এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   ইতিহাস

  • একাত্তরের গণহত্যা ও রাজাকার 

    দীপ
    আলোচনা | ইতিহাস | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২২ বার পঠিত
  • বাংলাদেশের রাজাকারদের নেতৃত্বে একাত্তরের গণহত্যা। এই ইতিহাস আমরা যেন ভুলে না যাই! 
    -------------------------------------------------------------------
     
    একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার মীর কাশেমের ছেলে মীর আহমদ বিন কাশেমের একটা ভিডিও দেখলাম, টিভি চ্যানেলে সরাসরি বলছে " একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হওয়া সবাই শহীদ"। সে নিজের বাবা মীর কাশেম আলীকেও শহীদ দাবি করে। একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকারদের মধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত ছিলো এই মীর কাশেম। 
    একাত্তরে মীর কাসেম আলী পরিচিত ছিলেন ‘বাঙালি খান,’ বদর বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক, চট্টগ্রাম গণহত্যার নায়ক হিসেবে। পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম পরিচিতি পায় মূলত জামায়াতে ইসলামীর অর্থের যোগানদাতা হিসেবে। জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সে ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করে আসছিলো। এমনকি ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর সবচে’ বেশি টাকা লগ্নি করে লবিস্ট নিয়োগও দিয়েছেন এই অপরাধীই। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস কাসেম আলী রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে দ্রুত নিজের উন্নতি ঘটিয়েছিলো।
     
    মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের তৈয়ব আলীর দ্বিতীয় ছেলে মীর কাসেম আলীর জন্ম ১৯৫২ সালে। বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে ছিল বাসা। চট্টগ্রামের মানুষ তাকে চিনতো মিন্টু নামে।
     
    একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারাদেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ। ওই বছর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলো এবং সেই সূত্রে ছিলো চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর নেতা। ৭ নভেম্বর দলে পদোন্নতি পেয়ে সে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হয়। সে সময় সংগঠনের সভাপতি ছিলো যুদ্ধাপরাধী আরেক জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।
     
    মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর সে আত্মগোপনে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় ছাত্রসংঘ ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি। 
     
    ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে মীর কাসেমের প্রাতিষ্ঠানিক উত্থান হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) গঠনের মাধ্যমে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সে। ব্যাংক গঠনের পর চিকিৎসাসেবা,পরিবহন, টেলিযোগাযোগ,গণমাধ্যম ও শিক্ষা সব খাতেই বিচরণ ঘটে তার এবং এসব কাজে সব সরকার থেকেই পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনেরও প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা মীর কাসেম। দৈনিক নয়া দিগন্ত এই করপোরেশনের পত্রিকা। এছাড়া ছিল দিগন্ত টিভি চ্যানেল। ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে হেফাজতে ইসলামের নাশকতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মীর কাসেম দিগন্ত রেডিও এবং ইংরেজি দৈনিক এশিয়া পোস্ট নামে বের করার জন্য নিবন্ধন নিলেও শেষ পর্যন্ত এগুলো চালু হয়নি। দিগন্ত পেপার মিলের পরিচালক সে। নামের আগে ‘কেয়ারী’ রয়েছে-এ রকম ১০টি কোম্পানির পরিচালক মীর কাসেম আলী। কেয়ারীর প্রধান কার্যালয় রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে কেয়ারী প্লাজায়।
     
    এই মীর কাসেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দিশিবির খোলা হয়েছিল। বিজয়ের একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে ৩৫০ জন বন্দীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম খলনায়ক ছিলো মীর কাসেম।
     
    ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের চুক্তির কপি এবং টাকা দেওয়ার রসিদ রয়েছে সরকারের কাছে।
     
    মীর কাসেম উচ্চমূল্যে টবি ক্যাডম্যানের সঙ্গে চুক্তি করে দেশি-বিদেশি মহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছিলো। যার ধারাবাহিকতায় কূটনৈতিক প্রটোকল ভেঙ্গে মীর কাসেম আলীর জন্য লবিং করতে আসে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
     
    জন কেরির ৯ ঘন্টার বাংলাদেশ সফরের ৫ দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগারে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন