ফেলো কড়ি…..
ফেলো কড়ি…। সেকাল একাল আগামীকাল – সব কালেই কড়ির কদর ছিল আছে থাকবে। একালে সবথেকে মহার্ঘ্য ক্রয়যোগ্য প্রোডাক্ট বা কমোডিটি হলো দুটি - এক. স্বাস্থ্য পরিষেবা আর দুই. শিক্ষা পরিষেবা। আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে চাইলে সকলে হে হে করে উঠবে – আরে! সরকারি হাসপাতালে কেউ যায়? ওখানে যাওয়া মানেই হলো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে যাওয়া। নার্সিং হোমে গেলে তবুও….। পকেট খালি করে যখন বাড়ি ফিরে এলেন তখন হয়তো হাড়ে হাড়ে টের পেলেন চিকিৎসা কাকে বলে? ছেলেপিলের শিক্ষারও ঐ একই দশা। ধরুন আপনি বিকাশ ভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনার প্রাথমিক শিক্ষার পর্বটি শুরু করেছিলেন। চোখ বুজে সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তটির কথা চিন্তা করুন – ফিটফাট বাবুটি হয়ে বাবার সঙ্গে আপনি গিয়ে হাজির হয়েছেন স্কুলের গেটে। সাদামাটা বিল্ডিং , সামনে একটুকরো জমি। সেখানে রকমারি গাছের মেলা। বাবার হাত ধরে ছোট্ট আপনি এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। আপনার মতো আরও কয়েকজন সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের বাবাদের হাত ধরে। কয়েকজনের সঙ্গে তাদের মায়েরাও হাজির। তা দেখে আপনি হয়তো নিজের মায়ের ওপর কিঞ্চিত রাগ করছেন এই ভেবে যে কেনো তিনি এলেন না ? এই সব ভাবতে না ভাবতেই আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন এক তরুণী। ঝকঝকে চেহারা।
– কী নাম তোমার?
– নাম বলো। উনি তোমার দিদিমণি। তোমার নাম জানতে চাইছেন।
প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে আপনি হয়তো আধো আধো স্বরে নামটা বলেছেন।ওদিক থেকে মুখে একগাল হাসি ফুটিয়ে আপনার সেই হবু দিদিমণিটি বললেন – বাহ্! খুব সুন্দর নাম।
আচ্ছা সু….। তোমার বাড়িতে কে কে আছেন? পাকা আমের রঙ জান? সকালবেলায় কা কা করে কে ডেকে তোমার ঘুম ভাঙায়? বাড়িতে কে তোমাকে গল্প শোনায় ? আপনি সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবেই দিয়েছেন। দিদিমণি আবারও একগাল হেসে বললেন – সু.. খুব ভালো পড়াশোনা করে। তুমি এখন থেকে আমাদের বন্ধু হলে। হয়ে গেল আপনার এ্যাডমিশন। আপনি,মানে ছোট্ট আপনি এখন থেকে বিকাশ ভারতীয় হলেন।
সেদিনের সেই মুহুর্তটাকে আমি কিংবা আপনারা অনেকেই অনেকদিন আগেই পেছনে ফেলে এসেছি। আচ্ছা,ঐ দৃশ্যটিকে একালের প্রেক্ষিতে পুনঃনির্মাণ করা হয় তাহলে তা ঠিক কেমন হবে? আসুন দেখে নেওয়া যাক্।
বাড়িতে কদিন ধরেই বেশ হৈচৈ পড়ে গেছে। সু…বাবুর নাতিকে এবার স্কুলে ভর্তি করা হবে। একেবারে প্রি স্কুল ক্লাসে। আসুন একটু আড়ালে থেকে ওদের কথোপকথনে কান পাতি।
– না শোন্, বলছিলাম কি আমাদের জিকোর বয়স এখন মাত্র আড়াই। এই বয়সে ওকে স্কুলে পাঠানোটা কি উচিত হবে? আমি , রন্টি কেউই তো এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হইনি। তাহলে..?
– বাবা, আপনি আপনার সময়ের সঙ্গে এই সময়কে তুলনা করছেন ! আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের কথা মাথায় রেখে একালে পথ চললে যে পিছিয়ে পড়তে হবে।
– আমি খোঁজখবর নিয়েছি। এদের প্রিপেরেটারি সেকশনে জিকোকে এখন ভর্তি করা হলে পরবর্তীতে এ্যাডমিশন নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। হ্যাঁ, খরচটা অনেকটাই বেশি হবে বটে তবে এওতো এক ইনভেস্টমেন্ট ফর ফিউচার। এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা। সামনের সপ্তাহে আমি আর সুপর্ণা গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসবো।
– ইন্টারভিউ? কার? আমাদের জিকোর?
– না বাবা, আমার আর আপনার ছেলের। আমরা উৎরে গেলে, পরে জিকোর পরীক্ষা।
এর পরের ঘটনাক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে। বিকাশ ভারতী স্কুল থেকে পাশ করা ছাত্র, পরবর্তীতে….পুর থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠা আপনার পুত্রটি তাঁর পুত্র বৈশম্পায়ন ওরফে জিকোকে শহরের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বলে পরিচিত একটি স্কুলের প্রিপেরেটরি সেকশনে ভর্তি করে দেয়।
বাড়ি থেকে স্কুল বেশ খানিকটা দূরে। তবে অসুবিধা হবে না। সুপর্ণাই আপাতত ড্রাইভ করে জিকোকে নিয়ে যাবে আর নিয়ে আসবে। মা নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে শুনে নাকি ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা মেম্বাররা বেজায় খুশি। জিকোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল – বানানা কী রঙের হয়? জিকো তার উত্তরে বলেছে গ্রীন, সবুজ। সুপর্ণা ছেলের এই উত্তর শুনে মুষড়ে পড়েছে বুঝতে পেরে জিকো বলেছে – আমি তো ঠাম্মিকে শুক্তোর জন্য গ্রীন ব্যানানাই কাটতে দেখি। জিকোর জবাব শুনে তার দাদান আর ঠাম্মি হো হো করে হেসে ওঠে।
নেহাৎই গল্পের ছলে যে কাহিনি পরিবেশন করলাম তার মধ্যেই কিন্তু ধরে রাখার চেষ্টা করেছি এই সময়ের নবীন প্রজন্মের অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তনের বিষয়টি।
একালের বাচ্চাদের পঠনপাঠনের জন্য কেউই আর সাবেকি সরকারি স্কুলের দরজার হত্যে দিয়ে পড়ছেন না। সকলেই ছুটছেন নতুন স্বপ্নের সন্ধানে। আসুন এই নতুন স্কুলগুলোর অন্দরমহলের কিছু খোঁজখবর নিই।
এই মুহূর্তে আমাদের দেশের মহানগরীগুলোর প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ভর্তির খরচ লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। এই তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে দেশের রাজধানী শহর দিল্লি। ঠিক তার পেছনেই অনুগত অনুজের মতো রয়েছে দেশের মূলধনের রাজধানী মুম্বাই। তারপরেই আসবে ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং কোলকাতা। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে গোটা দুনিয়ার মধ্যে দিল্লিতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পঠনপাঠনের খরচ সবথেকে বেশি - সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং নিউইয়র্কের স্কুলগুলোর থেকেও বেশি !
বছর কয়েক আগে আমার দিল্লি প্রবাসী এক ছাত্র এমন একটা আভাস দিয়েছিলো খানিকটা ঠারেঠোরে। সে জানিয়েছিলো কোলকাতায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে প্রাণপণে। নেপথ্যে মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য বিপুল আর্থিক চাপ। ওঁর স্ত্রী কোলকাতার সিস্টার নিবেদিতা স্কুলের প্রাক্তনী। ফলে তাঁর মধ্যে সেই বোধটা হয়তো এখনও সজীব আছে যে বিপুল খরুচে শিক্ষা ব্যবস্থা মানেই সেরা শিক্ষা তা মোটেই নয়। শেখাটা একদম ভেতরের বিষয়।
এইসব বড়ো বড়ো নামীদামী স্কুলের ব্যবস্থাপনাই অন্য রকম। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর অনেক আগেই অভিভাবকদের ফোনে ফরমান জারি হয়ে যায় খরচের হিসাব জানিয়ে। ফোনের মেসেজ ইনবক্সে মেসেজ ঢোকার সংকেত দেখলেই অনেকের আত্মারাম ছটফট করতে থাকে। ফিজের বহর দেখে অনেকেই তা বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। দেশের প্রথম সারির প্রাইভেট স্কুলগুলোতে পড়ার খরচ বছর পিছু কমবেশি ১২ থেকে 20 লক্ষ টাকা! ইউরোপের সেরা রেসিডেনসিয়াল স্কুলগুলোতে এমনটাই নাকি খরচ। গলা উঁচিয়ে এরপর আমরা সবাই বলতে পারি – আমাদের ছেলে বা মেয়ের স্কুল বিশ্বসেরা। আমাদের দেশের কতোজন মানুষ এমন খরচের চাপ সামলাতে পারেন আমার জানা নেই। দুবাই বা সিঙ্গাপুরের মানুষজনের পক্ষে হয়তো এই খরচ সামলে নেওয়া সম্ভব যেহেতু তাঁদের আয় এদেশের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু এ দেশে? অথচ সকলেই ‘ পেরাইভেট স্কুল ‘ নামক মায়া হরিণের পেছনে দৌড়চ্ছে বা দৌড়তে বাধ্য হচ্ছে।
ইদানিং বেশ কিছু প্রাইভেট স্কুলের নামের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এইসব স্কুল থেকে নাকি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দেওয়া হয়। এমন খোলতাই তকমা শরীরে লাগালে তাদের খরচের নাগাল পাওয়া একরকম দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এখানেও ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা এই আশায় যে তাঁদের সন্তানরা একদিন বিশ্বজয়ী হবে। ধন্য আশা কুহকিনী! আমাদের দেশে এমন স্কুলের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। আগামীদিনে হয়তো এভাবেই সারাদেশে ফুলেফেঁপে উঠবে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সংখ্যা। এইসব সপ এইছাত্রপিছু অভিভাবকদের খরচের নিরিখে আমরাই নিশ্চয়ই হবো বিশ্বসেরা। এইসব স্কুলে পড়ার সুবাদে সমাজে জন্ম নিচ্ছে একধরণের আত্মকেন্দ্রিকতা। বাড়ছে পারস্পরিক অবস্থানের ব্যবধান।
ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে এদেশের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা সাধ্যাতীত ব্যয় করছেন। পারিবারিক আয়কে ছাপিয়ে যাচ্ছে কেবলমাত্র ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর খরচ। এই প্রবণতা ক্রমশই বাড়ছে। সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে পরবর্তী আয়স্তরের পরিবারগুলোর মধ্যে। সবাই এখন মরীয়া বিদ্যা লেনদেনের যজ্ঞের আগুনের পরশ পেতে।
চোখ বুজে ভাবতে বসলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয় ! বড়ো বড়ো বিদ্যা ব্যবসায়ীরা লাখো লাখো টাকা অভিভাবকদের পকেট থেকে নিংড়ে নিলেও শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন দেবার সময় হাতের মুঠো বন্ধ করে রাখে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে দিল্লিতে এমন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সর্বোচ্চ মাসিক বেতন হলো ৪০০০০ – ৬০০০০ টাকা। নিউইয়র্ক অথবা লন্ডনে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের গড় মাসিক বেতন ৫০০০ থেকে ৭০০০ ইউ এস ডলার। তারমানে দাঁড়ালো এই যে এখানকার অভিভাবকরা স্থানীয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরিষেবা কিনছেন আন্তর্জাতিক দরে! এও যে ভাবের ঘরে চুরি!
খরচের হিসাব তো ঐ ১২– ১৫ বা ২০ লাখেই সীমাবদ্ধ নয়। আস্তিনের তলায় গুটিয়ে রাখা খরচের তালিকায় রয়েছে আরও অনেক খরচের হিসাব। স্কুল ইউনিফর্ম,বইপত্র, পরিবহন, টেক্ অ্যাপস্ , এস্কারশন বাবদ খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব খরচ বাবদও নেওয়া হয় ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। কোথাও আরও কিছু বেশি।
এদেশে প্রাইভেট স্কুলগুলোতে পঠনপাঠনের খরচ নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও স্কুলগুলো তাকে পাশ কাটিয়ে ডেভলপমেন্ট ফিজ( fees) এর নামে অথবা অ্যাকটিভিটি ফিজের নামে যথেচ্ছভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করে চলেছেন। অভিভাবকদের অনেকেই এইসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানোর তাগিদ বোধ করেন বলে মনে হয় না। অথচ এইসব স্কুলের পরিকাঠামো সরকারি স্কুলের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হলেও আন্তর্জাতিক মানের স্কুলগুলোর তুলনায় তা অপ্রতুল, অনুন্নত। ক্লাস পিছু ছাত্রছাত্রী সংখ্যা থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা যেমন সুইমিং পুল, ল্যাবরেটরি, অডিটোরিয়াম ইত্যাদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। এদেশে ক্লাস পিছু শিক্ষার্থীর চাপ অনেকটাই বেশি ( ৪০ থেকে ৫০ জন )। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় মাথাপিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অবকাশ কম। এই সময়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিভাবক মনে করেন যে ছেলেমেয়েদের ব্র্যান্ডেড এডুকেশনের আয়োজন করা হলো এক ধরনের বিনিয়োগ – a gamble . এমন ইনভেস্টমেন্ট থেকে কতটা রিটার্ন পাচ্ছেন তাঁরা তা নিয়ে বোধহয় ভাববার সময় এসেছে। মুখে অনেক অনেক স্বপ্নের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কতটুকু ফলদায়ক হয়ে উঠছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
দেশের পঠনপাঠনের বিষয়টি ক্রমশই একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী কারবারি মহলের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তথাকথিত এলিট বর্গের স্কুলগুলোতে দেশের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার ১% এরও কম পড়াশোনা করে। অথচ খরচের নিরিখে এগুলো মহার্ঘ্য। দিল্লির প্রাইভেট স্কুলগুলোর ওপর একটি লেখায় লেখিকা লিখেছেন – “ শুনতে পাই বাড়িতে অন্তত দুটি গাড়ি না থাকলে “শ্রীরাম পাবলিক স্কুল ‘এ ছেলেমেয়ে ভর্তির কোন আশা নেই। ঐ স্কুলের কোন বাস নেই।…বাড়িতে অন্তত দুটো গাড়ি না থাকলে এই স্কুলের ইন্টারভিউয়ের গন্ডি পেরনো যায় না।” বুঝুন অবস্থা!
ছেলেমেয়ের শিক্ষা নিয়ে ব্যয় করতে মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা এখন কোনো কার্পণ্য করতে রাজি নন। সমাজের এই মনোভাবের কথা জেনেই তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় সারির বাজেট ফ্রেন্ডলি তকমা আঁটা বেশ কিছু প্রাইভেট স্কুল। এগুলোতে পড়ানোর বার্ষিক খরচ কমবেশি ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ টাকা। এইসব স্কুলে মূলত প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের ভিড়। পকেটে আসা পয়সার জোরে নবীন অভিভাবকদের ভিড় এখন এই সব স্কুলে। গলায় টাই, শরীরে ব্লেজার পরে এই সব স্কুলে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। এদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।এরাই সরকারি স্কুলের ভাতে থাবা বসিয়েছে।
সরকারি স্কুলে এখন পড়াশোনার খরচ ন্যূনতম। বার্ষিক একটা ফিজ্ দিতে হয় এখানে। তার পরিবর্তে মেলে পোশাক, জুতো, বইপত্র মায় দুপুরের খাবার। এখানে মাস্টারমশাইদের বেতন লাখ ছুঁইছুঁই, অভিজ্ঞদের আরও অনেক বেশি। এই মুহূর্তে এইসব স্কুলের হাল বেহাল, ছাত্র ছাত্রী নেই। এইসব স্কুলের এককালে বিস্তর সুনাম ছিল। মাস্টারমশাইদের বেতন ছিল সামান্য কিন্তু সমাজে তাঁদের আসন ছিল অনেকটাই ওপরে। হায়! সেই গরিমাকাল আজ অন্তর্হিত। সেই সময় আবার ফিরে আসবে এমন সম্ভাবনাও এই মুহূর্তে তেমন উজ্জ্বল নয়।
সরকারি স্কুল সম্পর্কে সাধারণ নাগরিক মানসে ধারণা হলো এই – বিনা পয়সায় স্কুল, লঙ্গরখানা, মাস্টাররা ক্লাস নেয়না, প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের সঙ্গে পড়তে হয় যাদের মধ্যে পড়াশোনা করার,লেগে থাকার মানসিকতা নেই, এইসব স্কুলের কোনো ব্র্যান্ড ভ্যালু নেই। তাই এখানে পড়া ছাত্ররা কাজের বাজারে সহজে বিকোবেনা। মন্তব্য করবোনা।
দেশের পঠনপাঠনের সার্বিক পরিস্থিতি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। শিক্ষা নাকি মানুষে মানুষে বিভেদ কমায়, সামাজিক বৈষম্য দূর করে। অথচ এখানে উল্টো পথে বইছে স্রোত। শিক্ষা বিকিকিনির হাটে তারাই জয়ী হবে যাঁদের কড়ি ফেলার সুযোগ আছে। আর বাকিরা পড়ে থাকবে পিছনে, অনগ্রসরতার কারণ হয়ে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।