স্বপ্ন আসুক নেমে…..
পুজোর ঠিক পরেই Greater Kashmir পত্রিকার পাতায় ছাপা আবিদ রশিদ বাবা’র লেখা একটি নিবন্ধ পড়ছিলাম। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে জম্মু ও কাশ্মীর এখন খানিকটা দল ছাড়া অবস্থায় রয়েছে। সেই অঞ্চলের মানুষ আবিদ সাহেব শিক্ষা নিয়ে তাঁর একান্ত অনুভবের কথা বলছেন দেখে বেশ আগ্রহী হয়ে ইংরেজিতে লেখা নিবন্ধটি খানিকটা
সময় নিয়ে পড়েও ফেললাম। কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও শিক্ষা নিয়ে ভাবতে বেশ ভালো লাগে, মনে হয় এমন ভাবনায় মজে থাকাতেই বোধহয় এখনো বেশ স্বচ্ছন্দ।
আবিদ রশিদ বাবা তাঁর নিবন্ধের শিরোনামেই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের, বিশেষ করে মাস্টারমশাইদের। তাঁর নিবন্ধের শিরোনাম – “Are Teachers Killing Creativity”? - আমরা শিক্ষকরা কি হন্তারকের মতো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে হনন করছি? বড়ো সাংঘাতিক সত্যের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিলেন আবিদ সাহেব। নিমেষের মধ্যে আমি আমার প্রায় সাড়ে তিন দশকের শিক্ষকতা জীবনের কুলজি পঞ্জি মন-চোখের সামনে মেলে ধরলাম। নিজের পিঠ বাঁচাতে সামান্যতম তৎপরতা না দেখিয়ে নিবন্ধটির দীর্ঘ আলোচনায় ডুবে যাবার চেষ্টা করলাম
সর্বান্তকরণে। আয়নায় নিজের রূপ দেখলে আমরা অনেকেই বোধহয় আৎকে উঠি, রশিদ সাহেব বুঝিবা আমাদের সামনে এমনই এক দর্পণ মেলে ধরতে চেয়েছেন।
আবিদ রশিদ বাবা’র এহেন একটি নিবন্ধ রচনার পেছনে এক আনন্দময় অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপট রয়েছে। বেশ কিছু সময়
আগে রশিদ সাহেব শ্রীঅরবিন্দ প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিচেরীর অরোভিল আশ্রমে গিয়েছিলেন Earthshastra শীর্ষক আট দিনের এক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে। এই কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্যই ছিল শ্রী অরবিন্দ এবং শ্রীমায়ের মানুষ গড়ার শিক্ষাধারার সঙ্গে শিবিরে যোগদানকারী প্রতিনিধিদের গভীরভাবে সম্পর্কিত করা, যাতে তাঁরা শিবির শেষ করে নিজেদের কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে এক মুক্ত উদার বন্ধনহীন আনন্দময় শিক্ষার অংশীদার করে তুলতে পারেন তাঁদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের। বলা বাহুল্য যে আরও অনেকের মতো রশিদ বাবা ঐ ভিন্ ধারার শিক্ষা দর্শনের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কাশ্মীরের চলতি গতানুগতিক ধারার শিক্ষা পদ্ধতি তাঁকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে। আর তাই হয়তো এই নিবন্ধটির রচনা।
আমাদের দেশের চলতি শিক্ষায় শিশুদের শেখানোর আয়োজনের অন্ত্য নেই – নামিদামি বহুমূল্যের পাঠশালা থেকে শুরু করে হরেক কিসিমের আয়োজন – কোচিং সেন্টার, স্টাডি সার্কেল , ডিজিটাল ক্লাসরুম, হালফিলের এ আই প্রযুক্তি মায় বইয়ে মুদ্রিত QR code স্ক্যান করে অনন্ত জ্ঞানসাগরে অবগাহনের বিজ্ঞাপনী হাতছানি। এতো সব আয়োজনের মাঝে জিজ্ঞাসু প্রশ্নমুখর শিশুটিকে খুঁজে পাওয়াই ভার। তোতাকাহিনির সেই হতভাগ্য তোতাটির কথা স্মরণ করুন।
এতশত আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের ফলে তাঁর অজানা কিছু নেই। আমি জানিনা - এই কথাটা বলাটা বোধহয় তাঁর কাছে গর্হিত অপরাধ। তাই সে তোতাকাহিনির তোতার মতো নির্বাক, প্রশ্নহীন। শিশুর স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত জানার ইচ্ছে আর আগ্রহের ভ্রুণটিকে আমরা আয়োজনের বহ্বাড়ম্বড়ে গর্ভাবস্থাতেই মেরে ফেলতে তৎপর।
রশিদ বাবা এই সময়ের কাশ্মীরের চলতি শিক্ষাধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর আক্ষেপ – ‘শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে দমবন্ধ করা পরিবেশে এক ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে , যেখানে সব জানি বলে ভাণ করছে সবাই অথচ সত্যিকারের জানার ঘড়াটি শূন্যই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও এই মিথ্যেকে আড়াল করার সংস্কৃতিতেই অনেক বেশি ব্যস্ত থাকছেন সত্যের সন্ধানে ব্রতী না হয়ে। আমাদের স্কুলগুলোতে এখন আর উদ্ভাবন ও মৌলিক ক্রিটিক্যাল চিন্তার চর্চা হয় না। সেখানে এখন মধ্য মেধার প্রতিপালন হচ্ছে প্রতিদিন। আর এইসব করতে গিয়ে আমরা ক্লাসরুমগুলোকে ক্যাশরুমে পরিণত করে ফেলেছি।’
কথাগুলো খুব দুঃখের সঙ্গে বলেছেন রশিদ সাহেব। আসলে অরোভিলের খোলামেলা ভাবনার পঠনপাঠন পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের পরিচিত সামগ্রিক পাঠপরিবেশকে কিছুতেই মেলাতে পারেননি তিনি। ফলে তাঁর নিবন্ধের প্রতি পদে ঝরে পড়েছে ক্ষোভ, হতাশা আর প্রতিতুলনা। বারংবার তাঁর মনে, হয়েছে যে আমাদের চলতি ব্যবস্থা অনেকটাই বন্দিশালার মতো যেখান একটাই বুলি নিরন্তর আওড়ে চলা হয় কোমলমতি শিক্ষার্থী শিশুদের উদ্দেশ্যে – “চলো নিয়ম মতে,চলো নিয়ম পথে।” কঠোর নিয়ম আর অনুশাসনের নামে বিকাশমান মনুষ্য সত্তাকে পদে পদে বেঁধে রাখার ফন্দি আঁটতেই ব্যস্ত আমরা – একই রকমের ইউনিফর্ম, একই রকম বিধি নিষেধের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য,একই ছন্দে চলন বলন ভাবন – জেলখানার কয়েদিদের থেকে আমাদের শিশুদের কোথায় আলাদা করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে আমাদের চলতি শিখন শিক্ষণ ব্যবস্থা? এমন একটা ঘেরাটোপের মধ্যে থেকে ক্রমশই প্রশ্ন হীন, স্বপ্ন হীন একদল মানবক কেবলই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে বড়ো হচ্ছে, মনের মুক্তিতে নয়। এক বদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।’ মাঝে কখনো কম্পিউটার, স্মার্ট ক্লাসের ডঙ্কা বাজিয়ে সমস্ত অসম্পূর্ণতাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছি মাত্র। এতে করে কি আর ভাবের ঘরের চুরি ঠেকানো যায়!
কাশ্মীরের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা রশিদ সাহেবের এমন ভাবনা চিন্তার প্রেক্ষাপট রচনা করেছে কিনা বলতে পারবোনা। যদি তাই হয় তাহলে বলতে পারি যে এমন ভাবনা মোটেই অমূলক নয়। কাশ্মীরের শিক্ষা নিয়ে যে কথাগুলো তিনি বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন তা আসলে আমাদের সারা দেশের প্রচল শিক্ষা নিয়েই বলা যায়, বিশেষ করে সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে। আমাদের দুর্ভাগ্য, অপূর্ণতা, এটাই যে শিক্ষার সঙ্গে আমরা কখনোই আনন্দকে সংযুক্ত করতে পারিনি। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে আমাদের শেখা ও শেখানোর মধ্যে মুক্তির সামান্য ছায়াপাত ঘটেনি। “আমরা মন খাটাইয়া সজীবভাবে যে জ্ঞান উপার্জন করি তাহা আমাদের মজ্জার সাথে মিশিয়া যায় ; বই মুখস্থ করিয়া যাহা পাই তাহা বাহিরে জড়ো হইয়া সকলের সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটায়।” রশিদের গভীর আক্ষেপ এখানেই।
পথ চলতি দেখা হয়ে যাওয়া দুই শিক্ষার্থীর ব্যথা করুণ পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে রশিদের লেখায়। এক ছাত্রীর কাছে রশিদ জানতে চেয়েছিলেন তাঁর মনোকষ্টের কারণ। উদাস চাউনি, ব্যথা ভরা বিষণ্ন অভিব্যক্তি দেখে রশিদ তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চাইলে মেয়েটি বলেছিল,-- ‘আমার সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমাকে বাধ্য করা হয়েছে ফিজিওথেরাপির কোর্স করার জন্য। আমার মন এক জায়গায়,আর শরীর অন্যত্র।’ কাশ্মীরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখন এমনটাই চলছে। গোটা দেশেও এটাই দস্তুর।
কথা প্রসঙ্গে রশিদ উল্লেখ করেছেন মহারাষ্ট্রের অনুরাগ বোরকারের কথা। মাত্র ১৯ বছর বয়সী অনুরাগ NEET পরীক্ষায় ৯৯.৯৯ পার্সেন্টাইল নম্বর পেয়েছিল যা দেখে অবাক হয়েছিল দেশের তাবৎ পড়ুয়া এবং তাঁদের সাফল্য পিয়াসী অভিভাবকরা। অনুরাগের এই সাফল্যের উদযাপন চলছিল তাঁর বাড়িতে।সবাই যখন উৎসবের আনন্দে উদ্বেলিত তখনই একটা ছোট্ট চিরকুটে – “আমি কখনোই এটা চাইনি “– এই কথাকটি লিখে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছিল অনুরাগ। কি ভয়ঙ্কর পরিণতি! অনুরাগ চলতি ব্যবস্থাকে জয় করেছিল নিজের চেষ্টায়, অথচ ব্যবস্থার শিকার হতে হলো তাঁকে। কি নিদারুণ পরিণতি! আসলে অনুরাগ তো একা নয়! এমন শতশত অনুরাগ শিক্ষাতন্ত্রের হাঁড়ি কাঠে প্রতিনিয়ত আত্মাহুতি দিচ্ছে। কোটার কথা মনে পড়ে?
রশিদ বলেছেন, আমাদের “স্কুল” ও “কলেজ” এই দুই অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই আমরা আমাদের জীবনকে খুব চেনা পথে পরিচালিত করছি এতাবৎকাল – আমরা ভর্তি হই, পরীক্ষায় পাশ দিই , কতগুলো গ্রেড পয়েন্ট অর্জন করি। এটাই আমাদের সাফল্যের অতি চেনা পথ। এ পথেই হাঁটতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা। আর তাই আমরা ভালো আচরণ করি, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম মেনে চলি, যা যা করতে বলা হয় বিণা বাক্যে তাই করি। আপাতদৃষ্টিতে এ সব আমাদের নির্মিতিতে যথার্থ ফলদায়ী হয়ে উঠবে মনে করলেও ভেতরে ভেতরে অনেক শূন্যতা আমাদের গ্রাস করতে থাকে। মানুষ হিসেবে যে মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে চাই, মজার ব্যাপার হলো এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তা আমাদের শেখায় না। গণ নির্মিতির যে ব্লু প্রিন্ট আমরা ছকে রেখেছি এতোদিন ধরে,তাকে প্রশ্নহীন ভাবে অনুসরণ করেই এগিয়ে চলেছে আমাদের শিক্ষা। এই ব্যবস্থা আমাদের নিজের মতো করে ভাবতে শেখায় না, আমরা নিছক কর্মী হিসেবেই নিজেদের দেখতে পছন্দ করি। তাই আমাদের জীবন কেটে যায় জাবর কাটার মতো চেনা বুলির চর্বিত চর্বন করে। আমরা পঠনীয় বিষয়কে স্মৃতি বন্দি করতেই শিখলাম, বুঝতে শিখলাম না। অন্যের বলা কথা সাজিয়ে গুছিয়ে উচ্চারণ করেই আমাদের দিন কেটে গেল, নিজের মুখে নিজের কথা আর বলা হলোনা। হয়তো এই কারণেই আমরা নিজের কাছেই অচেনা রয়ে গেলাম। শেখানো বুলিতে অভ্যস্ত হতে গিয়ে আমাদের নিজস্বতাই গড়ে উঠলো না। গোটা ব্যবস্থাটাই একটা অসার কথোপকথনের বদ্ধ জলাশয়ে আটকে রইলো।
শিক্ষা নিয়ে এমন সমস্যার আলোচনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিদগ্ধ শিক্ষাবিদরা এই বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন, সন্ধান দিয়েছেন নতুন পথের যা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষাগুরুদেরও আত্ম উন্মোচনের পথ দেখিয়েছে। এদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, শ্রী অরবিন্দ ও শ্রী মা , জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তির মতো মানুষেরা যে শিক্ষা পথের সন্ধান দিয়েছেন সেই পথ আমরা বর্জ্যের মতো বর্জন করেছি। তার বিকল্প হিসেবে যা বেছে নিয়েছি তা কখনোই আমাদের শিক্ষাকে আনন্দময় করে তুলতে পারে নি। চরম বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা যতটুকু অর্জন করেছি, হারিয়েছি তার থেকে অনেক গুণ বেশি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সৃজনশীলতা নেই, উদ্ভাবন নেই, আত্মোপলব্ধি নেই। আর তাই জীবনের কঠিন অংকের হিসাব মেলাতে গিয়ে আমরা সহজেই দিশেহারা হয়ে পড়ছি । আত্মহননের পথ বেছে নিতে দ্বিধা করছে না আমাদের একালের শিক্ষার্থীরা।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষার প্রাঙ্গণে গুরুদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুরাই পথের দিশা দেখান। অথচ গুরুদের সেই গরিমায় ভাঁটা পড়েছে। শুনতে খারাপ লাগলেও একথা সত্যি যে অধিকাংশ শিক্ষকের মধ্যেই সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির অভাব রয়েছে। সেই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ের ক্লান্ত অনুবর্তন করেই দিন কাটছে তাঁদের। এমনিতেই নানান বিচিত্র আয়োজনের ফলে ছাত্রদের মধ্যে প্রশ্ন মুখরতা কমেছে, তার ওপর কোনো ছাত্র যদি চেনা গৎ এর বাইরে গিয়ে বেমক্কা প্রশ্ন করে বসে তাহলে মাস্টারমশাইরা ধমকে তাঁকে চুপ করিয়ে দেন। এই অবস্থা শিশুমনের মুক্তির পক্ষে যে মোটেই অনুকূল নয় তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
শিক্ষার উচ্চতম লক্ষ্য ও আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়েছি অনেককাল হলো। আজকাল পঠনপাঠনের বিষয়টি ক্রমশই যেন শ্রমিক তৈরির উপায়ে পর্যবসিত হতে চলেছে। আর তাই সমস্ত শক্তি,উদ্যম ব্যয়িত হচ্ছে কল্পশক্তি বিহীন একদল শূন্যগর্ভ যন্ত্রমানব নির্মাণের কাজে। বাঁধা ছন্দের জীবনে মুক্তির পথ অজানা থেকে যায় তাঁদের কাছে। আসলে সমাজ এখন চিন্তাবিদ চায়না। তার দরকার প্রশ্ন বিমুখ একদল কর্মী যাঁরা ঘন্টা ধরে কাজ করবে, মুখ বুজে মেনে চলবে বাঁধা অনুশাসন। ‘Pedagogy of the Oppressed’ বইতে ব্রাজিলের বিখ্যাত শিক্ষা চিন্তাবিদ পাওলো ফ্রেইরি এমনই এক স্থূল দেওয়া নেওয়ার কথা বলেছিলেন। ঔৎসুক্যহীন এক শিক্ষার্থী প্রজন্মের উৎপাদন করে চলেছেন অসহায় গুরুমশাইরা। এর মধ্যে যাঁদের ব্র্যান্ড ভ্যালু কিঞ্চিত বেশি, বিকিকিনির হাটে তারাই বিকিয়ে যাচ্ছে।
আবিদ রশিদ বাবা'র নিবন্ধের সূত্র ধরে অনেক কথা বলা হয়ে গেল। মূল নিবন্ধটি পড়তে পড়তে আমার প্রতিক্ষেত্রেই মনে হয়েছে অরোভিলের মুক্ত পরিবেশের সমাহিত শিক্ষাদর্শ তাঁকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। এমনটাই যে স্বাভাবিক। রশিদ সাহেব তাঁর রাজ্যের অস্থির আশঙ্কিত পরিবেশের মধ্যে থেকে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় আছেন। সিস্টেমের নিগড়ে বাঁধা থাকতে থাকতে আমরা মনের দরজাতেও শেকল পরিয়ে রাখতেই যেন অভ্যস্থ হয়ে গেছি। একবার নতুনভাবে না হয় জাগরণের গান গেয়ে উঠি সবাই মিলে। কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন তবে বিশ্বাস করি, অসম্ভব নয়। স্বপ্ন ভরা চোখে সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে না হয় মেতে উঠি সকলেই।
উৎসর্গ
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বন্ধুবর অধ্যাপক অভিজিৎ পাঠক মশাইয়ের উদ্দেশ্যে এই নিবন্ধটি উৎসর্গিত হলো।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।