এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • খাপছাড়া চিন্তাগুলো

    Prasun Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১১০ বার পঠিত
  • চারপাশে দেখতে পাই, এখন মানুষেরা কেমন যেন অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে। যেন আবেগ প্রকাশ করা যেন এখন দুর্বলতার প্রমাণ, আর গভীরভাবে কিছু চিন্তা করা সমাজের কাছে অস্বস্তির কারণ। মানুষের ভেতরে যে প্রাকৃতিক স্পন্দন, যা তাকে মানুষ করে তোলে—সেটাকেই যেন এখন অবলীলায় অস্বীকার করা হচ্ছে। 
    বোধহয়, অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়াটাই এখন ট্রেন্ড। যেকোন বিষয়ে অল্প গভীর চিন্তা কিংবা কোন গভীর অনুভূতি নিয়ে কথা শুরু হলেই মানুষেরা যেন বিব্রত বোধ করছে। তারা কি কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইছে?
    যেন তারা আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ভয় পাচ্ছে বা লজ্জা পাচ্ছে। মনুষত্ব, মানবতা, সূক্ষ্ম অনুভূতি - এই জিনিসগুলো দুষ্প্রাপ্য হতে হতে পরবর্তী কোন সময় হয়তো দেখব এগুলো অসামাজিক হয়ে উঠেছে! তখন কেউ অনুভূতি নিয়ে কথা বললেই যেন সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অপরাধ!

    আগেকার দিনে দেখতাম, এই যেমন, বাবা মা কাকা মামা কাকিমা মামিমা - এরা একসঙ্গে হলে খুব গল্প করছে। হৈ হুল্লোর, খুব আনন্দ উচ্ছলতা, কখনো কেউ একটা কোন গান ধরল গান করছে কেউ তাতে তাল দিল কেউ তাতে গলা মেলালো...... 
    এই ছোট ছোট সামাজিক মিলন গুলো ছিল জীবনের প্রাণ। পাড়ার আড্ডা, পারিবারিক গল্পগুজব, গান ধরা, একসাথে খাওয়া—এসবই মানুষের ভেতরের আবেগকে জীবিত রাখত। সেখানে হাসি, কান্না, উত্তেজনা, স্বপ্ন—সবকিছুর স্থান ছিল।

    এখন দেখি সমাজের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মানুষজন একসাথে বসে থাকে, কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকায় না। এখন রাস্তাঘাটে ছেলেমেয়েদের দেখি সবাই যেন চুপচাপ, উচ্ছলতাহীন, উত্তেজনাহীন, উদ্দেশ্যহীন এক জীবন অতিবাহিত করে চলেছে। সবাই ডুবে থাকে ভার্চুয়াল পর্দার মধ্যে—যেখানে আসল অনুভূতি নেই, আছে শুধু সাজানো মুখোশ। যেন আমরা এক অদ্ভুত ডিজিটাল নীরবতার যুগে প্রবেশ করেছি!

    আর, তার সঙ্গে শুরু হয়েছে চারিদিকে চরমভাবে ভণ্ডামি-কে পূজা করার আয়োজন। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য ছবি, ভিডিও, বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য সত্য নয়, বরং ছলনা। কেউ নকল কান্না কাঁদছে, কেউ সাজানো উদারতা দেখাচ্ছে, কেউ অর্ধসত্য দিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। এ আই থেকে শুরু করে বিভিন্ন রিলস ,বিভিন্ন ভাইরাল পোস্ট সবকিছুতেই যেন সবাই সবাইকে চাইছে বোকা বানাতে, সেটাই যেন মূল উদ্দেশ্য! নকল, ছলনা, ধূর্ত, চটকদার জিনিস অন্যের সামনে পরিবেশন করা অন্যকে বোকা বানানো - সেটাই যেন এই সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রত্ন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি! মানুষ যেন বাস্তবের চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে তার নিজের ফেক প্রতিচ্ছবি রচনায়। এ কোন পৃথিবীর দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি!  

    শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর চিন্তার চর্চা নেই, কেবল প্রতিযোগিতা আর চাকরগিরি করার মোহ। স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাণিজ্যের হাতে বিক্রি হয়ে গেছে। যেখানে মানুষের শরীর আর জীবনের মর্যাদা নেই, আছে কেবল বাজারমূল্য। আর তার সঙ্গে জুটেছে কিছু অপদার্থ ভন্ড জনপ্রতিনিধিগণ এবং ধূর্ত ব্যবসায়ীগণ। যারা সবকিছু গুলিয়ে ঘেঁটে লন্ডভন্ড করে দিতে চাইছে, শুধু স্থাপন করতে চাইছে তাদের স্বার্থ টুকু। তাদের কাছে জনগণ শুধু একটা সংখ্যা মাত্র। এই জনগণ নামক কিম্ভুত জীব তাদের কাছে নিজেদের সুখ, ধনসম্পত্তি বাড়াবার মেসিন ছাড়া আর কিছু নয়!

    চিন্তা হয়....চিন্তা হয়............
    আমাদের ভবিষ্যৎ কি তাহলে সুশিক্ষা হীন, সুস্বাস্থ্য হীন; শুধুমাত্র ভোগের চাকচিক্যের দিকে ড্যাবড্যবে তাকিয়ে থাকা এক মস্তিষ্কহীন চিন্তাশূন্য প্রজন্ম? এটাই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ? বই পড়া, চিন্তা করা, কল্পনা করা বাদ দিয়ে শুধু স্ক্রল-স্ক্রল খেলা শেখা? অনুভূতিহীন চোখ গুলো শুধু ব্র্যান্ডেড চশমা পরে সেলফি তোলার মধ্যে জীবন খুঁজে বেড়াবে? হয়তো তারা জানবে কিভাবে নিখুঁত মুখোশ পরতে হয়, কিভাবে নিজেদের লজ্জা, নগ্নতাকে বেচে ভিডিও বানিয়ে জনপ্রিয় হতে হয়; কিন্তু তারা হয়তো আর জানবে না—কিভাবে গভীরভাবে ভাবতে হয়, কিভাবে আবেগকে লালন করতে হয়, কিংবা কিভাবে সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায় অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।
    এ যেন এক উল্টো পথের যাত্রা। যেখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারুর দিকে তাকাবেও না।
    এই অদ্ভুত যাত্রাপথের শেষে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? আমরা কি এমন এক সভ্যতা গড়ে তুলছি, যেখানে চোখ থাকবে কিন্তু দৃষ্টি থাকবে না, কানে শব্দ পৌঁছাবে কিন্তু শ্রবণশক্তি থাকবে না, হৃদয় স্পন্দিত হবে কিন্তু অনুভূতি থাকবে না? মানবজাতির ইতিহাসে এটা হবে এক বিপজ্জনক অধ্যায়—যেখানে মানুষ নিজের অনুভূতিহীন ভোগ সর্বস্ব জীবন বাঁচাতে গিয়ে "মানুষ" হওয়া টা কেই বিসর্জন দেবে!!

    প্রসূন
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 2607:fb90:bd92:174d:6dc5:ae4e:d2f2:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৯736370
  • অ্যাতো চিন্তা করবেননা ...গুরুরা যেমন বলেন, বরং একটা গান শুনুন --
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন