

ডাউকি নাকি পিয়াং?
দুপুরে খাওয়া সেরেই বেরিয়ে পড়লাম। এবারে আর হেঁটে নয় বাসে, গন্তব্য ডাউকি। পাহাড়ি পথ, জায়গায় জায়গায় খুব সংকীর্ণ। সামনে অন্য গাড়ি এসে গেলে দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। কিছু দূর অন্তর এক একটা পাহাড়ী গ্রাম। পাহাড়ীয়া খাসি শিশুর দল ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে খেলা করছে, তাদের পরনের সামান্য পোশাকগুলি ধুলোবালি লেগে মলিন, তবে মুখের হাসিটি বড় উজ্জ্বল। বেশিরভাগই আমাদের টাটা করছে। এক দুজন হাঁ করে ভয়ও দেখাচ্ছে। মনটা বেশ ভালো লাগছিল। কিছুক্ষণ এমন চলার পর অনুভবে মনে হল পাহাড়ের চরিত্র বদল হয়েছে। মাঝে মাঝে উল্লম্ব ঢাল। পাহাড় ভর্তি ঘন সুপুরি গাছের বন। মানুষের লাগানো। সবুজ আছে, তবু যেন পাহাড় এখানে বেশি রূঢ়। গার্গী আবার চলভাষে গুগল দাদার শরণাপন্ন হয়। দেখা যায় আমাদের চোখ ভুল কথা বলেনি। এ পাহাড় জয়ন্তীয়া। মানে এ সফরে এক যাত্রায় গারো খাসি জয়ন্তীয়া তিন পাহাড়েরই দর্শন হল! আনন্দে বল্লরীদিকে জড়িয়ে ধরি। কারণ পরিকল্পনা ওরই ছিল। পাঠক যদি ভূগোলের ছাত্র বা ছাত্রী না হন, তবে এই আনন্দ বুঝতে পারবেন না। বাংলাদেশের পিঠের ওপরে তিনটে ড্যাশ গারো খাসি জয়ন্তীয়া এজীবনে মানচিত্রে কতবার যে এঁকেছি, তার ইয়ত্তা নেই। তাদের পর পর দেখা আমার পরমপ্রাপ্তি। বাস নিচের দিকে নামতে থাকে, সুপুরি গাছের ফাঁকে ঢালের ওপাশে দিগন্ত জোড়া মরকত সবুজ চাষের ক্ষেত দেখা যায়। বিদ্যুৎ বাবু ডেকে বলেন, ঐ দেখুন দিদি, বাংলাদেশ দেখা যাচ্ছে। আমরা জানলায় ঝুঁকে পড়ি। বাস পুরোপুরি সমতল নাহলেও পাদদেশে খানিকটা সমান জায়গায় নেমে পড়ে। নিচের দিকে সুপুরি বন নেই, তাই ভালো করে দেখা যাবে বলে প্রস্তুত হই। আর তখনই আঁতকে উঠি। সামনে প্রায় তিন মানুষ উঁচু একটানা কাঁটা তারের বেড়া। ওপাশে ধানের ক্ষেতে হাল টানা চলছে। বাংলাদেশের হাওয়া গায়ে, মুখে লাগছে আমাদের। হাওয়ারা ওপাশের ধানগাছের ডগা দুলিয়ে এপাশের ঢালে সুপুরি পাতার কানে গান গায়। বেড়া ওদের থামাতে পারেনি। সমান জায়গা পেয়ে বাস ছুটছে দুরন্ত গতিতে। সহসা মনে হয়, বাসটা যেন এক বিশাল করাতকল। গোঁ গোঁ ঘর্ঘর শব্দে কাঁটাতারের বেড়াটা আমার হৃৎপিণ্ড কাটতে কাটতে চলেছে। বাস বাঁক ঘুরছে। বাঁদিকের জানলায় খাড়া পাহাড় আর ডানদিকে একটা চওড়া নদী নুড়ি পাথরে ভরা। বাস এবারে একটি সেতু পেরিয়ে যায়। বাঁদিকে আসলে রয়েছে এক জলপ্রপাত, এখন জল নেই। কিছুদূর এগিয়ে ডানদিকে এবারে বিশাল ডাউকি হ্রদ। অর্ধচন্দ্রাকৃতি। নীলচে সবুজ জল, অথচ একেবারে স্বচ্ছ। জলের নিচে নুড়িভরা নদীগর্ভ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একধারে সারিবদ্ধ নৌকো বাঁধা পর্যটকের অপেক্ষায়। বিরাট হ্রদে ইতিউতি এক দুটি নৌকা ঘুরে বেড়াচ্ছে সওয়ারি নিয়ে। বাসে করে এবারে আমরা হ্রদের উপরের ঝুলন্ত সেতু পার হচ্ছি। সেতু লম্বায় বড় কম নয়। যখন আমরা মাঝবরাবর, অবাক হয়ে দেখি নৌকোগুলোর ছায়া পড়েছে জলের নিচের মেঝেতে। সেতু পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে বাস থামে। চালক বলেন ঘড়ি ধরে একঘন্টা সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে নদীতে ঘুরে এসে বাসে উঠবেন। রাত হয়ে যাবে ফিরতে। আর ভালো কথা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাবধানে পা ফেলবেন, ঐ নদীতেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত। দুদিকে বি. এস. এফ আর বি. ডি. আর বন্দুক উঁচিয়ে আছে। মনে শঙ্কার দোলাচল নিয়ে উৎরাই পথে দৌড় লাগাই আমরা। পাড়ে পৌঁছে অনেক গুলো সিঁড়ি ভেঙে তবে নদীর বুকে নামা গেল। ভারতের পশ্চিম জয়ন্তীয়া পাহাড় থেকে এই নদী ঝাঁপ দিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের শ্রীহট্টে। শ্রী-হ-ট্ট মানে সিলেট। সেই কত ছোটবেলা থেকে মার মুখে শুনেছি সিলেটি বাংলা আর চাটগাঁয়ের বাংলা বোঝা দায়। ডাউকি আসলে মেঘালয়ের সীমানায় এক ছোট শহর। নদীর নাম স্থানীয় ভাষায় উঙগট। লোকমুখে ডাউকি নামটাই চলে। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ওর আদরের নাম "পিয়াং"। পাহাড়ের পাদদেশে বলে নদী খুব চওড়া, দিগন্ত জোড়া। খরস্রোতা নদী পাহাড় থেকে হঠাৎ নেমে গতি হারিয়ে সব নুড়ি পাথরগুলি জড়ো করেছে মাটির বুকে। এখন শুষ্ক সময়, তাই জল কেবল একপাশ দিয়ে বইছে। প্রথমে নেমেই কোন দিকে কী, ঠিক ঠাহর পাইনা। নদীর বুকে যেন হট্টমেলা। অসংখ্য লোক আর অজস্র বিকিকিনি। ক্রমে ধাতস্থ হয়ে এক এক করে লক্ষ্য করি। একদিকে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের শিবির, উল্টো দিকে বাংলাদেশ রাইফেলসের। এপাশে ভারতের নৌকোগুলি সার দিয়ে বাঁধা তো ওপাশে বাংলাদেশের। বেলুনওলা রয়েছেন কয়েকজন, সঙ্গে হরেক খেলনা ও মুখোশের পসরা। বেশ কিছু লোক, বাংলাদেশের মুড়ি মাখা, বাংলাদেশের আচার, বলে হেঁকে হেঁকে ঘোরাঘুরি করছেন। যদি তাঁরা "বাংলাদেশের" শব্দটি উচ্চারণ না করতেন, তবে, (সবে ভাত খেয়েই বেরিয়েছি, পরিশ্রম বেশি হয়েছিল বলে খাওয়াটা হয়েছেও জোর) আমরা সেদিকে ধাবিত হতাম না। কিন্তু ঐ শব্দটির অমোঘ টানে আমরা একজন বিক্রেতাকে পাকড়াও করলাম। বিক্রেতারা এপারের বাঙালির কাছে ঐ শব্দটির কুহক জানেন বলেই, ওটিকে হাইলাইট করে হাঁকাহাঁকি করছেন। মুড়ি একটু মোটা ধরণের, মাখাটাও স্বাদে আলাদা, কলকাতার মতো নয়। আচার তিনধরণের। আমের, কুলের আর তেঁতুলের। লোভে পড়ে সবাই গাদা গাদা আচার কিনে ফেললাম। মধুসূদন বলল প্লেন মুড়ি কিনব আর আমি বললাম, বাংলাদেশের টাকা দেখব। বিক্রেতা বললেন, প্লেন মুড়ি তো এখানে বিক্রি হয়না দাদা, আচ্ছা আমি দেখছি। আমাকেও হাত তুলে আশ্বাস দিয়ে তিনি ভিড়ের মধ্যে অদৃশ্য হলেন। এবারে আমাদের নজরে পড়ল, একটা বেশ বড়সড় কালো বোর্ড। যার এদিকটা ভারতের, ওদিকে লেখা আছে বাংলাদেশ সীমান্ত। ওদিকে যাওয়া মানা। আমরা প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্ত লেখাটাকে রেখে নিজেদের সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মিরর ইমেজ বলে লেখাটা উল্টো আসছে। ছবিটা ঠিক করে তুলতে গেলে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে হবে। মধুসূদন বলল, শারদাদি, আমি কিন্তু বাংলাদেশে ঢুকব। বল্লরীদি তাই শুনে লাফিয়ে উঠে বলে, তুমি ঢুকলে আমিও ঢুকব। আমি মনে মনে হাসি। ওরা ঢুকলে আমি যেন দাঁড়িয়ে থাকব। আমিও তো ঢুকবই। কিন্তু কিভাবে। বি. ডি. আরের একজন জওয়ানকে ডেকে বলি আমাদের ইচ্ছের কথা। তিনি গাম্ভীর্যের আড়ালে মৃদু হেসে বলেন, যান, কিন্তু বেশি দূর যাবেন না। আমরা শ্রীহট্টে ঢুকে পড়ে ছবি তুলে নিই। আবার দেশে ফিরে ওনাকে ধন্যবাদ দিতে গেলে তিনি একটু নরম হয়েই জিজ্ঞাসা করেন, কোথা থেকে আসছেন আপনারা? আমাদের মুখে কলকাতা শুনে তাঁর চোখে আলো ঝিকিয়ে উঠেই আবার মিলিয়ে যায়। আলাপ আরো একটু অগ্রসর হয়। জওয়ান জানান, তাঁর বাড়ি ঢাকাতে। এবারে আমাদের চোখে আলো। কলকাতা আর ঢাকা যে আত্মার আত্মীয় তা উভয়পক্ষই অন্তরে গোপন করি। তিনি আরো বলেন, আমি যদি আপনাদের ছবি তুলতে না দিই, খারাপ ব্যবহার করি, আপনাদের ভ্রমণটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি হয়তো আমাকে দিয়ে পুরো বি. ডি. আরকে বিচার করে বসবেন। কিন্তু আপনাদের বি. এস. এফ এসব অ্যালাউ করতে চায়না। দেখুন আপনাদের কিভাবে দেখছে? মনে ভাবি, ভারত থেকে হয়তো কেউ চট করে বাংলাদেশে থাকতে যায়না, কিন্তু বি. এস. এফের সেই চিন্তা আছে। তাই তারা সদা সন্ত্রস্ত। ঘুরতে ঘুরতে এক ইয়ং বি. এস. এফ জওয়ানের সঙ্গেও আলাপ হয়। বাড়ি উত্তর প্রদেশের বারাউনিতে। গ্রামের ছেলে। হিন্দিতে লাজুক মুখে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছি কিনা। কিছুদিন আগেই ব্যাঙ্গালোর থেকে আসা পর্যটকেরা তাঁর সঙ্গে আলাপ করে গেছে। কলকাতার নাম শুনে তাঁর আলাদা কোনো ভাবোদয় হয়না। বুঝি, কলকাতা আর ব্যঙ্গালোর, তাঁর কাছে যতটা আপন, ততটাই দূরের। ইতিমধ্যে সেই আচার দোকানি মধুসূদনের হাতে খোলা প্লাস্টিক প্যাকেটে প্রায় আড়াইশো মুড়ি ধরিয়ে বলেন, প্লেন মুড়ি এটুকুই যোগাড় করতে পারলাম দাদা। আর আমার সামনে মেলে ধরেন বাংলাদেশী নোট। তাতে ছাপা ছবি দেখিয়ে বলেন, এই আমাদের শেখ মুজিব, হাসিনা আপার বাবা। মধুসূদন জিজ্ঞেস করে মুড়ির দাম কত। তিনি ওর হাত ধরে বলেন। না না দাদা দাম লাগবে না। আপনি আমাদের মুড়ি চেয়েছেন, তাই উপহার দিলাম। আমরা দুহাত ভরে গ্রহণ করি ওপার বাংলার এই অপ্রত্যাশিত এবং অসামান্য উপহার। মনটা ভারী হয়ে আসে। আনমনে হাঁটছিলাম। গোল নুড়ির ওপরে পা ফেললে টলে যায়। হঠাৎ কানের কাছে এক ওপার-বাঙালি ফটোগ্রাফার ফিসফিস করে বলেন, এদিকে নয়, ওদিকে পা ফেলুন দিদি, বি. এস. এফ দেখছে আপনাকে। এখুনি তেড়ে আসবে। চমকে তাকিয়ে দেখি, নদীর বুকে এক কাল্পনিক অর্ধচন্দ্রাকার রেখার দুপাশে সতৃষ্ণ নয়নে মুখোমুখি চেয়ে আছে দুদিকের মানুষ। চোখে জল আসে। হাতের উল্টো পিঠে চোখ ডলে তা গোপন করি। যা দেখছি তা অজানা নয়, তবু মুখোমুখি দাঁড়ানো কষ্টের। বাস চালকের নির্দিষ্ট একঘন্টা প্রায় শেষ হয়ে এল। সূর্যদেব পাটে বসেছেন। ছেলেমেয়েরা যেতে চাইছেনা। ওদের অনেক প্রশ্ন। থাকাটাই স্বাভাবিক, পৃথিবীই যে ভৌগোলিকের ল্যাবরেটরি। এভাবে পর্যটন, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ করতে করতেই কুঁড়ি ফোটা ভৌগোলিকেরা প্রস্ফুটিত হবে।
আমাদের বাস ফেরার রাস্তা ধরেছে। অন্ধকার নেমে এসেছে। এখন আর জানলা দিয়ে দেখার কিছু নেই। স্বাধীন দেশে জন্মেছি। দেশভাগ, দাঙ্গা, ছিন্নমূল মানুষের স্রোত, চোখে না দেখলেও, সব কিছুই জানা। তবু কাঁটাতারের বেড়ার এই দর্শন বুকে বড় বাজে। এখানে আসার সময়ে ছেলেমেয়েরা বাসের মধ্যে কতই না কলকল করছিল। এখন সব চুপ। শুধু সবার বুকের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ ভাঙে। দেশভাগের ব্যথাভরা নৌকা সেই ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেয়ে চলে।
শেষ রজনী
মৌলিন্নং ফিরে এলাম সন্ধ্যেবেলায়। গীর্জা খুলে গেছে। বল্লরীদি বাকিদের নিয়ে ফাদারের সঙ্গে দেখা করতে চলে গেল। তিনি পড়াশোনা জানা লোক। গ্রাম সম্পর্কে দরকারি কিছু জানা যেতে পারে। এদিকে আমি পড়েছি মুস্কিলে। দুকৌটো কুলের আচার কিনেছি, এক কৌটো তেঁতুলের আচার। তেঁতুলের কৌটো ফাঁক হয়ে রস গড়াচ্ছে। এমন হলে হাওড়া অবধি নিয়ে যাব কিকরে? ঘরের সামনের দোকান থেকে একটা লম্বা লজেন্সের বয়াম কিনে আনলাম পাঁচ টাকা দিয়ে। ছোট ফাঁকা বয়াম পাওয়া গেলনা। কিন্তু বয়ামে একরকম আচার ভরলে অনেকটা ফাঁকা পড়ে থাকবে। সুটকেসে ফেলে ছড়িয়ে রাখার মতো জায়গা তো নেই। এক উপায় হতে পারে, যদি সেকশন করে বয়ামের ভিতরেই তিন কৌটো আচার রাখা যায়। তবে নিয়ে যেতেও সুবিধে। আচারের কৌটো গুলো কাঁচি দিয়ে গোল করে কেটে, বয়ামের ভিতরে বসিয়ে কারিগরিতে লেগে পড়লাম। বাড়ি অবধি সুস্থভাবে আচার নিয়ে যাওয়া আমার জীবন মরণ সমস্যা। বল্লরীদি ঘরে ফিরে এসেও দেখল, তখনও আমার আচার অপারেশন চলছে। সেই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে ও বয়ামটির নামকরণ করল "কেঁতুল কুঁতুল"। অর্থাৎ ট্রেনে সুটকেসের ভিতরে ঝাঁকুনিতে কুল তেঁতুল মাখামাখি হবেই। মিক্সচারে যেখানটায় কুলের ভাগ বেশি থাকবে, সেটা কুঁতুল আর যেখানে তেঁতুলের ভাগ বেশি থাকবে, সেটা কেঁতুল। আমার দুর্দশায় সবাই একচোট হেসে নিল। আমিও তাতে যোগ দিলাম। দোকানি বলে দিয়েছে, কুলের আচার ভালো থাকবে পনেরো দিন আর তেঁতুলের আচারের মেয়াদ সাত দিন।
ক্রমে রাত বাড়ে। বিছানায় শুয়ে ঘুম আসতে চায়না। বাইরে জোছনা ভাসা চাঁদনি রাত। বি. এস. এফের ছেলেটির লাজুক মুখ বারবার মনে পড়ে। আমাদের ছাত্রদের থেকে বয়সে হয়তো একটু বড়। বাড়ি ছেড়ে কোথায় পড়ে আছে। বড় মায়া হয়। না চিনলেও, ও যে আমাদের আপন। আর বি. ডি. আরের ছেলেটি? যে কলকাতার নাম শুনে চোখ নামিয়ে উচ্ছ্বাস গোপন করে, ও কি পর? উত্তর আছে আমার অন্তরে। প্রকাশ করতে পারিনা। দেশভাগের ক্ষত মানুষের মন থেকে কোনোদিনও মুছবেনা। সেদিন নাহয় বিদেশি শাসক ছিল, ক্ষতি করার ভাবনা ছিল। আজও কেউ এই ক্ষত খুঁচিয়ে তুলে ভোটে জিততে চায়। স্বাধীনতার এত দিন পরেও ক্ষতি চাওয়া লোকের সংখ্যা কমতি হলনা। ভাবতে ভাবতে কখন দুচোখে ঘুম নেমেছে জানিনা।
বেশিরভাগ জিনিসপত্র গতকাল রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। ভোরে উঠে বাকি টুকিটাকি কাজ সেরে নিলাম। অনেকটা ভালোলাগা আর মনখারাপ দুটোই সঙ্গে নিয়ে মৌলিন্নংকে বিদায় জানালাম। তবে যাত্রা এখানেই শেষ নয়। এরপরে ফেরার পথে আরও অনেক রকম দর্শন, দুদিন শেষের কবিতার শিলংয়ে কাটিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরানো বাকি আছে।
পুনশ্চঃ কেঁতুল কুঁতুল সুস্থভাবেই বাড়ি পৌঁছেছিল। আর সাতদিন গেলনা, পনেরো দিন তো দূর। কর্তা আর কন্যা দুজন মিলে হামলে পড়ায় আচার চারদিনেই সাবাড়।
হীরেন সিংহরায় | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:২৭736634