ছবিঃ রমিত
যাক যে কথা লিখছিলাম, লিখছিলাম আমার জীবনে কোন কিছুর অভাব নেই। যা চেয়েছি তা হঠাৎ এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে। অনুকে পাবার পর আমার সব অভাব মিটেছে। ছোট বেলায় ওর কানে একটা অপারেশান (ম্যাসটয়েড) হয়েছিল। অপারেশনের পর কানের মধ্যে একটা অস্থিকণা থেকে গিয়েছিল। কানে তাই ওর মাঝে মাঝে অসহ্য যন্ত্রণা হত। যন্ত্রণায় ও ছটফট করত। সে অবর্ণনীয়--- চোখে দেখা যেত না। এখন শুধু আমার একমাত্র প্রার্থনা -- হে ঈশ্বর, অথবা সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও অন্ধকারের দেবতা, তুমি আমার অনুকে সুস্থ করে দাও। আমার জীবনে যদি কণামাত্র পুণ্যের সঞ্চয় থাকে তবে তার সবকিছুর বিনিময়ে অনুকে এই সাংঘাতিক শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও। হে ঈশ্বর, ওকে ভালো করে দাও। তাহলে আমার থেকে সুখী কেউ আর হবে না।
অনুকে অনেকদিন দেখিনি, অনেকদিন প্রায় ২০ দিন। অসহ্য! ও যতদিন ছিল ঘরটা এমনভাবে পূর্ণ হয়েছিল, মনটা, চতুষ্পার্শ্বটা এমন ভরাট হয়েছিল যে ঠিক কতখানি ও জুড়ে আছে তা আন্দাজ করার মতো ফুরসুতও পেতাম না। এখন কেমন যেন বোকা বনে গেছি। যেন অনু দূরে গিয়ে আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল – ‘দেখো আমি কতখানি অধিকার করেছিলাম আর কতখানি খালি হয়ে গেল।‘
কবে যে আসবে?
দক্ষিণেশ্বর ২৫-৫-৬৫
গত ১৯ শে নভেম্বর ১৯৬৫ শুক্রবার রাত্রি ১০:৩৬ মিনিটে আর-জি-কর হসপিটালে অনু প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। জন্ম কালে শিশুর ওজন ছিল ছ পাউন্ড ৪ আউন্স। সন্তান ও মাতা উভয়ই সুস্থ ছিল।
আজ ২৭ নভেম্বরে শনিবার হসপিটাল থেকে বাড়ি আনা হলো অনুকে। যেরকম আশঙ্কা করেছিলাম তেমন সাংঘাতিক কিছু ঘটেনি। কোনরকম বিপদের ঝুঁকি না নিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের জন্মদান ইত্যাদি কঠিন ব্যাপার গুলো সারা হয়ে গেছে।
নবজাতক সুস্বাগতম। কালে এই নবজাতক সৎ মানুষ ও ‘পুরুষ’ হয়ে উঠুক এটাই আমার প্রার্থনা ও কাম্য। (অংশুমান বা বুবাই-র জন্ম)।
দক্ষিণেশ্বর ২৭-১১-৬৫
জর্জ সল্টারের চাকরিটা অসহ্য হয়ে উঠেছে। এত অসহ্য হয়ে উঠেছে যে মনে হচ্ছে কোনকিছু না ভেবেই আজই চাকরিটা ছেড়ে দিই। ওয়ার্কস ম্যানেজারের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। একদিনও মন টিঁকছে না। গত প্রায় মাস আটেক ধরে চাকরির ব্যাপারে সাংঘাতিক এক মানসিক অশান্তির মধ্যে কাটছে। যেন চাকরিটাই জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে, জীবনের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সময় নেই জীবনটাকে নিজের মতো করে একটু চেখে দেখব। না কোন বন্ধু বান্ধব সংসর্গ, না কোন বিশ্রাম। শুধু অফিস আর অফিস। ভোর থেকে প্রস্তুতি কাজে যাবার – কাজ থেকে ফিরে দিনের সব উৎসাহ নেংড়ানো শরীরটাকে সন্ধ্যার অনেক পরে বিছানায় ফেলা-- যেন পরের দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করা। এই একঘেয়েমি আমাকে অশান্ত করে রেখেছে --- আমি আর পারছিনা।
কিন্তু অতীতে আমি বারবার দেখেছি কোন অবস্থা বা জীবন যখন আমার সহন ক্ষমতার উপর ভীষণ অত্যাচার করছে তখন কেমন করে জানি না সেই দুর্দশার থেকে মুক্তির পথটাও যেন আপনি খুলে গিয়েছে আমার সামনে। এই একঘেয়ে কর্মের জাঁতাকলে যখন বেদম মার খাচ্ছি ঠিক তেমন সময় এক নতুন জীবন, নতুন অভিজ্ঞতার শরিক হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল।
কলেজ জীবনের শুরু থেকেই আমার অনেক ইচ্ছার মধ্যে একটা ইচ্ছা ছিল ইংল্যান্ডে যাওয়ার। কখনো সেটা ঘুমিয়ে থাকত, কখন সেটা আমাকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিত। অনেকদিন পরে আবার সে ইচ্ছাটা আমাকে উত্যক্ত করতে থাকল। হঠাৎ ইংল্যান্ড যাওয়ার সুযোগ এলো। যেতে আমাকে হবেই যেমন করে হোক। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতে বড় চাকরি পাওয়ার আশা এটা আমার যাওয়ার পক্ষে মোটেই আসল কারণ নয়। আসল কথা, যে অবস্থা, যে জীবন আমি কাটাচ্ছি তার ভূত ভবিষ্যৎ সব জানা হয়ে গিয়েছে। এর সব রহস্য আমার কাছে উন্মোচিত। কোন কিছু আর অজানা নেই। আর পড়া উপন্যাস কেমন আবার পড়তে ইচ্ছা করে না তেমনি এই জানা জীবনটায় আমার নিতান্তই অরুচি। এই শান্ত উত্তেজনাহীন দিনগুলো আমার টগবগে যৌবনটাকে কেমন যেন মিনমিন করে দিচ্ছে -- সেই ডাইনি বুড়িটা যেমন রাজপুত্রকে ভেড়া বানিয়ে দিয়েছিল।
এই নিরাপদ জীবন ছেড়ে একেবারে অজানা জীবনে পাড়ি দেওয়ার মধ্যে একটা দারুণ অনিশ্চয়তা আছে, একটা রিস্ক আছে। কিন্তু এ ঝুঁকি আমাকে নিতেই হবে। ব্যর্থ যদি হই তবু জানবো কিছু করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমি সারা জীবন ধরে শুধু চেষ্টা করে যাবো “ মা ফলেষু কদাচন” । ভয় শুধু অনুকে নিয়ে। আমার ব্যর্থতার অভিশাপ যদি ওকেও বইতে হয় ! তবু মনে হয় সেটুকু মানসিক প্রস্তুতি ওর আছে -- কেননা বিয়ের আগে ও পরে এমন একটা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অনেক আলোচনার ঝড় তুলেছি। সুতরাং এই যাত্রায় ওকেও আমার সঙ্গী করবো। তবে বোধ হয় কয়েকদিন সময় লাগবে।
মা সানন্দে মত দিয়েছে। আর যে মত না দিলে আমার যাওয়ার প্রশ্নেই উঠত না সেই খোকন শুধু মতই দেয়নি- যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছে। সংসারের জোয়ালটা যাতে ওর একলার ঘাড়ে চেপে না বসে তার জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।
না, আমি আর চিন্তা করতে পারছি না। অনেক বাধা অনেক মরাল অব্লিগেশন! খোকনকে এত বড় বোঝাটা দেওয়া উচিত কিনা, মাকে আরও সংসারের দায়িত্ব দেওয়া উচিত কিনা, জীবনটাকে নিয়ে এমন একটা বাজি ধরা উচিত কিনা --- বিশেষ করে যেখানে একটা শিশু ও তার মায়ের জীবনটাও আমার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়ানো। ভেবে লাভ নেই, আমাকে করতেই হবে, আমাকে পেতেই হবে আমি যা চাই। সব দায় দায়িত্ব সব বাধা এর কাছে তুচ্ছ।
কিন্তু প্রহসনটা অন্যত্র। অমলেন্দু বিশ্বাস যার একটা কপর্দকও সম্বল নেই তাকে এমন লোভ দেখানোর দরকারটা কি? দু পাঁচশ টাকা হলে নয় ধার করে ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু কম করেও ৩০০০ টাকা দরকার। এত টাকা আমাকে কে দেবে? একমাত্র ভরসা ভাগ্য; যেমন দেখেছি টাকার যখন দরকার হয়েছে ভোজবাজির মত এসে গিয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যাক আসে কিনা। ভাগ্যের কথায় আর একটা ঘটনা মনে পড়ল।
একদিন আমার সহকর্মী সনৎ বোস বলল – “আমি এক জায়গায় যাচ্ছি। আপনি কি আসবেন আমার সঙ্গে। ভালো লাগবে।” আমার কোন কাজ ছিল না সেদিন। আমি বললাম যাব। কিন্তু কোন কৌতুহল নেই জানতে- কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। পথে ও স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে বলল, “আমি এক জ্যোতিষীর কাছে যাচ্ছি।” ওর সঙ্গী হলাম আমি। আমরা কলকাতার এক পার্কে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে এক জ্যোতিষী মাটিতে বসে আছেন। চারিদিকে গোল করে ঘিরে আছে কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা। এক এক জনের জন্মপত্রিকা বা ঠিকুজি দেখে তাদের ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছেন। আমার বন্ধু বসে গেল ওর ভাগ্য গণনা করাতে। শেষ হতে আমরা উঠে আসছি।
জ্যোতিষী মহাশয় বন্ধুকে বললেন, “ও কি চলে যাচ্ছেন কেন? আপনার বন্ধু দেখাবেন না? “
আমি কৌতুহল সামলাতে পারলাম না।
আমি বসলাম, বললাম “আমি কিন্তু কোন জন্ম পত্রিকা বা ঠিকুজি আনিনি।“
উনি বললেন, “তার কোন দরকার নেই। আপনার জন্ম তারিখ এবং সময়টা মনে আছে কি?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ।”
তাঁর একটা লেটারে হেডে আমার নাম জন্ম সময় লিখে একটা ছক তৈরি করলেন। তারপর অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কি যেন দেখতে লাগলেন। আস্তে আস্তে আমাকে বলতে বলতে সেই কাগজে লিখতে শুরু করলেন।
বললেন, “৪ঠা অক্টোবর ১৯৬৬ সাল হইতে ২৩শে নভেম্বর ১৯৬৬ সালের মধ্যে আপনার বিদেশ যাত্রার যোগ আসিবে। তার আগে জুন মাসে আপনার একটা বড় রকমের অসুখ হইবে। এবং ভবিষ্যতে তিনটে বাড়ি, গাড়ি এবং যথেষ্ট অর্থ ও নামযশ হইবে। পরের পঁচিশ বছর আপনার জীবনের স্বর্ণযুগ। এই অবস্থা আপনার ১৯৮০ সাল পর্যন্ত থাকিবে। সামান্য বাধা বিপত্তি আসিলেও আপনার উন্নতি অব্যাহত থাকিবে। এরপর স্থিতি।“
সব শুনে একটু অবাক হলাম। বলে কি জ্যোতিষী মহাশয়? এসব তো অকল্পনীয়! মনে মনে হাসলাম কিন্তু খুব ভালো লাগছিল ওঁর কথা শুনতে। মনে হলো সত্যি যদি হয়! শেষ হয়ে গেলে উঠে পড়ছি। বললেন – “বসুন, আপনার স্ত্রীর জন্ম তারিখ মনে আছে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ।” তখন তিনি আবার একটা লেটার হেড নিয়ে অনুর জন্ম তারিখ মিলিয়ে একটা ছক করলেন এবং বললেন ওঁরও বিদেশ যাত্রা আছে। নভেম্বর মাসে। আমার কৌতুহল আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। আশুতোষ ভট্টাচার্যের সেই কাগজ দুটো এখনো আমার কাছে আছে । সেটা নীচে দিলাম।
আশুতোষ ভট্টাচার্য্যের গননা
দৈনন্দিন জীবনের টানা পড়েন ও ব্যাস্ততায় এ ঘটনা ভুলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ জুন মাসে আমি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হলাম। আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক মিহির ডাক্তারের ওষুধে শেষ পর্যন্ত সেরে উঠলাম। মিহির ডাক্তার অত্যন্ত সদাশয় মানুষ, সহানুভূতিশীল পাড়ার ডাক্তার। আমাকে সারিয়ে তুললেন। রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম আশুতোষ ভট্টাচার্যের কথা। উনি তো বলেছিলেন জুন মাসে আমার অসুখ করবে। তাই হলো। তবে কি অন্যগুলোও হবে? অসুখের কিছুদিনে পরেই আমি একটা জব ভাউচার পেলাম-- ব্রিটিশ গভর্মেন্ট থেকে। তবে কি আশু ভটচার্যের কথাগুলো সত্যি হতে চলেছে? টাকার অভাব ছিল কিন্তু যোগাড় হয়ে গেল।
আমার জর্জ সল্টারের ‘বস’ সুরেশ চন্দ্র পাল দিলেন ৫০১ টাকা, আমার সহকর্মী গোপেন্দ্র নারায়ণ ভৌমিক আমার ইংল্যান্ড যাওয়ার খবরটা শুনে স্বতঃস্ফুতভাবে দিলেন ৫০০ টাকা, আর দিল খোকনের বন্ধু কনক মজুমদার ৪৫০ টাকা। কনকের কথা সল্ট লেক পর্বে বলব আরো। আমার বন্ধু কেশব ও দীপুও দিয়েছিল ২০০ টাকা করে। আসানসোল থেকে অনুর ভাই মন্টু ও মন্টুর বন্ধু অশোক বোস দিল ৫০০ টাকা। অনুর বন্ধু নন্দার কাছে অনু ওর গয়না বন্ধক রেখে পেল ৫০০ টাকা। আর সুনীল হালদার দিয়েছিল ৩০০ টাকা (ঠিক মনে পড়ছে না) ওর জন্য একটা গীটার এনে দিতে ইংল্যান্ড থেকে। সকলের টাকা শোধ করে দিয়েছিলাম শুধু ভৌমিক আর হালদারের টাকা দেওয়া হয় নি --- ওরা হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করে ওদের খুঁজে পাইনি। নীল খাতায় লিখে রেখেছিলাম কার কাছ থেকে কত ধার নিয়েছি। সেই তালিকাটা নীচে দিলাম।
ঋণের তালিকা
কত উদার ও উঁচু মনের মানুষ যে আমার প্রয়োজনের সময় আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের সংখ্যা অল্প নয়। এইসব মানুষ যারা কখনো কখনো স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, আবার যাদের কাছে হাত পেতেছি তারাও নির্দ্বিধায় আমার হাত ভরে দিয়েছেন। এইসব সদাসয় সহৃদয় পরোপকারী মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা বোধহয় এখনো বাসযোগ্য। এদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এদের ভালোবাসা স্নেহ এবং সাহায্য না পেলে আজকের আমি “আমি” হতে পারতাম না। আমি সত্যই ভাগ্যবান!
ইংল্যান্ড যাত্রার প্রাক্বালে লেখক
অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত টাকা পয়সা জোগাড় হল। অনু তখন আসানসোলে, ওকে বলা হয়নি যে আমি জব ভাউচার পেয়েছি এবং ইংল্যান্ড যাওয়া স্থির করেছি। দেরী না করে প্যাসেজ বুক করতে গেলাম এজেন্সির কাছে। এজেন্সির নাম হরি সিং --- কলকাতার নামকরা ট্রাভেল এজেন্ট। আমাকে একটা ফ্রেঞ্চ মেরিটাইম কোম্পানির জাহাজ লাওসে টিকিট দিল। আবার সেই আশুতোষ ভট্টাচার্যর কথা মনে পড়ল। উনি তো বলেছিলেন নভেম্বরে। যাহোক তারিখ নিয়ে সমালোচনা করা ঠিক নয়, গণনা তো সত্যি হতে চলেছে। সব ঠিক করে আসানসোলে গেলাম অনুকে বলতে। ও খুশি, তবে আমি একা যাবো শুনে ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ওর পিতৃদেবকেও বললাম। উনি সোজা না করে দিলেন। বললেন -- “ তুমি একা যেতে পারবে না। খুকিকেও সঙ্গে নিয়ে যাও। (খুকি মানে অনু)। আমার বড় ছেলে বিলেত গেল একা একা। বৌমা থাকলো ১২ বছর আমার কাছে। সুতরাং তোমাকে আমি একা যেতে দেব না। “
আমি বিপদে পড়লাম। আমার কাছে আর একটা কানা কড়িও নেই। অথচ ওঁকে সে কথা বলতে পারলাম না। আমরা ফিরে এলাম কলকাতায়। আরো কিছু ধার হলো। অনু ওর গয়না বন্ধক দিল ওর এক বন্ধু নন্দার কাছে । ৫০০ টাকা পাওয়া গেল। আবার গেলাম হরি সিং-র কাছে, অনু ও বুবাই-র জন্য টিকিট কিনতে। হরি সিং জানালো – ওই জাহাজে আর কোনো জায়গা নেই। আমি তো অবাক, তাহলে কি হবে। জিজ্ঞেস করলাম পরের জাহাজ কবে? উত্তর এলো ওই কোম্পানিরই আর এক জাহাজ, ভিয়েতনাম, বোম্বে থেকে ছাড়বে নভেম্বরে। তাতে টিকিট পাওয়া যেতে পারে। আশ্চর্য তবে শেষ পর্যন্ত জ্যোতিষীর কথাই সত্য হলো?
আমি কখনো জ্যোতিষীকে বিশ্বাস করিনি। ভালো কথা বললে বিশ্বাস করতে ভালো লাগতো কিন্তু ওই পর্যন্ত। আমাদের দেশে হাজার হাজার জ্যোতিষী আর লক্ষ লক্ষ লোক তাদের কাছে যায় ভাগ্য গণনা করতে। যেহেতু সকলেই অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, কি হবে কেউ জানে না। চারিদিকে নৈরাজ্য, অনিশ্চয়তা। এদের আশ্বাস দিয়ে এই তথাকথিত জ্যোতিষী সম্প্রদায় তাদের উপার্জনের পথ করে নিয়েছে। অবৈজ্ঞানিক? কাকতালীয়? বুজরুকি? আশুতোষ জ্যোতষীকে দেখার পর মনে হয় কেউ কেউ আছেন, সত্যি আছেন যাঁরা ভাগ্য গননা করতে পারেন।
দক্ষিণেশ্বর ২০-১১-৬৬
ক্রমশ