এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - শক্তি-শরত কথা - পর্ব ৩০

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত



    কফি হাউস, শক্তি-শরত কথা

    পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে আমরা যে সময়ে কফি হাউসে আড্ডা দিতাম সে সময়ে কফি হাউসের উপরে তিন তলায় একটা সভাঘর ছিল। অনেক গুণীজন আসতেন সেই আলোচনা সভায়। সেখানে আমি মাঝে মাঝে গিয়ে বসতাম। বেশী লোকজন থাকত না, খুবই ঘরোয়া এবং আন্তরিক। এখানে প্রায়ই র‍্যাডিকাল হিউমানিস্টদের মিটিং হত। সেখানেই আমি প্রথম শিব নারায়ণ রায়কে দেখেছিলাম। তাঁর বাচন, মতবাদ, তীক্ষ্ণ যুক্তি আমাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। এর বহুকাল পরে লন্ডনে ২০০০ সালে টেগোর সেন্টারের এক অধিবেশনে আমি শিব নারায়ণ রায়কে আমন্ত্রণ করি। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। শিব নারায়ণ মহাশয় লন্ডনে আমার বন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য ছাত্র গোলাম মুরশিদের বাড়িতে ছিলেন। এক সন্ধ্যায় মুরশিদভাই আমাকে ও অনুকে নিমন্ত্রণ করলেন শিব নারায়ণ মহাশয়ের সঙ্গে গল্প করার জন্য। গিয়ে দেখি সেই সন্ধ্যায় তসলিমা নাসরিনও উপস্থিত। সকলে মিলে সেই সন্ধ্যার আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিল। মনে আছে শিব নারায়ণ মহাশয় তসলিমাকে তার কাজে উৎসাহ দিয়েছিলেন। 

    কফি হাউসের উপর তলার ওই ঘরে আরো দুটো সন্ধ্যার কথা আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে। দুটো আলাদা মিটিং-এ। আমি উপভোগ করেছিলাম। প্রথম জন ঋত্বিক ঘটক, দ্বিতীয় জন সত্যজিৎ রায়। দুটি বিরল প্রতিভা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। 

    আমরা তিন চার বন্ধু কফি হাউসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতাম। কারো পকেটেই অতক্ষণ ধরে কফি নিয়ে বসে থাকার মত যথেষ্ট পয়সা থাকত না। আমরা চারজনে দুটো কফি আর দুটো ‘ফলস’ (False) -এর অর্ডার দিতাম; অর্থাৎ দু চাপ কফি আর দুটো খালি কাপ। দু কাপ কফি আমরা চার ভাগ করে খেতাম। 

    ১৯৬২ সালে, মনে আছে, এক আমেরিকান কবি সেদিনের তরুণ ও উঠতি কবি মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন। তিনি বিটস কবি এলেন গিন্সবার্গ (Allen Ginsberg)। এলেন গিন্সবার্গকে আমি কফি হাউসে দেখেছিলাম – শক্তি সুনীলের সঙ্গে। গিন্সবার্গ প্রায় সাত মাস কলকাতায় ছিলেন এবং প্রায়ই কফি হাউসে আসতেন। আমার সঙ্গে আলাপ হয় নি। আমার কেন জানিনা খুব একটা উৎসাহ হয়নি। গিন্সবার্গ কখনো ‘হাঙরি জেনারেশন’-র টেবিলে বসতেন শক্তি চট্টো ও মলয় রায়চৌধুরীদের সঙ্গে। কখনো বা সুনীল গাঙ্গুলী ও জ্যোতির্ময় দত্তর সঙ্গে অন্য টেবিলে। 

    গিন্সবার্গ কলকাতার মশা-মাছি অধ্যুষিত এক সস্তা হোটেলে থাকতেন। আর কলকাতার বস্তিতে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন। গাঁজা, চরস সেবন করে শ্মশানঘাটে শবদাহ দেখতেন আর মাঝে মাঝে গঙ্গায় স্নান করতেন। কলকাতার দুস্থ, মূক ও কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি কলকাতাকে ভালবাসতেন – কলকাতায় তিনি আবার এসেছিলেন ১৯৭১ সালে। সে সময় একদিন তিনি যশোর রোডে এক উদ্বাস্তু বস্তি দেখতে যান। তাদের জীবনযাত্রা গিন্সবার্গকে ব্যথিত ও বিমর্ষ করেছিল। ফিরে এসে তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা "September on Jessore Road" (সেপ্টেম্বরে যশোর রোডে) লিখেছিলেন। 
    পুলিৎজার প্রাইজ ফাইনালিস্ট, খ্যাতনামা লেখিকা, Deborah Baker (ডেবরা বেকার) তাঁর বিখ্যাত বই A Blue Hand: The Beats in India (এক নীল হাত: ভারতে বিটস)-এ লিখছেন, "He (Ginsberg) loved Calcutta best, because it was a city that honoured poetry and where poets were worshipped like minor gods,"। “গিন্সবার্গ কলকাতাকে সবচেয়ে ভালবাসতেন, কেন না কলকাতা সেই শহর যে শহর কবিতাকে সম্মান দেয় এবং যেখানে কবিরা প্রায় ছোটখাট দেবতার মত পূজিত হয়।” 
    গিন্সবার্গের সঙ্গে সুনীল ও শক্তির এক গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল যা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট ছিল। তাঁরা কেউই আজ আর নেই। বোধ হয় আমিই শেষ জীবিত সাক্ষী।

    কফি হাউসে আমরা যে টেবিলে বসতাম তার দুটো টেবিলের পরেই কৃত্তিবাসের আড্ডা ছিল। তারও দুটো টেবিল পরে হাঙরি জেনেরেশন (Hungry Generation) মলয় রায়চৌধুরীরা, বসত। মনে আছে ১৯৬৪ সালে মলয় রায়চৌধুরীকে অশ্লীলতার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমাদের বেশি কথাবার্তা হত না। সৌজন্য বিনিময় এবং ‘কেমন আছ’-র বেশী আলাপটা গড়ায়নি। ষাটের দশকের শেষদিকে আমি লন্ডনে চলে আসি। এখানে সুনীল-শক্তির বন্ধু ভাস্কর দত্তের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। ভাস্কর সূত্রেই সুনীল-শক্তির সঙ্গে আমার পুরানো পরিচয় অচিরে গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। 

    শক্তি-শরত- ভাস্কর আড্ডা 

    দিনটা আমার মনে আছে। মনে আছে কেন না লিখে রেখেছিলাম তাই মনে আছে। ১৯শে অক্টোবর ১৯৯১ সাল। ভাস্করের ফোন এল। 

    “অমলেন্দু, কেমন আছ? শোন, শক্তি এসেছে, শরতও আছে। আজ সন্ধে বেলা তুমি অরুন্ধতীকে নিয়ে চলে এস। আসার সময় সঙ্গে অরুন্ধতীর হারমোনিয়াম আর তোমার রেকর্ড করার যন্ত্রপাতিও সঙ্গে এনো।”

    সব কিছু নিয়ে সন্ধেবেলা ভাস্করের বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম। গিয়ে দেখি বাড়িভর্তি লোকজন – চেনা অচেনা। আনা-অশোক (অনামিতা ও অশোক দত্ত), দুষ্টু ও পাম (তীর্থ ও নয়নী চক্রবর্তী) ও আরো অনেকে। কয়েকজন নতুন, আগে আলাপ হয়নি। দেখা হলে সকলেই বলল ভাস্করের কাছে তারা আমাদের নাম শুনেছে তবে কখনো আলাপ করার সুযোগ হয়নি। সুতরাং এক অর্থে আমরা সকলেই সকলকে চিনি। মনে হল আড্ডাটা বেশ ভালই জমবে। 

    শক্তি গতকাল এসেছে। শরত আগেই লন্ডনে এসেছে। ইতিমধ্যে একদিন একাই আমাদের বাড়ি এসেছিল। শরত খুবই মিশুকে মানুষ, দু’মিনিটেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। ভাস্করের বাড়িতে দেখা হতে শক্তি ‘কত দিন দেখা হয়নি’ বলে হাস্যমুখে হাতটা বাড়িয়ে দিল। 

    কথাবার্তা শুরু হল। লাগামছাড়া স্বতঃস্ফুর্ত নির্ভেজাল আড্ডা। টিকা টিপ্পনী গল্প গান কবিতাপাঠ। মাঝে মাঝে হাসি, হা-হা হাসি, হো-হো হাসি, ছোট হাসি, বড় হাসি, অট্টহাসি। হঠাৎ হঠাৎ কথা থামিয়ে শক্তি উদাত্ত গলায় গান গেয়ে উঠছে। শক্তির গলায় ব্যারিটোনের আওয়াজ – গভীর, দরাজ, উচ্চস্বর। যা শ্রুতিতে ধরা যায় তাকে ভাষায় প্রকাশ করার মত দক্ষতা আমার নেই। তাই পাঠককে আমি শ্রোতা করার চেষ্টা করছি না। সেদিনের সেই আড্ডা মধ্য রাত্রি পার হয়ে অনেক ঘণ্টা চলেছিল। আমার যন্ত্রে আমি প্রায় দু--আড়াই ঘণ্টা দুটো ক্যাসেট টেপে শব্দবদ্ধ করে রেখেছিলাম। আজ এতদিন পরে সেগুলো ‘ডিজিটাইজড’ করার চেষ্টা করছি। ইচ্ছা আছে অচিরে সেই অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা ইউটিউবে প্রকাশ করার। কৌতূহলী পাঠকরা তখন সেই আড্ডার শরিক হতে পারবেন।

    নীচে সেই টেপটা থেকে কিছুটা অংশ, যতটা শুনতে পেয়েছি এবং বুঝতে পেরেছি, তা তুলে দিলাম। মাঝে মাঝে কথাবার্তা অসলগ্ন মনে হতে পারে। আশা করছি পাঠক তাঁর কল্পনা দিয়ে সেগুলো ভরিয়ে নেবেন। 

    ... ... ... 

    ঘরের মধ্যে গুঞ্জন। পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে। আমি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্বন্ধে কিছু বলে শুরু করলাম। বললাম, আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি। কিন্তু আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করছে বলে মনে হল না। ভাস্কর আমাকে থামিয়ে দিল। আমি চুপ করলাম। যে যার মত গল্প করে যাচ্ছে। হঠাৎ শক্তি তার স্বভাবসিদ্ধ উচ্চস্বরে কবিতা পড়তে শুরু করল। কিছু কবিতা আমি পড়েছি কিছু পড়িনি। প্রত্যেক কবিতার পর প্রশস্তি। পড়ল ‘পুরানো নতুন দুঃখ’। অসাধারণ কবিতা। ঘরের সকলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় কলরব করে উঠল। 

    ‘যে-দুঃখ পুরনো, তাকে কাছে এসে বসতে বলি আজ 
    আমি বসে আছি, আছে ছায়া, তার পাশে যদি দুঃখ এসে বসে 
    বেশ লাগে, মনে হয়, নতুন দুঃখকে বলি, যাও 
    কিছুদিন ঘুরে এসো অন্য কোনো সুখের বাগানে 
    নস্ট করো কিছু ফুল, জ্বালাও সবুজ পাতা, তছনছ করো
    কিছুদিন ঘুরে দুঃখ ক্লান্ত হও, এসো তারপর 
    পাশে বসো।
    এখন পুরনো এই দুঃখকে বসার জায়গা দাও 
    অনেক বাগান ঘুরে, মানুষের বাড়ি ঘুরে, উড়িয়ে-পুড়িয়ে 
    এ আমার কাছে এসে বসতে চায়। কিছুদিন থাক।
    শান্তি পাক, সঙ্গ পাক। এসো তারপর।

    ও নতুন দুঃখ তুমি এসো তারপর।।‘ 

    শক্তি পর পর চার পাঁচটা কবিতা পড়ল। 

    তারপর ঘরের মধ্যে অন্য যারা কবি ছিল তারা কবিতা পড়তে শুরু করল। আমার পালা এল এক সময়। আমি পর পর তিনটে কবিতা পড়লাম। শেষ কবিতাটি “নাটক”।

    শেষ অঙ্কে প্রক্ষিপ্ত সংলাপ 
    বিপর্যস্ত নটী, হতাশ কুশীলব 
    হৃদয়ে সুড়িসুড়ি
    মূহুর্মূহু আলোর জাদু 
    বুদ্ধিজীবী কৌশল।

    সমস্তই পরিবেশিত
    ত্রুটি ছিল না আয়োজনে।

    করতালিতে মুখর হল আলোকিত অন্ধকার।

    প্রশংসাই প্রার্থিত ছিল 
    কাম্য ছিল শুধু করতালি।
    একই শর্তে চিরদিন ওদের সঙ্গে সন্ধি করা 
    ওরা যা শুনতে চায় শুধু তাই বলা।

    যা শোনাবার জন্য এ সাধনা 
    সে কথা কোনদিন হয়নি বলা।

    স্বর্গ থেকে দূত এসে আমাকে স্পর্শ করল,

    বলল, “অনেক তো হলো বৎস!
    এবার বালিশটা পাল্টে নাও
    আবার শুরু করো।“

    পড়া শেষ হলে সকলে হাততালি দিল। কয়েকজন বলল, বাঃ, বাঃ। শক্তি বলল, “বাঃ, বাঃ। এইটা আবার পড়।“ 

    ভাস্কর বলল, “বাঃ, আবার শুরু কর“। 

    আমি কবিতাটা আবার পড়লাম। আমার মনে হল আমার কবিতা লেখা সার্থক হয়েছে। 

    সকলে আবার শক্তির কবিতা শুনতে চায়। 

    শক্তি কবিতা পাঠ করতে শুরু করল – “ বহুদিন বেদনায়, বহুদিন অন্ধকারে হয় হৃদয়ের উদঘাটন, সে সময় পর্দা সরে যায় প্রাচীন দিগন্তের দিকে ...”। 

    পরের কবিতা, “ খুব বেশীদিন বাঁচব না, আমি বাঁচতে চাই না, শস্য ফুটলে আমি নেব তার মুগ্ধ দৃশ্য ... ”। 

    তারপর, “ মনে পড়ল, তোমায় পড়ল মনে, বাঁশী বাজল হঠাৎ জংশনে, লেভেল ক্রসিং, দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন ...”। 

    একজন বলল, “এবার শরতদা, এবার আপনি একটা পড়ুন।” 

    শরত ইতস্ততঃ করে বলল, “ শক্তি আর দুএকটা পড়ুক, নিজের পছন্দমত।”

    শক্তি বলল, “ আঃ, দ্যাট’স এ ভেরি ডিফিকাল্ট পয়েন্ট।”

    বলে একটা অসামান্য কবিতা পড়ল শক্তি, নাম, ‘চাবি’। 

    “ আমার কাছে এখনো পড়ে আছে তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি / কেমন করে তোরন্দাজ খোলো / ফুকলি পড়ে বিল তো তোমার আছে / এখন ও মন, নতুন রিসিট যাবি / চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হল / চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে রেখেছিলাম / আজই সময় হলো, লিখিও উহা ফিরত চাও কিনা / অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে তোমার মুখ অশ্রু ঝলমল / লিখিও উহাও ফিরত চাও কিনা। “ 

    সকলে বাহবা করে উঠল। (কয়েকটা শব্দ ভাল শুনতে পাইনি। ভুল হলে ক্ষমা চাইছি।)
    শক্তি থামল। 

    হঠাৎ কবিতা থামিয়ে শক্তি গান ধরল। 

    উদাত্ত গলা, “ ভেবেছিলেম ঘরে রব, কোথাও যাব না। ওই যে বাহিরে বাজিল বাঁশী বল কি করি। আমায় বাঁশীতে ডেকেছে কে। “ 

    একটু থেমে ধরল, “ বঁধু, তোমায় করব রাজা তরুতলে। বনফুলের বিনোদমালা দেব গলে”
    শক্তি ও আর সকলে শুরু করল। “ যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।। “ 

    শক্তির কি উদাত্ত কণ্ঠ। আপন মনে গলা ছেড়ে উঁচুস্বরে গেয়ে চলেছে। সারা ঘর গমগম করছে। দু তিনটে গান করল। একসময় গান থামিয়ে বলল ‘এবার একটা আসল গান হোক।’ অনুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অরুন্ধতী, এবার তুমি একটা গান কর।’ 

    অনু হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে একটা ডি এল রায় ধরল। “আজি তোমার কাছে ভাসিয়া যায় অন্তর আমার, আজি সহসা ঝরিল চোখে কেন এ বারি ধার ...।“ গানের মাঝে মাঝে শক্তি ‘আহা’ ‘বাঃ’ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করতে থাকল। গান শেষ হলে শক্তি বলে উঠল ‘চমৎকার ! চমৎকার!’ ‘অসাধারণ, অসাধারণ’।

    একজন শক্তিকে কবিতা পড়তে বলল। শক্তি বলল, “ এখন? না এখন গানই হোক। “ ভাস্কর বলল, “ তুই একটা গা “। শক্তি গান ধরল, “ ওগো কাঙ্গাল আমারে কাঙ্গাল করেছ ...” 
    গান শেষ করে শক্তি অরুন্ধতীকে বলল “ তুমি আর একটা গাও। “ 

    অনু আর একটা ডি এল রায় গাইল। “ এ জীবনে পুরিল না সাধ ভালবাসি, এ ক্ষুদ্র হৃদয় হায় ধরে না ধরে না তাই আকুল অসীম প্রেম রাশি ...”। মাঝে মাঝে অনুর সঙ্গে শক্তিও গলা মেলাচ্ছিল। গান শেষ হলে শক্তি বলল “অসাধারণ ‘, অরুন্ধতীর কি গলা !”। 

    একটু পরে অনু বলল, সে আমার লেখা একটা গান গাইতে পারে কিনা। ভাস্কর বলে উঠল, “ থাক, এখানে আর অমলেন্দুকে ‘প্রোমোট’ করতে হবে না।“ 

    ... ... ... 

    সকলে অনুরোধ করল শরতকে পড়তে। আবার কথাবার্তা শুরু হল। কিছুক্ষণ পরে শরত কবিতা পড়তে শুরু করল। শরতের গলার স্বর শক্তির মত উঁচু নয়। শরত আস্তে আস্তে কথা বলে। শরতের কবিতা অন্যস্বাদের। শরত অনেকগুলো কবিতা পড়ল। কতগুলো মনে নেই; দশ বারোটা হবে বোধ হয়। প্রত্যেক পাঠের পর শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে প্রশংসাবাদ করছিল। আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছে। সকলেই উপভোগ করছে। শরত একটার পর একটা কবিতা পড়ে যাচ্ছে আর সকলে অভিভূতের মত শুনছে। মাঝে মাঝে প্রশংসার হাসি, ভাল লাগার করতালি। 

    শরত বলল “শক্তির পর পড়া খুব মুস্কিল। ... একটা কবিতা পড়ি। “বঙ্গভূম”। এর ভাষাটা 
    একটু গোলমেলে। এটা হচ্ছে পুরুলিয়া বাঁকুড়া অঞ্চলের গ্রাম্য ভাষা। যখন ওখানে ছিলাম তখন দুএকটা কথা পিক আপ করেছিলাম। সেই ভাষায় কবিতাটা লেখা। এ ভাষায় আমি কথা বলি না। “ ... ... 

    শরত আরম্ভ করল। “ তেমন দিন কবে আসবে / যখন গরুর বাহনে চড়ি আকাশে যেতি যেতি / মা লক্ষ্মী শুধাবেন / উটা কি দেশ গো, নদীভরি জল টং টং করে, মাঠভরি ধান / 
    কালো কালো মানুষগুলান খিল খিল করি হাসে / অন্তর্যামী নাড়ায়ণ মিটি মিটি হাসে ... ...”।

    (ওরা ‘নাড়ায়ণ’-ই বলে) 

    শেষ করে আর একটা ধরল, ... “কোথায় গেল, খুকু তোমার ঝালর দোয়া ইজের / কোথায় গেল সবুজ জামা, নরম সাদা মোজা / আমি যে কাল কিনে দিলাম রেশমি লাল ফিতে ... “

    তারপর আর একটা, “ আখের মত সরু তোমার হাত দুটো পা দুটো / বয়স কত বারো, দাঁত নেই যে চিবুই ওই সজোরে দুই মুঠো / খুকী একটু নরম হতে পার ...।“

    শরত পর পর অনেকগুলো কবিতা পড়ল। কতগুলো মনে নেই। নীচে আরো ক’একটা দিলাম। 

    কবিতার নাম, পোলট্রি। 

    “ মোরগ বলল, আগে শুনি তার ডিমে তা দেবে কোথায় / বাচ্চাটা হবে কার, নাকি ডিমটাই উঠে যাবে কারো প্লেটে / কার প্লেট, সে কি সেদ্ধ খাবে না ভাজা / সাদা না হলুদ . নাকি দুটি ভাগ ঘেঁটে, লবণ এবং লঙ্কার রক্তিম মিশিয়ে করবে ওটির সদব্যবহার / কেন সে-ই খাবে ডিমটা, অপরে না? / কেন অমলেট? সিদ্ধ তো সুস্বাদু / তাছাড়া প্রশ্ন, কেন এই ভ্রূণ নাশ? / পৃথিবীর আলো কেড়ে নেয় কোন রাজা? / উত্তর চাই। / মোরগ বলল, আছে? / না পেলে কিছুতেই যাব না প্রিয়ার কাছে। “ 

    আরো একটা, ‘পরমান্নের বাটি’। 

    “ শিউড়িতে এই সে দিন এক সাঁওতাল বালিকা / মেলার মধ্যে জেগে উঠল / মাথায় সাদা পরমান্নের বাটি / তাই না দেখে মেলা ভাঙল / আকাশে সব জানলা গেল নিবে / গৃহস্থরা ছুটে ফিরল বাড়ি / অন্ধকারে জেগে রইল লজ্জাহীন বিশাল বালিকাটি / ওরা বলল চাঁদ / মেলার মধ্যে কবি ধরার ফাঁদ / আমরা যারা শহুরে লোক / বালিকাটিকে ফুসলিয়ে আনলাম / জেনে নিলাম রাতিয়া তার নাম / তারপর এক ভেলার মত ভাসতে লাগল অনচ্ছিস্ট পরমান্নের বাটি। “ 

    শরত পড়তেই থাকল। হঠাৎ শক্তি একসময় বলে উঠল, ‘একটা গল্প বলি শোনো‘। 

    ... ... ... 

     



    শক্তি চট্টোপাধ্যায় 



    শক্তি: শোনো, শুভ্রা। হালদার বাগানে শরত থাকত আর আমি থাকতাম উল্টোডাঙ্গার বস্তিতে। মা আর আমি। বারো টাকার বস্তি। ... স্যুমিং পুলের ওখান থেকে খেয়েদেয়ে চায়ের দোকানে এসে বসতাম। মৃণাল দেব বলে একটা ছেলে, বড়লোকের ছেলে, তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল তারপর তাকে একটা চড়ও মেরেছিল। যাইহোক, ওখান থেকে খেয়ে দেয়ে শরত ও আমি রিক্সা করে ফিরতাম। শরত তখন চাকরি করে, বড় চাকরি। রিক্সায় উঠে শরত টাইটা খুলে পকেটে রেখে দিত। রাত্তির সাড়ে বারোটার সময় কেউ টাই পরে থাকে না। থাকে যারা ট্যাক্সি ফ্যাক্সিতে যাতায়াত করে ...। আমরা ওখান থেকে রিক্সা করে ফিরতাম। ... একটা রিক্সাওয়ালা ছিল, তার নাম লক্ষণ, সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করত। চার আনা পয়সা দিতাম। আমরা এলে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিত। একদিন শরত বলল, “লক্ষণ তুমি বড় ক্লান্ত। তুমি উঠে বস, আমি চালাই।” (ঘরের সকলে উচ্চহাস্যে ফেটে পড়ল)। লক্ষণ হতভম্ব ! দোকানদার বেরিয়ে এসে বলতে লাগল “কি বোকা লোক !” 

    (কারোর হাসি আর থামে না।) 

    আড্ডা চলতে থাকল। 

    শক্তি: আর একদিনের কথা শোন। কুকিত্তি কত ! বাড়ি যাওয়ার আগে শ্যামবাজারের মোড়ে গলির মধ্যে একটা জায়গা ছিল। একটা ঘরের উপর একটা জলের ট্যাঙ্ক ছিল। সেখানে ট্যাঙ্কের উপর বসে আমরা বারোটা একটা পর্যন্ত আড্ডা মারতাম (আর খেতাম)। ওই কার্তিক বলে লোকটার একটা পান বিড়ির দোকান ছিল। দোকানটা ফলস --- আসলে ওখানে ও দিশি মদ বিক্রি করত। আর আমাদের দিত। ... পরেরদিন কাগজে বেরোল, মনে আছে তোমার, ছজন লোক মারা গেছে। ... ...। আমরা বেঁচে গেলাম। ... 
    ট্যাঙ্কের উপর বসে আমরা খাই। ওখানে আকাশটা ফাঁকা, চাঁদের আলো এসে পড়ে। কার্তিক আমাদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। 

    (এইসময় শক্তিকে থামিয়ে শরত বলতে শুরু করল। শরতের গলা নরম, একটু নীচুস্বরে কথা বলে)

    শরত: … দুটো গল্প বলার আছে। একটা হচ্ছে, সেন্ট্রাল এভেন্যুর উপরে একটা পান বিড়ির দোকান ছিল। রাতে অন্য সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। অধিক রাত্রে এখানে দিশি মদটা পাওয়া যায়। আমরা এখানে খেতাম। একদিন হল কি, মাঝ রাতে আমরা রাস্তায় বসে খাচ্ছি আর লোকটা দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় লোকজন নেই। একবার মনে হল, আচ্ছা, রাস্তায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে সিগারেট খেলে ব্যাপারটা কেমন হয়? (এইসময় শক্তি বলে উঠল তোমাদের আর একটা গল্প বলব পরে ... শরত শক্তিকে থামিয়ে আবার শুরু করল) ... 
    এইভাবে অনেকক্ষণ কাটার পর আমরা বাড়ি চলে এলাম। তারপর দিন আবার টাই-ফাই পরে অফিস যাচ্ছি। গাড়িতে বসে ড্রাইভার বলল, (শরত গলার স্বর পালটে ফেলল। শরতের অন্যের গলার স্বর ও উচ্চারণ নকল করার একটা অদ্ভুত গুণ আছে। ড্রাইভরের গলা নকল করে বলল) 

    ড্রাইভার: বাবু, কাল রাত্রে একটা গোলমাল হয়ে গেছে।

    শরত: কি গোলমাল? বাড়িতে কিছু হয়েছে? 

    ড্রাইভার: না, বাড়িতে না, বাইরে।

    শরত: বাইরে ! বাইরে কি হয়েছে?

    ড্রাইভার: না, আপনি যখন শুয়ে ছিলেন না? তখন,

    শরত: তখন কি? 

    ড্রাইভার: তখন, ওই পাশের বাড়ির লোকেরা বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে ফিরছিল। তো, তারা আমাকে জিগ্যেস করল “ তোর বাবু রাস্তায় শুয়ে আছে কেন? “ 
    (হাসিতে সকলে ফেটে পড়ল)

    শরত: তা, তুই বললি না কেন যে বাবুর পেট ব্যথা করছিল। 

    ড্রাইভার: কি করে বলব? আপনি তো শুয়ে শুয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। 

    (আবার সকলে হাসিতে গড়িয়ে পড়ল। সে হাসি থামেনি অনেকক্ষণ।)

    শরত: আরেকটা গল্প বলি শোন। ... গাড়ি নিয়ে আমরা শান্তিনিকেতন যেতাম। ফেরার সময় সেই গাড়ি নিয়ে বর্ধমান টর্ধমান ঘুরে আসছি। ...
    (তিনদিন ধরে ঘুরেছে ওরা। ড্রাইভার ওদের বোঝাতে চেষ্টা করল অনেক ঘুরে তেল ফুরিয়ে গেছে। শরত ওকে পয়সা দিল তেল নিয়ে আসতে। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেল তেল আনতে। কিছুক্ষণ পরে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এল। শরত জিগ্যেস করল, “কিরে? হেঁটে আসছিস কেন? গাড়ির কি হল? “ ড্রাইভার বলল, “লোকটা তেল পুরে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে পালাল।“ শরত বলল, “সে কি? তুই কি করছিলি?” ড্রাইভার বলল, “ আমি কি করব? আমি তো তখন গ্যারেজে ঢুকে টাকা দিচ্ছিলাম। “)

    সকলে হাসতে লাগল। একজন বলল “ লাইক মাস্টার লাইক সারভ্যান্ট “) 

    (এই গল্পটা ভাল শোনা যায় নি তাই সংক্ষেপে নিজের ভাষায় লিখলাম।)

    ... ... ... 

    শক্তি: এবার আমার গল্পটা বলি। বিয়ের আগের দিন রাত্রিবেলা আমি হাজতে ছিলাম। (ঘরের মধ্যে হাসির হুল্লোড় পড়ে গেল)। আমি অলিম্পিয়ায় মদ খেয়ে ফিরছি। রাত দেড়টা। তার পরের দিন আমার বিয়ে। আমি সকলকে বললাম, অলিম্পিয়ায় চলে এস। তখন অলিম্পিয়ায় আমার ঠেক। বেরিয়ে এসে রাস্তায় চাঁদ দেখছি। চাঁদটা একটু ভাল ভাবে দেখা দরকার। চাঁদ পড়ে আছে ... চাঁদ না দেখলে তো বিয়ে হয় না। পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে গেল। তার আগের দিন থানার ও-সিকে রাতে জড়িয়ে ধরে চুমু-টুমু খেয়েছি। ব্যাটা ছেলের চুমু ওর পছন্দ হয়নি। মেয়েছেলের চুমু খেতে অভ্যস্ত। (আবার সমবেত হাসি) ও-সি ছিল সুব্রত। সুব্রত দুটো হাবিলদারের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। আর সকলকে বলে দিয়েছে এ-বাবুকে যদি স্টেশনে নিয়ে আসো তাহলে তোমাদের চাকরি যাবে। সেদিন সুব্রতর বদলে কে যেন ছিল। ফলে আমাকে তুলে নিয়ে গেছে --- খুব যত্ন করে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু ও-সি চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে তো আমি জানি না। নতুন ওসি এসেছে। তাকে আমি চিনি না।। ও-সির সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। রাত্রি দেড়টা দুটো বাজে। সে ঘুমোতে চলে গেছে। ফলে আমাকে জেলে চলে যেতে হবে। 

    যাই হোক, (ভাস্কর কি একটা বলতে যাচ্ছিল, শক্তি ভাস্করকে থামিয়ে বলল “ আমাকে বলতে দে”) পরের দিন ... মোহনপুরী থাকে থানার বাইরে ... ওর চেলারা থাকে। তখন, ক্লারিওন-ম্যাকডোনাল্ড খুব কাছে (ভুল হতে পারে, ঠিক শুনতে পাইনি)। ওখানে আমি সামান্য কাজ করি ... দু-একশ টাকা পাই, ফ্রিল্যান্স কাজ করি। বিল হয়ে গেছে। তো আমি মনুকে বললাম। দেখো আমার কাপড় জামা নষ্ট হয়ে গেছে। একেবারে যা-তা। ... তখন বেহালায় থাকি। বিল রেডি হয়ে গেছে। মনুকে বললাম, এই বিলটা নিয়ে ক্লারিওন থেকে একশ টাকা নিয়ে এসো। যাই হোক ও-ই ক্লারিওন-ম্যাকডোনাল্ড থেকে একশ টাকা নিয়ে এসে ট্যাক্সিতে করে বাড়িতে যাবে। তখন রুচিরা আর শ্যাম ... বোলে, আমার বন্ধু ... গেল আমার বাড়িতে, ... বিয়ে করতে নিয়ে যাবে আর কি ...। বললে, চলুন, ... তখনো মদের গন্ধ ভুর ভুর করে বেরুচ্ছে। (একজন টিপ্পনী কেটে বলল, ভুর ভুর নয় ভক ভক, মহুয়ার ভুর ভুর, দিশির ভক ভক)। যাই হোক, গেলাম, নীচে বসে রয়েছি। বৌ নামে না। (সকলের হাসি) ... বৌ আর নামে না, ভাবছে অন্য কারোর সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে বুঝি। ... ও নামছেই না। ও তো বিয়ে করবেই না বলছে। ... মহা মুস্কিল, শুভ্রা ...। (আরো হাসি আরো কথাবার্তা। কিছুক্ষণ হাসি-কথার মধ্যে শক্তির কথাগুলো চাপা পড়ে গেল।)
    ... ... 

    শক্তির কথার উপর ভাস্কর বলে উঠল।

    ভাস্কর: শক্তিকে একবার পার্ক স্ট্রীট থানায় ধরে নিয়ে গেছে। ... পার্ক স্ট্রীট থানার ও-সি, সে ওকে দেখে, চিনে, শক্তিকে বলল, “ আপনার পায়ে হাতেপায়ে পড়ছি আপনি আর এখানে আসবেন না।“ 

    শরত: আসলে পুলিশের লোকগুলো বেসিক্যালি সব ভালো। আমরা বাইরে থেকে বলি পুলিশ ঘুষখোর, ...। রাতের পুলিশ যখন মাতালদের মিট করে তখন দুপক্ষ থেকেই হিউম্যান এলিমেন্ট বেরিয়ে আসে। ... চার আনা আট আনা নিয়ে পুলিশ আমদের লাইসেন্স দিত। ... 
    তা ঘটনাটা হল কি ... ভাস্করের বিয়ের আগের দিন, দুদিন আগে হবে বোধহয় ... আমাদের দুতিনটে খাবার জায়গা ছিল ... দুএকটা পকেট ছিল, সেগুলো সবই নটোরিয়াস জায়গা। তবে সেখানে সস্তায় মাল পাওয়া যায়। একটা ছিল চিনে পাড়ায় ... ওটা ছিল রবীন্দ্রসদন ও সেন্ট্রাল আভেন্যুর মাঝখানে একটা গলির মধ্যে ... একটু গোলমেলে জায়গা। 

    ভাস্কর: রবীন্দ্রসদনের ওই জায়গাটা আগে ফাঁকা মাঠ ছিল। 
    (শরত আবার শুরু করল।)

    শরত: ... চিনে আর মুসলমান ... একটা মিক্সড ব্রিড। সেখানে কমলি বলে একটা মেয়ে ছিল আর একটা বাঁদর ছিল। ... এটা লিখেছি। 

    শক্তি: কে লিখেছে?
    শরত: আমি লিখেছি। 
    শক্তি: হ্যাঁ, তুমি লিখেছ। কে পড়েছে? (সকলের হাসি)

    শরত: সে অন্য কথা। ... শোনো না, গল্পটা শোনো। সেই কমলি আমাদের মদটা সার্ভ করত। ... বারো আনা করে নিত, পাঁচ আউন্স থাকত। বসির বলে একটা লোক ছিল। 
    বসির ছিল মার্ডারার, মাঝে মাঝে জেলে থাকত, মাঝে মাঝে বাইরে। যখন বাইরে থাকে তখন কমলির কাছে থাকে। কমলির ওই আউটফিটটা ছিল। একটা অন্ধকার ঘর, একটা মোমবাতি জ্বলত। 

    শুভ্রা: এ গল্প আমরা আগে শুনিনি কেন? 

    শরত: ওই অন্ধকার ঘরে আমরা বসতাম আর কমলি সার্ভ করত। কমলির একটা কন্ডিশন ছিল, একটা রাউন্ড খাওয়ার পর, সেকেন্ড রাউন্ডটা যখন খাওয়াবে, রাউন্ড মানে ভাঁড়ে, মাটির ভাঁড়ে, একটা ভাঁড় ওকে দিতে হবে। ওর পয়সায় কেনা হবে কিন্তু আমরা কিনে ওকে দেব। কিন্তু কমলি নিজে খেত না। কমলি একেবারে টাচ করত না। ঘরের সামনে একটা পেচ্ছাবখানা ছিল। পেচ্ছাবখানার উপর একটা ট্যাঙ্ক ছিল। ট্যাঙ্কের উপর একটা বাঁদর ছিল। 

    সেই বাঁদরটা ‘কুক’ ‘কুক’ করে শব্দ করত। কমলি ভাঁড়টা নিয়ে তুলে দিত আর বাঁদরটা সেটা খেত। খেয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার ‘কুক’ ‘কুক’ করে শব্দ করত। তার মধ্যে আমাদের আর একটা রাউন্ড হয়ে গেছে। ওইটা আমাদের কাছ থেকে চুরি করত। জোর করে নিত। এই লোভেই আমাদের খাতির করত। যাই হোক, এটা বিসাইড দ্য পয়েন্ট। একদিন ভাস্কর আর আমি খেতে গেছি। কোন দিন কিছু হয় না, সেদিন হঠাৎ পুলিশের ভ্যান এসে হাজির, গলির মোড়ে। গলির মধ্যে ভ্যান ঢুকতে পারে না। চার পাঁচজন পুলিশ, সামনে একজন ও-সি। ভিতরে ঢুকল, আরো ভিতরে ঢুকল। ... আমাদের কমলি বলল, 

    কমলি: “বাতি নিভিয়ে দিন, বাতি নিভিয়ে দিন “। 

    আমরা ফুঁ দিয়ে বাতি নিভিয়ে দিলাম। অন্ধকারে বসে আছি। ... 

    ভাস্কর:, “বসির কিন্তু মার্ডারার “। 

    শরত “ তা, আমাদের মার্ডার করবে কেন?” 

    (সকলের আবার হাসি)।

    শরত: চুপচাপ বসে আছি মোমবাতি নিভিয়ে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ চলে যাবে। আমরা আবার খেতে শুরু করব। আমরা ওয়েট করছি। হবি তো হ, দরজা ঠ্যাঙ্গাতে ঠ্যাঙ্গাতে, আসলে তার পিছনে ছিল প্রস্টিটিউটদের কোয়ার্টার। তাদের ধরে ধরে নিয়ে এসেছে, সে লাইন দিয়ে মার্চ করে। তারপরে আমাদের দরজায় ধাক্কা। কমলি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কিছুই জানে না। পুলিশ জিগ্যেস করল। “ ভিতরে কেউ আছে?” 

    কমলি: ন-ন-না ভিতরে কেউ নেই। 

    শরত: পুলিশ ভিতরে ঢুকে, টর্চ মেরে মেরে দেখল। সামনে ভাঁড় আর নেভানো মোমবাতি। আমরা অন্ধকারে বসে আছি। 

    পুলিশ: আপনারা? আপনারা এখানে কি করছেন। 

    শরত: এই এখানে বসে মদ খাচ্ছি।

    পুলিশ: আর জায়গা পেলেন না? জানেন, বসিরকে চেনেন? 

    শরত: কেন, বসির তো ভাল লোক। বসির আমাদের জন্যে বাজার থেকে মাংসের চপ টপ নিয়ে আসে। 

    পুলিশ: জানেন, বসির মার্ডারার? ওর নামে ছটা মার্ডারের কেস আছে। 

    শরত: বসির আমাদের চপ নিয়ে আসে, চার আনা করে ভাল ভাল নানা রকম নাড়ী ভুঁড়ির চপ।

    ওদের (পুলিশের) কোন উপায় নেই। সকলকে ধরে নিয়ে যাবে --- আমাদেরও। “ থানায় যান। ও-সির কাছে রিপোর্ট করা হবে, তারপর যা হবার হবে। “ তারপর সকলকে তুলল। মার্চ করতে করতে, চিনে বেশ্যা থেকে আরম্ভ করে (সকলের হো হো হাসি, বাকি কথাগুলো হাসির শব্দে অস্পস্ট হয়ে উঠল) ... আর আমরা পিছন দিকে। 

    ভাস্কর তখন ..., “এই ব্যাপারটা কি হল।“ টিপিকাল ভাস্কর বেরিয়ে এল। বলে সামনে গিয়ে, একটা পুলিশ কনস্টেবল ছিল, তার কাঁধে হাত দিয়ে (এখানে আবার এত জোরে হাসির আওয়াজ হতে লাগল যে পরের কথাগুলো ভাল শুনতে পাওয়া গেল না। একজন বলল তার পরের দিন বিয়ে!)। কালো রঙের বড় গাড়ি, হল্লা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে --- সকলকে আস্তে আস্তে তুলছে। ঢোকাচ্ছে যখন আমার স্ট্রাইক করল, আমাদের বোধ হয় সার্চ করবে। আমার পকেটে ভিজিটিং কার্ড আছে --- ক্রেডিট ম্যানেজার, এসো (Esso) কোম্পানির। পরে ওখানে খবর দিলে আমার চাকরি চলে যাবে। আমি চুপচাপ বসে আছি, ভাস্কর বসে আছে। জানলায় গ্রিল। আমি আস্তে আস্তে পকেট থেকে (কার্ড) বার করে (অস্পষ্ট কথা, শুনতে পাওয়া গেল না)। ... তারপর যথারীতি থানায় নিয়ে গেল। ... হাজতে নিয়ে গেল। বাবু বলল “ লক আপ, লক আপ “। 

    দুএকজনকে দু’ঘা মারল। আমরা দুজনে বসে আছি। ভাস্কর বলছে, “দেরী হয়ে যাচ্ছে “। ভাবছে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ওদের বোঝাতে চাইছে আমাদের সময়ের দাম আছে। ... তারপরে সব যখন চলে গেল, পুরো থানা ফাঁকা; সিপাইগুলোকে বলল, “ তোমরা বাইরে যাও “। ও-সি একা বসে আছে। পিছন দিকে দুটো বেঞ্চি। 

    ও-সি: আসুন, দাঁড়ান। আচ্ছা আপনারা এইখানে কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্রলোকের ছেলে। কি করেন? 

    শরত: ভাস্কর ইন্ডিয়ান অক্সিজেনের একাউন্ট ম্যানেজার আর আমি এসো কোম্পানির ক্রেডিট ম্যানেজার।

    ও-সি: তা, আপনারা ওখানে কি করছেন? জানেন জায়গাটা কত খারাপ। ... গেলে শরীরের মাথা কেটে নিতে পারে। 

    (ভাস্কর তো তো করে বলল) 

    ভাস্কর: ওই, মানে, ব্যাপারটা কি, কৃত্তিবাস, ... (আবার সকলের হাসি) কৃত্তিবাস পত্রিকা, কৃত্তিবাসের হেড অফিস, ১৪ নম্বর পদ্মনাথ লেন, সেটা আমারই বাড়ি। আমারই বাড়িতে কৃত্তিবাসের হেড অফিস। আমরা লিখি ঠিখি।

    (শরত বলল, “লিখি টিখি ... ও (ভাস্কর) একবর্ণ লেখে না।) “ (আবার হা হা হাসি)। 

    ভাস্কর বলে যাচ্ছে, “ আমরা লিখি টিখি। তা আমাদের কৃত্তিবাস পত্রিকা। আমরা বুঝি না, তো, আমরা ওই রাফ সাইড অফ লাইফ, এইটা দেখার জন্য। “ 

    ও-সি: “ তা রাফ সাইড অফ লাইফ দেখার জন্য আপনাদের ওইখানে যেতে হবে? বলবেন তো, বলবেন তো ! আমি আপনাদের দেখাব রাফ সাইড অফ লাইফ। “ (আবার সকলের জোরে জোরে হাসি)।

    ভাস্কর শরতকে থামিয়ে বলতে সুরু করল। 

    ভাস্কর: যে কথাটা বলেনি, লোকটা স্কটিশচার্চ কলেজে পড়ত। ও উৎপল (বসু), দীপেন, দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘চর্যাপদের হরিণ’ লিখেছে, সকলকে চিনত। 

    (দীপেনকে আমার মনে আছে। কুব্জ, খর্বকায়, কাঁধে একটা কাপড়ের ঝোলা ব্যাগ। খুব জনপ্রিয়, সর্বদাই বন্ধুবান্ধব পরিবৃত।) 

    শরত: শেষটুকু বলি। 

    ও-সি: তা, আপনারা ওভাবে যাবেন না। আমি আপনাদের দেখিয়ে দেব রাফ সাইড অফ লাইফ।

    শরত: কি করতে হবে তাহলে? 

    ও-সি: আজ, কি বার? শুক্রবার। আচ্ছা বুধবার, পরের বুধবার আসুন। সন্ধে বেলা আটটার সময় আসুন। আমি আপনাদের দেখিয়ে দেব। আমার সঙ্গে ঘুরবেন। আরো অনেক কিছু দেখিয়ে দেব। এ পাড়ায় কি আছে – যা জানতে চান। 

    শরত: তারপর পরের বুধবার আমি আর ভাস্কর গিয়ে হাজির। 

    ভাস্কর: ওইটা বল। মেয়েছেলেটা ষাট হাজার টাকা নিয়ে এল। ওই সেই মেয়েটা, কমলি। 

    শরত: আমরা গিয়ে হাজির। ও-সি হল্লা বলে ডাকল। তার মানে হল্লা গাড়ির ড্রাইভারকে ডাকল। ভক ভক করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ভাঙ্গা একটা গাড়ি সামনে এসে দাঁড়াল। ছজন কনস্টেবল পিছনে বসল। আর সামনে বাবু, ড্রাইভার, ও-সি আর আমরা দুজন। ঘুরতে ঘুরতে প্রথমে একটা জায়গায় নিয়ে গেল। ... বিরাট বড় দরজাওয়ালা বাড়ি একটা। দরজাটা বন্ধ। এত বড় একটা তালা রয়েছে। তখন ও-সি একটা কনস্টেবলকে বলল, “ তালা খোল।“ কনস্টেবল একটা ডাণ্ডা ঘুরিয়ে কি করল, তালাটা খুলে গেল। ভিতরে ঢুকলাম। একতলা, তারপর দোতলা, গোল ঘোরানো সিঁড়ি। একপাশে কোনে একটা ঘরে চার পাঁচটা চিনে বসে বসে আফিম খাচ্ছে আর ‘সাত্তা’ খেলছে। ও-সি বলল, “দেখছেন, কি হচ্ছে দেখছেন?” আমরা বেরিয়ে এলাম। পুলিশ ওদের ধরে নিয়ে গাড়িতে পুরল। 

    এভাবে সমস্ত পল্লীটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল। ... পুলিশের ভয়ে লোকগুলো ঢুকে যায় খাটের তলায়। আর পুলিশ খাটের তলা থেকে তাদের টেনে বার করে। আর মেয়েগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, যেন কিছু জানে না। করতে করতে সেই কমলির জায়গায় এসেছে। সেই রকম দরজা টানাটানি করছে। হঠাৎ কমলি বলল, 

    কমলি: বাবু, তোমরা পুলিশের সঙ্গে এসেছ? ছি, ছি, আমি জানতাম তোমরা বাবু। তোমরা পুলিশের লোক? 

    শরত: তারপর কমলি আমাদের এমন ঘেন্না করল !... পরে আস্তে আস্তে একটু এগিয়ে বলল, 

    কমলি: বাবু, কিছু পয়সা নিয়ে পুলিশকে যদি বল, বসিরকে ছাড়িয়ে দেবে। আবার এরেস্ট হয়েছে। 

    শরত: তখন পুলিশের লোক ভেবে কমলি আমাদের উপর ইনফ্লুয়েন্স খাটাচ্ছে। যেন পুলিশকে বললে বসিরকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমাদের প্রচণ্ড ঘৃণা করছে, যে আমরা পুলিশের লোক, ইনফর্মার, এটা জানত না। ... তারপর পুলিশের গাড়ী ছেড়ে দিয়ে আমরা আলাদা চলে গেলাম। ... ... কমলির ঘেন্নাটা আমার মনে আছে যে হঠাৎ ডিসকভার করল যে আমরা পুলিশের লোক। 

    একজন বলল, এটা লেখো। 

    শরত: এটা আমার লেখা হয়ে গিয়েছে। 

    .. ...

     



    শরত মুখোপাধ্যায় 




    প্রায় রাতভর আড্ডা চলেছিল; আড্ডা শেষে শক্তি একটা বই উপহার দিল অনু ও আমাকে। বইটি ‘ যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো ‘। ১৯৮৩ সালে এই বইটি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিল। 

     


    একদিন সন্ধ্যায় ভাস্করের ফোন এল। 

    “ অমলেন্দু, শক্তি আর নেই। তাড়াতাড়ি চলে এস। আমার একদম ভালো লাগছে না।“

    আমি ছুটলাম। গিয়ে দেখি সুরাপাত্র নিয়ে ভাস্কর বসে আছে। আমাকে দেখে প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগল, “শক্তিটা চলে গেল“, “শক্তিটা চলে গেল”। 

    আমরা দুজনে অনেকক্ষণ বসে গল্প করলাম। ভাস্কর ক্রমাগত সুরাপান করছিল এবং প্রায় জড়ানো গলায় অসংলগ্ন ভাবে স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছিল। আমিই একমাত্র শ্রোতা। এক সময় ভাস্কর কথা বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ভাস্করের শরীরটা সোফাতে এলিয়ে পড়ল। নিস্তব্ধ ঘরে একমাত্র শব্দ ভাস্করের নাসিকাধ্বনি। 

    ভাস্কর অঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি আর ওকে জাগালাম না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি আস্তে আস্তে ভারাক্রান্ত মনে উঠে পড়লাম। 

    ... ... ... 

    ক্রমশঃ 
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন