এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্কুলের খাতা

  • শূন্য এ বুকে.. .... প্রথম পর্ব 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    স্কুলের খাতা | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • শূন্য এ বুকে…….

    পাখি বিণা খাঁচা আর ছাত্র বিণা বিদ্যালয় – দুইই মনকে বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দেয়। চোখের সামনে ভেসে ওঠা ঐ ছবি ধীরে ধীরে মনের গভীরে গিয়ে শূন্যতার ব্যাপ্তিকে আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলেই হয়তো এই শূন্যতার হাহাকার অবসর গ্রহণের পর বেশ কয়েকটা বছর কাটিয়ে ফেললেও এখনও বুকের মধ্যে ঝড় তোলে। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি, তার ভালোমন্দের প্রতি এক ধরনের দায়বদ্ধতায় বাঁধা পড়ে রয়েছি হয়তো।

    খুব সম্প্রতি এমনই এক মনখারাপ করে দেয়া খবর নজরে এলো। আলোচ্য খবরে জানানো হয়েছে যে, সারা দেশে প্রায় ৮০০০ এমন স্কুল রয়েছে যেখানে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একজন‌ও ছাত্র বা ছাত্রী নেই মানে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী ভর্তি হয়নি। এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের কাছে প্রধান সমস্যা হলো, এইসব সরকার পরিপোষিত বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রায় ২০০০০ শিক্ষক/শিক্ষিকাদের কোথায়, কীভাবে পুনর্নিযুক্ত করা যাবে তা নিয়ে।

    জানলে হয়তো খুব দুঃখ পাবেন যে এমন ছাত্র / ছাত্রীশূন্য বিদ্যালয়ের মধ্যে সংখ্যার বিচারে শীর্ষে রয়েছে আমাদের রাজ্যটি। এমন অবস্থান যে মোটেই গৌরবের নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই শূন্যতার পেছনের কারণগুলো নিয়ে দু- চার কথা আলোচনার আগে আসুন একবার দেখে নিই সামগ্রিক পরিস্থিতিটাকে।

    সদ্য প্রকাশিত এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ । রাজ্যের ৩৮১২ টি স্কুলে কোনো ছাত্র/ছাত্রী নেই। দুঃখের বিষয় এই যে, দেশের মোট ২০৮১৭ জন আপাত দায়ভার মুক্ত শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের মধ্যে ১৭,৯৬৫ জন‌ই হলো আমাদের রাজ্যের।

    কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে বিগত শিক্ষাবর্ষের তুলনায় এই সংখ্যাটা খানিকটা কমেছে। আগের বছরের ১২,৯৫৪ টি শিক্ষার্থী শূন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যাটা এই বছরে প্রায় ৫০০০ কমে এসে হয়েছে ৭,৯৯৩টি। পশ্চিমবঙ্গের ঠিক পেছনেই আছে দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানা।

    অন্যদিকে এই মুহূর্তে ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত রাজ্য যেমন হরিয়ানা, গোয়া, আসাম, হিমাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে যে এই সব রাজ্যে ছাত্র/ছাত্রী শূন্যতার সমস্যা নেই অর্থাৎ সমস্ত বিদ্যালয়েই শূন্যের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

    এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আধিকারিক জানান – “সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা রাজ্য তালিকাভুক্ত, অর্থাৎ রাজ্য সরকার এই বিষয়ে দায়বদ্ধ। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রতিটি রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ।এর মুখ্য উদ্দেশ্য‌ই হলো দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য এমন সব স্কুলগুলোকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছে। এরফলে পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক/ শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীদের কর্মদক্ষতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।”

    এই রিপোর্ট থেকে আর‌ও জানা গেছে যে পুদুচেরী, লক্ষ দ্বীপ, দাদরা ও নগর সাবেরী, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, গোয়া দমন দিউ এবং চণ্ডীগড়ের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনো স্কুলেই এমন ছাত্র ছাত্রী শূন্যতার সমস্যা নেই। দেশের রাজধানী শহর দিল্লিও এই সমস্যা মুক্ত।

    আগেই বলেছি যে পশ্চিমবঙ্গের ঠিক পেছনেই আছে তেলেঙ্গানা রাজ্য। সেখানে শিক্ষার্থী শূন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২২৪৫ টি। তারপরেই লাইনে আছে মধ্যপ্রদেশ (৪৬৩টি)। তেলেঙ্গানায় ১০১৬ জন এবং মধ্যপ্রদেশে ২২৩ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা এই সব বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

    উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে শিক্ষার্থী শূন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যাটা ৮১ টি। সেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ে বিগত তিন বছর ধরে কোনো ছাত্র ছাত্রী নেই, সেই সব বিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    সমস্যা এখানেই শেষ! এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। দেশের ৩৩,০০০,০০ (তেত্রিশ লক্ষ) শিক্ষার্থী একল শিক্ষক/শিক্ষিকা পরিচালিত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। অর্থাৎ মাত্র একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা ১০০০০০ বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের কাজ পরিচালনা করতে বাধ্য হন। এই তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। তার পেছনে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং লক্ষ দ্বীপ। এমন একল শিক্ষক/শিক্ষিকা পরিচালিত বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির বিচারে সবার ওপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশ। এসব‌ই হলো নিধিরাম মাস্টারের ইস্কুল।

    আমাদের দেশের সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোর হালহকিকত নিয়ে কথা বলা কখনোই বোধহয় শেষ হবে না। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উৎকর্ষতা সাধনের জন্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এরমধ্যেই ডঙ্কা বাজিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে আগামী শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণি থেকেই শিক্ষার জন্য অত্যাধুনিক AI প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। যে দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নিধিরাম মাস্টারের ইস্কুলের পড়ুয়া সেই দেশে এইসব বাগাড়ম্বর যে কতটা অর্থহীন তা বোধহয় বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আসুন, আরো বড়ো অপচয়ের খবরের জন্য অপেক্ষা করি।

    তথ্যসূত্র।
    PTI এবং দৈনিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্কুলের খাতা | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চিন্তা - Prasun Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শ্রীমল্লার বলছি | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০১:০৮735376
  • জরুরি লেখা তো বটেই! বলার কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন