এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • মধুবাতা ঋতায়তে

    শারদা মণ্ডল
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৬ বার পঠিত
  • ছবি - Imagen 3
    শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ


    মাঝে মাঝে আশ্রয় নিই রবি ঠাকুরের কাছে। সেই যেখানে ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ লিখতে গিয়ে তিনি বললেন,

    ‘শহরে যানবাহন ও প্রাণযাত্রার অন্যান্য নানাবিধ সংযোগ থাকে, তাতে সম্পূর্ণ দেহচালনা ও চারিদিকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভে শিশুরা বঞ্চিত হয়; বাহ্য বিষয়ে আত্মনির্ভর চিরদিনের মতো তাদের শিথিল হয়ে যায়। প্রশ্রয়প্রাপ্ত যে সব বাগানের গাছ উপর থেকেই জলসেচনের সুযোগ পায় তারা উপরে উপরেই মাটির সঙ্‍গে সংলগ্ন থাকে, গভীর ভূমিতে শিকড় চালিয়ে দিয়ে স্বাধীনজীবী হবার শিক্ষা তাদের হয় না; মানুষের পক্ষেও সেইরকম। দেহটাকে সম্যক রূপে ব্যবহার করবার যে শিক্ষা প্রকৃতি আমাদের কাছে দাবি করে এবং নাগরিক ‘ভদ্দর’ শ্রেণীর রীতির কাছে যেটা উপেক্ষিত অবজ্ঞাভাজন তার অভাব-দুঃখ আমার জীবনে আজ পর্যন্ত আমি অনুভব করি।’ - এই কথার সঙ্গে আমি নিজের জীবনের মিল পাই। শৈশব থেকেই আমি ফুটবল খেলা ভালোবাসতাম। পরিবার আদত মোহনবাগানী হবার জন্য সেই আবহ তৈরি ছিল। কিন্তু চিরকাল রেডিওতে ধারাবিবরণী শুনেই কাটাতে হয়েছে, বলে পা লাগাতে পারিনি। আমি প্রকৃতি ভালোবাসি, কিন্তু জীবনটা ছিল দু কামরার সরকারি কোয়ার্টারে বন্দী। এই কারণে ভূগোল বিষয়টার ওপরে ছিল আমার অদম্য আকর্ষণ। পৃথিবীর মানচিত্রের প্রতিটা খাঁজের অবস্থান, আকার আমার স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে খোদাই করে নিয়েছিলাম। স্বীকার করতে বাধা নেই, জীবন আমার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল। প্রথম ইন্টারভিউতেই নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশের আগেই, আমার জীবন পুরো ওলোট পালট করে দিয়েছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেদিনের অধ্যাপকেরা।

    "শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ" ("হে অমৃতের পুত্রগণ, তোমরা শোনো") - শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের এই মন্ত্রটি তাঁরা আমার জীবনে সত্য করে তুলেছিলেন। বিশ্ব প্রকৃতির স্বর কীভাবে শুনতে হয়, আমি শিখতে শুরু করেছিলাম।

    বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে আমরা একশ কুড়িজন ছাত্রছাত্রী। তার মধ্যে কুড়ি জন করে স্যার ম্যামেরা গ্রুপ ভাগ করে নিলেন। আমরা ব্রেবোর্নাইটরা সব রোল নাম্বারে মোটামুটি প্রথম কুড়ির মধ্যেই ছিলাম। আমাদের গ্রুপে উনিশটি মেয়ে এবং একটি ছেলে - তাপস। আসল নামটা বলেই দিলাম। প্রৌঢ় বয়সে কী বা যায় আসে? গ্রুপে সে বেচারা গোবেচারা হয়ে থাকতেই বাধ্য হয়েছিল। তবে এখন আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মেয়েদের যেমন নেকুপুশু ভাব দেখি, যন্ত্রপাতি বইতে হলেই - ‘ওরে, ছেলেরা, তোরা ধর’ - অমন আমরা মোটে ছিলামনা। তো আমরা প্রথম গ্রুপ সিকিম চললাম প্রফেসর সুভাষ রঞ্জন বসুর নেতৃত্বে। কলেজে ট্রাভেল এজেন্ট সঙ্গে ছিলেন। এবারে ইউনিভার্সিটিতে সব ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হল। বাজেট করে টাকা বাঁচিয়ে কী ভাবে শখের জিনিস কেনা যায়, কী ভাবে সস্তার হোটেল খুঁজে বার করতে হয়, কীভাবে গাড়ি ঠিক করতে হয়, কে কোন দিকটা সার্ভেতে কভার করব সেটা কেমন করে প্ল্যান করতে হয়, অচেনা জায়গায় কাজ উদ্ধার করে রাস্তা চিনে কীকরে হোটেলে ফিরে আসতে হয় - গ্যাংটকের অলিগলিতে সেই শিক্ষা আমার হয়ে গেল। এখনকার ছেলেমেয়েরা ভাববে এ আর এমন কী? হুঁ হুঁ বাবা আমাদের হাতে ফোন ছিলনা, ফোনে রেডি ম্যাপ ছিলনা। আমরা রক্ষণশীল পরিবেশে মানুষ হয়েছি, স্বাধীনভাবে ঘুরে ঘুরে কাজ করার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। যন্ত্রবিহীন ভাবে বড় হতে পারা, নিজের ইন্দ্রিয় আর বোধ কে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীকে অনুভব করা - আজ বুঝি, এ ছিল আমাদের সে যুগের আশীর্বাদ।

    সার্ভে তখন মোটামুটি শেষের পথে, আমরা রোজ এক ছোট্ট মারোয়াড়ি হোটেলে পয়সা বাঁচাতে তের টাকায় নিরামিষ ভাত খেতাম, সঙ্গে জল জল পানসে টক দই। এক রাতে দেখলাম অরুচি ধরেছে, আর পারা যাচ্ছেনা। যা থাকে কপালে, আজ চাইনিজ খাবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। যখন আমরা সেই সস্তা ঝাল ঝাল চাউমিন খেতে বসেছি, হোটেলের রেডিওতে খবর শুনলাম, সুস্মিতা সেন মিস ইউনিভার্স জিতে নিয়েছেন। ব্যাস, আমাদের আর পায় কে? - কলকাকলি তুঙ্গে উঠলো। এক গম্ভীর দক্ষিণী পরিবার বিরক্ত হয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলেন। সেসব দিকে নজর দেবার ফুরসৎ কই তখন? নিজের চালে নিজে চলে, তখন আমরা সদ্য বীরাঙ্গনা - বাঙালি মেয়ে যদি বিশ্বসুন্দরী হতে পারে - তবে আমরা একদিন খ্যাতনামা ভৌগোলিক হবনা কেন? ফরাসী বিপ্লবের পরে ফরাসী মানুষ ভিদাল দ্য লা ব্লাশ জ্ঞান জগতে ডিটারমিনিজমকে নস্যাৎ করে পসিবিলিজমের জয়গান গেয়েছিলেন। মানে মানুষের সিদ্ধান্ত যে কোন পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে, সেটা সবসময়ে প্রকৃতি ঠিক (ডিটারমিন) করে দেয় - মানুষ পরিবেশের হাতের পুতুল মাত্র - এমন একটা ধারণা আগেকার জ্ঞানী গুণীজনের মধ্যে ছিল। পরে ভিডালের হাত ধরে নতুন ধারণা এল। প্রকৃতি কিছু লিমিট বা কয়েক ধরণের সম্ভাবনা দিতে পারে মাত্র। নিজের বুদ্ধি আর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষই ঠিক করে যে সে কোন পথটা নেবে। আসলে রাজা রানী - দেবতার প্রতিভূ যাঁরা, অত্যাচার করলে তাঁদেরও গিলোটিনে চাপিয়ে শাস্তি দেওয়া যায় - এটা দেখে সাধারণ মানুষেরর সঙ্গে জ্ঞান জগৎও চমকে উঠেছিল। তৈরি হয়েছিল নতুন পথ খোঁজার আত্মবিশ্বাস। চারপাশের ঘটনা মনোজগতে চিরকালই প্রভাব ফেলে। সেদিন কনজিউমারিজম, গ্লোবালাইজেশনের ঘাঁতঘোঁত বোঝার বয়েস আমাদের হয়নি। সুস্মিতা সেনের জয় সেই পাহাড়ী শহরের বুকে আমাদের বুকের বল যে বাড়িয়ে দিয়েছিল, একথা সত্যি। জোয়ারে ভাসতে ভাসতে আমরা থাকার আস্তানায় ফিরলাম - আর ফিরেই আর একটা ভালো খবর। স্যার বললেন যে উনি ইউমথাং যাবার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন, তাও আবার কম খরচে। আমরা তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। জিওমরফোলজির ক্লাসে মনতোষ স্যার যে কতবার ওই জায়গার রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়েছেন - সেসব নিজের চোখে দেখতে পাব?

    যাই হোক, আমাদের স্বপ্নপূরণ হল। লোকাল বাসে প্রায় আটঘন্টা লাগল পৌঁছতে। জীবনে সেই প্রথমবার পলিমাটির দেশের মেয়ে হয়ে পাড়ি দিলাম আকাশের মেঘের ওপারে। সময়টা মে মাসের শেষ, সেদিন গ্যাংটকের আকাশ ছাইরঙা, মাঝে মাঝে ইলসে গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। পাকদন্ডীতে ঘুরে ঘুরে বাস যখন মেঘের ওপরে উঠলো, তখন চারিপাশে ঝকঝকে আলো পৃথিবী মায়ের পাথুরে গায়ে ঠিকরে পড়লো। নীল আকাশের নিচে পাইনের বন হালকা হয়ে ইতিউতি বুনো ঘাস আর খাঁজে খাঁজে দুরন্ত ঝরনা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আমাদের পথ আড়া আড়ি পেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল নিচের খাদে। তারা পথে রেখে যায় কত গোল গোল ছোট বড় নুড়ি। বাসের চাকাগুলো সেই নুড়ি পাথরের সাথে ঠেলাঠেলি আর ছুটে আসা ঝোরার সঙ্গে গলাগলি করতে করতে আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে চলল। সেদিন শিরদাঁড়া ছিল টান টান। শিরায় লাফাতো টগবগে রক্ত। তাই বাসের চাকার লাফ গায়ে মাখিনি। আঁধার রাতে হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে পৌঁছলাম ইয়াকসি গ্রামের একটা কটেজে। স্যার খবর নিয়ে বললেন, খাবার ওরা কাল থেকে দিতে পারবে, আজ আমাদেরই রেঁধে নিতে হবে। আমি বাবা মার আদুরে গোপাল, রান্না জানতামনা। শশাগুলো কেটে দিয়ে সোফায় শাল চাপা দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। বন্ধুরা গায়ে ঠেলা দিয়ে আমাকে যখন ডাকলো, দেখি হোস্টেলে থাকা মেয়েরা রান্না সেরে ফেলেছে, কিন্তু পাহাড়ের অত উঁচুতে রান্নার অভিজ্ঞতা না থাকায় চাল ঠিক মত সেদ্ধ হয়নি। ইস্কুলে তো সেই কবেই পড়িয়েছিল, সমতলের মত পাহাড়ে জল ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ ফোটেনা। বাতাসের চাপ কম থাকায় তার চেয়ে কম উষ্ণতায় ফোটে। কিন্তু পুঁথির বিদ্যে হাতে কলমে ধাক্কা না খেলে কি আর হজম হয় ছাই? খিদের চোটে সেই আধকাঁচা ভাতই খেলাম তৃপ্তি করে। ফুল সোয়েটার পরে দুখানা লেপের নিচে হাড় কাঁপুনি সহ্য করে কীকরে যে অত গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম সবাই কে জানে!

    সকালে কটেজের বাইরে বেরিয়ে যা দেখলাম, হয়তো সেটাই স্বর্গ। ছবির মত সুন্দর চারপাশ, ছোট ছোট কাঠের বাড়ি দিয়ে সাজানো আমাদের কটেজ। দুদিকে উত্তুঙ্গ পর্বতমালা - গাছের সবুজ, রোদের হলদে সোনা রঙ, আকাশের নীল, বুনো ফুলের গন্ধ আর ভেসে আসা জলের গর্জন - সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ, মনে ঘোর লাগে। স্যার দেখিয়ে দিলেন, আর আমরা বুনো স্ট্রবেরি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলাম। একটু পরেই ছোট বাস নিয়ে রওনা দিলাম ইয়ুম্থাং ভ্যালি বা ফুলের উপত্যকার উদ্দেশে। সিকিমিজ ভাষায় নদীকে বলে চু। লাচেন চু আর লাচুং চু - এই দুই হিমালয় কন্যে মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের অপরূপা তিস্তা। আমরা পৌঁছেছি লাচুং উপত্যকায়। এখানে রডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে মে মাসে। কিন্তু ফুলের বন শিকড় চালাবার মাটি কোথায় পায়? মাটি যোগান দেয় হারিয়ে যাওয়া হিমবাহের বয়ে আনা কৌণিক নুড়ি বা মোরেন। এসব আমাদের ক্লাসে মনতোষ স্যার এতবার বলেছিলেন, আমরা তথ্যগুলো জানতাম। আমরা এখন পূর্ব হিমালয়ের ডঙ্কিয়ালা রেঞ্জে দাঁড়িয়ে আছি। ডঙ্কিয়ালা নামটা যখন স্যার প্রথম ক্লাসে বলেছিলেন, আমরা ভুরু কুঁচকে তাকিয়েছিলাম - অপরিচিত নাম। স্যার বললেন - সিঙ্গালিলা রেঞ্জের নাম শুনেছ তোমরা? ওমা! কেন শুনবোনা? ওটা তো ভারত - নেপাল সীমান্তে থাকা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বত শ্রেণী। স্যার বললেন ডঙ্কিয়ালা সিঙ্গালিলার মত ওরই সমান্তরাল উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত আর একটা পর্বত শ্রেণী। আমরা বললাম - আচ্ছা। এবারে স্যার মোক্ষম প্রশ্ন করলেন, হিমালয়টাতো পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়। তার মধ্যে এত উত্তর - দক্ষিণ শ্রেণী কোথা থেকে আসে? আমরা শুনে হাঁ। সত্যি তো, এটা আগে ভাবিনি। আরে বাবা! নদীগুলো গিরি কন্দর ভেদ করে “হেসে ছলছল, গেয়ে কলকল” উত্তর থেকে দখিন পানে আমাদের বাংলা মায়ের নিচু সমভূমির টানে নেমে আসছে সমান্তরালে একের পর এক। আর এই জলধারাগুলোর মাঝে থাকা কর্তিত পাহাড়ের খন্ডগুলো কেকের মত উত্তর - দক্ষিণে হয়ে আছে। এদের গঠন সারফেসের তলায় বিশ্লেষণ করলে পুর্ব - পশ্চিমই বেরোবে, কিন্তু ওপরের ভূপ্রকৃতিটা উত্তর - দক্ষিণ হয়ে আছে। স্যার বলতেন, আমরা অবাক হয়ে শুনতাম।

    আমরা একটা ছোটো বাসে উঠে পড়েছি। বাস চলেছে ঘন নীল না না বেগুনী আকাশের নিচে কুয়াশা আর মেঘের মধ্য দিয়ে। আমরা চলেছি মধ্য হিমালয় থেকে উচ্চ হিমালয়ের শ্রেণীগুলি দেখতে দেখতে। না আর সবুজ নয়, ওরা ন্যাড়া আর ভীষণ খাড়া পাহাড়। টেথিসের পলি যেদিন ভাঁজ খেয়েছিল, আমাদের ভারতের গন্ডোয়ানা ভূমি তো লোহা টোহা অনেক কিছুর জন্য খুব ভারী, তাই নিচ দিয়ে ঠেলছিল, আর তিব্বতের দিক থেকে হাল্কা আঙ্গারা ভূমি ওপর দিয়ে আমাদের দিকে ঠেলে এসেছিল। তাই হিমালয় আমাদের দিকে খাড়া আর তিব্বতের দিকে গড়ানে, মানে ঢালটা অনেক কম। কিন্তু চারিদিকে পর্বতের মাথায় মাথায় গাছের শিকড়ের মত দেখতে জমে থাকা বরফ, আর প্রতিটা বরফের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে জলপ্রপাত। আমরা বাসের মধ্যে এ জানলা, ও জানলা ছুটোছুটি করছি।

    স্যার! চারপাশে এগুলো কী?
    (সুভাষ রঞ্জন বসু স্যার হাসছেন) বুঝতে পারছোনা! ওগুলো ঝুলন্ত উপত্যকা। তোমরা গ্লেশিয়াল ফর্মস দেখতে পাচ্ছো চারিদিকে। ঐ দেখো সার্ক, আর ওটা পিরামিডাল পিক।
    আমাদের কপালের চোখটা খুলে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই প্রথম খোলার ধাক্কা আত্মস্থ করা সহজ নয়। সেই অনুভূতি ঋষির ধ্যানস্থ হওয়ার পরমানন্দের থেকে কম আনন্দের নয়। আমরা এখন একটা অন্তর্বর্তী হিমযুগে মানে উষ্ণ যুগে রয়েছি। ঠিক আগের হিমযুগ প্লাইস্টোসিনে এই মধ্য হিমালয় শ্রেণী , আজ যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেটা বরফে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। বড় হিমবাহের গভীর খাত, সেখানে এসে পড়া ছোটো হিমবাহের কম গভীর খাত। ওর বেসটা বড়টার বেসের চেয়ে অনেকটাই উঁচুতে। আজ হিমবাহ নেই, সেখান দিয়ে নদী বয়। ছোট খাতের নদী যখন বড় খাতে আসে, তখন মূল নদিটা যেহেতু অনেক নিচুতে গভীর খাতে বইছে, কাজেই ছোটোটাকে উঁচু থেকে নিচুতে ঝাঁপ দিতে হয়, আমরা দেখি জলপ্রপাত। হায়ার সেকেন্ডারীতে এসব আঁকা কতবার প্র্যাকটিস করেছি তার ইয়ত্তা নেই। আর সামনে দেখে নিজে নিজে চিনতেই পারলামনা।

    আমাদের বাস এসে দাঁড়াল ডঙ্কিয়ালার উল্লম্বভাবে খাড়াই একটা ঢালের পাশে। বেগুনী আকাশের নিচে সবুজ মখমলি এক ঢালু প্রান্তর। নিচে জলের দুরন্ত কুলকুল শব্দ। সেই শব্দ লক্ষ্য করে সম্মোহিতের মত আমরা ছুট লাগালাম।



    চলবে...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন