এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্কুলের খাতা

  • শূন্য এ বুকে -- অন্তিম পর্ব 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    স্কুলের খাতা | ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ১৩১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় (শেষ) পর্ব
    শূন্য এ বুকে…. অন্তিম পর্ব

    কথা দিয়েছিলাম,তাই ফিরে আসতে হলো। ঘর খালি হয়ে গেলে তাকে আবার ভর্তি করা খুব সহজ কাজ নয়। অথচ আমরা অনেকেই মনে প্রাণে চাইছি যে, এই ফাঁকা হয়ে যাওয়া সংসার আবার সেই ভরপুর সংসারের রূপ ফিরে পাক। কিন্তু চাইলেই যে ম্যাজিক হয়ে সবটাই বদলে যাবে এমনটা মোটেই নয়। কেন এককালের ভরপুর পাঠ পরিবারগুলো এমন রিক্ততার শিকার হলো ? এই বিষয়ে কয়েকটি কথা বলার আগে, চলুন বরং একটু সুলুক সন্ধান করে নিই।

    প্রথমেই বলি, সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় জনসমাজের পরিচিত শ্রেণি মানসের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই আগের তুলনায় পরিবারে অর্থের জোগান বেড়েছে অনেকটাই। বেড়েছে যাচাই করে পছন্দের সুযোগ। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির বদল এসেছে। বিগত এক বা দেড় দশকে এই পরিবর্তন ঘটেছে চমকপ্রদ গতিতে। এককালের নামীদামী সম্ভ্রান্ত সরকারি স্কুলগুলোর পক্ষে এই ঝটতি পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হয়নি। যে কারণে পাড়ার হরু মুদীর দোকান একালে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে, ঠিক সেই একই কারণে সরকারি বা সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোর দাপট কমেছে এর ফলে। বড়ো বড়ো শপিং মলের মতো শিক্ষাক্ষেত্রে ঢালাও বিনিয়োগের ফলে আমাদের সাবেকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পুরনো জৌলুস হারিয়ে ফেললো। নড়েচড়ে ধ্বস্ত হয়ে গেল তাদের বণিয়াদ। একালে শিক্ষা একটি বিপণনযোগ্য উপকরণ হয়ে ওঠার কারণে সবাই আমরা আলেয়ার আলোর পেছনেই ছুটে চলেছি। কথায় আছে ‘পহলে দর্শনধারী,পিছে গুণবিচারী’। এই আপ্ত বাক্য মাথায় রেখেই দলে দলে কেয়ারি করা বাগানে গিয়ে ভিড় জমালো এই প্রজন্মের অভিভাবকরা। তাঁরা ছেলে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টিকে বিনিয়োগের লাভজনক ক্ষেত্র মনে করলো; যে কারণে পাশে থাকা বনলক্ষ্মীর দীর্ঘদিনের আসনবেদী ক্রমশই ফাঁকা হয়ে গেল। এই স্রোত আটকানোর মতো কোনো সঙ্গতি আমাদের এতোদিনের চেনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছিলোনা। আজ‌ও নেই। ব্যতিক্রমী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোনো রকমে এই ঝড়ের ঝাপটা সামলে নিলেও, তাকে ঠেকাতে পারলোনা।

    প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে এমনটি তো আর রাতারাতি ঘটেনি, ধীরে ধীরে ঘটেছে। তাহলে কেন এই সর্বগ্রাসী ভাঙনকে ঠেকানো গেল না? কেন আগে থেকেই আঁচ করতে পারলোনা এতোদিনের প্রতিষ্ঠানগুলো। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, তথাকথিত সরকারি বিদ্যালয়গুলো সবদিক থেকেই সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতেই পছন্দ করে। সরকার‌ও চায় সবাই তার বশংবদ হয়ে থাকুক। এরফলে ঠান্ডা ঘরে বসে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা যে সিদ্ধান্ত‌ই গ্রহণ করুক না কেন তাকেই অনুসরণ করে চলেন বা চলতে বাধ্য থাকেন এই সব বিদ্যালয়ের পরিচালকদের বৃহদাংশ। এভাবে ধীরে ধীরে বিদ্যালয়গুলোর সাংগঠনিক স্বকীয়তা লোপ পেল। নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে কেবলমাত্র সরকারি ফরমান মেনে চলাকেই ধ্যান জ্ঞান কর্ম বলে মনে করলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিংহভাগই। তার পরিণতি আজ প্রত্যক্ষ করছি আমরা।

    একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলেন সেই স্কুলের হেডমাস্টার মশাই। শিক্ষা নিয়ে তাঁর ভাবনা সঞ্চালিত হয় অন্যান্য সহযোগী শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে। অথচ একালের প্রধান শিক্ষকদের এককথায় আদর্শ করণিক বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমি করণিকদের কাজকে খাটো চোখে দেখছি না, কিন্তু এটাই এখন রূঢ় বাস্তবতা। আমার পরিচিত এক প্রধানশিক্ষক আক্ষেপ করে বলেছিলেন – “কতদিন ছেলেদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ানো হয় না। জোর করে রুটিনে ক্লাস দেবার কথা বলেছিলাম। কয়েকদিন করে দেখলাম আমি ওদের ফাঁকি দিচ্ছি । ভাবের ঘরে আর কতো চুরি করবো? বিবেকের দংশন স‌ইতে পারছি না। হাজারো খুঁটিনাটি বিষয়ের নথি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠাতেই বেলা বয়ে যায়। আমার অবস্থা এখন ঐ রক্তকরবী নাটকের রাজার মতো। লোকে জানে আছে, কিন্তু কোথায় আছি তা ঠাওর করতে পারে না কেউই।” হেডমাস্টার মশাইরা প্রশাসনের গোলকধাঁধায় এভাবে আটকে গেলে পঠনপাঠনের কাজে নতুন গতি আনবেন কে? বিদ্যালয়ের উচ্চতম অংশ থেকেই এই বিচ্ছিন্নতাবোধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। কমছে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা যে কারণে এই সময়ের অভিভাবকরা খুব বেশি ভরসা রাখতে পারছেননা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।

    নিজেদের এক সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা নেই এইসব স্কুলের প্রাক্তনীদের‌ও। নিজেদের সন্তানদের পঠনপাঠনের জন্য তাঁদের কেউই আর ছেলে মেয়ের হাত ধরে নিজেদের স্কুলে ফিরে আসছে না। এমন নবীন প্রজন্মের অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে সময় আর অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে। একালের অধিকাংশ পরিবারেই একটিমাত্র সন্তান। সেই সন্তানটিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে সকলের স্বপ্ন – সন্তানকে সর্ববিদ্যা পারঙ্গম করে তুলতে হবে। সে পড়াশোনায় হবে টপার, ক্রিকেট খেলবে শচীন টেন্ডুলকার বা ঝুলন গোস্বামীর মতো, ছবি আঁকবে, গান গাইবে, দাবার চাল দিয়ে মাৎ করে দেবে প্রতিপক্ষকে। চাওয়ার কি আর শেষ আছে ! এতো সব আয়োজনের আসর তার ছেলেবেলার স্কুলে কোথায়? অত‌এব অন্য ঘাটে নাও ভেড়াও। এজন্য অঢেল খরচ করতেও পিছপা নয় এই সময়ের অভিভাবকরা। এই স্বপ্নোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে গিয়ে তাঁরা ভুলে যায় তাঁদের স্কুলের সেই খেলাপাগল হেডস্যারের কথা, যিনি তাদের পিছনে পড়ে থেকে গড়ে তুলেছিলেন এক অপরাজেয় ফুটবল টিম, ভুলে যায় সেই মাস্টারমশাইয়ের কথা যে নিজের জীবন বিপন্ন করে ছাত্রদের পাশে থেকেছেন নিরাপদ আশ্রয় হয়ে, ভুলে যায় সেই বর্ষিয়ান স্যারের কথা যিনি ক্লাস শেষের ঘন্টা বাজার আগেই পৌঁছে যেতেন ক্লাসের বাইরে। এমন অসংখ্য নিমগ্ন নির্মিতির স্মৃতিপথ পেরিয়েই এই প্রজন্মের সম্ভাবনাপূর্ণ শিক্ষার্থীরা পাড়ি দিয়েছে অচেনা এক নক্ষত্রলোকের পথে। মাটির পিদিম জ্বেলে বসে থাকা দুখিনী মায়ের কুটিরের ভিতর ও বাইরে তাই এখন নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।

    এই সময়ের অধিকাংশ মানুষই সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি আর খুব একটা বিশ্বস্ত নন। সরকারি হাসপাতাল, সরকার পরিপোষিত বিদ্যালয়, রাষ্ট্রিয় পরিবহন পরিষেবা ব্যবস্থা – সবক্ষেত্র থেকেই আজ আমাদের মুখ ঘুরে গেছে। বলা বোধহয় ভালো - আমাদের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে তিল তিল করে। বিনে পয়সার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা হয়? সব ফাঁকিবাজদের আড্ডা। নিধিরাম মাস্টারের পাঠশালার থেকে ন্যান্সি আন্টির ফ্যান্সি স্কুল অনেক অনেক ভালো। একদম সঠিক কথা, এই কথার মধ্যে এতটুকু ভুল নেই। আর এই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিয়েই আমাদের ঘরের সন্তানদের উড়িয়ে নিয়ে গেল কোন্ সুদূরের পানে। আমাদের বুক শূন্য হয়ে গেল।

    খুব সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আমাদের সরকারি স্কুলগুলোতে পঠনপাঠনের মান যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মাস্টারমশাইদের একটা বড়ো অংশ‌ই টরে টক্কা, টক্কা টরে করে চলেছেন। এদের দেখার কেউ নেই। গলার রুমাল বদলে তারা দিব্যি আছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে এককালে সরকারি স্কুলের দুর্বল পরিকাঠামোর ধুয়া তুলে নিজেদের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতেন গুরুমশাইরা। এই সমস্যাকে অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু তাতে করে পঠনপাঠনের গুণগত মানের তেমন উন্নতি হয়নি। সমীক্ষক দলের মতে অধিকাংশ স্কুলেই আধুনিক শিক্ষণশৈলীর প্রয়োগ নেই। সাবেকি চক ডাস্টার দিয়ে বোর্ড ওয়ার্কেও প্রবল অনীহা এক শ্রেণির গুরুমশাইদের। শিক্ষা সঞ্চালনের বিষয়টি যে নিছক ব‌ইয়ের ছাপানো অক্ষরগুলোকে শিক্ষার্থীদের গিলিয়ে দেওয়া নয়, এর মধ্যেও যে গভীর উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে সে কথা কে বোঝাবে এদের? কে বোঝাবে এঁদের যে শিক্ষকতা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রাণময় প্রক্রিয়া, ঘন্টা বাঁধা সময়ের পরিসীমার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ নয়,কে বোঝাবে শিক্ষার্থীদের মনে অন্তহীন জিজ্ঞাসা, অফুরান প্রশ্নের উৎস স্রোতকে জাগিয়ে তোলাই হলো একজন যথার্থ শিক্ষকের কাজ। শিক্ষক নিজে জিজ্ঞাসু না হলে, অনুসন্ধিৎসু না হলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নমুখর করে তুলবেন কী করে? দেশলাই কাঠির ডগায় বারুদ না থাকলে, আগুন জ্বলবে কীভাবে? ব্যতিক্রমী শিক্ষক শিক্ষিকা অবশ্যই আছেন কিন্তু তাঁরা একালে ক্রমশই বিরল এবং সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। ফলে সরকারি স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের ভিড় ক্রমশই পাতলা হতে হতে আজ সেগুলো বিলুপ্তির পথে।

    প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে অসরকারি স্কুলগুলোতে কি এই সমস্যা নেই? সেখানে কি সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে? এর উত্তরেও বলবো - না। সেখানেও ফাঁকফোকর যথেষ্ট, তবে সেখানে সবকিছুই এক চকচকে প্যাকেজের অংশ। আর তাই সেখানকার অন্ধকার চট্ করে নজরে পড়েনা, সবটাই আড়ালে লুকিয়ে থাকে। খুব সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষয়িত্রীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রদেশে কর্মরতা। তাঁকে সেখানকার হালহকিকত নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি যা বললেন তাতে তো আমার পিলে চমকানোর অবস্থা – প্রশাসন থেকে পরিকাঠামো, শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থী সব‌ই গয়ং গচ্ছ নীতির শিকার ভয়ঙ্করভাবে। এর বিরুদ্ধে কথা বললেই প্রাদেশিকতার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। তাই তিনি এখন আসি যাই মাইনে পাই দর্শনের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছেন। এই হাওয়া এখানেও ব‌ইছে প্রবলভাবে।

    যাঁরা এই ভাঙ্গন রুখতে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে পারতেন তাঁদের কী হাল? – “শিক্ষক মহাশয়েরা কেউ কেউ অফ পিরিয়ডে মোবাইলে ওয়েব সিরিজ বা মুভি দেখেন, ব্যবসার হিসাব রাখেন, নূতন রান্নার রেসিপি দেখেন ইউ টিউবে, যাবতীয় অনলাইন কাজ কেউ কেউ স্কুলেই সারেন। …. শুধু স্কুলের সময়টুকু স্কুলকে দিলেই অনেকখানি ভোল পাল্টাতে পারে। কিন্তু হয় না।” এ আমার কথা নয়। এক সংবেদনশীল মাস্টারমশাইয়ের আঁখো দেখা বিবরণীর খন্ডাংশ মাত্র। এসব হলো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। সমস্যা গহীন।

    কথায় বলে সুগন্ধের তুলনায় দুর্গন্ধ ছড়ায় অনেক দ্রুত গতিতে। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই। সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোর অন্দরমহলের খবর ছড়িয়ে পড়েছে দখিনা বাতাসের মতো। আগে মাস্টারমশাইদের স্কুলের জীবন আর বাইরের জীবনে তেমন কোনো পার্থক্য ছিলো না। তাঁরা ঘরেও যা ঘাটেও তাই ছিলেন। এঁদের অনেকেই ছিলেন এক একজন জ্ঞানভাণ্ডার – সন্দীপন পাঠশালার নির্মাতা। আর আজ? দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছেন তাঁরা। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভালো মন্দের সঙ্গে নিবিড়ভাবে নিজেকে যুক্ত না করলে প্রতিষ্ঠানের বিকাশ হবে কী করে?

    আসলে “স্কুল ব্যবস্থাটাই এরকম। কেউ সারাজীবন গল্প করেই কাটিয়ে দিতে পারেন, কেউ শিক্ষার সেতুবন্ধনে কাঠবিড়ালির মতোন ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। কেউ পেটের জল না নাড়িয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন, আবার কেউ শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ফেনিল ঊর্মি জাগাতে পারেন। বুক পকেটের একটু নিচেই হৃদয়টির সন্ধান পান ‘কোটিতে গুটিক’। এমন মানুষেরা সমাজ আবহে একটু একটু করে হারিয়ে গেছেন, আর তাই হয়তো বিবর্ণ হয়ে গেছে সেদিনের সেইসব আশ্চর্য ইস্কুলগুলো।

    এখন হয়তো আক্ষেপ‌ই আমাদের শেষ আশ্রয়।

    উৎসর্গ :
    আলোচ্য নিবন্ধটি অনুজপ্রতিম সুহৃদ সৌমেন রায়’ কে উৎসর্গ করা হলো।

    **ঋণ স্বীকার –
    ইস্কুল ফিস্কুল – সৌমেন রায়। ব‌ইবন্ধু পাবলিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় (শেষ) পর্ব
  • স্কুলের খাতা | ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ১৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | 119.224.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০১:১০735678
  • বাবারে! এ যা লিখলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের reform এর আশু প্রয়োজন। তবে হেডমাস্টার মশাই বা দিদিদের ম‍্যানেজার করার কুফল হাতে নাতে ফলতে দেখেও যদি প্রশাসন উদাসীন থাকেন তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। 
    আসলে সমস‍্যাটি আরো গভীরে, একটি সামাজিক মানসিকতার ব‍্যাপার। সবাই ভাবছে মনে হয় "ক" পড়াশোনা কত "খ" পয়সা কামানো যাবে। যে কারণে বেসরকারী ইশকুলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা শিক্ষাকে পণ‍্যে রূপান্তরিত করেছে। এর বিপ্রতীপে অন্তত সরকারী ইশকুলগুলোতে এমন শিক্ষক শিক্ষিকা চাই যারা বিষয়টিকে ভালোবেসে পড়াক। সেখানে তো পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগেই অন‍্য রকমের সমস্যারসকথা শোনা যায়। 
     
    একদিকে ঔদাসীন‍্য, অন‍্যদিকে ব‍্যবসায়ীর প্রলোভন। মানুষ যায় কোথায়?
  • Somnath mukhopadhyay | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২৫735682
  • ধন্যবাদ অরিন বাবুকে প্রথম মতামত জানানোর জন্য। হাজিরা খাতায় প্রথমেই আপনার নাম থাকবে-- এমনটাই অবশ্য ভাবছিলাম। যাইহোক শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড়ো রকমের সংস্কার খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সংস্কার শুধুমাত্র সিলেবাস বা কারিকুলামে পরিবর্তন আনলে হবেনা বিদ্যালয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সকলের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিশোধনের প্রয়োজন আছে। সৌমেন রায় তাঁর ব‌ইতে এই সময়ের সরকারি বিদ্যালয়গুলোর অন্দরমহলের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন নিপুণ ভাবে। আমিও আমার শিক্ষকতার জীবনে এই ভাঙ্গন দেখেছি।
    এখনকার পড়াশোনার ব্যবস্থাপনাকে শিক্ষা অর্জন বলতে আমার কুন্ঠা জাগে। সরকারি স্কুলগুলোকে তুলে দেবার জন্য সরকার এখন মরীয়া। আমাদের চাই একজন বাঁশিওয়ালা যে তাঁর মাতাল করা সুরে শেষ থেকে আবার শুরুর কথা বলবে।
    ভালো থাকবেন।
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:10be:a84e:8000::***:*** | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১০735683
  • প্রথমেই অশেষ ধন্যবাদ জানাই আমার মত একজন সাধারণ শিক্ষকের  ভাবনার  কথা লেখার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। এমন অনুভূতি আমার জীবনে প্রথম।
    আপনি হেডমাস্টার মহাশয়দের সমস্যা  সঠিক ভাবে তুলে ধরেছেন। এটা সত্যি জ্বলন্ত সমস্যা। প্রকল্প রূপায়ণ ও তথ্য পাঠানো তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারিভাবে খুব সহজে এটার সমাধান করা যায়। উপযুক্ত সংখ্যক করণিক নিয়োগ করে , কম্পিউটার গুলির ব্যবস্থাপনা করে এবং যে পোর্টালে কাজ হয় সেটাকে কিছুটা উন্নত করে। কিন্তু সে সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।
     অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যে কারণটির কথা বলেছেন তার সঙ্গে মোকাবিলা করা শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য যেটা বলেছেন  বড় রকমের সংস্কার দরকার ।এখানেও কোন ভাবনাচিন্তা আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষকদেরও একটা ক্ষুদ্র অংশকে বাদ দিলে কারও সামান্য শুশ্রূষা করার মানসিকতাও নেই। তারা পেশার মর্ম বোঝেনা।
    তবে আপনি যে প্রাইভেট স্কুলের কথা বলেছেন সেটি সমর্থ্য মানুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিছু লোক সাধ্যের সীমা অতিক্রম করেও যাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের একটা বড় অংশ এমনি এমনি পড়ছে না। ছোট বয়স থেকেই বন্ডেড লেবারে পরিণত হচ্ছে। কারন কিন্তু শুধুমাত্র দারিদ্র নয়। দারিদ্র্য আগে আরও বেশি ছিল ।কিন্তু অভিভাবক কি হবে না হবে এত ভাবনাচিন্তা সরিয়ে রেখে ভাবতো ছেলেটাকে স্কুলে পাঠাতে হবে। এখন সে পরিস্থিতি নেই।
    হয়তো বা সময়ের ধর্ম অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাও বিরাট পরিবর্তনের মুখে।
  • Somnath mukhopadhyay | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৫735689
  • নিজেকে সাধারণ বলে ভাবতে পারার মধ্যে এক অন্যরকম অসাধারণত্ব আছে। একালে সবাই নিজের নিজের ঢাক পেটাতেই অভ্যস্ত। সেখানে নিজেকে সাধারণ বলে ভাবার বৈষ্ণবীয় বিষয় সত্যিই প্রশংসার্হ।
    আমার কর্মজীবনের শেষদিকে এসে এই ভাঙ্গনের খণ্ড চিত্র দর্শনের দুর্ভাগ্য হয়েছিল। আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন হেডমাস্টার মশাইয়ের আক্ষেপ এখনও কানে লেগে আছে। অসাধারণ পণ্ডিত ঐ মানুষটি প্রশাসনের গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে অশেষ আক্ষেপ করতেন আলাপচারিতার অবকাশে।
    মাস্টারমশাইদের হাতে কোনো জীয়নকাঠি নেই। সুতরাং তাঁরাই সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারবেন তা কখনোই ভাবিনা। নিজের বৃত্তীয় পরিধিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলেই অনেক পারা হবে। সেই চেষ্টাই লাগাতার ভাবে করতে হবে।
    শিক্ষকদের সম্পর্কে যা বলেছেন তা নিয়ে মন্তব্য করছি না। আসলে এখানে থেকেই ভাঙনের শুরু।
    অসরকারি স্কুলগুলো সম্পর্কে আলাদা লেখা লিখতে হবে।
    ভালো থাকবেন। নির্মাণে থাকবেন।
  • Somnath mukhopadhyay | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৪১735696
  • বৈষ্ণবীয় বিনয়।
  • সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় | 223.223.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪১735698
  • ভালো । যদি মাস্টারমশাইরা তাঁদের সন্তানদের সরকারি বা সরকার -পোষিত স্কুলে পড়াতেন, যদি নিজেদের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতেন, যদি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানতুল্য মনে করতেন, যদি একটু ভালোবাসতেন নিজের কর্মক্ষেত্রটাকে শুধু 'চাকরিক্ষেত্র' হিসেবে না ভেবে
    তবে অন্যরকম হতে। 
    ঋদ্ধ হলাম। 
  • Somnath mukhopadhyay | ১২ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৩৬735728
  • চট্টোপাধ্যায় সোমনাথকে মুখোপাধ্যায় সোমনাথের শুভকামনা। যদি এমন হতো তাহলে যে আজ এই পরিণতি হতো না।খাল কেটে কুমির আমরাই এনেছি এখন কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করে কি সমস্যার সমাধান হবে? ভালো থাকবেন সবসময়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন