এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • দীপাবলী 

    R
    আলোচনা | সমাজ | ২০ অক্টোবর ২০২৫ | ২০ বার পঠিত
  • পুরোনো লেখা. ফেসবুক থেকে. আজকাল লিখতে প্রায় পারিনা বললেই হয়
     
    "অনেকদিন পর একটু কিছু লিখলাম. জানিনা এই উৎসবের সঙ্গে সাযুজ্য পেলো কি না. চেয়েছিলাম একটু উজ্জ্বল কিছু লিখতে, বেরোলো একটু অন্ধকার "

    প্রথম পর্ব 

    নিয়মভঙ্গ  

    মেয়েটা বরাবরই আসে. সৌদামিনী বিয়ে হওয়ার পর থেকে দেখে আসছেন.

    আগে শ্বাশুড়ির কাছে আসতো, এখন তাঁর কাছে আসে. ভারি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা, শ্যামলা বরণ হলে কি হবে, মুখখানা একেবারে টুলটুলে. মাথা ভরা  কোঁকড়া কালো চুল, ভ্রমর ঢুকলে পথ হারিয়ে ফেলবে.

    বিকেলের আলো যখন নিভে সন্ধ্যের দিকে যায়, তখনি  আসে মেয়েটা. নিজেই যত্ন করে দাওয়াতে শুকোতে দেওয়া মাটির প্রদীপগুলি গুছিয়ে তুলবে, রান্নাঘর থেকে যত্ন করে পালিতে তেল ভরে প্রদীপে ঢালবে, সলতে তেলে  ভিজিয়ে প্রদীপে রাখবে. সৌদামিনী একটা একটা করে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবেন আর মেয়েটা যত্ন করে চোদ্দকোন কুলুঙ্গিতে প্রদীপ রেখে আসবে.

    প্রতিবারের মতো রাতে কোলে বসিয়ে মেয়েটাকে খাইয়ে দিলেন সৌদামিনী. তেমন কিছু নয়, ভাত ডাল মোচা ঘন্ট পাতলা মাছের ঝোল. আর শেষ পাতে একটু মিষ্টি. বছরে একবারই আসে, এটুকু তো দিতেই হয়.

    এবারে যাওয়ার সময় প্রতিবারের মতো মেয়েটা বলল 'আসি ধলামা'. সৌদামিনী চোখের জল চেপে বললেন, ' আইসো মা, এইবারই তো শ্যাষ. পরের বার কোথায় থাকি, কোথায় ঠাঁই হয়' -

    সৌদামিনী মুখে আঁচল চেপে হুহু করে কেঁদে ফেললেন.

    তারও কয়েকদিন পরে হেমন্তের হালকা কুয়াশা ভরা  সন্ধ্যায় ক্ষেত  ভরা ধান, গোয়ালের বুধী গাই,  পুকুরের মাছ, সব কিছু ছেড়ে এক অজানা নতুন দেশের পথে পা বাড়াতে বাড়াতে সৌদামিনী দেখবেন মেয়েটা বাড়ির সীমানায় চুপ করে দাঁড়িয়ে. তার চোখ ভরা জল.

    প্রতিবার চৌদ্দ বাতির দিন আসতো মেয়েটা. এই একবারই নিয়ম ভেঙেছিলো, এই একবারই.

    দ্বিতীয় পর্ব 

    দীপাবলী 

    'বলো কি হে? ছ'হাজার !!'

    'এতো হবেই জ্যেঠু, এখন রেট জানেন? অন্য কেউ হলে আট বলতাম. আপনি বলে ছয় বলেছি. ওর কমে পারবো  না.'

    সুনীলবাবু ফোঁস করে  একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে পড়লেন. এবারে সুরমা বার বার বলেছিলো, যদি দীপাবলিতে একটু বাড়িতে টুনি লাইট লাগানো যায়. মোমবাতি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই নিভে যায় আর তখন আবার গোটা বাড়িটা বড় অন্ধকার লাগে.

    পাড়াটাও গত পাঁচ সাত বছরে পাল্টেছে অনেক. শহরতলীর এই মফস্বলে সব ছোট বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট উঠেছে হু হু করে. পাঁচতলা ছতলা সব ফ্ল্যাট থেকে লম্বা লম্বা ঝলমলে আলোর শিকল ঝুলে থাকে. ছোট মোমের আলো এল ই ডির ঝলমলের কাছে বড় নিষ্প্রভ হয়ে আসে. সুনীলবাবুর বাড়ির পাশে দুইদিকে  দুটো ফ্ল্যাট. বাড়িটা মোম জ্বললে তাও একটু দেখা যায়, নিভলে পুরো অন্ধকার. ভেবেছিলেন এবারে একটু পাড়ার ছেলেটাকে বলে তিন চার দিনের জন্য আলো ভাড়া নিয়ে লাগাবেন. অগত্যা মোমই ভরসা.

    ঘটনাটা ঘটল বাজার সেরে বাড়ি ফেরার রাস্তায়. বেশ কিছুক্ষণ থেকেই কিরকম একটু হাঁফ ধরছিল আর বুকের বাঁদিকটা চিনচিন করছিলো. সুনীলবাবু পাত্তা দেননি. পাড়ার গলির মোড়টাতে ঢুকেই মাথাটা জব্বর টাল দিলো. ধাক্কা সামলাতে না পেরে সুনীলবাবু মাথায় হাত দিয়ে উবু হয়ে বসে পড়লেন. হাতের ব্যাগ ছিটকে গেলো রাস্তায়, আশপাশ থেকে ছেলেরা সব দৌড়ে এলো. 

    তারপরে বাকিটা সব ঝাপসা. পাড়ার ডাক্তারের একচিলতে গম্ভীর মুখ,  কানে ভেসে আসা এম্বুলেন্সের হুটারের আওয়াজ, সুরমার উদ্বিগ্ন মুখ - এটুকুই যা, বাকি সব ঝাপসা.

    আরো কিছুক্ষণ পরে আচ্ছন্নতার কোনায় ডুবতে ডুবতে, মাথার উপরে অপারেশন থিয়েটারের গোল বড় সাদা আলোটার দিকে তাকিয়ে, সুনীলবাবু বিড়বিড় করে উঠলেন - 'এতো আলো! এতো আলো!'
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন