভাবকদের ওপরেই নির্ভর করে থাকে।
     
    জাতীয় জীবনে এর নীট প্রভাব :-- বাবা মায়ের নিবিড় ছত্রচ্ছায়ায় অতি প্রশিক্ষিত, অতি যত্নে প্রতিপালিত একদল নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের নিমগ্ন নির্মিতির পর্ব চলছে,যারা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ লিখতে পারবে কিন্তু নিজেদের জীবনে বয়ে আসা সমস্যার উষ্ণতা সামলাতে পারবে না।
     
    তাহলে উপায়? অভিভাবকরা কী করবেন? মনোবিজ্ঞানীরা মাননীয় অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এগুলো অনুসরণ করলে এক পরনির্ভরশীল প্রজন্মের হাত থেকে খানিকটা হয়তো মুক্তি মিলবে। কী বলেছেন তাঁরা?
     
    ওদের স্বাধীনতা দিন। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয় –এটা ওদের বুঝিয়ে দিন। বয়সপোযোগী কাজের দায়িত্ব পালনে ওদের উদ্বুদ্ধ করুন। ওদের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে দিন। ভুল করলে আগবাড়িয়ে তার সমাধান করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। ওদের ভুল থেকে ওদের শিখতে দিন।
    সন্তানের সঙ্গে কথা বলে তার ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ভয়, সংশয় ইত্যাদি বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। নতুন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে প্রথমেই না বলে তাকে নিরুৎসাহিত করবেন না। ওকে ময়দানে নামতে দিন। লক্ষ রাখুন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিনা। ব্যস্, এইটুকুই হবে আপনাদের ভূমিকা। 
     
    ওদের ভুল করতে দিন। মনে রাখবেন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে নিতেই মানুষ অতীত থেকে আজকের এই পর্যায়ে এসে হাজির হয়েছে। মনে রাখবেন ওদের আজকের ভুল আগামী দিনে ওদের সাফল্যের নতুন সোপান গড়ে দেবে। ওদের সমর্থন করুন, সমাধান ওদের খুঁজে নিতে দিন।
     
    নিজেরা ওদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। ওরা তাতে উদ্বুদ্ধ হবে, অনুপ্রেরণা পাবে। বৃহত্তর জীবনে ওদের অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতির সামনে পড়তে হবে। 
     
    ওদের প্রাণখুলে প্রশংসা করুন। প্রতিতুলনা করবেন না। মনে রাখবেন, সাফল্য মানে কোনো পরিচিত পরিণতি নয়। সাফল্য মানে পায়ে পায়ে চলতে চলতে তারা নিজেদের মতো করে কতটা পথ এগিয়ে এলো তাকেই বোঝানো হয়। কাজটা কতটা নিখুঁত ভাবে করতে পারলো তার ওপর জোর না দিয়ে, কতটা আগ্রহ নিয়ে নিজে কাজটা করলো তার মূল্যায়ন করতে শিখুন।
     
    পথটা কঠিন। শুধু আপনাদের সন্তানদের জন্য নয়, আপনাদের জন্য‌ও। বরফ জমা রাস্তা থেকে বরফ সরিয়ে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না । এরফলে আপনারা বুঝতেও পারবেন না ভবিষ্যতে বরফের সামনে পড়লে কীভাবে তা অতিক্রম করবে? 
     
    আসুন আমরা সবাই মিলে নতুন করে ভাবতে বসি।
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ২২ অক্টোবর ২০২৫ | ২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন