এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাপন কথা

    Luna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১০৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • তারপর তো টুপ করে সুজ্জিমামা পাটে গেলেন। হেমন্তের ঘোলাটে ধূসর আকাশে একটি দুটি করে তারা ফুটতে লাগল। কাজিবাড়ির বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিশাল ঝুপসি বট গাছের মাথার ওপর মিটমিটে তারার পানে চেয়ে ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম।

    মায়ের হাতের চাল বাটা মাখার যে স্বাদ, আহা! গোবিন্দ ভোগ চাল ভিজিয়ে শীলে বেটে তাতে পেয়ারা কলা আপেল আঙ্গুর কমলালেবু বেদানা খেজুর আখ কিশমিশ মুলো কুচি আদা কুচি তুলসী পাতা খেজুর গুড়, দুধ দিয়ে মেখে তাতে সন্দেশ ভেঙে তৈরি হতো সেই দেব ভোগ্য অমৃত। আমার হাতে গোনা গুটিকয় পছন্দের খাদ্য তালিকায় এটি ছিল অন্যতম। গোবিন্দ ভোগ চালের সুগন্ধে মিলে মিশে যেত রকমারি টাটকা ফলের আঘ্রাণ। সঙ্গে আদা তুলসী আর মুলোর বাস। কনকনে ঠান্ডায় সেই অমৃত তুল্য ঠান্ডা মোলায়েম খাদ্যটি গলা বেয়ে উদরে প্রবেশ করলে শরীর মন যেন শীতল হয়ে যেত।

    সেসব দিন চলে গেছে সোনালী রেখাটুকু প্রতিপদের চাঁদের মত রয়ে গেছে। অথচ তখন তো এসবের মর্মই বুঝি নি। বর্তমান অতীতে গেলে তবেই তার মূল্যায়ন করা যায়।

    শনি রবি আপিসের কাজ শুরু হয়ে গেছে, চলবে সেই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আমি এই দুদিন যাই নি। রান্না বান্না করে রাখতে হবে, তাছাড়া শরীরটাও বিশেষ জুতের ছিল না। ওই খানিকটা এনার্জির অভাব। এত দূরের পথ বাইতে হয় প্রতিদিন। আর যেন পেরে উঠি না।
    সংসারের (সে যতই কেন না একাকি যাপন হোক) কাজ দেখেছি, যেন আর শেষই হতে চায় না।

    এক নম্বর এয়ার পোর্টের মুখটায় ডানদিকে একটি ছোট্ট খ্রিষ্টান গোরস্থান আছে কত পুরোনো জানি না। যাতায়াতের পথে ঐদিকে আমার নজর যাবেই। মনে মনে বলি শান্তিতে ঘুমোও। কেন বলি তাও জানি না। ওদের কাউকেই তো আমি চিনিও না, তবু বলি।
    আর ঠিক বামদিকে শিশু পার্কের গেটের মুখে বংশীবদন কলসি হাঁড়ি বোঝাই করা গরুর গাড়িটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রোদে জলে তার বলদের শিং গেল ভেঙে। গেটের অপর মুখে রবি ঠাকুর জোব্বা পরে দাঁড়িয়ে গুটি কয় কচি কাঁচাকে পাঠ দান করেই চলেছেন।
    এই সমস্ত দেখতে দেখতে আমার নিত্যদিনের “থোর বড়ি খাড়া” পথ চলা বর্ণময় হয়ে ওঠে।

    সেদিন অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেন ধরব বলে বসে আছি, প্রায় আমার বয়সী এক ভদ্রমহিলা এসে বসলেন অনেকগুলি ব্যাগ পত্তর নিয়ে। সঙ্গের কম বয়সী (মনে হয় ছেলেই হবে) মাকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল। একটু পরেই মা ফোন করে ছেলেকে ডেকে নিলেন, বললেন, “শেডের তলায় আয়, ঠান্ডা লাগবে”। ছেলে এসে পাশে বসল। মুখে কোন বিরক্তি নেই, দেখে ভালো লাগল। টুকটাক কথা হচ্ছিল, ওনারাও ক্যান্টনমেন্ট যাবেন। মা-ছেলে, আসছেন হাবড়া অশোক নগর থেকে। কথায় কথায় জানা গেল উনি আমাদের ইউনিভার্সিটির অন্তর্ভুক্ত নেতাজী শতবার্ষিকী কলেজে মিউজিকের পার্টটাইম টিচার ছিলেন। ২০২১ য়ে রিটায়ার করেছেন। বলাবাহুল্য দুজন দুজনের পরিচয় পেয়ে বেশ আপ্লুত। উনি দেখলাম বড়ই অকপট। এক আলাপে এত খোলামেলা মানুষ এখন বিরল। ট্রেনে উঠে গল্প করতে করতে গন্তব্যে আসা। তার আগে ফোন নম্বর আদানপ্রদান। ছেলের হাতের রান্না মাংস খাওয়া নিমন্ত্রণ সব হল। ছেলেটিও বেশ।
    প্লাটফর্মে নেমে যে যার পথে।

    গল্প শুরু পরেরদিন। শনিবার, সব সেরে দুপুরে বিছানায় গিয়ে একটু চোখ লেগেছিল, ফোন, গলা শুনে বুঝলাম, কালকের ওই দিদি। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টায় একজন মানুষের জীবন লড়াই পথ চলা যাপনের একটা বর্ণময় চিত্র আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল।
    উনি নিজেও বললেন, “দিদি আমার জীবন নিয়ে তুমি লেখ”
    আমারও মনে হল এই তীব্র মনের জোর, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে পারিবারিক সামাজিক লাঞ্ছনা গঞ্জনা বিদ্বেষ সব তুচ্ছ করে এই যে এগিয়ে যাওয়া এই গল্প শুনে অনেকেই নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:০২736351
  • বড় মায়া লেখা জুড়ে। কিন্তু ওঁর গল্প কই? 
  • Luna Mitra | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০১736352
  • @ দ লেখা দিচ্ছি, একটু গুছিয়ে নিই।
  • Aditi Dasgupta | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:২২736353
  • হ্যাঁ গুছিয়ে লেখ। এমনই  মায়ার আলোয়।
  • Luna Mitra | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৪৩736358
  • @ ম্যাডাম কি যে বলি! আপনার মন্তব্যে বড় আদর পাই। 
  • শ্রীমল্লার বলছি | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:৪৪736359
  • এই লেখাটিকেও ভালবেসে ফেললাম! বড় আদরযত্ন দিয়ে লেখেন আপনি!... 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন