পুকরি হ্রদ
জয়ন্তী পৌঁছলাম বেলা সাড়ে বারোটায়। সকালে স্নান সেরেই বেরিয়েছি। চটপট দুপুরের খাওয়া সেরেই যাব পুকরি। জয়ন্তীর পর্বতশ্রেণীর এক আকর্ষণ। যাওয়া আসা এক এক দুই কিলোমিটার ট্রেকিং। পাহাড়ের মধ্যে পুকরি হ্রদ। কোনো সিঁড়ি নেই। শুধু ঘন জঙ্গলের বুনো গন্ধের আবেশ মেখে ছোট বড় পাথরে সাবধানে পা রেখে ওপরের দিকে ওঠা। কিছু কিছু জায়গায় পথ বেশ খাড়া। মাঝে মাঝে বড় পাথরে বসে জিরিয়ে নিচ্ছি। গাইডের মুখেই শুনলাম, আমরা যে ছায়া সুনিবিড় বনপথে এগোচ্ছি, সে পথে হস্তীযূথও নিয়মিত যাতায়াত করে। তাদের চলার পথটাই মানুষ একটু চলনসই করেছে মাত্র। ওঠার পরে দেখলাম সুন্দর হ্রদের চারপাশেই পাহাড়। হ্রদটা একটু লম্বাটে - বেশ বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে। খেয়াল করলাম, হ্রদ থেকে একটা ধারা নিচে নেমেছে, কিন্তু হ্রদে জল ঢোকার নির্দিষ্ট কোন উৎস চোখে পড়লনা। জয়ন্তী নদীর বুক থেকে বেশ উঁচু এই হ্রদ। জয়ন্তী না হয় ভুটান পাহাড়ের জল পাচ্ছে, হ্রদের জলটা কি তবে আশে পাশের বৃষ্টির জল? গড়িয়ে এসে যুগ যুগ ধরে এখানে জমে আছে? গাইডকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পেলাম যে সত্যিই এটা বৃষ্টির জল, তবে এ হ্রদ শুকোয়না, সারাবছরই জল থাকে। বর্ষার আগে পরে জলপৃষ্ঠ খানিকটা ওঠা নামা করে। শুধু বৃষ্টির জল হলে শুখা মরশুমে এ হ্রদ শুকিয়ে যেত। সারা বছর জল থাকার অর্থ হল এর নিচে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সঙ্গে এই হ্রদ কোনভাবে যুক্ত।
একপাশে দেখলাম বসার জায়গা করা আছে। তার ধারে পুজোর বেদী, কিছু ঘিয়ের প্রদীপ। ধাপ কাটা বেদীটি বৌদ্ধ ভক্তদের পুজোর জন্য। প্রতি বুদ্ধ পূর্ণিমায় ভক্তরা আসেন। আর ত্রিশূল দিয়ে সাজানো বেদীটি হিন্দুদের জন্য। সেখানে হর পার্বতী - পুরুষ/প্রকৃতির পুজো হয় মাঘী পূর্ণিমায়। কিন্তু কী এমন মাহাত্ম্য আছে এই জলাশয়ের যে এই দুর্গম অঞ্চলে আজও মানুষ পাহাড় ডিঙিয়ে আসেন! গাইডরা বললেন যে যুগ যুগান্ত ধরে সারা বছর এই জলাশয় বনকে রসসিক্ত করেছে, বন্য প্রাণীর বা ক্লান্ত পথিকের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে। তাই এখানকার মানুষ এই জলাশয়কে দেবতার আসনে বসিয়েছে। আমার কৌতূহল হল, বৌদ্ধ ভক্তরা কেন আসেন? কাছেই ভুটান পাহাড়। স্থানীয় মানুষেরা অনেকেই বৌদ্ধ। তাই হয়তো এমন রীতি। গাইড একটা অদ্ভুত কথা বললেন, প্রাচীন বাংলায় তিব্বত যাতায়াতের পথে এখানে অভিযাত্রীরা জিরিয়ে নিতেন। সেই স্মৃতিতে এই রীতি তৈরি হয়েছে। শুনেই আমার কল্পনায় ভেসে উঠল মুণ্ডিত মস্তক বৌদ্ধ যোগীদের ছবি - এখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। স্থানীয় মানুষজন এই জায়গাটাকে পুকরি মাঈ বলেও ডাকে। জানিনা হে পুকুর মাতা অরণ্য কন্দরে বিপদের আলিঙ্গনের মাঝে কত যুগ ধরে কত প্রাণ তুমি রক্ষা করেছ, তোমাকে প্রণাম।
তিনজন গাইড ছিলেন আমাদের সঙ্গে। একজন সামনে পথ দেখাচ্ছিলেন, একজন মাঝে আর একজন একেবারে শেষে। জঙ্গলে ঢোকার আগে সবার ওপরে কঠোর নির্দেশ ছিল,
১. যতটা সম্ভব গাছের গায়ে কম হাত দেবে
২. কোনোভাবেই কোনো জংলি ফুল পাতার গন্ধ নেওয়া যাবেনা। কিছুদিন আগে একটি শহরের ছেলের মৃত্যু ঘটিয়েছে জংলি ফুলের রেণু।
৩. জঙ্গলের পথে কেউ কাউকে একা ছাড়বেনা। দলে থাকতে হবে, নইলে ঘোর বিপদ হতে পারে।
যে গাইড প্রথমে ছিলেন তিনি হাতে করে মুড়ির ঠোঙা নিয়ে উঠেছিলেন। হ্রদের জলে কয়েকটা মুড়ি ছড়িয়ে দিতেই খলবলিয়ে ওঠে বড় বড় রাক্ষুসে মাগুর মাছ। এদের দেখলেই আমার গা কেমন শিরশিরিয়ে ওঠে, ভালো লাগেনা। আন্তর্জালে পড়েছি আফ্রিকা থেকে চাষের জন্য এদের নিয়ে আসা হয়েছিল, তারপরে এই রাক্ষুসে মাছ কিকরে যেন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিহারের পাওয়াপুরিতে জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের জলমন্দিরেও এক দৃশ্য, আবার সিকিমে পেলিং এর কাছে খেচিপেরী সরোবরেও তাই। আসলে ধর্মীয় কারণে যে সব হ্রদের জল পবিত্র মনে করা হয়, মাছ ধরা হয়না, সেখানে এরা স্থানীয় সব প্রজাতিকে খেয়ে শেষ করে ফেলে। বিকেল হয়ে গেছে, বিকেলের রোদ পাতার ফাঁকে ফাঁকে চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। নামার সময়ে ছাত্র ছাত্রীরা একটা গাছের সরু ডাল ভেঙে আমার হাতে লাঠির মতো ধরিয়ে দেয়। নিজেরাও নেয়। কারণ নামার সময়ে কষ্ট কম হলেও নুড়ি পাথরে পা হড়কে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফেরার পথে দুজনের পা হড়কে গিয়েছিল বটে, তবে মোটামুটি নির্বিঘ্নেই হোটেলে ফিরে এলাম। ঐ রাক্ষুসে মাগুরের কথাটা ভুলতে পারছিলাম না। আসলে ওদের বিষয়ে আমার একটা বীভৎস অভিজ্ঞতা আছে। সিকিমের পেলিংয়ে থাকতে আমরা দেখতে গিয়েছিলাম বিখ্যাত খেচিপেরী হ্রদ। আগে থেকে অনেক কিছু শুনেছিলাম যে এটি ভক্তের ইচ্ছাপূরণের হ্রদ। নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যে ঘেরা এত বড় হ্রদে কখনও কোন পাতাটাও পড়ে থাকেনা। কারণ জলে একটা পাতা পড়লেই পাখিরা নাকি ঠোঁটে করে পাতা তুলে জল পরিষ্কার করে দেয়। ভিতরে মনাস্ট্রি রয়েছে। মাঘ মাসে আর নাগ পঞ্চমীর দিন হিন্দু বৌদ্ধ দুই ভক্তই হ্রদকে পুজো করে। সুউচ্চ পর্বত শিরার মাঝে সবুজে ভরা চারপাশ, স্থির জল, আজ অবধি এর গভীরতা নাকি কেউ মেপে উঠতে সফল হয়নি। অপূর্ব শান্ত এই পরিবেশ, সঙ্গে বৌদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণ মনে এক স্নিগ্ধ আবেশ এনে দেয়। ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে। পই পই করে ছেলেমেয়েদের বলে রেখেছিলাম জলে কিছু ফেলবেনা। কিন্তু ছেলেদের দুষ্টুমি যাবে কোথায়? ঠিক একটা ছেলে জলের কাছে দাঁড়িয়ে টুক করে একটা চিপসের প্যাকেট ফেলল। আর আমাদের চমকে দিয়ে বিশাল বিশাল অসংখ্য রাক্ষুসে মাছ লাফিয়ে উঠে ওই প্যাকেটটা নিয়ে জলের তলায় অদৃশ্য হল। জল আবার সেই স্থির, কোন কম্পন রইলনা। শুধু সেই ক্ষণিকের ভয়, মাছগুলোর আগ্রাসী শরীরী ভঙ্গি আর হিংস্র চোখ মনের মধ্যে জাগরূক হয়ে রইল। পাখিরা ঠোঁটে করে পাতা নিয়ে যায় না ছাই, ঐ মাছেরাই সব সাবড়ে দেয়। আচ্ছা দুষ্টু ছেলেটা আমাদের চোখের আড়ালে প্যাকেট না ফেলে যদি নিজের হাতটা ডোবাত, থাক আমি আর ভাববোনা। ঐ মাছগুলোর কথা আমি স্বপ্নের মধ্যেও ভাবতে চাইনা। ওগুলো দেখলেই আমার ঠাকুমার ঝুলির রাক্ষস খোক্কস মনে হয়।
আমাদের হোটেলটি চমৎকার। নানান রঙের ফুলের গাছে সাজানো। নামটাও সুন্দর মোহনচূড়া। পাখির নামে নাম। লম্বা সরু ঠোঁটের এই হুপো পাখি মাথার ঝুঁটি যখন মেলে ধরে তখন খুব সুন্দর লাগে, আবার এরা পাখা মেলে পেখম ধরতেও জানে। মাথার ঝুঁটির কেরামতি দেখে সাহিত্যিক বনফুল নাম দিয়েছেন মোহনচূড়া। এই অঞ্চল তো পাখির রাজ্য, বনের মধ্যে নিশ্চয়ই এরা থাকে, তাই হোটেলের এমন নাম। শহুরে ধাঁচের কর্পোরেট হোটেল এটা নয় মোটেই, কাঠ, বাঁশ আর শীতলপাটি দিয়ে তৈরি দোতলা কাঠামো। ঘরগুলি ছোটো। কেবল একটি ডবল বেড খাট, ফুলছাপ শস্তা চাদর বিছানো, একটি প্লাস্টিকের ছোটো টী টেবিল, দেয়ালে ছোটো আয়না। ব্যাস, আর কিছুনা। ঘরের পিছনদিকে সংলগ্ন শৌচাগার। সেখানেও ন্যূনতম পরিকাঠামো। ঘরের বাইরে উত্তর পূর্বমুখী চওড়া কমন বারান্দা। বারান্দার ওপারে প্রকৃতির অপার ঐশ্বর্য। রূপালি নুড়ি পাথরে ভরা প্রশস্ত নদীখাত। নদীর ওপারে জয়ন্তী পর্বত শ্রেণী আমাদের ঠিক মুখোমুখি। বাঁদিকে তাকালে আবছা নীলচে ভুটান পাহাড়ের অবয়ব। সেখান থেকে নেমেছে দুই ধারা কাতলুং আর সাচিফু। দুয়ে মিলে ভারতে প্রবেশ করছে গদাধর নদ। জয়ন্তী পাহাড়ের ছোঁয়ায় সে চরিত্র বদলে মোহিনী রূপ ধারণ করে নাম নিয়েছে জয়ন্তী নদী। জলঢাকা নদী, উত্তর বঙ্গে যে বেশি পরিচিত মূর্তি নামে, তার উপরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করে আশির দশকের শেষে। কিন্তু নদী কে বশ করে সেচ, বিদ্যুৎ ও ক্রমবর্ধমান জনবসতি নিয়ে মানুষ যে উন্নয়ন শুরু করে, প্রকৃতি তার দাম অন্যভাবে পুষিয়ে নেয়। বর্ষায় ডুয়ার্সের অন্য নদী গুলি ফুঁসে ওঠে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিক থেকে বন্যার প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে ১৯৯৩ সালের বিধ্বংসী বন্যা আর ভয়াবহ ভূমিধসে জয়ন্তী নদীর উপরে ব্রিজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ব্রিজের দুটি স্তম্ভের নামমাত্র মাথাটুকু শুধু জেগে আছে। বাকিটা পুরোটাই নুড়ি পাথরে চাপা পড়ে গেছে। ব্রিজের দৈর্ঘ্যের তুলনায় নদীর আড়াআড়ি প্রস্থ এখন দ্বিগুণেরও বেশি। স্থানীয় মানুষ জানান ১৯৯৩ থেকে আজ পর্যন্ত নদীখাত প্রায় চল্লিশ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। ফলে তার বর্ষার জল বহনের ক্ষমতা নেই। বক্সা জয়ন্তীর জঙ্গল পরিবেশ তাই আজ বন্যার প্রকোপে বিপন্ন। দূর থেকে দেখছিলাম শুকনো নদীর মধ্যে অনেক ঝোপ ঝাড়। কাছে গিয়ে দেখি ও হরি এসব ঝোপ নয়। জঙ্গলের বিরাট বিরাট গাছগুলোকে নদী গিলে খেয়েছে। তাদের শুধু মাথা গুলো এখন জেগে আছে। তাই ভাবি নদীখাতে এত গভীর নুড়ি পাথরের স্তূপের ভিতর মাটি নেই, ঝোপ জন্মাবে কোথা থেকে?
বক্সা দুর্গ
পরের দিন যাত্রা বক্সা ফোর্টের দিকে। হোটেল থেকে জিপে করে জঙ্গুলে পথে সানতালাবাড়ি। সান্ত্রা মানে কমলালেবু। আসলে এখান থেকে বক্সা দুর্গ ছুঁয়ে যে বনপথটি চলেছে সোজা ভুটান পাহাড়ে, সেই পথে এককালে শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে ভুটানি গ্রামের কৃষকেরা কমলালেবুর বোঝা কাঁধে নিয়ে নেমে আসতেন আর রসে টুসটুস কমলার হাট বসে যেত। তার থেকেই জায়গাটার এই নাম। কালের নিয়মে মানুষের সহজ আদান প্রদানের সেই পথে বসে গেছে রাজনীতির বোড়ে, গজ, ঘোড়া কত কী! এখন ভুটান থেকে কমলা লেবুর গাড়ি আসে জয়গাঁও হয়ে শিলিগুড়িতে। যাই হোক আজ আমাদের গাড়ি সানতালাবাড়ি থেকে একটা বাঁক ঘুরেই দাঁড়িয়ে গেল। এবারে হাঁটা পথ। যাওয়া আসা মিলে আড়াই আড়াই মোট পাঁচ কিলোমিটার ট্রেকিং করতে হবে। পথ কতকটা পুকরির মতোই, কিন্তু তুলনায় অনেক দীর্ঘ। নানারকমের পাখির ডাকে কান জুড়িয়ে দেয়। কিছুটা দূরে গিয়েই পৌঁছনো যায় চোখ জুড়নো ভিউ পয়েন্টে। ওপর থেকে বিহগ দৃশ্যে স্পষ্ট দেখা যায় জঙ্গলের মধ্যে একদিকে বালা নদী আর অন্যদিকে জয়ন্তী। পাহাড়ের গায়ে আরো কয়েকটা ঝোরা আছে, তবে সময়টা শীতের শেষ, তাই সেগুলো শুকনো। জায়গায় জায়গায় পথ বেশ খাড়াই। উঠতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ পথে মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো জনবসতি, একটা দুটো কেক বিস্কুটের মনিহারী দোকানও আছে। টুকিটাকি অন্য জিনিসও পাওয়া যায়। অবশেষে বক্সা দুর্গ। দুর্গ ঠিক নয়, বলা যেতে পারে দুর্গের ভগ্নাবশেষ। ইংরেজ আমলে এখানে বিপ্লবীদের রাজবন্দী হিসেবে রাখা হত। আন্দামানের সেলুলার জেলের পরেই নাকি ছিল এর কুখ্যাতি। কারণটা সহজেই অনুমেয়, সে যুগে এত দুর্গম পথে খুব কম লোকের পক্ষেই বন্দীদের খবর নিতে আসা সম্ভব। গাইড জানান কিছু কিছু কুঠুরি এত ছোটো ছিল যে বিপ্লবীদের নিচু হয়ে বসে থাকতে হত। নড়াচড়ার জায়গা থাকতনা। এখন অবশ্য সেগুলির অবশিষ্টাংশ কিছু নেই। জেলখানা হিসেবে তিনটি মাঝারি কুঠুরি আছে। বক্সা দুর্গ যেখানে, সেই উচ্চ পাহাড়ী অংশটি বছরের বেশিরভাগ সময়ে মেঘে ঢাকা থাকে। তাই নিচ থেকে কেউ কিছু বুঝতে পারেনা। বক্সার রাজবন্দীরা এক ২৫শে বৈশাখে রবীন্দ্রনাথকে কাব্যভাষায় চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠি ও কবিগুরুর উত্তর দুটি পৃথক শ্বেতমর্মরে খোদাই করা আছে। সেই দুটি চিঠির ভাষা আর জেলখানা দেখে বুকের ভিতর থেকে কান্না ঠেলে আসে। খ্যাতনামা দেশনেতাদের নামের বাইরেও নাম না জানা কত মানুষের কান্না আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশের স্বাধীনতা। চীনা আগ্রাসনের সময় তিব্বতি সন্ন্যাসীরাও আশ্রয় নিয়েছিলেন এই দুর্গে। গাইডেরা বলেন এখানে নাকি নেতাজী সুভাষও বন্দী ছিলেন কিছুকাল। কিন্তু কথাটা কি সত্যি? আমার জানা নেই। বরং কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রাজনৈতিক কারণে বন্দী ছিলেন এখানে। বক্সার ডিটেনশন ক্যাম্প আর তার অত্যাচার অমর হয়ে আছে তাঁর ললিত গদ্যে - ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ - গায়ে কাঁটা দেয়। ‘পর্বত যার প্রহরী, সমুদ্র যার পরিখা’ - সেই বাংলা নিয়ে লিখে গেছেন -
‘যারা দুরন্ত অজয়ের উদ্বেলিত তীরে দাঁড়িয়ে বন্যার মুখে বাঁধ বেঁধেছে, যারা অন্ধকার খনির গর্ভে পৌঁছে দিয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনার খবর, যারা নুয়ে-পড়া ধানের শিষগুলোকে বর্শার ফলকের মত সাহসে টান করে দিয়েছে, চিমনির ধূমায়িত মুখে যারা তুলে দিয়েছে আগুনের ভাষা - ভুটানের গায়ের পাহাড়ে তারা বন্দী।
বাংলার মানচিত্রে খুঁজে পেলেও সে দেশ বাংলা নয়, ইংরেজের ঘুঘু চরানো ভিটেয় নির্বাসিত হয়ে আছে ভবিষ্যতের আশায় উন্মুখ আমার বাংলা’