বই ,ব্যাগ এবং……
স্কুলে যেতে গেলে একজন শিক্ষার্থীর অপরিহার্য উপকরণ হলো স্কুল ব্যাগ। আমাদের কালের কথা বলতে গেলে ব্যাক্ গীয়ারে সময়টাকে ঠেলে অনেকটা পেছনে নিয়ে যেতে হবে। তাতে হ্যাপা অনেক। একালের মানুষেরা , বিশেষ করে যাঁদের উঠতি বয়স, উড়তি স্বপ্ন - তাঁরা কেউই আর পেছনে ফেলে আসা সময়ের গপ্পো শুনতে চায়না। তাঁদের কথা ভেবে ( পড়ুন সমালোচনা ) একালের পটেই সেকালের গপ্পো বলার চেষ্টা করছি। এতে করে দোনো সুবিধা - সাপও মরবে অথচ হাতের লাঠি হাতেই থাকবে। দেখা যাক দু - পা এগিয়ে।
সেদিন দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর্ব মিটিয়ে খিড়কির দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিতেই মিঠির মুখোমুখি হয়ে যাই। মিঠি আমাদের প্রতিবেশী । মিঠি এবার দশ ক্লাসের পরীক্ষার্থী। স্বাভাবিক ভাবেই জোর পড়াশোনার চাপ। বছর ঘুরলেই পরীক্ষা। তবে স্কুলে যাবার ব্যস্ততা নেই। তা বলে টিউশনে যাওয়াতে কিন্তু কোনো কামাই নেই। বললাম – পড়তে চললিরে মা ? মিঠি মুচকি হেসে ঘাড় নাড়ে। বলতে না বলতেই মিঠির মা মৌ, ঢাউস সাইজের এক ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। পেল্লায় ব্যাগ। নিশ্চয়ই বইপত্রে ঠাসা। হালকা পাতলা গড়নের মৌ কাঁধে গন্ধমাদন পর্বত প্রমাণ ব্যাগ নিয়ে টুকটুক করে পা চালিয়ে মেয়ের পিছে পিছে হাঁটতে থাকে। আমি দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢূকে পড়ি।
আমাদের কালে বই বওয়ার জন্য এমন বাহারি আয়োজন ছিলনা। অবশ্য ব্যতিক্রম ছিল আমার স্কুল, যেখানে আমার নাড়া বাধা। আমাদের স্কুল ব্যাগ ছিল খাকি ক্যানভাসের তৈরি। মিলিটারি কায়দায় পুরোদস্তুর খাকি পোশাকের সঙ্গে মানানসই করেই ছিল এমন আয়োজন। একদিনের কথা বলি। বেঞ্চের নিচের পাটাতনে ব্যাগ ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে দুই সহপাঠীর মধ্যে খুটমুট ঠোকাঠুকি বেঁধে গেছে। ক্লাসে তখন গৌরী দি। দিদিমণি হিসেবে বেশ কড়া মনোভাবের, আর মানুষী হিসেবে একেবারে তুলতুলে নরম মনের। যাইহোক লড়াইয়ের ঝাঁঝ বাড়তেই গৌরী দির নজরে ক্যাঁচ কট্ কট্ দুই দুরাত্মা । আমরা বাকিরা সবাই প্রমাদ গুণছি কি জানি কী হয় ভেবে। সব বেত্তান্ত শুনে গৌরী দি খালি চাপা স্বরে বললেন - “ওহ্! এই সমস্যা?” তারপরেই গলার আওয়াজটাকে একটু ভারী করে বললেন – “সবাই নিজের নিজের ব্যাগ বেঞ্চের ওপর তুলে রাখো।আমি দেখবো।”
মুহূর্তের মধ্যেই হুকুম তামিল,সবার ব্যাগ তখন বেঞ্চের ওপর।গৌরী দি একনজরে ব্যাগগুলো দেখেই বেঢপ চেহারার ব্যাগ গুলোকে আলাদা করে বেছে নিলেন ; তারপর ঠাণ্ডা গলায় বললেন – “সব কিছুরই একটা কায়দা আছে। যেমন তেমন করে বইপত্র ঠেসে ঠুসে ব্যাগে ঢোকানো হলে, তা নিয়ে রোজই পাশাপাশি বসে থাকা বন্ধুদের মধ্যে খিটিমিটি লড়াই বেঁধে যাবে। তারচেয়ে বরং আজ আমরা ব্যাগ গোছানোর সঠিক কায়দাটা শিখে নিই।” – একথা বলেই গৌরী দি ব্যাগ গোছানোর কায়দা শেখাতে শুরু করলেন। আমরাও দিদির দেখানো কায়দায় নিজেদের ব্যাগগুলোকে যত্ন করে গুছিয়ে নিলাম। সেদিন থেকে পাশাপাশি একই বেঞ্চে বসা বন্ধুদের কনুই ঠোকাঠুকির কাজ চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গেল। একালের সাহেব মেম তৈরি করা মিঠির স্কুলের ক্লাসঘরে সব ‘সেপারেট ইন্ডিভিজুয়াল ডেস্ক ‘ তাই বন্ধুদের সাথে পাশাপাশি বসাও নেই, চুলোচুলি করে শরীর ও মনের উষ্ণতা ভাগ করে নেওয়া নেই, আর গৌরী দি তো নেইইই।
আমাদের কালে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে খানিকটা সময় লেগেছিল। কাঁধের ব্যাগ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আগে এ্যালুমিনিয়াম অথবা চামড়ার তৈরি সুটকেসে করে বইপত্র নিয়ে যাওয়া হতো। এতে করে বইপত্র বেশ পরিপাটি থাকতো বটে, তবে তাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বেঞ্চের নিচের ডেস্কে ঠিকঠাক ঢুকিয়ে রাখার কাজটা মোটেই সহজ ছিলোনা। অতয়েব তা কখনোই দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা হয়ে ওঠেনি।
হাইস্কুলে পড়তে গিয়ে অবশ্য বইপত্র নেবার অন্যান্য কায়দার সাথে পরিচিত হলাম। হাইস্কুল আমাকে শেখালো – রোজ রোজ গাদাগুচ্ছের বই নিয়ে স্কুলে আসার গুডিগুডি কায়দা ছাড়তে হবে, স্রেফ একটা চটি খাতা নিয়ে চলে এসো । এতে করে নাকি ফ্রি মুভমেন্টের বেজায় সুবিধা। ঝাড়া হাত পায়ে চলতে শেখাটাও ভীষণ জরুরি। অনেকেই এই তত্ত্ব মেনে জামাটাকে প্যান্টের ভিতর গুঁজে নিয়ে জামার ভিতর খাতাটাকে চালান করে দিতো। প্যান্টের ভিতর খাতা গুঁজে সহজেই যথা ইচ্ছা তথা চলে যেতে পারতো তারা । আমাদের কয়েকজনের বুকের পাটায় তেমন জোর ছিলোনা। তাই আমরা কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের তৈরি শান্তিনিকেতনী ব্যাগে করে বইপত্র ,খাতা ইত্যাদি নিয়ে যেতাম। সম্ভবত এই সময় থেকেই কাঁধে ঝোলানো কমরেড সুলভ ব্যাগের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেটা গত শতকের সত্তরের দশকের কথা।
একালে অবশ্য ব্যাগের বাহার অফুরন্ত। একাধিক খোপযুক্ত একালের ব্যাগে বিস্তর জিনিস ঢোকে। আমার অত্যন্ত পরিচিত এক মানুষ জানিয়েছিলেন তাঁর নাতির ব্যাগে প্রতিদিন পনেরোটা খাতা,রুটিন মাফিক খান ছয়েক বই, পেন পেন্সিলের বাক্স,দু লিটার জলের বোতল, টিফিনের কৌটো নিয়ে যেতে হয়। স্কুলবাসেই যাতায়াত করে। বৌমা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাসস্ট্যান্ড অবধি যায়, আবার ফেরার সময় ওই বাসস্ট্যান্ড থেকেই নাতিকে নিয়ে আসে ব্যাগখানি পিঠে করে। এতে খানিকটা হাঁটাহাঁটিও হয়। কখনো কখনো আমার বন্ধুবরকেও এই কাজটি করতে হয়। নাতিই তো বংশের বাতি!
ব্যাগের সাথে সাথে ভেতরের বহনীয় উপাদানের চরিত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে একালে। আর এই পরিবর্তনের সূত্রধরেই ব্যাগ থেকে বেমালুম উধাও হয়ে গেছে কতগুলো উপকরণ যা একসময় ছাত্রদের ব্যাগে জায়গা করে নিত । স্কুলব্যাগের এই আদি ও অকৃত্রিম দোসররা হলো ইংরেজি ডিকশনারি, ম্যাপ বই বা এ্যাটলাস্ এবং গল্পের বই। এই প্রসঙ্গে প্রয়াত সুকান্ত দার কথা মনে পড়ছে ভীষণভাবে। কনভেন্টে পড়া ছাত্র। মাস্টারমশাই হিসেবে এলেন আমাদের স্কুলে সহকর্মী হিসেবে। তাঁর চলনে বলনে এক আশ্চর্য দিলদার মেজাজ ছিল। ইংরেজি পড়াতেন। তখন স্ট্রাকচারাল ফাংশনাল পদ্ধতিতে ইংরেজি পড়ানোর ধুম লেগেছে শিক্ষাঙ্গনে। সুকান্ত দা ক্লাস সেভেন আর এইটের ছাত্রদের কলিন্সের পকেট ডিকশনারি আনার ওপর জোর দিলেন। সবাই সাত তাড়াতাড়ি গুরুবাক্য শিরোধার্য করে ডিকশনারি আনা শুরু করলো তা নয়, তবে এই ফরমানের কারণে দুটি বিষয় বেশ জানা গেল -এক. ছাত্রদের অনেকেরই এই ….নারির সঙ্গে নাড়ির যোগাযোগ নেই, আর দুই . অনেকেই ডিকশনারি দেখতেই জানেনা। সুকান্ত দার এই এডভেঞ্চার অবশ্য স্থায়ী হয়নি,কারণ ততদিনে ছেলেরা বৈকালিক পাঠবাসরে যাতায়াতের প্রবল অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। স্কুলের পাঠ্য বইয়ের তুলনায় স্যারদের ফরমাইশ অনুযায়ী বইখাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেওয়া বিশেষ মান্যতা পেতে শুরু করেছে। দ্রুত বদলে যায় ফরমান, ট্রাডিশন -সবকিছু ।
একালে ডিকশনারি সঙ্গে রাখার কথা কেউই ভাবেনা। স্কুলের তরফেও এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয় না। ডিকশনারির বোঝার পরিবর্তে এখন শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে এসে পৌঁছেছে ট্যাবলেট বা স্মার্টবোর্ড। পাতা উল্টিয়ে সঠিক শব্দ আর খুঁজতে হয়না। ঝটপট সমাধান। ওদের ব্যাগে এখন তাই এইসব উপকরণ ঠাঁই পেয়েছে। আর সেদিনের পকেট ডিকশনারিরা বিলকুল উধাও হয়ে গেছে কালের গর্ভে।
“একথা মানতেই হবে যে একালের “এডুকেশন” একেবারেই বদলে গেছে, যারফলে সেকালের চলতি পাঠ উপকরণগুলো এইসময়ে একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। আমি অভিধান বা ডিকশনারির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি, কিন্তু একালের এক শিক্ষার্থীকে সেই বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা খুব কঠিন। একালের বাচ্চাদের কাছে সহজে কাজ হাসিলের উপায়টাই অনেক অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”– এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সিনিয়র স্কুল প্রিন্সিপাল Tina Servaia.
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে পকেট ডিকশনারিকে তাই আজ আর স্কুল ব্যাগে রাখার কথা মনে করেনা কেউই। ডিকশনারির দিন চলে গেছে। তাদের ঠাঁই এখন লকারের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে।
মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড একাডেমির ভাইস প্রিন্সিপাল নুপূর ঘোষের কথায় – “কোভিড প্যানডেমিকের আগে যদিওবা ডিকশনারির ব্যবহার টুকটাক চলছিল,গত চার বছরে এর ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। এরফলে স্টুডেন্টদের মধ্যে অনেকেই alphabetical order মনে রাখতে পারছে না যা তাদের জুনিয়র ক্লাসের পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন শব্দ নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য স্মার্ট বোর্ডের সাহায্য নেওয়ার চল হয়েছে।”
কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত বিড়লা হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল
জেসিকা গোমসের অভিমত – “ডিকশনারি দেখার অভ্যাস অতুলনীয় এক পরম্পরা। এরফলে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে একটি শব্দের বহুতর ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একালের ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণে এই সুবিধা নেই। এখন এক ক্লিকেই সব সমস্যার সমাধান।” একালে পুরনো উপকরণের অনেক কিছুই অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, এককালের ডিকশনারি আজ তাই আর স্কুল ব্যাগের পক্ষে সত্যিই অপ্রয়োজনীয়। সুকান্ত দা একথা শুনতে পেলে ভারি কষ্ট পেতেন।
স্কুল ব্যাগের আরও একটি উপকরণ ছিলো অ্যাটলাস বা মানচিত্র বই। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে এই প্রয়োজনীয় পাঠ উপকরণটিও একালের শিক্ষার্থীরা ভুলেও ব্যাগে ঢোকানোর তাগিদ অনুভব করে না। অথচ মানচিত্র হলো ভৌগোলিকের ভাষা। পৃথিবীর আঞ্চলিক পরিচিতির জন্য মানচিত্র বইয়ের গুরুত্ব রয়েছে। মনে আছে হেডমাস্টার মশাই আমাদের ভূগোল পড়াতেন। বুক লিস্টে চণ্ডীচরণ দাসের অ্যাটলাসের কথা লেখা থাকতো। একবার কিনলে বেশ কয়েকবছর তাতেই চলে যেতো। অ্যাটলাস হলো বিশ্ব বীক্ষণের প্রাথমিক উপকরণ। তাই যেদিন ভূগোলের ক্লাস থাকতো সেদিন তো বটেই, সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও আমরা তাকে ব্যাগ বন্দী করে নিতাম। কেন? ম্যাপ নিয়ে আমাদের এক মজার খেলা ছিল – ম্যাপ বইয়ে কোনো বিশেষ জায়গাকে খুঁজে বের করা। হয়তো কেউ বললো কামচাটকা উপদ্বীপের নাম। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি চলতো। ম্যাপ বইয়ে খুঁজে পাওয়া সহজ ছিলোনা। তবে যার চর্চা বেশি ছিল সে সহজেই তাকে খুঁজে বের করে ফেলতো। এভাবে কত অজানা জায়গা ঘোরা হয়ে যেত আমাদের। চাঁদের পাহাড়ের খোঁজে আমরা পাড়ি দিতাম নিজেদের চেনা ঘেরাটোপ ছেড়ে দূরে দূরান্তরে। বিস্ময়ের তো অন্ত ছিলোনা। পারুল দি ভূগোল পড়াতে এসে ম্যাপ বইয়ের পাশাপাশি ভিউ ফাইন্ডারে থ্রি ডায়মেনশনাল ছবি দেখিয়ে সবাইকে আরও আরও চাগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের পাঠদানের মধ্যে বিস্ময় লুকিয়ে থাকতো। এখনকার এক ক্লিকের দুনিয়ায় সেসব কোথায়?
আমাদের পড়াশোনার মধ্যে বিস্ময়ের স্থান নেই। গোদা অক্ষরেই আমাদের সবকিছু বাঁধা পড়ে গেছে অনেকদিন।
তাই সুশীলা বিড়লা গার্লস স্কুলের প্রিন্সিপাল কোয়েলি দে যখন বলেন – “সময়টাই বদলে গেছে। পাঠক্রমের পরিবর্তন সেই সাবেকি ধ্যান ধারণায় বদল এনেছে। স্পেস সেন্সের চেনা ধারণাকেই বদলে ফেলা হয়েছে একালে। ফলে মানচিত্র বইয়ের গুরুত্ব আজ কোথায়? ইন্টার এ্যাকটিভ বোর্ড এখন এইসব সমস্যা নিমেষেই সমাধান করতে পারে। তাহলে ব্যাগ ভরে অ্যাটলাস নিয়ে যাবে কেন ?” ব্যাগ থেকে তাই, অ্যাটলাস বই বাই বাই !
আরও একটি জিনিস হয়তো চিরকালের মতোই স্কুলব্যাগে ঠাঁই পাবার ব্যাপারে ব্রাত্য হয়ে গেল, তা হলো গপ্পের বই। বাড়িতে বাবা মায়ের নজর এড়িয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া স্বপনকুমারের গোয়েন্দা সিরিজের চটি বই অথবা বেতালের কমিকসের বইগুলো ব্যাগে করে নিয়ে যেতাম বন্ধুদের সঙ্গে অদলবদল করে নেবার জন্য। ঐ সব বইয়ের প্রতি নিষিদ্ধ আকর্ষণ ছিল। একালে তো বই পড়ার অভ্যাসটাই বিলকুল লোপাট। মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করা ছাত্র অথবা ছাত্রীদের মুখের সামনে মাইক্রো ফোন ধরে সাংবাদিকরা যখন জানতে চান – কী কী বই পড়তে ভালো লাগে? তখন যে সব কথা উত্তর দিতে গিয়ে তাঁরা বলে তার মধ্যে বিশ্বাস, ভালোবাসা, অনুভূতির স্পর্শ থাকেনা। আসলে ওদের বই পড়ার সময় কোথায়? সারাদিন আমাদের মিঠির মতো স্যার আর ম্যাডামদের এক আখড়া থেকে অন্য আখড়ায় ঘুরে ঘুরে মাধুকরী সংগ্রহ করে ফিরতে হয়। পাঠ্যবই পড়াটাই যখন অবসোলেট হয়ে গেছে, তখন গপ্পের বইয়ের সেই স্বপ্নালু আকর্ষণ আর থাকে কখনও !
আজ বরং শেষ করি একটা কবিতা দিয়ে। এই সময়টাকে ধরে রাখতে চেয়ে লিখেছিলাম কথা কটি কোনো এক সময় –
বদলে গিয়েছে,সব বদলে গিয়েছে ।
আজকাল আমাদের খেলা নেই,
মাঠ ময়দান জুড়ে কংক্রিট
সারাদিন ছোটাছুটি,ছুটি নেই -
জীবনের রেট্ ( rat ) রেসে হতে ফিট্।
বদলে গিয়েছে , সব বদলে গিয়েছে।
সকালেতে ঘুম চোখে দৌঁড়ও
অঙ্ক বা বিজ্ঞান কোঢিং এ ,
ক্লান্তি! আরে মাৎ ঘাবড়াও ,
এই বেলা সবকিছু শিখে নে!
………..
তবু কোনো সোনাঝরা সকালে
মন- পাখি মেলে দেয় ডানা তার,
রুটিনের বাঁধা গৎ ঠেলে দূর
পার হই স্বপ্নের পারাবার।….,( সংক্ষেপিত)
বুকের ভেতর স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকুক। ব্যাগ ভর্তি হয়ে বেঁচে থাকুক।
পুনশ্চ :
এতক্ষণ ধরে যেসব কথা লিখেছি তার সবটাই তথাকথিত কর্পোরেট স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ নিয়ে। সেই সব ব্যাগের গড়ন পিটনের সঙ্গে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও তার ভেতরের উপকরণগুলো কখনোই এক নয়। ইচ্ছে রইলো এদের ব্যাগের ভেতরের খবর নিয়ে লেখার। ধন্যবাদ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।