এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্কুলের খাতা

  • মাৎস্যন্যায়, তিমিঙ্গিল ও সোহাগ দির পাঠশালা।

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    স্কুলের খাতা | ১৭ জুন ২০২৫ | ৪০৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • মাৎস্যন্যায়, তিমিঙ্গিল ও সোহাগদির পাঠশালা।
     
    আমাদের থেকে বয়সে খানিকটা বড়ো বলে আমরা সবাই তাঁকে সোহাগদি বলেই ডাকতাম – সোহাগ সান্যাল আমাদের আধা গ্রাম, আধা শহরের প্রথম ছোটদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের স্থপতি। সোহাগদির পড়াশোনা পরিচিত এক কনভেন্টে। ফলে তাঁর চলন বলন সব‌ই ছিল স্বতন্ত্র – আমাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। সোহাগদির মা, চিনু মাসিমা ছিলেন আমার মায়ের বন্ধু । ফলে মাঝে মাঝেই সোহাগদি আমাদের বাড়িতে আসতো এবং এলেই আমাদের বঙ্গীয় অ্যাকসেন্টের ইংরেজি শুনে হাসতো। আমরা বিলকুল হ্যাটা হতাম।
     
     এরপর কেটে গিয়েছে বেশ অনেকগুলো বছর। আমরা বড়ো হয়েছি, স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে ঢুকেছি। চিনু মাসিমারা আমাদের পাড়া ছেড়ে অন্য পাড়ায় বাড়ি তৈরি করে চলে গেছেন। ফলে আগের মতো যোগাযোগ আর র‌ইলো না। এর‌ই মাঝে একদিন ভাই এসে খবর দিল – জানিস্ দাদা, সোহাগদি একটা স্কুল খুলেছে …. পল্লীর ভেতরে। মেলা স্টুডেন্ট। ছোট্ট স্কুল হলে কি হবে? বেজায় নামডাক। এখানকার স্টুডেন্টরা সবাই কলকাতার নামীদামী স্কুলে ভর্তি হয়! মনে মনে বেশ খুশিই হ‌ই । শত হলেও অনেক দিনের পরিচিত মানুষ। 
     
    এহেন সোহাগদির সঙ্গে আমার হঠাৎ দেখা চার রাস্তার মাথায়। একটা বিশেষ প্রয়োজনে ওদিকে গিয়েছিলাম।বাড়ি ফিরবো বলে অটোরিকশার লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ এক মহিলা হাতে একটা বিজ্ঞাপনী লিফলেট ধরিয়ে দিলেন। অন্য সময় হলে হয়তো ফেলেই দিই বা হাত বাড়িয়ে নিতে অস্বীকার করি কিন্তু ইংরেজিতে লেখা বলেই হয়তো পড়তে শুরু করি।আরে ! এতো সোহাগদির স্কুলের বিজ্ঞাপন ! ঘাড় উঁচু করে সোহাগদির খোঁজ করি। পেছন থেকে কেউ হেঁকে বলেন – দাদা, এগিয়ে যান। এক সময় জায়গা পেয়ে অটোতে উঠে পড়ি। অটো চলতে শুরু করে।
     
    ( ২ ) 
     
    বাড়িতে এসে বিজ্ঞাপনটা পড়ি। স্কুলে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন। বয়ান বাংলা, ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখা। “ছোটদের জন্য মুক্ত ভাবনার স্কুল। নতুন বছরের জন্য ভর্তি চলছে…….” নিচে ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। ফোন করলাম।
     
    হ্যালো, এটা কি …..স্কুল ? আমি কি সোহাগদির সঙ্গে কথা বলতে পারি?
     
    আমি সোহাগ সান্যাল বলছি ……. 
     
    অনেকদিন পর কথা বলতে গিয়ে দুজনেই খানিকটা নস্টালজিক হয়ে পড়ি। স্কুল প্রসঙ্গে কথা উঠতেই সোহাগদির গলা বুজে আসে। ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ভীষণ কমে গেছে। সবাই এখন চোখ ধাঁধানো নামডাক‌ওয়ালা স্কুলের দিকেই ঝুঁকছে। ফলে সোহাগদির সেই ছোট্ট স্কুলের আঙিনায় এখন খরার মরশুম। একদিন যাবো বলে তখনকার মতো কথা শেষ করি।
     
    ( ৩ )
    আমাদের বৃহত্তর শিক্ষাঙ্গনে এখন বুঝি মাৎস্যন্যায় নীতির প্রয়োগের পর্ব চলছে। মাৎস্যন্যায় হলো একটি বিশেষ অবস্থা যখন অধিক ক্ষমতার অধিকারী তাঁর তুলনায় কমজোরীদের ওপর নিজের আধিপত্য কায়েম করে। বঙ্গের শক্তিশালী শাসক শশাঙ্কের মৃত্যুর পর এক চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই সুযোগে শক্তিশালীরা আধিপত্যবাদের আশ্রয় নেয়। পুকুরে থাকা নানান চেহারার মাছেদের মধ্যে বড়ো চেহারার মাছেরা সুযোগ পেয়েই টপাটপ গিলে খেয়ে ফেলে ছোট ছোট মাছেদের। এটাই নাকি দস্তুর বীরভোগ্যা বসুন্ধরায়।
     
    ( ৪ )
     
    হালফিলের শিক্ষার গুণগতমান কতটা উন্নত হলো তা নিশ্চয়ই অনুসন্ধান সাপেক্ষ এবং হয়তো খানিকটা বিতর্কিত‌ও বটে। সাদা চোখে দেখলে বলতেই হবে যে বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলকে সাফল্যের মাইলফলক হিসেবে মান্যতা দিলে বলতেই হয় যে একালের পরীক্ষার্থীরা তথাকথিত শিক্ষাকে উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছে। সর্বমোট নম্বরের সবটাই পকেটস্থ করে ফেলা এখনকার পরীক্ষার্থীদের কাছে যেন বাঁয়ে হাতকা খেল। আমাদের কালে পাড়ার কেউ প্রথম ডিভিশনে পাশ করলে সব লোক ঝেঁটিয়ে দেখতে আসতো আহাম্মকটি কে? তাই দেখতে।আর এখন পার্সেন্টেজ অথবা পার্সেন্টাইলের যুগ। কে কেমন দরো পড়ুয়া তা নাকি বোঝা যাবে ঐ পার্সেন্টেজের বহরে। 
     
    এটা হলো প্রচারের যুগ। প্রচারের ঢাক যে যত জোরে বাজাতে পারবে এ কালে জয় তার‌ই । চার মাথার চারদিকে টাঙানো ঢাউস সাইজের ব্যানারগুলো দেখতে দেখতে সোহাগদির স্কুলের লিফলেটটিকে বড়ই বেমানান মনে হচ্ছিল। বেশ মনে পড়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠা প্রাইভেট স্কুলের হাতছানিতে যখন আশেপাশের সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোতে ছাত্র ভর্তি কমছিল তখন এক অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছিল সকলকে। অক্ষমের আস্ফালনের মতো আমরা কেউ কেউ অন্ধকার ঘরের দরজায় কপাল ঠুকেছি আর প্রার্থনা করেছি – হে ঠাকুর, এই বছরেই ঘর যেন একেবারে ফাঁকা না হয়ে যায়! 
     
    অনেক স্কুল ফাঁকা হয়ে গেল রাতারাতি। এমন ঢল শুরু হয়েছিল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়া বাতিল করার পর।
     
    তারপর ঘোষণা করা হলো পাশ ফেল তুলে দেওয়া হলো। এই দুটি মূল্যবান সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা, ঠিক না ভুল এসব নিয়ে আলোচনা এই মুহূর্তে অপ্রাসঙ্গিক হবে, তাই এড়িয়ে যাচ্ছি। সোহাগদি খুব যত্ন করে, অনেক দূরপথের পথিক হবেন বলে স্কুলটি করেছিলেন। ওই স্কুলটি গড়ে তোলার পেছনে স্মরজিৎদা, মানে সোহাগদির আদর্শবাদী অধ্যাপক কর্তামশাইয়ের (ঐ নামেই ডাকতেন সোহাগদি) খুব বড়ো ভূমিকা ছিল। আরও বেশকিছু গুণী মানুষ তাঁদের স্বপ্নকে জুড়ে দিয়েছিলেন ঐ ছোট্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সোহাগদির স্কুল একেবারে জিরো থেকে হীরো হয়ে উঠলো। কিন্তু সবাই তো আর সোহাগদি নন ! রাতারাতি মাশরুমের মতো পাড়ায়, পাড়ায়, অলিগলিতে গজিয়ে উঠলো ছোট ছোট সব প্রিপেরেটরি স্কুলের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা ফ্ল্যাট বাড়ির নব্য অভিভাবকরা এসে ভিড় জমালেন এই সব বিদ্যা বিপণন আখড়ায়। বছর শেষের ‘সেল’ এর বাজারের মতো জমে উঠলো বিদ্যা ব্যবস্থার সেলের বাজার। ডিঙ্ ডঙ্ বেল আর জ্যাক এন্ড জিলের আবাহন মন্ত্রে তখন প্রতিদিন‌ই শ্রী পঞ্চমী !
     
    ( ৫ )
     
    এভাবেই ধীরে ধীরে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা পরিমণ্ডলের একটা নতুন আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হলো । এই মঞ্চে এবার ধীরে ধীরে, একে একে অবতীর্ণ হলো বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জলসার আসরে যেমন শুরুতে সব লোকাল আর্টিস্টদের গান গাইতে বসিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা গান গেয়ে ভিড় জমায়। মাইকে প্যা পো করে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে শুনলেই লোকজন ঘরের কাজ কম্মো ফেলে ভিড় জমায় সেখানে। নামীদামী শিল্পীরা আসেন পরে। জমা ভিড়কে জমাটি করে তোলার করতব তাঁদের বিলকুল জানা আছে। তাই জলসা জমে উঠতে সামান্যতম বিলম্ব হয় না। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও ওই আসর জমানোর কাজ করতে হয়েছে একাধিক আসরে। পঙ্কজ মল্লিক মশাই এসে পড়তেই প্রায় চ্যাংদোলা করে তাঁকে মঞ্চ থেকে তুলে দিয়েছিলো আয়োজকরা। মল্লিক মশাই যেন এলেন দেখলেন জয় করলেন। আসরতো জমেই ছিলো, এখন তা ক্ষীরে পরিণত হলো।
     
    এসব বড়ো বড়ো হাউজের কেতাই আলাদা। স্কুলে পঠনপাঠনের কাজ শুরু হবার আগেই তাঁদের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লেখা সুদর্শন শকট বাহিনী রাস্তায় রাস্তায় টহল দেওয়া শুরু করে। লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। মনে মনে ভাবে আর স্বপ্ন দেখে নিজের সন্তানদের ওখানে ভর্তি করানোর। একদিন পায়ে পায়ে হাজির হয়ে যায় তাঁরা। তারপর? সোহাগদির স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা একটু একটু করে কমতে থাকে। অথচ সোহাগদি এর ভেতর বড়ো আয়োজন করে ফেলেছেন এই বিশ্বাসে যে তাঁর খাতের জল এক‌ই মাত্রায় ব‌ইবে। তা কখনো হয় !
     
    এতো মাৎস্যন্যায় কাল। দরিয়ায় এখন তিমি তিমিঙ্গিলদের আবির্ভাব হয়েছে। একবার মুখ হাঁ করলেই ঢুকে পড়ছে কয়েক ডজন কি তার থেকে বেশি সংখ্যায় বামন স্কুলেরা। রণে আর প্রেমে কাউকে গিলে খাওয়াতে কোনো অন্যায় নেই। তিমি আর তিমিঙ্গিলেরা তো রণেই নেমেছে। তাইনা!

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্কুলের খাতা | ১৭ জুন ২০২৫ | ৪০৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৌমেন রায় | 103.7.***.*** | ১৮ জুন ২০২৫ ১৫:১৮732074
  • একদিকে গিলে খাচ্ছে অন্যদিকে যারা টিকে আছে বিভিন্ন ভাবে তাদের ব্রাত্য করে দেওয়া হচ্ছে।চোখের সামনে ভেঙেচুরে যাচ্ছে সব,বিগত কয়েকবছর অতি দ্রুত হারে।এটাই হয়ত রীতি।
     
  • Somnath mukhopadhyay | ১৮ জুন ২০২৫ ১৫:২৭732075
  • এই পরিণতি অনিবার্য ছিল। আমরা এমন অবক্ষয়ের আভাস পেয়েও, হাত পা গুটিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসেছিলাম। আমাদের এই প্রজন্মের সন্তানেরা মাতৃভাষা সম্বন্ধে বিমুখ। আমরাই তাদের এমন নির্মিতির জন্য একশো ভাগ দায়ী। এরপর তিমিতিমিঙ্গিল আসবে তিমিঙ্গিলদের গিলে খেতে।
  • Ritabrata Gupta | 117.195.***.*** | ১৮ জুন ২০২৫ ১৮:২৬732076
  • অত্যন্ত  প্রাসঙ্গিক  এবং  সুপাঠ্য .  সমাজের  এই  বিশেষ  সমস্যাটি  সাবলীল  গদ্যের  মাধ্যমে  তুলে  ধরেছেন  লেখক .  এককথায়  অনবদ্য  !
  • বিকল্প উপায় | 103.87.***.*** | ১৮ জুন ২০২৫ ২৩:৩৬732078
  • Franchise নিয়ে নেওয়া ভালো, tiny tots বা abacus এর মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের, বা সরাসরি যুক্ত হয়ে যাওয়া কোনো ওরকম প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা পরিচালনা বিভাগে, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে।
  • শর্মিষ্ঠা লাহিড়ী | 2405:201:8016:d5:6e88:83f6:d449:***:*** | ১৯ জুন ২০২৫ ০১:০৭732079
  • আমাদের  নাগরিক দের রাষ্ট্র স্বীকৃত দেয় অধিকারের অন্যতম অধিকার শিক্ষা র অধিকার আজ অনেকাংশেই সংকুচিত হতে হতে এখন প্রায় অবলুপ্তি র পথে। অন্যান্য ক্ষেত্রে র মতো এখানে ও বড় সংস্থা বড় গুলি ছোট প্রতি ষ্ঠান গুলিকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা ও ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি।এর হাত থেকে আশু বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজে নেওয়া প্রয়োজন।
  • রাজীব দাশ | 202.142.***.*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১২:১২732086
  • ঠিক বলেছেন দাদা। কত স্কুল এই ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। আর যারা টিকলো তারা আনুগত্য স্বীকার করে স্বকীয়তা বিসর্জন দিলো। 
  • রাজীব দাশ | 202.142.***.*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১২:১২732087
  • ঠিক বলেছেন দাদা। কত স্কুল এই ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। আর যারা টিকলো তারা আনুগত্য স্বীকার করে স্বকীয়তা বিসর্জন দিলো। 
  • পৌলমী | 2405:201:8000:b11b:1567:2ec8:28d1:***:*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১২:৩৫732088
  • খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। শিরোনাম থেকেই এমন পরিণতির আভাস পাওয়া গিয়েছিল। শেষে তেমনটাই ঘটলো। এও এক আধিপত্যবাদের নমুনা। কেবলমাত্র শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরেই আজ এই দাবাং নীতির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আরও লেখা হোক এমন নিবন্ধ।
  • DrSouravM | 2401:4900:76dc:778c:9c2c:5fc1:7228:***:*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১২:৪২732089
  • Destruction of education system was completed after introduction of "no fail upto class 8" rule...
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:ccb3:6a47:11ef:***:*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১৪:৪৪732090
  • "বটে। সাদা চোখে দেখলে বলতেই হবে যে বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলকে সাফল্যের মাইলফলক হিসেবে মান্যতা দিলে বলতেই হয় যে একালের পরীক্ষার্থীরা তথাকথিত শিক্ষাকে উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছে। সর্বমোট নম্বরের সবটাই পকেটস্থ করে ফেলা এখনকার পরীক্ষার্থীদের কাছে যেন বাঁয়ে হাতকা খেল। "
     
    এই ব্যাপারটি যে পাবলিক এডুকেশনের ব্যর্থতা এই কথাটা উপলব্ধি করার একটি জায়গা আছে। ওপরের সারির বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রী যদি ১০০% র আশেপাশে নম্বর পায়, তার মানে পরীক্ষা পদ্ধতিতে গলদ, কারণ ভাল খারাপের তারতম্য। বিচার করতে পরীক্ষা ব্যবস্থাটি ব্যর্থ, ভারতের "গ্রেড ইনফ্লেশন" (নম্বরের অতিরঞ্জন) এক ভয়ঙ্কর সমস্যার দিকে নির্দেশ করে। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে সোহাগ দেবী ছেলেপিলেদের ঠিকমতন ইংরিজি কথা বলতে শেখানোর চেষ্টাটুকু করতেন, সে ছাত্র ভাল ইশকুলে যাক বা না যাক। ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার একটি সার্বজনীন অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে, যার লক্ষণ এই অস্বাভাবিক গ্রেড। যার জন্য গ্রেড ডিস্ট্রিবিউশন সাংঘাতিক রকম একপেশে। ব্লুম সাহেবের নীতি ধরলে পরীক্ষা নেওয়া হয় মুখস্থবিদ্যা এবং উগরে দেবার ক্ষমতার, আধুনিক দুনিয়ায় কার্যক্ষেত্রে অচল। যারা সেটুকুও পারে না, হয় তারা পশ্চাত্পদ, নয় তাদের পড়াশোনার অন্যরকমের পারদর্শীতা যাকে এই standardised test দিতে বোঝা যাচ্ছে না। তার ওপর একটি সামাজিক অসুস্থতা যেখানে পরীক্ষার ফলাফল যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াচ্ছে । সোহাগ সান্যালদের ইশকুলের সমস্যার মূলে এক মারাত্মক অসুস্থ। সমাজ যারা শিশুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 
     
    যাকগে। এসব ফালতু মনের ব্যথা প্রকাশ করে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে লিখে লাভ নেই।  সমাজ মহানন্দে পেছন দিকে এগিয়ে চলুক। 
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:99e2:1f8f:d5cb:***:*** | ১৯ জুন ২০২৫ ১৪:৫৪732091
  • ছ বছর আগের রিপোর্ট, 
    "The last time handpicked Indian secondary students wrote PISA (Programme for International Student Assessment), a transnational exam designed to test the science and maths capabilities of 15-year-olds worldwide, the Indian cohort was ranked #73 among 74 countries. Moreover, the Annual Status of Education Report of the globally reputed Delhi/Mumbai-based Pratham Education Foundation routinely reports that the reading (vernacular languages) and maths capabilities of primary school students in the country’s 1.2 million rural schools are going from bad to worse. However, judging by recent newspaper headlines and televised euphoria of school-leaving students celebrating their exam results, contemporary India hosts the world’s largest number of teenage academic prodigies"
     
    তারপর আজকাল ভারত আর পিসা পরীক্ষায় যোগ দেশ না 
  • Somnath mukhopadhyay | ১৯ জুন ২০২৫ ২১:৩০732096
  • মতামতের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অরিন বাবুকে বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই দীর্ঘ সুচিন্তিত মতামত দেবার জন্য। আমি এর আগে প্রায় কাছাকাছি থাকা একটি বিষয় নিয়ে গুরুর পাতায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুলের বদলে নতুন অভিভাবকরা কেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলকে বেছে নিচ্ছেন। ভাষা মাধ্যম বিষয়ে আমার কোনো রক্ষণশীলতা নেই। সোহাগ সান্যালের স্কুল আমার কাছে একটা ছেড়ে আসা সময়ের মাইলফলকের মতো। একালের পঠনপাঠনের আয়োজনে সামান্যতার কোনো ঠাঁই নেই। বড়ো বড়ো শপিং মল যেমন আসরে এসে আমাদের বহুদিনের চেনা হরু সাহার ছোট্ট মুদী দোকান কিংবা বিশ্বনাথ বসাকের কাপড়ের দোকানকে আমাদের নজর লোপাট করে দিয়েছে, সোহাগ দির পাঠশালার‌ও ঠিক একই হাল। এক সর্বগ্রাসী বাতাবরণ আমাদের এতো দিনের চেনা বাঁধনগুলোকে আলগা করে ফেলছে। যে গভীর মমতা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা দিয়ে সোহাগ দি তাঁর স্কুলটাকে তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলেন আজকের বড়ো বড়ো হাউজের তৈরি পেল্লায় কাঠামোর স্কুলগুলোতে কি তা মিলছে? যদি তেমনি হয় তাহলে সোহাগ দির স্কুলের এমন পরিণতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। শহর আর শহরতলির হাজারো বিবর্ণ হয়ে যাওয়া তথাকথিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় আরও একটি নতুন নাম হয়তো সংযোজিত হবে -এর বেশি কিছু নয়।
     
    সকলে ভালো থাকবেন। আমাদের লেখাগুলো পড়ুন ও পড়ান ।
     
     
     
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:99e2:1f8f:d5cb:***:*** | ২০ জুন ২০২৫ ০১:৪৬732099
  • "ভাষা মাধ্যম বিষয়ে আমার কোনো রক্ষণশীলতা নেই"
     
    আমার আছে। 
    আমি মনে করি প্রাথমিক স্তরে শুধুই মাতৃভাষা মাধ্যম হওয়া চাই্, প্রাথমিক পরীক্ষা উৎরোনর পর ইংরেজী ভাষা ও মাতৃভাষা ঠিকমতন শেখানো হোক (ভারতীয় বা আমেরিকান ইংরিজি নয়, দক্ষিণ ভারতীয় বা পাঞ্জাবী উচ্চারণে অশুদ্ধ অশ্রুতিকর ইংরিজি নয়, দক্ষিণ লণ্ডনের ইংরেজের ইংরিজি, একসময়ের বাঙালীর দখলে ছিল, সত্যজিৎ রায়ের মুখের ইংরিজি মনে করে দেখুন, বা উৎপল দত্তের, এর জন্য তাঁদের বিলেতে গিয়ে পড়তে হয়নি। 
    মুশকিল হল, মধ্যমেধার উপাসনা করলে একটি জাতির যে অবক্ষয় অবশ্যম্ভাবী, বাংলায় সেইটিই হচ্ছে ও হবে। 
  • ভাষা মাধ্যম | 165.225.***.*** | ২০ জুন ২০২৫ ০২:১০732100
  • ইংরিজির ব্যাপার্টাতো বুঝলুম, কিন্তু দক্ষিণ লন্ডনের ব্যাপারে ঘনঘোর আপত্তি এবং রাশি রাশি ঙ দিয়ে গেলুম! 
    প্রাথমিক স্তরে কি তবে শান্তিপুরী বাংলা (বাংলার স্ট্যান্ডার্ড) ও সেই বাংলায় বিদ্যাশিক্ষা হবে? 
  • অরিন | 115.189.***.*** | ২০ জুন ২০২৫ ০২:৪৫732101
  • বাংলা ভাষা হলেই হবে, শান্তিপুর, অশান্তিপুর, বাছবিচারের দরকার নেই। 
    দক্ষিণ লণ্ডন, :-)
  • Somnath mukhopadhyay | ২৪ জুন ২০২৫ ০৭:৪৭732160
  • ভাষা মাধ্যম বিষয়ে আমার বিলকুল রক্ষণশীলতা রয়েছে। ভারতের মতো একটি বহুভাষিক দেশে মাতৃভাষা মাধ্যমে শিক্ষাদান আবশ্যিক হ‌ওয়াই উচিত। এরফলে আঞ্চলিক ভাষার বিকাশের পথ সুগম হয়। একালের ছেলেপিলেরা যখন বাংলা পড়তে পারিনা বলে তখন চরম হতাশা জাগে। মেনে নিতে কষ্ট হয়।
  • সু-ভোঁ | 2404:4404:4405:700:a9c1:e503:7984:***:*** | ২৪ জুন ২০২৫ ০৮:১৬732161
  • একদম পুরোপুরি একমত। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন