তার এককোণে একটা টলটলে চৌবাচ্চা, আর কলাফুলের গাছ। উঠোনের তিনদিকে টুকটুকে লাল পথ ছিল, সেই পথ গিয়ে মিশত একটা সবুজ বাগানে। বাগানে না আসলে দালানে - ঘন সবুজ ঘাসের মত মখমলি, মাটির দাওয়ার মত শীতল এক দালান। সে দালান যেমন বড়, না ঠিক বড় নয়, মানে যেন অতল গভীর, মানে ঠিক গভীর নয়, ঠিক কেমন বলতে ঠাহর পাইনা। তবে যেমনই হোক, খুব আপন আপন। আমি যেদিন প্রথম সেখানে গিয়েছিলাম, তখন সবে কুঁড়ি ফুটেছি, অমন কুঁড়ি পাঠশালে কেউ নেয়না। সেদিন সেই দালানে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, ঘুম এসে গেল। চোখ খুলে দেখি দালানে একজন মা রয়েছেন। তিনি কে তো জানিনা, মনে হল মায়ের মতো। মা বলল, উনি সবার মা, মায়েরও মা, আমারও মা। ... ...
ছৌনাচ বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে হোটেলগুলি তাদের ন্যূনতম দক্ষিণায় হোটেল নর্তক বানাচ্ছে, এটা বুঝতে পেরে ভালো লাগলনা। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা কিছু করেছে। একেবারে শিশুকাল থেকে শিল্পীরা এই নাচ শিখছেন এবং নিয়মিত অভ্যেস করেন, তাই শান বাঁধানো মেঝেতে আছড়ে পড়েও আঘাত লাগেনা। পরে সকলে ভাবলাম, যদিও শিল্পের দাম টাকা দিয়ে হয়না, তবুও এই অনুষ্ঠানে কতটাকা পেলেন, এই প্রশ্নটা লজ্জার মাথা খেয়ে করে ফেললেই হত। ... ...
একঘন্টা ধরে নাকের ডগায় লাইভ যুদ্ধ সহ্য করা কি চাট্টিখানি কথা! যা হোক, শেষে এক ভয়ানক যুদ্ধের মাধ্যমে মহিষাসুর অক্কা পেল। মা দুর্গা ব্যালান্স করে সেই বিশাল সিংহের পিঠে উঠে পড়লেন, আর অমনি তাঁর ঝলমলে ছেলেমেয়েরা আর তাঁদের বাহনরা পজিশন নিল। আমার ছেলেমেয়েরা থুড়ি ছাত্রছাত্রীরাও হৈ হৈ করে উঠোনে নেমে পড়ল। ওরা মনে হয় এতক্ষণ আমার ভয়েই চুপ করে চেয়ারে বসেছিল। ... ...
কৈশোরে গম্ভীর স্থানীয় রাজার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। একজন শিল্পীর বড় হওয়ার পিছনে ভাত কাপড় যোগানোর একটা হাত খুব জরুরী, যেটা আজকের শিল্পীরা পাচ্ছেন না। ছৌনাচ যিনিই সামনে থেকে দেখেছেন, তিনিই বুঝবেন, এ আসলে একধরণের প্রাচীন সিনক্রোনাইজড জিমন্যাসটিকস। কোন আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া ছৌ নৃত্যশিল্পীরা কীভাবে এই বিদ্যা করায়ত্ব করেন সে এক বিস্ময়। ... ...
চড়িদা গ্রামটি হোটেল থেকে বেশি দূরে নয় - আন্দাজ তিন কিলোমিটার দূরে হবে। রাস্তার ধারে ধারে ছৌ মুখোশ বিক্রির দোকান। পথে কয়েকটি বিদ্যালয়ও চোখে পড়ল। কুড়ি বছর আগেও একবার এ গ্রামে এসেছিলাম, তখনকার থেকে এখনকার দৃশ্যপট আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তখন এমন রাস্তা ছিলনা। হেঁটে উঠতে হয়েছিল। ইতিউতি বাড়িঘরের মধ্যে দোকানঘর ছিল অল্প। এখন পাকা রাস্তায় হু হু করে গাড়ি করেই এসে পড়লাম। সামনে অগুন্তি দোকানঘর। ... ...
ইরমের আড়ালে কা তব কান্তা কস্তে পুত্র - কাফি কান্ড আছে মেড়া জানে সূত্র। পাঠান বা জওয়ান - কেবল ফাইটিং, ওড়াউড়িং, ল্যান্ডিং, কামানিং, ট্রাকিং, হেলিকপ্টিং - নতুন আমদানি মেট্রো হাইজ্যাকিং। ... ...
পর্দা জুড়ে ফুটে ওঠে পরিত্যক্ত মন্দিরে এক বিশাল রামের মূর্তি। আধুনিক দর্শক আশা করি এই অনুষঙ্গ ভালোই বুঝতে পারবেন। রাম গেরুয়া ধুতি পরে রামের মূর্তি থেকে তীর ধনুক খুলে নেয়। জড়িবুটির ম্যাজিকে তার সমস্ত ক্ষত এতক্ষণে উধাও। সারাংশে রাম আর ভীম, সঙ্গে রয়েল বেঙ্গল বাঘ, কম্পজ্বর ভাল্লুক, চিড়বিড়ে চিতাবাঘ, চোখানাক নেকড়ে, দৌড়বাজ হরিণ, উপজাতির শিকারী ভায়েরা - সিনেমার গল্প জুড়ে সবার মিলিত প্রচেষ্টা বড়লাটের বাড়ি উড়িয়ে দিয়ে সব খারাপ ইংরেজ খতম করে। প্রথম দৃশ্যের নির্মম ফার্স্ট লেডির ময়ূর আঁকা নিথর হাতটি শূন্যে দোলে। কিন্তু এতো শুধু খোলসের বিবরণ। ভাবুক দর্শকের সামনে খুলে যায় বোধের দরজা। আর্য আর ফর্সা ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ভীম। পাঁচ নিষাদ পুত্রকে তাদের মায়ের সঙ্গে জতুগৃহে পুড়িয়ে মারার গ্লানি ধুয়ে আজ সে নিজেই নিষাদের কন্ঠস্বর, তাদের চেতনার প্রতিভূ। আর আবহ জুড়ে গান বাজে রাঘবম রাজসম। তীরধনু আর অক্ষয় তূনীর হাতে ভীমকে সুরক্ষা দেন রাম। পুলিশ অফিসার রামের অহল্যা মনোভূমি আজ ভারতের ঐতিহ্যধারী রামের স্পর্শে প্রাণ পায়। আজ সে সত্যিকারের শ্রীরামচন্দ্র হয়ে ওঠে। ... ...
- কোনো ক্রাইসিস পিরিয়ডে ঘুম থেকে উঠে, আগে ভাত আর ডাল বসিয়ে দিতে হয় জানোনা। তুমি তো অনেকক্ষণ উঠেছো। ডালটা সিটি দেওয়া থাকলে, তাতে ডুবিয়েও তো সবাই পাঁউরুটি খেতে পারতো। তিনটে অসুস্থ, দুটো সুস্থ মানুষ খাবে কী এখন। ঘড়িতে সকাল দশটা বাজতে যায়? কর্তা দেখলাম জুৎসই উত্তর হাতড়াচ্ছেন। এমন সময় রান্নার মেয়েটি ঘর থেকে বেরোলো, আর বাংলার পাঁচ, ছয়, সাত সবরকম মুখ করে চাল ধুতে শুরু করলো। সহোদরাও বেরিয়ে পড়লো। আমাদের ঘরে তো আর অ্যাটাচড বাথ নেই। আর পতিদেব সুযোগ বুঝে - 'ওরে বাবা, চারদিকে করোনা বেরিয়ে পড়েছে, মাস্ক আমার মা - স্ক' - এই বলে এক লাফে বেডরুমে ঢুকে পড়লেন। আমি দাঁত কিড়মিড় করে ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, কর্তা একেবারে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়েছে আর দুটো চোখ বার করে দেখছে, আমি তাকে দেখছি কিনা। যেই আমি তাকিয়েছি, দেখি মুখে একটা অসহায় হাসি, এদিকে কম্বল থেকে একটা পা বার করে নাচাচ্ছে - পা দেখিয়ে আমায় রাগাচ্ছে। কী আর করি। পাত্তা দিলাম না। কিন্তু বুঝলাম মাটন স্টুটা আমাকেই রাঁধতে হবে। একমনে মহা করোনাঞ্জয় মন্ত্র আওড়ালাম - "মাটোন আমার কাঁটোন সই উনুনের ঝিক। রাম করোনা বুকে আছে পারবো আমি ঠিক।" ... ...
প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এসো, কোভিড অতিমারীকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য আমরা দ্বাদশ অঙ্গীকার করি। ... ...
মনে করা হয় যে শরৎকালের পূর্ণিমায় চাঁদ ষোলো কলায় পূর্ণ হলে অমৃত বর্ষণ করে। অনেক বাড়িতে পায়েস দেওয়া হয় চাঁদকে। তাছাড়া শাশুড়ি বলতেন লক্ষ্মীঠাকুর সারা রাত ঘুরবেন, চাঁদ যদি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গিয়ে আলো না দেন, তবে তো খুব মুশকিল হয়ে যাবে। চাঁদকে নৈবেদ্য দেওয়ার সময়ে তুলসী গাছকেও পুজো করা হয়। তুলসী নারায়ণের প্রতীক হিসেবে পুজো পান। ... ...