এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন 

    কালের নৌকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৪৮ বার পঠিত
  • ‘যাদের হৃদয়ে কোন প্রেম নেই – প্রীতি নেই –
    করুণার আলোড়ন নেই
    পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া’।

    আজ নয়। অনেক বছর আগেই কবি’র দৃষ্টিতে ধরা পড়ে গিয়েছিল গভীর এই সত্য। ভেবে দেখুন। ২০০২/২০০৩ সালের ভ‌োটার লিস্টে যাঁদের নাম রয়েছে। তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ফর্ম বিলি করে আসবেন। সেই ফর্ম যথাযথ ভাবে পূরণ করে নির্দিষ্ট এগারোটি সরকারি নথি’র ভিতরে যে’কোন একটি নথি সহ সেই ফর্ম আবার নির্বাচন কমিশনের প্রেরিত প্রতিনিধির হাতে তুলে দিতে হবে। না, সেখানেই গল্পের শেষ নয়। নির্বাচন কমিশনের সেই প্রতিনিধি যদি আপনাকে ‘রেকমেণ্ড’ করেন তবেই হয়তো নিশ্চিত ভাবে আপনার নাম রয়ে যাবে সরকারি ভোটার লিস্টে। আর তিনি যদি আপনার নাম নট রেকমেণ্ডেড কলমে তুলে দেন। তাহলেই কেল্লাফতে। ভোট দেওয়ার আশা দূরে থাক। ভরতীয় নাগরিক হিসাবে আপনার অস্তিত্ব তখন সার্কাসের ট্রাপিজের দঁড়ির উপরে ঝুলতে থাকলো। এবারে নির্বাচন কমিশন বা ভারত সরকারের আর কোন দায় নেই। আপনাকে বাদ দিয়ে পরবর্তী সরকার গঠন, জন প্রতিনিধি নির্বাচন, ভোট পর্ব সম্পন্ন হতে থাকবে। দায় আপনার, আপনার ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করে পুনরায় ভোটার লিস্টে নিজের নাম নথিভুক্ত করানোর। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, সেখান থেকে প্রয়োজনে সুপ্রীম কোর্ট অব্দি দৌড়াতে হবে আপনাকে। তবে যদি নিজের অস্তিত্ব রক্ষা হয়। আর যদি ফর্ম পূরণের সাথে নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট সরকারি নথির একটিও আপনি দাখিল করতে না পারেন। তাহলে তো নিশ্চিত ভাবেই আপনার নাম গিয়ে জমা হয়ে যাবে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধির দেওয়া ‘নট রেকমেণ্ডেড’ লিস্টে। খবরে প্রকাশ, বিহারে সদ্য হওয়া বিশেষ নির্বাচনী সমীক্ষা (SIR) এ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বিহারবাসী নির্দিষ্ট এগারোটি সরকারি নথির কোন একটি নথিও দাখিল করতে পারেননি। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। প্রায় আপামর জনসাধারণের হাতে থাকা আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড এবং রেশন কার্ড। এইগুলির কোনটিই আর কিন্তু ভোটার লিস্টে নাম ধরে রাখার জন্য কার্যকরি নয়। ফলে ধরে নেওয়াই যায়, বিহারে যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বিহারবাসী নিজেদের জমা দেওয়া ফর্মের সাথে সরকারি কোন নথি জমা দিতে পারেননি, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই কিন্তু নিশ্চিত ভাবে আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড কিংবা নিদেন পক্ষে একটি রেশন কার্ড রয়েছেই। অথচ তাঁদের ভোট দেওয়ার নাগরিক অধিকারের সাথে এই তিনটি নথির আর কোন সংযোগ স্বীকার করতেই রাজি নয় ভারতীয় নির্বাচন কমিশন।

    না এখানেই নির্বাচন কমিশনের খামখেয়ালির শেষ নয়। নির্বাচন কমিশন যে ২০০২/২০০৩ সালের ভোটার লিস্টটি নিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভারতীয়ত্ব পরীক্ষায় নেমেছেন। সেই লিস্টে যাঁদেরই নাম রয়েছে তাঁরা সকলেই কিন্তু বিগত বাইশ বছরের সময়সীমায় একাধিক লোকসভা এবং বিধানসভা গঠন করায় তাঁদের নাগরিক ভুমিকা পালন করেছেন। আমাদের রাজ্যের কথাই যদি ধরা যায়। তবে ২০০৬, ২০১১, ২০১৬, এবং ২০২১ এর চারটি বিধানসভা গঠনে তাঁদের সকলেরই ভুমিকা রয়েছে। যেমন ভুমিকা রয়েছে ২০০৪, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২৪ এর প্রতিটি লোকসভা গঠনেও। এবারে ভাবুন, এই এতগুলি লোকসভা থেকে বিধানসভা গঠনে সাংবিধানিক ভুমিকা পালন করার পরেও ২০০২/২০০৩ সালের ভোটার লিস্টে নাম থাকা আপনার, ভরতীয় নাগরিকত্ব আজ আর সুনিশ্চিত নয়। আপনাকে নতুন করে নির্দিষ্ট নথি সহ যথাযথ ভাবে পূরণ করা সরকারি ফর্ম নির্বাচন কমিশন নয়, নির্বাচন কমিশনের প্রেরিত প্রতিনিধির কাছে দাখিল করে অপেক্ষা করতে হবে, যদি তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আপনার নাম রেকমেণ্ড করেন। একমাত্র তবেই বিগত ২২/২৩ বছরে এগারোটি আইনসভা গঠন করার কাজে ভারতীয় নাগরিকের ভুমিকা রাখার পরেও আপনি পুনরায় ভোটার লিস্টে আপনার নাম দেখতে পাবেন। নচেৎ ঘচাং-ফুঃ!

    অর্থাৎ ২০০২/২০০৩ থেকে ২০২৪/২০২৫ সময় সীমায় নয় নয় করেও এগারোটি আইনসভা গঠন করে দিয়েও আপনার ভারতীয় নাগরিকত্ব আজও পরীক্ষিত নয়। আজও সুনিশ্চিত নয়। স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশনের ভিতর দিয়ে আপনাকে নিজেই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। হলেই আপনি আনন্দে আত্মহারা। সব পেয়েছি দেশের বাসিন্দা। তখন আপনাকে আর পায় কে? বাকি সব না পাওয়াগুলি ভুলে আপনি তখন উর্ধবাহু। বরং নতুন করে নাগরিকত্ব হারানো ভারতীয়দের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকানোর একটা আত্মশ্লাঘা অনুভবের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, কে বলতে পারে আপনই তখন নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে শাসকদলের প্রতি কৃতজ্ঞতাও ফিল করতেই পারেন বই’কি। বিশেষ করে আপনি যদি সনাতনী হন! 

    যে কোন সাংবিধানিক গণতন্ত্রে আইনসভা গঠনে এবং সরকার গড়ে তুলতে সেই দেশের নাগরিকরাই কেবলমাত্র অংশ নিতে পারে। অন্য কোন দেশের নাগরিকদের সেই অধিকার থাকে না। ফলত ভোট দেওয়ার অধিকারও কেবলমাত্র নাগরিক অধিকারই। ঘুরিয়ে দেখলে, যিনি ভোট দিচ্ছেন। তিনিই আসলে নাগরিক। নাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আইনসভার কোনরূপ বৈধতাই থাকে না। বৈধতা থাকে না নির্বাচনে জিতে আসা সরকারেরও। এটাই গণতন্ত্রের সাধারণ নিয়ম। এরপরেও যদি যে কোন রাজ্যেই হোক না কেন, একাধিক বা এগারোটি আইনসভা গঠনে ভোটাধিকার প্রয়োগের পরেও কারুর ভোটাধিকার চলে যায়, নির্দিষ্ট কোন একটি নথির অভাবে। তাহলে বিগত এগারোটি আইনসভাই অবৈধ হয়ে যায় আসলেই। অবৈধ হয়ে যায় ২০০২/২০০৩ থেকে গঠিত একাধিক কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার। অবৈধ হয়ে যায় বিগত ২২/২৩ বছরের পাশ করা প্রতিটি আইন। চালু করা প্রতিটি সরকারি নিয়মকানুন। ফলে বিশেষ নির্বাচনী সমীক্ষা (SIR) কতটা সাংবিধানিক আর আসলেই কতখানি অসাংবিধানিক একটি প্রক্রিয়া। সেই বিষয়ে বিশেষ সন্দেহের আর কোন অবকাশ থাকে কি?

    ©কালেরনৌকা ১৪ই আগস্ট ২০২৫
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন